![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
[ইদানিং ফেসবুক, ডিশ চ্যানেল আর ইন্টারনেটে বেশ কিছু স্বঘোষিত মুফতির আগমন ঘটেছে। তারা সৌদি সরকারের আশির্বাদপুষ্ট ; কিন্তু নিজেদের পরিচয় দেয় আহলে হাদীস, লা মাযহাবী কিংবা সালাফী বলে। তারা তাদের কর্মকান্ডের বিনিময়ে লাভ করে আর্থিক সুবিধা। অর্থাৎ তারা বেতনভুক্ত চাটুকার এবং ওহাবীবাদের প্রচারক। তাদের কাজ হল ইসলামে নতুন নতুন ফের্কার আবির্ভাব ঘটানো। যেসব বিষয় রাসুল সা.-এর যুগ থেকে প্রচলিত সেসব আমলকেও তারা বিদয়াত, শিরক ইত্যাদি নামে অভিহিত করে সাধারণ মুসলমানকে বিভ্রান্তিতে ফেলছে। যেমন তাদের মতে শবে বারাত বলে কুরআনে হাদীসে কিছু নেই। এটা বিদয়াত। একথা শুনে যে কেউ হঠাৎ ভাবতে পারেন, তাইতো, কুরআনে তো ‘শবে বারাত’ বলে কোনও শব্দ নেই। এটা তাদের এক ধরণের ধোঁকা বা ফাঁদ।
আসলে শবে বারাত ফার্সি শব্দ তাই এই শব্দগুলো কুরআন বা হাদীসে নেই। যেমন নামায-রোযাও কুরআনে বা হাদীসে নেই। কুরআন ও হাদীসে রয়েছে সালাত আর সাওম। এগুলোর ফার্সি প্রতিশব্দ হল নামায ও রোযা। তেমনিভাবে শবে বারাতও ফার্সি শব্দ। পবিত্র কুরআনে "লাইলাতুম মুবারাকা" বলে আল্লাহ পাক সূরা দুখানে শবে বারাতকে উদেশ্য করেছেন এবং তিনি ঘোষণা করেন যে 'এই রাতে প্রজ্ঞাময় বিষয়ের ফায়সালা হয়ে থাকে'। হাদীসে এই রাতকে বলা হয়েছে "লাইলাতুন-নিসফু মিন শাবান" অর্থাৎ শাবানের মধ্যরাত্রি। কোনও কোনও তাফসীরকারগণ "লাইতাতুম মুবারাকা" দিয়ে শবে কদরকে বুঝিয়েছেন আবার অনেকেই এর দ্বারা শবে বারাতকে বুঝিয়েছেন। কেননা যে রাতে ভাগ্য লিপিবদ্ধ করা হয় কিংবা প্রজ্ঞাময় বিষয়ের ফায়সালা করা হয় তা শবে কদর নয়, বরং শবে বারাত বা শাবানের মধ্যরাত্রি। এই নিয়ে অনেক হাদীস রয়েছে তার কিছু সহীহ আর কিছু হাসান সহীহ পর্যায়ের। তবে নামধারী আহলে হাদীস ও সালাফীদেরকে বলতে শুনবেন, ওইসব হাদীস জাল, দুর্বল কিংবা বানোয়াট।
শবে বারাতসম্পর্কিত হাদীসগুলোর মধ্যে আমল ও ফজিলতে মিল খুঁজে পাওয়া যায় এবং অনেক বিখ্যাত সাহাবা (রা.) থেকে বর্ণিত কাজেই সেগুলোর সনদ হাসান সহীহ। এ মত পোষণ করেছেন আহলে হাদীসের ইমাম আলবানী নিজেও। সামনে আলবানী সাহেবের উক্তিটি হুবহু তুলে ধরা হবে ইনশাল্লাহ।
তত্ত্বজ্ঞানীদের মতে, ‘শবে বরাত ফযীলতপূর্ণ নয়, বা এ রাতে গুরুত্ব দিয়ে ইবাদত করা বিদয়াত’ এ মর্মে কোনও হাদীস রাসূল সা. থেকে বিদ্যমান নেই। বরং রাসূল সা. থেকে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত আছে, শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কে। তবে যেহেতু এ মতের বিপরীত কোনও হাদীসই বিদ্যমান নেই, তাই শবে বরাতকে হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হওয়ার পরও বিদয়াত বলাটা হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচায়ক। আর জেনেবুঝে কেউ এমনটি বলে থাকলে রাসূল সা.-এর হাদীস অস্বীকারের ফলে ঈমানহারা হয়ে যাবার আশংকাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। রাসূল সা.-এর হাদীসের প্রতি বিদ্বেষী হওয়া ছাড়া হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এ ফযীলতপূর্ণ রাতকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না।]
গোটা বিশ্বে তিনটি দলঃ
বরকতময় এ রাতটি এলে গোটা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ্ তিনটি শ্রেণীতে ভাগ হয়ে যায়-
১। ইসলামে শবে বরাত বলে কিছু নেই
২। ইসলামে শবে বরাত বলে কিছু আছে
৩। এতদুভয়ের মাঝে ভারসাম্যপূর্ণ মত
