![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রথম খন্ডঃ এখানে
৩.
সাবধানে পকেট থেকে পারসোনাল টেকভাইস টা বের করে হাতে নিলাম। উত্তর দিক থেকে শীতল বাতাস আসছে। আমার গায়ে কোন ভারি জামা নাই। হু হু করে কাঁপছি। ইরিনা কিন্তু কাঁপছে না। সে সব ধরণের অনুভূতির ঊর্ধ্বে চলে গেছে। তার এলোমেলো দেহটা ঘরের এক কোনায় জঞ্জালের ভেতর পরে আছে।
আমার সামনে ফসফরাসের আভায় উজ্জ্বল সাগরের তটটা ঝাপসা হয়ে আসছে প্রায়ই। যে বিশাল আগ্নেয় শিলার তৈরী বিশাল পাথরটার পিছনে আমি লুকিয়েছি, সেটা আমাকে খুব বেশিক্ষণ আশ্রয় দিতে পারবে না। একটা এন্ড্রয়েড ডিকয়ের পিছনে সার্চ বাহিনী দ্বীপের অন্যপ্রান্তে ছুটে গেছে। তাদের ভুল ভাংতে খুব বেশি দেরী হবে না। কিন্তু আমার ধরা পরলে চলবে না। প্রতিশোধ নিতে হবে আমাকে, চরম, নিষ্ঠুর, ভয়ংকর প্রতিশোধ।
আমি ইরিনাকে নিয়ে পালিয়ে পলিনশিয়ায় যে দ্বীপে চলে আসি তার নাম ফ্লোরা। ছোট্ট এই দ্বীপটা মাত্র ষাট বছর আগে পৃথিবীর মানচিত্রে যুক্ত হয়েছে। উত্তর আর দক্ষিণ মেরুতে নতুন বরফ জমাট বাঁধানোর পর বেশ কিছু নতুন দ্বীপ ভেসে উঠে, ফ্লোরা তার একটা। শক্তিবলয় দিয়ে ঘেরা দ্বীপটায় প্রথম দুই সপ্তাহ বেশ স্বস্তিতেই কাটে আমাদের। তারপরই আমরা বুঝতে পারি, ফেডারেশন আমাদের সাজানো প্লটটা বিশ্বাস করলেও হোপ্রিম হাইকমান্ড তা করেনি, তারা ঠিকই ইরিনার অবস্থান চিহ্নিত করে ফেলেছে, তার মস্তিষ্কের রেজোনেন্স চেক করে, স্যাটেলাইট দিয়ে। একজন মানুষ নিয়ে তৃতীয় পর্যায়ের মিশন ত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়াটার শাস্তি মৃত্যুদন্ড, সেটা ইতিমধ্যে সে পেয়ে গেছে, এবার আমি তাদের শেখাবো পুরো মানব জাতির সাথে বেঈমানী করার শাস্তি কি হতে পারে।
হোপ্রিম কমান্ডো বাহিনী এন্টি ম্যাটার ব্লেড কাটার দিয়ে শক্তিবলয় এর দেয়াল ফুটো করে আমাদের আঙ্গিনায় এসে আচানক আক্রমন করে, ইরিনার খুব কাছেই বিস্ফোরন হয় একটা, মারা পরে খুব দ্রুত, সৌভাগ্যবসত। আমি ভাগ্যক্রমে পালিয়ে যেতে পারি তখন। তবে ওরা আমাকে খুঁজে বার করবেই। যদিনা ততক্ষণে গিজেল এসে পরে। ও তার কম্বোফাইটার নিয়ে আসলে কমান্ডো বাহিনী পালাবার পথ খুঁজে পাবে না।
আমি নিজে স্বাভাবিক কোনো মানুষ নই, অস্বাভাবিক আমার মানসিক ক্ষমতা। এরকম কিছু মানুষ পৃথিবীতে সব সময়ই ছিল। কেউ কেউ তাদের ক্ষমতা ব্যাবহার করে অনেক উঁচুতে উঠে গেছে, আমার বা গিজেলের মত মানুষরা সেটা গোপন করে গেছি। গিজেল অবশ্য একটা ব্যাংকে মাঝারি একটা জব করার পাশাপাশি তার বেসমেন্টে বসে বসে বিকট দর্শন রোবট বানায়। যে কোনো সামরিক অফিসারের মুখ দিয়ে লালা ঝরবে তার কালেকশন দেখলে। সে খুব গোপন রাখে তার এই শখটা, আমার মত কিছু বিশেষ বন্ধু জানি তার এই দিকটার কথা। টেকভাইস দিয়ে কিছুক্ষণ আগে যোগাযোগ হয়েছে তার সাথে, আমার বিপদ শুনে সে তার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর খেলনাটা নিয়ে রওনা হয়ে গেছে। দুইটা ছোট পোর্টেবল কুরু ইঞ্জিন লাগানো আছে কম্বোফাইটারে, আকাশ পথে কয়েক হাজার কিমি পথ আসতে খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়।
আমি টেকভাইসে ছোট একটা সিগনাল দেখলাম। গিজেল এসে পরেছে প্রায়। পাথরের গায়ে হেলান দিয়ে বসে অন্যমনস্ক হয়ে গেলাম হঠাৎ। এত দ্রুত এত কিছু ঘটে গেল, ঠিক মত কিছু চিন্তাই করতে পারছিলাম না। হোপ্রিমরা জানে তাদের স্ট্যামিনা কতটুকু, তাই সংকুচিত আয়তনে তীব্র বিস্ফোরক ব্যাবহার করেছে। আমি আর কয়েক মিটার কাছে থাকলে আমাকে খুঁজেও পাওয়া যেত না। ভাগ্যটা অতি ভাল আমার। ইরিনা আর বেঁচে নেই, ব্যাপারটা এখনো মাথায় ঢুকাতে পারছিনা, কেমন ঘোরের মধ্যে আছি মনে হচ্ছে। তখনি সার্চ পার্টির ফিরে আসার শব্দ শুনলাম, অনেকটা কাছে এসে পড়েছে, আমি আরো গুটি সুটি মেরে গেলাম।
