নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি তোমাদেরই

আশমএরশাদ

শিশিরের শব্দের মত

আশমএরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গবেষক

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৫২

গবেষক
*******
কেউ স্বীকার করুক আর না করুক অনিক আর অনিকের কিছু ঘনিষ্ট বন্ধুরা জানে অনিক একজন গবেষক। অনিক সব কিছুকে গবেষণার বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে দেখে। ইতিমধ্যে সে নানা আবিষ্কারের রেপ্লিকা তৈরী করেছে এবং বন্ধু মহলে সেগুলো দেখিয়ে মোটামুটি একটা সাড়া ফেলেছে। বুয়েটের ৩য় বর্ষে উঠার পরই তার মধ্যে নানা বিষয়ে গবেষণা করার মারত্মক আগ্রহ জন্মে। যন্ত্র ও যন্ত্রকৌশল নিয়ে কাজ করলেও সে যখন কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠে তখন সে বারান্দায় গিয়ে ইজি চেয়ারে বসে দোল খায়।

বুয়েটে ভর্তি হবার পরের সাপ্তাহেই অনিকের বাবা হার্ট এ্যাটাকে মারা যান। ছেলেকে ভালো জায়গায় ভর্তি করাতে পেরেছেন সেই আনন্দের হাসিটা মৃত বাবার মুখে দেখেছে বলে মনে করে অনিক। পুর্তমন্ত্রনালয়ের যুগ্মসচিব ছিলেন অনিকের বাবা। আর্থিক অবস্থা, জায়গা জমি বেশ ভালোই আছে। অনেক এলাকায় তার বাবা জমি রেখে গেছেন। বাবাতো বাবাই, তাই অনিক সততার পাল্লায় বাবাকে তোলেনি কখনো। অনিক বৈষয়িক বিষয় গুলি নিয়ে খুব একটা আগ্রহী নয়। তার বাবার রাখা জায়গা জমি, কোথায় কোথায় টাকা রাখা আছে সে সবের খোঁজ নিতে সে আগ্রহী হয়নি কখনো। তার ছোটভাই তৌহিদ এসবের ব্যাপারে খুব আগ্রহী। পারিবারিক আড্ডায় তৌহিদ নানা এলাকায় তার বাবার জায়গা আবিষ্কার করার কথা মা'কে জানায়। গাজীপুরের পাহাড়ের পাদদেশে নাকি বাবার কিছু জায়গা আছে। অনিকের সে জায়গাটার কথা শুনে আগ্রহ হয়েছিলো একবার। এমন একটা জায়গাতে সুন্দর একটা বাগানসমেত বাংলো বানাতে পারলে ভালো হতো। নাম দিতো অনিকপল্লী। কিন্তু পরে আর আগায়নি অনিক। সে বুঝে গেছে জমি নয়, যন্ত্রই তার আসল। এই ব্যাপারে তৌহিদ এবং মায়ের উষ্মাও কম নয়। বড় ছেলে হিসাবে অনিকের সম্পদের প্রতি উদাসীনতা তাদেরকে আহত করে খুব।

মা একদিন বলেছিলেন বাবার নাকি সাহিত্যের প্রতিও আগ্রহ ছিলো। কোন একটা ব্লগ সাইটে লিখতেন। অনিক বাবার নাম দিয়ে অনেক খুঁজেছে কিন্তু এখনো পায়নি। অনিকের গবেষণার অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি হলো তার বাবার লেখা আবিষ্কার করা।

অনিক মনে করতো সে যান্ত্রিক মানুষ, কম আবেগী মানুষ, কোন হরমোনই তাকে কাবু করতে পারবে না। বয়সের হাওয়া লাগুক, যতই দুষ্ট হরমোনের ঝড় আসুক অনিক বকুল গাছের মতো নোয়াবে কিন্তু ভাঙ্গবে না। কিন্তু হেনা মঞ্জিলের ৪র্থ তলায় বারান্দায় রাখা হাসনাহেনা গাছের পাতার ফাঁকে অথবা কখনো কখনো শুকাতে দেয়া কাপড়ের ফাঁক গলে একজনের ঝলক তাকে জ্বালাতন করছে ইদানিং। জটিল গবেষনার সময়ও ব্যাঘাত করছে আবছা দেখা সে অবয়ব। ভালো করে চেহারাটা দেখা হয়নি। দেখার খুব একটা চেষ্টাও করেনি অনিক।

