![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আম্মার বিন ইয়াসীর রা. এর শাহাদাত : একটি সাধারণ পর্যালোচনা
আম্মার বিন ইয়াসীর রা.। রাসূলুল্লাহ সা. এর এক মজলুম সাহাবী। ইসলাম গ্রহণের কারণে যাদের উপর নির্যাতনের ষ্টিমরোলার নেমে আসে হযরত আম্মার ছিলেন তাদেরে পুরোভাগে। নবীজি সা. মাঝে মাঝে তাঁর এই মজলুম সাহাবীকে দেখতে যেতেন। তার উপর ও তার পুরো পরিবারের উপর যে নির্মম নির্যাতন হতো তা দেখে নবীজি সা. তাদেরকে সান্তনা দিতেন। বলতেন, “হে ইয়াসীর পরিবার ধৈর্য্য ধর, জান্নাতই হল তোমাদের প্রতিশ্রুত ঠিকানা”
নবীজির পবিত্র যবানে হযরত আম্মারের বহু প্রশংসা উচ্চারিত হয়েছে। নবীজি সা. তাঁকে কতটা ভালবাসতেন বিভিন্ন বাক্যে নবীজি সা. ত্যা ব্যাক্তও করেছেন। নবীজি সা. হযরত আম্মারকে নিজের চোখ ও নাকের মধ্যস্থ চামড়ার সাথে তুলনা করেছেন। আম্মারের প্রতি যে শত্রুতা পোষণ করবে আল্লাহও তার প্রতি শত্রুতা পোষণ করবেন’ মর্মে ঘোষণা দিয়েছেন।
মক্কার নির্মম নির্যাতনের যাঁতাকল থেকে মুক্ত হয়ে মুসলমানগণ এখন মদীনায় সস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন। চলছে মসজিদে নবীর নির্মান কাজ। নবীজির সাথে সাহাবায়ে কেরামও অংশ নিয়েছেন আল্লাহর ঘর নির্মানের এ মহান কাজে। হযরত আম্মারও পিছিয়ে নেই অন্যদের থেকে। বরং বলা যায় তিনি একটু এগিয়েই আছেন অন্যদের থেকে। সকলে যেখানে একটি করে পাথর বয়ে আনছে সেখানে হযরত আম্মার দু’টি করে পাথর বয়ে আনছেন। এমনই এক মুহূর্তে-মসজিদে নববী নির্মানের সেই আনন্দঘন কাজের এক ফাঁকে নবীজি তার প্রিয় এই সাহাবী সম্পর্কে একটি ভবিষ্যৎবাণী করলেন। নবীজি সা. তাঁর কাজ দেখে খুশি হলেন। সাথে সাথে আফসোস করে বললেন, তাকে একটি বিদ্রোহী দল হত্যা করবে।
হযরত আম্মার রা.কে ঘিরে নবীজির ওই ভবিষ্যৎবাণী পরবর্তীতে হযরত আম্মার রা. এর শাহাদাত মুসলমানদের সামনে একটি কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। একদিকে হযরত আম্মার সম্পর্কে নবীজির ভবিষ্যৎবাণী আরেক দিকে হযরত আম্মারের শাহাদাত এ দু’টিকে পুঁজি করে সাহাবী বিদ্বেষীরা রাসূলুল্লাহ সা. এর কোন কোন সাহাবী বিশেষ করে হযরত মুআবিয়া রা. এর বিরুদ্ধে বিষোদগার শুরু করে। ফলে আল্লাহর রাসূলের এই প্রিয় সাহাবী, কাতেবে অহির ‘আদালত’ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠে। আর এভাবে সাহাবী বিদ্বেষের মাধ্যমে মূলত ইসলামের শত্রুরা কুরআন ও সুন্নাহকে বাতিল প্রমাণের এক ঘৃণ্য ষঢ়যন্ত্রে মেতে ওঠে।
বক্ষমান প্রবন্ধে আমরা হযরত আম্মারের প্রতি নবীজির ওই ভবিষ্যৎবাণীকে কেন্দ্র করে যে সকল আপত্তি তোলা হয় তার কিছুটা জবাব ও উল্লেখিত হাদিসের সঠিক ব্যখ্যাটা তুলে ধরার চেষ্টা করব।
এ সংক্ষিপ্ত পরিসরে যে বিষয়গুলোর উপর আলোকপাত করতে চাই, তা হল,
ক. সাহাবায়ে কেরামের পরিচয় ও মাকাম।
খ. সাহাবায়ে কেরামের পরস্পর মতপ্রার্থক্য ও আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অবস্থান।
গ. হযরত মুআবিয়া রা. এর মাকাম।
ঘ. হযরত আলী রা. ও হযরত মুআবিয়া রা. এর লড়াইয়ের ভিত্তি কি?
ঙ. হযরত আম্মারের হাদিসের ব্যখ্যা
চ. হাদিসে বর্ণিত বিদ্রোহী দল দ্বারা কারা উদ্দেশ্য?
রাসূলুল্লাহ সা. এর প্রিয় সাহাবিদের মুবারক কাফেলায় হযরত মুআবিয়া রা. হলেন এক মহান ব্যক্তিত্ব। নবী-উদ্যানের এক সুরভিত গোলাব এবং ঈমান ও সত্যের জগতে এক জ্যোতির্ময় তারকা। দরবারে রিসালতের অহী লিপিবদ্ধ করার সুমহান দায়িত্ব তিনি আঞ্জাম দিয়েছেন মক্কা বিজয়ের পূণ্যলগ্নে ইসলাম গ্রহণের পর থেকে কুরআন অবতরণের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। এ মহাসৌভাগ্য সাহাবিগণের মাহফিলে তাঁকে অধিষ্ঠিত করেছিল সম্মান ও মর্যাদার স্বর্ণশিখরে। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সবুজ উদ্যানে। জীবনসায়াহ্নের এই কুড়ানো মানিকের জন্য আল্লাহর রাসূলও প্রাণভরে দু’আ করেছিলেন-
اللهُمَّ اجْعَلْهُ هَادِيًا مَهْدِيًّا ، وَ اهْدِ بِه ـ
হে আল্লাহ! তাকে পথপ্রাপ্ত ও পথপ্রদর্শক করো এবং তার মাধ্যমে মানুষকে হিদায়াত করো।
হযরত আলী রা. এর মর্মান্তিক শাহাদাতের পর তাঁর শাষণকালই ছিলো ইসলামের সোনালী ইতিহাসের উজ¦লতম যুগ। আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে তখন বিরাজমান ছিলো সুখ-শান্তি, স্থিতি ও নিরাপত্তা। বহিঃশত্রুর মনে ছিলো ইসরামী খিলাফতের অপ্রতিহত প্রভাব। ফলে মুসলিম জাহানের সীমান্ত পানে চোখ তুলে তাকানোর সাহস ছিল না তাদের। কিন্তু চরম লজ্জা ও বেদনার বিষয় যে, ইসলামের মুখোশহীন ও মুখোশধারী শত্রুরা নবীজির এই প্রিয় সাহাবির বিরুদ্ধে অপবাদ ও অপপ্রচারের এমন ধুম্র জাল সৃষ্টি করে রেখেছে যে, ইসলামী ইতিহাসের এ স্বর্ণোজ্জল অধ্যায় আজ হারিয়ে গেছে মুসলিম উম্মাহর দৃষ্টিপথ থেকে। এই মজলূম সাহাবির চরিত্রহননে এমন কোন অপকৌশল নেই যা শত্রুরা এবং ‘বন্ধুরা’ ব্যবহার করেনি। সম্ভবতঃ ইসলামী ইতিহাসের আর কোন ব্যক্তিত্বের প্রতি ওরা এতটা নগ্ন ও হিংস্র হয় নি।
মূল গ্রন্থকারকেও ওই সকল ‘বন্ধুদের’ মধ্যে বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। তার ক্ষুরধার কলম সাবলীলভাবেই হযরত মুআবিয়া রা. দিকে সমালোচনার বাণ ছুড়ে দিয়েছে। তাই আমাদের পাঠদের জন্য বিষয়টিকে স্পষ্ট করে দেয়া অপরিহার্য মনে করেছি।
এক.