প্রথম দু’দলই যথাক্রমে ছাড়াছাড়ি ও বাড়াবাড়িতে লিপ্ত। দ্বিতীয় দলটি শবে বরাতের নামে বাড়াবাড়ি করে। যেমন; কালারিং হালুয়া-রুটি বানানো, প্রতিষ্ঠানে লাইটিং করা, পটকা ফুটানো, শবে বরাতের নামে চাঁদাবাজি, মাইকিং, শানদার মাহফিল। এরা বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জন করে। এদের ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশ, ‘তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না’। ( সূরা মায়েদা-৭৭)
আরেক দল শবে বরাতকে স্বীকারই করেনা। বলে, ইসলামে শবে বরাত বলে কিছু নেই। যা আছে তা সবই যঈফ (দুর্বল) ও জাল ইত্যাদি (নাউযুবিল্লাহ)।
তৃতীয় দল আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত। এদের মতে শবে বরাতের ফজিলত ও ইবাদত সহীহ্ হাদীস দ্বারা সমর্থিত। কাজেই একে অস্বীকার করা শরীয়তের একটা অংশকে অস্বীকার করার নামান্তর। এদিকে আবার এর নামে অতিরঞ্জন ও বাড়াবাড়িও আহলুস সুন্নাহ্গণ পছন্দ করেন না।
আহলুস সুন্নাহ্ দাবীঃ
শবে বরাতের ফযিলত সহীহ্ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এ রাতে নামায, পরদিন রোযা ও কবর যেয়ারত ইত্যাদি মুস্তাহাব।
দলিল
যারা শবে বরাতকে জোর গলায় অস্বীকার করেন তাদেরই ইমাম (?) বিশ্বখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা নাসেরুদ্দীন আলবানীর কিতাব থেকেই দলিল দেওয়া হবে। কেননা মাওলানা আলবানীকে মহল বিশেষ খুব তকলীদ (!) করেন। কথায় কথায় তাঁর কিতাবের রেফারেন্স দেন। তাঁর কিতাবকে নিজেদেরই কিতাব বলে গণ্য করেন।
১. হযরত আবু মূসা আশআরী (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘আল্লাহ্ পাক মধ্য শাবানের রাত্রীতে আবির্ভূত হন, মুশরিক ও বিদ্বেষী ছাড়া সকলকে ক্ষমা করেন’।
[সহীহুল জামে, আলবানী, হাদীসঃ ১৮১৯; সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী, হাদীসঃ ১১৪৪, ১৫৬৩; সহীহ ইবনে মাজাহ, আলবানী, হাদীসঃ ১১৪৮; তাখরীজুল মেশকাত, আলবানী, হাদীসঃ ১২৫৮ ।
দেখা যাচ্ছে, আল্লামা আলবানী লাইলাতুল বরাত তথা মধ্য শাবানের হাদীসকে তার অন্ততঃ ৪টি বিখ্যাত কিতাবে সহীহ মানছেন।
২. হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা. ) এরশাদ করেন,
يَطْلُعُ اللَّهُ إِلَى خَلْقِهِ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلَّا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ.
“মধ্য শাবানের রাত্রিতে আল্লাহ তায়ালা মাখলুকের কাছে আবির্ভূত হয়ে গোটা মখলুককেই ক্ষমা করেন। শুধুমাত্র মুশরিক ও বিদ্বেষী ছাড়া”।
[সহীহুত তারগীব, আলবানী, হাদীসঃ ১০২৬, ২৭৬৭; ইসলাহুল মাসাজিদ, আলবানী, হাদীসঃ ৯৯; সিলসিলাহ সহীহাহ্, আলবানী, হাদীসঃ ১১৪৪ ; আলমুজামুল কাবির, তাবারানী, হাদীসঃ ২১৫ (২০/১০৮); আলমুজামুল আওসাত, তাবারানী, হাদীসঃ ৬৭৭৬ (৭/৩৬); মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হায়ছামী, হাদীসঃ ১২৯৬০ (৮/৬৫); আল্লামা হায়ছামী বলেন, ইমাম তাবারানীর কাবির ও আওসাত গ্রন্থে হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রা.) বর্ণিত সনদ ছেকাহ্ (নির্ভরযোগ্য); সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীসঃ ৫৬৬৫, শায়খ আলবানী তার সিলসিলাহ সহিহাহ্-এ ইবনে হিব্বানের সনদকে সহীহ্ বলেন। এদিকে শোয়াইব আরনাউতও ইবনে হিব্বানের উক্ত সনদকে সহীহ্ বলেন। দেখুন, সহীহ্ ইবনে হিব্বান, তাহ্কীক শোয়াইব আরনাউত (১২/৪৮১)]
মহান সাহাবী মুয়ায ইবনে জাবাল (রা)-এর শবে বরাতের বর্ণনাসম্বলিত হাদীসখানাকে প্রাচীন ও অতি আধুনিক নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিসগণও সহীহ্ বলেছেন। এরপরও কি শবে বরাতবিরোধী বন্ধুমহল তাদের অবস্থানটি নিয়ে একটু পুনর্বিবেচনা করবেন না?!
