![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভেবেছিলাম নিজেকে শুধরে নেব; ভুলে ভরা এই জীবনটাকে আবার না হয় আয়নাতে দেখব... হয়ত বেরিয়ে আসবে আপনার ঘুণপোকাটা! কিন্তু আজও আমি স্বীয় সত্ত্বাটাকে তাড়িয়ে বেড়ায়... আমি যেন এক বিবেকের কাবুলীওয়ালা... শুধু সুখের নিত্য নাটকটি ফেরি করি; দুঃখের কালো ছায়াটি মাড়িয়ে...
একটা সময় ছিল যখন মানুষ পাপ করে অনুতপ্ত হত আর যতসম্ভব অন্যদের কাছে তা গোপন করার চেষ্টা করত বা প্রকাশ করত না। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সাথে সাথে মানুষও নিজেদের পুরোপুরি অভিযোজিত করার তাগিদ বোধ করল এবং যার ফলস্বরুপ কোন কিছুই আর গোপন বা অপ্রকাশিত থাকল না। প্রাইভেসি, কনফিডেনসিয়ালিটি, সিক্রেসি - এসব কথাগুলো কিছুদিন পর জাদুঘরে তুলে রাখতে হতে পারে বা অপ্রয়োজনীয় শব্দ হিসেবে অভিধান থেকে বাদও দিতে হতে পারে। সবচেয়ে বড় দুঃশ্চিন্তার বিষয় হল আমাদের এসব শো-অফ বা পাপ প্রকাশ করা স্ট্যাটাসগুলো শুধু আমাদের নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না বরং ভাইরাস আকারে আমাদের প্রিয়জনদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ে। দুনিয়াতে যেমন আমরা যে যার জায়গায় অনেক কামিয়াবী হাসিল করেছি ঠিক তেমনি দ্বীন-ধর্মের ব্যপারে অনেক আগে থেকেই সবজান্তা হয়ে সবকিছু লাটে উঠিয়েছি আর এখন পাপে পাপে আমলনামা কালিময় করতে ব্যস্ত! উদাহরণ দিইঃ
১. Mr. “X” is watching “Pretty Woman” at Bashundhara Star Cineplex with Mrs. “Z”.
মুভি দেখা যে পাপ তা বলে বুঝানোর নিমিত্ত রাখেনা আর তার উপর যদি আবার আজকালকার মুভির কথা বলেন তবে আমাকে মনে মনে আসতাগফিরুল্লাহ/নাউযুবিল্লাহ পড়তে হবে। একটা সময় ইংরেজি ভোকাভিউলারির জন্য মানুষ মুভি দেখত যার বেশিরভাগই ছিল শিক্ষণীয় বা আর্ট ফিল্ম। পার্থক্যটা হল, তখন আমরা সবাইকে সে ব্যপারে জানাতাম না আর জানালেও আমাদের সহপাঠী বা বন্ধুদের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকত। আর এখন যেকোন নতুন মুভি আসলেই (regardless the quality/rating) ধর্ম-কর্ম সব ভুলে আমরা তার পেছনে লেগে যায় আর উপরের স্ট্যাটাসটা না দিলে মনেই হয় না যে মুভি দেখেছি! স্কলারদের মতে, মুভি দেখলে শুধুমাত্র চোখের যেনাই হয়না বরং রুহের যেনাও হয়। যার প্রমাণ ইবাদতের সময় বিশেষকরে নামাজে মুভির সিকোয়েশ্চ মনে পড়া বা পুরোপুরি ইবাদতে কনসেনট্রেসন আর ডিভোসান না দিতে পারা। এছাড়াও আরও বহু সাইডএফেক্ট আছে যা অনেকেই জানে তারপরও আমরা মানুষ!
২. Mr. “X” is going to attend “New Year Concert” at Foy’s Lake with Mr. “Y” & Mrs. “Z”.
গান-বাজনা যে হারাম তা আমরা প্রায় সব মুসলমানই জানি। পৃথিবীতে জানার লোকের অভাব নেই কিন্তু মানার লোকের বড়ই অভাব। এলম থাকলেই তাকে আলেম বলে না বরং যে এলেম হাসিল পূর্বক তা চর্চা করে তাকেই আলেম বলে। বাংলাই বলে, ‘চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী’। এইখানেও তাই – নিজেতো পাপ করতে যাচ্ছিই আর যাওয়ার সময় সঙ্গপাঙ্গ মিলে পাপ করতে পারলেই যেন সাকসেস! শুধু এইখানে শেষ হলে ভালই হত কিন্তু আমার উপরের স্ট্যাটাসটা আরও না জানি কতজনকে এই পাপে উৎসাহিত করবে - কে জানে! স্কলারদের মতে, যারা নিয়মিত গান-বাজনা শুনে আল্লাহপাক তাদের কোরআন পাঠ সহীহ করেননা এবং তারা ইবাদতে স্বাদ পান না। নিজেদের প্রশ্ন করুন, আমাদের কতজনের কোরআন পাঠ সহীহ আর কতজনই বা নামাজে পুরোপুরি কনসেনট্রেসন আর ডিভোসান দিতে পারছি!