এ জাতীয় বক্তব্য থেকে কারো অন্তরে হয়ত সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে বিরূপ ধারণার জন্ম নিতে পারে। হাদীসের মূল্য ব্যাখ্যা না জেনে কেবল ভাষ্য থেকে এরূপ ধারণা করা সংগত হবেনা। কারণ সাহাবা কেরাম সম্পর্কে উত্তম ধারণা পোষণ করা ঈমানের জন্য অপরিহার্য্য। যাঁদেরকে আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসূলের সোহবতের জন্য নির্বাচন করেছেন, তারা অবশ্যই শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ সাথি। তাদের সম্পর্কে উত্তম ধারণা পোষণ করা আবশ্যক। কেবন নবীজির সোহবতই নয়; বরং তারাই হলে এ উম্মতের প্রথম জামাত যারা শরীয়তের প্রতিটি বিধানকে কার্যকর করে দেখিয়েছেন। সুতরাং তাদের প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ করার অর্থই হল নিজের ঈমানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। আবু জুরআহ রাযি রহ. বলেন,
: " إذا رأيت الرجل ينتقص أحدا من أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم فاعلم أنه زنديق ؛ وذلك أن الرسول صلى الله عليه وسلم عندنا حق والقرآن حق ، وإنما أدى إلينا هذا القرآنَ والسننَ أصحابُ رسول الله صلى الله عليه وسلم ، وإنما يريدون أن يجرحوا شهودنا ليبطلوا الكتاب والسنة ، والجرح بهم أولى وهم زنادقة
“তুমি যদি কাউকে দেখ যে, সে সাহাবা কেরামের কারো অসম্মান করে কথা বলছে, তবে নিশ্চিত জেনে নিও সে যিন্দিক। কারণ আমাদের কাছে আল্লাহর রাসূল সত্য। কুরআন সত্য। রাসূলুল্লাহ সা. এর সাহাবিরাই কুরআন ও সুন্নাহ আমাদের কাছে পৌঁছিয়েছেন। তার আমাদের স্বাক্ষ্যকে ভুল প্রমাণ করতে চায়। যাতে কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রাসূলুল্লাহকে বাতিল প্রমাণ করা যায়। তাদের বিরোধিতা করাই উত্তম। কারণ তারা যিন্দিক।
দুই.
সাহাবায়ে কেরামের মাঝে যে লড়াই ও মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে এর মূল কারণ ছিল তাদের ইজতিহাদ। প্রত্যেকে নিজেদের ইজতিহাদের ভিত্তিতে নিজের অবস্থানকে হক বলে বিবেচনা করেছেন। এবং বিবেচনার ভিত্তিতেই তারা অস্ত্র ধারণ করেছেন। এ কারণে দেখা যায় যে, যখন তাদের কারো সামনে নিজের ইজতিহাদের ভুল প্রমাণিত হয়েছে, সাথে সাথে তিনি তওবা করেছেন। নিজের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হয়েছেন। আর তওবার মাধ্যমে পূর্বের সকল গুনাহই মোচন হয়ে যায়। বিশেষ করে নবীদের পরে উম্মতের শ্রেষ্ঠ জামাতের ক্ষেত্রে তো তওবা কবুল হওয়া অধিক যুক্তি সংগত। তাদের সম্পর্কে তো আমাদের অবশ্য সুধারণা পোষণ করতে হবে।
তবে তাহকীকি কথা হল এ যুদ্ধের মূল হোতা হল কিছু ফিতনাবাজ লোক। যারা সমাজের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দিয়ে যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এ যুদ্ধে অনেক সাহাবি ইসলাহের চেষ্টা করেছেন। মানুষের মাঝে সমঝোতা তৈরীর কৌশিশ করেছেন। তাদের কাছে নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ হওয়াটা ছিল সবচেয়ে ঘৃণ্য বিষয়। কিন্তু আল্লাহর ফায়সালা রদ করার ক্ষমতা কারো ছিল না।
তিন.
বর্ণিত বাক্যটি হাদিসের অংশ। হাদিসটি ইমাম বুখারী রহ. তার ‘সহিহ’ গ্রন্থে হযরত আবু সায়িদ খুদরি থেকে বর্ণনা করেছেন। হাদিসের পুরো বক্তব্য নিম্নরূপ :
روى البخاري ( ৪৪৭ ) بسنده عَنْ عِكْرِمَةَ قَالَ لِي ابْنُ عَبَّاسٍ وَلِابْنِهِ عَلِيٍّ : انْطَلِقَا إِلَى أَبِي سَعِيدٍ فَاسْمَعَا مِنْ حَدِيثِهِ . فَانْطَلَقْنَا ، فَإِذَا هُوَ فِي حَائِطٍ يُصْلِحُهُ ، فَأَخَذَ رِدَاءَهُ فَاحْتَبَى ، ثُمَّ أَنْشَأَ يُحَدِّثُنَا ، حَتَّى أَتَى على ذِكْرِ بِنَاءِ الْمَسْجِدِ فَقَالَ : : ( كُنَّا نَحْمِلُ لَبِنَةً لَبِنَةً ، وَعَمَّارٌ لَبِنَتَيْنِ لَبِنَتَيْنِ ، فَرَآهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَيَنْفُضُ التُّرَابَ عَنْهُ وَيَقُولُ : وَيْحَ عَمَّارٍ تَقْتُلُهُ الْفِئَةُ الْبَاغِيَةُ، يَدْعُوهُمْ إِلَى الْجَنَّةِ ، وَيَدْعُونَهُ إِلَى النَّارِ . قَالَ يَقُولُ عَمَّارٌ: أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ الْفِتَنِ " .