কম্পিউটার, মডেম, ওয়েবক্যাম, মাদারবোর্ড, রোবটিক নানা টেকনোলজী সরঞ্জাম এগুলোর মতই তার কিছু সঙ্গী ছিলো তানজিম, সোহেল ও রুবিনা। রুবিনা তার দূর সম্পর্কের কাজিন হয়। তাদের আড্ডায় বাধ্য হয়ে যেতে হতো এবং কফি খেতে খেতে রুবিনা টিটকারী মারতো অনিককে। পছন্দ করার মতো মেয়ে রুবিনা, কিন্তু অনিকের আগের প্রেমিকার নাম সফটওয়ার। তাই দুর্দান্ত প্রেমের কবিতা লিখার আশায় যে সব কবিরা কলম খুলেছিলো তারা হতাশ হয়ে ঘরে ফিরলো রুবিনার মতো ব্যর্থ মনোরথে।

প্রেম ইগনোর করা ছেলেদের মেয়েরা পেয়ে বসে বেশী। হাসনাহেনা গাছের আড়ালের মেয়েটি এখন শুকাতে দেয়া কাপড় নিজ হাতে সরিয়ে দেয়। হাসনাহেনা গাছটি পুরা দেখা যায়। বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অনিকের ছোটবোনের সাথে টুকটাক কথা বলে। কফি শপের ডান পাশের টেবিলে অনিকের উল্টোপাশে বসে জানিয়েছিলো মন খারাপ বিকালে যে মেয়েটি দাঁড়িয়ে থাকতো হাসনাহেনার পাতার ফাঁকে সে মেয়েটির নাম অহনা। অনিক আগে ক্লান্ত হয়ে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিতো যে বারান্দায় গিয়ে সে বারান্দায় গেলে এখন উল্টা নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে , অহেতুক বুক কাঁপে।

বাবার লেখাটা অনিক আবিষ্কার করেছে অবশেষে। এতদিন বাবার নাম দিয়ে সার্চ দিয়ে সে লেখা খুঁজে পায়নি। যখন "অনিক" নাম দিয়ে গুগলে সার্চ দিয়েছে তখন সে শব্দনীড় ব্লগের কিছু লিখা পেয়ে যায়। লেখকের নাম অনিক দেখে সে কিছুক্ষণ বাবার কোলে ফিরে যায়। কয়েকটা পোস্ট এবং ইমেল আইডি দেখে অনিক নিশ্চিত হয় এটা তার বাবারই লিখা। বেশীর ভাগই গল্প। "অনিক" নামে সার্চ দিতে পরামর্শ দিয়েছিলো সুহানা। সুহানা বুয়েটে ১ম বর্ষের ছাত্রী । একবার বিজ্ঞান মেলায় অনিকের কো- প্রেজেন্টারের দায়িত্বে ছিলো। মেলায় চা নাস্তার খুব অভাব ছিলো। একটা মাত্র ছোট ক্যান্টিন ছিলো মেলার এক কোণায়। তাই প্রায় চা খেতে হতো ভাগ করে । একবার একটি মাত্র সমুচা পেয়েছিলো ভাগে । কে খাবে সেটা নিয়ে চলছিলো অনেক সাধাসাধি। সেই থেকে সুহানা অনিকের মনের ভাগটাও কিছুটা নিয়ে রেখেছে। সুহানার রয়েছে তীক্ষ্ণ বুদ্ধি। প্রায় তার ইনটোইশন এবং হাইপো গুলা সত্য হয়ে যায়। এক মাসের উপর অনিক বাবার লেখাগুলো খুঁজে খুঁজে হয়রান অথচ সুহানার এক বুদ্ধিতেই সে পেয়ে গেলো! অনিক বুঝে গেলো সন্তানের নাম হয়ে যায় বাবাদের পাসওয়ার্ড এবং নিক নেম।

