নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিম্বারের আহবান

আবু সাঈদ মুহাম্মদ নু’মান

আবু সাঈদ মুহাম্মদ নু’মান › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনটাকে সহজ করো

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫১



জনাব শায়খ সালেহ আল-হুসাইন (হাফিজাহুল্লাহ)। আল হিওয়ারুল ওয়াতানি এর সম্মানীত পরিচালক। মসজিদুল হারাম ও মসজিদুন নববীর ব্যবস্থাপনা পরিষদের সম্মানীত চেয়ারম্যান। এটি একজন মন্ত্রির সমমানের পদ। এছাড়াও তার যেমন জ্ঞান ও প্রজ্ঞা রয়েছে, তেমনি তার অভিজ্ঞতার ঝুলিও বেশ সমৃদ্ধ। তাঁর সাথে জীবনের কিছুটা সময় কাটানোর সুযোগ হয়েছিলো।
আমি তখন তার মাঝে ‘সহজ-সরল জীবন’ এর বাস্তবরূপ দেখতে পেয়েছি। জীবন ধারণের সহজতা তার মাঝে চমৎকার আকৃতিতে চাক্ষুস করেছি। বিনয়ের প্রকৃতরূপ আমি শায়খের মাঝে অবলোকন করেছি। মানব জীবনে বিনয়ের মূর্ততা তার মাঝে পূর্ণ অবয়বে পরিপূর্ণ সাজে প্রতক্ষ্য করেছি।
এমন সহজতা, শব্দভা-ার যার বিবরণ দিতে ব্যর্থ। লিখকের কলম যা ব্যক্ত করতে অসামর্থ।
যেখানে কোন ভনিতা নেই। তোষামদ নেই। চাটুকারিতা নেই। পা-িত্যের কোন বাগাড়াম্বর নেই। বিপথগামীতার কোন আহবান নেই। জীবনের কোন গভীর মারপ্যাঁচ নেই।
সেখানে আছে কেবল স্থিরতা। যে ভাবে যা করার দরকার তারই বাস্তবতা। বদান্যতার ডালি নিয়ে কেবল কর্মের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়া।
তিনি আমাদের মাঝে বিভিন্ন মিটিং-এ উপস্থিত হতেন। তার আসা যাওয়ায় কোন জৌলুস থাকতো না। কোন লৌকিতা থাকতো না। কোন প্রহরি থাকতো না। এমনকি থাকতো না কোন অনুগামী বহর।
ছোট-বড় সকল মজলিসে তিনিই থাকতেন মজলিশের মধ্যমনি। স্বভাপতির আসনটা তাকে দিয়েই শোভা পেতো। সেদিনের মজলিশটা তেমন বড় ছিলো না। আমরা চা বা কফি খেতে চাইলাম। তখন তিনি নিজেই দাঁড়িয়ে গেলেন, যেন তিনি নিজ হাতে সকলকে চা বানিয়ে খাওয়াবেন। নিজেই যেন কফি পরিবেশ করবেন।
আমরা তার এমন আচরণে আশ্চর্য হলাম। তার এমন বিনয় দেখে অবাক হলাম। অবশেষে খোদার দোহাই দিয়ে তাকে বসলাম।
বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আযিযের সাথে সাক্ষাতের একটি প্রোগ্রাম ঠিক হলো। শুক্রবার জুমার আগেই মক্কাতুল মুর্কারামাহ থেকে জিদ্দাহর উদ্দেশ্যে বাস ছাড়লো। এ সফরে আমিও তার সফর সঙ্গি ছিলাম। বাস যখন ছাড়ার সময় হলো, তিনি এমন বিনয় ও ন¤্রতা নিয়ে বাসে চড়লেন, যেভাবে আরোহন করা আল্লাহর ওলিদের শান। তাকে দেখে, তার এই ন¤্রতা দেখে মনে হলো এরাই তো কুরানে বর্ণিত ‘ইবাদুর রহমান’ রহমানের বান্দা। কুরআনের আয়াতের এমন বাস্তব নমুনা মর্তের এই পৃথিবীতে! অবাক বিস্ময়ে আমি কেবল বারবার কুরআনুল কারীমের সূরা ফুরকানের এ আয়াতটি তেলাওয়াত করছিলাম,
وَعِبَادُ الرَّحْمَنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الأرْضِ هَوْنًا
অর্থ : আর রহমানের বান্দা তারাই যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে।