হযরত ইকরিমা রা. বলেন ইবনে আব্বাস রা. আমাকে ও তার পুত্র আলীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আবু সায়িদ খুদরির নিকট যাও। এবং তার হাদিসটি শ্রবণ করো। আমরা উভয় তার কাছে গেলাম। তিনি একটি প্রাচীর মেরামত করছিলেন। (আমাদেরকে দেখে) তখন তিনি তার চাদর গুছিয়ে নিলেন। এবং হাদিস বর্ণনা করতে শুরু করলেন। এক পর্যায়ে মসজিদ নির্মাণ সংক্রান্ত আলোচনায় প্রবেশ করলেন। বললেন, আমরা একটি করে ইট বহন করছিলাম আর আম্মার দু’টি করে ইট বহন করছিল। তখন নবীজি সা. তাকে দেখলেন। তার শরীর থেকে মাটি ঝেরে দিলেন। বললেন, আম্মারের জন্য আফসোস! তাকে একটি বিদ্রোহী দল তাকে হত্যা করবে। সে তাদেরকে জান্নাতের পথে আহবান করবে, আর তারা তাকে জাহান্নামের দিকে আহবান করবে। আবু সায়িদ খুদরি রা. বলেন, হযরত আম্মার বললেন, আমি ফিতনা থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
এখানে ‘জান্নাতের দিকে আহবান’ বলতে, জান্নাতের কার্যকারণের দিকে আহবান উদ্দেশ্য। অর্থাৎ এমন কাজের দিকে আহবান করা যা সম্পাদনের মাধ্যমে ব্যক্তি জান্নাতি হিসেবে বিবেচিত হবে। এখানে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, আমিরুল মুমিনীন আলি রা. এর আনুগত্যের প্রতি আহবান। পক্ষান্তরে জাহান্নামের প্রতি আহবান বলতে উদ্দেশ্য হল, জাহান্নামের কার্যকারণের প্রতি আহবান। আর সেটি হল খলীফাতুল মুসলিমীনের বিরোধীতা করা। তার বিরূদ্ধে বিদ্রোহ করা।
ইমাম ইবনে কাছির রহ. বলেন,
" وَهَذَا الْحَدِيثُ مِنْ دَلَائِلِ النُّبُوَّةِ حَيْثُ أَخْبَرَ صَلَوَاتُ اللَّهِ وَسَلَامُهُ عَلَيْهِ عَنْ عَمَّارٍ أَنَّهُ تَقْتُلُهُ الْفِئَةُ الْبَاغِيَةُ ، وَقَدْ قَتَلَهُ أَهْلُ الشَّامِ فِي وَقْعَةِ صِفِّينَ ، وَعَمَّارٌ مَعَ عَلِيٍّ وَأَهْلِ الْعِرَاقِ كَمَا سَيَأْتِي بَيَانُهُ وَتَفْصِيلُهُ فِي مَوْضِعِهِ ، وَقَدْ كَانَ عَلِيٌّ أَحَقَّ بِالْأَمْرِ مِنْ مُعَاوِيَةَ .
وَلَا يَلْزَمُ مِنْ تَسْمِيَةِ أَصْحَابِ مُعَاوِيَةَ بُغَاةً : تَكْفِيرُهُمْ ، كَمَا يُحَاوِلُهُ جَهَلَةُ الْفِرْقَةِ الضَّالَّةِ مِنَ الشِّيعَةِ وَغَيْرِهِمْ ; لِأَنَّهُمْ ، وَإِنْ كَانُوا بُغَاةً فِي نَفْسِ الْأَمْرِ، فَإِنَّهُمْ كَانُوا مُجْتَهِدِينَ فِيمَا تَعَاطَوْهُ مِنَ الْقِتَالِ، وَلَيْسَ كُلُّ مُجْتَهِدٍ مُصِيبًا، بَلِ الْمُصِيبُ لَهُ أَجْرَانِ، وَالْمُخْطِئُ لَهُ أَجْرٌ .
এ হাদিসটি নবীজি সা. এর নবুওয়াতের দলীল। যেখানে নবীজি হযরত আম্মার সম্পর্কে ভবিষ্যতবাণী করেছেন যে একটি বিদ্রোহী দল তাকে হত্যা করবে। সিফফিনের যুদ্ধে তিনি সিরিয়াবাসী দ্বারা আক্রান্ত হয়ে নিহত হয়েছেন।
সে সময় হযরত আম্মার রা. হযরত আলী রা. এর পক্ষে ছিলেন। তাঁর ঝা-াতলে লড়াই করেছেন। সামনে যথাস্থানে এর বিস্তারিত বিবরণ আসবে। তবে হযরত আলী রা. হযরত মুবিয়া রা. এর তুলনায় হকের উপর ছিলেন।
মুআবিয়া রা. এর সাথি-সঙ্গিদেরকে ‘বিদ্রোহী’ বলার দ্বারা তাদের ঈমানহারা সাব্যস্ত করা বোঝায় না। শিয়াসহ অনেক গোমরাহ ফেরকা ও অজ্ঞ লোকেরা যেমনটি সাব্যস্ত করার অপচেষ্টা করে থাকে। যদিও তারা বিদ্রোহী ছিলেন তবে তারা লড়াইয়ের ক্ষেত্রে মুজতাহিদও ছিলেন। আর প্রত্যেক মুজতাহিদ তার ইজতিহাদে সঠিক হওয়া আবশ্যক নয়। যিনি ইজতিহাদের মাধ্যমে সঠিক রায়ে পৌঁছতে পারবেন তার জন্য রয়েছে দু’টি প্রতিদান। আর যিনি সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারলেন না তার জন্য রয়েছে একটি প্রতিদান।
এরপর আরো সামনে গিয়ে ইবনে কাছির রহ. বলেন,
وَأَمَّا قَوْلُهُ: ্রيَدْعُوهُمْ إِلَى الْجَنَّةِ، وَيَدْعُونَهُ إِلَى النَّارِগ্ধ : فَإِنَّ عَمَّارًا وَأَصْحَابَهُ يَدْعُونَ أَهْلَ الشَّامِ إِلَى الْأُلْفَةِ وَاجْتِمَاعِ الْكَلِمَةِ ، وَأَهْلُ الشَّامِ يُرِيدُونَ أَنْ يَسْتَأْثِرُوا بِالْأَمْرِ دُونَ مَنْ هُوَ أَحَقُّ بِهِ ، وَأَنْ يَكُونَ النَّاسُ أَوْزَاعًا عَلَى كُلِّ قُطْرٍ إِمَامٌ بِرَأْسِهِ ، وَهَذَا يُؤَدِّي إِلَى افْتِرَاقِ الْكَلِمَةِ ، وَاخْتِلَافِ الْأُمَّةِ، فَهُوَ لَازِمُ مَذْهَبِهِمْ وَنَاشِئٌ عَنْ مَسْلَكِهِمْ ، وَإِنْ كَانُوا لَا يَقْصِدُونَهُ. وَاللَّهُ أَعْلَمُ ." .انتهى من "البداية والنهاية" (৪/৫৩৮(
আর নবীজির কওল, ‘সে তাদেরকে জান্নাতের দিকে ডাকবে, তারা তাকে জাহান্নামের দিকে ডাকবে” এর ব্যাখ্যা হল, আম্মার ও তাঁর সাথিরা সিরিয়াবাসীকে বন্ধুত্ব ও ঐক্যের জন্য আহবান করবেন। কিন্তু সিরিয়াবাসী চাবে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে। খেলাফতের বিষয়ে যিনি অধিক হকদার তাকে বাদ দিয়ে অন্যকে সে আসনে বসাতে। তার চাবে মানুষ যাতে দ্বিধাবিভক্ত থাকে। প্রত্যেক অঞ্চলে একজন করে ইমাম থাকে। এটা ঐক্যকে বিনষ্ট করবে। উম্মতকে দ্বিধাবিভক্ত করবে। এটা তাদের মাযহাবের আবশ্যকীয় ফল। তাদের কর্মকা- থেকেই সৃষ্টি হবে। যদিও তারা তা চাবে না। আল্লাহই ভাল জানেন। আল বিদায়া ওয়ান নিহাইয়াহ-৪/৫৩৮
হাফেজ ইবনে হাজার রহ. এ হাদিসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন,
" فَإِنْ قِيلَ : كَانَ قَتْلُهُ بِصِفِّينَ ، وَهُوَ مَعَ عَلِيٍّ ، وَالَّذِينَ قَتَلُوهُ مَعَ مُعَاوِيَةَ ، وَكَانَ مَعَهُ جَمَاعَةٌ مِنَ الصَّحَابَةِ : فَكَيْفَ يَجُوزُ عَلَيْهِمُ الدُّعَاءُ إِلَى النَّارِ ؟
فَالْجَوَابُ : أَنَّهُمْ كَانُوا ظَانِّينَ أَنَّهُمْ يَدْعُونَ إِلَى الْجَنَّةِ ، وَهُمْ مُجْتَهِدُونَ لَا لَوْمَ عَلَيْهِمْ فِي اتِّبَاعِ ظُنُونِهِمْ ، فَالْمُرَادُ بِالدُّعَاءِ إِلَى الْجَنَّةِ : الدُّعَاءُ إِلَى سَبَبِهَا وَهُوَ طَاعَةُ الْإِمَامِ ، وَكَذَلِكَ كَانَ عَمَّارٌ يَدْعُوهُمْ إِلَى طَاعَةِ عَلِيٍّ ، وَهُوَ الْإِمَامُ الْوَاجِبُ الطَّاعَةُ إِذْ ذَاكَ ، وَكَانُوا هُمْ يَدْعُونَ إِلَى خِلَافِ ذَلِكَ ، لَكِنَّهُمْ معذورون للتأويل الَّذِي ظهر لَهُم " .
