![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাসূলুল্লাহ সা. এর সোহবত ধন্য এই মুবারক জামাতের কিছু ব্যক্তির জীবনকাহিনী নিয়ে রচিত এ গ্রন্থের সূচনাটি আমরা মুসআব বিন উমায়েরের জীবনচরিত দিয়ে শুরু করতে চাই
রাসূলুল্লাহ সা. এর সোহবতধন্য এক উজ্জল নক্ষত্র। কুরাইশদের এক দীপ্তিমান যুবক। সৌন্দর্য, দীপ্তি ও যৌবনে অন্যসব যুবকদের তুলনায় পিছিয়ে নয়; বরং কয়েক ধাপ এগিয়ে। ঐতিহাসিক ও জীবনচরিতাকারগণ তার যৌবনের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, মুসআব হলেন মক্কার সবচেয়ে সুগন্ধিময় যুবক।
স্বর্নের চামুচ মুখে নিয়েই তার জন্ম। প্রাচুর্যতার মাঝেই তার বেড়ে ওঠা। স্বাচ্ছন্দ জীবনের ছায়াতলেই তার জীবন-বসন্তের বাগান পরিস্ফুটিত।
পৃথিবীর সব সন্তানই পিতা-মাতার আদর-সোহাগের মাঝেই বেড়ে ওঠে। কিন্তু মুসআব যে আদর-সোহাগের মাঝে বেড়ে উঠেছে, তেমনটি আর ক’জনের ভাগ্যে জুটেছে? এই পরিতৃপ্ত যুবক, প্রাচুর্য ও অতিশয় ¯েœহ-মমতার ছড়াছড়ির মাঝে বেড়ে ওঠা এই মুসআবই তো ছিলেন মক্কার সুন্দরদের শীর্ষমণি।
মক্কায় যখন সুন্দরদের নিয়ে আলোচনা হতো এই মুসআবই থাকতেন সকলের অগ্রে। মুসআবকে ঘিরেই তাদের আলোচনার মজলিশগুলো সরগরম হয়ে উঠতো। মুসআব ই ছিলেন তাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। তাদের মজলিশগুলোর রৌনক। তাদের সভাগুলোর সৌন্দর্য্যের রহস্য।
যে মুসআবকে নিয়ে এত মাতামাতি, সেই মুসআব কিনা হয়ে যাবেন ঈমান ও উৎসর্গের এক উপাখ্যান? এ কি ভাবা যায়? এ যে কল্পনারও অতীত!
খোদার কসম! ওই সংবাদ কতই না চমৎকার যা মুসআব বিন উমাইর সম্পর্কে পরিবেশিত। ওই খবর কতই না মনমুগ্ধকর যা ‘মুসআবুল খাইর’ সম্পর্কে প্রচারিত! হ্যাঁ, মুসলমানদের মাঝে তিনি মুসআবুল খাইর হিসেবে পরিচিত। এ উপাধিতেই সকলে তাকে চেনে।
মুসআব ওই সৌভাগ্যবানদের অন্যতম ইসলাম যাদের জীবনের ছক এঁকে দিয়েছে। মুহাম্মদ সা. যাদেরকে ঈমান ও ইয়াকীনের মজবুত ভিত্ত্বির উপর গড়ে তুলেছেন।
কিন্তু কে ছিলেন এই মুসআব? কি তার জীবনের গল্প?
তার জীবন-গল্পের মাঝে লুকিয়ে আছে সমগ্র মানবতার মর্যাদার রহস্য।
মক্কায় মুহাম্মদ সা. এর দাওয়াতের আহবান ছাড়িয়ে পড়ছে। মুহাম্মদ সা. এর দাওয়াত ও তার তাওহিদের বাণী এখন মক্কাবাসীদের আলোচনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সকলে এখন শুনছে মুহাম্মদ সা. এর আহবান। আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা। তিনি লোকদেরকে বলছেন, আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর রাসূলরূপে প্রেরিত হয়েছি। তার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। তোমাদেরকে এক আল্লাহর ইবাদাতের প্রতি আহবান করছি।
মুহাম্মদ সা. এর এ আহবানের বাতাস কুরাইশের এই আয়েশি জীবন-যাপনে অভ্যস্ত মুসআবের কানেও এসে লাগলো। যুবক মুসআব দেখলো, মক্কাবাসীদের সকল কাজ যেন এই একটিতে এসে কেন্দ্রিভূত হলো। সকাল-সন্ধ্যা সকলের আলোচনার বিষয় এই একটি। সকলের মুখে মুখে মুহাম্মদের আলোচনা। তার নতুন দীনের কথা। আজ মুহাম্মদ কি বলেছেন? কে কে তার নতুন দীনে প্রবেশ করেছে? এনিয়েই কুরাইশ নেতাদের সকল আলোচনা। যুবক মুসআব এসব দেখছে এবং সকলের মুখে মুখে কেবল মুহাম্মদ সা. এর কথা ও তাঁর নতুন ধর্মের কথা শুনছেন।
কারণ, মুসআব যদিও বয়সে তরুণ কিন্তু তিনি ছিলেন কুরাইশদের প্রতিটি মজলিশের মধ্যমণি। প্রতিটি মজলিশে তার চেহারা রওনক ছড়াতো। তার শরীর সুরভি ছাড়তো। আর মস্তিষ্ক ছড়াতো বুদ্ধির দীপ্তি। মক্কার প্রতিটি সংঘই চাইতো মুসআব তাদের মজলিশ আলোকিত করুক। মুসআবের কান্তিময় চেহারা, প্রত্যুৎপন্নমতি ধীশক্তি তাকে প্রতিটি মজলিশে টেনে নিতো। এ দিয়েই তরুণ বয়সে মুসআব সকলের হৃদয়গুলো জয় করে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন।
মুসআব জানতে পারলেন, যারা মুহাম্মদের নতুন ধর্মে দীক্ষিত হচ্ছে, তারা সকলে কুরাইশদের অনাচার থেকে দূরে গিয়ে ওই সাফা পাহাড়ের পাদদেশে আরকাম ইবন আবিল আরকামের গৃহে জমায়েত হন। দ্বিধা-দ্বন্ধের দোলাচালে মুসআবের পক্ষে সময় ক্ষেপণ যেন অসহনিয় হয়ে উঠলো। মুসআব আর অপেক্ষা করতে পারলেন না। কোন পিছু টানই তাকে আর আটকে রাখতে পারলো না। এক সন্ধ্যায় মুসআব আগ্রহ-উদ্দিপনার ডানায় ভর করে উড়ে চললেন, দারুরল আরকামের পানে।
