নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিম্বারের আহবান

আবু সাঈদ মুহাম্মদ নু’মান

আবু সাঈদ মুহাম্মদ নু’মান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধৈর্য ধরো : সব কিছুরই একটা শেষ আছে

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:০৫

ড. আয়েজ আল করনি
অনুবাদ : আবু সাঈদ মুহাম্মদ নু’মান

আমাদের শায়খ আবদুল্লাহ বিন বায রহ. এর সাথে একবার রিয়াদে জামে মালিক আবদুল আযিযে জুমার নামায আদায় করার সৌভাগ্য হয়। ড. আবদুল ওয়াহাব আত্ তারিরি ছিলেন এ মসজিদের বিজ্ঞ খতীব। সেদিনের খোতবার বিষয় ছিলো শিরক ও বেদাআত এবং ইসলামি বিশে^ প্রচলিত বিভিন্ন গর্হিত কর্মকা-।
বেলা এগারোটার কাছাকাছি শায়খ মসজিদে চলে গেলেন। তখনও জুমার অনেক সময় বাকী ছিলো। তিনি সালাতে নিমগ্ন হলেন। প্রায় দশ রাকাতের মতো নফল আদায় করলেন। সালাত শেষে আমার দিকে তাকালেন। আমি তার পাশেই ছিলাম। তিনি মুচকি হেঁসে আমাকে সালাম দিলেন। আমিও সালামের জবাব দিলাম। কুশল বিনিময় হলো।
বিভিন্ন কারণে আমি তখন মানসিকভাবে একটু নির্জিব ছিলাম। যেহেতু তখনও সুন্দরভাবে গুছিয়ে বক্তৃতা করতে পারতাম না। ক্লাশে ছাত্রদের সামনেও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারতাম না। দাওয়াতি কাজও তেমন ভালোভাবে করতে পারতাম না। বিষয়গুলো শায়খকে জানালাম।
তখন শায়খ আমাকে বললেন, "عليك بالصبر فإن لكل شيء حدًا" তোমার ধৈর্য ধরা উচিত। সব কিছুরই একটা সীমা আছে।
শায়খ আমাকে কেবল সংক্ষিপ্ত এ কয়েকটি শব্দে নসীহত করলেন। আর কোন কথা বললেন না। ব্যাস এই বাক্যটি বলে থেমে গেলেন। কিন্তু এ বাক্যের আহবান থেমে থাকলো না। এর আবেদন থমকে গেলো না। বরং আমার হৃদয়ে পশে গেলো। আমার মর্মে মর্মে ঢুকে গেলো। আমার সর্বাঙ্গে এর আবেদন ছড়িয়ে পড়লো।
যথাসময় সালাত শেষ হলো। একে একে সবাই বেরিয়ে গেলো। আমিও বেরিয়ে এলাম। কিন্তু এ কি! আমার জেহেনে কোন কিছুই যে নেই। খতীব সাহেবের জ¦ালাময়ী ভাষণ। শিরক-বিদাআতের কঠিন কঠিন হুশিয়ারি সবকিছুই যেন আমার মন থেকে উধাও হয়ে গেলো। কোন কিছুই যে আমার মনে পড়ছেনা। যেন আমি শুনিই নি। কেবল একটি বাক্যই ঘুরে ফিরে মনে পড়ছে; বরং বলা ভালো, আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখছে "عليك بالصبر فإن لكل شيءٍ حدًأ" ধৈর্য ধরো : সব কিছুরই শেষ আছে।
এ বাক্যটি আমাকে গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য করলো। আমি যখন গভীরভাবে ভাবলাম দেখলাম প্রতিটি জিনিসেরই একটি বাউ-ারি রয়েছে। সময় বলো আর বিপদ বলো, ক্ষুধা বলো আর অসুস্থতা বলো, দারিদ্রতা বলো আর ঋণ বলো, জেলখানার বন্দি বলো আর মুক্ত স্বাধিন জীবন বলো, যাই বলো, সবকিছুরই একটা শেষ আছে। একটি পরিসমাপ্তি আছে। জীবনের সকল পেরেশানী, সকল দুঃশ্চিন্তা একসময় এসে শেষ হয়েই যায়।
এ সীমা রেখায় এসে সবকিছু উল্টো দিকে মোড় নেয়। জীবনের গতি হাঁসি-আনন্দ, সুখ-স্বাচ্ছন্দ, রহমত-বরকতের দিকে ধাবিত হয়। খুলে যায় প্রাচুর্যতার দুয়ার। আসে অনাবিল প্রশান্তি। মুক্ত স্বাধিন জীবন উপভোগ করার সোনালী সুযোগ।
