নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিম্বারের আহবান

আবু সাঈদ মুহাম্মদ নু’মান

আবু সাঈদ মুহাম্মদ নু’মান › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক রাকাত বিতর : একটি সাধারণ পর্যালোচনা

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৩২


আবু সাঈদ মুহাম্মদ নু‘মান

গাইরে মুকাল্লিদগন বিতর নামায এক রাকাত পড়ে থাকেন এবং দলীল হিসেবে কিছু হাদিস পেশ করে থাকেন। আমরা বক্ষমান প্রবন্ধে তাদের উপস্থাপিত দলীলগুলো পর্যালোচনা করে দেখব প্রমাণ হিসেবে তা কতটুকু শক্তিশালী বা তাদের উপস্থাপিত দলীলের আলোকে এক রাকাত বিতর প্রমাণ কতটুকু সহিহ।
দলীল নং-০১ : সা’দ বিন হিশামের সুত্রে আয়েশা রাযি. এর হাদিস
হযরত সা’দ বিন হিশাম বর্ণনা করেন আমি উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাযি. কে বললাম, আমাকে রাসূলুল্লাহ সা. এর বিতর নামায সম্পর্কে বলুন। তখন তিনি বললেন,
فَقالَتْ: كُنَّا نُعِدُّ له سِوَاكَهُ وَطَهُورَهُ فَيَبْعَثُهُ اللَّهُ ما شَاءَ أَنْ يَبْعَثَهُ مِنَ اللَّيْلِ فَيَتَسَوَّكُ وَيَتَوَضَّأُ وَيُصَلِّي تِسْعَ رَكَعَاتٍ لا يَجْلِسُ فِيهَا إلَّا في الثَّامِنَةِ فَيَذْكُرُ اللَّهَ وَيَحْمَدُهُ وَيَدْعُوهُ ثُمَّ يَنْهَضُ وَلَا يُسَلِّمُ ثُمَّ يَقُومُ فيُصَلِّ التَّاسِعَةَ ثُمَّ يَقْعُدُ فَيَذْكُرُ اللَّهَ وَيَحْمَدُهُ وَيَدْعُوهُ ثُمَّ يُسَلِّمُ تَسْلِيمًا يُسْمِعُنَا ثُمَّ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ بَعْدَ ما يُسَلِّمُ وَهو قَاعِدٌ فَتِلْكَ إحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً يا بُنَيَّ فَلَمَّا أَسَنَّ نَبِيُّ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عليه وسلَّمَ وَأَخَذَهُ اللَّحْمُ أَوْتَرَ بسَبْعٍ وَصَنَعَ في الرَّكْعَتَيْنِ مِثْلَ صَنِيعِهِ الأوَّلِ فَتِلْكَ تِسْعٌ يا بُنَيَّ
তিনি বললেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সা. এর জন্য পানি ও মিসওয়াক প্রস্তুত করে রাখতাম। রাতের কোন অংশে আল্লাহ তায়ালা তাকে জাগ্রত করে দিলে তিন উঠে মিসওয়াক করতেন, অযু করতেন এবং নয় রাকাত নামায আদায় করতেন। এরমধ্যে কেবল অষ্টম রাকাতে বসতেন। আল্লাহর তায়ালার জিকির, হামদ ও ছানা করতেন ও দুআ করতেন। এরপর এভাবে সালাম ফেরাতেন যে আমরা শুনতে পেতাম। এরপর সালাম ফিরানোর পর বসে দু’রাকাত নফল আদায় করতেন। এভাবে মোট এগার রাকাত হত। এরপর রাসূলুল্লাহ সা. এর বয়স বাড়ল শরীরও ভারী হয়ে এল তখন সাত রাকাত আদায় বিতর আদায় করতেন। এবং দু’রাকাত নফল ওইভাবে আদায় করতেন যেভাবে প্রথম দিকে আদায় করতেন। এভাবে মোট নয় রাকাত হত। (সহিহ মুসলিম- ১/২৫৬)
দলীল উপস্থাপনের শৈলী : প্রথম দিকে রাসূলুল্লাহ সা. নয় রাকাত বিতর আদায় করতেন। এর মধ্যে কেবল অষ্টম রাকাতে বসতেন এবং নবম রাকাতে সালাম ফিরাতেন। শেষ বয়সে এসে তিনি সাত রাকাত বিতর আদায় করতেন। এরমধ্যে কেবর ষষ্ঠ রাকাতে বসতেন এবং সপ্তম রাকাতে সালাম ফিরাতেন। সুতরাং বোঝা গেল বিতর নামায এক রাকাত।
উত্তর :
পাঠক! গাইরে মুকাল্লিদদের দলীল ও উপস্থাপনা আপনি দেখেছেন। এখন আসুন আমরা এটি নিয়ে একটু পর্যালোচনা করি। উল্লেখিত হাদিসটি এই সনদেই সুনান আন-নাসাঈ খ--১ পৃষ্ঠা-২৪৮ এ, মুআত্তা ইমাম মুহাম্মদ, পৃষ্ঠা-১৫১ -তে, ত্বহাবি খ--১, পৃষ্ঠা-১৩৭-এ, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, খ--২ পৃষ্ঠা-২৯৫-এ, দারাকুতনি, খ--১ পৃষ্ঠা-১৭৫-এ বায়হাকী খ--৩ পৃষ্ঠা-৩১-এ নিম্ন বর্ণিত শব্দে বর্ণিত আছে।
كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لَا يُسَلِّمُ فِيْ رَكَعَتَيْ الوِتْرِ
রাসূলুল্লাহ সা. বিতরের দ্বিতীয় রাকাতে সালাম ফেরাতেন না।
মুসতাদরাকে হাকেম, খ--১ পৃষ্ঠা-৩০৪-এ হাদিসটি নিম্ন বর্ণিত শব্দে বর্ণিত হয়েছে-
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يُوْتِرُ بِثَلاثٍ لَا يُسَلِّمُ إلَّا فِيْ آخِرِهِنَّ
রাসূলুল্লাহ সা. তিন রাকাত বিতর আদায় করতেন এবং কেবল শেষ রাকাতে সালাম ফেরাতেন।
মুসনাদে আহমদ গ্রন্থে (৬/১৫৬ হাদিস নং ২৫২২৩) সা’দ বিন হিশামের এ হাদিসটি নিম্ন বর্ণিত শব্দের বর্ণিত হয়েছে-
[عن عائشة أم المؤمنين:] أنَّ رَسولَ اللهِ صلّى اللهُ عليه وسلَّمَ كان إذا صلّى العِشاءَ دخَلَ المَنزِلَ ثم صلّى رَكعتَيْنِ ثم صلّى بَعدَهما رَكعتَيْنِ أطوَلَ منهما ثم أوتَرَ بثَلاثٍ لا يَفصِلُ فيهِنَّ ثم صلّى رَكعتَيْنِ وهو جالِسٌ يَركَعُ وهو جالِسٌ ويَسجُدُ وهو قاعِدٌ جالِسٌ.
