নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিম্বারের আহবান

আবু সাঈদ মুহাম্মদ নু’মান

আবু সাঈদ মুহাম্মদ নু’মান › বিস্তারিত পোস্টঃ

দরিদ্র ও দারিদ্রের প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

০৪ ঠা মে, ২০২০ রাত ১:১৯


আবু সাঈদ মুহাম্মদ নু‘মান
১. দারিদ্র কাম্য নয় :
ইসলাম দারিদ্রকে এমন এক বিপদ মনে করে যা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইতে হবে। পক্ষান্তরে ধনাঢ্যতাকে আল্লাহ প্রদত্ত এক নিয়ামত হিসেবে গণ্য করে এর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে বলে।
রাসূলুল্লাহ সা. এর প্রতি অনুগ্রহ হিসেবে উল্লেখ করেছে-وَوَجَدَكَ عَائِلًا فَأَغْنَىٰ
ঈমানদার বান্দাদের সম্পদ ইবাদাতের অগ্রিম ফলাফল :
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا (১০) يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا (১১) وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا (১২)
রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন-
نِعْمَ الْمَالُ الصَالِحُ للْمَرْء الصَّالِحِ
অর্থ : সৎ লোকের ভালো অর্থ-সম্পদ কতই না উত্তম।
বদরের যুদ্ধবন্দীদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
﴿ يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِمَنْ فِي أَيْدِيكُمْ مِنَ الْأَسْرَى إِنْ يَعْلَمِ اللَّهُ فِي قُلُوبِكُمْ خَيْرًا يُؤْتِكُمْ خَيْرًا مِمَّا أُخِذَ مِنْكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ ﴾.
২. দরিদ্রতা সামাজিক কোন দোষ নয় :
ইসলাম দরিদ্রতাকে সামাজি কোন দোষ হিসেবে কিংবা দরিদ্র ব্যক্তির জন্য অপমানের কারণ হিসেবে মূল্যায়ন করেন না। দারিদ্রের কারনে কারো সম্মান কমে যায় না। অর্থ-কড়ি না থাকার কারণে কেউ সমাজে অবমূল্যায়িত হতে পারে না। ইসলাম তার অনুসারীকে এ তালিম দেয়, সম্মান ও মযাদা পার্থিব কোন বিষয়ের মধ্যে কুক্ষিগত নয়; বরং সম্মান ও মর্যাদা হল ঈমান ও আমল, তাকওয়া ও খোদাভীতি, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার মধ্যে। পবিত্র কুরআন দ্ব্যার্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করছে-
 সূরা মুজাদালার ১১ নং আয়াতে- (يَرْفَعِ اللهُ الَّذِيْنَ آمَنُوْا مِنْكُمْ وَالَّذِيْنَ أُوْتُوْا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ)
 সূরা যুমারের ৯ নং আয়াতে-(قُلْ هَلْ يَسْتَوِيْ الَّذِيْنَ يَعْلَمُوْنَ وَالَّذِيْنَ لاَ يَعْلَمُوْنَ)
 সূরা গাফিরের ৫৮ নং আয়াতে- (وَمَا يَسْتَوِيْ الأَعْمَىٰ وَالبَصِيْرُ وَالَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوْا الصَّالِحَـٰـتِ وَلاَ المُسِيْءُ)
 সূরাতুল হুজুরাতের ১৩ নং আয়াতে- (إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ أَتْقَـٰـكُمْ).
জাহেলী সমাজের মানুষগুলো মানুষের মান-মর্যাদার বিচার করত অর্থ-বিত্তের নিত্তিতে। সমাজিক অবস্থান ও বংশীয় মর্যদার তুলাদ-ে। তাই তো তারা মানবতার মুক্তির দূত রাসূলে আরাবীকে পর্যন্ত সেই অর্থ-বিত্তের মানদ-ে মূল্যায়ন করতে চেয়েছিল। যেহেতু সে সময় তার হাতে দুনিয়ার বিত্ত-বৈভব ছিল না। সম্মান ও মর্যাদার সে মানদ-ের কারণে তারা আশা করতো যে নবুওয়াতের মত মর্যাদাপূর্ণ বিষয়টি মক্কার ওয়ালীদ ইবনুল মুগীরা কুরাইশী কিংবা তায়েফের উরওয়াহ বিন মাসউদ ছাকাফীর মত সম্ভ্রান্ত ও বিত্তশালী লোকদেরকে যেন দেয়া হয়। আল্লাহ তায়ালা তাদের এহেন কামনা-বাসনার কথা সূরা যুখরুফে (আয়াত-৩১) এভাবে বিধৃত করেন-
(وَقَالُوْا لَوْ لاَ نُزِّلَ هَذَا القُرْآنُ عَلىٰ رَجُلٍ مِنَ القَرْيَتَيْنِ عَظِيْم)
বনী ইসরাঈলের নিকটও সম্মান ও মর্যাদাকে মূল্যায়ন করার নিত্তি এটাই ছিল। আল্লাহ তায়ালা যখন তালুতকে তাদের বাদশারূপে প্রেরণ করলেন, তখন তারা আপত্তি তুলে বলেছিল- (সূরা বাকারা-২৪৭)
(وَقَالَ لَهُمْ نَبِيُّهُمْ إِنَّ اللهَ قَدْ بَعَثَ طَالُوْتَ مَلِكاً، قَالُوْا أَنّىٰ يَكُوْن لَهُ المُلْكُ عَلَيْنَا وَنَحْنُ أَحَقُّ بِالمُلْكِ مِنْهُ وَلَمْ يُؤْتَ سَعَةً مِّنَ المَالِ)
