নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিম্বারের আহবান

আবু সাঈদ মুহাম্মদ নু’মান

আবু সাঈদ মুহাম্মদ নু’মান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরিভাষাগত যুলুমের যাঁতাকলে তাযকিয়া নফস

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:০২


তাযকিয়া বা আত্মার সংশোধন ইসলামের একটি শ্বষত বিধান। রাসূলুল্লাহ সা. এর নবুওয়াতী মৌলিক দায়িত্বের অন্যতম। কুরআনুল কারীমের সূরাতুল জুমুআ’তে এ দায়িত্ব বর্ণিত হয়েছে স্পষ্টরূপে। এরশাদ হচ্ছে-
هُوَ الَّذِیْ بَعَثَ فِی الْاُمِّیّٖنَ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ یَتْلُوْا عَلَیْهِمْ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَكِّیْهِمْ وَ یُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْحِكْمَةَ ۗ وَ اِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِیْ ضَلٰلٍ مُّبِیْنٍۙ۝۲ الجمعة: ٢
অর্থ : তিনিই উম্মীদের মাঝে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে, যে তাদের কাছে তেলাওয়াত করে তাঁর আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করে এবং তাদেরকে শিক্ষা দেয় কিতাব ও হিকমাত। যদিও ইতঃপূর্বে তারা স্পষ্ট গোমরাহীতে ছিল।
অপরদিকে কুরআনুল কারীমের যে আয়াতে ইবরাহিম আ. কর্তৃক নবী মুহাম্মদ সা. এর প্রেরণের দু’আ বর্ণিত হয়েছে সেখানেও বিষয়টির উল্লেখ হয়েছে নবীজীর গুণাবলী হিসেবে। এরশাদ হচ্ছে-
رَبَّنَا وَ ابْعَثْ فِیْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ یَتْلُوْا عَلَیْهِمْ اٰیٰتِكَ وَ یُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْحِكْمَةَ وَ یُزَكِّیْهِمْ ؕ اِنَّكَ اَنْتَ الْعَزِیْزُ الْحَكِیْمُ۠۝۱۲۹
অর্থ : ‘হে আমাদের রব, তাদের মধ্যে তাদের থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যে তাদের প্রতি আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবে আর তাদেরকে পবিত্র করবে। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’।
লক্ষণীয় বিষয় হলো উভয় আয়াতে একই ধরণের নবুওয়াতি দায়িত্ব বর্ণিত হয়েছে। তবে ইবরাহিম আ. এর দু’আয় ‘তাযকিয়া’র অবস্থান হলো চতুর্থ নাম্বারে কিন্তু সূরা জুমুআয় নবুওয়াতি দায়িত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে সেটিকে আনা হয়েছে দ্বিতীয় নাম্বারে। এ থেকেও এ দায়িত্বের গুরুত্ব বোঝা যায়।
যে কোন বিষয় যখন স্বতন্ত্র শাস্ত্রের রূপ পরিগ্রহ করে, এবং এর ধারক-বাহকগণ এর উৎকর্ষ সাধনে মনোযোগী হন, তখন সে শাস্ত্রের বিভিন্ন বিষয়কে সহজে মানুষের সামনে উপস্থাপন করার জন্য বিভিন্ন পরিভাষার সৃষ্টি করেন। ইলমের যে কোন শাখায় আপনি দৃষ্টি ফেরালে এর বাস্তবতা দেখতে পাবেন। এ কথা সত্য যে, জ্ঞানের মূল্য উৎস হলো কুরআন ও হাদিস, কিন্তু কুরআন ও হাদিসের এই জ্ঞান আহরণের জন্য আরবি ভাষা হলো চাবির মতো। আরবি ভাষায় যার যতটুকু দখল রয়েছে তিনি ততটুকু কুরআন ও হাদিসের জ্ঞান আহরণ করতে সক্ষম হবেন।
এই এক আরবি ভাষারই দখল অর্জনের জন্য সৃষ্টি হয়েছে জ্ঞানের অনেকগুলো শাখা। প্রতিটি শাখা আবার স্বতন্ত্র শাস্ত্র হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, সরফ শাস্ত্র, (শব্দ গঠন প্রকরণ) নাহু শাস্ত্র (বাক্য গঠন প্রকরণ) বালাগাত শাস্ত্র (অলংকার শাস্ত্র) আরুয শাস্ত্র (ছন্দ প্রকরণ) ইত্যকার বিষয় কিন্তু আরবি ভাষার বিভিন্ন শাখা। অস্তিত্বের প্রথম স্তরে হয়তো এ সকল শাখাগত জ্ঞানের কোনটিরই স্বতন্ত্র কোন পরিভাষা ছিলো না। কিন্তু সময়ের ধারায় যখন প্রতিটি শাখা জ্ঞানের জগতে একেকটি পূর্ণাঙ্গ শাস্ত্রের মর্যাদা লাভ করলো, তখন স্বাভাবিক কারণের তার জন্য বিভিন্ন পরিভাষার সৃষ্টি হলো। ঠিক একই কথা শরীয়তের প্রতিটি বিষয়ের জন্য প্রজোয্য। ইসলামী জিহাদ বলেন, কিংবা রাষ্ট্রিয় ব্যবস্থাপনা, কুরআনে বর্ণিত তাযকিয়া বলেন, কিংবা তালিমে কুরআন ও হিকমত বলেন প্রতিটি ক্ষেত্রে এই পরিভাষার সৃষ্টি হয়েছে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত বহু শব্দ এমন রয়েছে দৃষ্টিকোনের ভিন্নতার কারণে এর অর্থের মাঝেও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। আবার একই শব্দ শাস্ত্রের ভিন্নতার কারণেও ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে। কোন কোন শব্দ অভিধানের দৃষ্টিকোন থেকে এক ধরণের অর্থ প্রকাশ করে আবার পরিভাষার দৃষ্টিকোন থেকে ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে। এটা একটি বাস্তব সত্য যা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। ‘কালিমা’ আরবি ভাষার একটি শব্দ। নাহু শাস্ত্রের পরিম-লে তার নির্দিষ্ট একটি অর্থ রয়েছে, আবার একই শব্দ আক্বিদা শাস্ত্রের পরিম-লে ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে। সাধারণের কাছে ‘কালিমা’র যে অর্থ ইলমে নাহুর একজন ছাত্রের কাছে সে অর্থ নয়। অনুরূপ ংঃড়হব ( স্টোন) মানে পাথর, আর সবঃযড়ফ ( মেথড) অর্থ পদ্ধতি। তবে ংঃড়হব সবঃযড়ফ মানে পাথর পদ্ধতি নয়। কেউ যদি এমন অনুবাদ করেন, তবে তার ভাষাজ্ঞত জ্ঞান নিয়ে শিক্ষিত সমাজে অবশ্যই প্রশ্ন দেখা দিবে। বরং একটি জটিল পদ্ধতিকে বোঝানোর জন্য এ জুগল শব্দকে একটি পারিভাষিক অর্থের রূপ দেয়া হয়েছে।
তবে একটি কথা মনে রাখা দরকার আল্লাহ তার কালাম ও রাসূলকে এ জন্য প্রেরণ করেন নি যে তারা মানব জীবনের এসকল পরিভাষা সৃষ্টি করে দেবেন। সুতরাং ইসলামী শরিয়তের সীমানায় সৃষ্ট কোন পরিভাষাকে হুবহু কুরআন ও হাদিসে খুঁজতে যাওয়া, এবং সরাসরি কুরআন-সুন্নাহতে খুঁজে না পাওয়ার কারণে তাকে অস্বীকার করা, এবং শব্দের কারণে ওই শাস্ত্রকেই অস্বীকার করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত এ বিাচারের ভার পাঠকের উপর রইলো।
পরিভাষাগত কারণে উপেক্ষা করা হয়েছে এমন একটি দীনি বিষয় হলো এই ‘তাযকিয়া’। দীনের এই শাখাকে ঘিরে বেশ কিছু পরিভাষার সৃষ্টি হয়েছে, যা সরাসরি কুরাআন হাদিসে বর্ণিত শব্দ নয়। যেমন, তাসাউফ, পীর, মুরিদ ইত্যকার শব্দ। এ পরিভাষা সৃষ্টির পেছনেও রয়েছে লম্বা ইতিহাস।
কেবল এ শব্দগুলোর কারণে নবুওয়াতের এ মহান একটি শাখাকে অস্বীকার করা হচ্ছে। মিডিয়ার বদৌলতে এই অস্বীকারের ঝড় পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। শব্দগুলোকে নিজেদের পক্ষের সবচেয়ে বড় পুঁজি বানিয়ে বিরোধিতার মাঠ গরম করা হচ্ছে? ফলে অনেক সাধারণ মানুষের মনে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে যে, সত্যিই কি ইসলামের পীর-মুরিদের কোন অস্তিত্ব নেই? কুরআন-সুন্নাহয় এ সম্পর্কিত কোন দিক নির্দেশনাই নেই? মানুষের আত্মার সংশোধনের এই যে ধারা যুগের পর যুগ থেকে চলে আসছে তা এমনই এক বিদাআতি বিষয় যার সাথে কুরআন-সুন্নাহর কোন সম্পর্কই নেই? তবে এই যে যুগে যুগে বিভিন্ন পূণ্যাত্মা মনীষীদের জীবনী আমাদের সামনে আলোচিত হয়, যারা এই তাযকিয়ার পথ ধরে নিজেদেরকে পরিশীলিত মানুষরূপে প্রতিভাত করেছেন, সবধরনের আত্মিক পঙ্কিলতা থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করতে পেরেছেন? তাঁদের নূরানী ছোঁয়ায়, বরকতময় সোহবতে হাজারো মানুষের জীবনের আমূল পরিবর্তন হয়েছে! পথের রাহজান থেকে হয়ে উঠেছেন শেষরাতের ইবাদাতগুজার! এই যে জ্ঞানের জগতে বিশাল বিশাল গ্রন্থ রচিত হয়েছে! তবে এর সবই কি বিদআতের উপর প্রতিষ্ঠিত?