সাফা পাহাড়েরর পাদদেশে আরকাম ইবনে আবিল আরকাম রা. এর ছোট্টগৃহ। এটাই ইসলামের প্রথম পাঠশালা। ঈমানের শিক্ষালয়। নব দীক্ষিত মুসলমানদের ক্ষুদ্র জামাতটি এখানেই নবীজির সাথে একান্তে মিলিত হতেন। নবীজি সা. তাদেরকে কুরআন কারিমের আয়াত তেলাওয়াত করে শোনাতেন। তাদের নিয়ে মহান রব্বে কারিমের দরবারে সালাতে মশগুল হতেন।
মুসআব এখন ঈমানের সে পাঠশালায়। নবীজির অন্তর থেকে কুরআনুল কারীমের আয়াতগুলো তাঁর পবিত্র ওষ্ঠদ্বয় বেয়ে শ্রোতাদের কানের বাতায়ন পথে তাদের অন্তরে গিয়ে আশ্রয় করে নিচ্ছে। হ্যাঁ, মুসআবের হৃদয়েও সে কুরআন স্থান করে নিয়েছে। সে দিনের সে সন্ধ্যায় মুসআবের হৃদয় কন্দরে ঈমানের বীজটি অঙ্কুরিত হওয়ার জন্য সযতেœ স্থাপিত হয়েছে।
নবীজির সামান্য স্পর্শে মুসআবের খুশি যেন ধরে না। কুরআনের আয়াতগুলো যেন তার হৃদয়-সমুদ্রে খুশির তরঙ্গগুলোকে বিক্ষুব্ধ করে দিয়েছে। মুসআব যেন খুশিতে উড়ে যেতে চায় অনন্ত নীলিমায়।
কিন্তু রাসূলুল্লাহ সা. তার ¯েœহের হাত বাড়িয়ে দিলেন। প্রদীপ্ত বক্ষের উপর তাঁর পরশ বুলিয়ে দিলেন। উত্তপ্ত হৃদয়ের উপর মায়ার স্পর্শ এঁকে দিলেন। মুহূর্তে হৃদয়ের কন্দরে প্রশান্তির আমেজ ছড়িয়ে পড়ল। সমুদ্রের গভীরতা নিয়ে হৃদয়ের অলিন্দে স্থিরতা স্থান করে নিল। মুহূর্তের ব্যবধানে যে যুবক ঈমানের সবুজ কাননে আশ্রয় নিল, ইসলামের বলয়ে নিজেকে সঁপে দিল, মনে হল যেন বয়সের তুলনায় অনেকটা বুদ্ধি ও প্রজ্ঞা নিয়েই সে নিজেকে প্রতিভাত করল। এমন প্রত্যয় নিয়ে নিজেকে পেশ করলো, যে প্রত্যয় সময়ের গতিধারাকেই পাল্টে দিল।
মুসআবের মা খান্নাস বিনতে মালিক ছিলেন অসম্ভব এক ব্যক্তিত্বের অধিকারিনী এক তেজস্বিনী নারী। ব্যক্তিত্বের ছটা এই পরিমাণ ছিল যে, সকলে তাকে ভয়মিশ্রিত সমীহ করত।
এই ধরা পৃষ্ঠে এমন কেউ ছিলনা যাকে হযরত মুসআব রা. ভয় করে চলবেন। এমন কোন শক্তি ছিল না যার সামনে তিনি নতশীর হবেন। কেবল তাঁর মা ব্যতিত।
যদি মক্কা তার সমুদয় পাহাড়-পর্বত, বিজন মরূভূমি নিয়ে তাঁর সামনে বাধার বিন্ধ্যাচল দাঁড় করিয়ে দেয়, তবুও তিনি তাকে থোড়াই কেয়ার করতেন। এমন কি মক্কার সবগুলো দেবতাও যদি তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতো তবুও তিনি পরওয়া করতেন না।
কিন্তু ঈমান আনার পর তাঁর মায়ের সামনে দাঁড়ানো, তার সামনে ঈমানের ঘোষণা দেয়া ছিল এমন এক প্রলয়ংকরি তুফানের সামনে দঁড়ানো যার সামনে টিকে থাকার ক্ষমতা হযরত মুসআবের ছিল না।
আর তাই হযরত মুসআব রা. মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন। না, মায়ের সামনে এখন ইসলামের কথা বলা যাবে না। মায়ের কাছ থেকে ইসলামের বিষয়টি গোপন রাখতে হবে।
কিন্তু ঈমানের যে শিখা তার হৃদয়ে প্রজ্জলিত হয়েছে তা তাকে ঘরে থাকতে দিল না। দারুল আরকামের দিকে আকর্ষন করতে থাকল। আর তাই প্রতিদিন ছুটে যেতেন দারুল আরকামের ঈমানের পাঠশালায়। দুচোখ ভর্তি মুগ্ধতা নিয়ে বসতেন নবীজির মজলিশে। তিনি তার ঈমান নিয়ে খুব প্রীত। মায়ের চোখ ফাঁকি দিতে পারছেন বলে খুবই খুশি। তার ইসলাম গ্রহণের খবর এখন পাননি, আর তাই তার ক্রোধ থেকে বেঁচে থাকতে পারছেন বলে মনে মনে আনন্দিত।
কিন্তু সময়টা অনুকূল ছিল না। খোদ মক্কাই ছিল এক আপদ। সে সময়ে মক্কায় কোন ঘটনাই গোপন থাকত না। সবদিকে কুরাইশরা তাদের চক্ষু-কর্ণ স্থির করে রাখতো। মরূভূমির তপ্ত কোমল বালুকারাশি মাড়িয়ে যে কাফেলাই মক্কায় প্রবেশ করতো তার পেছনে কুরাইশদের গুপ্তচর ছায়ার মত লেগে থাকত।
একদিনের ঘটনা। লোকচক্ষুকে ফাঁকি দিয়ে হযরত মুসআব দারুল আরকামে প্রবেশ করছিলেন। যদিও তিনি কুরাইশদের চোখগুলোকে ফাঁকি দিতে চেষ্টা করলেন কিন্তু পারলেন না। উসমান বিন তালহা তাকে দেখে ফেলল। এরপর আরেক দিন তাঁকে মুহাম্মদ সা. এর মত নামায আদায় করতেও দেখে ফেলল। মুহূর্তে খবরটি মরূর ঝড়ো হাওয়ার মত ছড়িয়ে পড়ল। চক্ষু বিস্ফারিত করে মুসআবের মায়ের দিকে উড়ে গেল। তাকে সংবাদটি জানাল।
হযরত মুসআব রা. তার মায়ের সামনে দাঁড়ালেন। তার পরিবারবর্গ ও মক্কার কুলিন লোকগুলো তাঁকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি ঈমানের দৃঢ়তা ও সত্যের স্থিরতা নিয়ে তাদের সামনে কুরাআনুল কারীমের তেলাওয়াত শুরু করলেন। যে কুরাআন দিয়ে রাসূলুল্লাহ সা. তাদের দিলগুলোকে ধুয়ে-মুছে সাফ করেন। যে কুরাআন দিয়ে নবীজি সা. তাদের দিলে ঈমান ও হিকমত ভরে দেন। মর্যাদা ও আত্মসম্মানবোধ জাগ্রত করে দেন। ন্যায় ও ইনসাফ ঢুকিয়ে দেন।