অনিকের জীবন যাপন যখন অনিয়মিত, জায়গা জমি সম্পদ এবং প্রেম নিয়ে যখন তার খুব অনাগ্রহ তখন তার মা আফরোজা খানম ভাবনায় পড়ে যায়। তৌহিদের উপর সে আর কত কাজ চাপাবে! বিয়ের কথা উঠলেই অনিক বলে পাশ করার আগে সে কখনো বিয়ে করবে না। রুমের নানা রকম যন্ত্রপাতিতে সে যেন কি খোঁজে! কি যেন বানাবার আছে তার! ক্লান্ত হয়ে আধোশোয়া শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে অনিক।

অনিক তার প্রোগ্রামিং এর কাজে হাঁপিয়ে উঠলে মাঝে মাঝে বাবার লেখা পড়ে। বাবাকে আবিষ্কার করে নতুন রূপে। পুর্তমন্ত্রণালয়ের অবাধ সুযোগ সুবিধা পেয়ে বৈষয়িক ভাবে অনেক সম্পদ অর্জন করেও বাবা কিছুটা সময় রাখতেন লেখার জন্য। লেখকরা স্বীকার করুক আর না করুক সব লেখকই চরিত্রের মধ্যে নিজের পাওয়া নাপাওয়া, নিজের বক্তব্যগুলো তুলে ধরে। লেখার ধরণ দেখে মনে হয় বাবা ছিলেন এক ক্লান্ত পথিক, কিন্তু অনিক জানতো বাবা এক সম্পদশালী আমলা।

আফরোজা খানম হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাজারো বয়সী অসুখের পাশাপাশি ডাক্তারেরা ফুসফুসের টিস্যু জটিলতার আশংকা করছেন। অনিক এবার ভড়কে যায়। সময় দেয় মাকে। এবারই প্রথম সে মাকে খুব কাছ থেকে অনুভব করে। ছোট ভাই তৌহিদকে সে কোন রাতেই হাসপাতালে থাকতে দেয়নি। ডাক্তারের সাথে কথা বলা, ঔষধ আনা, নিয়মিত সে ওষুধ খাওয়ানো সবকিছু সে করেছে অনেক দক্ষ এবং গোছানো লোকের মতো। আগে যেখানে নিজে রুম থেকে গিয়ে একগ্লাস পানি খেতো না, সে লোকের এমন দায়িত্বপরায়ণতা দেখে অবাক হয় তৌহিদ। মায়ের কথা মন দিয়ে শোনে অনিক। জীবনে কাউকে আনার কথা অনিক এই প্রথম হালকা করে হলেও ভাবতে থাকে হাসপাতালের ওয়েটিং রুমে বসে। কিন্তু কাকে আনবে, হাসনাহেনার পাতার ফাঁকের গভীর চোখের অহনাকে, নাকি প্রবল আকুতিভরা রুবিনাকে ? নাকি প্রত্যুৎপন্নমতি সুহানাকে ?


অনিকের এক বন্ধু ওয়াকিদ ঢাবির পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশনে পড়ে। একদিন তার টেবিলে একটা বই পায় যেখানে বিশাল একটা চ্যাপ্টারই ছিলো সীদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে ঘিরে। অনিক ওয়াকিদকে ফোন দেয়, বইটা কিছুদিনের জন্য দিতে বলে। অনিক অনেক ভেবেছে সে অহনা, সুহানা এবং রুবিনার মধ্যে পার্থক্য করতে পারেনি। অহনা পাশের বাসার বলে একটু বেশী দেখা হয় এই যা একটু বেশী।

অনিক চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে এ্যাটেন্ডেন্স বেডে। সে স্বপ্ন দেখে সে একটা রোবট বানিয়েছে নির্ভুল সীদ্ধান্ত দেয়ার জন্য। অহনা রুবিনা আর সুহানার সব ডাটা, স্বভাব চরিত্র এবং সীদ্ধান্ত গ্রহন প্রক্রিয়ার সব ডাটা সেখানে সে ইনপুট দিবে। স্ক্যানিং স্লটে যার ছবি দেবে তার সম্পর্কে রেজাল্ট জানাবে রোবট। স্বপ্নটা তার পছন্দ হয় এবং কাজ শুরু করে দেয়।

