নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিম্বারের আহবান

আবু সাঈদ মুহাম্মদ নু’মান

আবু সাঈদ মুহাম্মদ নু’মান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আট রাকাত তারাবীহ ও হযরত আয়েশা রা. এর হাদীস : একটি সাধারণ পর্যালোচনা

৩০ শে মে, ২০১৮ রাত ২:৪৯


 প্রাক কথন
বিশিষ্ট তাবেয়ী, ইমাম আজম আবু হানিফা নুমান ইবনে সাবিত রহ. এর তত্বাবধানে ইসলামী শরীয়তের উৎসমূল হতে আহরিত সমাধানের আলোকে হাজার বছর ধরে বাংলার মুসলমান নামায রোযাসহ সকল ইবাদাত-বন্দেগী পালান করে আসছে। বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাসে বিশ রাকাত তারাবীহ আদায় করে আসছে। হাজার বছরে তাকে কেউ বেদায়াত বলেনি। শরীয়ত সম্মত নয়, সহীহ হাদীসের খেলাফ এমন কথাও কেউ কোন দিন বলেনি। অথচ ১৩শ শতাব্দি পর আজ তা বেদায়াত বলে আখ্যায়িত হচ্ছে। হাদীস সম্মত নয় বলে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের মাধ্যমে সাধারণ মুসলমানকে পেরেশান করা হচ্ছে। মসজিদগুলিকে ঝগড়ার ক্ষেত্রে রূপান্তর করা হচ্ছে। পত্রিকা-টিভিতে জোর প্রচারণা চলছে। ফলে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত, দিশেহারা। সন্দেহে আপতিত। আসলেই কি ১৪০০ বছর ধরে চলে আসা তারাবীর এ পদ্ধতিটি বিদায়াত? হাদীস সম্মত নয়? যদি তাই হয় তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়, সাহাবায়ে কেরাম থেকে নিয়ে শুরু করে উম্মতের সকল উলামা-ফুযালা, সকল ইমাম-মুজতাহিদ, সকল মুসলিম আমীর-উমারাহ, সকল ফকীহ-মুহাদ্দীস, সকল তাবেঈ-তাবে তাবেঈ কি এ বিদায়াতে লিপ্ত ছিলেন? নাউজুবিল্লাহ! মসজিদে হারাম, মসজিদে নববীতে ১৪০০ বছর ধরে এ বিদায়াত চলে আসছে? সকল ইসলামী রাষ্ট্রের সকল মসজিদে এ বেদায়াত চলছে? (তবে আধুনা তাদের প্রচারনায় কিছু দেশে কিছু মসজিদে এ বিদায়াত (?!) বন্ধ হয়েছে। তবে তা সংখ্যায় নগন্য।) অথচ আল্লাহর রাসুল সা. বলেছেন সকল বিদায়াতই গোমরাহি, আর সকল গোমরাহী জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। পক্ষান্তরে তেরশ বছর পর এরাই কেবল হাদীস সম্মত তারাবীহ আবিস্কার করতে পেরেছে? এমন একটি কাজ আল্লাহ উম্মতের সাহাবা, তাবেঈ, তাবে তাবেঈ, আইম্মায়ে মুজতাহিদিন, মুহাদ্দীস, ফকীহ সকলকে বাদ দিয়ে ১৩শ শতাব্দি পরে তাদের ভাগ্যে লিখে দিলেন? ফলে প্রশ্ন দাড়ায় কারা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত? কারা নিজেদের দাবীর পক্ষে জোর করে রাসুলুল্লাহ সা. এর হাদীসকে পেশ করতে চায়? চৌদ্দশ বছরে উম্মতের ধারাবাহিক আমল সুন্নাতের উপর প্রতিষ্ঠিত নাকি বিংশ শতাব্দির নব আকিস্কৃত. ইংরেজদের মদদ পুষ্ট তথাকথিত আহলে হাদীসদের গড়া পদ্ধতি সুন্নাহ সমর্থিত?