তার মা চাইলেন স্বজোরে এক চপেটাঘাত করে তাঁকে থামিয়ে দিবেন। চড় কষার জন্য হাতও উঠালেন। কিন্তু তা উঠানো পর্যন্তই। মুহূর্তে সেটি নিস্তেজ হয়ে গেল। সেই ঐশি নূরের সামনে তা নত হয়ে গেল। যে নূরের প্রভা মুসআবের চেহারার ঔজ্জল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। যে রৌশনি তার চেহারার দীপ্তি বৃদ্ধি করে দিয়েছে। সেখানে সৃষ্টি করেছে মহত্বের ছটা। যার সামনে কেবল মাথা নতই করতে হয়। যার সামনে কেবল সমীহই করতে হয়। যার সামনে দাঁড়াতে হয় স্থির ও প্রশান্ত হৃদয়ে। পরিপূর্ণ তৃপ্তি নিয়ে।
কিন্তু তার মায়ের হৃদয়ে যদি মাতৃত্বের মায়া উথলে উঠে তবে তিনি তাকে প্রহার ও ভর্ৎসনা থেকে মাফ করে দিতে পারেন। কিন্তু তার তো এই ক্ষমতা আছে যে, দেবতাদেরকে বর্জন করার জন্য তাকে অন্যভাবে শাষণ করবেন।
হ্যাঁ, তাই করলেন। ঘরের এক প্রকোষ্ঠে তাকে বন্দি করলেন। দরজায় পাহারা বসিয়ে দিলেন। শুরু হল নিজ গৃহেই বন্দি জীবন। এরই মধ্যে একদিন খবর পেলেন মুসলমানদের কেউ কেউ হাবশায় হিজরত করছেন।
খবারটি পাওয়ার পর থেকে মায়ের এই জিন্দানখানা থেকে পালিয়ে যাওয়ার ফিকির করতে লাগলেন। সাম্ভাব্য সব উপায় নিয়ে চিন্তা করতে লাগলেন।
একদিন তার মায়ের অজ্ঞাতসারে পাহারাদরকে ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে পড়লেন গৃহের বন্দিখানা থেকে। আর সোজা পাড়ি জমালেন মুলকে হাবশার পথে। হিজরতের উদ্দেশ্যে।
মুসলিম মুহাজিরদের সাথে হাবশায় তার দিনগুলো বেশ কেটে যাচ্ছিল। কিছুদিন পর মক্কার অবস্থার উন্নতির খবর পেয়ে যখন তারা মক্কায় ফিরে এলেন, তাদের সাথে হযরত মুসআব ও এলেন। কিন্তু মক্কার প্রকৃত অবস্থা তখনও মুসলমানদের অনুকূলে ছিলনা। অবস্থা বিবেচনায় নবীজি কতক সাহাবিকে পূণঃরায় হাবশায় হিজরত করার জন্য নির্দেশ দিলেন। তাঁরা নবীজির হুকুম শিরোধার্য করে হাবশায় হিজরত করলেন। হযরত মুসআব রা. ও ছিলেন তাঁদের একজন।
কিন্তু হযরত মুসআব রা. মক্কায় থাকুন আর হাবশায়, তাতে কিছু যায় আসে না। কারণ, তারা ঈমানের অভিজ্ঞতা সকল স্থান-কাল অতিক্রম করে উচ্চতার অভিসারে লিপ্ত। তিনি তার জীবনযাত্রার ধরণ পাল্টে নিয়েছেন। মুহাম্মদ সা. তাঁদেরকে জীবনযাত্রার যে নতুন ধারা দিয়েছেন, তাতে নিজেকে আত্মস্থ করে নিয়েছেন। হযরত মুসআব নিশ্চিত ছিলেন যে, তার জীবনটি এখন মহান প্রভুর জন্য যে কোন কুরবানী করার উপযুক্ত হয়েছে। মহান ¯্রষ্টার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার যোগ্য হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সা.কে ঘিরে সাহাবায়ে কেরাম বসে আছেন। এমন সময় হযরত মুসআব রা. সেখানে উপস্থিত হলেন। তাঁকে দেখেই সকলে মাথা নীচে নামিয়ে নিলেন। চোখগুলো ঢেকে নিলেন। কারো কারো চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু বইতে শুরু করল। কারণ, হযরত মুসআব রা. পুরাতর্ণ জীর্ণ তালিযুক্ত একটি জামা পরে আছেন। তাঁর গায়ে এ জামা দেখে তাদের মনে হযরত মুসআবের ইসলাম গ্রহণের পূর্বের সেই স্বাচ্ছন্দময় দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল। যখন তিনি বাগানের তাজা ফুলের মত সুরভি মিশ্রিত পোশাক পরতেন। যে পথে হাঁটতেন তার পোশাক থেকে খুশবু ছড়াতো।
রাসূলুল্লাহ সা. দৃশ্যটি দেখলেন। যে দেখায় ঝরে পড়ছিল হিকমত। কৃতজ্ঞতা। মুহাব্বত। তাঁর পবিত্র ওষ্ঠদ্বয়ে লেগেছিল সেই মুচকি হাঁসির ঝিলিক। তিনি বললেন, “আমি এই মুসআবকে দেখেছি। তখন মক্কায় তার চেয়ে অধিক আদরের ও স্বাচ্ছন্দময় জীবনযাবনকারী কোন যুবক ছিল না। এরপর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালবাসায় সব কিছু ত্যাগ করল।”
তার মা তাকে ইসলাম থেকে ফেরানোর সব চেষ্টাই করল। কিন্তু ব্যার্থ হল। অবশেষে তার মা যখন নিরাশ হয়ে গেল, তার সুখ-স্বচ্ছন্দের জন্য তারা যা করতো সবকিছু বন্ধ করে দিল।
তার মা তো ঘোষণাই করে দিল, যে কিনা আমাদের দেবতাদেরকে বর্জন করেছে, তাদের কোপানলে নিজেকে আত্মাহুতি দিয়েছে এমন কেউ যেন তার খাদ্য না খায়। হোক না সে তার সন্তান।
সর্বশেষ যখন তিনি হাবাশা থেকে ফিরে আসলেন, তাঁর মা তাকে দ্বিতীয়বার বন্দি করতে চাইলেন। তখন তিনি কসম করলেন, যদি তার মা তাকে আবার বন্দি করতে চায় তবে যারা তাকে সাহায্য করবে সকলকেই তিনি হত্যা করবেন।
তাঁর মা ও জানেন ছেলে তার কত জেদি। যা বলে তা করেই ছাড়ে। তাই আর কি করার আছে? চোখের পানিই একমাত্র সম্বল। কেঁদে কেঁদে বিদায় জানালেন। তিনিও চোখের পানি দিয়ে মাকে বিদায় জানালেন।
