![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দরিদ্রতা কুফরী ও গুনাহের ফল :
যে সকল কারণে পৃথিবীতে দারিদ্রের সৃষ্টি হয় তার অন্যতম হল গুনাহ বা পাপাচার। পাপাচারের কারণে আল্লাহর ক্রোধ নেমে আসে। দারিদ্রের মাধ্যমেও আল্লাহ তায়ালার এ ক্রোধের বহিপ্রকাশ ঘটে। তাই দরিদ্রতা সম্পর্কে ইসলামের একটি মুল্যায়ন হল, কুফরি, শিরিক ও গুনাহের কারণেও আল্লাহ তায়ালা বান্দার উপর দারিদ্র চাপিয়ে দেন।
সূরা ইবরাহিমের ৩২-৩৪ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে-
(اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَـٰـوَاتِ وَالأرْضَ وَأَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجَ بِهِ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَكُمْ وَسَخَّرَ لَكُمُ الْفُلْكَ لِتَجْرِيَ فِي الْبَحْرِ بِأَمْرِهِ وَسَخَّرَ لَكُمُ الأنْهَـٰـرَ * وَسَخَّرَ لَكُمُ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ دَائِبَيْنِ وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ * وَآتَاكُمْ مِنْ كُلِّ مَا سَأَلْتُمُوهُ وَإِنْ تَعُدُّوا نِعْمَةَ اللَّهِ لا تُحْصُوهَا إِنَّ الإنْسَانَ لَظَلُومٌ كَفَّارٌ)
পবিত্র কুরআনের এ আয়াতগুলো স্পষ্ট জানিয়ে দিল যে, আল্লাহ তায়ালা মানবম-লীর জন্য এ বিশাল বিস্তৃত পৃথিবীতে তার জীবন ধারণের সকল উপকরণ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তার পার্থিব জীবনের জন্য কল্যাণকর, উপকারী, প্রয়োজনীয় সকল আসবাব এখানে অবারিত করে দিয়েছেন। কিন্তু সে নিজেই নিজের কৃতকর্মের মাধ্যমে তার বিনষ্ট সাধন করে। আল্লাহর এ দানকে সে নিজ হাতে নষ্ট করে। নিজের কুফরির মাধ্যমে শিরকের মাধ্যমে, পাপাচারের মাধ্যমে। আল্লাহর নিয়ামতের কৃতঘœতার মাধ্যমে। এগুলোই পৃথিবীতে অর্থনৈতিক সংকটের মূল কারণ।
সূরা নাহলে (১১২) বর্ণিত হয়েছে-
(وَضَرَبَ اللهُ مَثَلاً قَرْيَةً كَانَتْ آمِنَةً مُطْمَئِنَّةً يَّأْتِيْهَا رِزْقُهَا رَغَدًا مِّنْ كُلِّ مَكَانٍ فَكَفَرَتْ بِأَنْعُمِ اللهِ فَأَذَاقَهَا اللهُ لِبَاسَ الجُوْعِ والخَوْفِ بِمَا كَانُوْ يَصْنَعُوْنَ)
এখানে জনপদ দ্বারা মক্কাতুল মুর্কারামাহ উদ্দেশ্য। পৃথিবীর অন্যান্য জনপদ বাদ দিয়ে মক্কাতুল মুর্কারামাহ দ্বারা উপমা দেয়ার রহস্য হল- এই মক্কায় আল্লাহর ঘর থাকা সত্ত্বেও যখন এর অধিবাসীরা গুনাহে লিপ্ত হল আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দিলেন। সুতরাং অন্যান্য জনপদের তখন কী অবস্থা হতে পারে।
সূরা নিসার ১৬০ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
(فَبِظُلْمٍ مِّنَ الَّذِيْنَ هَادُوْا حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ طَيِّبَاتٍ أُحِلَّتْ لَهُمْ)
ইহুদী জাতি অন্যায় ও পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার কারণে আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর এমন অনেক খাবার হারাম করে দিলেন যা ইতিপূর্বে তাদের জন্য হালাল ছিল।
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মালিক বিন নাবী বলেন-
التخلّف الذي يعاني منه الشرق لا يتحمّل الإسلامُ وزرَه فهذا التخلّف يُعَدُّ عقوبةً مستحقةً من الإسلام على المسلمين لتخلّيهم عنه لا لتمسّكهم به كما يزعمون وصدق الله العظيم (وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِيْ فَإِنَّ لَهُ مَعِيْشَةً ضَنْكاً وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ القِيَامَةِ أَعْمىٰ) سورة "طه" آية "১২৪"...(১০)
প্রাচ্যের লোকের যে পশ্চাদপদতায় রয়েছে এরজন্য তারা নিজেরাই দায়ী। ইসলাম কোনভাবে এর দায় স্বীকার করতে পারে না। এ পশ্চাদপদতা ইসলামের প্রতি তাদের অন্যায় ও জুলুমের সাজা। এ সাজা ইসলামকে ত্যাগ করার কারণে, ইসলামকে গ্রহণ করার কারণে নয়। এর স্বপক্ষে প্রমাণ চাইলে কুরআনের এ আয়াত পাঠ করুন-
ফিরআউন তার বংশধরদের জন্য এ অর্থনৈতিক সংকট, প্রকৃতিক দুর্যোগের কারণে ভূ-সম্পদের ক্ষতি ছিল তাদের জুলুম ও অত্যাচারের কারণে এ দুনিয়াতেই খোদায়ী এক আজাব।
সূরা আ’রাফের ১৩০ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে-
(وَلَقَدْ أَخَذْنَا آلَ فِرْعَوْنَ بِالسِّنِيْنَ وَنَقْصٍ مِّنَ الثَمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُوْنَ)...(১১)
সূরা ত্ব-হার ১২৪ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে-
وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنْكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى (১২৪)
সূরা রূমের ৪১ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
(ظَهَرَ الفَسَادُ فِي البَرِّ وَالبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيْ النَّاسِ لِيُذِيْقَهُمْ بَعْضَ الَّذِيْ عُمِلُوا لعلَّهم يَرْجِعُوْنَ)
অর্থাৎ আকাশ থেকে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যাওয়া, যমীন শুকিয়ে যাওয়া, ফসল উৎপন্ন না হওয়া, উৎপন্ন ফল-ফসলে বরকত না থাকা, এর সবই তাদের কৃতকর্মের ফল। যাতে তারা যে অন্যায় করেছে তার কিছুটা সাজা এ দুনিয়াতেই চেখে যেতে পারে। আর আখেরাতে এর পূর্ণ সাজা তো তাদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছেই।
সূরাতুশ শু‘রার ৩০ নং আয়াতে ইরাশাদ হয়েছে-
(وَمَا أَصَابَكُمْ مِّنْ مُصِيْبَةٍ فِبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيْكُمْ)
হাসান বসরী রহ. আকাশে মেঘ দেখলে তার সাথী ও শিষ্যদের বলতেন-
فيه والله رزقُكم؛ ولكنَّكم تحرمونه بخطاياكم...(১২)
আল্লাহর শপথ! এতে তোমাদের জন্য রিযিক রয়েছে। কিন্তু তোমরা তোমাদের পাপের কারণে তা থেকে বঞ্চিত হবে।
হযরত ছাওবান রাযি. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন-
(إن العبد ليُحْرَم الرزق بالذنب يصيبه ولا يردّ القدرَ إلا الدعاءُ ولا يزيد في العمر إلا البرُّ)...(১৩)
ইবনে আব্বাস রাযি. বর্ণনা করেন-
ما ظهر الغلول في قوم إلا ألقى الله في قلوبهم الرعبَ ولا فشا الزنا في قوم إلا كثُر فيهم الموت ولا نقص قوم الميكالَ والميزان إلا قطع الله عنهم الرزقَ ولا حكم قوم بغير حق إلا فشا فيهم الدم ولا ختر قوم بالعهد إلاّ سلّط الله عليهم العدوَّ. رواه "مالك" موقوفًا والطبراني مرفوعًا...(১৪)
যিনা একটি মারত্মক গুনাহ : দরিদ্রতা তার একটি অভিশাপ
যিনা একটি ইসলামী পরিভাষা। বিবাহ বহির্ভুত নারী পুরুষের শারিরীক সম্পর্ককে যিনা বলা হয়। পৃথিবীর সকল আসমানী ধর্মেই যিনা হারাম ছিল। ইসলামও যিনাকে হারাম করেছে। ব্যভিচারীর জন্য কঠিন শাস্তির বিধান দিয়েছে। ইসলামী আদর্শে যিনা কেবল শারিরীক সম্পর্কের উপর সীমাবদ্ধ নয়। রাসূলুল্লাহ সা. শরীরের প্রতিটি অঙ্গের জন্য যিনা সাব্যস্ত করেছেন। "كتَب اللهُ على كلِّ عُضوٍ حظَّهُ منَ الزِّنا، فالعَينُ تَزني وزِناها النَّظَرُ.."
যিনা একটি জঘন্যতম অন্যায়। আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমে ব্যভিচার, সমকামিতা শিরককে গুনাহের ভয়াবহাতার দিক থেকে সমপর্যায়ের অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন, ব্যভিচার ও সমকামিতার নাপাকি ও নোংরামী শিরক ব্যতীত অন্য সকল গুনাহ থেকে বেশী। শিরক যেমন মানুষের হৃদয়কে নষ্ট করে দেয়, ঈমানকে ধ্বংস করে দেয়, তেমনী ব্যভিচার ও সমকামিতা তার দীন ও হৃদয়কে বরবাদ করে দেয়।
তাই রাসূলুল্লাহ সা. ব্যভিচার ও সমকামিতার সকল পথ রূদ্ধ করে দিয়েছেন। যে সকল কারণে এ হীন পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয় তা থেকে উম্মতকে নিষেধ করেছেন।
ক্স নবীজি সা. ইরশাদ করেন-
أيما امرأة استعطرت فمرت على قوم ليجدوا ريحها فهي زانية ( النسائي وغيره )
যে নারী সুগন্ধি লাগিয়ে এ উদ্দেশ্যে লোকের মধ্যে গমন করে যে, তারা তার সুগন্ধির ঘ্রান পাবে সেব্যভিচারিণী। অন্য এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা. নারীদের গৃহে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন, বলেছেন-
إياكم والدخول على النساء
তখন কোন ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি ভাবির ঘরে প্রবেশ করি তবে? নবীজি সা. বললেন,
الحمو الموت
এই যদি হয় নবীজির নির্দেশ, তবে আমারা কোথায়?