রোবট বানানোর ফাঁকে ফাঁকে সে বাবার লেখাগুলো পড়ছে। বাবার গল্পের একটা জায়গা এরকম "ইশরাত এবং রায়হানের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব হয় ফোনালাপের মাধ্যমে। অনেকবার দেখা হয় । রায়হানের একটা নির্লোভ মানসিকতা ছিলো সেটাই ইশরাতের পছন্দ। আস্তে আস্তে খুব অন্তরঙ্গও হয়।
একদিন খালি বাসয় অন্তরঙ্গ মুহুর্তে ইশরাত রায়হানকে অনুরোধ করছে, প্রিয় তুমি চাইলে আমি সব দিবো। শুধু একটা অনুরোধ আমাদের সারাজীবনের বন্ধুত্ব যেন ঠিকে থাকে সে জন্য তুমি শুধু একটা জিনিস নিও না। একটু সংযম যাতে আমি মনে করতে পারি তুমি আমার কাছে বন্ধুত্বের জন্য আসো, আমাদের বন্ধুত্বের জন্য আসো, চাওয়া পাওয়া বা ভোগের হিসাব মেলাতে নয়। রায়হান আমার কেবলই বন্ধু, আমার ভোমর নয়।" আর তৎক্ষনাৎ রায়হান সে প্রস্তাবে সায় দিয়ে উঠে বসে।'"' গল্পের শেষ অংশেও দেখা যায় তাদের মধ্যে সম্পর্ক অটুট আছে এবং একজনের ছেলের সাথে আরেকজনের মেয়ের বিয়ে দিয়ে নতুন সম্পর্কে উত্তরণ ঘটিয়েছে।

অনিক তার সীদ্ধান্ত গ্রহণ রোবটটি মোটামুটি দাঁড় করিয়ে ফেলে। ভয়ে ভয়ে সে প্রথমে রুবিনার ছবিটি ইনসার্ট স্লটে ঢুকায় । এক মিনিট পরেই রোবট রিপ্লায় দেয় - নট ফিট ফর ইয়ু, প্লীজ ট্রাই এ্যানাদার।
অনিক অনেক্ষণ আর কারো ছবি ইনপুট দেয় না। বারান্দায় এসে বসে। এরপর সে প্রবেশ করায় সুহানার ছবি । মনকে শক্ত করে অনিক । সুহানাকে সে শুধু ভালোবাসে না স্নেহও করে বেশ। প্রত্যাশার গ্লাস ভেঙ্গে চুরচুর করে অনিকের পায়ে পড়ে। রোবট রিপ্লায় দেয় "সী ইজ গুড এনাফ, বাট নট ফিট ফর ইয়ু এ্যাজ আ লাইফ পার্টনার।"

অনিক দুইজনের বিরহে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সে রোবটের সুইচ অফ করে মায়ের কাছে চলে যায়। আফরোজা খানম ছেলের ভগ্নদশা দেখে বিছানা ছেড়ে উঠে বসে অনিকের কপালে হাত রেখে জ্বর হয়েছে কিনা চেক করেন। জায়গা জমি ডিপিএস বিষয়ক অনেক কথা বলার পর মা জানান সোহেলী রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনার্সে চান্স পেয়েছে ডুমুরিয়া আদর্শ ডিগ্রী কলেজে। সোহেলী বাবার ঘনিষ্ট বন্ধু শাওন আংকেল ও আফরিন আন্টির মেয়ে। অনিক খুব বিরক্ত হলেও মাকে সেটা দেখায়নি। ঢাকা শহরে এত এত মেয়ে দেখেও মা কেন শাওন সাহবের মেয়ে সোহেলীর কথা বললো অনিকের বুঝে আসে না। বাবা চাকরীর প্রথম দিকে যখন ডুমুরিয়া উপজেলায় ছিলেন তখন একটু দূরেই ছিলো শাওন আংকেলদের নিজস্ব বাড়ী। ভালো কিছু রান্না করলেই বাবা তাদের পরিবারসুদ্ধ সবাইকে খেতে চলে আসতে বলতেন। মায়ের সাথেও আফরিন আন্টির আপন বোনের মতো সম্পর্ক। শাওন আংকেল এ জে চৌধুরী স্কুলের বাংলা শিক্ষক।