এইরকম আরও প্রচুর উদাহরণ দেয়া যাবে যা এক লেখাই শেষ করা কষ্টসাধ্য। হাশরের ময়দানে মানুষ নিজেদের আমলনামায় সব কৃতকর্ম পুরোপুরি দেখতে পাবে। সেদিন কোনকিছুই গোপন রাখা হবে না। অনেক শ্রেণীর মধ্যে দুই শ্রেণীর মানুষকে ডাকা হবে। এক শ্রেণীর জন্য ফয়সলা করা ছিল জান্নাত আর এক শ্রেণীর জন্য জাহান্নাম। জাহান্নামের ফয়সলা হওয়া এক ব্যক্তিকে ডেকে আল্লাহপাক তার কৃতকর্মের কথা জিজ্ঞাসা করবেন কিন্তু সে অনুতপ্ত হয়ে নিশ্চুপ থাকবে। তখন আল্লাহপাক স্বীয় রহমতে লোকটির পাপ গোপন পূর্বক তার ভাল কাজের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন এবং তার ভাল কাজের উপর আমল আর দাওয়াতের ধরুন অন্যরাও যে সে আমলে লিপ্ত হয়ে উপকৃত হয়েছিল তার পুরষ্কার স্বরুপ তাকে জান্নাতে দাখিল হওয়ার আদেশ দিবেন, আলহ্বামদুলিল্লাহ।
অন্যদিকে জান্নাতের ফয়সালা হওয়া এক ব্যক্তিকে তার কৃতকর্মের কথা জিজ্ঞাসা করা হবে এবং সে তার আমলনামায় থাকা ভাল কাজগুলোর কথা ব্যক্ত করবে। কিন্তু আল্লাহপাক সেদিন তার উপর অসন্তুষ্ট থাকবেন এবং তার ফয়সালা জাহান্নামে পরিবর্তীত হবে। কারণ জিজ্ঞাসাপূর্বক তাকে বলা হবেঃ “তুমি নিজে প্রকাশ্তে পাপে লিপ্ত হতে, গর্বসহকারে সেই পাপ প্রচার করতে আবার সবার সাথে সেই পাপ শেয়ার করে অন্যদের পাপের ভাগিদার বানাতে। সেইসব ব্যক্তিদের পাপে তোমার আমলমানা ভর্তি হয়ে গিয়েছে আর তোমার ঠিকানা এখন জাহান্নাম”। অতঃপর সেই ব্যক্তিকে টেনে-ছিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, আসতাগফিরুল্লাহ।
এবার সবাই একটু নিজেদের কথা চিন্তা করুন। কি পোস্ট করছেন, কি শেয়ার করছেন, কিসে লাইক দিচ্ছেন – সব রেকর্ড করা হচ্ছে আর সবচেয়ে বড় ডিসপ্লেতে দেখানো হবে সব কীর্তিকলাপ! সময়ের বয়স দিনদিন বাড়ছেই আর সেই সাথে আমাদেরও। ডেসটিন্যায়সান আগে থেকেই ফিক্স করা আছে; বাকিটা আপনার আর আপনার আমলের উপর। এখনই মোক্ষম সময় নিজেদের পাল্টানোর আর এ পাল্টানোটা হতে হবে ভালরদিকে – দ্বীনের দিকে। হালাল-হারাম, পাপ-পূর্ণ্য সম্পর্কে জানুন আর নিজের জীবনকে বদলে ফেলুন হেদায়াতের দিকে – জান্নাতের পথে। মনে রাখবেন, শুধু জানার নামই ইসলাম নয়, মানার মত মানার নামই ইসলাম।
আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে সিরাতুল মুস্তাক্বিমের পথে পরিচালিত করুন, আমিন।
Dr. Asiful Alam
University of Technology Sydney
Faculty of Marketing
Australia.
২| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ২:৫৭
কাবুলীওয়ালা বলেছেন: ধন্যবাদ খায়রুল ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য। আমি এক বিদেশী মুফতিকে বয়ানে বলতে শুনেছিলাম, হাশরের ময়দানে আমলনামা দেওয়ার পাশাপাশি সব অঙ্গ-প্রতঙ্গ নিজেদের সাক্ষ্য দিবে এবং মানুষ তার নিজ নিজ কৃতকর্ম বিরাট বড় ডিসপ্লেতে দেখতে পাবে। সেদিন আর কোনকিছুই গোপন থাকবে না।
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:০৮
খায়রুল আহসান বলেছেন: সব রেকর্ড করা হচ্ছে আর সবচেয়ে বড় ডিসপ্লেতে দেখানো হবে সব কীর্তিকলাপ! - এখন মনুষ্য কম্পিউটারেই এখন কাজটাকে সহজ মনে হয়- যেমন, অপরাধ প্রমাণের জন্য সিসিটিভি'র দ্বারা ধারনকৃত ছবির পুনঃ ডিসপ্লে।
আর আল্লাহ'র কম্পিটারের তো কথাই নেই! এ ব্যাপারে আমার একটা পুরনো পোস্ট আছে এখানে- পড়ে দেখতে পারেনঃ অদৃশ্য সিসিটিভি