নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সরল বচন

ধাতবগোলক

জন্মেছি যখন চিহ্ন রেখেই যাবো....

ধাতবগোলক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অণুগল্পঃ নিয়তি

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৬

১.

নীরঞ্জন বাবু উঠোনে পিড়ি পেতে বসে আছেন। তার পিঠে সকালের মিঠা রোদ এসে লাগছে। শরীরে আরাম দায়ক আলস্য। তবে তিনি সামান্য চিন্তিত। চিন্তার কারণ বাড়ির সামনে রাস্তায় দাঁড়িতে থাকা ছেলেটা।



ছেলেটা মুসলিম, নাম রানা, খুব ছোট থেকে চেনা জানা। তার একমাত্র মেয়ে পুষ্পের বন্ধু। এই এক রানা ছাড়া পুষ্পের আর কারো সাথে মিশতে দেখেন নি। পুষ্প হয়েছে তার মায়ের মত। পুষ্পকে জন্ম দিতে গিয়ে মারা যাওয়া গৌড়ির কেবল চেহারা না, অদ্ভুত চুপচাপ স্বভাবটাও পেয়েছে মেয়েটা।



সেই ছোট বেলা থেকে রানা আর পুষ্প এক সাথে স্কুলে যায়। আগে ছেলেটা ঘরে ঢুকে তার নীরঞ্জন কাকুর ঘাড়ে উঠে বসে থাকতো, এটা সেটা খেতো। দেখতে দেখতে তারা বড় হয়ে গেল। ক্লাস নাইনে পড়ে তারা। এখন ছেলেটা কেমন জানি হয়ে গেছে,না ডাকলে কাছে আসে না।কিসের যেন সংকোচ।



পুষ্প স্কুলের জন্য তৈরী হয়ে বেরিয়ে এল। "আসি বাবা" বলে দ্রুত পায়ে চলে গেল রানার কাছে। "সাবধানে যাস মা" নীরঞ্জন বাবুর কন্ঠস্বর তার কানে সম্ভবত যায় না। ছেলে-মেয়ে দুটো চোখের আড়াল হওয়া পর্যন্ত তিনি তাকিয়ে রইলেন। হোক যতই ভাল ছেলে, হোক যতই অন্য ধর্মের, একটা বয়সের পর আর মেয়েকে একটা ছেলের সাথে এভাবে মেলা মেশা করতে দেয়া যায় না। কিন্তু কিভাবে মেয়ের কাছে এটা নিয়ে কথা বলবেন না ভাবতেই দিশেহারা বোধ করেন নীরঞ্জন বাবু।



২.

রানা আর পুষ্প চুপচাপ হাঁটছে। এইটা স্বাভাবিক না। পুষ্প পুরো রাস্তা প্রচুর বকবক করে। দুনিয়ার কাহিনি বলে তার সাথে। তবে পুষ্পের এই বাচালতা কেবল রানার সাথেই। আজকে হঠাৎ পুষ্পের নিঃশব্দতা অস্বস্তিকর লাগে রানার কাছে।

"এই রানা"

"হুম"

"না কিছু না"

"বল কি বলবি"

"আচ্ছা, আমাকে তোর কেমন লাগে?"

রানা একটু চমকে যায়। এটা কি টাইপের প্রশ্ন?

"মানে কি?"

"আমাকে তোর ভাল লাগে না?"

"আজব তো, তুই আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু,তোকে আর ভাল লাগে না কিভাবে?"

"আমাকে ভালবাসিস?"

রানা ঢোকঁ গিলে দাঁড়িয়ে যায়। তার কান দিয়ে হালকা ভাপ বের হচ্ছে।

পুষ্প রানার একদম মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,

''বল,ভালবাসিস না আমাকে?"

"বাসি তো" রানার মুখ থেকে অস্ফুট ভাবে বেড়িয়ে আসে।

"প্রেম করবি আমার সাথে? বিয়ে করবি আমাকে?"

এবার ছিটকে বাস্তবে চলে আসে রানা। কি বলছে এসব এই মেয়ে! যদিও পুষ্প অসম্ভব সুন্দর আর ভালো মেয়ে, তারপরো এটা নেহাতই পাগলামি।

"পুষ্প শোন, আমার আব্বা আর চাচাকে তো চিনিসই। আমি যদি একটা মুসলমান মেয়ের সাথেই প্রেম করি তাহলে আমারে কেটে ফেলবে। আর তোর সাথে আমার খুব সুন্দর একটা রিলেশন। হঠাৎ এরকম শুরু করলি কেন?''

