![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রিয় বিশ্ববাসী!
একথা সত্য যে তোমরা আমাকে কোনদিন দেখনি। আর কোনদিন দেখতেও পাবে না। তোমাদের দৃষ্টিশক্তির বাইরে আমার অবস্থান। আমার অস্তিত্ব অতি ক্ষুদ্র। তবে আল্লাহ আমাকে যে শক্তি দিয়েছেন তা বিস্ময়কর।
তবে আমি মনে করি, আমি যদিও তোমাদের দৃষ্টির আড়ালে, তবে ইতিমধ্যে তোমরা সকলে আমার পরিচয় লাভ করেছো, আমার শক্তি সম্পর্কে ধারণা পেয়েছো। আমার জন্ম ও ইতিহাস তোমরা শুনেছো।
কিন্তু আজ আমি তোমাদেরকে আমার যবানে ভিন্নরকম একটি পরিচয় বলতে চাই। আমার এ পরিচয়ের গুরুত্ব ও আবেদন ভিন্নমাত্রা সৃষ্টি করবে। আমার যতদূর ধারণা তোমাদের অনেকেই হয়তো আমাকে আমার এ পরিচয়ে চেন না। চেনার চেষ্টাও করনি।
এবার আমার সে পরিচয়টি শোন!
আমার পরিচয়ের দুটো ভাগ রয়েছে। এক ভাগ আকাশে, এক ভাগ যমীনে। একদিকে বন্ধের আয়োজন, একদিকে খোলার। একদিকে শক্তির মহড়া, একদিকে দুর্বলতার উপলব্ধি।
আমি দেশের সীমা বুঝি না, রাষ্ট্রের পরিসীমা মানি না। মানুষের মাঝে বিভাজন করতে জানি না। ছোট-বড়র বাছবিচার করি না। সুস্থ-অসুস্থ কাউকেই আমি ছাড়ি না। তবে ভাবতে পার, আমি খুব নির্দয়, আমার হৃদয়টা পাষাণ, তোমার যা খুশি ভাবতে পার, তবে আমি অনন্য।
আমি আল্লাহর সৈনিক। অকুতোভয়। কাউকে ডরাই না। কারণ আল্লাহই আমাকে পাঠিয়েছেন। আমার কর্তব্য হল একমাত্র তাঁর-ই হুকুম তামিল করা।
আমার শক্তি সম্পর্কে জানতে চাও? তবে শোন, চীন ও কাশমিরে, বার্মায় ও ভারতে, ইয়ামান ও লিবিয়ায়, সিরিয়া ও গাজায়, যুগ যুগ ধরে যে মুসলিম নিধন চলছিল বর্বরোচিত কায়দায়, যে নির্মম নির্যাতন চলছিল পৈশাচিক উন্মুক্ততায়, আমি তা বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি। এতে আমি আজ পুলকিত!!
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলীদের হামলায় প্রতিদিন যে লাশের মিছিল বের হত, চীনের ইউঘুরে অহিংসা নীতির প্রবর্তক বুদ্ধদেবের সেবকদের নির্যাতনে প্রতিদিন যে আওয়াজ আল্লাহর আরশ কাঁপিয়ে তুলত, ভূ-স্বর্গ কাশমিরে গোমুত্র সেবীদের নিষ্পেষণে সম্ভ্রমহীনতার যে দীর্ঘ সারি তৈরী হত, ঝিলাম নদির পানিতে ভেসে যাওয়া রক্তের যে লালিমা সৃষ্টি হত, আমি তা থামিয়ে দিয়েছি। ইরাক ও লিবিয়ার যমীনে গোলা ও বারুদের যে ভয়াবহ তা-ব- আমি সেটিও বন্ধ করে দিয়েছি। এতে আজ আমি আনন্দিত!!
জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে আজ আমারই কারণে উপলব্ধি করতে শিখেছে, আল্লাহর শক্তির কাছে তারা কতটা অক্ষম! কতটা দুর্বল! কতটা অসহায়! কতটা অপারগ!!
অশ্লীলতার বেলাভূমি সমুদ্র সৈকতগুলো আজ বিরান ভূমি। বেলেল্লাপনার জৌলুসে ভরপুর খেলারমাঠগুলো আজ খেলেয়াড় ও দর্শকশূন্য। বিশ্বময় নৈরাজ্যের সকল আয়োজন আজ মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। বিজ্ঞানের সকল অহংকার আজ ধূলোয় লুটিয়ে
আছে! এ আমারই কৃতিত্ত্ব! এটা আমার সফলতা! এ সফলতায় আমি গর্বিত! আমি উৎফুল্লিত!!