রাসূলুল্লাহ সা. যখন মক্কাবাসীকে দীনের প্রতি আহবান করলেন, তাওহিদের প্রতি দাওয়াত দিলেন, তার দাওয়াতে মক্কার গরীব ও অসহায়লোকগুলো ঈমানের ছায়াতলে আশ্রয় নিতে শুরু করল- এমনই একটি মুহূর্তে মক্কার ওই সম্ভ্রান্ত ও বংশকৌলিণ্যেচুর মানুষগুলো রাসূলুল্লাহ সা. এর কাছে আবদার জুড়ে দিল- এ দরিদ্র মানুষগুলো যদি আপনার দরবারে এভাবে অবাধে আসা-যাওয়া করে তবে আমাদের জন্য আপনার কাছে আসা সম্ভব নয়। তারচে’ ভাল হয় যদি আপনি তাদের জন্য একটি দিন এবং আমাদের জন্য একটি দিন নির্ধারণ করেন, তবে আমরা আপনার কাছে আসতে, বসতে পারব। অর্থাৎ, এখানেও তারা সমাজের সম্মান ও মর্যাদার মাপকাঠি ওই ধন-সম্পদকেই বানিয়েছে।
পবিত্র কুরআনের সুরা কাহাফের ২৮-২৯ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে-
(وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَع الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالغَداوةِ وَالعَشِيّ يُرِيْدُوْنَ وَجهَه وَلاَ تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيْدَ زِيْنَةَ الحَيَاةِ الدُّنْيَا وَلاَ تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطاً، وَقُلِ الحَقُّ مِنْ رَّبِّكُمْ، فَمَنْ شَاءَ فَلْيُؤْمِنْ وَمَنْ شَاءَ فَلْيَكْفُرْ)
রাসূলুল্লাহ সা. কুরাইশদের সম্ভ্রান্ত একটি দলকে যখন দীনের দাওয়াত দিচ্ছিলেন এবং নবীজি একান্তভাবে তারেদ ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি কামনাও করছিলেন ঠিক সে সময় যখন আবদুল্লাহ বিন উম্মে মাকতুম রাযি. সেখানে নবীজির কাছে অনুমতি প্রার্থনা করলেন, তাতে স্বাভাবিক কারণে নবীজি সা. সামান্য ভ্রুকুটি করলেন, আল্লাহ তায়ালা সাথে সাথে আয়াত নাযিল করে তাঁর প্রিয় হাবীবকে তাম্বিহ করলেন-
(عَبَسَ وَتَوَلّىٰ أَنْ جَاءَهُ الأَعْمَىٰ وَمَا يُدْرِيْكَ لَعَلَّهُ يَزَّكَّىٰ أَوْ يَذَّكَّرُ فَتَنْفَعَهُ الذِّكْرٰى أَمَّا مَنْ اِسْتَغْنىٰ فَأَنْتَ لَهُ تَصَدّىٰ وَمَا عَلَيْكَ أَلاَّ يَزّكّىٰ وَأَمَّا مَنْ جَاءَكَ يَسْعَىٰ وَهُوَ يَخْشَىٰ فَأَنْتَ عَنْهُ تَلَهّىٰ، كَلاَّ إِنَّها تَذْكِرَة فَمَنْ شَاءَ ذَكَرَه) سورة "عبس" آية ১-১২"...(৩)
৩. ইসলামের দৃষ্টিতে ধনী-গরীবের কোন ব্যবধান নেই :
ইসলাম ধনী-গরিবের মাঝের সকল ব্যবধানকে মিটিয়ে দিয়েছে। ধনী ও গরিবকে একই সমান্তরলে দাঁড় করিয়েছে। তাই তো আমরা দেখতে পাই ধনী ও বিত্তশালীর পাশেই একই কাতারে দাঁড়িয়ে একই পদ্ধতিতে একই পরিমান ইবাদাত সম্পাদন করছে। ধনীর উপর যেমন পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ তেমনি গরীবের উপরও পাঁচ ওয়াক্তই ফরজ। রমজানের রোযা যেমন ধনীর উপর তেমনী গরীবের উপরও ফরজ। কোন কম-বেশী নেই। অনুরূপ ইসলামী বিভিন্ন মুআমালাতের ক্ষেত্রেও ধনী-গরীবের বিধান একই। ধনী অপরাধ করলে যে পরিমান শাস্তি গরীবের বেলায়ও সেই একই পরিমাণ শাস্তি প্রযোজ্য। ধনীকে ধনী বলে ছাড় দেয়া হবে না, গরীবকে গরীব বলে শৈথিল্য প্রদর্শন করা হবে না। বরং ইসলাম এ কথা স্পষ্টরূপে জানিয়ে দিয়েছে যে, মানুষের মর্যাদার রহস্য লুকিয়ে আছে তার ঈমান ও আমলে। ইখলাস ও ইয়াকীনে। তার বাহারি পোশাক-পরিচ্ছদ, দামী খাবার-পানীয়, তার হিরা-জহরতের মাঝে নয়। তাই তো আমরা দেখতে পাই রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করছেন-
(رُبّ أشغث أغبر ذي طمرين لا يؤبه له لو أقسم على الله لأبرّه)
وروى "أحمد" و "مسلم" عن "أبي هريرة" مرفوعًا (رُبّ أشعث مدفوعًا بالأبواب لو أقسم على الله لأبرّه)
وروى "الحاكم أبو نعيم" في "الحلية" عنه أيضًا (رُبّ أشعث أغبر ذي طمرين تنبو عنه أعينُ الناس لو أقسم على الله لأبرّه)
وروى "البزّار" عن "ابن مسعود" مرفوعًا (رُبّ ذي طمرين لا يؤبه له لو أقسم على الله لأبره) ورمز لهما السيوطي بعلامة الصحة وفي مقابل ذلك يقول (يأتي الرجل العظيم السمين يومَ القيامة فلا يزن عند الله جناح بعوضة) رواه "البخاري" واقرؤوا إن شئتم (فَلاَ نُقِيْمُ لَهُمْ يَوْمَ القِيَامَةِ وَزْنًا) سورة "الكهف" آية "১০৫" ...(৪)
৪. ইসলাম দরিদ্রকে সম্মানীত করেছে :
আখেরাতে ইসলাম দরিদ্র ব্যক্তির বিশেষ মর্যাদার কথা ঘোষণা করেছে। রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন-
(يقول الله تعالى يوم القيامة: "أين صفوتي من خلقي؟ فتقول الملائكة ومن هم يا ربنا؟ فيقول: فقراءُ المسلمين القانعون بعطائي الراضون بقدري أدخِلوهم الجنةَ فيدخلونها ويأكلون ويشربون والناس في الحساب يترَدَّدون) رواه "أبو منصور الديلمي" في مسند "الفردوس".