ক্স এমন নির্দেশ আমরা কুরআনুল কারীমেও দেখতে পাই। ইরশাদ হচ্ছে-
وإذا سألتموهن متاعاً فسألوهن من وراء حجاب
এরপর আল্লাহ তায়ালা এ নির্দেশের অন্তরনিহিত কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে ইরশাদ করেন-
ذلكم أطهر لقلوبكم وقلوبهن
কুরআনুল কারীম নারীদের সজ্জিত হয়ে জাহিলী যুগের নারীদের মত বাইরে বের হতে নিষেধ করেছে। পরপুরুষের সামনে নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ করাকে হারাম সাব্যস্ত করেছে। যেহেতু তাতে গুনাহের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। অসভ্যতা ও পাপাচারের দিকে উৎসাহিত করা হয়। দুর্বল ঈমান ও তাকওয়ার অধিকারী লোকদের অন্তরে ব্যভিচারের উদ্দামতা সৃষ্টি হয়। তাই আল্লাহ তায়ালা মুসলিম নারীদেরকে নির্দেশ দিয়ে ইরশাদ করেন-
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاءِ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ( النور৩১ )
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।
এরপর আল্লাহ তায়ালা মুসলিম যুবকদেরকে সুচিতা ও পবিত্রতার পথ অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে যারা বিবাহ করার সামর্থ রাখে না তাদেরকে। ইরশাদ হচ্ছে-
وَلْيَسْتَعْفِفِ الَّذِينَ لَا يَجِدُونَ نِكَاحًا حَتَّى يُغْنِيَهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ ( النور ৩৩ ) .
যারা বিবাহে সামর্থ নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন।
পবিত্র কুরআনে ব্যভিচার ও সমকামিতার প্রতি আহবান করে এমন সকল উপায় উপকরণ থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। যেমন বেপর্দা হওয়া, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, কোমল কণ্ঠে কথা বলা, মাহরাম ব্যতীত আপন গৃহ থেকে বের হওয়া ইত্যাকার বিষয় থেকে সতর্ক করেছে। যেহেতু এ সকল কারণে ব্যভিচার ও ধর্ষণের মত অপরাধ সংঘটিত হয়। যা একটি জাতি বিনষ্ট করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। তাই আমরা দেখতে পাই পবিত্র কুরআনে নবীপতিœ উম্মাহাতুল মুমিনীনকে সরাসরি নির্দেশ দিচ্ছে। আর এর মাধ্যমে উম্মতের সকল নারীকে উদ্দেশ্য করছে। ইরশাদ হচ্ছে-
يَانِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا (৩২) وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا ( الأحزاب ৩২/৩৩ ) .
পবিত্র কুরআনে যিনা প্রসঙ্গ
কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন আয়াতে যিনাকে হারাম সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং যিনাকারীর জন্য কঠিন শাস্তি নির্ধারণ করেছেন।
সূরা আ’রাফের ৩৩ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَنْ تُشْرِكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَأَنْ تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ
আপনি বলে দিনঃ আমার পালনকর্তা কেবলমাত্র অশ্লীল বিষয়সমূহ হারাম করেছেন যা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য এবং হারাম করেছেন গোনাহ, অন্যায়-অত্যাচার আল্লাহর সাথে এমন বস্তুকে অংশীদার করা, তিনি যার কোন, সনদ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর প্রতি এমন কথা আরোপ করা, যা তোমরা জান না
সূরা আনআমের ১৫১ নাং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ
নির্লজ্জতার কাছেও যেয়ো না, প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য,
সূরা বনী ইসরাইলের ৩২ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا
আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।
সূরা নূরের ২-৩ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ وَلَا تَأْخُذْكُمْ بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَائِفَةٌ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ (২) الزَّانِي لَا يَنْكِحُ إِلَّا زَانِيَةً أَوْ مُشْرِكَةً وَالزَّانِيَةُ لَا يَنْكِحُهَا إِلَّا زَانٍ أَوْ مُشْرِكٌ وَحُرِّمَ ذَلِكَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ
ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের প্রত্যেককে একশ’ করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকর কারণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। ব্যভিচারী পুরুষ কেবল ব্যভিচারিণী নারী অথবা মুশরিকা নারীকেই বিয়ে করে এবং ব্যভিচারিণীকে কেবল ব্যভিচারী অথবা মুশরিক পুরুষই বিয়ে করে এবং এদেরকে মুমিনদের জন্যে হারাম করা হয়েছে।
সূরা নূরের ২-৩ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
الْخَبِيثَاتُ لِلْخَبِيثِينَ وَالْخَبِيثُونَ لِلْخَبِيثَاتِ وَالطَّيِّبَاتُ لِلطَّيِّبِينَ وَالطَّيِّبُونَ لِلطَّيِّبَاتِ أُولَئِكَ مُبَرَّءُونَ مِمَّا يَقُولُونَ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ
দুশ্চরিত্রা নারীকূল দুশ্চরিত্র পুরুষকুলের জন্যে এবং দুশ্চরিত্র পুরুষকুল দুশ্চরিত্রা নারীকুলের জন্যে। সচ্চরিত্রা নারীকুল সচ্চরিত্র পুরুষকুলের জন্যে এবং সচ্চরিত্র পুরুষকুল সচ্চরিত্রা নারীকুলের জন্যে। তাদের সম্পর্কে লোকে যা বলে, তার সাথে তারা সম্পর্কহীন। তাদের জন্যে আছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা।
সূরা মুমিনুনের ৫-৬ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ * إِلَّا عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ * فَمَنِ ابْتَغَى وَرَاءَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْعَادُونَ
এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না।
সূরা নূরের ১৯ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।
সূরা ফুরকানের ৬৮-৬৯ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ يَلْقَ أَثَامًا * يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانً
এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের এবাদত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন, সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা একাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। ( ৬৯ ) কেয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুন হবে এবং তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে।
রাসূলুল্লাহর সুন্নায় যিনার নিষেধাজ্ঞা ও শাস্তি
বিবাহিত নারী-পুরুষের যিনার শাস্তি :
আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
عُمَرُ بْنُ حَفْصٍ حَدَّثَنَا أَبِي حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مُرَّةَ عَنْ مَسْرُوقٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لاَ يَحِلُّ دَمُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلاَّ بِإِحْدَى ثَلاَثٍ النَّفْسُ بِالنَّفْسِ وَالثَّيِّبُ الزَّانِي وَالْمَارِقُ مِنْ الدِّينِ التَّارِكُ لِلْجَمَاعَةِ.
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মুসলিম ব্যক্তি যদি সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন ইলাহ্ নেই এবং আমি আল্লাহ্র রাসূল, তিন-তিনটি কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করা বৈধ নয়। (যথা) জানের বদলে জান, বিবাহিত ব্যভিচারী, আর নিজের দ্বীন ত্যাগকারী মুসলিম জামাআত থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া ব্যক্তি।
ফুটনোটঃ
হাদীসে উল্লেখিত “জামাআত” দ্বারা উদ্দেশ্য (আরবি) তথা মুসলমানদের জামা’আত। অর্থাৎ মুরতাদ হওয়ার মাধ্যমে মুসলিমদের থেকে বিছিন্ন হয় অথবা মুরতাদ (স্বধর্মত্যাগী) হওয়ার মাধ্যমে মুসলমানদের ছেড়ে দেয়। সুতরাং (আরবি) শব্দটি ﺗﺎﺭﻙ ও ﺍﻟﻤﻔﺎﺭﻕ শব্দদ্বয়ের বিশেষণ। যা স্বতন্ত্র বিশেষণ নয়। কারণ স্বতন্ত্র বিশেষণ ধরা হলে হাদীসে উল্লেখিত তিনটি বৈশিষ্ট্যের স্থলে চারটি বৈশিষ্ট্য হয়ে যাবে। উল্লেখ্য যে, হাদীসে উল্লেখিত “জামা’আত” দ্বারা “মুসলমানদের মাঝে গড়ে ওঠা ছোট, বড় আঞ্চলিক বা জাতীয় ভিত্তিক কোন সংগঠন” উদ্দেশ্য নেয়া মোটেও ঠিক নয়। বরং তা সহীহ আকীদার পরিপন্থী।
অবিবাহিত নারী-পুরুষের যিনার শাস্তি :
উবাদাহ্ ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
وَحَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى التَّمِيمِيُّ، أَخْبَرَنَا هُشَيْمٌ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ حِطَّانَ، بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الرَّقَاشِيِّ عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " خُذُوا عَنِّي خُذُوا عَنِّي قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لَهُنَّ سَبِيلاً الْبِكْرُ بِالْبِكْرِ جَلْدُ مِائَةٍ وَنَفْىُ سَنَةٍ وَالثَّيِّبُ بِالثَّيِّبِ جَلْدُ مِائَةٍ وَالرَّجْمُ " .
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আমার কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ কর, তোমরা আমার কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ কর যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা মহিলাদের জন্য একটি পন্থা বের করেছেন। যদি কোন অবিবাহিত পুরুষ কোন কুমারী মেয়ের সাথে ব্যভিচার করে তবে একশ’ বেত্রাঘাত কর এবং এক বছরের জন্য নির্বাসন দাও। আর যদি বিবাহিত ব্যক্তি কোন বিবাহিতা মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার করে, তবে তাদেরকে প্রথমত একশ’ বেত্রাঘাত করবে, এরপর পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করবে।
কেয়ামতে যিনার শাস্তি :
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، وَأَبُو مُعَاوِيَةَ عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي حَازِمٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يُزَكِّيهِمْ - قَالَ أَبُو مُعَاوِيَةَ وَلاَ يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ - وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ شَيْخٌ زَانٍ وَمَلِكٌ كَذَّابٌ وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ " .
রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তিন ব্যক্তির সাথে কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তা’আলা কথা বলবেন না, তাদের (গুনাহ থেকে) পবিত্র করবেন না। রাবী আবূ মু’আবিয়াহ্ বলেন, তাদের প্রতি তাকাবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। (এরা হলো) ব্যভিচারী বুড়ো, মিথ্যাবাদী শাসক বা রাষ্ট্রপ্রধান ও অহঙ্কারী দরিদ্র ব্যক্তি।
যিনা করা অবস্থায় মুমিন থাকে না :
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ عُفَيْرٍ، قَالَ حَدَّثَنِي اللَّيْثُ، حَدَّثَنَا عُقَيْلٌ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " لاَ يَزْنِي الزَّانِي حِينَ يَزْنِي وَهْوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَشْرَبُ الْخَمْرَ حِينَ يَشْرَبُ وَهْوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَسْرِقُ حِينَ يَسْرِقُ وَهْوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَنْتَهِبُ نُهْبَةً يَرْفَعُ النَّاسُ إِلَيْهِ فِيهَا أَبْصَارَهُمْ حِينَ يَنْتَهِبُهَا وَهْوَ مُؤْمِنٌ ". وَعَنْ سَعِيدٍ وَأَبِي سَلَمَةَ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مِثْلَهُ إِلاَّ النُّهْبَةَ.