চরম নাস্তিকও আজ আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করছে। আজন্ম পাপের আড্ডায় বুদ হয়ে পড়ে থাকা ব্যক্তিও আজ তওবা করছে। পার্থিব রঙতামাশায় ডুবে থাকা ব্যক্তিও আজ আরশের দিকে মাথা তুলে তাকাচ্ছে! এ আমার কীর্তি। আমি নিজেকে আজ সৌভাগ্যবান মনে করছি!!
তবে আমার এ আনন্দের সাথে বেদনারও একটি দিক রয়েছে। আমি যখন দেখি, আমারই কারণে, আজ মসজিদগুলো মুসল্লিশূন্য, ইবাদাতগৃহগুলো উপসনাশূন্য, তখন সত্যিই আমি বেদনা কাতর হই! কিন্তু কী করব বলো, আমি যে আদিষ্ট! আমার উপর যে আল্লাহর হুকুম রয়েছে! আমি যে আমার স্রষ্টার হুকুমের সামনে অক্ষম! তাই আমাকে গালি দিও না। আমাকে ভর্ৎসনা করো না।
এ বেদনাবিধুরতার মধ্য দিয়েও আমি তোমাদেরকে একটি শুভ সংবাদ শোনাতে চাই, একটি আশার বাণী শোনাতে চাই, হে মসজিদের অধিবাসী! তোমাদের বিষয়গুলো তো বিস্ময়কর! তোমাদের প্রতিটি বিষয়ই কল্যাণকর। এ কল্যাণ কখনও কল্যাণের পোশাকে, আবার কখনও বা অকল্যাণের আবরণে তোমাদের কাছে আসে, যে পোশাকেই আসুক, যে আবরণে থাকুক, তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর।
যদি বিপদের পোশাকে আসে আর তোমরা ধৈর্য ধর, তবেই কেবল কল্যাণ, আবার যদি সুখ-সমৃদ্ধির আবরণে আসে তোমরা শুকরিয়া আদায় না কর, তবে তা কল্যাণ নয়।
মসজিদে যেতে পারছো না বলে আজ যাদের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত, শোন! তোমাদের কেউ যদি আমারই কারণে মৃত্যু বরণ করো, তবে জেনে রেখো, এ মৃত্যু সাধারণ কোন মৃত্যু নয়, এ মৃত্যু মর্যাদার। এ মৃত্যু শহিদী মর্তবার।
মৃত্যুর সময় হয়নি বলে তুমি মৃত্যু বরণ করো নি, তবে আমার দ্বারা আক্রান্ত হয়েছো, এতে তুমি সওয়াব ও প্রতিদানের আশায় ধৈর্য ধরেছো, তবে তুমিও শহীদের মর্যাদা লাভে ধন্য হয়েছো।
মসজিদের অধিবাসীদের জন্য আমার মধ্যে রয়েছে উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণের সমূহ উপাদান। হতে পারে তোমরা আমার বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদের জীবনের হিসাব মেলাবে। এরপর পরকালের খাতায় যে শূন্য তৈরী হয়েছে, তা পুরণে সচেষ্ট হবে।
বিপদ-আপদ তো মসজিদবাসীদের জন্য আল্লাহর কাছে মর্যাদা বৃদ্ধির, নিজেদের গুনাহ মাফের অন্যতম উপায়। আল্লাহ তোমাদেরকে গুনাহের আবিলতা থেকে পাপের পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র করার জন্য কখনও কখনও বিপদে পতিত করেন।
হে বিশ্ববাসী! আজ আমি তোমাদেরকে সম্বোধন করে কথা বলছি, এতে তোমরা বিস্মিত?! না, এতে বিস্মিত না হয়ে তওবা কর। কেয়ামতের দিন আগুনের মিম্বারে দাঁড়িয়ে ইবলীস জাহান্নামীদেরকে সম্বোধন করার আগেই তোমরা আল্লাহর দিকে ফিরে এসো।
ইবলীসের বক্তৃতার কথা শুনে অবাক হচ্ছো? তবে কুরআন খোল। এই যে দেখ সূরা ইবরাহীমে কীভাবে বিধৃত হয়েছে-
