যদি নেয়ামতের স্বাদ পেতে চান

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৬

বহু ভোজসভায় উপস্থিত হওয়ার সুযোগ হয়েছে। নানা রকম বাহারি খাবার টেবিলে বসার সৌভাগ্য হয়েছে। দস্তরখানে খাবার সাজিয়ে অনেক লোকের মাঝে বসে খাবার খাওয়ার অভিজ্ঞতাও আমার রয়েছে। তবে যে অভিজ্ঞতাটি এখানে উল্লেখ করতে চাই, তা অবশ্য দুঃখজনক। অন্তত কোন মুসলিমের কাছে থেকে এ জাতীয় কাজ আশা করা যায় না।
অধিকাংশ মানুষকেই আমি দেখেছি খাবার শুরুতে না তারা বিসমিল্লাহ পড়ছে না তারা খাবার মাঝে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছে। তারা যে আল্লাহর নেয়ামতই ভোগ করছে এটাও তারা ভাবছে না। বরং তারা অহেতুক গালগল্পে মাতোয়ারা। হাস্য-রসিকতায় দিশেহারা। যিনি তাদের জন্য এ উপাদেয় খাবারের ব্যবস্থা করলেন, সে মহামহিম আল্লাহর শুকরিয়ার বিষয়টি তারা বেমালুম ভুলে আছে।
এই যে উপাদেয় খাবার তারা গোগ্রাসে গিলছে, এই যে সুপেয় মিষ্ট পানি দিয়ে তৃষ্ণা নিবারণ করছে, এই যে নানা রকম মজাদার ফল ভোজন রসিকদের রসনায় তৃপ্তি এনে দিচ্ছে, এগুলো আল্লাহর নেয়ামত, তাঁরই অনুগ্রহের দান, কথাটি একটি বারের জন্যও যেন তাদের মনে কোণে উঁকি দিচ্ছে না।
ফলে খাবার শুরুতে না আছে আল্লাহর নাম, না খাবার শেষে আল্লাহর প্রশংসা। যে মহান দাতা এতসব দান করলেন, তাঁর দানেরও কোন স্বীকৃতি নেই এদের মুখে। ভাবটা এমন যেন তারা এসব কিছু তাদের বাপ-দাদাদের কাছ থেকে পেয়েছে। অথবা তারা তাদের যোগ্যতা বলে অর্জন করেছে। কিংবা তাদের বুদ্ধির জোরে এসব কিছু তাদের সামনে পরিবেশিত হয়েছে। এর পেছনে যত কৃতিত্ব সব যেন তাদের। একান্তই তাদের। আর কারো কোন অনুগ্রহ নেই। কারো কোন দান-অনুদান নেই। অথচ এই এরাই তো সময়ের ব্যবধানে দারিদ্রের যাতাকলে পিষ্ট হয়। অভাবের তাড়নায় এদের ক্ষুধার্ত দিন পার হয়। এক ফোটা পানির জন্য এরাই হাহাকার করে। মৃত্যুর বিছানায় এরাই শায়িত হয়। বিস্মৃতির অতল তলে তলিয়ে যায়। তাদের কথা স্মরণ করার জন্য খোদার দুনিয়ায় কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না।
সুতরাং হে বন্ধু! তুমি যদি খাবারের সত্যিকারের স্বাদ পেতে চাও, খাবারের প্রকৃত মজা তুমি আস্বাদন করতে চাও, যদি চাও তোমার প্রতি খোদার এই অনুগ্রহ আরো বৃদ্ধি পেয়ে ফিরে আসুক, তবে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর। তাঁরই প্রশংসা কর। তার নামেই খাবার শুরু কর। খাবার শেষ কর তাঁর প্রশংসা দিয়েই।
কি চমৎকার ইসলামের আদর্শ! কোথায় তুমি কোন দু’আ পড়বে নবীজি সা. সব বলে দিয়েছেন। খাবারের মাঝে মাঝে আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ বলে দেখ, কেমন চমৎকার লাগে! খাবারের স্বাদটাই বেড়ে যাবে। অসাধারণ লাগবে তোমার কাছে খোদার এ নেয়ামত। তখন তুমি নেয়ামতের কদর করতে শিখবে। এর মূল্য বুঝতে পারবে।
আর যারা পশুর মত কেবল বেঁচে থাকার জন্য খায়, তাদের কাছে এ নেয়ামতের কী মূল্য? যাদের জীবনের সাথে পশু-জীবনের তেমন কোন তফাৎ নেই, তাদের কাছে ‘নেয়ামতের কদর’ করার আশা করাটাও বোকামী। এরা গাফেল। এরা মূর্খ। এরা নেয়ামতের মূল্য বোঝে না। যিনি তাদের প্রতি এ মহা অনুগ্রহ করলেন, তাকে তারা চেনে না। আর তাই তাদের কাছে না আছে শোকর না আছে প্রশংসা। নবীজির সুন্নাহ! সে তো কল্পনাও করা যায় না।
আমরা তোমাকে যথা সময়ে প্রতিটি নেয়ামত ভোগ করার জন্য আহবান করছি। যেমনটি আল্লাহ আমাদের বলেছেন।
كُلُوْا مِنَ الطَّیِّبٰتِ وَ اعْمَلُوْا صَالِحًا ؕ
অর্থ : তোমরা পবিত্র ও ভাল বস্তু থেকে খাও এবং সৎকর্ম কর।
সুপেয় মিষ্ট পানির গ্লাসটি তোমার ঠোঁট স্পর্শ করার আগেই তুমি বিসমিল্লাহ বলে নাও। পান করে যখন তোমার তৃষ্ণা নিবারিত হল এবার তাঁর শুকরিয়া আদায়ের জন্য আলহামদুলিল্লাহ বল। আর তোমার রবের কুদরতের কথা চিন্তা কর। যিনি তোমার জন্য এই মিষ্ট মধুর পানির ব্যবস্থা করলেন। দেখ আল কুরআন তোমাকে কেমন রাহবারি করছে,
اَفَرَءَیْتُمُ الْمَآءَ الَّذِیْ تَشْرَبُوْنَؕ۝۶۸ ءَاَنْتُمْ اَنْزَلْتُمُوْهُ مِنَ الْمُزْنِ اَمْ نَحْنُ الْمُنْزِلُوْنَ۝۶۹
অর্থ : তোমরা যে পানি পান কর সে ব্যাপারে আমাকে বল। বৃষ্টিভরা মেঘ থেকে তোমরা কি তা বর্ষণ কর, না আমি বৃষ্টি বর্ষণকারী?
দিলের গভীর থেকে আয়াতগুলো বারবার তেলাওয়াত কর। হৃদয়ের তলদেশ থেকে আবেগের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে বারবার পঠ কর। দেখবে তোমার অজান্তেই তোমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসবে ‘আলহামদুলিল্লাহ’। তুমি তোমার রবের এ নেয়ামত নিয়ে ভাবতে শুরু করবে। কিভাবে তিনি পানি সৃষ্টি করলেন? সে পানি তোমার পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার জন্য কী কী ব্যবস্থা নিলেন? কত সহজে, অনায়েসে এ পানি তুমি পেয়ে গেছ।
প্রতিটি নেয়ামত ভোগ করার আগে ও পরে এমন চিন্তাই তো প্রতিটি মুসলিমের করা চাই। এতে সে অনুভব করবে দাসত্বের স্বাদ। মহান রবের সাথে সম্পর্কের আনন্দ। উপলব্ধি করবে অন্যরকম এক জীবনের হিল্লোল।

০ টি +০/-০