انتهى من "فتح الباري" (১/ ৫৪২) ، وينظر : "مجموع فتاوى شيخ الإسلام" (৪/৪৩৭) .
যদি বলা হয়, তার নিহত হওয়ার ঘটনাটি সিফফিনে ঘটেছে। আর তিনি আলী রা. এর সাথে ছিলেন। যারা তাকে হত্যা করেছে তারা মুআবিয়া রা. এর সাথে ছিল। উপরুন্ত তাঁর সাথে সাহাবায়ে কেরামের একটি দলও ছিল। তবে ‘জাহান্নামের দিকে আহবান করছে” কথাটি কিভাবে তাদের উপর প্রযোজ্য হতে পারে?
এর উত্তর হল, তারা এ ধারণা পোষণ করেছিলেন যে তারা জান্নাতের পথেই আহবান করছেন। তারা তাদের এ জাতীয় ধারণার ক্ষেত্রে ইজতিহাদ করেছিলেন। তারা তাদের ইজতিহাদ ভিত্তিক ধারণার অনুসরণ করার কারণে তাদের উপর কোন তিরস্কার করা বৈধ নয়। আর জান্নাতের প্রতি আহবান দ্বারা উদ্দেশ্য, জান্নাতের কার্যকারণের প্রতি আহবান করা। আর সেটি হল খলীফার আনুগত্য করা। আর এভাবেই হযরত আম্মার তাদেরকে আলী রা. এর আনুগত্যের দিকে আহাবন করেছিলেন। কেননা, হযরত আলী রা. ছিলেন সে সময় খলীফাতুল মুসলিমীন। তাঁর আনুগত্য করা সকলের জন্য ওয়াজিব ছিল। আর তারা এর বিপরীত দিকে আহবান করছিল। তবে এক্ষেত্রে তারা মা’জুর ছিলেন, তাদের ইজতেহাদের কারণে।
সুতরাং আমাদের জন্য কর্তব্য হল এটা নির্ধারণ করা কে ইজতিহাদি ভুলের শিকার আর কে ইচ্ছা করে ফিতনা ছড়াতে চায়?
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا فَإِنْ بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّى تَفِيءَ إِلَى أَمْرِ اللَّهِ فَإِنْ فَاءَتْ فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ * إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ ) الحجرات/ ৯- ১০.
অর্থ : যদি মুমিনদের দুই দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর চড়াও হয়, তবে তোমরা আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে; যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি ফিরে আসে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়ানুগ পন্থায় মীমাংসা করে দিবে এবং ইনছাফ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ ইনছাফকারীদেরকে পছন্দ করেন। ( ১০ ) মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে-যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।
আয়াতের ভাষ্য থেকে স্পষ্টতই বুঝে আসে যে দু’দল মুমিনের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হওয়া সম্ভব। আর এ লড়াইয়ের কারণে কোন দল তাদের ঈমান হারা হয়ে যাবে না। এক দল আরেক দলের বিরূদ্ধে অস্ত্র ধারণ করার কারণে তারা ঈমানের বলয় থেকে বেরিয়ে যাবে না। কারণ এর অব্যবহিত পরেই আল্লাহ তায়ালা উভয় দলকে মুমিন হিসেবে উল্লেখ করে উভয় দলকে ভাই ভাই বলে ঘোষণা করেছেন। এবং মুসলমানদেরকে উভয় দলের মাঝে ইসলাহ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন,
" فَبَيَّنَ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى أَنَّهُمْ مَعَ الِاقْتِتَالِ ، وَبَغْيِ بَعْضِهِمْ عَلَى بَعْضٍ : مُؤْمِنُونَ إخْوَةٌ ، وَأَمَرَ بِالْإِصْلَاحِ بَيْنَهُمْ ؛ فَإِنْ بَغَتْ إحْدَاهُمَا بَعْدَ ذَلِكَ : قُوتِلَتْ الْبَاغِيَةُ ، وَلَمْ يَأْمُرْ بِالِاقْتِتَالِ ابْتِدَاءً.
وَأَخْبَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّ الطَّائِفَةَ الْمَارِقَةَ [ الخوارج ] : يَقْتُلُهَا أَدْنَى الطَّائِفَتَيْنِ إلَى الْحَقِّ ، فَكَانَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ وَمَنْ مَعَهُ هُمْ الَّذِينَ قَاتَلُوهُمْ .
فَدَلَّ كَلَامُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى أَنَّهُمْ أَدْنَى إلَى الْحَقِّ مِنْ مُعَاوِيَةَ وَمَنْ مَعَهُ ، مَعَ إيمَانِ الطَّائِفَتَيْنِ " انتهى من مجموع الفتاوى (২৫/ ৩০৫-৩০৬) .