বাসে তার নির্ধারিত আসনে বসলেন। পূর্ণ স্থিরতার সাথে। সর্বদা তার ঠোঁটে লেগে থাকা মুচকি হাসিটুক সালামের সাথে সকলকে বিলিয়ে দিলেন। বিনয়ের যে সবক আমি শিখেছি, তা কীভাবে বোঝাই, তার মাঝে কোন অহংকার ছিলো না। কেউ তার প্রশংসায় বিগলিত হোক তা তিনি পছন্দ করতেন না। তাকে নিয়ে হৈ চৈ, রৈ রৈ অবস্থার সৃষ্টি হোক তা কখনো চাইতেন না। কোনরূপ ভণিতা পছন্দ করতেন না।
মিসওয়াক প্রিয় নবীর প্রিয় সুন্নাত। মৃত্যুর মুহূর্তেও নবীজী মেসওয়াক করেছেন। আর সুন্নাতের অনুসারী উলামায়ে কেরাম তা কীভাবে বর্জন করতে পারেন? শায়খ ও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। এক জুমার দিন দোকান থেকে একটি মেসওয়াক নিলেন। দোকানী মূল্য নিতে চাইলো না। কিন্তু শায়খ কোনভাবেই তা নিতে রাজি হলেন না। পকেট থেকে মানি ব্যাগ বের করে দোকানিকে টাকা দিয়েই তবে মেসওয়াকটি নিলেন।
শায়খ আমার দিকে তার সেই ভুবন মোহন করা মিষ্টি হাঁসি নিয়ে তাকালেন। সালাম দিয়ে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। বিনয়, মমতা, ¯েœহের ডালি নিয়ে আমাকে বললেন, “আজ তো শুক্রবার ? কী বলেন, আজকের দিনটি আমরা নবীজী সা. এর প্রতি দরূদ ও সালাম দিয়ে কাটিয়ে দিলে কেমন হয়?
আমি বললাম, চমৎকার। বেশ ভালোই হয়। তখন থেকেই শায়খ সালেহ নবীজীর প্রতি দরূদ ও সালামে আত্মনিয়োগ করলেন। এমন হৃদয় নিংড়ানো ভাব ও বিনয় নিয়ে তিনি দরূদ পড়ছিলেন যেন কলিজাটা ছিড়ে বেরিয়ে আসবে। আহ্! সে কী হৃদয় দেলানো ভাবের তরঙ্গ। প্রেম-ভালোবাসায় সিক্ত হৃদয়ের আকুতি দরূদ ও সালামের সাথে ঝড়ে পড়ছিলো! আল্লাহর আবদিয়াত, রাসুলের ত-য়াত যেন দরূদ ও সালামের সাথে বাঙময় হয়ে উঠছিলো।
আমি তার চেহারার দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে ছিলাম। তিনি নবীজীর শানে দরূদ পড়ছেন। বিভিন্ন শব্দে, ভিন্ন ভিন্ন বাক্যে নবীজীর প্রতি দরূদ ও সালামের হাদিয়া পেশ করছেন। আর আমি লক্ষ্য করছিলাম, প্রতিটি শব্দের সাথে সাথে যেন তার চেহরায় এর প্রতিবিম্ব ফুটে উঠছে। দরূদের প্রতিটি শব্দ যেন তার মাঝে অভাবনীয় এক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। তার হৃদয় আকাশে নবী-প্রেমের ঝড়ো হাওয়া বইছে, আর তারই প্রচ-তা চেহারার দর্পনে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আমি দেখছি আর অবাক হচ্ছি? এও কী মানুষের জীবনে সম্ভব? আমরা তখন মক্কাতুল মুর্কারামাহ থেকে জিদ্দাহর পথে।
কখনও তিনি পড়ছেন,
اَللهُمَّ صلِّ على حَبِيْبِكَ وَصَفْوَتِكَ مِنْ خَلْقِكَ وَخَلِيْلِكَ .
কখনও বলছেন, হে আল্লাহ আমাদের পক্ষ্য থেকে আপনার হাবিবের রওজায় আমাদের সালাত ও সালাম পৌঁছে দিন এরপর দরূদে ইবরাহিমি পড়ছেন।
