নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাব্যগ্রন্থ আলোচনা: চাঁদের জ্যোৎস্না খসে গেছে

১১ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৩:০১


কাব্যগ্রন্থ আলোচনা: চাঁদের জ্যোৎস্না খসে গেছে
জসীম উদ্দিন অসীম
প্রকাশকাল: চৈত্র: ১৪০৪ কুমিল্লা।
গোমতী প্রকাশন:
মামুন সিদ্দিকী।
কবিতার কাছে আশা করা হয় স্নিগ্ধতা, কখনো তেজস্বিতা, কখনো ময়ূরের নৃত্য। কখনো আবার বিলের টলমল পানি- ফোটে থাকা অসংখ্য শাপলা ফুলের মতো শব্দ ও বাক্যের অমিত মূর্চ্ছনা ও সৌন্দর্য। এই বৈশিষ্ট্য কবিতার বিষয় ও মেজাজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। কবিতাই বলে দেয় তাকে কোন রূপে সাজাতে হবে নন্দনের কোন কাপড় পড়লে তাকে রূপবতী লাগবে। এই রূপের সঙ্গে রসগত গুণও সমানভাবে প্রয়োজনীয়। তবেই কবিতা কবিতা হয়ে উঠে।
প্রথম যে কথাটি বলতে হয়ঃ ‘চাঁদের জ্যোৎস্না খসে গেছে’ কাব্যগ্রন্থটি হাতে নিলেই মনজুড়ে শূন্যতা নেমে আসে। বইয়ের নাম ও চেহারায় এমনই ঐক্য ও ব্যঞ্জনা তৈরী করে। গ্রন্থটিকে ষোলটি কবিতা রয়েছে। একটি গ্রন্থের জন্য এই সংখ্যা কম বটে, কিন্তু একজন কবিকে চেনার জন্য তা মোটেও সামান্য নয়। কারণ এর মধ্যেই কবির কাব্যাদর্শ, প্রবণতা- শিল্পকৃতি প্রভৃতি নির্ধারণ করা সম্ভব। এই আলোচনা তারই প্রেক্ষিতগামী।
চাঁদের জ্যোৎস্না খসে গেছের অর্থঃ একটি সুশীল সময় নষ্ট সময়ে পরিণত হতে যাচ্ছে কিংবা একটি দুর্বিনীত কালের শুরু। আমাদের এই সময়ের জন্য এই কাব্য উচ্চারণ যথার্থ হলেও মানব সভ্যতার প্রত্যেকটি স্থানের জন্য তা সাধারণ ও সত্য হয়ে ওঠে।
মানুষের অধিকার যেখানে লুন্ঠিত হয়েছে, মর্যাদা হয়েছে ক্ষুন্ন, সেখানে এই উচ্চারণ অবিসম্ভাবী, আমাদের এই সময়ের জন্য যেমন। আর তাই গ্রন্থের এমন একটি উপযুক্ত নামের জন্য কবিকে ধন্যবাদ। এখন কথা হলোঃ এই সংকটপূর্ণ নামকরণের সঙ্গে কবিতার কতটুকু সম্পর্ক রয়েছে, তাকে চিহ্নিত করা। এখানেই জসীম উদ্দিন অসীমকে আমরা চিহ্নিত করতে পারবো। এর জন্য দু’দিকে নজর দিতে হয়: ক. চেতনাগতঃ এই চেতনার সঙ্গে কবির সামগ্রিক ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায়, যাকে এক কথায় আদর্শ বলা যায়; খ. আঙ্গিক ও শিল্পবোধ: এর মাধ্যমে কবির ঐ আদর্শের বায়বীয় রূপকে শিল্পরূপ দেন, এখানেও তার স্বতন্ত্রতা ও বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। এই বিষয়গুলোর জন্য আলোচ্য গ্রন্থের কবিতা যেমন, তেমনি ‘প্রাককথন’ বিশেষভাবে সহায়ক হবে। কবিকে প্রত্যক্ষভাবে চেনার জন্য এরচে বড় প্রামাণ্য কথা আর হতে পারে না। জীবনানন্দ দাশ যেমন তাঁর এক আত্মীয়কে লিখেছিলেন, “কবিদের নিজেদের সম্পর্কে প্রবন্ধ লেখা উচিৎ। কারণ এর মাধ্যমে কবিকে সহজেই বুঝা যায়।” আশ্চর্য সত্য: কাব্যগ্রন্থের নামের যে ঘ্রাণ ও বলিষ্ঠতা, তার সঙ্গে ঠিক সেভাবে কবিতার অভিষেক ঘটেনি। এটি পেছনের কথা। সামনের কথা হলোঃ ষোলটি কবিতার পরতে পরতে ব্যক্তিক হা হুতাশ ব্যাপকভাব লক্ষনীয়, যাকে অনেকটা নষ্টালজিয়ায় আক্রান্তও বলা যায়। একটি নজির দিই-
“পিছনের দিকটা আমার গভীর বেদনাক্রান্ত
নিঃশব্দ কান্না-প্রাণ শুকিয়ে কষ্ট পাওয়া-অনাদরে বড় হওয়া
কপালে দুঃখের কামড়-মাথা খুঁড়ে মরা
কষ্টের কুয়াশায় ভিজে আছে আমার
পিছনের পথ” । (পিছনের কথা)
এই কবিতায় যেমন- গ্রন্থর্গত প্রত্যেকটি কবিতায় বিভিন্নভাবে ‘পিছনের কথা’ পৌনঃপুনিকভাবে বর্ণিত হয়েছে। তাতে অবশ্য কবিতায় একটি ‘ব্যক্তি জীবনের ডায়রী’র বৈশিষ্ট্য এসেছে, যাকে নতুন ঘরানাও বলা যায়। এই অতীতমুখিতাকে নেতিদৃষ্টিতে দেখা অন্যায় হবে। কারণ অতীতই একজন মানুষকে সম্পূর্ণতার দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু ঐ প্রবণতা যখন মাত্র ব্যক্তিকতায় সীমাবদ্ধ থাকে, তখন এই অতীতমুখিতাকে সমর্থন করা যায় না। ‘ডায়েরী’ হয়েছে আপত্তি নেই, কিন্তু তাতে যেন সময়ের দাগ লেগে থাকে, যা থেকে কবির সমগ্র মানসকে স্পর্শ করা যায়। তিনি সেখানে হয়ে ওঠেন স্রষ্টা, সময় ও সমাজকে নিরীক্ষা করতে সেই সুক্ষ্ণদ্রষ্টা হওয়ার প্রয়োজন। কবি কোন প্রেক্ষিত থেকে ‘পার্বতী’ ‘তরঙ্গিনী’ ‘রূপালী’দের প্রতি একতরফা স্বাগত উক্তি করছেন, তা কবিতায় আমরা জানছি। কিন্তু তাকে সামষ্টিকতায় মেলাতে পারছি না- এটাই আক্ষেপের বিষয়। যেমন শহীদ কাদরীর ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’র উচ্চারণের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্ম এবং এ- প্রেক্ষিতে মানুষের আশা আকাঙ্খার কথা ব্যক্ত হতে দেখি। অর্থ্যাৎ বাংলাদেশকে এখানে ‘তোমাকে’র মাধ্যমে PERSORNFITE করা হয়েছে। অসীমের কবিতায় আমরা তেমন বিষয় লক্ষ্য করি না। তবে নিম্ন উক্তি পংক্তিগুলো পড়লে বুঝা যায়- এই ‘তুমি’রা হয়তো কবির মানসী- আর গভীরভাবে কবিতায় প্রতীকীভাবে ভাবলে মানসবস্তু- কামনারও।
ক. ‘আজকে আমার ফসলের জমিতে
ফসলও নেই আর।
কৃষির দেশের কৃষক সন্তান আমি
কী হয়েছে এবার আমার ভেবে দেখতো পারো’।
(মানুষ কেন দেখেনা প্রকৃতিকে)
খ. ‘সেদিনের সেই সন্ধ্যার পর
আমার দুঃখে কিছু পাখি
ভীষণ রকম কান্না কেঁদেছিলো
সেই থেকে আর পাখির বাসায়
হাত পড়েনি আমার’।