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন ব্যভিচারী মু’মিন অবস্থায় ব্যভিচার করে না এবং কোন মদ্যপায়ী মু’মিন অবস্থায় মদ পান করে না। কোন চোর মু’মিন অবস্থায় চুরি করে না। কোন লুটতরাজকারী মু’মিন অবস্থায় এরূপ লুটতরাজ করে না যে, যখন সে লুটতরাজ করে তখন তার প্রতি লোকজন চোখ তুলে তাকিয়ে থাকে।
সাঈদ ও আবূ সালামা (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অনুরূপ বর্ণিত, তবে তাতে লুটতরাজের উল্লেখ নেই। ফিরাবরী (রহঃ) বলেন, আমি আবূ জা’ফর (রহ)-এর লেখা পান্ডুলিপিতে পেয়েছি যে, আবূ আবদুল্লাহ্ (ইমাম বুখারী) (রহঃ) বলেন, এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, এর অর্থ হল, তার হতে ঈমানের নূর ছিনিয়ে নেয়া হয়।
প্রতিবেশীনির সাথে যিনা সবচেয়ে বড় গুনাহ :
আবদুল্লাহ (ইবনু মাসঊদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
عُثْمَانُ بْنُ أَبِيْ شَيْبَةَ حَدَّثَنَا جَرِيْرٌ عَنْ مَنْصُوْرٍ عَنْ أَبِيْ وَائِلٍ عَنْ عَمْرِو بْنِ شُرَحْبِيْلَ عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ سَأَلْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَيُّ
الذَّنْبِ أَعْظَمُ عِنْدَ اللهِ قَالَ أَنْ تَجْعَلَ لِلهِ نِدًّا وَهُوَ خَلَقَكَ قُلْتُ إِنَّ ذَلِكَ لَعَظِيْمٌ قُلْتُ ثُمَّ أَيُّ قَالَ وَأَنْ تَقْتُلَ وَلَدَكَ تَخَافُ أَنْ يَطْعَمَ مَعَكَ قُلْتُ ثُمَّ أَيُّ قَالَ أَنْ تُزَانِيَ حَلِيْلَةَ جَارِكَ.
তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, কোন্ গুনাহ আল্লাহ্র কাছে সবচেয়ে বড়? তিনি বললেন, আল্লাহ্র জন্য অংশীদার দাঁড় করান। অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি বললাম, এতো সত্যিই বড় গুনাহ। আমি বললাম, তারপর কোন্ গুনাহ? তিনি উত্তর দিলেন, তুমি তোমার সন্তানকে এই ভয়ে হত্যা করবে যে, সে তোমার সঙ্গে আহার করবে। আমি আরয করলাম, এরপর কোন্টি? তিনি উত্তর দিলেন, তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে তোমার ব্যভিচার করা।
যিনা ঈমান হারা করে দেয় :
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ حَدَّثَنَا اللَّيْثُ عَنْ عُقَيْلٍ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ يَزْنِي الزَّانِي حِينَ يَزْنِي وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلاَ يَشْرَبُ الْخَمْرَ حِينَ يَشْرَبُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلاَ يَسْرِقُ السَّارِقُ حِينَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلاَ يَنْتَهِبُ نُهْبَةً يَرْفَعُ النَّاسُ إِلَيْهِ فِيهَا أَبْصَارَهُمْ وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَعَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ وَأَبِي سَلَمَةَ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِمِثْلِهِ إِلاَّ النُّهْبَةَ
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যিনাকার যখন যিনায় লিপ্ত হয় তখন সে মু’মিন থাকে না। কেউ যখন মদপান করে তখন সে মু’মিন থাকে না। যে চুরি করে চুরি করার সময় মু’মিন থাকে না এবং কোন ছিনতাইকারী এমনভাবে ছিনতাই করে যে, মানুষ তার দিকে অসহায় হয়ে তাকিয়ে থাকে; তখন সে মু’মিন থাকে না।
যিনা রোগ-ব্যধি সৃষ্টির কারণ :
আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ خَالِدٍ الدِّمَشْقِيُّ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَبُو أَيُّوبَ، عَنِ ابْنِ أَبِي مَالِكٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِي رَبَاحٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ أَقْبَلَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ فَقَالَ " يَا مَعْشَرَ الْمُهَاجِرِينَ خَمْسٌ إِذَا ابْتُلِيتُمْ بِهِنَّ وَأَعُوذُ بِاللَّهِ أَنْ تُدْرِكُوهُنَّ لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا إِلاَّ فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ وَالأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلاَفِهِمُ الَّذِينَ مَضَوْا . وَلَمْ يَنْقُصُوا الْمِكْيَالَ وَالْمِيزَانَ إِلاَّ أُخِذُوا بِالسِّنِينَ وَشِدَّةِ الْمَؤُنَةِ وَجَوْرِ السُّلْطَانِ عَلَيْهِمْ . وَلَمْ يَمْنَعُوا زَكَاةَ أَمْوَالِهِمْ إِلاَّ مُنِعُوا الْقَطْرَ مِنَ السَّمَاءِ وَلَوْلاَ الْبَهَائِمُ لَمْ يُمْطَرُوا وَلَمْ يَنْقُضُوا عَهْدَ اللَّهِ وَعَهْدَ رَسُولِهِ إِلاَّ سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ غَيْرِهِمْ فَأَخَذُوا بَعْضَ مَا فِي أَيْدِيهِمْ . وَمَا لَمْ تَحْكُمْ أَئِمَّتُهُمْ بِكِتَابِ اللَّهِ وَيَتَخَيَّرُوا مِمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ إِلاَّ جَعَلَ اللَّهُ بَأْسَهُمْ بَيْنَهُمْ "
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেনঃ হে মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেন তোমরা তার সম্মুখীন না হও। যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। যখন কোন জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের উপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, কঠিন বিপদ-মুসীবত এবং যাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। যদি ভু-পৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না। যখন কোন জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের উপর তাদের বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করেন এবং সে তাদের সহায়-সম্পদ সবকিছু কেড়ে নেয়। যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না এবং আল্লাহর নাযীলকৃত বিধানকে গ্রহণ করে না, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দেন।
যিনার ব্যপকতা কেয়ামতের আলামত।
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، قَالَ حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ شُعْبَةَ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ لأُحَدِّثَنَّكُمْ حَدِيثًا لاَ يُحَدِّثُكُمْ أَحَدٌ بَعْدِي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يَقِلَّ الْعِلْمُ، وَيَظْهَرَ الْجَهْلُ، وَيَظْهَرَ الزِّنَا، وَتَكْثُرَ النِّسَاءُ وَيَقِلَّ الرِّجَالُ، حَتَّى يَكُونَ لِخَمْسِينَ امْرَأَةً الْقَيِّمُ الْوَاحِدُ
তিনি বলেন, আমি কি তোমাদের এমন একটি হাদীস বর্ণনা করব যা আমার পর তোমাদের নিকট আর কেউ বর্ণনা করবে না। আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামাতের কিছু আলামত হল : ইল্ম হ্রাস পাবে, অজ্ঞতার প্রসার ঘটবে, ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে, স্ত্র লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে, এমনকি প্রতি পঞ্চাশজন স্ত্রীলোকের জন্য মাত্র একজন পুরুষ হবে পরিচালক।
প্রতিটি অঙ্গরই যিনা আছে।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
حَدَّثَنَا الْحُمَيْدِيُّ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ ابْنِ طَاوُسٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ لَمْ أَرَ شَيْئًا أَشْبَهَ بِاللَّمَمِ مِنْ قَوْلِ أَبِي هُرَيْرَةَ. حَدَّثَنِي مَحْمُودٌ أَخْبَرَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنِ ابْنِ طَاوُسٍ عَنْ أَبِيهِ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ مَا رَأَيْتُ شَيْئًا أَشْبَهَ بِاللَّمَمِ مِمَّا قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ عَلَى ابْنِ آدَمَ حَظَّهُ مِنَ الزِّنَا، أَدْرَكَ ذَلِكَ لاَ مَحَالَةَ، فَزِنَا الْعَيْنِ النَّظَرُ، وَزِنَا اللِّسَانِ الْمَنْطِقُ، وَالنَّفْسُ تَمَنَّى وَتَشْتَهِي، وَالْفَرْجُ يُصَدِّقُ ذَلِكَ كُلَّهُ وَيُكَذِّبُهُ ".
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা বানী আদামের জন্য যিনার একটা অংশ নির্ধারিত রেখেছেন। সে তাতে অবশ্যই জড়িত হবে। চোখের জিনা হলো দেখা, জিহ্বার জিনা হলো কথা বলা, কুপ্রবৃত্তি কামনা ও খাহেশ সৃষ্টি করা এবং যৌনাঙ্গ তা সত্য অথবা মিথ্যা প্রমাণ করে।
ফুটনোটঃ
[১]. আল্লামা খাত্তাবী (রহ.) এ হাদীসের ব্যাখ্যায় লিখেছেনঃদেখা ও কথা বলাকে যিনা বলার কারণ এই যে, দু’টোই হচ্ছে প্রকৃত যিনার ভূমিকা- যিনার মূল কাজের পূর্ববর্তী স্তর। কেননা দৃষ্টি হচ্ছে মনের গোপন জগতের উদ্বোধক আর জিহবা হচ্ছে বাণী বাহক, যৌনাঙ্গ হচ্ছে বাস্তবায়নের হাতিয়ার- সত্য প্রমাণকারী।
হাফিয আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) লিখেছেনঃ দৃষ্টিই হয় যৌন লালসা উদ্বোধক, পয়গাম বাহক। কাজেই এ দৃষ্টির নিয়ন্ত্রণ ও সংরক্ষণ মূলত যৌন অঙ্গেরই সংরক্ষণ। যে ব্যক্তি দৃষ্টিকে অবাধ, উন্মুক্ত ও সর্বগামী করে সে নিজেকে নৈতিক পতন ও ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। মানুষ নৈতিকতার ক্ষেত্রে যত বিপদ ও পদস্খলনেই নিপতিত হয়, দৃষ্টিই হচ্ছে তার সর্ব কিছুর মুল কারণ। কেননা দৃষ্টি প্রথমত আকর্ষণ জাগায়, আকর্ষণ মানুষকে চিন্তা-বিভ্রমে নিমজ্জিত করে, আর এ চিন্তাই মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করে লালসার উত্তেজনা। এ যৌন উত্তেজনা ইচ্ছা শক্তিকে উদ্বুদ্ধ করে, আর ইচ্ছা ও প্রবৃত্তি শক্তিশালী হয়ে দৃঢ় সংকল্পে পরিণত হয়। এ দৃঢ় সংকল্প অধিকতর শক্তি অর্জন করে বাস্তবে ঘটনা সংঘটিত করে। বাস্তবে যখন কোন বাধাই থাকে না, তখন এ বাস্তব অবস্থার সম্মুখীন না হয়ে কারো কোন উপায় থাকে না।
কবরে যিনার শাস্তি :
সামুরাহ ইব্নু জুনদাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রায়ই তাঁর সহাবীদেরকে বলতেন, তোমাদের কেউ কোন স্বপ্ন দেখেছ কি? রাবী বলেন, যাদের ক্ষেত্রে আল্লাহ্র ইচ্ছা, তারা রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে স্বপ্ন বর্ণনা করতেন। তিনি একদিন সকালে আমাদেরকে বললেনঃ গত রাতে আমার কাছে দু’জন আগন্তুক আসল। তারা আমাকে উঠাল। আর আমাকে বলল, চলুন। আমি তাদের সঙ্গে চললাম। ............ .........তিনি বলেন, তারা আমাকে বলল, চলুন, চলুন। আমরা চললাম এবং চুলার মত একটি গর্তের কাছে পৌঁছলাম। রাবী বলেন, আমার মনে হয় যেন তিনি বলেছিলেন, আর তথায় শোরগোলের শব্দ ছিল। তিনি বলেন, আমরা তাতে উঁকি মারলাম, দেখলাম তাতে বেশ কিছু উলঙ্গ নারী ও পুরুষ রয়েছে। আর নিচ থেকে বের হওয়া আগুনের লেলিহান শিখা তাদেরকে স্পর্শ করছে। যখনই লেলিহান শিখা তাদেরকে স্পর্শ করে, তখনই তারা উচ্চস্বরে চিৎকার করে উঠে। তিনি বলেন, আমি তাদেরকে বললাম, এরা কারা? তারা আমাকে বলল, চলুন, চলুন ..........