অর্থ : আল্লাহ তায়ালা এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তারা পরস্পর লড়াই করা সত্ত্বেও, তাদের এক দল আরেক দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার পরও তারা মুমিন। তারা পরস্পরে ভাই ভাই। তাদের আপসের মধ্যে সংশোধন করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপরও যদি তাদের কোন দল অপর দলের উপর স্বেচ্ছাচারী হয়, তবে বিদ্রোহী দলকে হত্যা করা হবে। তবে আল্লাহ তায়ালা প্রথমেই হত্যার নির্দেশ দেন নি।
নবীজি সা. আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, বিপথগামী দলটিকে (খাওয়ারেজ) দু’দলের মধ্যে হকের নিকটবর্তী দল হত্যা করবে। হযরত আলী রা. ও তাঁর সাথিরা তাদেরকে হত্যা করেছে।
নবীজির এ বক্তব্য থেকে বোঝা যায় যে, উভয় দলের ঈমানদার হওয়ার সাথে সাথে হযরত আলী রা. হযরত মুআবিয়ার তুলনায় হকের উপর ছিলেন।
হযরত আবু সায়িদ খুদরি রা. বর্ণনা করেন,
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ( تَمْرُقُ مَارِقَةٌ عِنْدَ فُرْقَةٍ مِنْ الْمُسْلِمِينَ يَقْتُلُهَا أَوْلَى الطَّائِفَتَيْنِ بِالْحَقِّ ) رواه مسلم ( ১০৬৪)
রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, মুসলমাদের বিভক্তির সময় একটি ধর্মত্যাগী দলের উদ্ভব হবে। দু’দলের মধ্যে হকের নিকটবর্তী দল তাদেরকে হত্যা করবে।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. এর হাদিসের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন,
" فهذا الحديث الصحيح دليل على أن كلتا الطائفتين المقتتلتين - علي وأصحابه ، ومعاوية وأصحابه على حق ، وأن عليّاً وأصحابه كانوا أقرب إلى الحق من معاوية وأصحابه " . انتهى من" مجموع الفتاوى " ( ৪ / ৪৬৭ ) ، وينظر أيضا : "مجموع الفتاوى" (৪/৪৩৭-৪৩৮(
এ সহিহ হাদিসটি এ ব্যাপারে প্রমাণ বহন করে যে লড়াইরত উভয় দল- হযরত আলী ও তাঁর সঙ্গিরা এবং মুআবিয়া রা. ও তার সঙ্গিরা- হকের উপরে রয়েছেন। তবে আলী রা. ও তার সাথিরা মুআবিয়া রা. ও তার সাথিদের তুলনায় হকের অধিক নিকটে।
সারকথা ويدعونه إلى النار দ্বারা কুফরি বোঝায় না। যারা তাদের উপর কুফরির হুকুম আরোপ করে তারা অবশ্যই গোমরাহী ও মুর্খতার চূড়ান্তে বসবাস করছে। বরং হাদিসটি সতর্কতামূলক হাদিসের অন্তর্ভ্ক্তূ। যেমন বিভিন্ন হাদিসে সুদখোরকে জাহান্নামী বলা হয়েছে, ইয়াতিমের মাল আত্মসাৎকারীকে জাহান্নামী বলা হয়েছে। এর দ্বারা কেবল কাজটি হারাম হওয়া বোঝায়। তাদের কাফের হওয়া প্রমাণ হয় না। তেমনি উল্লেখিত বর্ণনার কারণে কোন দলকে গোমরাহ বা সত্যবিচ্যুত আখ্যা দেয়া, এমনকি ঈমান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুকুম আরোপ করা কোনভাবেই সংগত নয়।
অনেক আহলে ইলম ( ويدعونه إلى النار ) বক্তব্যটিকে খারেজি সম্প্রদায়ের ব্যাপারে বলে মত দিয়েছেন।
ইবনে বাত্তাল রহ. বলেন,
" قوله: (يدعوهم إلى الجنة ويدعونه إلى النار) ، إنما يصح ذلك في الخوارج الذين بعث إليهم علىّ عمارًا ليدعوهم إلى الجماعة ، وليس يصح في أحد من الصحابة؛ لأنه لا يجوز لأحد من المسلمين أن يتأول عليهم إلا أفضل التأويل ؛ لأنهم أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم الذين أثنى الله عليهم وشهد لهم بالفضل ، فقال تعالى: (كنتم خير أمةٍ أخرجت للناس) آل عمران/ ১১০ .
قال المفسرون : هم أصحاب رسول الله، وقد صح أن عمارًا بعثه علىّ إلى الخوارج يدعوهم إلى الجماعة التي فيها العصمة " انتهى من "شرح صحيح البخاري" (২/ ৯৮-৯৯)
“তিনি তাদেরকে জান্নাতের দিকে আহবান করছেন, আর তারা তাকে জাহান্নামের দিকে ডাকছে” কথাটি খারেজিদের ব্যাপারে সহিহ হতে পারে। যাদের কাছে হযরত আলী রা. হযরত আম্মারকে পাঠিয়েছিলেন। তাদেরকে মুসলিম ঐক্যের দিকে আহবান করার জন্য। কোন সাহাবির ব্যাপারে কথাগুলো প্রজোয্য হতে পারে না। কেননা কোন মুসলিমের জন্যই এর উত্তম ব্যাখ্যার বিপরীত কোন ব্যাখ্যা করা বৈধ নয়। কেননা , তাঁরা হলেন রাসূলুল্লাহ সা. এর সাহাবি। আল্লাহ তাদের প্রশংসা করেছেন। তার মর্যাদার স্বীকৃতি দিয়েছেন। তাদের ব্যাপারেই বলেছেন “তোমরা শ্রেষ্ঠ জাতি, মানবতার কল্যাণে তোমাদেরকে বের করা হয়েছে”। মুফাস্সিরগণ বলেন, এখানে শ্রেষ্ঠ জাতি বলে সাহাবায়ে কেরামকে বোঝানো হয়েছে। আর এটা সহিহ সনদে প্রমাণিত হয়েছে যে হযরত আলী রা. হযরত আম্মার রা. খারেজি সম্প্রদায়ের নিকট পাঠিয়ে ছিলেন। তাদেরকে জামাতের (মুসলিম ঐক্যের) প্রতি আহবান করার জন্য। যে জামাতের মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা।
ইমাম আহমদ রহ. তার মুসনাদে হানযালা বিন খুওয়াইলিদ আল আনাযি থেকে বর্ণনা করেন।
بينما أنا عند معاوية ، إذ جاءه رجلان يختصمان في رأس عمار ، يقول كل واحد منهما : أنا قتلته ، فقال عبد الله بن عمرو : لِيَطب به أحدكما نفسا لصاحبه ، فإني سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : تقتله الفئة الباغية ، قال معاوية : فما بالك معنا ؟! قال : إن أبي شكاني إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم ، فقال : أطع أباك مادام حيا ولا تعصه ، فأنا معكم ، ولست أقاتل !! ) .
رواه الإمام أحمد في مسنده ( ৬৫৩৮ ) ( ১০ / ৩৭- ৩৮ – ৩৯ ) وصححه أحمد شاكر رحمه الله تعالى .
