![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিচারপতি অভিশংসনের এখতিয়ার সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল থেকে পার্লামেন্টের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার একটি বিল সংসদে "ষোড়শ সংশোধনী বিল আকারে উত্থাপিত হয়েছে বলে জানা যায়। এর ভালো-মন্দ, তাত্বিক, ব্যবহারিক এবং বর্তমান সংসদে এটা পাশের জন্য কতটা উপযুক্ত অথবা আদৌ জরুরী কিনা সে বিষয়ে অনেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে বিস্তারিত আলোচনা করছেন। এমনকি সরকারকে নৈতিক ভাবে সাপোর্ট করে এমন অনেক লিখকও এটি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ বিস্ময় প্রকাশ করেছেন এটা পাশের এটাই কি জরুরী সময়? এটা পাশের বা উত্থাপনের পিছনে কারা জড়িত সে সব প্রশ্নও উঠছে। তত্ব এবং আইনগত ভাবে এটা পাশের সব ধরণের আইনগত ভিত্তি এই পার্লামেন্টের থাকা সত্বেও মানুষের মধ্যে বিস্ময় কাজ করছে । সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদ বহাল থাকা পার্লামেন্টে এটার সুস্থ প্রয়োগ কি আদৌ হবে? যেখানে সরকার বিচারক নিয়োগ, পদায়নে পরোক্ষভাবে প্রভাব রাখতে পারে তথা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এমন একটা দৃঢ ধারণা সত্বেও কেন এই সংশোধনীর প্রয়োজন তা সচেতন মহলকে বিস্মিত করেছে বেশী। আলোচনার সুবিধার্তে বর্তমান সংবিধানে যে বিধানটি বলবৎ আছে তার অংশ বিশেষ নিম্নরূপ। বিস্তারিত লিংকে পাওয়া যাবে।
৩) একটি সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল থাকিবে যাহা এই অনুচ্ছেদে ‘‘কাউন্সিল’’ বলিয়া উল্লেখিত হইবে এবং বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারকের মধ্যে পরবর্তী যে দুইজন কর্মে প্রবীণ তাঁহাদের লইয়া গঠিত হইবেঃ
(৪) কাউন্সিলের দায়িত্ব হইবে-
------
(৬) কাউন্সিল তদন্ত করিবার পর রাষ্ট্রপতির নিকট যদি এইরূপ রির্পোট করেন যে, উহার মতে উক্ত বিচারক তাঁহার পদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে অযোগ্য হইয়া পড়িয়াছেন অথবা গুরুতর অসদাচরণের জন্য দোষী হইয়াছেন তাহা হইলে রাষ্ট্রপতি আদেশের দ্বারা উক্ত বিচারককে তাঁহার পদ হইতে অপসারিত করিবেন।
প্রসংগ্র ক্রমে এখানে বিচারক নিয়োগে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার বিষয়ে সংবিধানে রেফারেন্সটা তুলে দিলাম:
৯৫ অনুচ্ছেদে বিচারপতি নিয়োগ বিষয়ে বলা আছে :
৯৫। (১) প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান করিবেন।
নিয়োগ কর্তা তথা রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাও এখানে বিধৃত করা হলো
৪৮। ৩) এই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্টপতি তাঁহার অন্য সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করিবেন:
তবে শর্ত থাকে যে, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোন পরামর্শদান করিয়াছেন কি না এবং করিয়া থাকিলে কি পরামর্শ দান করিয়াছেন, কোন আদালত সেই সম্পর্কে কোন প্রশ্নের তদন্ত করিতে পারিবেন না।
এই প্রসংগে আরো বিস্তারিত আসার আগে আরো কিছু দিক এবং এর পটভুমি নিয়ে আলোচনা করছি:
বাংলাদেশের মালিকানা(enacting authority )/ প্রজাতন্ত্র/পার্লামেন্ট/ সাংবিধানিক প্রাধন্য।
অনুচ্ছেদ ৭ মতে বর্ণিত :৭৷ (১) প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে৷