...........আর এ সকল উলঙ্গ নারী-পুরুষ যারা চুলা সদৃশ গর্তের ভিতর আছে তারা হল ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর দল।
যিনা দারিদ্র আনয়ন করে :
ইমাম আ’মাশ বর্ণনা করেন,
قَالَ ابْنُ أَبِي حَاتِمٍ: حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ، حَدَّثَنَا مَسْلَمَةُ (১) بْنُ عَلِيٍّ، عَنِ الْأَعْمَشِ بِإِسْنَادٍ ذَكَرَهُ قَالَ: "يَا مَعْشَرَ الْمُسْلِمِينَ، إِيَّاكُمْ وَالزِّنَا، فَإِنَّ فِيهِ سِتُّ خِصَالٍ، ثَلَاثَةٌ فِي الدُّنْيَا وَثَلَاثَةٌ فِي الْآخِرَةِ، فَأَمَّا الَّتِي فِي الدُّنْيَا: فَإِنَّهُ يُذهب الْبَهَاءَ، ويُورِث الْفَقْرَ، ويُنقِص الْعُمُرَ. وَأَمَّا الَّتِي فِي الْآخِرَةِ: فَإِنَّهُ يُوجب سَخَط الرَّبِّ، وَسُوءَ الْحِسَابِ، وَالْخُلُودَ فِي النَّارِ". ثُمَّ تَلَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: {لَبِئْسَ مَا قَدَّمَتْ لَهُمْ أَنْفُسُهُمْ أَنْ سَخِطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَفِي الْعَذَابِ هُمْ خَالِدُونَ}
রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, হে মুসলিম সম্প্রদায়! তোমরা যিনা থেকে বেঁচে থাক। কারণ এর ছয়টি সাজা রয়েছে। তিনটি সাজা পৃথিবীতেই প্রদান করা হবে। আর তিনটি সাজা আখেরাতে দেয়া হবে। দুনিয়ার সাজা তিনটি হল- (১) চেহারার কমনীয়তা নষ্ট করে দেয়। (২) দারিদ্র আনয়ন করে। (৩) হায়াত কমিয়ে দেয়। আখেরাতের তিনটি হল- (৪) আল্লাহ পাকের ক্রোধের কারণ। (৫) কঠিন হিসাব। (৬) চিরস্থায়ী জাহান্নাম। এরপর রাসূলুল্লাহ সা. নি¤েœর আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন-لَبِئْسَ مَا قَدَّمَتْ لَهُمْ أَنْفُسُهُمْ أَنْ سَخِطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَفِي الْعَذَابِ هُمْ خَالِدُونَ তারা নিজেদের জন্য যা পাঠিয়েছে তা অবশ্যই মন্দ। তা এই যে, তাদের প্রতি আল্লাহ ক্রোধান্বিত হয়েছেন এবং তারা চিরকাল আযাবে থাকবে।
যিনার কুফল : ইবনু আব্বাস রাযি. বর্ণনা করেনÑ
৭০৯৬ - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بَكْرٍ، ثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ التَّرْجُمَانِيُّ، ثَنَا عَمْرُو بْنُ جُمَيْعٍ، عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ، عَنْ عَطَاءٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রإِيَّاكُمْ وَالزِّنَا، فَإِنَّ فِيهِ أَرْبَعَ خِصَالٍ: يُذْهِبُ الْبَهَاءَ عَنِ الْوَجْهِ، وَيَقْطَعُ الرِّزْقَ، وَيُسْخِطُ الرَّحْمَنَ، وَالْخُلُودُ فِي النَّارِগ্ধ
রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, তোমরা যিনা থেকে বেঁচে থাক। কারণ যিনার চারটি শাস্তি রয়েছে। চেহারার কমনীয়তা দূর করে দেয়। রিযিক বন্ধ করে দেয়। রহমানকে ক্রোধান্বিত করে। চিরস্থায়ী জাহান্নাম অবধারিত করে।
শিরকের পর সবচেয়ে বড় গুনাহ যিনা :হাইছাম বিন মালিক তায়ী বলেন,
ما من ذنبٍ بعد الشركِ، أعظمُ عند اللهِ من نطفةٍ وضعها رجلٌ في رَحِمٍ، لا يَحِلُّ له
রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন-আল্লাহর কাছে শিরকের পর এর চেয়ে বড় কোন গুনাহ নেই। কোন ব্যক্তি তার বীর্যকে এমন জরায়ুতে রাখল যেখানে রাখার অধিাকার তার নেই।
যিনা অভাব ডেকে আনে : আসমা রাযি. বর্ণনা করেন,
رأيت زيد بن عمرو شيخا كبيرا مسندا ظهره إلى الكعبة وهو يقول : ويحكم يا معشر قريش ! إياكم والزنى ، فإنه يورث الفقر
আমি যায়েদ বিন আমরকে বার্ধক্য অবস্থায় কাবা গৃহের সাথে টেক লাগিয়ে বসে থাকতে দেখেছি। তখন তিনি বলছিলেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায়! তোমাদের ধ্বংস হোক! তোমরা যিনা থেকে বেঁচে থাক। কারণ যিনা দারিদ্র্য আনয়ন করে।
ইমাম মুনাভী রহ. ফয়যুল কদীর গ্রন্থে (৪/৭২) বলেন, যিনা চিরস্থায়ী দারিদ্র আনয়ন করে। কারণ স্বচ্ছলতা আল্লাহ তায়ালার একটি দান ও অনুগ্রহ। আর এ দান কেবল ওই ব্যক্তিই লাভ করে যে আল্লাহকে নিয়ে খুশী। আল্লাহর বিধান পেয়ে আনন্দিত। আল্লাহ তায়ালা তো তাকে যিনা থেকে বেঁচে থাকার জন্য বিবাহের ব্যবস্থা করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি নারী সম্ভোগের এ নেয়ামত উপভোগ করার বৈধ পন্থা বিবাহকে বাদ দিয়ে অন্যায় পথে ভোগ করতে চায় সে আল্লাহর দান ও অনুগ্রহকে অবমূল্যায়ন করে। আল্লাহর দান ও অনুগ্রহের যখন অবমূল্যায়ন হয়, তখন আল্লাহ সে দানকে ছিনিয়ে নেন। ফলে স্বচ্ছলতার পর তার জীবনে অস্বচ্ছলতা নেমে আসে। সুতরাং যিনা মানব জীবনে রিযিকের সঙ্কট তৈরী করে।
দরিদ্রতা দু’ধরণের। একটি হল হাতের দরিদ্রতা অপরটি হল অন্তরের দরিদ্রতা। যিনার অশুভ পরিণতি সম্পদের বরকতকে কেড়ে নেয় এবং তাকে দারিদ্র্যর মাঝে নিক্ষেপ করে। কারণ এটি আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি কৃতঘœতা। এবং আল্লাহর দেয়া এ নেয়ামতকে তার অবাধ্যতায় খরছ করা। তাই আল্লাহ তার থেকে এ নেয়ামত ছিনিয়ে নেন। এরপর তাকে অন্তরের দৈন্যে আক্রান্ত করেন। তার ঈমানের দুর্বলতার কারণে। ফলে তার হৃদয় এমন জিনিসের প্রতি মোহতাজ হয় যা তার কাছে নেই। এবং সে এর জন্য ধৈর্যও ধরতে পারে না। ফলে সে সার্বক্ষণিক আযাবে নিপতিত হয়।
ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন, যিনা সকল অনিষ্টের মূল। বহু পাপাচারের সূতিকাগার। যিনার কারণে দীনের স্বল্পতা, খোদাভীতির তুচ্ছতা সৃষ্টি হয়। ব্যক্তিত্ববোধ নষ্ট হয়। আত্মমর্যাদাবোধ চলে যায়। কোন যিনাকারকেই খোদাভীরু অঙ্গিকারপূর্ণকারী পাবে না। না সে কথায় সত্যবাদী না বন্ধুত্বের ওফাদারী রক্ষাকারী। এমনকি সে নিজের পরিবারের মর্যাদাও রক্ষা করে না।
সুতরাং গাদ্দারী, মিথ্যা, শঠতা, নির্লজ্জতা, ব্যক্তিত্ববোধহীনতার মূল কারণ হল এই ব্যভিচার। অন্তর থেকে গাইরত চলে যাওয়া, নিজের জাতি থেকে আত্মমর্যাদাবোধ বিনষ্ট হয়ে যাওয়া যিনার অন্যতম পরিনাম।
যিনার পরিনাম :
ক্স আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টি।
ক্স চেহারার উজ্জলতা বিনষ্ট হওয়া।
ক্স হৃদয় অন্ধকার হওয়া। অন্তর থেকে ঈমানের নূর চলে যাওয়া।
ক্স জীবনে অস্বচ্ছলতা নেমে আসা। একটি আছারে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি অবাধ্যদেরকে ধ্বংস করব। এবং যিনাকারকে দরিদ্র বানিয়ে দিব।
ক্স আত্মমর্যাদা বিনষ্ট হয়। আল্লাহর কাছে ও মানুষের দৃষ্টিতে হেয় প্রতিপন্ন হয়।
ক্স বদনাম হয়। মানব সমাজে যেনাকার হিসেবে আখ্যায়িত হয়।
ক্স মুমিনের খাতা থেকে তার নাম বাদ পড়ে যায়।
ক্স নিজেকে ওই তন্দুরে জ্বলার জন্য সপে দেয় নবীজে স্বপ্নযোগে যা দেখানো হয়েছে।
ক্স অশ্লিলতা মুক্ত জীবন যাপনকারীর জন্য যে নেয়ামতের ঘোষনা রয়েছে তা থেকে বঞ্চিত হয়।
দরিদ্রতা কুফরী ও গুনাহের ফল :
যে সকল কারণে পৃথিবীতে দারিদ্রের সৃষ্টি হয় তার অন্যতম হল গুনাহ বা পাপাচার। পাপাচারের কারণে আল্লাহর ক্রোধ নেমে আসে। দারিদ্রের মাধ্যমেও আল্লাহ তায়ালার এ ক্রোধের বহিপ্রকাশ ঘটে। তাই দরিদ্রতা সম্পর্কে ইসলামের একটি মুল্যায়ন হল, কুফরি, শিরিক ও গুনাহের কারণেও আল্লাহ তায়ালা বান্দার উপর দারিদ্র চাপিয়ে দেন।
সূরা ইবরাহিমের ৩২-৩৪ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে-
(اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَـٰـوَاتِ وَالأرْضَ وَأَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجَ بِهِ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَكُمْ وَسَخَّرَ لَكُمُ الْفُلْكَ لِتَجْرِيَ فِي الْبَحْرِ بِأَمْرِهِ وَسَخَّرَ لَكُمُ الأنْهَـٰـرَ * وَسَخَّرَ لَكُمُ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ دَائِبَيْنِ وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ * وَآتَاكُمْ مِنْ كُلِّ مَا سَأَلْتُمُوهُ وَإِنْ تَعُدُّوا نِعْمَةَ اللَّهِ لا تُحْصُوهَا إِنَّ الإنْسَانَ لَظَلُومٌ كَفَّارٌ)
পবিত্র কুরআনের এ আয়াতগুলো স্পষ্ট জানিয়ে দিল যে, আল্লাহ তায়ালা মানবম-লীর জন্য এ বিশাল বিস্তৃত পৃথিবীতে তার জীবন ধারণের সকল উপকরণ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তার পার্থিব জীবনের জন্য কল্যাণকর, উপকারী, প্রয়োজনীয় সকল আসবাব এখানে অবারিত করে দিয়েছেন। কিন্তু সে নিজেই নিজের কৃতকর্মের মাধ্যমে তার বিনষ্ট সাধন করে। আল্লাহর এ দানকে সে নিজ হাতে নষ্ট করে। নিজের কুফরির মাধ্যমে শিরকের মাধ্যমে, পাপাচারের মাধ্যমে। আল্লাহর নিয়ামতের কৃতঘœতার মাধ্যমে। এগুলোই পৃথিবীতে অর্থনৈতিক সংকটের মূল কারণ।
সূরা নাহলে (১১২) বর্ণিত হয়েছে-
(وَضَرَبَ اللهُ مَثَلاً قَرْيَةً كَانَتْ آمِنَةً مُطْمَئِنَّةً يَّأْتِيْهَا رِزْقُهَا رَغَدًا مِّنْ كُلِّ مَكَانٍ فَكَفَرَتْ بِأَنْعُمِ اللهِ فَأَذَاقَهَا اللهُ لِبَاسَ الجُوْعِ والخَوْفِ بِمَا كَانُوْ يَصْنَعُوْنَ)
এখানে জনপদ দ্বারা মক্কাতুল মুর্কারামাহ উদ্দেশ্য। পৃথিবীর অন্যান্য জনপদ বাদ দিয়ে মক্কাতুল মুর্কারামাহ দ্বারা উপমা দেয়ার রহস্য হল- এই মক্কায় আল্লাহর ঘর থাকা সত্ত্বেও যখন এর অধিবাসীরা গুনাহে লিপ্ত হল আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দিলেন। সুতরাং অন্যান্য জনপদের তখন কী অবস্থা হতে পারে।
সূরা নিসার ১৬০ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
(فَبِظُلْمٍ مِّنَ الَّذِيْنَ هَادُوْا حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ طَيِّبَاتٍ أُحِلَّتْ لَهُمْ)
ইহুদী জাতি অন্যায় ও পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার কারণে আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর এমন অনেক খাবার হারাম করে দিলেন যা ইতিপূর্বে তাদের জন্য হালাল ছিল।
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মালিক বিন নাবী বলেন-
التخلّف الذي يعاني منه الشرق لا يتحمّل الإسلامُ وزرَه فهذا التخلّف يُعَدُّ عقوبةً مستحقةً من الإسلام على المسلمين لتخلّيهم عنه لا لتمسّكهم به كما يزعمون وصدق الله العظيم (وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِيْ فَإِنَّ لَهُ مَعِيْشَةً ضَنْكاً وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ القِيَامَةِ أَعْمىٰ) سورة "طه" آية "১২৪"...(১০)
প্রাচ্যের লোকের যে পশ্চাদপদতায় রয়েছে এরজন্য তারা নিজেরাই দায়ী। ইসলাম কোনভাবে এর দায় স্বীকার করতে পারে না। এ পশ্চাদপদতা ইসলামের প্রতি তাদের অন্যায় ও জুলুমের সাজা। এ সাজা ইসলামকে ত্যাগ করার কারণে, ইসলামকে গ্রহণ করার কারণে নয়। এর স্বপক্ষে প্রমাণ চাইলে কুরআনের এ আয়াত পাঠ করুন-
ফিরআউন তার বংশধরদের জন্য এ অর্থনৈতিক সংকট, প্রকৃতিক দুর্যোগের কারণে ভূ-সম্পদের ক্ষতি ছিল তাদের জুলুম ও অত্যাচারের কারণে এ দুনিয়াতেই খোদায়ী এক আজাব।
সূরা আ’রাফের ১৩০ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে-
(وَلَقَدْ أَخَذْنَا آلَ فِرْعَوْنَ بِالسِّنِيْنَ وَنَقْصٍ مِّنَ الثَمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُوْنَ)...(১১)
সূরা ত্ব-হার ১২৪ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে-
وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنْكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى (১২৪)
সূরা রূমের ৪১ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
(ظَهَرَ الفَسَادُ فِي البَرِّ وَالبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيْ النَّاسِ لِيُذِيْقَهُمْ بَعْضَ الَّذِيْ عُمِلُوا لعلَّهم يَرْجِعُوْنَ)
অর্থাৎ আকাশ থেকে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যাওয়া, যমীন শুকিয়ে যাওয়া, ফসল উৎপন্ন না হওয়া, উৎপন্ন ফল-ফসলে বরকত না থাকা, এর সবই তাদের কৃতকর্মের ফল। যাতে তারা যে অন্যায় করেছে তার কিছুটা সাজা এ দুনিয়াতেই চেখে যেতে পারে। আর আখেরাতে এর পূর্ণ সাজা তো তাদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছেই।
সূরাতুশ শু‘রার ৩০ নং আয়াতে ইরাশাদ হয়েছে-
(وَمَا أَصَابَكُمْ مِّنْ مُصِيْبَةٍ فِبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيْكُمْ)
হাসান বসরী রহ. আকাশে মেঘ দেখলে তার সাথী ও শিষ্যদের বলতেন-
فيه والله رزقُكم؛ ولكنَّكم تحرمونه بخطاياكم...(১২)
আল্লাহর শপথ! এতে তোমাদের জন্য রিযিক রয়েছে। কিন্তু তোমরা তোমাদের পাপের কারণে তা থেকে বঞ্চিত হবে।
হযরত ছাওবান রাযি. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন-
(إن العبد ليُحْرَم الرزق بالذنب يصيبه ولا يردّ القدرَ إلا الدعاءُ ولا يزيد في العمر إلا البرُّ)...(১৩)
ইবনে আব্বাস রাযি. বর্ণনা করেন-
ما ظهر الغلول في قوم إلا ألقى الله في قلوبهم الرعبَ ولا فشا الزنا في قوم إلا كثُر فيهم الموت ولا نقص قوم الميكالَ والميزان إلا قطع الله عنهم الرزقَ ولا حكم قوم بغير حق إلا فشا فيهم الدم ولا ختر قوم بالعهد إلاّ سلّط الله عليهم العدوَّ. رواه "مالك" موقوفًا والطبراني مرفوعًا...(১৪)
যিনা একটি মারত্মক গুনাহ : দরিদ্রতা তার একটি অভিশাপ
যিনা একটি ইসলামী পরিভাষা। বিবাহ বহির্ভুত নারী পুরুষের শারিরীক সম্পর্ককে যিনা বলা হয়। পৃথিবীর সকল আসমানী ধর্মেই যিনা হারাম ছিল। ইসলামও যিনাকে হারাম করেছে। ব্যভিচারীর জন্য কঠিন শাস্তির বিধান দিয়েছে। ইসলামী আদর্শে যিনা কেবল শারিরীক সম্পর্কের উপর সীমাবদ্ধ নয়। রাসূলুল্লাহ সা. শরীরের প্রতিটি অঙ্গের জন্য যিনা সাব্যস্ত করেছেন। "كتَب اللهُ على كلِّ عُضوٍ حظَّهُ منَ الزِّنا، فالعَينُ تَزني وزِناها النَّظَرُ.."
যিনা একটি জঘন্যতম অন্যায়। আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমে ব্যভিচার, সমকামিতা শিরককে গুনাহের ভয়াবহাতার দিক থেকে সমপর্যায়ের অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন, ব্যভিচার ও সমকামিতার নাপাকি ও নোংরামী শিরক ব্যতীত অন্য সকল গুনাহ থেকে বেশী। শিরক যেমন মানুষের হৃদয়কে নষ্ট করে দেয়, ঈমানকে ধ্বংস করে দেয়, তেমনী ব্যভিচার ও সমকামিতা তার দীন ও হৃদয়কে বরবাদ করে দেয়।
তাই রাসূলুল্লাহ সা. ব্যভিচার ও সমকামিতার সকল পথ রূদ্ধ করে দিয়েছেন। যে সকল কারণে এ হীন পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয় তা থেকে উম্মতকে নিষেধ করেছেন।
ক্স নবীজি সা. ইরশাদ করেন-
أيما امرأة استعطرت فمرت على قوم ليجدوا ريحها فهي زانية ( النسائي وغيره )
যে নারী সুগন্ধি লাগিয়ে এ উদ্দেশ্যে লোকের মধ্যে গমন করে যে, তারা তার সুগন্ধির ঘ্রান পাবে সেব্যভিচারিণী। অন্য এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা. নারীদের গৃহে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন, বলেছেন-
إياكم والدخول على النساء
তখন কোন ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি ভাবির ঘরে প্রবেশ করি তবে? নবীজি সা. বললেন,
الحمو الموت
এই যদি হয় নবীজির নির্দেশ, তবে আমারা কোথায়?