 আহলে হাদীস ভাইরা তারাবীহ আট রাকাত প্রমাণ করতে জোরের সাথে আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. এর হাদীসটি পেশ করে থাকেন। নিম্মে আমরা হাদিসটিকে একটু পর্যালোচনা করে দেখার চেষ্টা করব যে হাদিসটি দ্বারা আট রাকাত তারাবিহ প্রমাণ হয় কিনা।
 প্রসঙ্গত আমরা এখানে তারাবীহ এর ক্ষেত্রে তাদের আমলের একটি সারণি পেশ করছি।
 আহলে হাদিস ভাইদের আমল :
ক. সারা রমজান তারাবী আদায় করে।
খ. সারা রমজান জামাতের সাথে আদায় করে।
গ. তারাবী মসজিদে আদায় করে।
ঘ. তারাবীতে কুরআন মাজীদ খতম করে।
ঙ. দু রাকাত দু’রাকাত করে মোট আট রাকাত আদায় করে।
চ. এশার নামাযের পর পরই আদায় করে।
ছ. আট রাকাত তারাবিহকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা মনে করে।
জ. বিশ রাকাত তারাবিহকে বিদআত মনে করে।
তারা হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদিস পেশ করে থাকেন। এবং এর দ্বারা আট রাকাত তারাবিহ প্রমাণ করার চেষ্টা করে থাকেন। বর্ণনাটির সার সংক্ষেপ হলো, হযরত সালিমাহ ইবনে আবদু রহমান একবার হযরত আয়েশা রা. কে জিজ্ঞেস করলেন, রমজান মাসে রাসুলুল্লাহ সা. এর নামাজ কেমন ছিলো? তখন হযরত আয়েশা রা. বললেন,
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ قَالَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَّهُ أَخْبَرَهُ أَنَّهُ سَأَلَ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا كَيْفَ كَانَتْ صَلَاةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي رَمَضَانَ فَقَالَتْ مَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلَا فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلَا تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلَا تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّي ثَلَاثًا(صحيح البخاري ،بَاب قِيَامِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِاللَّيْلِ فِي رَمَضَانَ وَغَيْرِهِ)
রাসুলুল্লাহ সা. রমজান ও অন্যান্য সময়ে এগার রাকাতের চেয়ে বেশী পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত আদায় করতেন। কতই না সুন্দর ও কতই না দীর্ঘ ছিলো সে নামায!। এরপর আবার চার রাকাত আদায় করতেন। কতইনা সুন্দর ও কতই না দীর্ঘ ছিলো সে নামায! এরপর তিন রাকাত (বিতর) আদায় করতেন।
আহলে হাদিস নামধারি গায়রে মুকাল্লিদগণ এইযে হাদিসটি তাদের আমলের পক্ষে দলিল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন এটি কোনভাবেই তাদের কর্মের উপর প্রমণ বহন করে না। এ হাদিস থেকে কোনভাবেই তাদের আমল প্রমাণীত হয় না। নি¤েœ এর বিস্তারিত বিবরণ পেশ করা হলো।
উত্তর-১ :
১. হাদীসের ভাষ্য থেকে বোঝা যায় নামাযটি নবীজি সা. ঘরে আদায় করতেন। অথচ তারাবীর নামায মসজিদে আদায় করা হয়।
২. একাকী আদায় করতেন। অথচ তারাবীহ জামাতে আদায় করা হয়।
৩. প্রশ্নকারী সাহাবীর নবীজির নামাযের রাকাত সংখ্যা জানা উদ্দেশ্য ছিল না। বরং উদ্দেশ্য ছিল নামাযের ধরণ জানা। তাই তিনি كَمْ كَانَ (কত রাকাত ছিল) দ্বারা প্রশ্ন না করে كَيْفَ كَانَ (কেমন ছিল) দ্বারা প্রশ্ন করেছেন।
৪. বর্ণিত হাদিসে ‘তারাবিহ’ শব্দটির উল্লেখ নেই।