আমি মুআবিয়ার কাছে বসা ছিলাম। তখন দু’জন লোক আম্মার রা. এর হত্যা করা নিয়ে ঝগড়া করতে করতে তাঁর কাছে আসল। তাদের প্রত্যেকেই বলল, ‘আমি তাকে হত্যা করেছি’। তখন আবদুল্লাহ বিন আমর রা. তোমাদের একজন তা নিয়ে মনঃপুত হও। আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি, নবীজি সা. বলেছেন, ‘তাকে একটি বিদ্রোহী দল হত্যা করবে’। তখন হযরত মুআবিয়া র. বললেন, আমাদের সাথে তোমার কি চাই? লোকটি বলল, আমার বাবা আমার বিরুদ্ধে নবীজির কাছে শেকায়েত করেছিলেন। তখন তিনি [মুআবিয়া রা.] বললেন, তোমার বাবা যতদিন বেঁচে আছে তার আনুগত্য কর। তার নাফরমানি করো না। আমি তোমাদের সাথে রয়েছি। তবে লড়াই করব না।
এখান থেকে হযরত মুআবিয়া রা. এর অবস্থান স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। তবে সেখানে এমনও অনেক সাহাবি ছিলেন যারা মনে করতেন যে হযরত আলী রা. হকের উপর রয়েছেন। যেমন হযরত আম্মার বিন ইয়াসির, খুযাইমাহ বিন সাবিত রা. প্রমুখ সাহাবি।
কেউ যদি প্রশ্ন তোলেন যে হযরত মুআবিয়া রা. কিভাবে মুজতাহিদ হতে পারেন যিনি ইজতিহাদের দু’টি প্রতিদানের যে কোন একটির অধিকারী হবেন, যেখানে নবীজি সা. তার দলকে বিদ্রোহী বলে উল্লেখ করেছেন?
এর উত্তরে আমরা বলতে চাই,
ক.
হাদীসে এমন কোন শব্দ নেই যা থেকে বোঝা যায় যে, হযরত মুআবিয়া রা. এর দলই বিদ্রোহী।
ইমাম বুখারী রহ. হযরত ইকরিমার সুত্রে বর্ণনা করেন,
روى البخاري ( ৪৪৭ ) بسنده عَنْ عِكْرِمَةَ قَالَ لِي ابْنُ عَبَّاسٍ وَلِابْنِهِ عَلِيٍّ : انْطَلِقَا إِلَى أَبِي سَعِيدٍ فَاسْمَعَا مِنْ حَدِيثِهِ . فَانْطَلَقْنَا ، فَإِذَا هُوَ فِي حَائِطٍ يُصْلِحُهُ ، فَأَخَذَ رِدَاءَهُ فَاحْتَبَى ، ثُمَّ أَنْشَأَ يُحَدِّثُنَا ، حَتَّى أَتَى على ذِكْرِ بِنَاءِ الْمَسْجِدِ فَقَالَ : : ( كُنَّا نَحْمِلُ لَبِنَةً لَبِنَةً ، وَعَمَّارٌ لَبِنَتَيْنِ لَبِنَتَيْنِ ، فَرَآهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَيَنْفُضُ التُّرَابَ عَنْهُ وَيَقُولُ : وَيْحَ عَمَّارٍ تَقْتُلُهُ الْفِئَةُ الْبَاغِيَةُ، يَدْعُوهُمْ إِلَى الْجَنَّةِ ، وَيَدْعُونَهُ إِلَى النَّارِ . قَالَ يَقُولُ عَمَّارٌ: أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ الْفِتَنِ
হযরত ইকরিমা রা. বলেন ইবনে আব্বাস রা. আমাকে ও তার পুত্র আলীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আবু সায়িদ খুদরির নিকট যাও। এবং তার হাদিসটি শ্রবণ করো। আমরা উভয় তার কাছে গেলাম। তিনি একটি প্রাচীর মেরামত করছিলেন। (আমাদেরকে দেখে) তখন তিনি তার চাদর গুছিয়ে নিলেন। এবং হাদিস বর্ণনা করতে শুরু করলেন। এক পর্যায়ে মসজিদ নির্মাণ সংক্রান্ত আলোচনায় প্রবেশ করলেন। বললেন, আমরা একটি করে ইট বহন করছিলাম আর আম্মার দু’টি করে ইট বহন করছিল। তখন নবীজি সা. তাকে দেখলেন। তার শরীর থেকে মাটি ঝেরে দিলেন। বললেন, আম্মারের জন্য আফসোস! তাকে একটি বিদ্রোহী দল তাকে হত্যা করবে। সে তাদেরকে জান্নাতের পথে আহবান করবে, আর তারা তাকে জাহান্নামের দিকে আহবান করবে। আবু সায়িদ খুদরি রা. বলেন, হযরত আম্মার বললেন, আমি ফিতনা থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন,
: " ثم ( إن عمارا تقتله الفئة الباغية ) ليس نصا في أن هذا اللفظ لمعاوية وأصحابه ؛ بل يمكن أنه أريد به تلك العصابة التي حملت عليه حتى قتلته ، وهي طائفة من العسكر ، ومن رضي بقتل عمار كان حكمه حكمها . ومن المعلوم أنه كان في المعسكر من لم يرض بقتل عمار : كعبد الله بن عمرو بن العاص وغيره ؛ بل كل الناس كانوا منكرين لقتل عمار ، حتى معاوية ، وعمرو " انتهى من " مجموع الفتاوى " ( ৩৫ / ৭৭ ) .
إن عمارا تقتله الفئة الباغية বাক্যটি এ বিষয়ে নস (প্রমাণ) নয় যে, এ শব্দটি হযরত মুআবিয়া রা. ও তাঁর সাথিদের জন্য প্রযোজ্য। বরং এটাও হতে পারে এ বাক্য দ্বারা ওই দলটি উদ্দেশ্য যারা তার উপর হামলা করেছে এবং তাকে হত্যা করেছে। সে দলটি হল সেনাবাহিনীর একটি ক্ষুদ্র দল। তবে যারা হযরত আম্মারের হত্যায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করবে তারাও ওই দলের অন্তর্ভূক্ত বলে গণ্য হবে। আর এটা বিদিত যে সেনাবাহিনীর মধ্যে এমন একজনও ছিলনা যে হযরত আম্মারের হত্যার প্রতি সমর্থন পেশ করেছে। বরং সবাই হযরত আম্মারের হত্যার বিরোধী ছিল। এমনকি হযরত মুআবিয়া রা. হযরত আমর রা. এর বিরোধী ছিলেন।
খ.
বিদ্রোহ করার দ্বারা কেউ ঈমানের বলয় থেকে বেরিয়ে যায় না। বরং কুরআনুল কারীমের নস থেকেই তাদের ঈমানদার থাকার বিষয়টি প্রমাণিত। সূরা হুজুরাত, আয়াত ০৯-১০ দ্রষ্টব্য।
যিয়াদ ইবনুল হারিস বর্ণনা করেন,
" كنت الى جانب عمار بن ياسر بصفِّينَ ، وركبتي تمس ركبته . فقال رجل : كفر أهل الشام . فقال عمار: لا تقولوا ذلك ؛ نبينا ونبيهم واحد ، وقبلتنا وقبلتهم واحدة ؛ ولكنهم قوم مفتونون جاروا عن الحق ، فحق علينا أن نقاتلهم حتى يرجعوا اليه " رواه ابن أبي شيبة (৩৭৮৪১ ).