কিন্তু পাঠক! বিদায়ের এই মুহূর্তটি খুবই বিস্ময়কর। বিদায়ের এই বেদানা বিধুর মুহূর্তটি আমাদের সামনে অন্যরকম এক বিস্ময় নিয়ে উপস্থিত। এক মা তার সন্তানকে হারাতে চলছে তবুও তার দীন থেকে সরে আসছে না। ¯েœহের পরশে লালিত পালিত সন্তান মাকে হারাতে চলছে তবুও নতুন দীন থেকে ফিরে আসছে না। মা কুফরির উপর অটল আর সন্তান ঈমানের উপর অবিচল।
একজন মা একদিকে সন্তানকে ঘরছাড়া করছে অপর দিকে মুখেও বলে দিচ্ছে, যা, তোর যে দিক মনে চায় চলে যা। আমি তোর মা নই। ঠিক সেই কঠিন মুহূর্তে হযরত মুসআব মায়ের দিকে এগিয়ে গেলেন। মায়া ভরা ডাকে মাকে ডাকলেন। বললেন, মা! আমি তোমার হিতাকাঙ্খি। তোমার কল্যাণই কামনা করি। তোমার ভালই চাই বলেই তো তোমাকে ইসলামের দিকে ডাকছি। মা তুমি বল, আল্লাহ এক, অদ্বিতীয়। তার কোন শরিক নেই। মুহাম্মদ সা. আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। বল, মা বল। তাওহিদের কালিমাটা একটিবার মুখ থেকে উচ্চারণ করো। কিন্তু না, মায়ের হৃদয়ে কুফুরির যে পাষাণ চেপে আছে তা সরে নি। সে পাষাণ চিরে পানির ধারাও প্রবাহিত হয়নি। ক্রোধান্বিত মায়ের ক্রোধ যেন আরো বৃদ্ধি পেল। তারাকার নামে শপথ করে বলল, না, আমি কিছুতেই তোমার দীনে প্রবেশ করবো না। আমার সিদ্ধান্ত যতই তুচ্ছ হোক। আমার বিবেক যতই দুর্বল হোক।
হযরত মুসআব রা. জীবনের যে সুখ-ঐশ^র্যে লালিত-পালিত হয়েছেন তা ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেন। দারিদ্রকে বেছে নিলেন।
রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে যে যুবকের শরীর থেকে খুশবু ছড়াতো, যার পোশাক থেকে সুরভি বের হতো, সে যুবক আজ খসখসে তালিযুক্ত কাপড় পরিধান করছে। একদিন আহার জুটলে আরেকদনি উপোস পার করছে। কিন্তু তার স্বচ্ছ হৃদয় আকিদা ও বিশ^াসের উচ্চতায়, আল্লাহর নূরের প্রভায় অন্যরকম এক মানুষে রূপান্তরিত হয়েছেন। যাকে দেখলে চক্ষু শীতল হয়। হৃদয় জুড়িয়ে যায়। শ্রদ্বায় মাথা নুয়ে আসে। ভক্তিতে শীর নত হয়।
নবীজি সা. তাকে এক গুরু দায়িত্বের জন্য নির্বাচন করলেন। ভাবিকালে যে ইয়াসরিব মদীনাতুর রাসূল হতে চলছে সে মদীনায় প্রেরিত হচ্ছেন রাসূল সা. এর পক্ষ হতে রাষ্ট্রদূত হয়ে। মদীনাবাসীর শিক্ষক হয়ে। ইসলামের দাঈ হয়ে। মক্কার আকাবা উপত্যকায় যারা নবীজির হাতে হাত রেখে কালিমার সবক নিয়েছেন, তাদেরকে কালিমার সে পাঠ পরিপূর্ণরূপে শিখিয়ে দেয়ার জন্য। যারা তখনও তাওহিদের সবক নেয়নি, কালিমার দরসে বসেনি, তাদেরকে তাওহিদের পাঠটি বুঝিয়ে দেয়ার জন্য। সর্বপরি, মদীনাকে প্রস্তুত করা মহান হিজরতের জন্য।
নবীজি সা. যখন হযরত মুসআব রা. কে এই মহান দায়িত্বের জন্য বাছাই করলেন, তখন কিন্তু নবীজির সামনে হযরত মুসআবের চেয়ে বয়োজ্যাষ্ঠ, তাঁর চেয়ে মর্যাদা সম্পন্ন, বংশীয় দিক থেকে নবীজির কাছের অনেক সাহাবি ছিলেন। কিন্তু নবীজি সা. এ মহান দায়িত্বের জন্য হযরত মুসআব রা. কেই নির্বাচন করলেন।
নবীজি সা. জানেন যে তিনি তাকে সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি অর্পণ করতে চলছেন।
মদীনাতুল মুনাওয়ারায় ইসলামের ভবিষ্যত কি হবে তা তার হতেই ন্যাস্ত করছেন। স্বল্পকাল পরেই যে মদীনা হবে দারুল হিজরত। যেখান থেকে পৃথিবীর দিকে দিকে ইসলামের দাঈরা ছড়িয়ে পড়বে। ইসলামের দাওয়াত যেখান থেকে বিশ^ময় তার পথ করে নিবে। যে মদীনা থেকেই শহীদ-গাজীদের সুসংবাদের বার্তা ছড়িয়ে পড়বে। সে মদীনারই ভবিষ্যত রচনার মহান দায়িত্বটি নবীজি তাঁর হাতে সপে দিচ্ছেন।
আল্লাহ হযরত মুসআবকে যে সুস্থ ও বুদ্ধিদীপ্ত বিবেক এবং উত্তম চরিত্র দান করেছিলেন, তার উপর ভরসা করে তিনি নবীজির এই আমানত কাঁধে তুলে নিলেন। এরপর নিজের যুহদ ও তাকওয়া, ইখলাস ও একনিষ্ঠতা দিয়ে মদীনাবাসীর দিলগুলো জয় করে নিলেন। ফলে তারা দলে দলে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিতে শুরু করল।
নবীজি সা. যেদিন তাকে মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করিয়ে দিলেন সেদিন মদীনায় মুসলমানদের সংখ্যা ছিল কেবল বারো জন। যারা ইতিপূর্বে মক্কার আকাবায় নবীজির হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছেন। কিন্তু মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে মদীনার লোকগুলো আল্লাহ ও তার রাসূলের আহবানে সাঁড়া দিতে প্রস্তুত হয়ে গেল।