এই ক্ষেত্রে কবির ব্যক্তিক ও মনোসংকটকে আমরা আমাদের আর্থ- সামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে বিবেচনা করলে সামগ্রিক সংকটকে চিহ্নিত করতে পারি। তাতে ব্যক্তিক হতাশা সমষ্টি হয়ে পুরো সমাজের কন্ঠে উচ্চারিত হয়। কিন্তু ‘প্রাককথন’ এ এর সমর্থন পাইনা। অর্থ্যাৎ কবিতাগুলোর রচনাকাল ও আমাদের দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকটকে ঐভাবে ধারণ করে না যতটুকু না ব্যক্তিকভাবে, যা কবিতার জন্য ক্ষতিকর নয় বটে, কিন্তু একজন যথার্থ শিল্পীর জন্য অপূর্ণতা। কবি আমাদের প্রাককথনে জানাচ্ছেনঃ “প্রবণতা ছিল গণভাষার কবিতা রচনার” “কবিতার সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক কী”? “তবে কবিতার মাধ্যমে জনসচেতনতার আন্দোলনের কী হবে”? ইত্যাদি মৌলিক ও স্বাভাবিক জিজ্ঞাসা। একজন শিল্পী এই রকম প্রশ্নে বিদ্ধ হবেনই। অসীমের ক্ষেত্রে বলা যায়- রাজনীতি ও গণচেতনার কবিতা লিখতে গিয়ে কবিতার তারল্য ঘটিয়েছেন, এক সময় শিল্পমানটাই প্রথম কথা বলে ঐ চিন্তা থেকে সরে এসেছেন। এখন কথাঃ রাজনীতি ও গণসচেতন হলেই কি কবিতার মান ও আধুনিকতা ক্ষুন্ন হয়? না কি নির্মাণের অক্ষমতা? আমরা যদি প্রসঙ্গত সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘মে দিবসের কবিতা’, সুকান্তের ‘দেয়াশলাইয়ের কাঠি’ এবং নির্মলেন্দু গুণের ‘স্বাধীনতা এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ কবিতাত্রয় স্মরণ করি, তাহলে অসীমের এই দৃষ্টিভঙ্গি নাকচ করা যায় না? বস্তুত রাজনীতির সঙ্গে সাহিত্যের সম্পর্ক থাকাটা জরুরী। না হলে একজন শিল্পী কিভাবে অগ্রসর হবেন? ভাসাভাসা, নিজেকে রক্ষা, অক্ষমতাকে ব্যক্তিকতায় ঢেকে রাখা- এভাবে কতক্ষণ চর্চা করা যায়? শিল্পীকে শেষ পর্যন্ত সমাজ ও সময়ের কাছে বিশ্বস্ত হতেই হয়। সময় যাকে কুড়ে কুড়ে খায় ‘ঘড়ির সেকেন্ডের কাঁটায় প্রতিটি কদম তার বুকে বাজে’ শিল্পী যদি তিনি হন, রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন কিভাবে? এজন্যই দেখি অসীমের কবিতায় রাজনীতি এসেছে এভাবে:
‘‘যারা আমার ‘ভাগ্য নিয়ে ষড়যন্ত্র করে
আমি তাদের হত্যার স্বপ্ন দেখি’
(হত্যার স্বপ্ন)
এমন প্রত্যয় ষোলটি কবিতার মধ্যে নানাভাবেই বিস্তার করে আছে। কিন্তু তাকেই আবার পানসে করে দেয় কিছু বৈরাগ্যবাদী কবিতা, যা আবার অসীমের মানসকে দৃঢ় না করে দ্বিধাগ্রস্ত করে তোলে। এমন উদাহরণ-
‘কী লাভ পৃথিবীতে এমন করে পুড়ে
চলে যেতে চাই তাই
ঠিকানাহীন দূরে’
(চলে যেতে চাই)