৫. বর্ণিত হাদিসে ‘আট রাকাতের’ও উল্লেখ নেই। বরং এগার রাকাতের উল্লেখ রয়েছে।
৬. এতে ‘রমজান ও অন্যান্য’ মাসের উল্লেখ রয়েছে। আর এটা জানা কথা যে তারাবীহ কেবল রমজানেই আদায় করা হয়। হাদিসের ভাষ্য مَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلَا فِي غَيْرِهِ থেকে বোঝা যায় এটি ওই নামায নয় যা কেবল রমজানে আদায় করা হয়। বরং এ থেকে ওই নামায ই উদ্দেশ্য যা সারা বছর আদায় করা হয়। আর সেটি হলো ‘তাহাজ্জুদ’।
৭. নবীজি সা. এক সালামে চার রাকাত আদায় করতেন। অথচ তারাবীহ দুই রাকাত করে আদায় করা হয়।
৮. নবীজি সা. দীর্ঘ সময় নিয়ে আদায় করতেন। অথচ তারাবীহ সেভাবে আদায় করা হয়না। এমনকি তারাও সেভাবে আদায় করেন না।
৯. হাদীসের ভাষ্য থেকে এটাও বোঝা যায় যে নবীজি সা. এ নামাযটি শেষ রাতে আদায় করতেন।
১০. কুরআনুল কারিমের খতম করতেন মর্মে কোন বিবরণ নেই।
১১. এশার নামাযের সাথে সাথে আদায় করতেন বলে প্রমাণ নেই।
১২. উপরন্তু আট রাকাত তারাবীহ ইমাম বুখারীর আমলের বিপরীত।
ইমাম বুখারী রহ. নিজেও বিশ রাকাত আদায় করতেন। প্রতি রাকাতে তিনি বিশ আয়াত করে তিলাওয়াত করতেন। এভাবে পুরো রমজানে তারবীতে তিনি দুইবার কুরআন মাজীদ খতম করতেন। (হাদউস সারি মুকাদ্দিমাতু ফাতহিল বারী)
উত্তর-২ :
মুহাদ্দিসগনের নিকটও এটি তারাবির সংক্রান্ত নয়। কেননা সাধারণত মুহাদ্দিনগণ তাদের গ্রন্থে তাহাজ্জুদের জন্য "باب قيام الليل‘বাবু কিয়ামিল লাইল’ ও তারাবির জন্য باب قيام رمضان ‘বাবু কিয়ামি রমাজানা’ নামে শিরোনাম উল্লেখ করেন। যেমন,
ক্রমি. কিতাবের নাম তারাবিহ অধ্যায় তাহাজ্জুদ অধ্যায়
১. সহিহ বোখারী باب فضل قيام الليل باب فضل من قام رمضان
২. সহিহ মুসলিম باب صلاة الليل باب الترغيب في قيام رمضان وهو التراويح
৩. সুনানে আবু দাউদ باب في صلاة الليل باب قيام شهر رمضان
৪. সুনানে তিরমিজি باب في فضل صلاة الليل باب ما جاء في قيام شهر رمضان
৫. সুনানে নাসাঈ كتاب قيام الليل ثواب من قام وصام
৬. সুনানে ইবনে মাজাহ باب ما جاء في قيام الليل باب ما جاء في قيام شهر رمضان
৭. মুয়াত্তা মালেক باب في صلاة الليل باب في قيام رمضان
৮. মায়াত্তা মুহাম্মাদ باب في صلاة الليل باب قيام شهر رمضان
৯. মিশকাতুল মাসাবিহ باب في صلاة الليل باب قيام شهر رمضان
১০. রিয়াজুস সালেহিন باب فضل قيام الليل باب استحباب قيام رمضان وهو التراويح
১১. সহিহ ইবনে হিব্বান فصل قيام الليل فصل في التراويح
১২. মাজমাউয যাওয়ায়েদ باب في صلاة الليل قيام رمضان
১৩. সুনানুল কুবরা باب في صلاة الليل باب في قيام شهر رمضان
১৪. জমউল ফাওয়ায়িদ صلاة الليل قيام رمضان والتراويح وغير ذلك
১৫. কিয়ামুল লাইল (মারওয়াযি কৃত) باب في صلاة الليل قيام رمضان
১৬. বুলুগুল মারাম صلاة التطوع قيام رمضان
হযরত আয়েশা রা. এর বর্ণিত হাদিসটি মুহাদ্দিসগণ ‘তাহাজ্জুদ’ নামাজ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। উদাহরণ হিসেবে কয়েকটি প্রশিদ্ধ গ্রন্থের নামা উল্লেখ করা হলো।
১) সহিহ বোখারী, খ--১, পৃষ্ঠা-১৫৪, কিতাবুত তাহাজ্জুদ।
২) সহিহ মুসলিম, খ--১, পৃষ্ঠা-২৫৪, باب صلاة الليل وعدد ركعات النبي صلى الله عليه وسلم في الليل.
