নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো, তবু আমারে দিবোনা ভুলিতে

মূর্তুজা খান

অাবেগ অার ভালোবাসার মিশ্রণেই লিখা

মূর্তুজা খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনেকদিন ইভটিজিং করা হয় না!রাস্তায় দাঁড়িয়েছি আজ ইভটিজিং করবো!

৩১ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৪৯

অনেকদিন ইভটিজিং করা হয় না!রাস্তায় দাঁড়িয়েছি আজ ইভটিজিং করবো!কোনো মেয়ে আসছে না এখনো!
হঠাৎ স্টেশন রোড়ে হেঁটে যাওয়া কলেজ পড়ুয়া একটা মেয়েকে দেখেই আমি বলে উঠলাম "ওয়াও,কি হট"!মেয়েটি তৎক্ষণাৎ পিছন ফিরে আমার দিকে তেড়ে আসলো।এলাকার উৎসুক জনতা আমি ইভটিজারকে হাতে-নাতে ধরতে পেরে উত্তম-মাধ্যম বসিয়ে দিলো।শুধু তাই নই,পুলিশের হাতে আমাকে সোপর্দ করে তারা আমার উপযুক্ত বিচারের আবেদনও করলো।আরো ইত্যাদি ইত্যাদি...
.
দুই মাস পর মেয়েটির বিয়ে।এলাকার ছেলে হিসেবে নিমন্ত্রণ পেয়ে আমি বিয়ের আসরে গেলাম।কমিউনিটি সেন্টারের কোণায় মেয়েটিকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে-ঘুছিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে।বরযাত্রীও চলে এসেচে ইতোমধ্যে।আমি মেয়েটিকে দেখে আবারও বলে উঠলাম "ওয়াও,কি হট মেয়েটি"!!
এবার কথাটা শুনে আশেপাশের কেউ আমাকে ইভটিজার বলেনি।সবাই আমাকে সাদরে গ্রহণ করেছে।আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এই কথাগুলোকে খুব সহজে মেনে নেই।খুব আহ্লাদে গ্রহণ করে।এই ধরণের ইভটিজিংএর বৈধতা দেই;অনুমতি দেই,পারলে সার্টিফিকেটও দিতো।
কমিউনিটি সেন্টারে এসে আমার মতো অনেকেই মেয়েটিকে দেখে এই কথাগুলো বলেছে।কথাগুলো শুনে মেয়েটি নিজে নিজে খুব খুশি,মেয়েটির বরও খুশি,মেয়েটির মা-বাবা খুশি,উভয়ের পরিবার পরিজন সবাই খুশি,খুশি মেয়ের এলাকাবাসী।
এগুলো ইভটিজিং না,এগুলো তো প্রকাশ্যে প্রশংসা!!
রাস্তায় দাঁড়িয়ে কোনো মেয়েকে "ওয়াও সুন্দরী" বললে ইভটিজিংহয়,আর কমিউনিটি সেন্টারে এসে কোনো মেয়েকে "ওয়াও সুন্দরী" বললে আমি ভালো ছেলে,ভদ্র ছেলে,সামাজিক ছেলে কারণ মেয়েদের প্রশংসা করতে জানি আমি।কি অদ্ভুত.!!
.
দেশের সুন্দরী প্রতিযোগিতার শো দেখেছেন কখনো?
মেয়েটি হেলিয়ে দুলিয়ে কি অদ্ভুত এক ভজ্ঞিমায় আসবে,সবাই খুব কাছ থেকে দেখবে মেয়েটিকে।
দর্শক সারিতে থাকা উৎসুক মানুষগুলো sexy,hot,WOW, one night want সহ আরো কত কথা ছুঁড়ে দেই মেয়েগুলোর দিকে।মেয়েটি এসব শুনে আনন্দে গদগদ হয়ে উঠে।এই কথাগুলো বলা বৈধ!!আমাদের দেশ,রাষ্ট্র,সমাজ এই কথাগুলো বলার বৈধতা দেই!!