(يدخل فقراء أمتي الجنةَ قبل أغنيائها بخمسمائة عام) أخرجه "الترمذي" من حديث "أبي هريرة" وقال حسن صحيح.
وفي رواية أخرى (بأربعين خريفًا) أخرجه "مسلم" من حديث "عبد الله بن عمر"إلا أنه قال (فقراءُ المهاجرين) الترمذي من حديث "جابر" و"أنس"...(৫)
৫. দরিদ্রতা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি ইমতিহান :
ইসলাম দারিদ্রকে আল্লহার পক্ষ থেকে মুমিন বান্দার জন্য একটি পরীক্ষা হিসেবে মূল্যায়ন করে। সুতরাং যে বান্দা দারিদ্রের কাষাঘাত সহ্য করে, খোদায়ী এ পরীক্ষায় ধৈর্য ধারণ করে সে অবশ্যই ছওয়াবের হকদার হয়। অনুরূপ যে বান্দা স্বচ্ছলতার নেয়ামত পেয়ে শুকরিয়া আদায় করে সেও প্রতিদান প্রাপ্ত হয়। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-
(وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الخَوْفِ وَالجُوْعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الأَمْوَالِ وَالأَنْفُسِ وَالثَمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَـٰـبـِرِيْنَ) سورة "البقرة" آية "১৫৫"
وقال تعالى في سورة "آل عمران" آية "১৮৬" (لَتُبْلَوُنَّ فِيْ أَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ)


রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন-
(عجبًا للمؤمن إن أمره كله خير وليس ذلك لأحد إلا للمؤمن إن أصابتْه سرّاء شَكَرَ فكان خيرًا له وان أصابتْه ضرّاءُ صبر فكان خيرًا له) رواه "مسلم"...(৬)
আল্লাহ তার বান্দাকে পরীক্ষা করবেন এ অধিকার তাঁর রয়েছে। কখনও তিনি নেয়ামত প্রদাণের মাধ্যমে পরীক্ষা করেন। আবার কখনও তিনি নেয়ামত ছিনিয়ে নিয়ে দারিদ্রের মাধ্যমে পরীক্ষা করেন। কখনও সুস্থতা দিয়ে, আবার কখনও অসুস্থতা দিয়ে, কখনও হালাল মাল দিয়ে, কখনও তার সামনে হারাম মালের ঢের লাগিয়ে, কখনও আনুগত্যের মাধ্যমে, কখনও অবাধ্যতার মাধ্যমে। কখনও হেদায়েতের পথ সুগম করে দিয়ে, কখনও গোমরাহির পথ খুলে দিয়ে। বান্দাকে তিনি নানাভাবে পরীক্ষা করেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
(وَنَبْلُوْكُمْ بِالشَرِّ وَالْخَيْرِ فِتْنَةً) سورة "الأنبياء" آية "৩৫"
তিনি দেখতে চান কে শুকরিয়া আদায় করে আর কে ধৈর্য ধারণ করে আর কে নিরাশ হয়। যাতে প্রত্যেককে তর কৃত আমলের প্রতিদান দিতে পারেন। কারণ এ পরীক্ষার মাধ্যমে বান্দার গুনাহ মাফ হয়। বিনিময়ে সে এমন ভাবে আপন প্রভুর সাতে মিলিত হওয়ার সুযোগ লাভ করে যখন তার কোন গুনাহ-ই থাকে না। রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন-
(وما يزال البلاء بالمؤمن في نفسه وولده وماله حتى يلقىٰ الله وما عليه من خطيئة)
মুমিন তার ঈমানের স্তর অনুযায়ী পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। যার ঈমানের স্তর যত উন্নত, ইয়াকীনের ভিত্তি যত মজবুত তার পরীক্ষাও তত কঠিন। নবীজি সা. বলেন- মানুষের মধ্যে নবীদের পরীক্ষাই সবচেয়ে কঠিন। সুতরাং দরিদ্রতা একটি পরীক্ষা।
৬. দরিদ্রতা কুফরী ও গুনাহের ফল :
দরিদ্রতা সম্পর্কে ইসলামের আরেকটি মুল্যায়ন হল, কুফরি, শিরিক ও গুনাহের কারণেও আল্লাহ তায়ালা বান্দার উপর দারিদ্র চাপিয়ে দেন। পবিত্র কুরআনের সূরা নাহলে (১১২) বর্ণিত হয়েছে-
(وَضَرَبَ اللهُ مَثَلاً قَرْيَةً كَانَتْ آمِنَةً مُطْمَئِنَّةً يَّأْتِيْهَا رِزْقُهَا رَغَدًا مِّنْ كُلِّ مَكَانٍ فَكَفَرَتْ بِأَنْعُمِ اللهِ فَأَذَاقَهَا اللهُ لِبَاسَ الجُوْعِ والخَوْفِ بِمَا كَانُوْ يَصْنَعُوْنَ)
এখানে জনপদ দ্বারা মক্কাতুল মুর্কারামাহ উদ্দেশ্য। পৃথিবীর অন্যান্য জনপদ বাদ দিয়ে মক্কাতুল মুর্কারামাহ দ্বারা উপমা দেয়ার রহস্য হল- এই মক্কায় আল্লাহর ঘর থাকা সত্ত্বেও যখন এর অধিবাসীরা গুনাহে লিপ্ত হল আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দিলেন। সুতরাং অন্যান্য জনপদের তখন কী অবস্থা হতে পারে।
সূরা নিসার ১৬০ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
(فَبِظُلْمٍ مِّنَ الَّذِيْنَ هَادُوْا حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ طَيِّبَاتٍ أُحِلَّتْ لَهُمْ)
ইহুদী জাতি অন্যায় ও পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার কারণে আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর এমন অনেক খাবার হারাম করে দিলেন যা ইতিপূর্বে তাদের জন্য হালাল ছিল। সূরা ইবরাহিমের ৩২-৩৪ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে-
(اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَـٰـوَاتِ وَالأرْضَ وَأَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجَ بِهِ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَكُمْ وَسَخَّرَ لَكُمُ الْفُلْكَ لِتَجْرِيَ فِي الْبَحْرِ بِأَمْرِهِ وَسَخَّرَ لَكُمُ الأنْهَـٰـرَ * وَسَخَّرَ لَكُمُ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ دَائِبَيْنِ وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ * وَآتَاكُمْ مِنْ كُلِّ مَا سَأَلْتُمُوهُ وَإِنْ تَعُدُّوا نِعْمَةَ اللَّهِ لا تُحْصُوهَا إِنَّ الإنْسَانَ لَظَلُومٌ كَفَّارٌ)
পবিত্র কুরআনের এ আয়াতগুলো স্পষ্ট জানিয়ে দিল যে, আল্লাহ তায়ালা মানবম-লীর জন্য এ বিশাল বিস্তৃত পৃথিবীতে তার জীবন ধারণের সকল উপকরণ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তার পার্থিব জীবনের জন্য কল্যাণকর, উপকারী, প্রয়োজনীয় সকল আসবাব এখানে অবারিত করে দিয়েছেন। কিন্তু সে নিজেই নিজের কৃতকর্মের মাধ্যমে তার বিনষ্ট সাধন করে। আল্লাহর এ দানকে সে নিজ হাতে নষ্ট করে। নিজের কুফরির মাধ্যমে শিরকের মাধ্যমে, পাপাচারের মাধ্যমে। আল্লাহর নিয়ামতের কৃতঘœতার মাধ্যমে। এগুলোই পৃথিবীতে অর্থনৈতিক সংকটের মূল কারণ।
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মালিক বিন নাবী বলেন-
التخلّف الذي يعاني منه الشرق لا يتحمّل الإسلامُ وزرَه فهذا التخلّف يُعَدُّ عقوبةً مستحقةً من الإسلام على المسلمين لتخلّيهم عنه لا لتمسّكهم به كما يزعمون وصدق الله العظيم (وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِيْ فَإِنَّ لَهُ مَعِيْشَةً ضَنْكاً وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ القِيَامَةِ أَعْمىٰ) سورة "طه" آية "১২৪"...(১০)
প্রাচ্যের লোকের যে পশ্চাদপদতায় রয়েছে এরজন্য তারা নিজেরাই দায়ী। ইসলাম কোনভাবে এর দায় স্বীকার করতে পারে না। এ পশ্চাদপদতা ইসলামের প্রতি তাদের অন্যায় ও জুলুমের সাজা। এ সাজা ইসলামকে ত্যাগ করার কারণে, ইসলামকে গ্রহণ করার কারণে নয়। এর স্বপক্ষে প্রমাণ চাইলে কুরআনের এ আয়াত পাঠ করুন-
ফিরআউন তার বংশধরদের জন্য এ অর্থনৈতিক সংকট, প্রকৃতিক দুর্যোগের কারণে ভূ-সম্পদের ক্ষতি ছিল তাদের জুলুম ও অত্যাচারের কারণে এ দুনিয়াতেই খোদায়ী এক আজাব।
সূরা আ’রাফের ১৩০ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে-
(وَلَقَدْ أَخَذْنَا آلَ فِرْعَوْنَ بِالسِّنِيْنَ وَنَقْصٍ مِّنَ الثَمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُوْنَ)...(১১)
সূরা রূমের ৪১ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
(ظَهَرَ الفَسَادُ فِي البَرِّ وَالبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيْ النَّاسِ لِيُذِيْقَهُمْ بَعْضَ الَّذِيْ عُمِلُوا لعلَّهم يَرْجِعُوْنَ)
অর্থাৎ আকাশ থেকে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যাওয়া, যমীন শুকিয়ে যাওয়া, ফসল উৎপন্ন না হওয়া, উৎপন্ন ফল-ফসলে বরকত না থাকা, এর সবই তাদের কৃতকর্মের ফল। যাতে তারা যে অন্যায় করেছে তার কিছুটা সাজা এ দুনিয়াতেই চেখে যেতে পারে। আর আখেরাতে এর পূর্ণ সাজা তো তাদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছেই। সূরাতুশ শু‘রার ৩০ নং আয়াতে ইরাশাদ হয়েছে-
(وَمَا أَصَابَكُمْ مِّنْ مُصِيْبَةٍ فِبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيْكُمْ)
হাসান বসরী রহ. আকাশে মেঘ দেখলে তার সাথী ও শিষ্যদের বলতেন- فيه والله رزقُكم؛ ولكنَّكم تحرمونه بخطاياكم...(১২)
আল্লাহর শপথ! এতে তোমাদের জন্য রিযিক রয়েছে। কিন্তু তোমরা তোমাদের পাপের কারণে তা থেকে বঞ্চিত হবে।
হযরত ছাওবান রাযি. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন-
(إن العبد ليُحْرَم الرزق بالذنب يصيبه ولا يردّ القدرَ إلا الدعاءُ ولا يزيد في العمر إلا البرُّ)...(১৩)
ইবনে আব্বাস রাযি. বর্ণনা করেন-
ما ظهر الغلول في قوم إلا ألقى الله في قلوبهم الرعبَ ولا فشا الزنا في قوم إلا كثُر فيهم الموت ولا نقص قوم الميكالَ والميزان إلا قطع الله عنهم الرزقَ ولا حكم قوم بغير حق إلا فشا فيهم الدم ولا ختر قوم بالعهد إلاّ سلّط الله عليهم العدوَّ. رواه "مالك" موقوفًا والطبراني مرفوعًا...(১৪)
আবদুল্লাহ বিন উমর রাযি. বর্ণনা করেন-
أقبل علينا رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال (يا معشر المهاجرين، خمس خصال إذا ابتُليْتُم بهن وأعوذ بالله إن تدركوهن لم تظهر الفاحشةُ في قوم قطّ حتى يعلنوا بها إلا فشا فيهم الطاعونُ والأوجاع التي لم تكن مضتْ في أسلافهم الذين مضوا ولم ينقصوا الميكالَ والميزانَ إلا أُخِذُوا بالسنين وشدة المؤونة وجور السلطان عليهم ولم يمنعوا زكاةَ أموالهم إلا مُنِعُوا القطر من السماء ولولا البهائم لم يمطروا ولم ينقضوا عهد الله وعهد رسوله إلاّ سلط الله عليهم عدوًا من غيرهم فأخذوا ببعض ما في أيديهم وما لم تحكم أئمتهم بكتاب الله ويتخيّروا مما أنزل الله إلا جعل الله بأسهم بينهم).