৩) সুনানে আবু দাউদ, খ--১, পৃষ্ঠা-১৮৯, বাবু সালাতিল লাইল।
৪) সুনানে তিরমিজি, খ--১, পৃষ্ঠা-৯৮, বাবু সালাতিল লাইল।
৫) সুনানে নাসাঈ, খ--১, পৃষ্ঠা-২৩৭, কিতাবু কিয়ামিল লাইল।
৬) মুয়াত্তা মালেক, পৃষ্ঠা-৯৯, বাবুন ফি সালাতিল লাইল।
৭) যাদুল মাআদ, (ইবনে কায়্যিমকৃত) পৃষ্ঠা-১২৫, কিয়ামুল লাইল।
মুহাদ্দিসগণ এ হাদিসটিকে ‘কিয়ামুল লাইল’ অর্থাৎ তাহাজ্জুদ অধ্যায়ে উল্লেখ করা এ কথারই প্রমাণ বহন করে যে হাদিসটি ‘তাহাজ্জুদ’ সংক্রান্ত। তারাবিহ সংক্রান্ত নয়।
একটি আপত্তি ও তার খ-ন :
বর্ণিত হাদিসটি ইমাম বোখারী রহ. باب فضل من قام رمضان ‘বাবু ফাদলি মান কামা রমাজান’ অধ্যায়ে ও ইমাম মুহাম্মদ রহ. باب قيام شهر رمضان ‘বাবু কিয়ামি শাহরি রমাজান’ অধ্যায়েও উল্লেখ করেছেন। সুতরাং এ থেকে হাদিসটি তারাবিহ সংক্রান্ত হওয়া বোঝা যায়।
উত্তর :
ইমাম বোখারী রহ. ও ইমাম মুহাম্মদ রহ. এ হাদিসটি তারাবিহ অধ্যায়ে যেমন উল্লেখ করেছেন তেমনি তাহাজ্জুদ অধ্যায়েও উল্লেখ করেছেন। এ কথা বোঝানোর জন্য যে তাহাজ্জুদ নামায যেমন অন্যান্য মাসে পড়া হয় তেমনি রমজান মাসেও তাহাজ্জুদ নামায পড়া হয়।
আট রাকাত পড়ার কারণে যে সকল বরকত থেকে বঞ্চিত হতে হয় :
যারা আটরাকাত পড়ে মসজিদ থেকে বেরিয়ে যান তারা অগণিত বরকত থেকে বঞ্চিত হন। নিম্মে এর কয়েকটি তুলে ধরা হল।
০১। নামাজের মাধ্যমে কুরআনুল কারীমের খতমের বরকত থেকে বঞ্চিত হন।
০২। প্রতি দিন ১২ রাকাত নামাজ তাদের জীবন থেকে ছুটে যায়। অথচ হাদীস শরীফে নবীজি সা. রমজানের তারাবীর ফযিলত বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
ক) হযরত আবু হোরায়রা রা. বর্ণনা করেন,
أَنَّ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قالَ : مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إيْمَانًا وَاِحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ (صحيح البخاري جـ১ ص ১০ ، باب تطوع قيام رمضان من الإيمان)
রসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সাথে সওয়াব লাভের আশায় তারাবীর নামায আদায় করলো তার পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারী, ১/১০, হাদিস নং ৩৭, সহিহ মুসলিম হাদিস নং ৭৫৯)
খ) হযরত আবু জর গিফারী রা. বর্ণনা করেন,
وروى الترمذي (৮০৬) عَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ : قال رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ( مَنْ قَامَ مَعَ الْإِمَامِ حَتَّى يَنْصَرِفَ كُتِبَ لَهُ قِيَامُ لَيْلَةٍ ) وصححه الألباني في صحيح الترمذي .
রসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ইমামের সাথে শেষ পর্যন্ত নামায আদায় করবে তার জন্য সারা রাত দাঁড়িয়ে নামায আদায়ের সওয়াব লিখে দেয়া হবে। (সুনানে তিরমিযি, হাদিস নং ৮০৬, আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন)
গ) হযরত সালমান ফারসী রা. থেকে বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, নবীজি সা. এরশাদ করেন
أيها الناس ، قد أظلكم شهر عظيم ، شهر مبارك ، شهر فيه ليلة خير من ألف شهر ، جعل الله صيامه فريضة ، وقيام ليله تطوعاً ، من تقرب فيه بخصلة من الخير كان كمن أدى فريضة فيما سواه ، ومن أدى فيه فريضة كان كمن أدى سبعين فريضة فيما سواه
হে লোক সকল! তোমাদের সামনে একটি মহান মাস উপনীত হয়েছে। এটি একটি বরকতময় মাস। এমন একটি মাস যাতে রয়েছে এমন একটি রজনী যা হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। এ মাসের রোযা রাখাকে আল্লাহ ফরজ করে দিয়েছেন। এবং এ মাসের রাতে (তারাবীহ) আদায় করাকে সুন্নাত করেছেন। যে ব্যক্তি এ মাসে কোন নফল আদায় করল সে যেন অন্য মাসের কোন ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি কোন ফরজ আদায় করল সে যেন অন্য মাসের ৭০টি ফরজ আদায় করল। (সহিহ ইবনে খুজাইমাহ, হাদিস নং ১০৬৪৮০)
ঘ) অন্য হাদিসে নবীজি সা. এরশাদ করেন,
شَهرٌ كَتَبَ اللهُ علَيْكُمْ صِيَامَهُ وَسَنَنْتُ لَكُمْ صِيَامَهُ
এটি এমন একটি মাস যাতে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের উপর দিবসে সিয়াম পালন ফরজ করেছেন এবং আমি রাতে তারাবিহ আদায় করা সুন্নাত হিসেবে সাব্যস্ত করেছি।
(সুনানে ইবনে মাজাহ পৃ: ৯৪, বাবু মা জাআ ফি ক্বিয়ামিল লাইল)
এ পবিত্র মাসের অন্যতম আরেকটি বরকত হলো এ মাসের একটি নফল ইবাদাত অন্য মাসের ফরজ ইবাদাতের সমতূল্য এবং একটি ফরজ ইবাদাত অন্য মাসের সত্তরটি ফরজের সমতূল্য।
(মিশকাত -১/১৭৩
সাভাবিক কারণেই নি¤েœর প্রশ্নগুলোর সমাধান হওয়া প্রয়োজন।
১. এমন একটি সহিহ সরিহ মুত্তাসিল হাদিস পেশ করুন যেখানে রাসুলুল্লাহ সা. তারাবিহ ও তাহাজ্জুদ নামাজকে একই নামায বলে উল্লেখ করেছেন। যেহেতু আপনারা তাই মনে করেন।
২. এমন একটি সহিহ সরিহ মুত্তাসিল গাইরে মুনকাতি হাদিস পেশ করুন যেখানে রাসুলুল্লাহ সা. পুরা রমজান মসজিদে জামাতের সাথে আট রাকাত তারাবিহ খতমে কুরআনের মাধ্যমে এশার নামাযের সাথে সাথে আদায় করেছেন।
৩. এমন একটি হাদিস পেশ করুন যেখানে নবীজি আট রাকাত তারাবিহকে সুন্নাত বলে ঘোষণা করেছেন। এবং বিশ রাকাতকে বিদআত বলে সাব্যস্ত করেছেন।
৪. এমন একটি হাদিস পেশ করুন যেখানে নবীজি সারা বছর একাকি এক রাকাত বিতর আদায় করেছেন এবং পুরা রমজান জমাতের সাথে এক রাকাত আদায় করেছেন।
৫. এমন একটি হাদিস পেশ করুন যেখানে রাসুল সা. বলেছেন, এগার মাস এতে কুরআন খতম করা সুন্নাত নয়, তবে বারতম মাস এ নামাযে কুরআন খতম করা সুন্নাত?
উপরের আলোচনা থেকে আমরা যে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি তা হল, আম্মাজান আয়েশা রা. এর বর্ণিত হাদীস দিয়ে কোনভাবেই এটা প্রমাণ হয় না যে তারাবীহ আট রাকাত। বরং বর্ণিত হাদীস দিয়ে তারাবীহই প্রামণিত হয় না। এটি মুহাদ্দিসগণের সর্বসম্মতিক্রমে তাহাজ্জুদের হাদিস। সুতরাং তাহাজ্জুদের হাদিস দিয়ে তারাবীহ প্রমাণ করা তাও আবার আটরাকাত প্রমাণ করা স্পষ্ট ধোকা ছাড়া কিছুই নয়। যারা এ জাতীয় প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বাংলার হাজার মুসলিমকে রমজানের এ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত থেকে বিমুখ করছেন তাদেরকে অবশ্যই একদিন আল্লাহর আদালাতে জবাব দিহি করতে হবে। সেদিন কেউ তার পাকড়াও থেকে পার পাবে না।
আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে সত্য সঠিক পথে চলার তাওফিক দান করুন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.