অনিক বিকালের কফি খেয়ে অনেক্ষন অহনার ছবি নিয়ে নাড়াচাড়া করে। সে কোন মতেই শেষ জনকে হারাতে চায় না। হাসনাহেনার একটা সুবাস যেন বয়ে গেলো তার রুম জুড়ে। ধুসররঙা গভীর চোখের অহনা, রুবিনা সোহানার মতো ফর্সা না কিন্তু কি যেন আছে লালনের গানের মতো খুব গভীরে তার। অহনা আসলে হাসনাহেনার মতোই। ফুল হিসাবে তেমন কিছু নয়, কিন্তু সৌরভে অনেক কিছু।

রাত গভীর হয় নিজের বানানো যন্ত্রের প্রতিও তার অগাধ বিশ্বাস। ডাটা ইনপুট দেয়ার সময় সে অহনার জন্য স্পেশাল কিছু তথ্য দিয়েছে। তার বিশ্বাস অহনার ছবি দেয়ার সাথে সাথেই রোবট তাকে কংগ্রেচুলেশন জানাবে আর ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজবে সানাইয়ের সুর। ইনপুট স্লটে সে শ্লথ প্রাণীর চেয়েও আস্তে আস্তে অহনার হাসনাহেনা গাছের সাথে তোলা ছবিটি রোবটে প্রবেশ করায়। রোবটটি আগে এক মিনিটে রেসপন্স করলেও এবার বেশী সময় নিচ্ছে। অনিক হেনা মঞ্জিলের দুরত্ব গুড়িয়ে দেয়। শুধু রোবটের একটা রিপ্লাই বাকী, সেটা পাওয়ার সাথে সাথে সে দৌড়ে চলে যাবে হেনা মঞ্জিলে। নীচের গেটে দাঁড়িয়ে ৪ নাম্বার কলিংবেলটি অনেকটা সময় ধরে চেপে রাখবে। রিপ্লাই শুনে অনিক কাঁপতে থাকে , বিছানায় আধশোয়া হয়ে শুয়ে পড়ে, শরীরে জমছে ঘাম। হাসনাহেনাগুলো নিশ্চয়ই আজ সৌরভ বিলাবে না, আর কখনো না।

পরের দিন অনিকের গুরুত্বপুর্ণ ক্লাস ছিলো। অভিজিৎ স্যারের ক্লাস। স্যার জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক। দুর্ভাগ্য... স্যার নাকি কিছুদিনের মধ্যে আমেরিকা চলে যাবেন। সাথে যাচ্ছেন রাফিদা আহমেদ বন্যা ম্যাডামও। কানাঘুষা তাহলে সত্যিই। কিন্তু কালকের রাতে দখল সামলে সে যেতে পারেনি। তাই আজ সে বাবার গল্পগুলো আবার পড়বে। গল্পতো গল্পই, তবুও কেন যেন অনিকের আফরিন আন্টিকে গল্পের ইশরাত মনে হচ্ছে। যে ইশরাত বন্ধু রায়হানকে শুধু একটা কাজে বারণ করেছিলো। সারা জীবনের বন্ধু হতে বলেছিলো। সম্পর্কের খাতিরে সম্পর্ক কেবল। নগদ চাওয়া নেই ,নগদ পাওয়া নেই কেবলই একটা মায়াময় সম্পর্ক। গল্পের শেষে যে বেয়াই বেয়াইন ডাক সেটাও কি অনিক আর সোহেলীকে মিন করেই? অনিক অন্য সময় হলে সুহানাকে ফোন দিয়ে সমাধান চাইতো , কিন্তু এখানে সুহানাও একটা পার্ট। তাই নিজেকেই ভাবতে হচ্ছে। অনিক তার বাবার আরো গল্প পড়তে থাকে। একই ধরনের অস্পর্শী টাইপের সম্পর্কের আরো চিকন সুত্র আবিস্কার করে অনিক। সোহেলীর একটা ছবি কি সে ইনসার্ট করবে রোবটের ইনপুট শ্লটে?