৭. কাফের মুশরিকদের সম্পদের কারণ :
বর্তমান পৃথিবীর বাস্তব অবস্থার দিকে যদি নজর দেই তবে দেখতে পাই কুরআনের আয়াত আমাদেরকে যে সংবাদ দিয়েছে পৃথিবীতে তার বিপরীতটাই ঘটছে। বরং আমরা দেখতে পাই তারা বাহ্যিকভাবে আর্থিক স্বচ্ছলতা, জীবনের সকল উপকরণের পর্যাপ্ততায়, সম্পদ, ক্ষমতা সব কিছুই তাদের হাতে রয়েছে। যা দুর্বল চিত্ত মুমিনদের ঈমানকে নড়বড়ে করে দেয়। ফলশ্রুতিতে তারা আল্লাহ সম্পর্কে বেফাঁশ মন্তব্য করে বসে। তাদের দুর্বল মনে কেবলই দোলা দিয়ে যায়, কেন আল্লাহ তাদেরকে পাকড়াও করেন না? কেন তারা তারা দিনে দিনে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠছে? কেন আল্লাহ মুমিনদেরকে সহায়তা করছেন না? তবে কি (নাউজুবিল্লাহ) আল্লাহ নিজেই হককে প্রতিষ্ঠিত করতে চান না? মুসলিমদেরকে শক্তি যোগাতে চান না? এ জাতীয় হাজারো বাতিল চিন্তা তার মন-মগজকে আচ্ছন্ন করে নেয়। প্রকৃত কথা হল এ সকল চিন্তা ভ্রান্ত বুনিয়াদ ও খোদায়ী নীতি না জানার কারণে হয়ে থাকে। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে দুনিয়াতে যে সুযোগ দিচ্ছেন, তাদের হাতে সম্পদ ও ক্ষমতার যে বাগডোর ছেড়ে দিচ্ছেন তা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের জন্য এক ফিতনা। তাদেরকে পাকড়ও করার জন্য আল্লাহর তায়ালার একটি কৌশল মাত্র। এটিকে সুযোগ দেয়া বলে না; বরং এটি হল ঢিল দেয়া, পাকড়াও করার জন্য টোপ দেয়া। এ জাতীয় প্রশ্নের সংশয় থেকে পরিত্রান পেতে নি¤েœর আয়াতগুলো অনুধাবন করুন।
 সূরা আলে ইমরানের ১৭৮ নং আয়াত-
(وَلا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّمَا نُمْلِي لَهُمْ خَيْرٌ لأنْفُسِهِمْ إِنَّمَا نُمْلِي لَهُمْ لِيَزْدَادُوا إِثْمًا وَلَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ)
 সূরা আলে ইমরানের ১৯৬-১৯৭ নং আয়াত-
(لا يَغُرَّنَّكَ تَقَلُّبُ الَّذِينَ كَفَرُوا فِي الْبِلادِ * مَتَاعٌ قَلِيلٌ ثُمَّ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ وَبِئْسَ الْمِهَادُ﴾
 সূরা লুকমানের ২৪ নং আয়াত- (نُمَتِّعُهُمْ قَلِيْلاً ثـُمَّ نَضْطَرُّهُمْ إِلىٰ عَذَابٍ غَلِيْظٍ)
 সূরা মুমিনূনের ৫৫-৫৬ নং আয়াত- (أيَحْسَبُوْنَ أنَّمَا نُمِدُّهُمْ بِهِ مِنْ مَالْ وَّ بَنِيْنَ نُسَارِعُ لَهُمْ فِيْ الخَيْرَاتِ بَلْ لاَ يَشْعُرُوْنَ)
 সূরা তাওবার ৮৫ নং আয়াত- (وَلاَ يُعْجِبْكَ أَمْوَالُهُمْ وَأَوْلاَدُهُمْ إِنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ أَنْ يُّعَذِّبَهُمْ بِهَا فِيْ الدُّنْيَا وَتَزْهَقَ أَنْفُسْهُمْ وَهُمْ كَافِرُوْنَ)
উকবা বিন আমের রাযি. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন-
(إذا رأيتم الله تعالى يعطي العباد ما يشأون على معاصيهم فإنما ذلك استدراج منه لهم)...(১৬) استدراج كقوله تعالى (فَذَرْنِيْ وَمَنْ يُكَذِّبُ بِهَذَا الحَدِيْثِ سَنَسْتَدْرِجُهُمْ مِنْ حَيْثَ لاَ يَعْلَمُوْنَ) سورة "القلم" آية "৪৪".