পরবর্তী বছর হজ্জের সময় ঘনিয়ে আসল। মদীনাবাসী মুসলমানগণ রাসূলুল্লাহ সা. এর সাথে সাক্ষাত করার জন্য তাদের পক্ষ হতে একটি প্রতিনিধি দল প্রেরণ করলো। যাদের সংখ্যা ছিল পুরুষ ও নারী মিলে সত্তর জন। এই প্রতিনিধি দলটি তাদের প্রাণপ্রিয় শিক্ষক ও রাহবার মুসআব বিন উমাইরের নেতৃত্বে মক্কায় আসলো। হযরত মুসআব রা. তাঁর অসাধারণ বিচক্ষণতা ও দুর্লভ বুদ্ধিমত্বা দিয়ে প্রমাণ করলেন যে, মদীনাবাসীর শিক্ষক হিসেবে, ইসলামের প্রথম রাষ্ট্রদূত হিসেবে নবীজির নির্বাচন যথাযথ ছিল। হযরত মুসআব রা. তার দায়িত্বের সীমা-পরিসীমা ও গুরুত্ব যথাযথ অনুধাবণ করতে পেরেছিলেন। আর তাই এর সংরক্ষণেও ছিলেন যথেষ্ট সচেতন। তিনি বুঝে নিয়েছিলেন যে, তিনি হলেন আল্লাহর পথের একজন দাঈ। তার দীনের সুসংবাদদাতা। যে দীন মানুষকে হেদায়েতের পথে আহবান করে। মানুষকে সঠিক-সরল পথের দিকে পরিচালিত করে। তিনিও আল্লাহর রাসূলের মতই যার প্রতি তিনি ঈমান এনেছেন। তার দায়িত্ব কেবল মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া।
আসআদ বিন যুরারাহ রা. এর আতিথেয়তায় মদীনায় তিনি তার দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে চলছেন। উভয়ে একসাথে বিভিন্ন কবিলার লোকদের কাছে দীনের দাওয়াত নিয়ে ছুটছেন। এ ঘর থেকে ও ঘরে। এই গৃহ থেকে ওই গৃহে। আজ এই মজলিশে তো কাল আরেক মজলিশে। এভাবে লোকদেরকে জড়ো করছেন। কুরাআনুল কারীমের তেলাওয়াত শুনিয়ে তাদের দিলগুলোতে ইসলামের চারা বুনছেন। দক্ষতা ও হিকমতের সাথে, কোমলতা ও মায়াভরা যবানে তাদের হৃদয়ের যমীনটি কর্ষণ করে সেখানে ঈমানের বীজ বুনে দিচ্ছেন। তাদের কানের বাতায়ন পথে হৃদয়ের কন্দরে এ আওয়াজ পৌঁছিয়ে দিচ্ছেন, “নিশ্চয় আল্লাহই হলেন একমাত্র ইলাহ”
কিন্তু দাওয়াতের এ পথটি কুসামাস্তির্ণ ছিলনা। কখনও কখনও বাধারও মুখোমুখি হয়েছেন। যা তাকে ও নবাগত মুসলমানদেরকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারত। কিন্তু তিনি তার খোদাদাদ বুদ্ধিমত্তা, আল্লাহ প্রদত্ত যোগ্যতা ও প্রত্যুতপন্নমতিত্বকে এ ক্ষেত্রে কাজে লাগিয়েছেন। তাঁর হৃদয়ের প্রশস্ততা তাকে এ কাজে সাহস জুগিয়েছে।
মুসআব বিন উমাইর রা. একদিন লোকদের সামনে তাওহিদের আলোচনা করছিলেন। তাদেরকে আল্লাহর একত্ববাদের কথা বুঝাচ্ছিলেন। মুহাম্মদ সা. এর রেসালতের দাওয়াত দিচ্ছিলেন। এমন সময় মদীনার বনি আশহাল গোত্রের সরদার উসাইদ বিন হুদাইর অগ্নিশর্মা হয়ে এগিয়ে এল। রাগে-রোষে সে ফুঁসছিল।
তার সকল রাগ ও ক্ষোভ ছিল হযরত মুসআবের প্রতি। যিনি তার
কওমের লোকদেরকে বাপ-দাদার ধর্ম ত্যাগ করার কথা বলছেন। তাদের দেবদেবীদেরকে বর্জন করার কথা বলছেন। তাদেরকে বাদ দিয়ে এক আল্লাহর কথা মানার জন্য বলছেন। তাদের সামনে যে আল্লাহর কথা বলছেন তাকে তো তারা চিনেই না। তার কথা কখনও তারা শোনেও নি।
অপর দিতে তাদের বিশ^াস হল, তাদের উপাস্যরা তাদের সাথেই রয়েছেন। তারা তাদের অবস্থান সম্পর্কে জানে। প্রয়োজনে কোথায় গিয়ে কোন দেবতার কাছে মিনতি জানাতে হবে তাও তাদের জানা আছে। তখন সে উপাস্য তার আহবানে সাঁড়া দেবেন। তার প্রয়োজন পুরো করবেন।
মুহাম্মদের প্রভু!? যার দিকে এই লোকটি আহবান করছে কেউ তাঁকে চেনে না। কোথায় থাকেন তাও জানেনা। কেউ যদি তাকে দেখতে চায় তাও তাকে দেখা যায় না।
যে সকল মুসলমান সেদিন সে গৃহে হযরত মুসআবের আলোচনা শুনছিল, তারা উসাইদ বিন হুদাইরের এই পাষা-মার্কা অগ্নিমূর্তি দেখে ভড়কে গেল। কিন্তু মুসআব রা. ঘাবড়ালেন না। বরং স্থির ও নিরুদ্বিগ্ন দাড়িয়ে রইলেন।
রাগে লাল হয়ে উসাইদ তাঁর সামনে এসে দাঁড়াল। তাঁকে ও আসআদ বিন যুরারাহ রা. উভয়কে সম্বোধন করে বলল,
“কোন মতলবে আমাদের মহল্লায় এসেছ? আমাদের দুর্বল মানুষগুলোকে বোকা বানাতে? ভালোয় ভাল কেটে পড়, যদি জানে বাঁচতে চাও”।
এতক্ষণ মুসআব বিন উমাইর রা. তার কথাগুলো নিরবে শুনলেন। ধৈর্যের সাথে তার রক্তচক্ষুকে সহ্য করলেন। এবার তিনি মুখ খুললেন। কিন্তু স্থির, প্রশান্ত। মহা সমুদ্রের অথৈ জলরাশির মত। তলদেশে লুকিয়ে থাকা মুক্তোর মত।
প্রভাতের রবি কিরণের মত। ¯িœগ্ধ সকালের মিষ্টি রোদের মত মুসআবের চেহারা উদ্ভাসিত হল। মুসআব রা. উসাইদ বিন হুদাইরকে সম্বোধন করলেন, আহ্ সেকি মিষ্টতা! সেকি মায়াভরা আহবান!
“আচছা কেমন হয়, তুমি যদি কিছু সময়ের জন্য আমাদের সাথে বস? আর আমরা যা বলছি তা শুন। পসন্দ হলে গ্রহণ করবে, আর পছন্দ না হলে আমরা তোমার থেকে বিরত থাকব।”
আল্লাহ আকবার! সত্যিই বিস্ময়কর! যে সমাপ্তিতে সৌভাগ্য রয়েছে তার সূচনাটা বুঝি এমন চমৎকার হয়ে থাকে!?