রাসূলুল্লাহ সা. এশার নামায আদায় করে গৃহে প্রবেশ করে প্রথমে দু’রাকাত নামায আদায় করতেন। এরপর আবার দু’রাকাত এরচেয়ে দীর্ঘ সময় নিয়ে আদায় করতেন। এরপর তিন রাকাত বিতর এভাবে আদায় করতেন যে, এর মাঝখানে সালাম দ্বারা পার্থক্য সৃষ্টি করতেন না। এরপর বসে দু’রাকাত নফল আদায় করতেন।
বি. দ্র. : উপরে বর্ণিত সবকটি বর্ণনা একই বর্ণনাকারীর বিভিন্ন বর্ণনা। এ সকল বর্ণনাকে যদি একসাথ করা হয় তবে নিম্ন বর্ণিত বিষয়গুলো স্পষ্ট হবে-
০১. সা’দ বিন হিশামের বর্ণনানুসারে রাসূলুল্লাহ সা. মোট এগার রাকাত নামায আদায় করতেন। যার মধ্যে বিতর ও বিতরের পরের দু’রাকাত নফলও অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।
০২. প্রতি দুই রাকাতে বসতেন।
০৩. এর মধ্যে তিন রাকাত বিতরের উদ্দেশ্যে আদায় করতেন।
০৪. বিতরের দুই রাকাত আদায় করে বসতেন কিন্তু সালাম ফিরাতেন না।
০৫. বিতরের পর বসে দু’রাকাত নফল আদায় করতেন।
উপরের বর্ণিত রেওয়ায়েতগুলোতে নামাযের সংখ্যার যে বিবরণ রয়েছে তাতে বিতরের পূর্বের ও পরের নফল নামাযও রয়েছে। যার কারণে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। অথচ, প্রশ্নকারী রাতের নামায সম্পর্কে জানতে চায় নি। বরং তিনি কেবল বিতর নামায সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। এ কারণে জবাবে আয়েশা রাযি. রাতের নামাযগুলোকে তো সংক্ষেপে বলে দিলেন। এর মধ্যে বিতরের রাকাতগুলো বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। তা এভাবে যে অষ্টম রাকাত- যা বিতরের দ্বিতীয় রাকাত- এ বসতেন, কিন্তু সালাম ফিরাতেন না; বরং নবম রাকাতে গিয়ে বসতেন এবং সালাম ফিরাতেন।
সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাযি. এর যে বক্তব্য রয়েছে- যে । রাতের কোন অংশে আল্লাহ তায়ালা তাকে জাগ্রত করে দিলে তিন উঠে মিসওয়াক করতেন, অযু করতেন এবং নয় রাকাত নামায আদায় করতেন। এরমধ্যে কেবল অষ্টম রাকাতে বসতেন। আল্লাহর তায়ালার জিকির, হামদ ও ছানা করতেন ও দুআ করতেন। এরপর এভাবে সালাম ফেরাতেন যে আমরা শুনতে পেতাম। এরপর সালাম ফিরানোর পর বসে দু’রাকাত নফল আদায় করতেন। এভাবে মোট এগার রাকাত হত।
এ বর্ণনার উদ্দেশ্য এটা নয় যে পূর্বের আট রাকাতের কোন রাকাতেই রাসূলুল্লাহ সা. বসতেন না। কারণ এ বিষয়টি উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাযি. এর বর্ণনার বিপরীত। বরং হাদিসের উদ্দেশ্য হল অষ্টম রাকাতে সালাম ফিরানো ব্যতীত কেবল বসতেন। এ ছাড়া পূর্বের রাকাতগুলোতে প্রতি দু’রাকাত পরপর বসতেন এবং সালাম ফিরাতেন।
উপরের বিস্তারিত বিবরণের মাধ্যমে সা’দ বিন হিশামের প্রতিটি রেওয়ায়েতের মধ্যে সামঞ্জস্য হয়ে যায় এবং কোন মতবিরোধ থাকে না। যদি একই বর্ণনাকারীর বর্ণনা একই সনদে ভিন্ন ভিন্ন শব্দে বর্ণিত হয়, তবে এটিকে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থা ও পরিস্থির উপর ধরে নিয়ে একথা বলা যে, রাসূলুল্লাহ সা. কখনও এমনটি করেছেন, আবার কখনও এমনটি করেছেন- এটি সঠিক নয়। কেননা, এটি মূলত একই ঘটনার বিভিন্ন বর্ণনা। একই বর্ণনা যখন বর্ণনাকারী বিভিন্ন শব্দে ও শৈলীতে বর্ণনা করে, তাতে একই ঘটনা বিভিন্ন ঘটনা হয়ে যায় না।
দলীল নং-০২ : উরওয়া বিন যুবারের সুত্রে আয়েশা রাযি. এর বর্ণনা
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাযি. এর ভগ্নি-পুত্র উরওয়া বিন যুবাইর রাযি. আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণনা করেন-
أنَّ رَسولَ اللهِ ﷺ كانَ يُصَلِّي باللَّيْلِ إحْدى عَشْرَةَ رَكْعَةً يُوتِرُ منها بواحِدَةٍ فَإِذا فَرَغَ منها اضْطَجَعَ على شِقِّهِ الأيْمَنِ حتّى يَأْتِيَهُ المُؤَذِّنُ فيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ.
