![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আল্লাহা তায়ালার হামদ ও রাসূলে আরাবি সা. এর প্রতি দরূদ ও সালামের পর। এটি আলবানির মতদ্বৈত্যতার ধারাবাহিক সিরিজের প্রথম বই। এতে আমরা তার দুইশ’ পঞ্চাশেরও বেশি মতদ্বৈত্যতা তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছি। তিনি একই হাদিসকে কখনও সহিহ বলছেন কখনও জঈফ বলছেন। এক কিতাবে সহিহ বলছেন তো আরেক কিতাবে জঈফ বলছেন। সহিহ-জঈফের এ খেলা তিনি খেলেছেন হাদিস ‘তাখরিজ’ এর নামে। হাদিসের ব্যপারে তার মতামত জানার জন্য আমি যখন তার কিতাব পড়তে শুরু করি, তখনই তার এই ‘সহিহ-জঈফ’ এর খেলাটি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আমি যেহেতু তার রায় জানার পূর্বে হাদিসটি তার মূল কিতাবে পড়ে নিতাম, যেখানে পূর্ণ সনদসহ হাদিস উল্লেখ রয়েছে, যেখান থেকে আলবানি সাহেব হাদিসটি উল্লেখ করতেন। যেখানে ইলমে হাদিসের ওই সকল দিকপালগন নিজেদের হাতে তা লিপিবদ্ধ করেছেন। তখনই আমার নজরে তার মতদ্বৈত্যতা ধরা পড়তো। তার কল্পনা প্রসূত ‘হুকুম’ আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে যেতো। আমি চরম পর্যায়ে বিস্মিত হতাম। বিশেষ করে যখন দেখতাম, যুবকদের বিশাল একটি অংশ তার ‘তাখরিজের’ ব্যপারে চরম প্রান্তিকতায় অবস্থান করছে। তালিবুল ইলমদের বিরাট একটি অংশ তার ব্যপারে আত্মপ্রবঞ্চনায় ভুগছে। তাদের এই প্রান্তিকতা ও প্রবঞ্চনার কারণ হলো, তারা যেহেতু মূল কিতাবের সাথে তা মিলিয়ে দেখার প্রয়োজন অনুভব করে না। যে কিতাব থেকে আলবানি সাহেব হাদিসটি চয়ন করেছেন সে কিতাবের পৃষ্ঠা উল্টে হাদিসটি সনদসহ পড়ার আবশ্যকীয়তা অনুভব করে না। আলবানি সাহেবের দুইটি কিতাবরে সাথে তুলনা করে বিচার বিশ্লেষণ করার তাগাদা অনুভব করে না। ফলে তাদের সামনে তার এই মতদ্বৈত্যতার খেলাটি স্পষ্ট হয় না। তারা তার এই খেলাটি বুঝে উঠতে পারে না। হাদিসের হুকুম লাগানোর ক্ষেত্রে তার এই জালিয়াতির বিষয়টি তার কিতাব থেকে উদ্ধার করতে পারে না। আর এ না পারার পিছনে তাদের অযোগ্যতাও একটি প্রধান কারন। আমি আমার এ অধ্যয়ন কালে যে সকল অসংগতি আমার দৃষ্টিতে ধরা পড়তো একটি খাতায় তা নোট করে রাখতাম। এভাবে আমার নোটের ভা-ার সমৃদ্ধ হতে থাকলো। বিশাল পরিমানে একটি সংগ্রহ জমা হলো। তখন ভাবলাম এ মতদ্বৈত্যতাগুলো সিরিজ আকারে প্রকাশ করি। তার কল্পনা প্রসূত রায় গুলোও সিরিজ আকারে জনগণকে জানাই। তথ্য সরবরাহে তার ত্রুটিগুলো সিরিজ আকারে ছাপাই। অনুরূপ ভাবে তিনি আরেকটি কাজে পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন। উম্মতের বিশিষ্ট উলামায়ে কেরামের