৮. দরিদ্রতা কুদরতের একটি হিকমত :
ইসলাম দরিদ্রতাকে ভিন্ন একটি দৃষ্টিতেও মূল্যায়ন করে। তা হল, দরিদ্রতা অনেক সময় ¯্রষ্টার বিশেষ কোন হিকমতের কারণে কিংবা বান্দার কোন কল্যাণেও হয়ে থাকে। সূরাতুশ শু‘রার ২৭ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে-
(وَلَوْ بَسَطَ اللهُ الرِّزْقَ لِعِبَادِهِ لَبَغَوْا فِيْ الأَرْضِ وَلـٰـكِنْ يُنَزِّلُ بِقَدْرِ مَا يَشَاءُ إِنَّهُ بِعِبَادِهِ خَبِيْرٌ بَّصِيْرٌ)
অর্থাৎ, তাদেরকে যদি তাদের প্রয়োজন মাফিক রিযিক প্রদান করা হত, তবে তা তাদেরকে অবাধ্যতা ও পাপাচারে লিপ্ত করত। অন্যের উপর যুলুমের প্রতি অনুপ্রাণীত করত।
কতাদাহ রাযি. বলেন-
خيرُ العيش مالا يُلْهيك ولا يطغيك، وأنه عزوجل يرزقهم من الرزق ما يختاره مما فيه صلاحهم وهو أعلم بذلك فيغني من يستحق الغنى ويفقر من يستحق الفقر
রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন- আল্লাহ তায়ালা বলেন-
(إن من عبادي من لا يصلحه إلا الغني ولو أفقرته لأفسدت عليه دينه وإن من عبادي من لايصلحه إلا الفقر ولو أغنيته لأفسدت عليه دينه)...(১৭)
এ আয়াতের তাফসীরে মুফাসসিরগণ বলেন, এটি আহলে সুফ্ফাদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। তারা যখন রিযিকের প্রশস্ততার তামান্না করেছিল। খাব্বাব ইবনুল আরাত্তি রাযি. বলেন- এটি আমাদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। আমরা বনী নাযির, বনী কুরাইজা, বনী কাইনুকার সম্পদের দিকে নজর দিয়েছি, তারপর তা পাওয়ার আশা করেছি, তখন এ আয়াত নাযিল হয়েছে। আয়াতের অর্থ হল, যদি তাদেরকে রিযিকের স্বচ্ছলতা দেয়া হত,তবে তারা যুলুম ও পাপচারে লিপ্ত হত।
ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন- তাদের স্বেচ্ছাচারিতা হল, তারা একটি গৃহের পর আরেকটি গৃহের, একটি বাহনের পর আরেকটি বাহনের, একটি পোশাকের পর আরেকটি পোশাকের দাবী জানাত। বর্ণিত আছে, এর অর্থ হল- তাদেরকে যদি প্রচুর পরিমান দেয়া হত, তবে তারা এর চেয়ে আরো বেশীর দাবী জানাতো। রাসূলুল্লাহ সা. এর ফরমান এর স্বাক্ষী। নবীজি সা. ইরশাদ করেন-
(لو كان لابن آدم واديان من ذهب لابتغى إليهما ثالثًا)
এটাও বর্ণিত আছে, আমি যদি তাদেরকে সম্পদের দিক থেকে সমান সমান করে দিতাম, তবে একজন অন্যজনের আনুগত্য করতো না। আর এতে করে পৃথিবীর সকল কারখানা বন্ধ হয়ে যেতো।
এখানে রিযিক দ্বারা বৃষ্টি উদ্দেশ্য। অর্থাৎ বৃষ্টি যদি অব্যাহত গতিতে পড়তে থাকত তবে তারা দু’আ করা বন্ধ করে দিত। তাই তিনি কখনও বৃষ্টি বন্ধ করে রাখেন যাতে তারা দু’আ করে। আবার কখনও বৃষ্টি দেন যাতে তারা শুকরিয়া আদায় করে।১৮
সূরা আলাকের ৬-৭ নং আয়াতেও স্বচ্ছলতার সাথে কুফরি ও পাপাচারের বিষয়টির সম্পৃক্ততার কথা আলোচিত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে- (كَلاَّ إِنَّ الإِنْسَانَ لَيَطْغَىٰ أَنْ رَّآهُ اسْتَغْنَىٰ)
এ ছাড়াও কুরআনুল কারীমের অসংখ্য আয়াত, বিগত জাতিগুলোর ঘটনা বর্ণনার মধ্যদিয়ে এ বাস্তবতা আমাদের সামনে তুলে ধরেছে। এ স্বচ্ছলতাই ছিল তাদের জীবনে পাপাচার ও স্বেচ্ছাচারিতার মূল কারণ। স্বচ্ছল জীবনের অধিকারী ব্যক্তিরা যাদেরকে তাদের স্বচ্ছলতা বিলাসবহুল জীবনের জন্য অনুপ্রাণীত করেছে, তারাই ছিল মূলত সকল পাপাচার ও কুফরীর শিরোভাগে। এ কারণেই দেখা যায়, যখনই কোন নবী দাওয়াত নিয়ে কওমের কাছে গিয়েছেন, তারাই সবার আগে তাদের সামনে বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুআইব আ. এর বিরোধিতা করতে গিয়ে তার কওমের বিত্তশালীরা সর্ব প্রথম তাওহিদের আহবানকে নাকচ করেছে। পূর্ব পুরুষদের আচার-আচরণকে আঁকড়ে থাকার জিদ করেছে। নিজেদের আর্থিক লেনদেনে স্বাধিনতার দাবী তুলেছে।
সূরা হুদের ৮৭ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- (قَالُوا يَا شُعَيْبُ أَصَلـٰـوتُكَ تَأْمُرُكَ أَنْ نَتْرُكَ مَا يَعْبُدُ آبَاؤُنَا أَوْ أَنْ نَفْعَلَ فِي أَمْوَالِنَا مَا نَشَاءُ إِنَّكَ لأنْتَ الْحَلِيمُ الرَّشِيدُ)
সূরা সাবার ৩৪-৩৫ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- (وَمَا أَرْسَلْنَا فِي قَرْيَةٍ مِنْ نَذِيرٍ إِلا قَالَ مُتْرَفُوهَا إِنَّا بِمَا أُرْسِلْتُمْ بِهِ كَافِرُونَ * وَقَالُوا نَحْنُ أَكْثَرُ أَمْوَالا وَأَوْلادًا وَمَا نَحْنُ بِمُعَذَّبِينَ)
আবু উমামাহ বাহেলী রাযি. বর্ণনা করেন- ছালাবাহ বিন হাতেব বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কাছে দু’আ করুন তিনি যেন আমাকে সম্পদ দান করেন। নবীজি বললেন, হে ছা’লাবা ওই অল্প সম্পদ যার কৃতজ্ঞতা আদায় করা হয় তা ওই অধিক সম্পদ থেকে উত্তম যার ভার তুমি বহন করতে পারবে না। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কাছে দু’আ করুন তিনি যেন আমাকে সম্পদ দান করেন।