সামনে আসন পেতে থাকা পুরুষ বিচারকেরা প্রকাশ্যে সবার সামনে প্রতিযোগীর ফিগার জানতে চাই।এতো এতো মানুষ ও মিড়িয়ার সামনে মেয়েটির শারীরিক গঠন ও সাইজ নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা গবেষণা চলে।শারীরিক কোন অঙ্গের সাইজ কত সেই নিয়ে চলে চুলছেঁড়া বিশ্লেষণ!!আর গভীরে না গেলাম পাঠক।এসব লেখনীতে আমার হাত কেঁপে উঠে বার বার।
বলে কি হবে?সুন্দরী প্রতিযোগীতার শিরোনামে তো বড় অক্ষরে লেখা থাকে "মেয়ে,তুমি দেখিয়ে দাও অদেখা তোমায়"!!
.
এই যে এই ঘটনাগুলো বললাম তাতে কি বুঝা যায় না ইভটিজিং এর পিছনে আমাদের সমাজ ব্যবস্থাও অনেকাংশে দায়ী।
সমাজে নানা অশ্লীলতা আমরা নিজেরা ছড়িয়ে দেই।আমরাই আবার ইভটিজং ধর্ষণ বন্ধের জন্য আন্দোলন করি,রাস্তায় রাস্তায় বিলবোর্ড টানাই,ওয়ালে ওয়ালে দেয়ালিকা সাজাই,টিভিতে বিজ্ঞাপন দেই ইত্যাদি।কিন্তু ইভটিজিং ধর্ষণ বন্ধ হয় না।একজন ইভটিজারকে একটা মেয়ে যতটা ঘৃণা করে তার চেয়ে বেশি ঘৃণা করে একজন ছেলে।কারণ সে একজন গোটা পুরুষ জাতিকে কলঙ্কময়ী করে দিয়েছে।আমরা ছেলেরা ইভটিজিংএর জন্য মেয়েদের পোশাককে দায়ী করি,আর আমরা মেয়েরা দায়ী করি ছেলেদের মেন্টালিটি আর দৃষ্টিভঙ্গিকে।এই তর্ক আমাদের চলতেই থাকে,থামে না কখনো।অথচ ছেলে-মেয়ে উভয় চাইলেই সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে সমাজ থেকে ইভটিজিং দূর করা সম্ভব।
সবাই এক হয়ে ইভটিজিং এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব।একটা জাতির ইভটিজিং বন্ধের জন্য আগে সেই জাতির ঘুণেধরা সমাজ ব্যবস্থার অমূল পরিবর্তন দরকার।দরকার সমাজ থেকে সংস্কৃতির নামে নানান অপসংস্কৃতি তুলে দেওয়া।নারীর স্বাধীনতা আর অধীকারের নাম করে অশ্লীল পোশাককে এড়িয়ে চলা উচিত।আমাদের ছেলে-উভয়ের দৃষ্টি সংযত রাখা অতীব জরুরী।নারীর ক্ষমতায়নের নামে সুন্দরী প্রতিযোগীতার সেই অশ্লীলতাকে না বলা উচিত।দেশের কোনো মেয়ে ইভটিজিং আর ধর্ষণের স্বীকার না হোক।
সামাজিক নৈতিকতা ও ধর্মীয় মুল্যবোধ আমাদের জাগ্রত হোক।
আসুন সবাই মিলে সুস্থ,সুন্দর ও নিরাপদ বাসযোগ্য একটি সমাজ গঠন করি।
.
শেষকথাঃ-মেয়ে মা-বোনের জাত এসব সস্তা ন্যাকামো সত্য কথা আমি বলবো না।ইভটিজিং শুধু মেয়েদের সমস্যা না।এটা বড় ধরণের এক সামাজিক ব্যাধি।আর এই ব্যাধি দূর করার জন্য আমাদের সমাজ ব্যবস্থা,রাষ্ট্র,আমি আপনি সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
আসুন ইভটিজিং শব্দটা একেবারে মুচে দেই সমাজ থেকে।হ্যাঁ বিশ্বাস করুন আমরা একটু সচেতন হলেই পারবো এটা |
https://www.facebook.com/kazimostofa.hasamdtusar

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.