ক্স এমন নির্দেশ আমরা কুরআনুল কারীমেও দেখতে পাই। ইরশাদ হচ্ছে-
وإذا سألتموهن متاعاً فسألوهن من وراء حجاب
এরপর আল্লাহ তায়ালা এ নির্দেশের অন্তরনিহিত কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে ইরশাদ করেন-
ذلكم أطهر لقلوبكم وقلوبهن
কুরআনুল কারীম নারীদের সজ্জিত হয়ে জাহিলী যুগের নারীদের মত বাইরে বের হতে নিষেধ করেছে। পরপুরুষের সামনে নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ করাকে হারাম সাব্যস্ত করেছে। যেহেতু তাতে গুনাহের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। অসভ্যতা ও পাপাচারের দিকে উৎসাহিত করা হয়। দুর্বল ঈমান ও তাকওয়ার অধিকারী লোকদের অন্তরে ব্যভিচারের উদ্দামতা সৃষ্টি হয়। তাই আল্লাহ তায়ালা মুসলিম নারীদেরকে নির্দেশ দিয়ে ইরশাদ করেন-
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاءِ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ( النور৩১ )
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।
এরপর আল্লাহ তায়ালা মুসলিম যুবকদেরকে সুচিতা ও পবিত্রতার পথ অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে যারা বিবাহ করার সামর্থ রাখে না তাদেরকে। ইরশাদ হচ্ছে-
وَلْيَسْتَعْفِفِ الَّذِينَ لَا يَجِدُونَ نِكَاحًا حَتَّى يُغْنِيَهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ ( النور ৩৩ ) .
যারা বিবাহে সামর্থ নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন।
পবিত্র কুরআনে ব্যভিচার ও সমকামিতার প্রতি আহবান করে এমন সকল উপায় উপকরণ থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। যেমন বেপর্দা হওয়া, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, কোমল কণ্ঠে কথা বলা, মাহরাম ব্যতীত আপন গৃহ থেকে বের হওয়া ইত্যাকার বিষয় থেকে সতর্ক করেছে। যেহেতু এ সকল কারণে ব্যভিচার ও ধর্ষণের মত অপরাধ সংঘটিত হয়। যা একটি জাতি বিনষ্ট করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। তাই আমরা দেখতে পাই পবিত্র কুরআনে নবীপতিœ উম্মাহাতুল মুমিনীনকে সরাসরি নির্দেশ দিচ্ছে। আর এর মাধ্যমে উম্মতের সকল নারীকে উদ্দেশ্য করছে। ইরশাদ হচ্ছে-
يَانِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا (৩২) وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا ( الأحزاب ৩২/৩৩ ) .
পবিত্র কুরআনে যিনা প্রসঙ্গ
কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন আয়াতে যিনাকে হারাম সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং যিনাকারীর জন্য কঠিন শাস্তি নির্ধারণ করেছেন।
সূরা আ’রাফের ৩৩ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَنْ تُشْرِكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَأَنْ تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ
আপনি বলে দিনঃ আমার পালনকর্তা কেবলমাত্র অশ্লীল বিষয়সমূহ হারাম করেছেন যা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য এবং হারাম করেছেন গোনাহ, অন্যায়-অত্যাচার আল্লাহর সাথে এমন বস্তুকে অংশীদার করা, তিনি যার কোন, সনদ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর প্রতি এমন কথা আরোপ করা, যা তোমরা জান না
সূরা আনআমের ১৫১ নাং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ
নির্লজ্জতার কাছেও যেয়ো না, প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য,
সূরা বনী ইসরাইলের ৩২ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا
আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।
সূরা নূরের ২-৩ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ وَلَا تَأْخُذْكُمْ بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَائِفَةٌ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ (২) الزَّانِي لَا يَنْكِحُ إِلَّا زَانِيَةً أَوْ مُشْرِكَةً وَالزَّانِيَةُ لَا يَنْكِحُهَا إِلَّا زَانٍ أَوْ مُشْرِكٌ وَحُرِّمَ ذَلِكَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ
ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের প্রত্যেককে একশ’ করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকর কারণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। ব্যভিচারী পুরুষ কেবল ব্যভিচারিণী নারী অথবা মুশরিকা নারীকেই বিয়ে করে এবং ব্যভিচারিণীকে কেবল ব্যভিচারী অথবা মুশরিক পুরুষই বিয়ে করে এবং এদেরকে মুমিনদের জন্যে হারাম করা হয়েছে।
সূরা নূরের ২-৩ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
الْخَبِيثَاتُ لِلْخَبِيثِينَ وَالْخَبِيثُونَ لِلْخَبِيثَاتِ وَالطَّيِّبَاتُ لِلطَّيِّبِينَ وَالطَّيِّبُونَ لِلطَّيِّبَاتِ أُولَئِكَ مُبَرَّءُونَ مِمَّا يَقُولُونَ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ
দুশ্চরিত্রা নারীকূল দুশ্চরিত্র পুরুষকুলের জন্যে এবং দুশ্চরিত্র পুরুষকুল দুশ্চরিত্রা নারীকুলের জন্যে। সচ্চরিত্রা নারীকুল সচ্চরিত্র পুরুষকুলের জন্যে এবং সচ্চরিত্র পুরুষকুল সচ্চরিত্রা নারীকুলের জন্যে। তাদের সম্পর্কে লোকে যা বলে, তার সাথে তারা সম্পর্কহীন। তাদের জন্যে আছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা।
সূরা মুমিনুনের ৫-৬ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ * إِلَّا عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ * فَمَنِ ابْتَغَى وَرَاءَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْعَادُونَ
এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না।
সূরা নূরের ১৯ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।
সূরা ফুরকানের ৬৮-৬৯ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ يَلْقَ أَثَامًا * يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانً
এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের এবাদত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন, সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা একাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। ( ৬৯ ) কেয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুন হবে এবং তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে।
রাসূলুল্লাহর সুন্নায় যিনার নিষেধাজ্ঞা ও শাস্তি
বিবাহিত নারী-পুরুষের যিনার শাস্তি :
আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
عُمَرُ بْنُ حَفْصٍ حَدَّثَنَا أَبِي حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مُرَّةَ عَنْ مَسْرُوقٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لاَ يَحِلُّ دَمُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلاَّ بِإِحْدَى ثَلاَثٍ النَّفْسُ بِالنَّفْسِ وَالثَّيِّبُ الزَّانِي وَالْمَارِقُ مِنْ الدِّينِ التَّارِكُ لِلْجَمَاعَةِ.
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মুসলিম ব্যক্তি যদি সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন ইলাহ্ নেই এবং আমি আল্লাহ্র রাসূল, তিন-তিনটি কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করা বৈধ নয়। (যথা) জানের বদলে জান, বিবাহিত ব্যভিচারী, আর নিজের দ্বীন ত্যাগকারী মুসলিম জামাআত থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া ব্যক্তি।
ফুটনোটঃ
হাদীসে উল্লেখিত “জামাআত” দ্বারা উদ্দেশ্য (আরবি) তথা মুসলমানদের জামা’আত। অর্থাৎ মুরতাদ হওয়ার মাধ্যমে মুসলিমদের থেকে বিছিন্ন হয় অথবা মুরতাদ (স্বধর্মত্যাগী) হওয়ার মাধ্যমে মুসলমানদের ছেড়ে দেয়। সুতরাং (আরবি) শব্দটি ﺗﺎﺭﻙ ও ﺍﻟﻤﻔﺎﺭﻕ শব্দদ্বয়ের বিশেষণ। যা স্বতন্ত্র বিশেষণ নয়। কারণ স্বতন্ত্র বিশেষণ ধরা হলে হাদীসে উল্লেখিত তিনটি বৈশিষ্ট্যের স্থলে চারটি বৈশিষ্ট্য হয়ে যাবে। উল্লেখ্য যে, হাদীসে উল্লেখিত “জামা’আত” দ্বারা “মুসলমানদের মাঝে গড়ে ওঠা ছোট, বড় আঞ্চলিক বা জাতীয় ভিত্তিক কোন সংগঠন” উদ্দেশ্য নেয়া মোটেও ঠিক নয়। বরং তা সহীহ আকীদার পরিপন্থী।
অবিবাহিত নারী-পুরুষের যিনার শাস্তি :
উবাদাহ্ ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
وَحَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى التَّمِيمِيُّ، أَخْبَرَنَا هُشَيْمٌ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ حِطَّانَ، بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الرَّقَاشِيِّ عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " خُذُوا عَنِّي خُذُوا عَنِّي قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لَهُنَّ سَبِيلاً الْبِكْرُ بِالْبِكْرِ جَلْدُ مِائَةٍ وَنَفْىُ سَنَةٍ وَالثَّيِّبُ بِالثَّيِّبِ جَلْدُ مِائَةٍ وَالرَّجْمُ " .
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আমার কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ কর, তোমরা আমার কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ কর যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা মহিলাদের জন্য একটি পন্থা বের করেছেন। যদি কোন অবিবাহিত পুরুষ কোন কুমারী মেয়ের সাথে ব্যভিচার করে তবে একশ’ বেত্রাঘাত কর এবং এক বছরের জন্য নির্বাসন দাও। আর যদি বিবাহিত ব্যক্তি কোন বিবাহিতা মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার করে, তবে তাদেরকে প্রথমত একশ’ বেত্রাঘাত করবে, এরপর পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করবে।
কেয়ামতে যিনার শাস্তি :
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، وَأَبُو مُعَاوِيَةَ عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي حَازِمٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يُزَكِّيهِمْ - قَالَ أَبُو مُعَاوِيَةَ وَلاَ يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ - وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ شَيْخٌ زَانٍ وَمَلِكٌ كَذَّابٌ وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ " .
রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তিন ব্যক্তির সাথে কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তা’আলা কথা বলবেন না, তাদের (গুনাহ থেকে) পবিত্র করবেন না। রাবী আবূ মু’আবিয়াহ্ বলেন, তাদের প্রতি তাকাবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। (এরা হলো) ব্যভিচারী বুড়ো, মিথ্যাবাদী শাসক বা রাষ্ট্রপ্রধান ও অহঙ্কারী দরিদ্র ব্যক্তি।
যিনা করা অবস্থায় মুমিন থাকে না :
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ عُفَيْرٍ، قَالَ حَدَّثَنِي اللَّيْثُ، حَدَّثَنَا عُقَيْلٌ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " لاَ يَزْنِي الزَّانِي حِينَ يَزْنِي وَهْوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَشْرَبُ الْخَمْرَ حِينَ يَشْرَبُ وَهْوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَسْرِقُ حِينَ يَسْرِقُ وَهْوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَنْتَهِبُ نُهْبَةً يَرْفَعُ النَّاسُ إِلَيْهِ فِيهَا أَبْصَارَهُمْ حِينَ يَنْتَهِبُهَا وَهْوَ مُؤْمِنٌ ". وَعَنْ سَعِيدٍ وَأَبِي سَلَمَةَ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مِثْلَهُ إِلاَّ النُّهْبَةَ.