(২) জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসমঞ্জস হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে৷
এই বিল পাশের বা সংশোধনের তাত্বিক বৈধতা:
এই দেশের মালিক জনগণ এবং জনগণের পক্ষ থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে সেই প্রতিষ্ঠানটির নাম হলো পার্লামেন্ট। এই কারণেই শাসন বিভাগ তথা প্রধানমন্ত্রী/মন্ত্রীপরিষদ তাদের নীতি ও কর্মাকান্ডের জন্য ব্যাক্তিগত এবং যৌথভাবে জাতীয় সংসদের(জনগণের) নিকট দায়ী থাকবেন এবং জাতীয় সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ হলে মন্ত্রীপরিষদের বিলুপ্তি ঘটবে। (এখানেও অবশ্য ৭০ অনুচ্ছেদের ভাগড়া আছে) তাত্বিক ভাবে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় জনগণের ক্ষমতার প্রতিষ্টানের কাছে যে কোন কিছুর ভার দেয়া হলে সেটা যে কোন দিক দিয়েই বৈধ এবং সমুচিত। এখানে পার্লামেন্ট বলতে সংখ্যাগরিষ্টের(দুই তৃতীয়াংশ) মতকে বুঝানো হয় একক কোন সংসদ;ওসমান অথবা পিন্টুকে ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে এটা বুঝানো হচ্ছে না। আবার ওসমান অথবা পিন্টু মানেও কিন্তু তাত্বিক ভাবে এই এলাকার জনগণকেেই বুঝানো হচ্ছে। কিছুদিন আগে এক বিচারক কর্তৃক পার্লামেন্টের তৎকালীন স্পীকার আব্দুল হামিদ সম্পর্কে অসৌজন্যমুলক বক্তব্য এবং সেই সময় সুপ্রিম জুড়িশিয়াল কাউন্সিলের নিরব ভুমিকা এই সংশোধনীর প্রয়োজনীয়তাকে সামনে নিয়ে এসেছে । কারণ বাংলাদেশে সাংবিধানিক প্রাধান্যের(supremacy of the constitution) সাথে সাথে এ দেশের মালিকের প্রতিষ্টান পার্লামেন্টের প্রাধান্যও অস্বীকার করার উপায় নেই।এ ছাড়াও এটা মুল সংবিধানে বিচারপতি অভিশংসনের ভার পার্লামেন্টের হাতে ছিল এবং পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এটা রয়েছে।
আরেকটি ভিত্তি হলো:
সামরিক বিধি দ্বারা সংবিধানের কোন পরিবর্তনও করা যায় না। প্রেসিডেন্ট জিয়ার সামরিক সরকারের ঘোষণাপত্র মারফত নতুন করে প্রতিস্থাপিত ৯৬ অনুচ্ছেদের সুপ্রিম কাউন্সিল গঠনের বিধান গোড়াতেই অবৈধ ছিল। যদিও তা ১৯৭৮ সালের পরে পঞ্চম সংশোধনী দ্বারা বৈধতা দেওয়ার প্রয়াস চালানো হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের রায়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করা হয়। কাজেই সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ যদি ’৭২ সালের সংবিধানে ফিরিয়ে নেওয়া হয় তাহলে আইনি ব্যত্যয় কিছু হবে না।(কোড ফ্রম-এম এম খালেকুজ্জামান: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট )
বিরোধীতার/ সংশয়ের ক্ষেত্র:
তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতির কানাগলির কথা কারো অজানা নয়। আমি কেবল মাত্র "অভিশংসন" হবে সেটার সংশয়ে শংকিত নই। আমি শংকিত এই জন্য যে, অভিসংশনযোগ্য হলেও অনেক বিচারপতি দলীয় আনুগত্যের প্রমাণ দেখিয়ে পার পেয়ে যেতে পারেন। পাশের দেশেও এমন নজীর আছে। আমি শুধু এই বারের পার্লামেন্ট নিয়ে নয়, বাংলাদেশের দুর্বল নির্বাচনী ব্যবস্থা/ দুর্বল দলীয় গণতন্ত্র এবং সার্বিক দেশীয় কালচারের কারণে আমরা যে এর চেয়ে ভালো পার্লামেন্ট অদুর ভবিষ্যতে পাবো এমন আশা করছি না। ভোটের দিন বা ভোটের কয়েক আগে থেকে বেহেস্তী পরিবেশ মানেই এটা নয় যে গণতন্ত্র পাশ করে গেলো আর আমরা একটা ভালো পার্লামেন্ট পেলাম । আমাদের গণতান্ত্র এখনো ভোটের দিনের সুষ্ঠতা কেন্দ্রিকই রয়ে গেলো ।