কিতাব থেকে উদৃতি দিতে গিয়ে কোথাও তিনি শব্দা বা বাক্য বিলুপ্ত করেছেন কোথাও বাক্যের ধরণ পাল্টে দিয়েছেন। ইনশাআল্লাহ এ বিষয়গুলো সিরিজ আকারে প্রকাশের ইচ্ছা রয়েছে। বিষয়গুলো এজন্য প্রকাশ করতে চাই যাতে মানুষ তার জালিয়াতির বিষয়টি অবগত হয়। বিশেষ করে যারা তার ব্যপারে প্রান্তিকতায় অবস্থান করছেন তারা যেন তাকে নিয়ে প্রবঞ্চিত না হন। সর্বপরি আল্লাহর বান্দাদেরকে তার জালিয়াতির হাত থেকে রক্ষা করতে চাই।
একটা বিষয় স্পষ্ট যে শায়খ আলবানি নিজে ও যারা তার ব্যপারে প্রবঞ্চনার শিকার তারা তাকে মনে করেন ‘যুগের দূর্লভ’ ব্যক্তি। সময়ের একমাত্র কীর্তিমান সন্তান। তার কথার মধ্যে ভুল বের করা অসম্ভব এক ব্যপার। তার কাছে ইলমের যে ভা-ার রয়েছে তার মুকাবিলা করা হলো অসাধ্য সাধন। হাদিসের বিভিন্ন দিক জানার ক্ষেত্রে তিনি পূর্ববর্তীদেরকেও ছাড়িয়ে গেছেন। হাদিসের মতনের ‘হ্রাস-বৃদ্ধি’ জানার ব্যাপারে তিনি পূর্বসূরীদেরকেও পিছনে ফেলে দিয়েছেন। হাদিসের ভিতরে লুকিয়া থাকা ইলম যা মুহাদ্দিসগণের কাছেও গোপন ছিলো তা উদ্ধারে তিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠব্যক্তি। মুহাদ্দিসগণ হাদিসের ভেতর সুপ্ত যে কারণ রয়েছে, তা উদ্ধারে ব্যর্থ হয়েছেন, তিনিই তাতে সফলতার শীর্ষে আরোহন করেছেন। যদিও তিনি ইলমের এ জগতে ইমাম বুখারি থেকে সামান্য ছোট!, তবে বুখারি যাকে সহিহ বলেছেন তিনি তার সমালোচনা করতে, তার উপর ‘জঈফ’ এর হুকুম লাগাতে সক্ষম। যেমনি ভাবে তিনি ইমাম মুসলিমের মুকাবিলা করতে পারঙ্গম। এমনকি ইতিপূর্বে অতিক্রান্ত হওয়া হাদিসের হাফেযগন, ইলমে হাদিসের জগতের দ্যাদীপ্যমান নক্ষত্রগণ যা করতে পারেন নি, তিনি তাও করতে সক্ষম। তার শিষ্যরা যখন তাকে ইবনে হাজার আসকালানি রহ.-এর সাথে তুলনা করে, হাদিসের জগতে যাকে ‘আমিরুল মুমিনীন’ এর উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে, তখন বিষয়টি বেশ অবাক লাগে। বিষয়টি যখন এ পর্যায়ে পৌঁছেছে, বিশেষ করে তার ভক্ত-অনুরাগী যুবকগন ও তাদের মতো অসংখ্য মানুষ যারা তার রচনাবলী নিয়ে ধ্রুমজালে আটকা রয়েছে, যাদের কাছে হাদিস ‘তাখরিজ’ এর কোন জ্ঞান নেই, তার ‘তাখরিজ’, ‘তা’লিক’ নিয়ে ফেতনার শিকার, তখন তো আর চুপ করে বসে থাকা যায় না। জাতির জন্য কিছু একটা করা ঈমানী দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়।