উসাইদ তো ছিলেন বনী আশহালের নেতা। যে কেউ তো আর নেতা হতে পারে না। এর জন্য নেতৃত্বের যোগ্যতা থাকা চাই। হ্যাঁ, নেতৃত্বের সব যোগ্যতাই তার মাঝে ছিল। বুদ্ধি বল আর বিবেক বল। সব দিক থেকেই তিনি পাকা ছিলেন। মুসআবের প্রস্তাব ভেবে দেখতে তার সময় লাগার কথা নয়। লাগেও নি। মুসআবের প্রস্তাবের যৌক্তিকতা আছে। সেটি সে বুঝতে পেরেছিল। কারণ মুসআব তো আর কারো কথা শোনার জন্য বলছেন না। কেবল তার কথাই শোনার জন্য বলছেন। তার কথায় যদি যুক্তি থাকে, মানার মত হয় তবেই তো মানবে। আর যদি মানার মত না হয়, তবে তো সে বেঁচে গেল তার কওম ও বেচে গেল। তিনি এলাকা ছেড়ে চলে যাবেন। অন্য এলাকায় তার দাওয়াতি কার্যক্রম চালাবেন। তাদের কোন ক্ষতি করবেন না।
মুহূর্তে উসাইদ সবকিছু ভেবে নিল। তার পর উত্তর দিল, হ্যাঁ, তুমি ন্যায্য কথা বলেছ। তোমার কথা শোনা যেতে পারে।
এরপর উসাইদ তার সকল অস্ত্র ফেলে দিয়ে মুসআব রা. এর কথা শোনার জন্য মাটিতে বসে গেল।
হযরত মুসআব রা. কুরআনুল কারীমের তেলাওয়াত শুরু করলেন। আয়াতের ব্যাখ্যা তুলে ধরলেন। মুহাম্মদ সা. যে দীন নিয়ে পৃথিবীতে প্রেরিত হয়েছেন তার বিশ্লেষণ শুরু করলেন। মুসআবের কথাগুলো উসাইদের কানে প্রবেশ করতেই তার মাঝে পরিবর্তন শুরু হল। চেহারার দর্পনে তার উদ্ভাস পরিলক্ষিত হল। মুসআবের মুখঃনিসৃত প্রতিটি শব্দ যেন উসাইদের দিলে আলোর ফোয়ারা হয়ে ছুটে চলছে। মুহূর্তে উসাইদ যেন অন্য জগতে প্রবেশ করছে। যে জগতে কেবল আলোর। যে জগত নূরের।
না, উসাইদ আর নিজেকে সংম্বরণ করতে পারলেন না। মুসআব রা. এখন তার কথা শেষ করেন নি। উসাইদ চিৎকার করে উঠলো।
কি চমৎকার এ কথাগুলো! আহ্ কত সুন্দর এই বানীগুলো! এই দীনে প্রবেশ করতে চাইলে আমাকে কী করতে হবে?
উসাইদের এই পরিবর্তনে উপস্থিত সকলে সম্বস্বরে আল্লাহু আকবার বলে চিৎকার করে উঠল। তাদের চিৎকারে যমীন যেন কেঁপে উঠল। এরপর হযরত মুসআব রা. তাকে বললেন। এ দীনে প্রবেশ করা খুবই সহজ। প্রথমে শরীর ও কাপড় পবিত্র করে নিতে হবে। এরপর আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য দিতে হবে।
সাথে সাথে উসাইদ মজলিশ থেকে উঠে গেল। অল্প সময় পরে আবার ফিরে এল। এখন তার শরীর থেকে টপটপ করে পনি ঝরছে। এরপর সকলের সামনে দাঁড়িয়ে উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করল ইসলামের মর্মবানী। পাঠ করল, লা-ইলাহা ইল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।
পুব আকাশে সূর্য উদিত হলে যেমন তার আলো পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়ে, তেমনি উসাইদ বিন হুদাইরের ইসলাম গ্রহণের খবর সমগ্র মদীনায় ছড়িয়ে পড়ল।
এরপর সা’দ বিন মাআজ এলেন। মুসআব রা. এর কাছে দীনের আলোচনা শুনলেন। আলোচনায় তারও দিল ভরে গেল। তিনিও ইসলাম গ্রহণ করলেন। এরপর আসলেন সা’দ বিন উবাদাহ। তিনি ইসলাম গ্রহণ করে সৌভাগ্যবান হলেন। এই লোকগুলোর ইসলাম গ্রহণের মধ্য দিয়ে মদীনার মাটিতে খোদার নেয়ামতের পূর্ণতা আসলো। মদীনাবাসীর মধ্যে একটি সাঁড়া পড়ে গেল। একজন আরেক জনকে জিজ্ঞেস করল, উসাইদ বিন হুদাইর, সা’দ বিন মাআজ, সা’দ বিন উবাদাহর মত মানুষ যদি ইসলাম গ্রহণ করেন তবে আমরা কেন পিছিয়ে থাকব? চল মুসআবের কাছে যাই। তাঁর হাতে হাত রেখে কালিমা পড়ি। লোকেরা বলে তাঁর মুখ থেকে ‘সত্য’ যেন শবনম হয়ে ঝরে ঝরে পড়ে।
রাসূলুল্লাহ সা. এর প্রথম দূত অভাবনীয় সফলতা অর্জন করলেন। আসলে এমন সফলতা অর্জনের তিনি যোগ্যও ছিলেন। এমন কামিয়াবির তিনি উপযুক্ত ছিলেন।
সময় গড়িয়ে চলল আপন গতিতে। মাস পেরিয়ে বছর। রাসূলুল্লাহ সা. ও সাহাবিগন মদীনায় হিজরত করলেন। বলতে গেলে মক্কা এখন মুসলমান শূন্য। মুসলমানগণ গোপনে মদীনায় হিজরত করাতে কুরাইশদের হিংসার অনলে যেন ঘৃতাহুতি হল। তাদের জিঘাংসা যেন আরো বহুগুণে বেড়ে গেল। তারা মুসলমানদের বিরূদ্ধে বড় রকম আক্রমনের প্রস্তুতি নিতে লাগল। মক্কায় মুসলমানদের উপর যে জুলুম-নির্যাতনের মহড়া চালিয়েছে তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে তারা মরিয়া হয়ে উঠল। আল্লাহর নেক বান্দাগুলোর উপর অকথ্য অত্যাচারের যে খড়গ তারা মক্কায় চালিয়েছে, তাতে নতুন করে শাণ দিতে শুরু করল।
বেজে উঠল যুদ্ধের দামামা। বদরের প্রান্তরে আল্লাহর বান্দাদের সাথে হোবলের পুজারিদের এক অসম যুদ্ধ হয়ে গেল। কড়োটির ভেতরে মস্তিষ্কের যতটুকু ঠিকানা বাকী ছিল এ যুদ্ধে তারা তাও হারিয়ে ফেলল। তারা প্রতিশোধের জন্য মরিয়া হয়ে উঠল।