সিফফিনের যুদ্ধে আমি আম্মার বিন ইয়াসিরের পাশেই ছিলাম। আমার হাটু তার হাঁটুকে স্পর্শ করছিল। হঠাৎ এক ব্যক্তি বলে উঠল, সিরিয়াবাসী কাফের হয়ে গেছে। তখন হযরত আম্মার রা. বললেন, এ কথা বলো না। আমাদের নবী ও তাদের নবী এক। আমাদের কিবলা ও তাদের কিবলাও এক। কিন্তু তারা ফিতনার শিকার এক জাতি। তার সত্য থেকে বিচ্যুত হয়েছে। এখন আমাদের জন্য কর্তব্য হল তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা যাতে তারা সত্যের দিকে ফিরে আসে।
মুহাম্মদ বিন নসর তার সূত্রে হযরত মাকহুল থেকে বর্ণনা করেন,
وعند محمد بن نصر بسنده عن مكحول : " أن أصحاب علي سألوه عمن قتل من أصحاب معاوية ماهم ؟ قال : هم مؤمنون ". " منهاج السنة " ( ৫/২৪৫ ).
আলী রা. এর সাথীরা তাকে মুআবিয়া রা. এর দলের যারা নিহত হয়েছে তাদের ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞেস করল। তাদের পরিণতি কি হবে? হযরত আলী রা. বললেন, তারা মুমিন।
ইমাম বুখারী রহ. হযরত আবু বকরাহ রা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
قال سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْمِنْبَرِ وَالْحَسَنُ إِلَى جَنْبِهِ، يَنْظُرُ إِلَى النَّاسِ مَرَّةً وَإِلَيْهِ مَرَّةً وَيَقُولُ: ( ابْنِي هَذَا سَيِّدٌ ، وَلَعَلَّ اللَّهَ أَنْ يُصْلِحَ بِهِ بَيْنَ فِئَتَيْنِ مِنَ الْمُسْلِمِينَ) رواه البخاري (৩৭৪৬) . والصلح الذي قام به الحسن رضي الله عنه كان بين أصحابه وأصحاب أبيه علي رضي الله عنه ، وأصحاب معاوية ، فيكون هذا الحديث نصا في إثبات الإسلام للطائفتين .
আমি নবীজি সা. কে মিম্বারে বসা অবস্থায় বলতে শুনেছি। হযরত হাসান তখন তাঁর পাশে বসা ছিলেন। নবীজি সা. একবার লোকদের দিকে তাকাচ্ছিলেন আবার হযরত হাসানের দিকে তাকাচ্ছিলেন। নবীজি সা. বললেন, আমার এ সন্তান নেতা হবে। আশা করছি আল্লাহ তায়ালা তার মাধ্যমে মুসলমানদের দু’টি দলের মধ্যে সন্ধি স্থাপন করবেন।
হযরত হাসান রা. যে সন্ধিটি স্থাপন করেন তা ছিল তাঁর নিজের দলের লোক ও তার পিতা আলী রা. এর দলের লোকদের সাথে হযরত মুআবিয়া রা. এর মধ্যকার সমঝোতা। এ হাদীস থেকেও আমরা উভয় দলের ঈমান ও সত্যের উপর টিকে থাকার প্রমাণ পেয়ে যাই।
মোট কথা হাদিসে উল্লেখিত ‘বাগাওয়াত’ অন্যান্য গুনাহের মতই একটি গুনাহ। কখনও এটি কোন মুসলমান থেকে কোনরূপ ইজতিহাদ ছাড়াই সংঘটিত হতে পারে। আবার কখনও ‘বিদ্রোহের’ ইচ্ছা ছাড়া কেবল ইজতিহাদের কারণেও সংঘটিত হতে পারে। যদি তিনি মুজতাহিদ হন যেমন সাহাবায়ে কেরাম, তবে তিনি আল্লাহর কাছে ‘মা’জুর’ বলে সাব্যস্ত হবেন। হযরত মুআবিয়া রা. ও তাঁর সাথি-সঙ্গিরা হযরত আলী রা. এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে মুজতাহিদ ছিলেন।
হযরত মুআবিয়া রা. হযরত উসমান রা. এর রক্তের বদলা নেয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন। সে আলোকে তাঁর হত্যাকারীদের থেকে কিসাস আদায়ের দাবী তুলেছেন। যারা হযরত আলী রা. এর দলের সাথে মিশে গিয়েছিল।
ইমাম শামসুদ্দিন জাহাবী রহ. তার বিশ্ববিশ্রুত গ্রন্থ সিয়ারু আলামিন নুবলাতে উল্লেখ করেন,
একবার আবু মুসলিম খাওলানীসহ আরে কতিপয় ব্যক্তি হযরত মুআবিয়া রা. এর কাছে আসলেন। তারা তাকে বললেন, আপনি আলী রা. এর সাথে বিরোধ করছেন নাকি আপনি তাঁর মত? তখন তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি জানি তিনি আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। এবং খেলাফতের জন্য তিনি আমার চেয়ে অধিক উপযুক্ত। কিন্তু তোমরা কি জাননা যে, হযরত উসমান রা. মজলুম অবস্থায় নিহত হয়েছেন? অথচ আমি তার চাচাতো ভাই এবং তার রক্তপণের দাবীদার? তোমরা তাঁর কাছে যাও। তাকে বল, তিনি যেন উসমান রা. এর হত্যাকারাদেরকে আমার হাতে সোপর্দ করেন। তাঁর জন্য আনুগত্য প্রকাশ করেন। তারা আলী রা. এর কাছে গেলেন। তাঁর সাথে কথা বললেন। কিন্তু আলী রা. উসমান রা. এর হত্যাকারীদেরকে তাঁর হাতে তুলে দেন নি।
ইবনে কাছির রহ. আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে উল্লেখ করেন,
“হযরত আবু দারদা রা. ও হযরত আবু উমামাহ রা. একবার হযরত আমিরে মুআবিয়া রা. এর সাথে সাক্ষাত করলেন। তারা তাকে বললেন, হে মুআবিয়া! কেন আপনি এ লোকটির সাথে লড়াই করছেন? আল্লাহর শপথ! ইসলাম গ্রহণের দিক থেকে তিনি আপনার ও আপনার পিতার তুলনায় অগ্রগামী। আপনার তুলনায় রাসূলুল্লাহ সা. এর অধিক নিকটের। আপনার তুলনায় খেলাফতের অধিক হকদার? তখন তিনি বললেন, আমি তার বিরুদ্ধে কেবল হযরত উসমানের রক্তের বিনিময়ের জন্য লড়ছি। তিনি তাঁর হত্যাকারীদেরকে নিজের দলে আশ্রয় দিয়েছেন। তোমরা তার কাছে যাও। তাঁকে বল, তিনি যেন হযরত উসমান রা. এর হত্যাকারীদেরকে আমার হাতে সোপর্দ করেন। এরপর আমিই হব সিরিয়াবাসীদের প্রথম ব্যক্তি যে তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে।”
হযরত মুআবিআ রা. ও তাঁর সাথে যে সকল সাহাবি ছিলেন, তারা মনে করতেন যে হযরত আলী রা. এর বাহিনীর মধ্যেই হযরত উসমান রা. এর হত্যাকারীরা লুকিয়ে আছে। তাঁরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। তাঁর উপর তাদের আক্রমনকে প্রতিহত করার জন্য।
শাইখুল ইসলাম তকিউদ্দিন ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন,
" لما رأى علي رضي الله عنه وأصحابه أنه يجب عليهم طاعته ومبايعته ، إذ لا يكون للمسلمين إلا خليفة واحد ، وأنهم خارجون عن طاعته يمتنعون عن هذا الواجب ، وهم أهل شوكة ، رأى أن يقاتلهم حتى يؤدوا هذا الواجب ، فتحصل الطاعة والجماعة .