অনিক কোনভাবেই ভাবতে পারেনা উপজেলা শহরের একটা মেয়ে তার জীবনসঙ্গী হবে, যে কিনা আবার আর্টসের পড়াশুনা করে। সোহেলীর ছবি নিয়ে সে ট্রাই করতেও উৎসাহ পাচ্ছে না, এমনিতে সে সোহেলীকে স্নেহের দৃষ্টিতে দেখে । সোহেলীর তেমন স্মৃতি অনিক মনে করতে পারে না। শুধু তার ক্লাস নাইনের রেজিস্ট্রেশনের সময় মনে হয় শাওন আংকেলকে বলেছিলো সোহেলী যেন সায়েন্স নেয়।
অনিকের মা আফরোজা সফটওয়ার বোঝেন না , পুর্তমন্ত্রণালয় বোঝেন না। পুর্তমন্ত্রনালয়, ভুমি মন্ত্রনালয়ে চাকুরী করলে কেন জায়গা জমি বাড়ে সেটা বোঝেন না। কিন্তু ছেলের মন হান্ড্রেড পার্সেন্ট বোঝেন। অনিক যখন কাজ করে তখন রুম লক করেই করে। রোবট নিয়ে কি করেছিলো সেটা অনিকের মা'র জানার কথা নয়। অথচ মা একদিন রুমে ঢুকে এদিক সেদিক তাকিয়ে বললেন, বাবা, সোহেলীর ছবিটা তোর যন্ত্রে দিয়ে দেখতো কিছু বলে কিনা? অনিক অবাক বিস্ময়ে মায়ের দিকে তাকায় এবং সোহেলী নামটা শুনে বিরক্ত হয়। সোহেলীর প্রতি তার যেটুকু স্নেহ ছিলো সেটাও এই কয়দিনে শুন্য হয়ে গেছে। তথাপি মায়ের অনুরোধে সে দ্রুত কিছু ডাটা ইনপুট দিয়ে ঘোড়দৌড়ের ঘোড়ার বেগে সোহেলীর ছবিটি ইনপুট দেয়। পুকুর পাড়ে মেহেদী গাছের সাথে হেলান দেয়া সোহানার ছবিটির দিকে ভালো করে থাকায়নি অনিক। বিরক্তিকর সময়ে যন্ত্রগুলোও বিরক্ত করে। রোবট রিপ্লাই দিলো প্লীজ ইনসার্ট এগেইন। সে এবার আস্তে আস্তে স্ক্যানিং স্লটে ঢুকায় সোহেলীর ছবি আগের বার ছবিটি রিভার্সওয়েতে ইনসার্ট করেছিলো সে। রিপ্লাই দিতে সময় নিচ্ছে রোবট। অনিক নির্ভার, কারণ যে রোবট অহনা, রুবিনা আর সুহানাকে রিজেক্ট করে সে কেমন করে গ্রামের মেয়ে সোহেলীকে একসেপ্ট করবে? মা কিন্তু বলছে বাবা দেখিস সোহেলীকে তোর রোবট এলাউ করবে। তোকে কংগ্রেচুলেশন জানাবে। তোর বাবা সবসময় সোহেলীকে তোর বউ হিসেবে ভাবতো। আমাকে বলেও গেছে অনেকবার। অনিকের লিখার সময় কলম ধরা দেখে সুহানা একবার বলেছিলো তার শ্বশুর বাড়ী হবে অনেক দূরে। এটা নকি চায়নীজ সংস্কার, লিখার সময় কলম এবং খাবার সময় চপস্টিক যে যত উপরে ধরবে তার শ্বশুরবাড়ী হবে ততদূরে।
********~~~~~~~~~~~~~~~~~~****************

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.