وَقَالَ الشَّيْطَانُ لَمَّا قُضِيَ الْأَمْرُ إِنَّ اللَّهَ وَعَدَكُمْ وَعْدَ الْحَقِّ وَوَعَدتُّكُمْ فَأَخْلَفْتُكُمْ ۖ وَمَا كَانَ لِيَ عَلَيْكُم مِّن سُلْطَانٍ إِلَّا أَن دَعَوْتُكُمْ فَاسْتَجَبْتُمْ لِي ۖ فَلَا تَلُومُونِي وَلُومُوا أَنفُسَكُم ۖ مَّا أَنَا بِمُصْرِخِكُمْ وَمَا أَنتُم بِمُصْرِخِيَّ ۖ إِنِّي كَفَرْتُ بِمَا أَشْرَكْتُمُونِ مِن قَبْلُ ۗ إِنَّ الظَّالِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
আর যখন যাবতীয় বিষয়ের ফয়সালা হয়ে যাবে, তখন শয়তান বলবে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছিলেন সত্য ওয়াদা, তোমাদের উপর আমার কোন আধিপত্য ছিল না, তবে আমিও তোমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছিলাম, এখন আমি তা ভঙ্গ করলাম। তোমাদেরকে দাওয়াত দিয়েছি, আর তোমরা আমার দাওয়াতে সাড়া দিয়েছ। সুতরাং তোমরা আমাকে ভর্ৎসনা করো না, বরং নিজদেরকেই ভর্ৎসনা কর। আমি তোমাদের উদ্ধারকারী নই, আর তোমরাও আমার উদ্ধারকারী নও। ইতঃপূর্বে তোমরা আমাকে যার সাথে শরীক করেছ, নিশ্চয় আমি তা অস্বীকার করছি। নিশ্চয় যালিমদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব’
তবে হ্যাঁ, আমার শক্তি দেখে তোমরা বিভ্রান্ত হয়ো না। আমার আক্রমণ দেখে তোমরা প্রতারিত হয়ো না! ভেবো না আমি মহাপরাক্রমশালী। অমিত আমার তেজ। না, আমি আল্লাহর এক সৃষ্টি। অতি নগন্য এক সৃষ্টি। দুর্বলতম এক মাখলুক! তবে বিশ্বময় এই যে প্রলয়কা-, তা আমার শক্তির কারণে নয়, মানুষের দুর্বলতার কারণে।
আমারই কারণে পুরো বিশ্ব আজ স্থবির- সমুদ্র সৈকতে পর্যটক নেই, সিনামা হলে দর্শক নেই, খেলার মাঠে খেলোয়াড় নেই, দর্শক গ্যালারী যেন খাঁ-খাঁ মরুভূমি। নিউ ইয়র্ক এর টাইম স্কয়ার জনশূন্য, ল-ন ব্রীজে হাঁটছে না মানুষ। ভেটিক্যানে মানুষবিহীন কবুতর, ভেনিসের জলে ভাসছেনা নব দম্পতি আর কপোত-কপোতি। সমগ্র ইতালী- স্পেন যুদ্ধছাড়াই অবরুদ্ধ, শূন্য গগণে উড়ছে না প্লেন, আর সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকছে না আন্তদেশীয় ট্রাক আর ট্রেন। নিজেদের দাবি করা সুপার পাওয়ার, পরাশক্তি দেশগুলো আজ সবাই নিজ থেকে গৃহবন্দী। দাপটটা দেখছেন তো, অথচ আমি আল্লাহর এক দুর্বলতম সৃষ্টি।
হে বিশ্ববাসী! আমার মত এত নগন্য, ক্ষুদ্র ও দুর্বলতম সৃষ্টির কারণে যদি তোমাদের এ হাল হয়, তবে আল্লাহ যদি তোমাদেরকে গিলে ফেলার জন্য যমীনকে নির্দেশ দেন, কিংবা আসমানকে দেন তোমাদের উপর একখ- আকাশ ভেঙ্গে ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ, অথবা আগুন কিংবা পাথরের বর্ষণের হুকুম, তবে তোমাদের অবস্থা কী দাঁড়াবে??
হে বিশ্ববাসী! আল্লাহ যদি তোমাদেরকে ডুবিয়ে ফেলার জন্য সমুদ্রকে নির্দেশ দেন, তবে তোমরা কোথায় গিয়ে পালাবে?
হে বিশ্ববাসী! আল্লাহর সংরক্ষণে আমার চেয়ে শক্তিধর আরো হাজারো যে ভাইরাস রয়েছে, সেগুলোকে যদি তোমাদের বিরূদ্ধে লেলিয়ে দেন, তবে তোমরা কোথায় গিয়ে লুকাবে?