مسلم (٢٦١ هـ) صحيح مسلم ٧٣٦ ক্স [صحيح] ক্স
রাসূলুল্লাহ সা. রাতের বেলা এগার রাকাত নামায আদায় করতেন। এরমধ্যে এক রাকাত দ্বারা বিতর আদায় করতেন। নামায আদায়ান্তে ডানদিকে ফিরে শয়ন করতেন। অবশেষে যখন মুআজ্জিন আসত উঠে সংক্ষিপ্তভাবে দু’রাকাত নামায আদায় করতেন। সহিহ মুসলিম-১/২৫৩, হাদিস নং ৭৩৬
উত্তর :
উরওয়া বিন যুবাইর রাযি. থেকে বিতর সর্ম্পকিত অনেক রেওয়ায়েত বর্ণিত রয়েছে। যেমন, ত্বহাবি শরীফের প্রথম খ- ১৩৮ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-
্রكانَ رَسولُ اللَّهِ ﷺ يُصَلِّي باللَّيْلِ ثَلاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً ثُمَّ يُصَلِّي إذا سَمِعَ النِّداءَ بالصُّبْحِ رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِগ্ধ.
এ বর্ণনা থেকে বোঝা যে রাসূলুল্লাহ সা. রাতের বেলা তের রাকাত নামায আদায় করতেন। অথচ প্রথম বর্ণনা থেকে আমরা জানতে পারি যে তিনি এগার রাকাত আদায় করতেন। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ এর দৃষ্টিতে উরওয়াহ বিন যুবাইর রাযি. এর এ বর্ণনাদ্বয়ে কোন মতবিরোধ নেই। কারণ উভয় বর্ণনায় একই ঘটনার বিবরণ উল্লেখ হয়েছে।
যে সকল বর্ণনায় এগার রাকাতের উল্লেখ রয়েছে. তাতে মূলত দুটি বিষয়ের আলোচনা রয়েছে। (০১) প্রতি দু’রাত পরপর বৈঠক করা। (০২) পূর্বের দুই রাকাতের সাথে এক রাকাত মিলিয়ে বিতর আদায় করা। এ দু’টি বিষয়ের মধ্যে প্রথম বিষয়টি বিতরের পূর্বের আট রাকাতের সাথে, এবং দ্বিতীয় বিষয়টি বিতরের তিন রাকাতের সাথে সম্পর্কিত। সুতরাং বর্ণিত রেওয়ায়ের উদ্দেশ্য এটা নয় যে, বিতর কেবল এক রাকাত আদায় করতেন। বরং উদ্দেশ্য হল এগারতম রাকাতকে পূর্বের দু’রাকাতের সাথে মিলিয়ে বিতর আদায় করতেন।
পাঠক হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন যে, এ ব্যখ্যাটি আমরা কোথায় পেলাম। তবে আপনার এমন প্রশ্নের উত্তরে দু’টি ইঙ্গিত পেশ করতে চাই, যা থেকে বর্ণিত বিষয়টি পাঠকের সামনে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে যাবে।
প্রথম ইঙ্গিত : স্বয়ং আয়েশা রাযি. থেকে মুতাওয়াতির সনদে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে, যেগুলোতে তিন রাকাত বিতরের বিষয়টি স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে। যেমন,
০১. সহিহ বুখারী-১/১৫৪, সহিহ মুসলিম-১/২৫৪, সুনান আবি দাউদ০১/১৮৯ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে- ثُمَّ يُصَلِّيْ ثَلاثًا এরপর তিনি তিন রাকাত আদায় করতেন।
০২. সুনান নাসাঈ-১/২৪৮ এবং মুআত্তা ইমাম মুহাম্মদ-পৃষ্ঠা-১৫১-তে বর্ণিত আছে, সা’দ বিন হিশাম বর্ণনা করেন যে, আয়েশা রাযি. তাকে বর্ণনা করেছেন
أنَّ النَّبيَّ ﷺ كان لا يُسلِّمُ في ركعَتيِ الوِتْرِ
অনুবাদ : রাসূলুল্লাহ বিতরের দুই রাকাতে সালাম ফিরাতেন না।
০৩. মুসতাদরাকে হাকেম-১/৩০৫-এ উল্লেখ রয়েছে, হযরত উমরাহ রাযি. আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
كان النَّبيُّ ﷺ يُوتِرُ بثلاثٍ يقرَأُ في الأُولى بـ: سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلى وفي الثّانيةِ: قُلْ يا أَيُّها الْكافِرُونَ وفي الثّالثةِ: قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ
রাসূলুল্লাহ সা. তিন রাকাত বিতর আদায় করতেন। প্রথম রাকাতে (سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلى) দ্বিতীয় রাকাতে (قُلْ يا أَيُّها الْكافِرُونَ) তৃতীয় রাকাতে (قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ) তেলাওয়াত করতেন।
দ্বিতীয় ইঙ্গিত : বিতর নামায তিন রাকাত হওয়ার ব্যাপারে উরহওয়াহ বিন যুবাইর রাযি. এর ফতোয়া রয়েছে।
আবুয যিনাদ সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব, উরওয়া বিন যুবাইর, কাসেম বিন মুহাম্মদ ....... সাতজন থেকে বর্ণনা করেন, বিতর নামায তিন রাকাত। এর মাঝে সালাম ফিরাবে না। শেষ রাকাতে সালাম ফিরাবে। সুনান ত্বহাবী-১/১৪৫