৩. হযরত কাছীর ইবনে মুররাহ্ হাযরামী (রা.) বলেন, রাসুলুলাহ্ (সা.) এরশাদ করেন, ‘মধ্য শাবানের রাত্রিতে পৃথিবীবাসীকে ক্ষমা করা হয়, মুশরিক ও বিদ্বেষী ছাড়া’।
[সহীহুল জামে, আলবানী, হাদীসঃ ৪২৬৮; সহীহুত তারগীব, আলবানী হাদীসঃ ২৭৭০; শোয়াবুল ঈমান, বায়হাকী হাদীসঃ ৩৫৫০ (৫/৩৫৯), ইমাম বায়হাকী বলেন, সনদখানা মুরসাল উত্তম।]
এ হাদীস দ্বারাও প্রমাণিত হলো মধ্য শাবানের ফযিলতসম্বলিত রাত্রি বলে কিছু একটা আছে এবং তা অতি অবশ্যই আলবানী বিশ্লেষিত সহীহ্ হাদীসে ও ইমাম বায়হাকী বিশ্লেষিত উত্তম সনদে। এছাড়া হযরত আবু হুরায়রা (রা) ও হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা)-সহ অসংখ্য সাহাবীর এতদ্বিষয়ে হাদীস রয়েছে। কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় সেদিকে যাওয়া হলো না।
এ রাতে নবীজি (সা.) কী করতেন?
১. নামায
মধ্য শাবানের রাত্রিতে নবী করিম (সা.) দীর্ঘ নামায পড়তেন । তাঁর নামাযের দীর্ঘসূত্রিতায় হযরত আয়েশা (রা) শংকাবোধ করতেন। হযরত আয়েশা (রা)-এর শংকাজনিত প্রশ্নে নবীজি তাঁকে উৎসাহ দিতে গিয়ে বলেছেন, “জানো না, আজকে কোন রাত্রি?” আম্মাজান আয়েশা (রা) এ প্রশ্নের উত্তর আল্লাহ্ ও তাঁর রসুলের ওপর ছেড়ে দিলে নবীজি (সা.) বলেছিলেন, “এ মধ্য শাবানের রাত।”
[শোয়াবুল ঈমান, বায়হাকী হাদীসঃ ৩৫৫৪ (৫/৩৬১), ইমাম বায়হাকী বলেন, মুরসাল উত্তম সনদ; তারগীব-তারহীব, মুনযিরী, হাদীসঃ ১৫৪৯ (২/৭৩-৭৪)]
২. রোযা
মধ্য শাবানের রোযা বিষয়ে বেশ কয়েকটি সহীহ্ হাদীস রয়েছে। আসুন দেখা যাক।
নবী করিম (সা.) পুরো শাবান মাস ধরে রোযা রাখতেন। হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, “নবী করিম (সা.) পুরো শাবান মাসে রোযা রাখতেন। আমি নবীজিকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহ্র রসুল! শাবান মাসের মতো (রমাযান ছাড়া) আপনাকে আর কোনও মাসে এত রোযা রাখতে দেখি না? আল্লাহ্র নবী (সা.) বললেন, এ মাসেই নির্ধারণ হয় আগামী বছরের রুটি-রুজি ও জন্ম-মৃত্যুর ফিরিস্তি। আমি চাই রোযা অবস্থায়ই আমার এ সব বিষয় নির্ধারণ হোক।”
[সহীহ্ বোখারী, হাদীসঃ ১৯৭০ ; সহীহ্ মুসলিম হাদীসঃ ১১৫৬; সহীহ্ নাসাঈ, হাদীসঃ ২১৭৮; সহীহ্ ইবনে মাজাহ্, হাদীসঃ ১৩৯৮ ; মুখতাছার শামায়েল, আলবানী, হাদীসঃ ২৫৬]
উপরোক্ত হাদীস দ্বারা জানা গেলো, নবীজি সা. পুরো শাবান মাস ধরে রোযা রাখতেন। আর এই মাসের মাঝামাঝিতেই তো মহিমান্বিত সেই লাইলাতুল বরাত। এর দ্বারা কি এ কথা প্রমাণ করে না যে, হুজুর (সা.) ১৫ই শাবানের রোযা রাখতেন?
