নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্যাডো ডেভিল

পেশায় চিকিৎসক, মতান্তরে কসাই মনের ইচ্ছায় লিখি, যা মনে আসে তাই । ইচ্ছা- কেউ যেনো না ফেরে মোর দ্বার হতে উপকার চেয়ে, মরিতে চাই আমি শত মানুষের ভালোবাসা পেয়ে ।

শ্যাডো ডেভিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপেক্ষা

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৭

'তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করো,আমি ফিরে আসব।' অনেক ভালবাসার মানুষ প্রিন্সের এমন কথাও বিশ্বাস করেছিল নাহিদ। নাহিদ আমার অনেক ভাল একজন সহকর্মী। যদিও দুইজন দুই মেডিকেল থেকে পাস করেছি,কিন্তু পরিচয় হয় একই হাস্পাতালে কাজ করার সুবাদে।নাহিদ ছিল অনেক সাধারন একটা মেয়ে,কিন্তু তার ওই সাধারনত্বের ভেতরও ছিল এক অন্যরকম সৌন্ধর্য/স্নিগ্ধতা। ঠিক যতটা সুন্দর হলে একটা ভদ্র ছেলে একটা মেয়েকে দেখিয়ে বলে-'ঐ দ্যাখ,তোর ভাবী।' অথবা যতটা সুন্দর হলে মেয়েরা inferiority complex এ ভুগে,ঠিক ততটা সুন্দর।



এ যুগের প্রেম নিয়ে শিল্পী সাহিত্যিকের কথা বাদ দিলাম,এখন 'আমি এতগুলো মেয়ে পটাইছি,মামা/আররে মামু,এরে একটু নাচাইতেছি,আরকি'- এ ধরনের কথা আড্ডাগুলোতে প্রায়ই শোনা যায়,বলা যায় আড্ডার প্রধান বিষয়ই এগুলা। হয়ত আমরাও বলি(অস্বীকার করার উপায় নাই)। হয়ত এটাই ফ্যাশন...আমরা কি আর ফ্যাশন থেকে দূরে থাকতে পারি?? কিন্তু বাস্তবিকভাবে আমি কাউকে সত্যিকারের ভালবাসি,এটা বলার সাহস রাখিনা। যদি কেউ হাসে? অথবা যদি ধরা/ছ্যাকা খেয়ে যাই?? ভালবাসা না খেলা কোনটা আমার সাথে হচ্ছে আর কোনটা আমি করছি তাও বুঝতে পারিনা। সত্যিকারের ভালবাসার কথা বলতেও লজ্জা হয়,হয়ত সেকারনে।



এমন কলি যুগে নাহিদ ছিল আলাদা। প্রিন্স আর নাহিদের বয়সের পার্থক্য ছিল বছর চারেকের। এক পার্টিতে দেখা। রুপবতী যুবতী আর সুদর্শন যুবক। কিভাবে কিভাবে যোগাযোগ, বন্ধুত্য আর এরপর তুমুল প্রেম। ওদের পাশাপাশি দেখলে ও শান্তি লাগতো( একটু আফসোস ও কি লাগতোনা?? কি জানি...)। ওরা যেন made for each other.



'পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে,তবু আমার ভালবাসার মানুষ বদলাবে,এটা কখনোই মানি না।বিশ্বাস করা তো দুরের কথা।' নাহিদ ও ভাবতো প্রিন্স কখনো বদলাবে না। আমরাও এমনটা কখনই ভাবতে পারতাম না। কিন্তু মানুষ ভাবে এক,আর হয় আরেক। কয়েক মাস পরেই বুঝলাম সময় বদলায়,তার সাথে মানুষ ও বদলায়। প্রিন্স ও একটু একটু করে বদলাতে থাকে। আগে সারাদিন ১০-২০টা sms,৭-৮ বার ফোন, রাতে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বিনিময়, কয়েক মাস পরে শুধু রাতে কথা, তার ও কয়েক মাস পরে মাঝে মাঝে কথা,মাঝে মাঝে দেখা। 'তোমাকে খুব miss করতেছি' থেকে 'উফফ,তুমি এত্ত জ্বালাও ক্যান?'...আগে যা আকাশের চাঁদের উপমা পেতো,পরে তা আর দশজন মেয়ের মত হয়ে যায়। আচরনে পরিবর্তনটা বুঝতে পারে, দেখতেও পায়,কিন্তু নির্বোধ মন বুঝতে চায় না,মানতে চায় না। নাহিদ দেখতে পায় প্রিন্সের এড়িয়ে যাওয়া, বিরক্ত হওয়া,আবার কখনো কখনো স্বপ্ন দেখানো। কখনো প্রিন্স বলতো 'নাহিদ,তুমি আসলে আমার পাশাপাশি চলতে পারোনা।' আবার কখনো গভীর আবেগে বলতো -'আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি।'