বেজে উঠল আবার যুদ্ধের ডংকা। এবার মুখোমুখী হল উহুদের প্রান্তরে। মুসলমানরাও নিজেদেরকে প্রস্তুত করে নিল। রাসূলুল্লাহ সা. মুসলিম মুজাহিদ বাহিনীর মাঝে দাঁড়ালেন। তার অনুসন্ধিৎসু তীক্ষè নজর সকলের উপর একবার বুলালেন। কার হাতে দেবেন এ যুদ্ধের ঝা-া? খুজে নিচ্ছেন তাকে। তাঁর সুদূর প্রসারী দৃষ্টি নিবদ্ধ হল মুসআবের উপর। তাঁকে ডাকলেন। এগিয়ে এলেন হযরত মুসআব। তুলে নিলেন উহুদের ঝা-া। মুসলিম বাহিনীর পতাকা।
শুরু হল ঘোরতর লড়াই। ঈমান ও কুফরি শক্তির লড়াই। মুসলিম বাহিনীর প্রচ- আঘাতে কুফরি শক্তির কোমর ভেঙ্গে গেল। তারা রনাঙ্গ ছেড়ে নিজেদের জীবন নিয়ে পালাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। পাহাড়ের চূড়ায় যে তীরন্দায বাহিনীকে নবীজি সা. পজিশন নিয়ে দাঁড় করিয়েছিলেন তারা যখন দেখল কাফের বাহিনী পালিয়ে যাচ্ছে, তখন তারা তাদের অবস্থান থেকে নিচে নেমে এল। আর এতেই দেখা দিল মহা বিপত্তি। মুহূর্তে যুদ্ধের রূপ পাল্টে গেল। নিশ্চিত বিজয়টা পরাজয়ের দিকে ধাবিত হল। পাহাড়ের পেছলে লুকিয়ে থাকা কুরাইশদের ঘোড়সাওয়ার বাহিনী অতর্কিত আক্রমন করে বসল। তারা মুসলিম বাহিনীর অসর্তকতার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করল। তাদের দীর্ঘ দিনের তৃষ্ণার্ত তরবারিগুলোর তৃষ্ণা নিবারণ করল।
মুসলিম বাহিনীর সারির মধ্যে যখন তারা বিশৃঙ্খলা দেখতে পেল এবং মুহূর্তের জন্য যুদ্ধের ময়দানে এক ধরণের শূন্যতা তৈরী হল, তখন তারা রাসূলুল্লাহ সা. এর উপর আক্রমন করার জন্য তাদের সম্পূর্ণ শক্তি কেন্দ্রিভূত করল।
হযরত মুসআব রা. ঠিক সেই কঠিন মুহূর্তে কাফেরদের কৌশল ধরতে পারলেন। সাথে সাথে তিনি কালিমার ঝা-াকে উঁচু করে স্বজোরে চিৎকার দিলেন। শরীর সমুদয় শক্তি জমা করে সিংহের মত গর্জন দিয়ে উঠলেন। নারায়ে তাকবীরের আওয়াজ দিয়ে যুদ্ধের ময়দানে চক্কর দিতে শুরু করলেন। এবং উপর্যপুরি আক্রমন চালালেন। তাঁর উদ্দেশ্য হল শত্রুকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করা। রাসূলুল্লাহ সা. থেকে তাদের দৃষ্টিকে নিজের দিকে ফিরিয়ে আনা। যুদ্ধের সেই কঠিনতম মুহূর্তে এমন ভাবে তিনি ময়দানে অসি চালাতে লাগলেন যেন তিনি একাই একটি বাহিনী। বিশাল এক বাহিনীর শক্তি ও সাহসিকতা নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে একাই কাফের বাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে তুললেন।
এক হাতে কালিমার পতাকাকে উপরে তুলে ধরেছেন।
আরেক হাতে তরবারি দিয়ে কাফেরদেরকে জাহান্নাম ‘রসিদ’ করে চলছেন।
ইতিমধ্যে বহু কাফের তাঁকে ঘিরে নিয়েছে। সকলে একযোগে তার উপর হামলে পড়ছে। তার লাশ মাড়িয়েই তারা তাদের উদ্দেশ্যে পৌঁছে যেতে চায়। তার লাশের উপর দিয়েই তারা মুহাম্মদ সা. পর্যন্ত যেতে চায়।
আচ্ছা, তারপর কী ঘটল সেদিন উহুদের প্রান্তরে? আসুন না একজন দর্শকের কাছ থেকে তা জেনে নেয়া যাক।
ইবরাহীম বিন মুহাম্মদ বিন শারাহবিল আল আবদারি সুত্র ধরে তার পিতা থেকে ইবনে সা’দ বলেন, উহুদের দিন মুসলিম বাহিনীর ঝা-া হযরত উমারেয়রের হাতে ছিল। যুদ্ধের কঠিনতম মুহূর্তে মুসলমানগণ যখন দিগবিদিগ ছুটাছুটি করছিল, তখন তিনি যুদ্ধের ময়দানে স্থির-অবিচল লড়ে চলছেন। ইতিমধ্যে ইবন কামিআহ ঘোড়ায় চড়ে হযরত মুসআবের কাছাকাছি চলে আসল এবং তাঁকে নিজের বাগে ফেলে দিল। আর ঠিক তখনি সে তরবারিটা মারল মুসআবের ডান হাত লক্ষ্য করে। আঘাতের চোটে সেটি কেটে পড়ে গেল। সাথে সাথে হযরত মুসআবের মুখে উচ্চারিত হল
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ الرُّسُلُ ۚ
আর মুহাম্মদ একজন রসূল বৈ তো নয়! তাঁর পূর্বেও বহু রসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন।
এরপর তিনি কালিমার ঝা-াকে বাম হাতে আঁকড়ে ধরলেন। ইবন কামিআহ দ্বিতীয় আঘাত করল। এবার তাঁর বাম হাতটিও কেটে নিল। উভয় হাত যখন তার শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল তিনি কুরআনের ঝা-াকে দুই বাহু দিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরলেন। আর মুখে উচ্চারণ করতে থাকলেন,
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ الرُّسُلُ ۚ
এরপর আসল তৃতীয় আঘাত। ইবন কামিআহ ছোড়া বর্শাটি হযরত মুসআবকে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিল। হযরত মুসআব রা. পড়ে গেলেন। কালিমার ঝা-াও মাটিতে পড়ে গেল।
মুসআব পড়ে গেলেন। ঝা-াও পড়ে গেল!!