কেউ বলতে পারেন, সরাসরি ১৫ই শাবানে হুজুর (সা.) রোযা রেখেছেন কিংবা রাখতে বলেছেন, এর প্রমাণে কোনও হাদীস আছে কি? কেননা, উপরিউক্ত হাদীস দ্বারা সুনির্দিষ্টভাবে ১৫ই শাবানের ফজিলত বুঝা যায় না। এর উত্তরে বলা যেতে পারে, হযরত আলী (রা) বর্ণিত একটি হাদীসে নবীজি (সা.) শবে বরাতের রোযা রাখতে নির্দেশ করেছেন। আসুন সেই হাদীসটি দেখা যাক। হুজুর (সা.) এরশাদ করেন, “তোমরা মধ্য শাবানের রাত্রি জাগরণ করবে এবং পরদিন রোযা রাখবে”।
[বর্ণনাটির সনদ দুর্বল হলেও এর স্বপক্ষে বহু শাহেদ (সমার্থবোধক হাদীস) থাকায় এটি আমলযোগ্য বলে মুহাদ্দিসীনে কেরামের ধারণা। দেখুন, ফাওয়ায়েদে মজমুআহ্, শওকানী, হাদীসঃ ৫১]
৩. কবর যেয়ারত
নবীজি (সা.) এ রাতে কবর যেয়ারত করেছেন। এই রাতে কি পরিমাণ মানুষের গোনাহ্ মাফ হয়, তারও একটি তুলনা করেছেন। বনী কালবের বকরীর দেহের লোম পরিমাণ গোনাহ্ মাফের কথা উল্লেখ করেছেন। হাদীস খানা দেখুন। আম্মাজান আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আমি এ রাতে রাসুলুলাহ্ (সা.) কে হারিয়ে ফেললাম। তাঁকে গিয়ে মদীনার কবরাস্থানে পেলাম। তিনি আমাকে দেখে বললেন, ‘কিহে আয়েশা! মনে করছ কি আল্লাহ্র রসুল তোমাকে ফাঁকি দিয়েছেন? শোন আল্লাহ্ পাক মধ্য শাবানের রাত্রিতে প্রথম আকাশে আসেন এবং বনী কালবের বকরীর দেহের পশম পরিমাণ গোনাহ্ মাফ করেন”।
[সুনানে তিরমিজি, হাদীসঃ ৭৩৯; সুনানে ইবনে মাজাহ্, হাদীসঃ ১৩৮৯ ; মুসনাদে ইমাম আহমদ, হাদীসঃ ২৬০১৮ (৪৩/১৪৬) তাহঃ আরনাউত; আন-নুযূল, দারা কুতনী, হাদীসঃ ৮৯; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীসঃ ৩০৪৭৮; শোয়াবুল ঈমান, হাদীসঃ ৩৬৬৪, ৩৬৬৬, ৩৬৬৭ ; মুসনাদে ইসহাক ইবনে রাহ্ওয়াই, হাদীসঃ ১৭০০ ; মুসনাদে ফেরদাউস, হাদীসঃ ১০০৮; মুসনাদে আব্দ ইবনে হুমায়েদ, হাদীসঃ ১৫১৪, আলবানী বলেন, আরতাআতা ছাড়া এই সনদের রেজাল ছেকাহ্। শোয়াইব আরনাউত বলেন, আরতাআতা ছাড়া সনদের বাকী রাবী বোখারী -মুসল্লিমের রাবী]
মোদ্দাকথা, নবীজি এ রাতে কবর যেয়ারত করেছেন, উম্মাহ্র অনিঃশেষ গোনাহ্ মাফের আশায়।
শবে বরাত ও সাহাবায়ে কেরাম (রা.)
শবে বরাতের সাথে সংশ্লিষ্ট হাদীসসমূহের বর্ণনাকারীদের মধ্যে অনেক বড় বড় সাহাবাও রয়েছেন। যাদের কয়েকজনের পবিত্র নাম নিম্নে প্রদত্ত হলো-
ক) হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)
খ) হযরত আলী (রা.)
গ) হযরত আয়েশা (রা.)
ঘ) হযরত আবু হুরায়রা (রা.)
ঙ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আ’মর (রা.)
চ) হযরত আবু মুসা আশআরী (রা.)
ছ) হযরত আওফ ইবনে মালেক (রা.)
জ) হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রা.)
ঝ) হযরত আবু ছালাবাহ আল খুসানী (রা.)
ঞ) কাছীর ইবনে মুররা আল হাযরামী (রা.)
শবে বরাত ও তাবেয়ী
শামের বিশিষ্ট তাবেয়ী যেমন-
ক) হযরত খালেদ ইবনে মা’দান (রহ.)
খ) ইমাম মাকহূল (রহ.)
গ) লোকমান ইবনে আমের (রহ.)