হাসান বসরি, মারুফ কারখি, জুনায়েদ বাগদাদি, আবদুল কাদের জিলানি , ইবনে তাইমিয়্যাহ থেকে নিয়ে শুরু করে নিকট অতীতের শাহজালাল ইয়ামানী, শায়খ আহমদ সারহান্দি, শাহ ওলিউল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভী, সায়্যিদ আহমদ শহীদ, আবদুল কাদের আল জাযায়েরি, সায়্যিদ আহমদ শরীফ, হাসানুল বান্না, আশ্রাফ আলী থানভী, মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জীসহ এই যে অগণিত পূণ্যাত্মা মনীষীগণ, তারা সবাই কি এমন একটি বিদআতের মধ্য দিয়ে তৈরি হয়েছেন? পৃথিবীর ইতিহাস যাদের কর্মময় প্রভাবে প্রভাবিত। যাদের অবদানের স্বীকৃতি দিতে বাধ্য।
তবে একথা সত্য যে কুরআনিক এ বাস্তবতাকে আশ্রয় করে যুগে যুগে কিছু ভ--প্রতারকের আবির্ভাব হয়েছে। তারা তাদের কদর্য আচরণে এই শ^াষত বিধানকে কলুষিত করেছে। কখনও কখনও এদের প্রচারণা যদিও তুঙ্গে ছিলো, বড় বড় খানকাহ ও বাহ্যিক চাকচিক্যের বাহার ছিলো, তবুও তারা এ দীনের এ শাখার কেউ নয়। এরা তস্কর, এরা দীনের মাঝে সৃষ্ট দুষ্টদুরাচার। সুতরাং এদেরকে দেখে, এদের প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়ে এদেরকেই নবুওয়াতি এ দায়িত্বের রথি-মহারথি মনে করা বোকামী ও নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কী-ই বা বলা যেতে পারে? এদের আচার-আচরণকে মানদ- বানিয়ে দীনের এ শাখাকে বিচার বিশ্লেষণ করে তাকে অস্বীকার করাকে কোন যুক্তিতেই বুদ্ধিমানের কাজ হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে না।
হ্যাঁ, সময় হয়েছে এ গোমরাহীর নেকাব ছিন্ন করার। মিথ্যার ধু¤্রজাল সৃষ্টি করে ‘তাযকিয়া’র মতো শরীয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে আনার যে প্রচেষ্টা চলছে, তার রহস্য উম্মোচিত হওয়া সময়ের দাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে। বক্ষমান গ্রন্থটি সে দায়িত্বেরই একটি সাহসী পদক্ষেপ।
বিজ্ঞ লিখক সে সত্যের উপর মিথ্যার যে আস্তরণ পড়েছে, সেটিকে খুবই সাহসিকতার সাথে অকাট্য যুক্তি ও প্রামাণ্য তথ্যের ভিত্তিতে টুকরো টুকরো করতে সক্ষম হয়েছেন।
আমরা আশা করছি এ গ্রন্থটি তার উদ্দেশ্যে সফল হবে। জনমনে সৃষ্টি সন্দেহ দূর করণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। ইনশাআল্লাহ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.