দলীল নং-০৩ : ইবনে আব্বাস রাযি. এর হাদিস
রাসূলুল্লাহ সা. এর রাতের আমল প্রত্যক্ষ করার উদ্দেশ্যে হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাযি. একরাতে আপন খালা উম্মুল মুমিনীন হযরত মাইমুনাহ রাযি. এর গৃহে রাত্রি যাপন করলেন।
সে রাতে রাসূলুল্লাহ সা. এর আমলের বিরণ দিয়ে যে বর্ণনা রয়েছে সেটি বিভিন্ন সনদে ও বিভিন্ন শব্দে বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে একটি বর্ণনা হল-
نِمْتُ عِنْدَ مَيْمُونَةَ والنبيُّ ﷺ عِنْدَها تِلكَ اللَّيْلَةَ فَتَوَضَّأَ ثُمَّ قامَ يُصَلِّي فَقُمْتُ على يَسارِهِ فأخَذَنِي فَجَعَلَنِي عن يَمِينِهِ فَصَلّى ثَلاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً ثُمَّ نامَ حتّى نَفَخَ وكانَ إذا نامَ نَفَخَ ثُمَّ أَتاهُ المُؤَذِّنُ فَخَرَجَ فَصَلّى ولَمْ يَتَوَضَّأْ
আমি মাইমুনাহ রাযি. এর নিকট ঘুমালাম। রাসূলুল্লাহ সা. সে রাতে তার নিকট ছিলেন। তিনি অযু করলেন। এরপর নামাযে দাঁড়ালেন। আমিও তার বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে ধরে তার ডানপাশে নিয়ে আসলেন। তিনি তের রাকাত নামায আদায় করলেন। অতঃপর ঘুমিয়ে পড়লেন এমনটি তার নাক ডাকতে শুরু করল। তিনি যখন ঘুমাতেন তার নাক ডাকত। এরপর তার নিকট মুআজ্জিন এলেন, তিনি বেরিয়ে গিয়ে ফজরের নামায আদায় করলেন। কিন্তু (নতুন) অযু করেন নি।
এ হাদিসটির তিনটি জবাব রয়েছে :
০১. এ ঘটনার উপর আলোকপাত করতে গিয়ে বুখারী শরীফের ব্যখ্যাকার আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন-
. والحاصل أن قصة مبيت ابن عباس يغلب على الظن عدم تعددها فلهذا ينبغي الاعتناء بالجمع بين مختلف الروايات فيها ولا شك أن الأخذ بما اتفق عليه الأكثر والأحفظ أولى مما خالفهم فيه من هو دونهم ولا سيما إن زاد أو نقص
মোট কথা রাসূলুল্লাহ সা. এর গৃহে ইবনে আব্বাস রাযি. এর রাত্রি যাপনের ঘটনাটি প্রবল ধারণা মতে একবারই ঘটেছে। এ জন্য এ বিষয়ে যতগুলো বর্ণনা রয়েছে সেগুলোকে একত্র করার চেষ্টা করা উচিত। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, যে বিষয়ের উপর অধিকাংশ মুহাদ্দিস ও হাদিসের ব্যাপারে যারা সবচেয়ে বেশী জ্ঞান রাখেন তারা ঐক্যমত পোষণ করেন তা গ্রহণ করাই উত্তম ওই বিষয় থেকে যাতে তারা ভিন্নমত পোষণ করেন, কিংবা তাদের তুলনায় নিম্বপর্যায়ের মুহাদ্দিসগণ গ্রহণ করেন। বিশেষ করে যেখানে হ্রাস-বৃদ্ধির সম্ভানা রয়েছে।
০২. হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. থেকেই তিন রাকাত বিতরের স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে।
ক. সহিহ মুসলিম (১/২৬১) ও সুনানে তহাবী (১/১৪০) এর এক বর্ণনায় রয়েছে, হযতর ইবনে আব্বাস রাযি. এর পুত্র আলী বিন আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,
.................. ثُمَّ أَوْتَرَ بثَلاثٍ
.............. এরপর তিনি তিন রাকাত বিতর আদায় করলেন.........। সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৭৬৩।
খ. সুনান আন নাসাঈতে ইয়াহিয়া ইবনুল জায্যারের বর্ণনায় রয়েছে-
كَانَ يصَلِّيْ مِنَ اللَّيْلِ ثَمَانِ رَكَعَاتٍ وَيُوْتِرُ بِثلاثٍ وَيُصَلِّيْ رَكْعَتَينِ قَبْلَ صلاةِ الْفجْرِ
রাসূলুল্লাহ সা. রাতের বেলা আট রাকাত নামায আদায় করতেন। এবং তিন রাকাত বিতর আদায় করতেন। ফজরের পূর্বে দুই রাকাত সুন্নাত আদায় করতেন।
গ. ইবনে আব্বাস রাযি. এর গোলাম কুরাইবের বর্ণনায় রয়েছে-
فصلّى رسولُ اللَّهِ ﷺ رَكْعتينِ بعدَ العشاءِ ثمَّ رَكْعتينِ ثمَّ رَكْعَتينِ ثمَّ رَكْعتينِ ثمَّ أوترَ بثلاثٍ) العيني (٨٥٥ هـ) نخب الافكار ٥/٧٤ ক্স إسناده صحيح(