প্রমূখ উচ্চমর্যাদাশীল তাবেয়ীগণ শা’বানের পনেরতম রজনীকে অত্যন্ত মর্যাদার দৃষ্টিতে দেখতেন এবং এতে খুব বেশী বেশী ইবাদত ও বান্দেগীতে মগ্ন থাকতেন বলে গ্রহণযোগ্য মত পাওয়া যায়।
শবে বরাত ও সিহাহ সিত্তাহ
অনেকেই আছেন আমাদের মধ্যে যারা কথায় কথায় সিহাহ সিত্তার দলীল দেখাতে বলেন এবং সিহাহ সিত্তাহ ছাড়াও যে হাদীসের আরও বিশাল ভান্ডার আছে, কিতাব আছে যেখানে শত শত সহীহ হাদীস বিদ্যমান, সেগুলোকে অস্বীকার করার চেষ্টা করে থাকেন। তাদের জ্ঞাতার্থেই বলছি, সিহাহ সিত্তারই দুটি কিতাব তিরমিযী শরীফ ও সুনানে ইবনে মাজাহ্তে শুধু যে শবে বরাত এর ফযীলতসম্পর্কিত হাদীস বর্ণিত আছে তা নয়, বরং ইমাম তিরমিযী (রহ.) তাঁর তিরমিযী শরীফে এবং ইমাম নাসাঈ (রহ.) তাঁর সুনানে পনের শাবানের ফযীলত নিয়ে আলাদা বাব বা অধ্যায়ই লিখেছেন। এর মাধ্যমেই আমরা ইমামদ্বয়ের কাছে শাবানের পনের তারিখের কি পরিমাণ গুরুত্ব ছিল, তা কিছুটা আঁচ করতে পারি।
শবে বরাত ও অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থ
সিহাহ সিত্তার বাইরেও অনেক ইমামগণ তাদের জগদ্বিখ্যাত বড় বড় হাদীসগ্রন্থে শবে বরাত ও এর ফযীলত নিয়ে হাদীস বর্ণনা করেছেন। যেমন-
১। ইমাম তাবারানী রচিত “আল মুজামুল কাবীর” এবং “আল মুজামুল আওসাত”
২। ইমাম ইবনে হিব্বান রচিত “সহীহ ইবনে হিব্বান”
৩। ইমাম বায়হাকী রচিত “শুআবুল ঈমান”
৪। হাফেয আবু নুআইম রচিত “হিলয়া”
৫। হাফেয হায়ছামী রচিত “মাজমাউয যাওয়ায়েদ”
৬। ইমাম বাযযার তাঁর “মুসনাদ” এ
৭। হাফিয যাকী উদ্দীন আল মুনযিরী রচিত “আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব”এ
৮। ইমাম আহমদ তাঁর “মুসনাদ” এ
৯। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা এ
১০। হাফেয আব্দুর রাজ্জাক এর “মুসান্নাফ” এ।
শবে বরাত বিষয়ে অধুনা মণীষীগণের ভাষ্য
১. আল্লামা আবদুর রহমান মুবারকপুরীঃ (আহলে হাদীসের ব্যারিস্টার বলে খ্যাত)
আল্লামা আবদুর রহমান মুবারকপুরী তাঁর ‘তোহ্ফাতুল আহওয়াযী’ শরহে সুনানে তিরমিযী-এ বড্ড ওজস্বী ঢংয়ে শক্তহাতে মধ্য শাবানের ফযিলত বর্ণনা করতে গিয়ে লেখেন, ‘জেনে রাখুন (উদ্দেশ্য শবে বরাতবিরোধী মহল)! মধ্য শাবানের ফযিলত (মাহাত্ম্য) নিয়ে বেশ কিছু হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সেগুলোর সমন্বয় সাধন করলে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, শবে বরাতের ভিত্তি শরীয়তে আছে’।
- তোহ্ফাতুল আহওয়াযী, ৩/৩৬৫
উক্ত কিতাবে দীর্ঘ আলোচনা শেষে আল্লামা বলেন, উপরিউক্ত বর্ণনাগুলো পর্যালোচনা করে বলা যায় যে, এ হাদীসগুলো তাঁদের মুখ বন্ধ করার জন্য যথেষ্ট, যারা মধ্য শাবানের ফযিলতকে অস্বীকার করেন। (প্রাগুক্ত)
২. আল্লামা নাসেরুদ্দীন আলবানী: (সালাফী ও আহলে হাদীসের আশা ভরসার স্থল)
আল্লামা নাসেরুদ্দীন আলবানী শবে বরাতসম্পর্কিত ৮টি হাদীসের তাত্ত্বিক ও শাস্ত্রীয় বিশ্লেষণ শেষে বলেন,
‘মধ্য শাবানের ফযিলতসম্বলিত সকল বর্ণনা সমন্বয় করে বলা যায়, এগুলো নিঃসন্দেহে সহীহ্। কোন বর্ণনা আমলের মাপকাঠিতে শাস্ত্রীয় মানে আনতে গেলে সেখানে কমপক্ষে ওই সনদগুলো মারাত্মক দুর্বল না হলেই হলো। এ প্রসঙ্গে মাওলানা আলবানী (রহ.) ‘শবে বরাতবিরোধী’ সিরিয় বিদগ্ধ পন্ডিত আল্লামা জামালুদ্দীন আল কাসেমীর ওপর একহাত নিয়েছেন। বলেছেন, আল্লামা জামাল কাসেমী তাঁর ইসলাহুল মাসাজিদ (১০৭ পৃঃ)-এ “মধ্য শাবানের ফযিলত নিয়ে কোনও সহীহ্ হাদীস নেই” সম্পর্কিত যে বক্তব্য দিয়েছেন তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কেননা, যারাই মধ্য শাবানের ফযিলত নিয়ে উচ্চবাচ্য করেন ও বিরোধিতার সুর তোলেন; বুঝতে হবে, এটি নিছক তাদের তাড়াহুড়োজনিত প্রমাদ ও হাদীস শাস্ত্রে নেহায়েত দেউলিয়াত্বের বহিঃপ্রকাশ মাত্র’।
৩. শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.)