প্রিয় পাঠক! জীবনে চলার পথে যদি কখনো বিপদ-মুসিবত এসে তোমার পথ আগলে দাঁড়ায়, ভেঙ্গে পড়ো না। সাহস হারিয়ো না। ধৈর্য ধরো। সবকিছুরই একটা শেষ আছে।
রাত যত দীর্ঘই হোক না কেন প্রভাত আসবেই। রাতের সমাপ্তি ঘটবেই। নতুন প্রভাতে নতুন সাজে পৃথিবী রাঙাবেই। হাঁসি-আনন্দের হিল্লোল বইবেই। খুশির বিমল সমিরণ সকলের তনু-মনে সতেজতার পরশ বুলি দেবেই।
রশি যতই পাকাও, যতই লম্বা করো। এক সময় ছিড়বেই।
বিপদের একটা নির্ধারিত সময় আছে। মুসিবতের একটা নির্দিষ্ট বয়স আছে। দুঃখ-দুর্দশার হাতে গোনা একটা মেয়াদ আছে। সুতরাং ধৈর্যের সাথে অপেক্ষা করো। ধৈর্যের সাথে বিপদ কেটে যাওয়ার অপেক্ষা ইবাদাত হিসেবে গণ্য। নিশ্চয় সবকিছুরই একটা শেষ আছে।
‘সব কিছুরই একটা শেষ আছে’ কথাটি তোমার অন্তরে আল্লাহর সম্পর্কে একটি ইতিবাচক ধারণ সৃষ্টি করবে। আল্লাহর কাছে যা রয়েছে সে ব্যাপারে তোমার মাঝে একটি সুন্দর আশার সৃষ্টি হবে। আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের জন্য। আল্লাহর পক্ষ থেকে সমাধান নেমে আসার জন্য। সুতরাং কখনও ভুলে যেয়ো না, “সবকিছুরই একটা শেষ আছে”।
মহা বিশে^র এই অমোঘ নীতি তুমি জানতে পেরেছো এমন এক অভিজ্ঞ ব্যক্তি থেকে, যিনি একাধারে আলেম, ফকীহ, মুহাদ্দিস, দাঈ ইলাল্লাহ। যিনি জীবনের নব্বইটি বসন্ত পার করেছেন। পৃথিবীর বহু ওলট-পালট দুচোখে দেখেছেন। নিজের অন্তরদৃষ্টি দিয়ে দেখেছেন পৃথিবীর বহু ভাঙ্গাগড়া। দুনিয়াকে যিনি নিজের কাজের চমৎকারিত্বে মাতিয়ে দিয়েছেন, রাতকে দিনে পাল্টে দিয়েছেন এমন এক প্রাজ্ঞ ব্যক্তির কাছ থেকে যখন তুমি এ নিয়মটি জানতে পেরেছো, তখন জেনে রাখো তুমি আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণ লাভের অপেক্ষায় রয়েছো।
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি বিপদ-আপদকে চিরস্থায়ী করেন নি। দুঃখ-দুর্দশাকে অনন্ত-অবিনাশী করেন নি। বরং প্রতিটি বিপদ-আপদ, দুঃখ-দুর্দশার একটি পরিসমাপ্তি রেখেছেন।
এ সীমা রেখার দিকে লক্ষ্য করো। আর অনুধাবন করতে চেষ্টা করো। প্রতিটি বস্তুই যখন তার সীমারেখায় পৌছে যায় তখন আবার উল্টো দিকে চলতে শুরু করে। এটি প্রকৃতির একটি শ^াষত নিয়ম। জীবনের একটি অমোঘ নীতি।
বরং আমিতো বলতে চাই, এই যে সর্দিতে তুমি আক্রান্ত হলে, আমি জানি এর একটা সীমা আছে। অচীরেই তা আল্লাহর নির্দেশে শেষ হয়ে যাবে।
যে জ¦রে আক্রান্ত হয়ে সবকিছু তোমার কাছে বিস্বাদে পরিণত হয়, সে জ¦রও কিন্তু আজ না হয় কাল, না হয় পরশু তোমাকে ছেড়ে চলে যাবে। বড়জোর আরো কয়েক দিন হয়তো তোমাকে ভোগাবে। এরপর তুমি সুস্থ হয়ে উঠবে।
ক্ষুধার সীমা হলো তুষ্ট হওয়া পর্যন্ত।
দারিদ্রতার সীমা হলো প্রাচুর্যতা পর্যন্ত।
বন্দিত্বের সীমা হলো মুক্ত হওয়া পর্যন্ত।
দুঃখের সীমা হলো সুখ আসা পর্যন্ত।
খেয়ে তুষ্ট হয়েছো তবে ক্ষুধা শেষ। প্রাচুর্যতা লাভ করেছো, তবে দারিদ্রতা শেষ। মুক্তি পেয়েছো, তবে বন্দি জীবন শেষ। সুখের নাগাল পেয়েছো, তবে দুঃষের সীমা শেষ। সুতরাং ধৈর্য ধরো। অপেক্ষা করো। আর আল্লামা বিন বাযের কথাটা স্মরণ রাখো, ধৈর্য ধরো : সব কিছুরই একটা শেষ আছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.