শাহাদাতের অলংকার খসে পড়ল, শহীদদের নক্ষত্র ছিটকে পড়ল।
পড়ে গেলন সত্য, তবে ঈমান ও আত্মদানের মহান এক যুদ্ধে জীবনের ঝুকি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার পরই।
তিনি মনে করেছিলেন, যদি তিনি পড়ে যান তবে নবীজি সা. অরক্ষিত হয়ে যাবেন। হত্যাকারীদের পথ খোলাসা হয়ে যাবে। তারা সহজেই নবীজি সা. পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।
নবীজির প্রতি প্রাণাধিক ভালবাসার কারণে নিজেকে উৎসর্গ করলেন। নবীজির প্রাণের আশংকায় তিনি নিজেকে পেশ করলেন। এক একটি আঘাতে যখন তার শরীর থেকে এক একটি অঙ্গ কেটে নেয়া হল, তখন তিনি নিজের কথা না ভেবে নবীজির কথাই তার যবানে উচ্চারিত হল। তিনি বলে গেলেন
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ الرُّسُلُ ۚ
মুসআবের মুখ নিসৃঃত এ বাণীগুলো পরবতীর্তে কুরআনের আয়াত হয়ে অবতীর্ণ হবে। যা মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হবে। এর উদ্দেশ্য পূর্ণতায় পৌঁছবে। অনন্তকাল তা কুরআনের আয়াত হয়ে তেলাওয়াত হবে।
এই বিয়োগান্ত যুদ্ধ যখন শেষ হল হযরত তখন দেখা গেল শহীদ মুসআবের লাশটি বসা অবস্থায় রয়েছে। তিনি তাঁর পবিত্র মুখটি তাঁর তপ্ত খুনে রঞ্জিত
মাটিয়ে লুকিয়ে রেখেছেন। যেন তিনি শঙ্কিত, নবীজি সা. যেন তার নিথর দেহখানা দেখে কষ্ট না পান। আর তিনি যেন নবীজির ওই বেদনা-মলিন চেহারাটা দেখতে না পান। তাই যা তিনি আশঙ্কা করছেন তা থেকে বেঁচে থাকতে মাটিতে মুখ লুকিয়েছেন।
অথবা, তিনি যেন লজ্জিত! নবীজির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আগে কেন তিনি শহীদ হয়ে গেলেন? নবীজি সা. কে রক্ষা করা ও শত্রুকে তাঁর থেকে প্রতিহত করার মহান ফরিজা শেষ পর্যন্ত আঞ্জাম দিতে না পেরে লজ্জিত!
সত্যিই মুসআব আল্লাহ তোমায় অনেক দিয়েছেন। সত্যিই তোমার আলোচনা মধুময়।
নবীজি সা. ও সাহাবাগণ এলেন। ঘুরে ঘুরে যুদ্ধের ময়দান দেখছেন। শহীদদেরকে বিদায় জানাচ্ছেন। তাঁরা সকলে হযরত মুসআবের লাশের পাশে এসে দাঁড়ালেন। সকলের চক্ষুসলীল যেন বাঁধ ভেঙ্গে বেরিয়ে এল।
হযরত খাব্বাব ইবনুল আরাত্তি রা. বলেন, “ আমরা রাসূলুল্লাহ সা. এর সাথে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হিজরত করেছি। আল্লাহর কাছে আমাদের প্রতিদান নির্ধারিত হয়েছে। আমাদের মধ্যে এমন অনেক রয়েছেন যিনি দুনিয়াতে তাঁর প্রতিদান ভোগ করে যেতে পারেন নি। তাদের মধ্যে হযরত মুসআব বিন উমায়ের অন্যতম। উহুদের দিন তিনি শহীদ হলেন। তাঁকে কাফন দেয়ার মত পর্যাপ্ত কাপড় জোগাড় হলনা। কেবল একটি চাদরই জোগাড় হল। আবার চাদরটিও এত ছোট ছিল যে যদি আমরা তাঁর মাথা ঢাকতে চাইতাম তবে পায়ের অংশ খালি হয়ে যেত। আর পায়ের অংশ ঢাকতে চাইলে মাথা খোলা থেকে যেত। তখন নবীজি সা. আমাদেরকে বললেন, মাথার অংশ ঢেকে দাও। আর পায়ের অংশে কিছু ঘাঁস দিয়ে ঢেকে দাও।
যদিও নবীজি সা. এর অন্তর দুঃখ ভারাক্রান্ত ছিল তাঁর চাচার শাহাদাতের কারণে। কাফেররা তাঁর চাচার লাশকে টুকরো টুকরো করেছে। কলিজা বের করে চিবিয়ে খেয়েছে। চাচার এমন অবস্থায় নবীজি সা. সত্যিই ব্যথিত ছিলেন। তাঁর চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল।
যদিও যুদ্ধের ময়দানে মুসলিম মুজাহিদদের লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল, যে সকল মুসলমানের প্রত্যেকে ছিলেন সত্য ও পবিত্রতার, আলো ও হেদায়েতের এক একটি জগত।
এতসব সত্ত্বেও নবীজি সা. তাঁর প্রথম দূতের লাশের পাশে এসে দাঁড়ালেন। তাকে বিদায় জানালেন।
হ্যাঁ, রাসুলুল্লাহ সা. মুসআব বিন উমায়েরের লাশের পাশে এসে দাঁড়ালেন। তাঁর দুচোখ মুসআবের প্রতি তাঁর অগাধ ভালবাসার অশ্রুজলে সিক্ত। দুচোখের যত আলো আছে, তাতে যত ভালবাসা আছে, যত ওফাদারী আছে সবদিয়ে যেন মুসআবকে লেপ্টে নিচ্ছেন। বলছেন,
مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ ۖ
মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে।
এরপর ব্যথিত হৃদয়ে তার কাফনের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমি তোমাকে মক্কায় দেখেছি, তোমার মত মসৃণ ও দামী কাপড় আর কাউকে পরতে দেখিনি। তোমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোন যুবক আমান নজরে পড়েনি। আর এই তুমি আজ এক চাদরে মাথা ঢেকে আছ।
এরপর নবীজি সা. তার ¯েœহময় দৃষ্টিকে পুরো যুদ্ধের ময়দানে পরিব্যাপ্ত করলেন। এখানে সেখানে মুসআবের যে সকল সাথি শাহাদাতের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে অনন্তলোকে পাড়ি জমিয়েছেন, তাদের সকলকে লক্ষ্য করে স্বজোরে আওয়াজ দিয়ে বললেন,
“আল্লাহর রাসূল কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সাক্ষ্য দিবেন ‘তোমরা অবশ্যই শহীদ’।
এরপর তাঁর আশে পাশে যে সকল সাহাবি ছিলেন তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, “হে লোকসকল! তোমারা তাদের কবর যেয়ারত করবে। তাদের কাছে আসবে। তাদেরকে সালাম দিবে। যার কুদরতি কব্জায় আমার জান, তাঁর শপথ করে বলছি, কেয়ামত পর্যন্ত যত মুসলমান তাদেরকে সালাম দিবে তারা প্রত্যেকের সালামের জবাব দিবেন।
সালাম হে মুসআব, তোমার প্রতি সালাম।
হে উহুদের বীর শহীদান তোমাদের প্রতি সালাম।
আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।
©somewhere in net ltd.