হে বিশ্ববাসী! যমিন যদি তোমাদেরকে নিয়ে কাঁপতে শুরু করে, ভূ-পৃষ্ঠে যদি কম্পন সৃষ্টি হয়, আর এতে ভূ-গর্ভে লুকিয়ে থাকা সব কিছু যমীনের উপর বেরিয়ে আসে, বল তখন তোমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?
সুতরাং হে বিশ্ববাসী! আছে কি কেউ তওবা করার? আছে কি কেউ লজ্জিত হওয়ার? আছে কি কেউ ক্ষমা প্রার্থনা করার?
হে বিশ্ববাসী! তোমরা তো আমার কাছে আমার আগমনের কারণ জানতে চাওনি? এ বিশ্বচরাচরে কেন হঠাৎ আমার এ আগমন? না আমি আসিনি, তোমরাই আমাকে ডেকে এনেছো! তোমাদের অব্যহত পাপ, আল্লাহর হুকুমের অবাধ্যতা, দুর্বলের উপর যুলুম, অসহায় মানবতার উপর নির্যাতন আমাকে আসতে বাধ্য করেছে।
তোমরা কি তোমাদের নবীর হাদিসটি ভুলে গেছো? যেখানে আল্লাহর রাসূল তোমাদেরকে মহামারী আসার কারণ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন- বলেছেন
لمَ تَظْهَرِ الفَاحِشَةُ فِيْ قَوْمٍ قَطُّ ، حتَّى يُعْلِنُوْا بِهَا إلَّا فَشَا فِيْهِمُ الطَّاعُوْنَ والأوْجَاعُ الَّتِيْ لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِيْ أسْلافِهِمْ الَّذِيْنَ مَضَوْا
যখনই কোন সম্প্রদায়ের মাঝে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে; এমনকি তারা প্রকাশ্যে নির্লজ্জ কর্মকা- করতে থাকে, তখন অবশ্যই তাদের মাঝে এমন নুতন নতুন মহামারী ও যন্ত্রণাকর ব্যাধির প্রাদুর্ভাব ঘটে, যা তাদের অতীতের কারো মাঝে কখনই দেখা দেয়নি। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৪০১৯)
আজ তোমরা তোমাদের অর্থনীতির মেরুদ- সোজা রাখতে সুদকে একমাত্র উপায় হিসেবে গ্রহণ করে আল্লাহর বিরূদ্ধে যখন যুদ্ধ ঘোষণা করেছো, তখন আল্লাহ তার এ দুর্বলতম মাখলুককে তাঁর পক্ষের সৈনিক হিসেবে প্রেরণ করেছেন? আছে কি তোমাদের মাঝে মুকাবিলার তাকৎ?
আজ তোমরা দুর্বল-অসহায়দের অন্ন কেড়ে নেয়ার, তাদের ভিটে-মাটির দখলবাজিতে লিপ্ত। আজ তোমাদের হাতগুলো রক্তে রঞ্জিত, ভাইয়ের হাত বোনের রক্তে, ছেলের হাত বাবার রক্তে, কাফেরদের হাত মুসলিমদের রক্তে। সন্তান আজ মাতৃ¯স্নেহ থেকে বঞ্চিত, মা বঞ্চিত সন্তানের সম্মান-সমীহ থেকে। অবলা নারীর ইয্যত আজ লুণ্ঠিত। গরিব অসহায় মানুষগুলো তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। একদিকে মানবিক অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে, আরেকদিকে খেল-তামাশা, বেহায়াপনা ও বেলেল্লাপনার বাজার চাঙ্গা হচ্ছে। অশ্লীলতা ও নোংরামিতে কেবল যমীন-ই নয়, বরং ইথারকে পর্যন্ত আজ ভারাক্রান্ত করেছো?