পুষ্প দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে কান্না চাপার চেষ্টা করছে। সুন্দর চোখ দুটো পানিতে টলমল। হঠাৎ ঘুরে হনহন করে হাঁটা দিল সে। রানার একবার মনে হল পিছন থেকে গিয়ে তাকে থামায়। কিন্তু সে কিছুই করলো না। ভয়ংকর খারাপ মন নিয়ে পুষ্পের চলে যাওয়া দেখছে। মেয়েটা চোখ মুচ্ছে হাত দিয়ে।



৩.

বেশ কয়েক বছর পরের কথা। ঈদের ছুটিতে রানা বাড়িতে এসেছে। দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে সে। পুষ্পকে ফিরিয়ে দেয়ার পর আর কোনো মেয়ে আসে নি তার জীবনে। সেদিনের পর পুষ্পের সাথেও তার বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায় একবারেই। পুষ্প তাকে একদমই সহ্য করতে পারতো না। কলেজে উঠেই মেয়েটা আরেক মুসলিম ছেলের সাথে পালিয়ে বিয়ে করে ফেলে। ধর্মন্তারিত হয়। এর পর কি হলো আর জানা হয়নি রানার।



একদিন বিকেলে ঘুরতে ঘুরতে পুষ্পদের বাড়ির কাছে চলে আসে। উঠোনে এক অপরিচিত মেয়ে বসে ধান ঝাড়ছে। কি মনে করে রানা এগিয়ে যায়। কাছে যেতেই মেয়েটা তাকায় তার দিকে। রানা বিস্ময় নিয়ে আবিষ্কার করে এটা পুষ্প! কি হাল হয়েছে তার! পুষ্পও তাকে দেখে চমকে উঠে। কিছু না বলে বাড়ির ভিতর চলে যায় সে। নীরঞ্জন বাবু বেরিয়ে আসেন। রানাকে দেখে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরেন। কান্না জড়ানো গলায় বলেন "এটা কি হলো বাবা, এটা কি হলো..."



পুষ্পের বাবার মুখে রানা ধীরে ধীরে জানতে পারলো পূষ্পের দুর্ভাগ্যের কথা। যে ছেলের জন্য পুষ্প ঘর,ধর্ম ছেড়েছিল, সেই ছেলে বছর খানেকের মধ্যেই পূষ্পের গায়ে হাত তোলা শুরু করে। ছেলেটার আরো অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল। পুষ্প এটার প্রতবাদ করতেই নিষ্ঠুরের মত মার খেতে হয়। এক দিন ওই ছেলে নিখোঁজ হয়ে যায়। কোনো ভাবেই তার নাগাল না পেয়ে পুষ্প আবার ফিরে আসে তার বাবার কাছে। এখন এই মেয়েকে নিয়ে কই যাবেন তা বুঝে পাচ্ছেন না তিনি। কলেজে উঠার পর আর পড়াশুনাও হয় নি মেয়েটার।



রানা অনেক চেষ্টা করেও স্বান্তনার ভাষা খুঁজ়ে পায় না। কোন কারণ নেই তারপরও পুষ্পের এই পরিণতির জন্য তার নিজেকেই দায়ী মনে হতে লাগে। সেদিন যদি ঐভাবে তার মুখের উপর না বলে দিয়ে তাকে ধরে রাখতো, একটা সময় সে নিজেই তার ভূল বুঝতে পারতো। বাসায় ফেরার পথে হঠাৎ সে উপলব্ধি করে, এটাই নিয়তি। সে ফিরিয়ে দেবার পরও ঐ মেয়ে নিজের নিয়তি ঠিকই খুঁজে নিয়েছে। বুক চিড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে তার।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:০২

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: কমবয়সের আবেগ, প্রায়ই দেখা যায় দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ভালো লিখেছেন।

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:০১

ধাতবগোলক বলেছেন: ধন্যবাদ :)

২| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২৭

সাদরিল বলেছেন: ভালো লাগলো।ব্লগে অনেককেই ইদানিং অনুগল্ লিখতে দেখছি যদিও অনুগল্পের কনসেপ্টটা আমার কাছে ক্লিয়ার না।ছোটগল্পই কি অনুগল্প নাকি ছোটগল্পের চেয়ে ছোটগল্পকে অনুগল্প বলে?

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২৬

ধাতবগোলক বলেছেন: অণুগল্প লিখলে মাইনষে পড়ে -_-

৩| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৭

নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন:
ভাল হয়েছে গল্পগুলো!

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৪:২০

ধাতবগোলক বলেছেন: গল্প তো ভাই একটাই :/

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.