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন ব্যভিচারী মু’মিন অবস্থায় ব্যভিচার করে না এবং কোন মদ্যপায়ী মু’মিন অবস্থায় মদ পান করে না। কোন চোর মু’মিন অবস্থায় চুরি করে না। কোন লুটতরাজকারী মু’মিন অবস্থায় এরূপ লুটতরাজ করে না যে, যখন সে লুটতরাজ করে তখন তার প্রতি লোকজন চোখ তুলে তাকিয়ে থাকে।
সাঈদ ও আবূ সালামা (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অনুরূপ বর্ণিত, তবে তাতে লুটতরাজের উল্লেখ নেই। ফিরাবরী (রহঃ) বলেন, আমি আবূ জা’ফর (রহ)-এর লেখা পান্ডুলিপিতে পেয়েছি যে, আবূ আবদুল্লাহ্ (ইমাম বুখারী) (রহঃ) বলেন, এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, এর অর্থ হল, তার হতে ঈমানের নূর ছিনিয়ে নেয়া হয়।
প্রতিবেশীনির সাথে যিনা সবচেয়ে বড় গুনাহ :
আবদুল্লাহ (ইবনু মাসঊদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
عُثْمَانُ بْنُ أَبِيْ شَيْبَةَ حَدَّثَنَا جَرِيْرٌ عَنْ مَنْصُوْرٍ عَنْ أَبِيْ وَائِلٍ عَنْ عَمْرِو بْنِ شُرَحْبِيْلَ عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ سَأَلْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَيُّ
الذَّنْبِ أَعْظَمُ عِنْدَ اللهِ قَالَ أَنْ تَجْعَلَ لِلهِ نِدًّا وَهُوَ خَلَقَكَ قُلْتُ إِنَّ ذَلِكَ لَعَظِيْمٌ قُلْتُ ثُمَّ أَيُّ قَالَ وَأَنْ تَقْتُلَ وَلَدَكَ تَخَافُ أَنْ يَطْعَمَ مَعَكَ قُلْتُ ثُمَّ أَيُّ قَالَ أَنْ تُزَانِيَ حَلِيْلَةَ جَارِكَ.
তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, কোন্ গুনাহ আল্লাহ্র কাছে সবচেয়ে বড়? তিনি বললেন, আল্লাহ্র জন্য অংশীদার দাঁড় করান। অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি বললাম, এতো সত্যিই বড় গুনাহ। আমি বললাম, তারপর কোন্ গুনাহ? তিনি উত্তর দিলেন, তুমি তোমার সন্তানকে এই ভয়ে হত্যা করবে যে, সে তোমার সঙ্গে আহার করবে। আমি আরয করলাম, এরপর কোন্টি? তিনি উত্তর দিলেন, তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে তোমার ব্যভিচার করা।
যিনা ঈমান হারা করে দেয় :
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ حَدَّثَنَا اللَّيْثُ عَنْ عُقَيْلٍ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ يَزْنِي الزَّانِي حِينَ يَزْنِي وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلاَ يَشْرَبُ الْخَمْرَ حِينَ يَشْرَبُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلاَ يَسْرِقُ السَّارِقُ حِينَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلاَ يَنْتَهِبُ نُهْبَةً يَرْفَعُ النَّاسُ إِلَيْهِ فِيهَا أَبْصَارَهُمْ وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَعَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ وَأَبِي سَلَمَةَ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِمِثْلِهِ إِلاَّ النُّهْبَةَ
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যিনাকার যখন যিনায় লিপ্ত হয় তখন সে মু’মিন থাকে না। কেউ যখন মদপান করে তখন সে মু’মিন থাকে না। যে চুরি করে চুরি করার সময় মু’মিন থাকে না এবং কোন ছিনতাইকারী এমনভাবে ছিনতাই করে যে, মানুষ তার দিকে অসহায় হয়ে তাকিয়ে থাকে; তখন সে মু’মিন থাকে না।
যিনা রোগ-ব্যধি সৃষ্টির কারণ :
আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ خَالِدٍ الدِّمَشْقِيُّ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَبُو أَيُّوبَ، عَنِ ابْنِ أَبِي مَالِكٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِي رَبَاحٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ أَقْبَلَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ فَقَالَ " يَا مَعْشَرَ الْمُهَاجِرِينَ خَمْسٌ إِذَا ابْتُلِيتُمْ بِهِنَّ وَأَعُوذُ بِاللَّهِ أَنْ تُدْرِكُوهُنَّ لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا إِلاَّ فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ وَالأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلاَفِهِمُ الَّذِينَ مَضَوْا . وَلَمْ يَنْقُصُوا الْمِكْيَالَ وَالْمِيزَانَ إِلاَّ أُخِذُوا بِالسِّنِينَ وَشِدَّةِ الْمَؤُنَةِ وَجَوْرِ السُّلْطَانِ عَلَيْهِمْ . وَلَمْ يَمْنَعُوا زَكَاةَ أَمْوَالِهِمْ إِلاَّ مُنِعُوا الْقَطْرَ مِنَ السَّمَاءِ وَلَوْلاَ الْبَهَائِمُ لَمْ يُمْطَرُوا وَلَمْ يَنْقُضُوا عَهْدَ اللَّهِ وَعَهْدَ رَسُولِهِ إِلاَّ سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ غَيْرِهِمْ فَأَخَذُوا بَعْضَ مَا فِي أَيْدِيهِمْ . وَمَا لَمْ تَحْكُمْ أَئِمَّتُهُمْ بِكِتَابِ اللَّهِ وَيَتَخَيَّرُوا مِمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ إِلاَّ جَعَلَ اللَّهُ بَأْسَهُمْ بَيْنَهُمْ "
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেনঃ হে মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেন তোমরা তার সম্মুখীন না হও। যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। যখন কোন জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের উপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, কঠিন বিপদ-মুসীবত এবং যাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। যদি ভু-পৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না। যখন কোন জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের উপর তাদের বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করেন এবং সে তাদের সহায়-সম্পদ সবকিছু কেড়ে নেয়। যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না এবং আল্লাহর নাযীলকৃত বিধানকে গ্রহণ করে না, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দেন।
যিনার ব্যপকতা কেয়ামতের আলামত।
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، قَالَ حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ شُعْبَةَ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ لأُحَدِّثَنَّكُمْ حَدِيثًا لاَ يُحَدِّثُكُمْ أَحَدٌ بَعْدِي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يَقِلَّ الْعِلْمُ، وَيَظْهَرَ الْجَهْلُ، وَيَظْهَرَ الزِّنَا، وَتَكْثُرَ النِّسَاءُ وَيَقِلَّ الرِّجَالُ، حَتَّى يَكُونَ لِخَمْسِينَ امْرَأَةً الْقَيِّمُ الْوَاحِدُ
তিনি বলেন, আমি কি তোমাদের এমন একটি হাদীস বর্ণনা করব যা আমার পর তোমাদের নিকট আর কেউ বর্ণনা করবে না। আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামাতের কিছু আলামত হল : ইল্ম হ্রাস পাবে, অজ্ঞতার প্রসার ঘটবে, ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে, স্ত্র লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে, এমনকি প্রতি পঞ্চাশজন স্ত্রীলোকের জন্য মাত্র একজন পুরুষ হবে পরিচালক।
প্রতিটি অঙ্গরই যিনা আছে।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
حَدَّثَنَا الْحُمَيْدِيُّ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ ابْنِ طَاوُسٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ لَمْ أَرَ شَيْئًا أَشْبَهَ بِاللَّمَمِ مِنْ قَوْلِ أَبِي هُرَيْرَةَ. حَدَّثَنِي مَحْمُودٌ أَخْبَرَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنِ ابْنِ طَاوُسٍ عَنْ أَبِيهِ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ مَا رَأَيْتُ شَيْئًا أَشْبَهَ بِاللَّمَمِ مِمَّا قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ عَلَى ابْنِ آدَمَ حَظَّهُ مِنَ الزِّنَا، أَدْرَكَ ذَلِكَ لاَ مَحَالَةَ، فَزِنَا الْعَيْنِ النَّظَرُ، وَزِنَا اللِّسَانِ الْمَنْطِقُ، وَالنَّفْسُ تَمَنَّى وَتَشْتَهِي، وَالْفَرْجُ يُصَدِّقُ ذَلِكَ كُلَّهُ وَيُكَذِّبُهُ ".
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা বানী আদামের জন্য যিনার একটা অংশ নির্ধারিত রেখেছেন। সে তাতে অবশ্যই জড়িত হবে। চোখের জিনা হলো দেখা, জিহ্বার জিনা হলো কথা বলা, কুপ্রবৃত্তি কামনা ও খাহেশ সৃষ্টি করা এবং যৌনাঙ্গ তা সত্য অথবা মিথ্যা প্রমাণ করে।
ফুটনোটঃ
[১]. আল্লামা খাত্তাবী (রহ.) এ হাদীসের ব্যাখ্যায় লিখেছেনঃদেখা ও কথা বলাকে যিনা বলার কারণ এই যে, দু’টোই হচ্ছে প্রকৃত যিনার ভূমিকা- যিনার মূল কাজের পূর্ববর্তী স্তর। কেননা দৃষ্টি হচ্ছে মনের গোপন জগতের উদ্বোধক আর জিহবা হচ্ছে বাণী বাহক, যৌনাঙ্গ হচ্ছে বাস্তবায়নের হাতিয়ার- সত্য প্রমাণকারী।
হাফিয আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) লিখেছেনঃ দৃষ্টিই হয় যৌন লালসা উদ্বোধক, পয়গাম বাহক। কাজেই এ দৃষ্টির নিয়ন্ত্রণ ও সংরক্ষণ মূলত যৌন অঙ্গেরই সংরক্ষণ। যে ব্যক্তি দৃষ্টিকে অবাধ, উন্মুক্ত ও সর্বগামী করে সে নিজেকে নৈতিক পতন ও ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। মানুষ নৈতিকতার ক্ষেত্রে যত বিপদ ও পদস্খলনেই নিপতিত হয়, দৃষ্টিই হচ্ছে তার সর্ব কিছুর মুল কারণ। কেননা দৃষ্টি প্রথমত আকর্ষণ জাগায়, আকর্ষণ মানুষকে চিন্তা-বিভ্রমে নিমজ্জিত করে, আর এ চিন্তাই মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করে লালসার উত্তেজনা। এ যৌন উত্তেজনা ইচ্ছা শক্তিকে উদ্বুদ্ধ করে, আর ইচ্ছা ও প্রবৃত্তি শক্তিশালী হয়ে দৃঢ় সংকল্পে পরিণত হয়। এ দৃঢ় সংকল্প অধিকতর শক্তি অর্জন করে বাস্তবে ঘটনা সংঘটিত করে। বাস্তবে যখন কোন বাধাই থাকে না, তখন এ বাস্তব অবস্থার সম্মুখীন না হয়ে কারো কোন উপায় থাকে না।
কবরে যিনার শাস্তি :
সামুরাহ ইব্নু জুনদাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রায়ই তাঁর সহাবীদেরকে বলতেন, তোমাদের কেউ কোন স্বপ্ন দেখেছ কি? রাবী বলেন, যাদের ক্ষেত্রে আল্লাহ্র ইচ্ছা, তারা রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে স্বপ্ন বর্ণনা করতেন। তিনি একদিন সকালে আমাদেরকে বললেনঃ গত রাতে আমার কাছে দু’জন আগন্তুক আসল। তারা আমাকে উঠাল। আর আমাকে বলল, চলুন। আমি তাদের সঙ্গে চললাম। ............ .........তিনি বলেন, তারা আমাকে বলল, চলুন, চলুন। আমরা চললাম এবং চুলার মত একটি গর্তের কাছে পৌঁছলাম। রাবী বলেন, আমার মনে হয় যেন তিনি বলেছিলেন, আর তথায় শোরগোলের শব্দ ছিল। তিনি বলেন, আমরা তাতে উঁকি মারলাম, দেখলাম তাতে বেশ কিছু উলঙ্গ নারী ও পুরুষ রয়েছে। আর নিচ থেকে বের হওয়া আগুনের লেলিহান শিখা তাদেরকে স্পর্শ করছে। যখনই লেলিহান শিখা তাদেরকে স্পর্শ করে, তখনই তারা উচ্চস্বরে চিৎকার করে উঠে। তিনি বলেন, আমি তাদেরকে বললাম, এরা কারা? তারা আমাকে বলল, চলুন, চলুন ..........