রাসূলুল্লাহ সা. এশার পর দুই রাকাত নামায আদায় করলেন। তারপর দুই রাকাত, এরপর আরো দু’রাকাত এরপর আরো দু’রাকাত এরপর তিনি রাকাত বিতর আদায় করলেন। (অর্থাৎ দু’রাকাত করে মোট আট রাকাত এবং তিন রাকাত বিতর আদায় করলেন।)
০৩. বিতর নাময তিন রাকাত হওয়ার বিষয়ে ইবনে আব্বাস রাযি. এর নিজের ফতোয়া রয়েছে। আবু মানসুর বর্ণনা করেন, আমি ইবনে আব্বাস রাযি. কে বিতর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, তখন তিনি বললেন, বিতর তিন রাকাত। সুনান আত তহাবী-১/১৪১
মোটকথা, ইবনে আব্বাস রাযি. এর ঘটনার সকল বর্ণনাকে যদি একত্র করা হয়, তবে এর মধ্যে কোন কোন বর্ণনায় তিন রাকাত বিতরের স্পষ্ট বিবরণ পাওয়া যাবে। অন্যান্য বর্ণনায় তিন হওয়ার সম্ভাবনা পাওয়া যাবে। সুতরাং সেগুলোকেও তিন ধরে নেয়াই উত্তম। পক্ষান্তরে এ সকল বর্ণনার প্রতিটিকে স্বতন্ত্র ঘটনা ধরে বিতর নামাযের বিভিন্ন পদ্ধতি নির্ধারণ করা কোনভাবেই সঠিক নয়। যেমনটি ইবনে হাজার আসকালানী রহ. এর বিবরণ থেকে উপরে আলোচনা হয়েছে। এ সমুদয় বর্ণনা একই ঘটনার ভিন্ন ভিন্ন বিবরণ। এ সকল ভিন্ন ভিন্ন বিবরণ থেকে একটি ঘটনাকে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা কোনভাবেই যুক্তি সংগত হতে পারে না এবং এর উপর ভিত্তি করে বিতর নামাযের বিভিন্ন পদ্ধতি আবিস্কার করাও সঠিক বলে বিবেচিত হতে পারে না।
দলীল নং-০৪ : উম্মু সালিমাহ রাযি. এর হাদিস
উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালিমাহ থেকে ইয়াহিয়া জায্যারের বর্ণনা –
كان النَّبيُّ ﷺ يوترُ بثلاثِ عشرةً فلما كبَر وضعُفَ أوتَر بسبعٍ ا)لترمذي (٢٧٩ هـ) سنن الترمذي ٤٥٧ (
রাসূলুল্লাহ সা. রাতের বেলা তেরো রাকাত নামায আদায় করতেন। এরপর যখন বার্ধক্যে উপনীত হলেন এবং দুর্বল হয়ে এলেন সাত রাকাত বিতর আদায় করতেন।
উত্তর :
এ হাদিসটি আয়েশা রাযি. এর অনুরূপ। পূর্বে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। এর মধ্যে দশ রাকাত নফল ও তিন রাকাত বিতরের। কিন্তু পুরো নামাজকে ‘বিতর’ বলে উল্লেখ করেছেন। যেমনটি ইমাম তিরমিযি রহ. হাদিসটি বর্ণনা করে. ইসহাক বিন ইবরাহিম এর নি¤েœাক্ত বক্তব্য তুলে ধরেন।
قَالَ إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ مَعْنَى مَا رُوِيَ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُوتِرُ بِثَلاَثَ عَشْرَةَ قَالَ إِنَّمَا مَعْنَاهُ أَنَّهُ كَانَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ ثَلاَثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً مَعَ الْوِتْرِ فَنُسِبَتْ صَلاَةُ اللَّيْلِ إِلَى الْوِتْرِ ‏.‏ وَرَوَى فِي ذَلِكَ حَدِيثًا عَنْ عَائِشَةَ وَاحْتَجَّ بِمَا رُوِيَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ ‏ "‏ أَوْتِرُوا يَا أَهْلَ الْقُرْآنِ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ إِنَّمَا عَنَى بِهِ قِيَامَ اللَّيْلِ يَقُولُ إِنَّمَا قِيَامُ اللَّيْلِ عَلَى أَصْحَابِ الْقُرْآنِ ‏.‏
ইসহাক ইবনু ইবরাহীম বলেনঃ ‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তের রাকআত বিতর আদায় করতেন ’’এই কথাটির মর্ম হ’ল তিনি সালাতুল লায়ল তাহাজ্জুদসহ তের রাকআত বিতর আদায় করতেন। এখানে সালাতুল লায়লকে বিতরের সাথে সম্পর্কিত করে ফেলা হয়েছে। এই বিষয়ে আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে একটি রিওয়ায়াত বর্ণিত পাওয়া যায়। এছাড়া তিনি রাসূলুল্লাহ সা. এর একটি হাদিস দিয়েও দলীল পেশ করেন, নবীজি সা. বলেন, "‏ أَوْتِرُوا يَا أَهْلَ الْقُرْآنِ ‏"‏ “হে আহলে কুরআন! তোমরা বিতর আদায় কর।” মূলত এর দ্বারা নবীজি তাহাজ্জুদকে বুঝিয়েছেন। তিনি বলেন হাফেজে কুরআনদের জন্য তাহাজ্জুদ আবশ্যক।
দলীল নং-০৫ : ইবনে উমর রাযি. এর হাদিস
সহিহ বুখারী ও মুসলিমে ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত আছে-