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلى إبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إبْراهِيْمَ إنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ اَللّهُمَّ بَارِكْ عَلى مُحَمَّدٍ وَعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلى إبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إبْرَاهِيْمَ إنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ.
এভাবে দরূদ ও সালামের মধ্য দিয়ে আমরা জিদ্দায় পৌঁছলাম।
আমাদের পথ চলা যদিও জিদ্দায় এসে থেমে গেছে কিন্তু আমার হৃদয়ে দরূদ শরীফের এ নূরানী দৃশ্যের পথ চলা তখনও থামেনি। আমার মন-মস্তিষ্ক থেকে তখনো যায় নি। আমি আচ্ছন্ন ছিলাম দরূদ শরীফের শুভ্রতায়।
যে শুভ্রতা তৈরী হয়েছিলো একজন আল্লাহর ওলির দরূদ শরীফ পাঠের তন্ময়তায়। যে আলোক বিভা সৃষ্টি হয়েছিলো, একজন দরবেশের একজন আবেদের সালাত ও সালাম প্রেরণের আকুলতায়। এমন বিনয় বিগলিত হৃদয়ে, দিলকে এমন হাজির করে দরূদ পাঠের এমন হৃদয়কাড়া দৃশ্য কদাচিতই জুটে থাকে।
বাস্তব কথা হলো তিনি আমাকে যুহদ ও বিলায়েতের এক মহান শিক্ষা দিলেন। সহজতা ও সরলতার এক দীক্ষা দিলেন।
আমি তাকে সে দিন থেকে চিনি যে দিন থেকে তিনি আল হিওয়ারুল ওয়াতানির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তার মজলিসে কত আলেম-উলামার সমাগম হতো, কত মন্ত্রি-উপমন্ত্রির আগমন ঘটতো, বহু ডক্টর, প্রকৌশলী তার ডেস্কের সামনে দাড়িয়ে থাকতো, এতে তার মাঝে কোন ভাবান্তর হতো না। তিনি ছিলেন সর্বদাই বিনয়ী, সহজ-সরল। না ছিলো তার পোশাকের কোন জাঁকজমক না ছিলো কথায় কোন চমক-ধমক।
তার কথা-বার্তায় কোন লম্বাচড়া ভূমিকা থাকতো না। কোন হেঁয়ালি থাকতো না। কোন গভীর পা-িত্যের ফুলঝুরি থাকতো না। থাকতো না কোন কঠোরতা। তার কথা বলার ধরণ ছিলো সম্পূর্ণ সুন্নাতে নববীর ছাঁচে তৈরী।
তার জীবন-ধারণ আমাকে ইসলামের সোনালী যুগের সেই সোনার মানুষদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কেমন ছিলো হযরত আবু বকর, উমর, উসমান, আলি রা. সহ সাহাবাদের জীবন? কীভাবে তারা প্রিয় নবীর সোহবতে তাদের জীবন কাটিয়েছেন। সোহবত ধন্য এ জীবনকে তারা কীভাবে পরবর্তীতে অতিবাহিত করেছেন। আমি যেন শায়খের মাঝে তারই প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়েছি।
না বরং আমি যেন তার জীবনে এরচেয়েও মহান কোন মানুষের-বনী আদমের শ্রেষ্ঠ সন্তান সায়্যিদুল আম্বিয়ার আদর্শের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়েছি।

অর্থ : আর রহমানের বান্দা তারাই যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে।
তাই বন্ধু আসো, লৌকিকতা ছেড়ে দিয়ে সহজ সরল জীবনে অভ্যস্ত হই। পোশাকে সহজতা আনি। কথায় সরলতার অভ্যাস গড়ি। আসো জীবনটাকে জীবনের প্রকৃতিতে যাপন করি। নিজের সাথে ও আশে পাশের সকলের সাথে সমঝোতার পরিবেশ তৈরী করি। যাতে আমরা একটি সুন্দর, সাবলীল, স্থির, নির্ঝঞ্ঝাট, নিরাপদ জীবন ধারণ করতে পারি। যে জীবনে থাকবে না কোন ঝঞ্ঝাট। যা পূর্ণ থাকবে কেবল শান্তি ও প্রশান্তি দিয়ে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.