এছাড়াও তার প্রতি তাদের অন্ধভক্তি তাদেরকে দৃষ্টিহীন করে দিয়েছে। তিনি তাদেরকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন এ বিষয়ে তিনি কারো অনুসরণ করেন নি। নিজস্ব উদ্ভাবনি শক্তি দিয়ে তিনি ‘তাখরিজ’ -এর এ পিচ্ছিল পথে চলেছেন। যেমনটি তিনি তার আদাবুয যিফাফ গ্রন্থের দুর্লভ ভূমিকায় আলোচনা করেছেন, যে কিতাবটিতে তিনি একদিকে আহলে ইলম থেকে তথ্য নিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন এবং অপরদিকে তাদের বিরূদ্ধে মিথ্যাচার দিয়ে পূর্ণ করেছেন। এতটুকু জানার পর, এবং তার এ সকল জালিয়াতির প্রমাণ পেশ করার পূর্বে আরেকটি কথা বলতে চাই। যে ব্যক্তিটি এ দাবী করলেন, যে তিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, সকল যুগের সকল স্থানের সকল গ্রন্থরচয়িতাদের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, যিনি পূর্বাপর সকলকে ইলমের বিচারে ছাড়িয়ে গেছেন, নবী-রসূলগণ ব্যতিত অন্য সকলকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন, যিনি একমাত্র মুহাক্কিক, রাসূলের সা. এর হাদিসগুলোকে পরিচ্ছন্ন করেছেন, রাসুলুল্লাহর বানী সম্ভারের সহিহ-জঈফের প্রার্থক্য নির্ণয় করেছেন। এমন ব্যক্তির কথায় ও লেখায় যথা সম্ভব ভুল কম থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তার বক্তব্যে উদভ্রান্ত কথা থাকবে না এটাই কাম্য। তিনি যে সকল মতামত পেশ করবেন তাতে কোন মতদ্বৈত্যতা থাকবে না, এটাই বাঞ্ছনীয়। কেননা, আমরা সকলে এ কথা বিশ্বাস করি, ‘ইসমত’ কেবল নবীদের জন্য খাস। ভুল-ত্রুটির ঊর্ধে থাকা, এটা কেবল কিতাবুল্লাহর বৈশিষ্ট। আমরা তাকে এ কথা বলিনা যে, মানুষের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত তার নসীহতগুলো তার পরিপাটি বিন্যস্ত লেখার উপর ভরসা করে তার আচরণে ও উচ্চারনে একথা প্রমাণ করে না যে তিনি যে সকল ভুল-ভ্রান্তি করেছেন তা থেকে তিনি মা’সুম। আমরা কেবল একথা বলছি এবং এ দাবি করছি, যিনি ইলমের অঙ্গনে এই মর্যাদার দাবীদার তার জন্য শোভনীয় নয় যে তার কথায় ও লেখায় এত মতদ্বৈত্যতা থাকবে। এত কল্পনা প্রসূত রায় থাকবে। সর্বপরি এত অসংগতি থাকবে। যে অসংগতি পূর্বাপর সকলকে অতিক্রম করেছে। যার সংখ্যা শতের কোটা পার করেছে; বরং তারচেয়ে অধিক। আল্লাহ পাকের অনুগ্রহে এই সিরিজ তা প্রমাণ করে দিবে ইনশাআল্লাহ। এ কথাও প্রমাণ করে দিবে যে তার তাহকিকের উপর ভরসা করা মোটেও ঠিক হবে না। তার সহিহ সহিহ জপ দেখে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। তার জঈফ, জঈফ কপচানি দেখে পথ হারা হওয়া যাবে না। তিনি অনেক সময় উলামায়ে কেরামের কোন দোষ নিয়ে ঘাটাঘাটি করেন, পরে দেখা যায় তিনি নিজেই সে দোষে দুষ্ট হয়ে আছেন। আমরা যখন কথাকথায় এতদূর চলে এলাম, এখন আমাদের ওপর অপরিহার্য হলো আমাদের কথার স্বপক্ষে প্রমাণ পেশ করা।
©somewhere in net ltd.