أنَّ رجلًا سألَ رسولَ اللَّهِ ﷺ عن صلاة اللَّيلِ فقالَ رسولُ اللَّهِ ﷺ: صلاةُ اللَّيلِ مَثنى مَثنى فإذا خشِيَ أحدُكُمُ الصُّبحَ صلّى رَكْعةً واحدةً توترُ لَهُ ما قد صلّى (الإمام الشافعي (٢٠٤ هـ) الأم ٨/٤٨٦ ক্স ثابت ক্স أخرجه البخاري (٩٩٠) ومسلم (٧٤٩)
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে প্রশ্ন করলেন, তখন তিনি মিম্বারে ছিলেন- আপনি রাতের সালাত কীভাবে আদায় করতে বলেন? তিনি বলেনঃ দু’রাক‘আত দু’রাক‘আত করে আদায় করবে। যখন তোমাদের কারো ভোর হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হয় তখন সে আরো এক রাক‘আত আদায় করে নিবে। আর এটি তার পূর্ববর্তী সালাতকে বিতর করে দেবে। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৪৭৩, ৯৯০, ৯৯৩, ৯৯৫, ১১৩৭; মুসলিম- হাদিস নং ৭৪৯, ৭৫৩, আহমাদ ৬০১৫) (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৫৮)
অনুরূপ সহিহ মুসলিমের এক বর্ণনায় ইবনে আব্বাস রাযি. ও ইবনে উমর রাযি. থেকে মারফু সনদে বর্ণিত আছে- রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন।
"‏ الْوِتْرُ رَكْعَةٌ مِنْ آخِرِ اللَّيْلِ ‏"‏ ‏
বিতর হল শেষ রাতের এক রাকাত নামাযের নাম। বা বিতর নামাযের সময় হল শেষ রাত। আর তা এক রাকাত। সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৭২৫, ১৬৪২
এ বর্ণনা দুটি সম্পর্কেও তিনটি জবাব রয়েছে।
০১. ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন
وتعقب بأنه ليس صريحا في الفصل فيحتمل أن يريد بقوله صل ركعة واحدة أي مضافة إلى ركعتين مما مضى .
এ হাদিসটি স্বতন্ত্র এক রাকাত আদায়ের ব্যাপারে স্পষ্ট নয়। কেননা এ সম্ভাবনা বিদ্যমান যে এর দ্বারা রাসূলুল্লাহ সা. এর উদ্দেশ্য হতে পারে, আগের দু’রাকাতের সাথে আরো এক রাকাত বৃদ্ধি করে তিন রাকাত বিতর আদায় কর।
এর কারণ হল, বেজোড় হওয়া শেষ রাকাতের উপর নির্ভরশীল। যার মাধ্যমে নামাযী ব্যক্তি নিজের নামাজকে বেজোড় বানাবে। এ রাতটি ব্যতিত সারা রাত নামায আদায় করলেও তার নামাজ বেজোড় হবে না। এ বাস্তবতা প্রকাশ করার জন্য ভিন্ন এক পদ্ধতিতে নবীজি সা. বললেন, রাতের শেষ প্রহরে এক রাকাত নামায হল বিতর।
০২. الوترُ رَكْعَةٌ مِنْ آخِرِ الليْلِহাদিসটি الحجُّ عرَفَةএ হাদিসের অনুরূপ।
এর মর্ম হল উকুফে আরাফা ব্যতীত হজের বাস্তবতা অর্জিত হয় না। এ হাদিস থেকে কোন বুদ্ধিমান এ সিদ্ধান্ত নিবে না যে, আরাফার অবস্থান দ্বারাই যেহেতু হজ পূর্ণ হয়ে যাওয়ার কথা হাদিসের বাহ্যিক শব্দ থেকে বোঝা যায় সুতরাং ইহরামের কী প্রয়োজন বা সায়ী-তওয়াফেরই বা কী আবশ্যকীয়তা? অনুরূপ (الوترُ رَكْعَةٌ مِنْ آخِرِ الليْلِ) হাদিসের অর্থ হল আগের নামাযগুলোর সাথে যতক্ষণ এক রাকাত নামায না মিলিয়ে নিবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বিতর নামাযের বাস্তবতা অর্জিত হবে না। এ হাদিসের মর্ম এটা কস্মিন কালেও হতে পারে না যে বিতর নামাযই এক রাকাত। এক রাকাত নামায আদায় করলেই বিতর আদায় হয়ে যাবে। এ মর্মটিকে রাসূলুল্লাহ সা. অন্য এক হাদিসে ভিন্ন শৈলীতে বর্ণনা করেছেন।
صلاةُ اللَّيلِ مَثنى مَثنى فإذا خشِيَ أحدُكُمُ الصُّبحَ صلّى رَكْعةً واحدةً توترُ لَهُ ما قد صلّى
এ হাদিসের স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন মর্ম এটা ছাড়া আর কী হতে পারে যে, রাতের বেলা দুই রাকাত দুই রাকাত করে নামায আদায় করা চাই। যখন সকাল হয়ে যাওয়ার আশংকা হবে, তখন শেষ দু’রাকাতের সাথে আরো এক রাকাত মিলিয়ে নিবে। যার মাধ্যমে তার নামায বিতর হয়ে যাবে।
০৩. ইবনে উমর রাযি. এর নিকটও বিতর নামায তিন রাকাত। হযরত আমের শা’বী থেকে বর্নিত,
سألتُ عبدَ اللهِ بنَ عباسٍ وعبدَ اللهِ بنَ عمرَ عن صلاةِ رسولِ اللهِ ﷺ بالليلِ؟ فقالا: ثلاثَ عشرةَ ركعةً منها ثمانٍ ويوترُ بثلاثٍ وركعتينِ بعد الفجرِ الألباني (١٤٢٠ هـ) صحيح ابن ماجه ١/٤٠٥ ক্স صحيح
তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ বিন উমর রাযি. ও আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাযি. কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ সা. এর রাতের নামায কেমন ছিল? তখন তারা বললেন, তেরো রাকাত। এরমধ্যে আট রকাত হল তাহাজ্জুদ আর তিন রাকাত হল বিতর। আর দুই রাকাত ফজর হওয়ার পর আদায় করতেন।
দলীল নং-০৬ : আবু আইয়্যুব আনসারী রাযি. এর হাদিস
হযরত আবু আইয়্যুব আনসারী রাযি. বর্ণনা করেন,
الوترُ حقُّ على كل مسلم فمن أحبَّ أن يُوترَ بخمسٍ فليفعل ومن أحبَّ أن يُوترَ بثلاثٍ فليفعل ومن أحبَّ أن يُوترَ بواحدةٍ فليفعل.. الذهلي (٢٥٨ هـ) السنن الكبرى للبيهقي ٣/٢٤ ক্স أشبه أن يكون غير مرفوع ক্স أخرجه أبو داود (١٤٢٢) واللفظ له والنسائي (١٧١٢) باختلاف يسير وابن ماجه (١١٩٠) بنحوه
প্রতিটি মুসলিমের উপর বিতর নামায আদায় করা অপরিহার্য। সুতরাং কেউ ইচ্ছে করলে পাঁচ রাকাত আদায় করবে, কেউ তিন রাকাত আদায় করতে চাইলে তাই করবে এবং কেউ এক রাকাত আদায় করতে চাইলে সে তাই করবে। সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১৪২২। সুনানে নাসাঈ-হাদিস নং ১৭১১-১৭১২)
এ হাদিসের দু’টি জবাব রয়েছে :
০১. মুহাদ্দিসদের নিকট হাদিসটি সম্পর্কে কালাম রয়েছে। এটি রাসূলুল্লাহ সা. এর কওল নাকি আবু আইয়্যুব আনসারী রাযি. এর নিজস্ব বক্তব্য এ নিয়ে মুহাদ্দিসগণের দ্বিমত রয়েছে। ইবনে হাজার আসকালানী রহ. আত্ তালখিসুল হাবীর (২/১৩) –এ উল্লেখ করেন,
আবু হাতেম, জুহ্লী, দারাকুতনী ‘ইলাল’ গ্রন্থে বায়হাকিসহ অন্যরা এটিকে মওকুফ বলেছেন। আর এটিই বিশুদ্ধ।
অর্থাৎ বিশুদ্ধ মত হল বর্ণিত রেওয়ায়েতটি হযরত আবু আইয়্যুব আনসারী রাযি. এর নিজস্ব বক্তব্য। এটি ‘হাদিসে মারফু’ এর মত সহিহ নয়।
০২. আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী রহ. বলেন, এটি নামাযের সংখ্যা নির্ধারিত হওয়ার আগের আমল। কেননা, নামাযের রাকাত সংখ্যা নির্ধারিত হয়ে যাওয়ার পর তাতে ইখতিয়ার থাকে না। উমদাতুল কারী-৫/২১৫
উপরের বর্ণনাটি যে আবু আইয়্যুব আনসারী রাযি. এর নিজের বক্তব্য, এ সম্পর্কে একটি ইঙ্গিত মুসান্নাফে আবদুর রায্যাকে বর্ণিত একটি রেওয়ায়েত থেকেও পাওয়া যায়। বর্ণনাটি নি¤œরূপ-
الوترُ حقُّ على كل مسلم فمن أحبَّ أن يُوترَ بخمس ركعات فليفعل ومن أحبَّ أن يُوترَ بثلاثٍ فليفعل ومن أحبَّ أن يُوترَ بواحدةٍ فليفعل ومن لم يستطع إلا أنْ يُوْمِي إيْمَاءً فَلْيَفْعَلْ.
হযরত আবু আইয়্যুব আনসারী রাযি. বর্ণনা করেন, প্রতিটি মুসলিমের উপর বিতর নামায আদায় করা অপরিহার্য। সুতরাং কেউ ইচ্ছে করলে পাঁচ রাকাত আদায় করবে, কেউ তিন রাকাত আদায় করতে চাইলে তাই করবে এবং কেউ এক রাকাত আদায় করতে চাইলে সে তাই করবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি এতটুকু আদায় করতেও সক্ষম নয় কেবল ইশারা করতে সক্ষম সে তাই করবে। মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক-২/২৯৫, হাদিস নং ৪৬৪৫, উমদাতুল কারী-৫/২৪৫
প্রথমোক্ত হাদিসটি একদিকে রাসূলুল্লাহ সা. এর কওল নয়; বরং আবু আইয়্যুব আনসারী রাযি. এর কওল। দ্বিতীয়ত তাতে কঠিন ‘ইযতিরাব’ রয়েছে। কোন বর্ণনায় পাঁচ, তিন, এক এর উল্লেখ রয়েছে, কোন বর্ণনায় কেবল এক এর উল্লেখ রয়েছে, কোন বর্ণনায় ইশারার অনুমতিও দেয়া হয়েছে। সুতরাং এ অবস্থায় একথা বলা যায় না যে, আবু আইয়্যুব আনসারী রাযি. এক রাকাত বিতরের ফতোয়া দিতেন।
দলীল নং-০৭ : আমিরে মুআবিয়া রাযি. এর হাদিস
হযরত আমিরে মুআবিয়া রাযি. এক রাকাত বিতর আদায় করতেন। হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. কে যখন বিষয়টি জানানো হল, তখন তিনি কী উত্তর দিলেন? হাদীসের পাঠটি নি¤œরূপ :
عن عبدالله بن أبي مليكة قِيلَ لِابْنِ عَبّاسٍ: هلْ لكَ في أمِيرِ المُؤْمِنِينَ مُعاوِيَةَ فإنَّه ما أوْتَرَ إلّا بواحِدَةٍ؟ قالَ: أصابَ إنَّه فقِيهٌ. البخاري (٢٥٦ هـ) صحيح البخاري ٣٧٦٥ ক্স [صحيح] ক্স