...........আর এ সকল উলঙ্গ নারী-পুরুষ যারা চুলা সদৃশ গর্তের ভিতর আছে তারা হল ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর দল।
যিনা দারিদ্র আনয়ন করে :
ইমাম আ’মাশ বর্ণনা করেন,
قَالَ ابْنُ أَبِي حَاتِمٍ: حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ، حَدَّثَنَا مَسْلَمَةُ (১) بْنُ عَلِيٍّ، عَنِ الْأَعْمَشِ بِإِسْنَادٍ ذَكَرَهُ قَالَ: "يَا مَعْشَرَ الْمُسْلِمِينَ، إِيَّاكُمْ وَالزِّنَا، فَإِنَّ فِيهِ سِتُّ خِصَالٍ، ثَلَاثَةٌ فِي الدُّنْيَا وَثَلَاثَةٌ فِي الْآخِرَةِ، فَأَمَّا الَّتِي فِي الدُّنْيَا: فَإِنَّهُ يُذهب الْبَهَاءَ، ويُورِث الْفَقْرَ، ويُنقِص الْعُمُرَ. وَأَمَّا الَّتِي فِي الْآخِرَةِ: فَإِنَّهُ يُوجب سَخَط الرَّبِّ، وَسُوءَ الْحِسَابِ، وَالْخُلُودَ فِي النَّارِ". ثُمَّ تَلَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: {لَبِئْسَ مَا قَدَّمَتْ لَهُمْ أَنْفُسُهُمْ أَنْ سَخِطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَفِي الْعَذَابِ هُمْ خَالِدُونَ}
রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, হে মুসলিম সম্প্রদায়! তোমরা যিনা থেকে বেঁচে থাক। কারণ এর ছয়টি সাজা রয়েছে। তিনটি সাজা পৃথিবীতেই প্রদান করা হবে। আর তিনটি সাজা আখেরাতে দেয়া হবে। দুনিয়ার সাজা তিনটি হল- (১) চেহারার কমনীয়তা নষ্ট করে দেয়। (২) দারিদ্র আনয়ন করে। (৩) হায়াত কমিয়ে দেয়। আখেরাতের তিনটি হল- (৪) আল্লাহ পাকের ক্রোধের কারণ। (৫) কঠিন হিসাব। (৬) চিরস্থায়ী জাহান্নাম। এরপর রাসূলুল্লাহ সা. নি¤েœর আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন-لَبِئْسَ مَا قَدَّمَتْ لَهُمْ أَنْفُسُهُمْ أَنْ سَخِطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَفِي الْعَذَابِ هُمْ خَالِدُونَ তারা নিজেদের জন্য যা পাঠিয়েছে তা অবশ্যই মন্দ। তা এই যে, তাদের প্রতি আল্লাহ ক্রোধান্বিত হয়েছেন এবং তারা চিরকাল আযাবে থাকবে।
যিনার কুফল : ইবনু আব্বাস রাযি. বর্ণনা করেনÑ
৭০৯৬ - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بَكْرٍ، ثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ التَّرْجُمَانِيُّ، ثَنَا عَمْرُو بْنُ جُمَيْعٍ، عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ، عَنْ عَطَاءٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রإِيَّاكُمْ وَالزِّنَا، فَإِنَّ فِيهِ أَرْبَعَ خِصَالٍ: يُذْهِبُ الْبَهَاءَ عَنِ الْوَجْهِ، وَيَقْطَعُ الرِّزْقَ، وَيُسْخِطُ الرَّحْمَنَ، وَالْخُلُودُ فِي النَّارِগ্ধ
রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, তোমরা যিনা থেকে বেঁচে থাক। কারণ যিনার চারটি শাস্তি রয়েছে। চেহারার কমনীয়তা দূর করে দেয়। রিযিক বন্ধ করে দেয়। রহমানকে ক্রোধান্বিত করে। চিরস্থায়ী জাহান্নাম অবধারিত করে।
শিরকের পর সবচেয়ে বড় গুনাহ যিনা :হাইছাম বিন মালিক তায়ী বলেন,
ما من ذنبٍ بعد الشركِ، أعظمُ عند اللهِ من نطفةٍ وضعها رجلٌ في رَحِمٍ، لا يَحِلُّ له
রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন-আল্লাহর কাছে শিরকের পর এর চেয়ে বড় কোন গুনাহ নেই। কোন ব্যক্তি তার বীর্যকে এমন জরায়ুতে রাখল যেখানে রাখার অধিাকার তার নেই।
যিনা অভাব ডেকে আনে : আসমা রাযি. বর্ণনা করেন,
رأيت زيد بن عمرو شيخا كبيرا مسندا ظهره إلى الكعبة وهو يقول : ويحكم يا معشر قريش ! إياكم والزنى ، فإنه يورث الفقر
আমি যায়েদ বিন আমরকে বার্ধক্য অবস্থায় কাবা গৃহের সাথে টেক লাগিয়ে বসে থাকতে দেখেছি। তখন তিনি বলছিলেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায়! তোমাদের ধ্বংস হোক! তোমরা যিনা থেকে বেঁচে থাক। কারণ যিনা দারিদ্র্য আনয়ন করে।
ইমাম মুনাভী রহ. ফয়যুল কদীর গ্রন্থে (৪/৭২) বলেন, যিনা চিরস্থায়ী দারিদ্র আনয়ন করে। কারণ স্বচ্ছলতা আল্লাহ তায়ালার একটি দান ও অনুগ্রহ। আর এ দান কেবল ওই ব্যক্তিই লাভ করে যে আল্লাহকে নিয়ে খুশী। আল্লাহর বিধান পেয়ে আনন্দিত। আল্লাহ তায়ালা তো তাকে যিনা থেকে বেঁচে থাকার জন্য বিবাহের ব্যবস্থা করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি নারী সম্ভোগের এ নেয়ামত উপভোগ করার বৈধ পন্থা বিবাহকে বাদ দিয়ে অন্যায় পথে ভোগ করতে চায় সে আল্লাহর দান ও অনুগ্রহকে অবমূল্যায়ন করে। আল্লাহর দান ও অনুগ্রহের যখন অবমূল্যায়ন হয়, তখন আল্লাহ সে দানকে ছিনিয়ে নেন। ফলে স্বচ্ছলতার পর তার জীবনে অস্বচ্ছলতা নেমে আসে। সুতরাং যিনা মানব জীবনে রিযিকের সঙ্কট তৈরী করে।
দরিদ্রতা দু’ধরণের। একটি হল হাতের দরিদ্রতা অপরটি হল অন্তরের দরিদ্রতা। যিনার অশুভ পরিণতি সম্পদের বরকতকে কেড়ে নেয় এবং তাকে দারিদ্র্যর মাঝে নিক্ষেপ করে। কারণ এটি আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি কৃতঘœতা। এবং আল্লাহর দেয়া এ নেয়ামতকে তার অবাধ্যতায় খরছ করা। তাই আল্লাহ তার থেকে এ নেয়ামত ছিনিয়ে নেন। এরপর তাকে অন্তরের দৈন্যে আক্রান্ত করেন। তার ঈমানের দুর্বলতার কারণে। ফলে তার হৃদয় এমন জিনিসের প্রতি মোহতাজ হয় যা তার কাছে নেই। এবং সে এর জন্য ধৈর্যও ধরতে পারে না। ফলে সে সার্বক্ষণিক আযাবে নিপতিত হয়।
ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন, যিনা সকল অনিষ্টের মূল। বহু পাপাচারের সূতিকাগার। যিনার কারণে দীনের স্বল্পতা, খোদাভীতির তুচ্ছতা সৃষ্টি হয়। ব্যক্তিত্ববোধ নষ্ট হয়। আত্মমর্যাদাবোধ চলে যায়। কোন যিনাকারকেই খোদাভীরু অঙ্গিকারপূর্ণকারী পাবে না। না সে কথায় সত্যবাদী না বন্ধুত্বের ওফাদারী রক্ষাকারী। এমনকি সে নিজের পরিবারের মর্যাদাও রক্ষা করে না।
সুতরাং গাদ্দারী, মিথ্যা, শঠতা, নির্লজ্জতা, ব্যক্তিত্ববোধহীনতার মূল কারণ হল এই ব্যভিচার। অন্তর থেকে গাইরত চলে যাওয়া, নিজের জাতি থেকে আত্মমর্যাদাবোধ বিনষ্ট হয়ে যাওয়া যিনার অন্যতম পরিনাম।
যিনার পরিনাম :
ক্স আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টি।
ক্স চেহারার উজ্জলতা বিনষ্ট হওয়া।
ক্স হৃদয় অন্ধকার হওয়া। অন্তর থেকে ঈমানের নূর চলে যাওয়া।
ক্স জীবনে অস্বচ্ছলতা নেমে আসা। একটি আছারে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি অবাধ্যদেরকে ধ্বংস করব। এবং যিনাকারকে দরিদ্র বানিয়ে দিব।
ক্স আত্মমর্যাদা বিনষ্ট হয়। আল্লাহর কাছে ও মানুষের দৃষ্টিতে হেয় প্রতিপন্ন হয়।
ক্স বদনাম হয়। মানব সমাজে যেনাকার হিসেবে আখ্যায়িত হয়।
ক্স মুমিনের খাতা থেকে তার নাম বাদ পড়ে যায়।
ক্স নিজেকে ওই তন্দুরে জ্বলার জন্য সপে দেয় নবীজে স্বপ্নযোগে যা দেখানো হয়েছে।
ক্স অশ্লিলতা মুক্ত জীবন যাপনকারীর জন্য যে নেয়ামতের ঘোষনা রয়েছে তা থেকে বঞ্চিত হয়।
©somewhere in net ltd.