أن "ثعلبة بن حاطب" قال: يا رسول الله ادع الله أن يرزقني مالاً، قال (يا ثعلبه قليل تؤدي شكره خير من كثير لا تطيقه) قال يا رسول الله ادع الله أن يرزقني مالاً قال (يا ثعلبة املك في أسوه أما ترضى أن تكون مثل نبي الله تعالى؟ والذي نفسي بيده لو شئت أن تسير معي الجبال ذهبًا وفضةً لسارتْ) قال والذي بعثك بالحق نبيًا لئن دعوت الله أن يرزقني مالا لأعطين كل ذي حق حقَّه ولأفعلن ولأفعلن... قال رسول الله صلى الله عليه وسلم (اللهم ارزق "ثعلبة" مالاً) فأتخذ غنمًا فنمَتْ كما ينموا الدود فضاقت عليه المدينة فتنحّىٰ عنها فنزل واديًا من أوديتها حتى جعل يصلي الظهر والعصر في الجماعة ويدع ما سواهما ثم نمت وكثُرت فتنحّىٰ حتى ترك الجماعة إلا الجمعة وهي تنمو كما ينمو الدود، وطفق يلقىٰ الركبان يوم الجعمة فيسألهم عن الأخبار في المدينة وسأل رسول الله – عليه الصلاة والسلام – عنه فقال (ما فعل "ثعلبة بن حاطب"؟) فقيل يا رسول الله اتخذ غنمًا فضاقت عليه المدينة وأخبر بأمره كله فقال (يا ويح "ثعلبة" يا ويح "ثعلبة" يا ويح "ثعلبة") وقال وأنزل الله تعالى (خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيْهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ، إنَّ صَلاَتَكَ سَكَنٌ لَهُمْ) سورة "التوبة" آية "১০৩" وأنزل الله فرائضَ الصدقة؛ فبعث رسول الله صلى الله عليه وسلم رجلاً من جهينة ورجلاً من بني سليم على الصدقة وكتب لهم بأخذ الصدقة وأمرهما أن يخرجا فيأخذا من المسلمين، وقال (مرا بثعلبة بن حاطب وبفلان رجل من بني سليم خذا صدقاتهما) فخرجا حتى أتيا "ثعلبة" فسألاه الصدقة وأقرءَاْهُ كتاب رسول الله – صلى الله عليه وسلم – فقال: ما هذه إلا جزية، ما هذه إلا جزية، ما هذه، إلا أخت الجزية! انطلقا حتى تفرّغا ثم تعودا إلى فانطلقا نحو السليمي فسمع بهما فقام إلى خيار أسنان إبله فعزلها للصدقة ثم استقبلهما بها فلما رأوها قالوا: لا يجب عليك ذلك وما نريد نأخذ هذا منك قال: بلىٰ خذوها، فلما فرغا من صدقاتهما رجعا حتى مرّا بثعلبه فسألاه الصدقة فقال: أروني كتابكم فنظر فيه فقال: هذه أخت الجزية، انطلقا حتى أرى رأيي فانطلقا حتى أتيا النبي – عليه الصلاة والسلام – فلما رآهما قال (يا ويح ثعلبة) قبل إن يكلماه ودعا للسليمي بأخبراه بالذي صنع ثعلبة وبالذي صنع السليمي فأنزل الله في ثعلبة (وَمِنْهُمْ مَنْ عَاهَدَ اللَّهَ لَئِنْ آتَـٰـنَا مِنْ فَضْلِهِ لَنَصَّدَّقَنَّ وَلَنَكُونَنَّ مِنَ الصـٰـلِحِينَ * فَلَمَّا آتَاهُمْ مِنْ فَضْلِهِ بَخِلُوا بِهِ وَتَوَلَّوْا وَهُمْ مُعْرِضُونَ * فَأَعْقَبَهُمْ نِفَاقًا فِي قُلُوبِهِمْ إِلَى يَوْمِ يَلْقَوْنَهُ بِمَا أَخْلَفُوا اللَّهَ مَا وَعَدُوهُ وَبِمَا كَانُوا يَكْذِبُونَ) سورة "التوبة" الآيات "৭৫-৭৭" وعند رسول الله – صلى الله عليه وسلم – رجل من أقارب ثعلبة فسمع ما أنزل الله فيه فخرج حتى أتي ثعلبة فقال: لا أم لك يا "ثعلبة" قد أنزل الله فيك كذا فخرج ثعلبة حتى أتي النبي – عليه الصلاة والسلام – فسأله أن يقبل منه صدقتَه فقال (إن الله منعني أن أقبل منك صدقتك) فجعل يحثو التراب على رأسه فقال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – (هذا عملك أمرتك فلم تطعيني) فلما أبىٰ أن يقبل منه شيئًا رجع إلى منزله فلمّا قُبِضَ رسول الله – صلى الله عليه وسلم – جاء بها إلى "أبي بكر الصديق" – رضي الله عنه – فأبىٰ أن يقبلها منه، وجاء بها إلى "عمر بن الخطاب" – رضي الله عنه – فأبىٰ أن يقبلها وتُوُفِّي ثعلبة في خلافة "عثمان" فهذا هو حال ثعلبة قبل أن يغنيه الله من فضله وبعده فأيهما أصلح لدينه؟ حقًا أنه ينطبق عليه الحديث (إن من عبادي لا يصلحه إلا الغنى ولو أفقرته لأفسدت عليه دينه وإن من عبادي من لا يصلحه إلا الفقر ولو أغنيته لأفسدت عليه دينه) فعندما أغناه الله من فضله تخلّف عن صلاة الجماعة ثم تخلّف عن صلاة الجمعة ثم بخل عن إعطاءه زكاة المال حتى وصل به الحال إلى ما وصل عليه...(২০)

৯. কুদরতের হিকমতের কারণে দারিদ্র :
