নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি তোমাদেরই

আশমএরশাদ

শিশিরের শব্দের মত

আশমএরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভিয়েনা কনভেনশন -কুটনৈতিকদের দায় মুক্তি(immunities) ও উত্তর কোরীয় কুটনৈতিক --

০৮ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৮

খবর:১-বাংলাদেশে উত্তর কোরিয়া দূতাবাসের ইকনোমিক অফিসার সন ইয়ামকে (৫০) আটক করেছে ঢাকা কাস্টমস এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটলিয়নের যৌথ দল। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ১৭০টি সোনার বারসহ মোট ওজন ২৭ কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়।

খবর ২:২৭ কেজি সোনাসহ আটক ঢাকায় উত্তর কোরীয় দূতাবাসের কর্মকর্তা সন ইয়ামকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আজ বেলা দুইটার দিকে শুল্ক কর্তৃপক্ষের কাছে মুচলেকা দিয়ে তাঁকে নিয়ে গেছেন বাংলাদেশে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসের কর্মকর্তারা। বিদেশি একজন কূটনীতিকের বিরুদ্ধে মামলা করার আইনগত কোনো ক্ষমতা শুল্ক কর্তৃপক্ষের নেই। ভিয়েনা কনভেনশনের শর্ত অনুযায়ী তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।



এই সংক্রান্ত খবরে বেশীর ভাগ পাঠক বিভ্রান্ত হয়েছেন কেন সে ছাড়া পেলো এবং ভিয়েনা কনভেনশনে এই ব্যাপারে কি বলা আছে এ সব নিয়ে। এর আগেও পাকিস্তানি এক কুটনৈতিক জাল টাকা সহ ধরা পড়েছিল এবং নাশকতার অভিযোগও ছিল তার বিরুদ্ধে তারপরও পাকিস্তান দুতাবাস তাকে নিয়ে যেতে পেরেছিল। এটা নিয়েও পাঠকের কৌতুহল আছে।

কুটনৈতিকদের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক আইন কি বলে অথবা তাদের প্রতি ভিয়েনা কনভেনশন (১৯৬১) কি দায়মুক্তির সুবিধা দিয়েছে তার দিকে আমি মানবাধিকার কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান ডঃ মিজানের আন্তর্জাতিক আইন বই থেকে কিছু রেফারেন্স সহ আলোচনা করার প্রয়াস চালিয়েছি অল্প কথায়।



কুটনৈতিক প্রতিনিধি (রাষ্ট্র দুত(ambassador) ,উপ রাষ্ট্রদুত ,চার্জ দ্যা এয়াফেয়ার্স , মিশন প্রধান,মিশনের কর্মচারীবর্গ) হচ্ছে কোন প্রেরক রাষ্ট্রের প্রতিনিধি যিনি কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের উদ্দেশ্যে অন্য কোন গ্রাহক রাষ্ট্রে নিয়োজিত থাকেন। কূটনৈতিক মিশনের মুল কাজ হলো গ্রাহক রাষ্ট্রে প্রেরক রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করা এবং উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে সার্বিক সম্পর্ক উন্নয়ন করা।

কুটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তা কর্মাচারীদেরকে গ্রাহক রাষ্ট্র কিছু বিশেষ সুযোগ সুবিধা ও দায়মুক্তি দিয়ে থাকে।

১৯৬১ সালের ভিয়েনা কনভেনশনে অনেক গুলা সুবিধা ও দায়মুক্তির অনুচ্ছেদ থেকে আমি আলোচ্য ঘটনার জন্য প্রাসঙ্গিক কয়েকটা বিষয় তুলে ধরছি:

কুটনৈতিক থলে(diplometic bag): কূটনৈতিক থলে খোলা বা আটক করা যাবে না। এমন ঘটনার উদ্রেকও যদি হয় যে কুটনৈতিক ব্যাগের অপব্যভার হচ্ছে বা বা সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ দেখা দেয়,তারপরও কুটনৈতিক ব্যাগের অলঙ্ঘণীয়তা বজায় থাকবে।