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) মধ্য শাবানের ফযিলত, নামায ও রোযা নিয়ে উল্লেখযোগ্য নিম্নলিখিত তিনটি মন্তব্য করেছেন, যা তাঁর জগদ্বিখ্যাত ফতুয়ার কিতাব ‘মজমুউল ফাতাওয়া’-এ উল্লেখ রয়েছে।
(ক) ‘জুমহুরে আহলে ইলম, সিংহভাগ ইসলামের পন্ডিতগণ বিশেষতঃ মাযহাবের চার ইমাম মধ্য শাবানের রাত্রি জাগরণকে ‘মুস্তাহাব’ বলেছেন। অবশ্য অনেকে মাকরুহ্ও বলেছেন। তবে আমার (শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া) মতে, ‘রাত্রি জাগরণ মুস্তাহাব’। শায়খুল ইসলাম (রহ.) এখানেই থেমে থাকেননি বরং তিনি আরও বলেছেন, মানুষ যদি একাকী শবে বরাতের নামায পড়ে কিংবা বিশেষ জামাত করে পড়ে, যেভাবে মুসলমানদের কোন কোন দল থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়Ñ তাহলে সেটি খুব ভালো কথা। তবে মসজিদে সমবেত হয়ে “কুলহুয়ালাহু আহাদ”সম্বলিত একশ রাকাত পড়ার প্রচলন বিদয়াত, যা কেউ বর্ণনা করেননি’। -মজমুউল ফাতাওয়াঃ ২৩/১৩১
(খ) ‘আর মধ্য শাবান-এ বিষয়ে অসংখ্য হাদীস বিদ্যমান। সালফে সালেহীন থেকে বর্ণিত আছে যে, তাঁরা এ রাতে জেগে একা একা নামায পড়েছেন। এ বিষয়ে অস্বীকার করার কিছুই নেই’।
- মজমুউল ফাতাওয়াঃ ২৩/১৩২
(গ) ‘মধ্য শাবানের ফযিলত বিষয়ে দু’একটি বর্ণনা ছাড়া বাকী সব বর্ণনা সর্বজনস্বীকৃত। এ বিষয়ে অসংখ্য সহীহ্ হাদীস বিদ্যমান। যা প্রমাণ করে শবে বরাতের রাত্রি জাগরণ সুন্নাহ্সম্মত। সালফে সালেহীনের অনেকেই এ রাতে বিশেষ নামায পড়েছেন, এ রাতকে নামাযের জন্য বিশেষিত করেছেন। রয়ে গেল শবে বরাতের রোযার কথা। জেনে রাখা ভালো যে, শাবান মাসের রোযার কথা বোখারী-মুসল্লিমে বিদ্যমান। মদীনার অনেক আলেম এর ফযিলত নিয়ে উচ্চবাচ্য করলেও আমাদের অনেক মুরব্বী ও শিষ্য-শাগরিদ এই ফজিলতের স্বপক্ষে। বিশেষতঃ ইমামু আহ্লিস সুন্নাহ্ আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)’। -ইকতিযাউস সীরাতিল মুসতাকিম, পৃঃ ২৬৬
৪. ইমাম শাফেয়ী (রহ.)
ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন, বর্ণিত আছে, পাঁচ রাত্রিতে দোয়া কবুল হয় তন্মমধ্যে লাইলাতুল বরাতের দোয়া। (কিতাবুল উম্ম-১/২৬৪)।
৫. আল্লামা সাইয়েদ আনোয়ার শাহ্ কাশ্মীরী (রহ.)
আল্লামা সাইয়েদ আনোয়ার শাহ্ কাশ্মীরী (রহ.) বলেন, “এ সেই লাইলাতুল বরাত সহীহ্ হাদীস দ্বারা যার ফযিলত প্রমাণপুষ্ট। নানাজনে নানা কিতাবে বর্ণিত হাদীসসমূহকে যঈফ ও মুনকার বলে যে ভিন্নমত পোষণ করেছেন; এর কোনও ভিত্তি নেই”। - আল আরফুয শাযী শরহে তিরমিজি, ২/১৭২
৬. শেখ সালেহ্ উছাইমিন (রহ.)
শেখ সালেহ্ উছাইমিন (রহ.) বলেন, ‘আর মধ্য শাবানের রাত্রি জাগরণ এর ফযিলত নিয়ে অসংখ্য সহীহ্ হাদীস রয়েছে। সালফে সালেহীনের অনেকেই এই রাত জাগরণ করেছেন। অনেকেই এ রাতকে নামাযের জন্য নির্ধারণ করেছেন। কেউ কেউ এ রাতের ফযিলত অস্বীকার করলেও অধিকাংশ আহ্লে ইলম (পন্ডিতমনা ব্যক্তিগণ) এর স্বপক্ষে দাঁড়িয়েছেন’।
-মজমুয়ায়ে ফতোয়া ও রাসায়েল, ইবনে উছাইমীন, ৭/১৫৬
৭. মুফতী আতিয়া সাকারঃ
মিশরের আলআযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের মুফতী আতিয়া সাকার বলেন, ‘শবে বরাতের ফযিলত নিয়ে বহু সহীহ্ হাদীস বিদ্যমান। অনেকে এসব হাদীসের সনদকে যঈফ বললেও এসব হাদীসের ওপর ভিত্তি করে আমল করা যায়’। - ফাতাওয়ায়ে আল-আযহার, ১০/১৩১
৮. ড. ওয়াহবা যুহাইলী
সিরিয়ার দামেস্ক ভার্সিটির প্রফেসর ড. ওয়াহাবা যুহাইলী বলেন, ‘মুস্তাহাব হচ্ছে দুই ঈদের রাত্রি জাগরণ, যিলহজ্বের প্রথম দশকের রাত্রি জাগরণ, রমযানের শেষ দশকের রাত্রি জাগরণ ও মধ্য শাবানের রাত্রি জাগরণ। এসব রাতে যে কোন ইবাদত ব্যাপকহারে করা যাবে, পুরো রাত কিংবা রাতের অল্প সময়। এর প্রমাণে অসংখ্য সহীহ্ ও সরীহ্ হাদীস বিদ্যমান। এসব রাতে বেশি বেশি ইস্তেগফার বিশেষতঃ জাগ্রত থাকা মুস্তাহাব’।
-আলফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, ২/২৯৯
মধ্য শাবান (শবে বারাত)-এর আমলসমূহ
হাদীসসমূহের ভাষ্যমতে এ রাতে রাসূলুল্লাহ সা.-এর তিনটি আমলের প্রমাণ পাওয়া যায়-
১। পনেরই শাবান রাতে কবরস্থানে গমন করে (কোন প্রকার আবশ্যকতা ও গুরুত্ব দেওয়া ব্যতীত এবং দলবদ্ধ না হয়ে একা একা) কবর যেয়ারত করা ও মুর্দাদের জন্য দোয়া-ইস্তেগফার করা।
২। উক্ত রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহ পাকের ইবাদত করবে এবং অধিক পরিমাণে কুরআন মজীদ তেলাওয়াত করবে এবং বেশী বেশী দরুদ শরীফ পাঠ করবে এবং যথাসম্ভব নফল নামায আদায় করবে। কিন্তু কোন প্রকার জামাআত করে নফল নামায পড়া যাবেনা। রাকাত এবং সূরা নির্দিষ্ট করা ব্যতীত একাকীভাবে পড়বে, আল্লাহ তায়ালা হতে ভয় ও ক্রন্দন করবে। নিজের জন্য স্বীয় পিতা-মাতা, সন্তান-সন্তুতি ও সমগ্র মুসলিম জাতির জন্য দোয়া করবে এবং সকল গুরুত্বপূর্ন বিষয়ের জন্য আল্লাহ পাকের শাহী দরবারে সাহায্য প্রার্থনা করবে। নিজের গোনাহ মাফের জন্য তাওবা এস্তেগফার করবে, বিশেষ করে ওই সকল গোনাহ হতে তাওবা করবে যেগুলো বিদ্যমান থাকার কারনে এই বরকতময় ও পূন্যময় রাতেও দোয়া কবুল হয়না। যে দীর্ঘ নামায পড়তে ইচ্ছুক সে যেন নামাযুল তাসবীহ পড়ে। আর নফল নামাযের কোনও নির্ধারিত পরিমান নেই। পরিমান নির্ধারন করা মাকরূহ।