আলী রা. ও তাঁর সাথিরা যখন মনে করলেন যে, তাঁর আনুগত্য করা ও তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করা আবশ্যক। যেহেতু মুসলমানদের জন্য একজন খলীফা আবশ্যক। আর তারা খলীফার আনুগত্য থেকে বাইরে রয়েছেন এবং এ ওয়াজিব আদায়ে বাধা প্রদাণ করছেন, তবে তারাই হলে পথের কাটা। তখন তারা এদের বিরুদ্ধে লড়াই করাকে সংগত মনে করলেন যাতে তারা এ ওয়াজিব আদায়ে ফিরে আসে। ফলে একদিকে যেমন আনুগত্য অর্জিত হবে,অন্যদিকে মুসলমানদের ঐক্যও সৃষ্টি হবে।
অপরদিকে হযরত মুআবিয়া রা. ও তাঁর সাথিরা মনে করতেন যে, খলীফার হাতে এই মুহূর্তে বাইয়াত গ্রহণ করা ওয়াজিব নয়। যদি তারা বাইয়াত গ্রহণকে কেন্দ্রকরে লড়াইয়ে বাধ্য হন তবে তারা মাজলুম বলে বিবেচিত হবেন। তাদের যুক্তি ছিল, হযরত উসমান রা. মুসলমানদের ঐক্যমতে মজলুম অবস্থায় নিহত হয়েছেন। আর তার হত্যাকারীরা হযরত আলী রা. এর সৈন্যদলের মধ্যে রয়েছে। আর তারাই শক্তিমত্তায় তাদের উপরে। যদি আমরা নিবৃত্ত থাকি তবে তারা আমাদের উপর যুলুম শুরু করবে। আমাদের উপর অত্যাচার চালাবে। আর হযরত আলী রা. এর পক্ষ্যে তাদেরকে প্রতিহত করা সম্ভব হবে না। যেমনভাবে হযরত উসমান রা. এর হত্যাকে ঠেকানো যায়নি। আমাদের উচিত এমন একজন খলীফার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করা যিনি আমাদের উপর ইনসাফ করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করবেন। আমাদের জন্য ইনসাফ করবেন।
অন্যত্র বলেন, কিন্তু তারা (সাহাবায়ে কেরাম) হযরত মুআবিয়া রা. এর সাথে থেকে এজন্য লড়াই করেছেন, যেহেতু তারা মনে করতেন আলী রা. এর দলের মধ্যেই যালেমরা -উসমান রা. এর হত্যাকারীরা- রয়েছে। তার যে কোন সময় তাদের উপর চড়াও হতে পারে যেমনিভাবে হযরত উসমান রা. এর উপর চড়াও হয়েছে। তাই তারা তাঁর বিরুদ্ধে লড়ছেন তাঁর উপর তাদের আক্রমনকে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে।
ইজতিহাদি এ মতপার্থক্যের কারণে দেখা যায় অনেক সাহাবি লড়াই থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ দূরে রেখেছেন। তার হযরত আলীর পক্ষেও তরবারী ধারণ করেন নি। হযরত মুআবিয়ার ঝা-াতলেও শামিল হন নি। তাদের মধ্যে অনেক বড় বড় সাহাবিও ছিলেন। হযরত সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস, আবদুল্লাহ বিন উমর, মুহাম্মদ বিন মাসলামা রা. প্রমুখ।
মুহাম্মদ বিন সিরীন বলেন,
" هاجت الفتنة وأصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم عشرة آلاف ، فما حضر فيها مائة ، بل لم يبلغوا ثلاثين " . " السنة لأبي بكر الخلال " ( ২/৪৬৬ ) رقم الأثر ( ৭২৮ (
ফিতনার আগুন যখন দাউদাউ করে জ¦লে উঠল তখন সাহাবায়ে কেরামের সংখ্যা ছিল দশ হাজার। তাদের মদ্যে একশ’জনও এ ফিতনায় উপস্থিত হননি। বরং তাদের সংখ্যা ত্রিশও হবে না।
এ থেকে বোঝা যায় যে পুরো ব্যাপারটাই ছিল ইজতিহাদি বিষয়।
ইমাম নববি রহ. বলেন,
" واعلم أن الدماء التي جرت بين الصحابة رضي الله عنهم ليست بداخلة في هذا الوعيد – يعني قول النبي صلى الله عليه وسلم : إذا التقى المسلمان بسيفيهما فالقاتل والمقتول في النار - ، ومذهب أهل السنة والحق إحسان الظن بهم ، والإمساك عما شجر بينهم ، وتأويل قتالهم ، وأنهم مجتهدون متأولون لم يقصدوا معصية ، ولا محض الدنيا ، بل اعتقد كل فريق أنه المحق ، ومخالفه باغ ، فوجب عليه قتاله ليرجع إلى أمر الله ، وكان بعضهم مصيبا وبعضهم مخطئا معذورا في الخطأ ، لأنه لاجتهادٍ ، والمجتهد إذا أخطأ لا إثم عليه " انتهى من " المنهاج شرح صحيح مسلم بن الحجاج " ( ১৮/১১(
অর্থ : জেন রাখ, সাহাবায়ে কেরামের মাঝে যে রক্ত প্রবাহিত হয়েছে তা এ ধমকির মধ্যে অন্তর্ভূক্ত নয়। যেখানে নবীজি সা. বলেছেন, “দু’জন মুসলমান যখন একে অপরের বিরুদ্ধে তরবারী নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে, তখন হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয় জাহান্নামী”
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ এর আদর্শ হল তাদের প্রতি সুধারণা পোষণ করা। তাদের মাঝে যে ‘মতবিরোধ’ সংঘটিত হয়েছে সে ব্যাপারে নিরবতা অবলম্বন করা। তাদের পরস্পর যুদ্ধ-বিগ্রহের উত্তম ব্যাখ্যা করা। তারা সকলে মুজতাহিদ ও ব্যাখ্যাকারী। তারা কখনই গুনাহের ইচ্ছা পোষণ করেন নি। এমনকি কেবল প্রার্থিব স্বার্থ রক্ষার চিন্তাও করেন নি। বরং প্রতিটি দল নিজেদেরকে হক বলে মনে করতেন। আর তার বিরোধী দলকে সত্যবিচ্যুত বলে মনে করতেন। আর তাই তার উপর কিতালকে আবশ্যকীয় মনে করতে যাতে তারা আল্লাহর আদেশের দিকে ফিরে আসে। এক্ষেত্রে তাদের কেউ সঠিক অবস্থার উপর ছিল। কেউ আবার ভুলের উপর ছিল, তবে তিনি তার ভুলের ক্ষেত্রে মা’জুর। কেননা এ ভুলটি ইজতিহাদের কারণে হয়েছে। আর মুজতাহিদ যদি ভুল করেন তার কোন গুনাহ নেই।
©somewhere in net ltd.