আবদুল্লাহ বিন আবু মুলাইকাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনে আব্বাস রাযি. কে বলা হল, আমিরুল মুমিনীন মুআবিয়া সম্পর্কে আপনি কী বলেন? তিনি এক রাকাত বিতর আদায় করেন। তিনি বললেন, তিনি ঠিকই করছেন, কেননা তিনি ফকীহ।
অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, ইবনে আব্বাস রাযি. বললেন,
دَعْهُ فَإنَّهُ قَدْ صَحِبَ
তার ব্যাপারটি রাখুন। তিনি রাসূলুল্লাহ সা. এর সোহবত লাভ করেছেন।
সুতরাং বোঝা গেল এক রাকাত বিতর আদায় করা সহীহ হাদিস থেকে প্রমাণিত।
উত্তর :
০১. এটি আমিরে মুআবিয়া রাযি. এর ব্যক্তিগত ইজতিহাদ। সহিহ হাদিসের আলোকে মুজতাহিদ ব্যক্তি তার ইজতিহাদে ভুলের কারণেও ছওয়াব পেয়ে থাকেন।
০২. এটি সাহাবির আমল যা গাইরে মুকাল্লিদদের নিকট দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। (নুযুলুল আবরার,পৃষ্টা-১০১)
০৩. এ হাদিসের শব্দ থেকে এটা স্পষ্ট যে সে সময়ের পরিবেশে এক রাকাত বিতর পড়ার প্রচলন ছিল না; বরং তিন রাকাত পড়ারই ছিল। তবেই তো প্রশ্নকারী প্রশ্ন করেছে।
০৪. সহিহ বুখারীর অন্যতম ব্যখ্যাকার আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী রহ. বলেন,
)دَعْهُ فَإنَّهُ قَدْ صَحِبَ اترك القول فيه والانكار عليه(
(دَعْهُ فَإنَّهُ قَدْ صَحِبَ) এ কথার অর্থ হল, তার ব্যাপারে আলোচনা করো না, এবং তার উপর আপত্তি করো না।
০৫. আল্লামা ইউসুফ বিন্নূরী রহ. বলেন, (دَعْهُ فَإنَّهُ قَدْ صَحِبَ/ أصاب إنَّهُ فَقِيْه) এর অর্থ হল, তিনি তার দাবীতে সঠিক। কেননা তিনি মুজতাহিদ। আর ইবনে আব্বাস এ বক্তব্য দ্বারা মূলত ওই তাবেঈকে ধমক দিতে চেয়েছেন। যাতে তিনি একজন জলীলুল কদর সাহাবীর বিরূদ্ধে কথা না বলেন। বিশেষ করে সাহাবিদের মধ্যে যিনি ফকীহ ও মুজতাহিদ তার ব্যাপারে মুখ না খোলেন।(আমানিল আহবার-৪/২৫২)
০৬. হযরত আমিরে মুআবিয়া রাযি. এর এ আমলটি যখন লোকদের মধ্যে প্রচার হতে লাগল, তখন তিনি এটিকে খুব জোর গলায় অস্বীকার করলেন। সুনানে ত্বহাবী-১/২০৩
শেষ কথা : বাস্তবে বিতর নামায এক রাকাত নয়। রাসূলুল্লাহ সা. কেবল এক রাকাত বিতর আদায় করেছেন, এমনটি কোন সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়।
০১. হাফেজ ইবনে হাজার রহ. আত্ তালখীসুল হাবীর গ্রন্থে ইমাম রাফেয়ীর সুত্রে হাফেজ ইবনে সলাহ এর নি¤েœাক্ত বক্তব্য নকল করেন,
বিতর সম্পর্কিত অসংখ্য বর্ণনা থাকা সত্ত্বেও আমরা এমন কোন বর্ণনা পাইনি যেখানে একথা উল্লেখ রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সা. কেবল এক রাকাত বিতর আদায় করেছেন। (আত্ তালখীসুল হাবীর-২/১৫)
০২. হযরত আবু সায়ীদ খুদরী রাযি. বর্ণনা করেন,
عن أبي سعيد الخدري:] أنَّ رسولَ اللهِ ﷺ نهى عن البُتَيْراءِ أن يُصلِّيَ الرَّجلُ ركعةً واحدةً يُوتِرُ بها
রাসূলুল্লাহ সা. ‘ البُتَيْراءِ’ থেকে নিষেধ করেছেন। البُتَيْراءِ হল কেবল এক রাকাত বিতর আদায় করা। (আত তামহীদ, ইবনে আবদিল বার-৫/২৭৫)
০৩. আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাযি. বর্ণনা করেন, এক রাকাত নামায কখনও যথেষ্ট হতে পারে না। মুআত্তা ইমাম মুহাম্মদ-পৃষ্ঠা-১৫০, বাবুস সালাম ফিল বিতরি)
উপরের আলোচনা থেকে এ বিষয়টি দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে গাইরে মুকাল্লিদদের উপস্থাপিত দলীলগুলো দলীল হিসেবে নেহাতই দুর্বল। পক্ষান্তরে এর বিপরীতে বিতরের রাকাত সংখ্যার ব্যাপারে যে দলীল আমরা উপস্থাপন করেছি তা সনদ ও দলীল গ্রহণের দিক থেকে মজবুত ও শক্তিশালী। এ কারণে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ এ দলীলগুলোর প্রতি দৃষ্টি না দিয়ে তিন রাকাত বিতর আদায় করে থাকে। তিন রাকাতের কম বিতর আদায় করাকে তারা গ্রহণ করেন নি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.