৩। পনেরই শাবানে নফল রোযা রাখবে, তবে এ মাসসহ প্রতি মাসেই (১৩, ১৪, ১৫) তিনদিন রোযা রাখতে পারলে বহু সাওয়াব হবে। শবে বারাতসহ অন্যান্য বরকতময় রজনীসমূহে অধিক রাত পর্যন্ত জেগে থাকা যদি কষ্টকর হয় তবে যতটুকু সম্ভব জেগে থেকে ইবাদত করবে। এশা ও ফজরের নামায অবশ্যই জামাতের সাথে পড়বে, তাহলে পূর্ণ রাত ইবাদত করার সাওয়াব লাভ করবে। ইমাম শারানী রহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. উম্মতে মুহাম্মদী হতে অঙ্গীকার নিয়েছেন যে তারা যেন শবে বারাত, শবে ক্বদর ইত্যাদি পূণ্যময় রাতসমূহে ক্ষুধার্ত থাকাকে অবলম্বন করে ইবাদতে মশগুল থাকে। যখন উক্ত রজনীতে জাগ্রত থেকে ইবাদতের জন্য হুকুম করা হয়েছে তাই শুধুমাত্র ওয়ায-নসীহত করে রাত কাটালে মাকরূহ হবে। সালফে সালেহীন হতে এ রাতে ওয়ায নসীহতের মাধ্যমে রাত কাটানোর কথা উল্লেখ নেই। যেহেতু এ রাতে অধিক পরিমান ইবাদত করা উচিৎ তাই হালকা পাতলা থাকা চাই। যেহেতু উদরপূর্ণ করে খানাপিনা করার দ্বারা অলসতা ও দুর্বলতা আসে, এজন্য এ রাতে ভাল খানাপিনা তৈরী করা ও উদরপূর্ণ করে খাওয়া-দাওয়া করা এবং অন্যদেরকে এভাবে খাওয়ানো মাকরূহ
যারা এ পূণ্যময় রাত্রিতেও বঞ্চিত
শবে বরাতে আল্লাহ তায়ালা সকল গুনাহগার বান্দাকে ক্ষমা করে দেন । কিন্তু কিছু সংখ্যক ব্যক্তি উক্ত পূণ্যময় রজনীতেও ক্ষমা পায় না, তারা হচ্ছে—
(১) মুশরিক (২) হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী (৩) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান (৪) দর্পভরে টাখনুর নীচে পাজামা-লুঙ্গি পরিধানকারী (৫) মদখোর (৬) আত্মীয়তা বন্ধন ছিন্নকারী (৭) যাদুকর (৮) গণক (৯) অন্যায়ভাবে ট্যাক্স আদায়কারী (১০) হস্তরেখা ইত্যাদির মাধ্যমে অদৃশ্যের খবর প্রদানকারী (১১) অত্যাচারী সিপাহী (১২) বাদ্যযন্ত্রের বাদক (১৩) গায়ক (১৪) বিদয়াতী (১৫) মিথ্যা শপথের মাধ্যমে মালামাল বিক্রয়কারী (১৬) পরোক্ষ নিন্দাবাদকারী (১৭) যালিম শাসক ও তার সাহায্যকারী (১৮) পাশা ইত্যাদি খেলোয়াড় (১৯) পরস্ত্রীগামী (২০) কৃপণ।
এ সকল লোকদেরকে শবে বারাতেও ক্ষমা করা হয় না। হ্যাঁ! তারা যদি খাঁটি অন্তরে তাওবা করে নেয় অর্থাৎ উক্ত অন্যায় কাজ যদি সঙ্গে সঙ্গে পরিত্যাগ করে এর ওপর লজ্জিত হয় এবং ভবিষ্যতে উক্ত অন্যায় কাজ না করার দৃঢ় সংকল্প করে নেয় এবং এর পরও যদি হঠাৎ কখনো করেও ফেলে তবে সাথে সাথে পুনরায় তাওবা করে নেয় তবে তাদের গুনাহ্ মাফ হওয়ার আশা করা যায়।
সতর্কীকরণঃ
নবীজি, সাহাবী, ইমাম, সালফে সালেহীন সর্বোপরি অতি আধুনিক খ্যাতনামা মণীষীগণের দ্বারা প্রামাণ্য এই ফযিলত ও আমলের ওপর কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়। ইতোপূর্বে যারা এই বিষয়ে দ্বিমত করেছেন কিংবা হালে দ্বিমত করে চলেছেন, আল্লাহ্র ওয়াস্তে আপনারা আপনাদের মতামতের ওপর মেহেরবানী করে একটু পুনর্বিবেচনা করুন। যদি এতে আপনাদের মনে সায় না দেয় তাহলে শ্রদ্ধা ও্ বিনম্র ভাষায় বলতে হয়, এমন একটা সহীহ্, সরীহ্, মরফু, মোত্তাসিল ও মোত্তাফাক আলাইহি হাদীস জাতির সামনে পেশ করুন যাতে দেখানো যায় “নবী করিম (সা.) শবে বরাতের ফযিলত, নামায, রোযা, ইস্তেগফার ও কবর যেয়ারতের মতো মুস্তাহাব ইবাদত পালন করতে নিষেধ করেছেন”। আল্লাহ্ আমাদের সঠিক ও সৎ পথে চলার জ্ঞান দান করুন।
©somewhere in net ltd.