আল্লাহ যখন কাউকে দরিদ্র কিংবা স্বচ্ছল বানান তখন এর পিছনে অন্য একটি কারণ কার্যকর থাকে। তবে সেটি সামষ্টিক জনগোষ্ঠির কল্যাণে। যেমন হতে পারে এর মাধ্যমে দুনিয়ার শৃঙ্খলা বজায় থাকবে। পৃথিবী আবাদ হবে। এটি হল সৃষ্টিশীলতার রহস্য। মানুষের রিযিকের তারতম্যের সৃষ্টিগত রহস্য। যা তাদের সৃষ্টিগত যোগ্যতা, শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতারর পার্থক্যের কারণে তৈরী হয়ে থাকে। যার কারণে একজন অপরজনকে অনুগত করে, একজন অপরজন থেকে কাজ নেয়, নিজের প্রয়োজন মেটায়, যার মাধ্যমে জীবনের চাকা সচল থাকে। সূরা যুখরুফের ৩২ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
(نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُمْ مَعِيشَتَهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَرَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَـٰـتٍ لِيَتَّخِذَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا سُخْرِيًّا)
সুতরাং সৃষ্টিগত স্বভাব-প্রকৃতি এই পার্থক্যের জন্য দায়ী, যে পার্থক্যের কারণেই সমাজের এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে নিজেদের কাজে খাটায়। সমাজ বিনির্মানে অবদান রাখার সুযোগ সৃষ্টি হয়। পৃথিবীর আবাদি টিকে থাকে।
এ পার্থক্য প্রয়োজন পারস্পারিক সহমর্মিতার জন্য। যুলুমের জন্য নয়। সামাজিকতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য। যাতে সকলে মিলে একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মানে অবদান রাখতে পারে। বিচ্ছিন্ন ও শতধা বিভক্ত হওয়ার জন্য নয়। যাতে শাসক ও শাসিতের মাঝে সহযোগীতার সম্পর্ক তৈরী হয়। ধনী-দরিদ্রের মাঝে সুসম্পর্ক তৈরী হয়। এ পার্থক্য এ জন্য নয় যে, ধনী যাতে আরো ধনী হতে পারে। গরিব যাতে আরো গরীব হয়। ধনী যদি তার সম্পদে আল্লাহর হক আদায় না করে তবে এটি দরিদ্র ব্যক্তির দরিদ্রতার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়।
আলী রাযি. বলেন- আল্লাহ তায়ালা ধনীদের সম্পদে ওই পরিমাণ সম্পদ দান করার অপরিহার্য্য করেছেন যা দ্বারা গরীবের প্রয়োজন পুরা হয়। সুতরাং কোন গরীব ব্যক্তি যদি ক্ষুধার্ত থাকে কিংবা বস্ত্রহীন তবে তা ধনী ব্যক্তি তার হক আদায় না করার কারণে। সুতরাং আল্লাহ তায়ালার এ অধিকার রয়েছে কেয়মতের ময়দানে তাকে হিসেবে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন এবং তাকে শাস্তি দিবেন।
আলী রাযি. বলেন- ما جاع فقير إلا بما منعه غني
ধনী ব্যক্তি না দেয়ার কারণেই কেবল গরীবরা ক্ষুধার্ত থাকে।
আমি এমন কোন পর্যাপ্ত সম্পদ দেখিনি যার পাশে হক বিনিষ্ট না হয়েছে। যেমন আল্লাহ তায়ালা কাউকে পরীক্ষা করার জন্য তার রিযিক সংকুচিত করেন, তা কিন্তু অন্য ব্যক্তির শৈথিল্লের মাধ্যমে পুরণ হয়- তার সম্পদে আল্লাহ যে অধিকার সংযুক্ত করেছেন তা যথাযথ আদায় না করার মাধ্যমে। এটিই হল সূরাতুল ফাজরের ১৫-২০ নং আয়াতের মর্ম। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
(فَأَمَّا الإنْسَانُ إِذَا مَا ابْتَلاهُ رَبُّهُ فَأَكْرَمَهُ وَنَعَّمَهُ فَيَقُولُ رَبِّي أَكْرَمَنِ * وَأَمَّا إِذَا مَا ابْتَلاهُ فَقَدَرَ عَلَيْهِ رِزْقَهُ فَيَقُولُ رَبِّي أَهَانَنِ * كَلا بَل لا تُكْرِمُونَ الْيَتِيمَ * وَلا تَحَـٰـضُّوْنَ عَلَى طَعَامِ الْمِسْكِينِ * وَتَأْكُلُونَ التُّرَاثَ أَكْلا لَمًّا * وَتُحِبُّونَ الْمَالَ حُبًّا جَمًّا)
অর্থাৎ, নেয়ামত ও স্বচ্ছলতা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য একটি পরীক্ষা। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা তাকে অন্যের সম্পদের উপর প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছেন যাতে তাকে পরীক্ষা করতে পারেন। অপরদিকে আরেকজনকে অস্বচ্ছলতায় রেখেছেন। যদিও আল্লাহ তায়ালার ইরাদায় তাকে পরীক্ষা করার জন্য অন্যকে অস্বচ্ছল রেখেছেন, তবে বাস্তবে সেটি ওই স্বচ্ছল ব্যক্তির সম্পর্কে আল্লাহ যে অধিকার ফরজ করেছেন তা আদায় না করার কারণে হয়ে থাকে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- (كَلاَّ بَل لاَّ تُكْرِمُوْنَ اليَتِيْمَ)
ধনী ও স্বচ্ছলদের আচরণকে, তাদেরকে অন্যের সম্পদের যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা আদায়ে শৈথিল্যকে দরিদ্র ব্যক্তির দারিদ্রের, ক্ষুধার্ত ব্যক্তির ক্ষুধার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
দারিদ্র বিমোচনে ইসলামী উপায়সমূহ
প্রথম উপায় : শ্রম
দ্বিতীয় উপায় : স্বচ্ছল আত্মীয়-স্বজন কর্তৃক দরিদ্রের ভরণ-পোষণ
তৃতীয় উপায় : যাকাত
চতুর্থ উপায় : বিভিন্ন উৎসের মাধ্যমে ইসলামী কোষাগারের পৃষ্ঠপোষকতা
পঞ্চম উপায় : যাকাত ব্যতীত অন্যান্য আর্থিক খাত
ষষ্ঠ উপায় : ঐচ্ছিক সাদাকা এবং ব্যক্তিগত দান
* * *

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.