কনভেনশনে এই রকম আইন থাকলেও বিভিন্ন সময় এর ব্যত্যয় হয়েছে অথবা হতে বাধ্য হয়েছে। তেমনি ৩টি কেস হলো-ডিকো ইনসিডেন্স কেইস(১৯৮৪), ক্রন্দনরত সুটকেস মামলা (egypt vs italy(1964) ইউ এস এস আর লরি ঘটনা (১৯৮৪) উপরোক্ত ৩টি ঘটনার মধ্যে আমি ক্রন্দনরত সুটকেস মামলাটি তুলে ধরছি বুঝার সুবিধার জন্য:

ইতালির রোম বিমানবন্দরে মিশরের একজন কুটনৈতিক প্রতিনিধি একটি স্যুটকেস করে নিজ দেশে ফেরত যাচ্ছিলেন। বিমান বন্দরের কাষ্টম অফিসিয়ালরা স্যুটকেসটির মধ্য থেকে কান্নার শব্দ শুনতে পায়। ফলে তারা ব্যাগটি তল্লাসী করতে চায়। কিন্তু মিশরের কুটনৈতিক অস্বীকার করে। তারপর স্যুটকেসটি জোর করেই তারা খোলে এবং দেখে যে, একজন ইসরাঈলী কূটনৈতিককে স্যুটকেসটির মধ্যে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মিশরের কূটনৈতিক বলেন যে , তারা ব্যাগটি খুলে ১৯৬১ সালের ভিয়েনা কনভেনশনের অনু:২৭(৩) বর্ণিত বিধানের লঙ্ঘন ঘটিয়েছে।

বিচার্য বিষয়:রোম বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষের কাজটি আন্তর্জাতিক আইনের বা কূটনৈতিক সুযোগ সুবিধার লঙ্ঘন কি না?

রায়:কর্তৃপক্ষের কাজটি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন নয় বরং এরকম কাজ জরুরী।

ডিকোর মামলাটিও তেমনই ধরণের আর এসব মামলার রায়ের নজিরের কারণে বর্তমানের প্রতিষ্টিত নীতি হলো: কূটনৈতিকের ব্যক্তিগত তল্পিতল্পাও তল্লাশি থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত লাভ করবে যদি তাহা (ক)সরকারী কাজে আনীত দ্রব্যাদি খ)গৃহস্থলী অঙ্গীভুত এস্টাবিলিশমেন্ট এর জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি হয়।

প্রতিনিধির দ্বারা বা তার সম্মতিক্রমে তার সম্মুখেই পরীক্ষণ করা যাবে।

কোন কুটনৈতিকের তল্পিতল্পা তল্লাশির যথেষ্ট সন্দেহ প্রবণ কারনে করা হলে এবং তল্লাশির ফলাফল শুন্য হলে গ্রাহক রাষ্ট্র ক্ষমা প্রার্থনা করবে এটিই রাষ্ট্রীয় প্র্যাকটিস । কিন্তু যদি অবৈধ কিছু পাওয়া যায় তবে গ্রাহক রাষ্ট্র দ্রব্যাদি নিজেরা সিজ বা আটক না করে প্রেরক রাষ্ট্রের নিকট পাঠাবে।



এবার আসা যাক কূটনৈতিকদের দায়মুক্তি বিষয়ে কি বিধান আছে তা দেখার:

কুটনৈতিক প্রতিনিধি ব্যক্তি হিসাবে অলঙ্ঘনীয়, তাঁকে কোন প্রকার গ্রেফতার বা আটক করা যাবে না। গ্রাহক রাষ্ট্র যথাযথ সম্মান সহকারে তাঁর সহিত আচরণ করবে। কূটনৈতিক প্রতিনিধি সকল প্রকার ফৌজদারী এবং দেওয়ানী এখতিয়ার হতে বিমুক্তি ভোগ করবেন।(বিশেষ কয়েকটি কারণ ছাড়া--ব্যক্তিগত স্থাবর সম্পত্তি ধারণ, কোন সম্পত্তির কেয়ার টেকার হন, অথবা বেসরকারী কোন বাণিজ্যিক কারবারে যুক্ত হন)।



আশা করছি পাঠকরা আমার এই সংক্ষিপ্ত আলোচনায় কুটনৈতিকের ব্যাগ তল্লাসী ও সাজা না হওয়ার বিষয়টি নিয়ে কিছুট বিভ্রান্ত মুক্ত হবেন।

আমার ফেসবুক: https://www.facebook.com/asm.arshad















মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.