এজন্যই কবির চেতনা ও দর্শনে যেমন দ্বৈততা আছে, আছে অস্পষ্টতাও, যা তার প্রতিন্যাস গড়তে, কিংবা তাকে প্রমূর্ত করতে পারে না। এক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসের প্রশ্নকে সামনে আনা যায়। কবি মানেই আত্মবিশ্বাসী। কারণ এছাড়া শিল্পসত্ত্বাই গঠিত হয়না। এই গ্রন্থের কবিতার ক্ষেত্রে কবির যে দ্বিধা, তা আরো সত্য হয়ে ওঠে প্রাককথনেঃ ‘কবিতারূপী এসব ব্যর্থ রচনায় আামি আসলেই ব্যর্থ হয়েছি’। তিনি কথা বলছেন- যা বলছেন এবং সেখানে দাঁড়িয়ে বলছেন, তা যদি তাঁর জানা মতে ভ্রান্ত হয়, তাহলে তিনি সঠিক পথে পা দেন না কিংবা আসল কথাটি বলছেন না কেন? না কি তার কথিত ঐ ব্যর্থ চিন্তাও ভ্রান্ত? এটা অসীমের কথা ও কবিতায় সমভাবে উপস্থিত- যা কবির সার্বভৌমত্বকে নস্যাৎ করে। কাব্য- ব্যাখ্যার দ্বিতীয় মানদন্ডঃ বইয়ের ভূমিকায় তিতাশ চৌধুরী যে ‘কবিতার আঙ্গিক ও শিল্পরূপের উপেক্ষিত’ হওয়ার কথা বলছেন- অসীমের কবিতার ক্ষেত্রে তা বিশেষভাবে স্মরেণ্য। সবচে দৃষ্টিকটু কবিতার বাক্যে বাক্যে মাত্রা অতিরিক্ত উহ্য চিহ্নের ব্যবহার আর শিল্পগুণহীন বাক্যস্থাপন। বস্তুত এগুলো ছাড়াও অসীমের কবিতায় ভাঙ্গার একটি প্রচেষ্টা আছে, যা কবিতার নয়া নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। কিন্তু উপর উক্ত কারণে ভাঙ্গা প্রক্রিয়া ঠিক গড়া হয়ে উঠেনি। তারপরও এই চেতনাকে সাধুবাদ জানাতে হয়। কাব্যগ্রন্থের ‘গোমতী নদী’ শীর্ষক কবিতার সর্বশেষ লাইন “গোমতী সে তো মরা নদী নয়”। আমরাও সর্বশেষ কথাটি বলতে চাই- অসীমেরও সামনে অনেক পথ- এখনই সবকিছু নয়। ক’জন কবিই বা এই উচ্চারণ করতে পারেন, তার কাছে আমাদের আশা অনেক। কবিতার যে শুদ্ধ পরিশ্রত পথে অসীম যাত্রা করেছেন, তাতে তার “মানুষ কেন প্রকৃতিকে দেখে না” কবিতার আশাবাদী পংক্তি,
‘বেঁচে থাকলে বড় হবো/
হয়তো অনেক বড়”
কে সমর্থন করি এই শর্তে তিনি কবিতাকে রাজনীতি সচেতন করে তোলবেন। কারণ রাজনীতি ছাড়া কোন সমস্যার সমাধান হয় না। তাই সাহিত্য ও রাজনীতির গভীর যোগ চাই।
===========
মামুন সিদ্দিকী।
প্রথম প্রকাশ: সাপ্তাহিক ‘আমোদ’ কুমিল্লা। ৮ অক্টোবর ১৯৯৮।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৩

সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন: প্রিয়তে রেখেদিলাম। পরে পড়বো বলে...

২| ১১ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫৯

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: মামুন সিদ্দিকি সাহেব আপনার কঠোর সমালোচনা করেছেন আবার আপনার সম্ভবনার কথাও বলেছেন। ওনার সমালোচনা আপনি কিভাবে নিচ্ছেন? ওনার সমালোচনার সত্যতা কতটুকু বলে মনে করেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.