'ভালবাসি' শব্দটা আসলে একটা যাদুকরি শব্দ। একবার যে এই শব্দের মায়াজালে পড়ে,তার আর মুক্তি নেই। নাহিদ ও দুলছিল একটা আশা-নিরাশার দোলচালে। একবার 'তুমি আমাকে পাবেনা, নিজের রাস্তা দেখো' আর একবার ' আমি তোমাকে নিয়ে ঘর বাধবো'...আবার কখনো ' তোমার তো কিছুই নেই যা আমার পরিবার মানতে পারে'...কখনো বা ' তোমার জন্য পৃথিবীর সাথে যুদ্ধ করবো ।' আশা-নিরাশার এই নিরন্তর টানাপোড়নের সে কি অসহ্য চাপা যন্ত্রনা। সহকর্মী এবং বন্ধু হিসাবে আমি প্রথম ওর মুখে শুনেছিলাম 'ঘুমিয়ে থাকাই ভালো,মরে গেলে আরো ভালো।' ও আমাকে আরো বলেছিলো-'তুমি জানো- Life is a symptom, Death is the cure.' আমার ২৭ বছরের জীবনে ওটাই ছিল এত বড় কোন কষ্টের কথা শোনা। নাহিদ অনেক চেষ্টা করেছিল প্রিন্সকে বোঝাতে। কিন্তু প্রিন্সের ভালবাসার পাড় ভেঙ্গে প্রেমের চর জেগেছে অন্য আরেকজনের সাথে।



নাহিদের সেই মুখটা আজও মনে আছে আমার। আশ্চর্য রকমের শান্ত,হাসে কিন্তু সেই হাসি তার চোখ স্পর্শ করেনা। Duty তে আসে ,অনিয়মিত,কখনোবা Late করে । Post graduation এর প্রতি অনীহা। বোকাটা আমাকে কাঁদতে কাঁদতে বলে-'আর কত?? সারা জীবন Simple MBBS থেকেও যদি প্রিন্সকে পেতাম...।' ওর চোখে কান্না আর আমার বুকের ভেতর আটকে থাকা দীর্ঘশ্বাস ।



নাহিদ অপেক্ষা করে...অপেক্ষা...অপেক্ষা...অপেক্ষা । এর মধ্যে আসিফ নামের এক ছেলের সাথে বন্ধুত্ব হয় নাহিদের। শুধুই বন্ধুত্ব। সেও নাহিদের সহকর্মী ছিল ।তবে তা আসিফের জন্য শুধু বন্ধুত্ব ছিলোনা, একটু বেশি কিছুই ছিলো। আমি জানি না । তবে আমি দেখতে পেতাম আসিফের চোখে ভালোলাগার ঢেউ, নাহিদকে care করা, share করা। নাহিদ, আসিফকে বলত-প্রিন্স আমাকে ভালবাসে, অনেক ভালবাসে...এটা কখনো কোনো ভাবেই বদলাবে না।' আমার কেন যেন তখন নাহিদের মানসিক সুস্থতা নিয়ে সন্দেহ হতো ।আসিফের নতুন ডাকটা হয়তো নাহিদের জীবনটা কে ঘুরিয়ে দিতো। হয়তো জীবনের নতুন ডাকটা গ্রহন ও করতো নাহিদ,কিন্তু একদিন প্রিন্স ফোন করে ওকে। আবারো তার একই ধরনের কথা-' আমার জন্য অপেক্ষা কর,আমি আছি তোমার জন্য।'



অপেক্ষা করে নাহিদ,প্রিন্সের জন্য... ২ বছর ধরে প্রিন্স দেশের বাইরে। নাহিদ ফোন করলে কালেভদ্রে কথা হতো। এক পর্যায়ে তাও করতে মানা করে দেয় প্রিন্স। কোনভাবেই যখন যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছিলোনা, তখন নাহিদ ওর বাসায় ফোন করে জানতে পারে প্রিন্স বিয়ে করছে। পরের মাসের ১৩ তারিখ বিয়ে। সেদিন রাতেই নাহিদ ঘুমের ঔষুধ খেয়ে Suicide এর চেষ্টা করে। এই পর্যন্ত পাগলীটার কোন আশাই সফল হয়নি,শুধু এই একটি ছাড়া। মরে যায় ওর হাসি,ওর লম্বা চুল,ওর গান,ছলোছলো চোখের স্বপ্ন ,ভালবাসা। মরে যায় আমার প্রিয় একজন সহকর্মী। অস্থির জীবন কাটায় ওর পরিবার আর সাথে আরো একজন...আসিফ...।আমি আসিফের দিকে তাকাই না,সাহস হয়না। নাহিদ কে খুব বলতে ইচ্ছা করে-' তুই কি জানিস,চলে যাওয়ার সময় তুই আমার সব নিয়ে গেছিস?? তুই কি জানিস তোকে আমি ঘেন্না করি?? তুই কি জানিস, তোকে আমি অসম্ভব ভালবাসি??'



অনেকদিন পর আমি এই কথাগুলো লিখছি। আমার সামনে এমন অনেকে আছে যারা এরকম মরতে চায়। আমি দেখি, শুনি আর অসহায় বোধ করি। মা মরলে যদি জীবন না দেই, তবে অন্য একটা ছেলে /মেয়ের জন্য কেমন করে দেই? ২-৪ বছরের প্রেমের জন্য মরার কথা ভাবা তো দূরে থাক,চোখের পানি ফেলতেও তো ঘেন্না হওয়া উচিত। নিজেকে ছোট করে কারও পায়ে পড়তে লজ্জা পাওয়া উচিত।(যাকে বলছি সে বুঝলে ভাল,অন্যদের এমন কথা পড়তে হচ্ছে বলে দুঃখিত।)



**(কিছু বাস্তব, আর কিছু কল্পনা)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৫

ফারজানা শিরিন বলেছেন: নাহিদ কে খুব বলতে ইচ্ছা করে-' তুই কি জানিস,চলে যাওয়ার সময় তুই আমার সব নিয়ে গেছিস?? তুই কি জানিস তোকে আমি ঘেন্না করি?? তুই কি জানিস, তোকে আমি অসম্ভব ভালবাসি??' :(

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:০৪

শ্যাডো ডেভিল বলেছেন: ধন্যবাদ.....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.