কিছুক্ষণ সব নীরব। তারপরই বিচ্ছিরি একটা শব্দ করে আমার পিছনে কে যেন হেসে উঠলো। চমকে ফিরে দেখি একটা কদাকার মুখ। পুরো শরীর ধাতব আর্মারে ঢাকা হাতে একটা ভংকর চেহারার অজানা অস্ত্র। আমাকে ইশারায় বের হতে বলছে। আমার তো গলা শুকিয়ে কাঠ। কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাঁড়াতে যাব তখনই হিসসসসস করে একটা শব্দ হল আর হোপ্রিম কমান্ডোটা উড়ে গিয়ে শুণ্যে বিস্ফোরিত হয়ে গেল। আমি হাহা করে হেসে উঠলাম। গিজেল এসে পড়েছে। এবার মজা হবে।
পরের এক মিনিট যা হল, সেটা বর্ণনা দেয়ার ভাষা আমার নেই। উড়ে এসে ঠিক হোপ্রিম কমান্ডো বাহিনীর সামনে ল্যান্ড করলো গিজেল তার কম্বোফাইটার নিয়ে। কোনো কথা বা সতর্ক বানী নেই, ভয়ানক ক্রুদ্ধ পৌরানিক দেবতার মত দেহ সেটার,নির্মোহ ভাবে কচুকাটা করতে লাগলো কমান্ডো দল টাকে। একেক জনকে ধরছে, মুচড়ে,ছিঁড়ে ফেলছে নির্বিকার ভাবে। কিছুক্ষণ ভ্যাবচেকা খাওয়ার পর হোপ্রিমরাও পালটা আক্রমন শুরু করে কিন্তু কম্বুর গায়ে চতুর্থ, পঞ্চম মাত্রার বিস্ফোরকও যেন আঁচড়ও কাটতে পারছিলো না। পনের ফুট লম্বা এই ম্যানুয়েল অপারেটিং অ্যাসল্ট রবোর ভিতর বসে গিজেল যেন গেম খেলছে। হোপ্রিমরা যখন লেজ তুলে তাদের বাই-ভার্বালের দিকে পালাতে গেল তখন গিজেল তার গাটলিং গানের ফায়ার ওপেন করলো। প্রাগৈতিহাসিক এই অস্ত্রের কার্যকারিতা এখনও ভয়াবহ।
শেষ হোপ্রিমটাও নিথর হয়ে গেলে গিজেল রবোট থেকে বের হয়ে আমার কাছে ছুটে আসে। আমি তাকে জড়িয়ে ধরি। কিছু বলিনা দুজন। আমরা পরস্পরকে বুঝি। নিঃশব্দ বালুতটে কেবল বাতাসের হুহু শব্দ।
৪.
কিছুক্ষণ পর। গিজেল আর আমি উড়ে চলছি প্রশান্ত মহা সাগরের উপর দিয়ে, হোপ্রিমদের ভাইবার্বাল দিয়ে, কম্বু আসছে পিছন পিছন। 'তো, এবার কি করবি?" আমি সামনে তাকিয়ে বললাম,"ফুল অ্যাসল্ট"
"ফুল অ্যাসল্ট? তুই বলেছিলি এটা আমাদের যুদ্ধ না..."
"তখন ভাবিনি, এখন ভাবছি। কি করছি আমরা? আমি একটা ফালতু ফার্মের টেকনিশিয়ান, তুই ব্যাংকের হিসেব দেখিস...এটা কোনো লাইফ? আমাদের ক্ষমতা আছে পুরো পৃথিবীকে লীড দেয়ার, তা না দেই, এই হোপ্রিম নামের বিষফোঁড়াটা দূর করে যাই। লাইফে কোনো আনন্দ ছিলনা আমার। ইরিনা আমাকে বেঁচে থাকার আনন্দ, উত্তেজনা চিনিয়েছিল। সে আমার জন্য মারা গেছে,গিজেল। কিন্তু কিছু করার যে মজাটা আমি পেয়েছি,সেটা আমি হারাতে চাই না। আয়, একবারের জন্য আমাদের ক্ষমতাটা দেখিয়ে দেই। একবারের জন্য তীব্র ভাবে বাঁচি..." আমার কথা শুনতে শুনতে ফরাসী মেয়েটার চোখে মুখে কিসের যেন আভা ফুটে উঠলো, সে তার জীভ দিয়ে ঠোঁট একবার চেটে বলল, " রড্রিক আর ওমান কে সিগনাল পাঠিয়ে দেই তাহলে" আমি সায় দেই,"হুম, তোর বেসমেন্টই আমাদের ক্যাম্প হবে" সে মাথা ঝাঁকিয়ে তার কাজ শুরু করে দেয়।
আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলি, "হোপ্রিমেরা তৈরী হও, দুঃস্বপ্ন আসছে"।
[চলবে]
২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:১১
ধাতবগোলক বলেছেন: ওয়েট করেন, আগামী খন্ডে সমাপ্ত
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৫৬
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ওয়াও...
ভালু ভালু.. তারপর.......................................