বিচারপতি অভিসংশনের এখতিয়ার সংসদের কাছে ফিরে আসা মানে এই নয় যে প্রতিমাসে একজন/দুইজন বিচারপতি অভিসংশিত হবেন । সমস্যা হলো এই অভিসংশনের ভয়ে কেউ কেউ তটস্থ থেকে সঠিক বিচার ব্যবস্থা বিঘ্নিত করবেন। আবার কেউ কেউ দলীয় আনুগত্যের কারণে অভিশংসন যোগ্য অন্যায় করে যাবেন। সমস্যা তাদেরই বেশী হবে যারা একটু "চিত্ত যেথা ভয় শুন্য উচ্চ করি শির" টাইপের।
আবার সুপ্রীম জুড়িশিয়ার কাউন্সিলও যে স্বাধীনচেতা কোন বিচারপতিকে পুরা সুরক্ষা দেবে অথবা তার পেশাগত পরিবেশ ক্ষুন্নের প্রচেষ্টা তারা গোপনে চালবেননা এমনও নয়। প্রধান বিচারপতির সাথে বনিবনা না হলে প্রধান বিচারপতি উক্ত বিচারপতির বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে ক্যামেরা ট্রায়াল হিসাবে ব্যবহারের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। পার্লামেন্ট বরং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল থেকে অনেক বেশী উম্মুক্ত ভাবে বিষয়টি দেখবে জনগণ জানবে এবং দুই তৃতীয়াশের ভোটে পাশ হবার মত জটিল প্রক্রিয়া থাকার কারণে বিচারপতিরা আরো বেশী সুরক্ষিত থাকবে অভিশংসনের খড়ক থেকে এটা ভেবে নিতে পারি।
বিচারক নিয়োগের কমিটি: বিচারক নিয়োগের বর্তমান যে প্রক্রিয়া সেটি কি যথার্থ? বিচারক নিয়োগে কোন স্বচ্ছ কমিটি কি করা যায় না?
সমালোচকদের দৃষ্টি এ দিকে আরো বেশী দেয়া উচিত বলে মনে করছি।
বিচারকরা অবসরে গেলে আর আইন পেশা বা লাভ জনক পেশায় আগে থাকতে পারতো না তাদের পেশাগত গাম্ভীর্য ধরে রাখার জন্য। কিন্তু পঞ্চদশ সংশোধনীতে এটি বাতিল করা হয়।(৯৯ অনুচ্ছেদ ২ নং ধারা।) যেটি তখন কোন সমালোচনার জন্ম দেয় নাই ব্যাক্তি স্বাধীনতার জায়গা থেকে দেখার কারণে। কিন্তু বিচারক নিয়োগে/পদায়নে জৈষ্ঠতা লংঘন একটি রুটিন সমস্যা হিসাবে সব সময় বিরাজ করছে। এটার থেকে উত্তরণের জন্য জোরালো কোন উদ্যোগ/সমালোচনা দেখা যায় না। তাই বিচারক নিয়োগ / পদায়নের জন্য একটি বিশেষ কমিটি থাকা জরুরী ।
সমাধানের পথ! : সমস্যা যে কোন দিকেই থাকবে । কংক্রীট কোন ভালো সিস্টেম হয় তখনই, যখন সব কটি অর্গানই সন্তোষজনক লেবেলে নিজেদের পারফর্ম করে। একটা দেশের মানুষের গড় সততার লেভেল , রাজনৈতিক সামাজিক ভদ্রোচিত সংস্কৃতি বিরাজ না করলে জুড়িশিয়াল কাউন্সিলও যা পার্লামেন্ট ও তাই। তবে আশ্চর্য্যের বিষয় হলো বিচারক নিয়োগে যেখানে আমাদের সরকার গুলা প্রাথমিক নিয়ন্ত্রণ করে থাকে(ধারণা) এবং এই সরকারের অন্যান্য অর্গান / বাহিনী/দল গুলাকেও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে যেভাবে সুবোধ বালকে পরিণত করে রাখতে পেরেছে সেখানে এখন এমন কি হলো যে তাদের এই মুহুর্তে এই বিল পাশের জরুরত হয়ে পড়েছে? বিচারপতিদের উপকারিতার কথা বাদ দিলাম তাদের নিজেদেরই বা কি উপকার হলো বা হবে সেটা বুঝতে পারলাম না। নির্বাচন কমিশন কিছুদিন আগে এমন একটা সংশোধনী আনলো যেটার আসলে তেমন কোন উপযোগীতাই ছিল না ।কিন্তু সেটা করতে গিয়ে লাভের লাভ হয়েছিল ব্যাপক সমালোচনা। সময়ে সময়ে কাদের মাথায় এমন উদ্ভট চিন্তা মাথায় আসে আমি বুঝতে পারি না ? আপনি পারেন কি?
ফেসবুক :https://www.facebook.com/asm.arshad
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩০
নুরএমডিচৌধূরী বলেছেন: পড়লাম
ভাল লেগেছে
শেষ করতে পারিনি
লিখায় ভাললাগা
জানিয়ে গেলাম++++++