তোমাদের দিবসগুলো কাটে অবৈধ কামাই রোজগারে। রাতগুলো ঝলসে উঠে আলো-আঁধারির মায়াবী স্নিগ্ধতায় গুনাহের রঙ্গমঞ্চে।
পবিত্র রমযানও তোমাদের পাপের চাপ থেকে রেহাই পায় না। ইফতারও সেহেরিকে তোমরা বানিয়ে নিয়েছো নবান্ন উৎসব। সময় অতিবাহিত করার জন্য তোমরা বসে থাক টিভির পর্দার সামনে হিন্দি নগ্ন সিনেমার আসরে।
তোমাদের দাবী, তোমরা আধুনিক, তোমরা সভ্য, তোমরা উন্নত!! এ তোমাদের দাবী হতে পারে, কিন্তু বাস্তবতা নয়। বাস্তবতা হল তোমরা আবারো জাহেলিয়াতের নিগড়ে পতিত হয়েছো। আধুনিকতার লেবেলে জাহেলিয়াত আবার রাজ কায়েম করেছে।
জাহেলি সমাজের মানুষগুলো আল্লাহকে বাদ দিয়ে প্রতিমার পুজো করতো। আর আজ তোমরা পুজা কর ক্ষমতার, ক্ষমতাবানদের। কি বিস্ময়কর মিল সেকালের জাহেলিয়্যাত ও একালের জাহেলিয়্যাতের মাঝে। সেকালে তারা প্রতিমার পুজা করলেও ক্ষমতা ছিল পুজারীর হাতে। আর একালে তোমরা ক্ষমতার চেয়ারে বসা লোকটির বন্দনা গাইলেও ক্ষমতা যারা চেয়ারে বসিয়েছে তাদের হাতে। মুসল্লিরাই মসজিদের খতীব নিয়োগ দেয়, খতীবকে খতীবের আসনে সম্মান দেখালেও ক্ষমতাটা মুসল্লিদের হাতে। তাই তো বিজ্ঞ খতীবও মিম্বার থেকে সত্যটা উচ্চারণ করতে পারেন না।
এভাবে তোমাদের পাপের ফিরিস্তি অনেক দীর্ঘ! গুণাহের সারণি অনেক লম্বা! সবগুলো আজ খুলে বলতে চাই না। কেবল কিছুটা ইঙ্গিত দিলাম। তবে কথাগুলো শুনে আমাকে নয়, তুমি তোমাকেই গালি দেয়া উচিত।
আহ্! আমি যদি পারতাম, ঈমানদারদেরকে বাদ দিয়ে কেবল অবাধ্যদেরকে ধরতাম, তবে আমি তাই করতাম! কিন্ত কুদরতের রহস্য বোঝা বড় দায়। কুদরতের ফায়সালাটাই এমন। তিনি আমাকে একটি সর্বগ্রাসী বিপদ বানিয়েছেন। তাই সর্বাবস্থায় তারই প্রশংসা করা উচিত।
আমি যদিও অক্ষম, দুর্বল, তথাপি আজ পৃথিবীর সকল ঔদ্ধতের শীর অবনমিত। পারমানবিক ক্ষমতার অধিকারীরাও আজ নতজানু। শিল্প ও উন্নতীর কারিগররাও আজ ঘর বসা। অর্থনীতির রথি মহারথিরাও আজ মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।
তাই যাওয়ার আগে শেষ উপদেশটি দিয়ে যাই। কুরআনের কয়েকটি চিরন্তন আয়াতের কথা তোমাদের বলে যাই- আল্লাহর নবী হুদের ভাষায়-
وَيَا قَوْمِ اسْتَغْفِرُواْ رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُواْ إِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَاء عَلَيْكُم مِّدْرَاراً وَيَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلَى قُوَّتِكُمْ وَلاَ تَتَوَلَّوْاْ مُجْرِمِينَ
‘হে আমার কওম, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও অতঃপর তার কাছে তাওবা কর, তাহলে তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি পাঠাবেন এবং তোমাদের শক্তির সাথে আরো শক্তি বৃদ্ধি করবেন। আর তোমরা অপরাধী হয়ে বিমুখ হয়ো না’।
يَا قَوْمِ لِمَ تَسْتَعْجِلُونَ بِالسَّيِّئَةِ قَبْلَ الْحَسَنَةِ لَوْلَا تَسْتَغْفِرُونَ اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
‘হে আমার কওম, তোমরা কল্যাণের পূর্বে কেন অকল্যাণকে তরান্বিত করতে চাইছ? কেন তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছ না যেন তোমাদেরকে রহমত করা হয়’?
وَأَنِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُمَتِّعْكُمْ مَتَاعًا حَسَنًا إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى وَيُؤْتِ كُلَّ ذِي فَضْلٍ فَضْلَهُ وَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ كَبِيرٍ
আর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তারপর তার কাছে ফিরে যাও, (তাহলে) তিনি তোমাদেরকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত উত্তম ভোগ-উপকরণ দেবেন এবং অধিক আনুগত্যশীলকে তাঁর আনুগত্য মুতাবিক দান করবেন। আর যদি তারা ফিরে যায়, তবে আমি নিশ্চয় তোমাদের উপর বড় এক দিনের আযাবের ভয় করছি।
ইতি
আল্লাহর দুর্বলতম, ধ্বংসশীল মাখলুক
কেভিড-১৯ - নভেল কেরোনা
©somewhere in net ltd.