নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আতাহার হোসাইন

উড়োজাহাজ

ফেসবুক প্রোফাইল-https://www.facebook.com/ataharh

উড়োজাহাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আর কতকাল অব্যাহত থাকবে এই ধারা?

১৩ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:৪০

এটা পরিষ্কার যে- কয়েকটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন সরকার সাংঘাতিক ধাক্কা খেয়েছে। তবে সিটি কর্পোরেশনের এই পরাজয় জাতীয় নির্বাচনে কোন প্রভাব ফেলবে না বোলে অনেক নেতাকর্মী বলাবলি করছেন। কিন্তু আবার যখন তাদের মুখ দিয়েই বলা হয় ‘আওয়ামীলীগ ঘুরে দাঁড়াবে’, তখন ব্যাপরটা বেখাপ্পা বলেই মনে হয়। প্রকৃত অর্থে বাস্তবতা হচ্ছে এই যে আওয়ামীলীগের জনপ্রিয়তা তলানীতে ঠেকেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে অন্তত এবার আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসবে কি না এই ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করা হচ্ছে। অন্ততপক্ষে যারা মাঠপর্যায়ে থাকেন, তারা তাই বলছেন। এখানে একটি বিশেষ ব্যাপার লক্ষণীয় যে, চারটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে খোদ বিএনপিও মনে করে নি যে তারা সব কটি আসনে জয়ী হবে। নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর এর প্রভাব পড়েছে গাজীপুর সিটি নির্বাচনেও। গতি বিজ্ঞান বলে, পতনের একটি ত্বরণ আছে। অর্থাৎ পড়ন্ত বস্তুর পতন-শক্তি বৃদ্ধি পায়। স্বাভাবিক ত্বরণে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামীলীগের এই পতন বাড়তেই থাকবে। এক্ষেত্রে আওয়ামীলীগের পরিবর্তে যদি বিএনপি বা অন্যকোন দলও ক্ষমতায় থাকত, তাহলে তাদের অবস্থাও তাই হোত। কারণ, ৯০ পরবর্তী রাজনৈতিক অঙ্গনে বানের ঢলের মত অনৈতিকতা, ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, মিথ্যাচার প্রবেশ করেছে। রাজনীতির প্রতি মানুষের যে আগ্রহ ছিল তা দিনে দিনে বীতশ্রদ্ধতায় পর্যবসিত হয়েছে। বর্তমানে এই অবস্থা একটা কালচারে পরিণত হয়েছে। প্রভাব প্রতিপত্তি চান- রাজনীতি করুন, অর্থবিত্ত চান- রাজনীতি করুন, সামাজিক স্ট্যাটাস চান-রাজনীতি করুন। কারণ রাজনীতি করলে পেশী শক্তি প্রয়োগ করা যায়, অন্যায় করে পার পাওয়া যায়- তাই রাজনীতি আজ অভদ্র মানুষের কাজ কারবার হয়ে গেছে। ভদ্রঘরের সন্তান আর রাজনীতি করেন না। যারা করছেন, তারা আর ভদ্র নাই। এদের দুষ্টচক্রে পড়ে ‘জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস’ বাক্যটি একটি পরিহাসে পরিণত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এই সব দুর্নীতিবাজদের খপ্পরে পড়ে জনতা ত্রাহি চিৎকার করেও রেহাই পাচ্ছে না। যারা ক্ষমতায় যায় তাদের অধিকাংশই নিজেদের আখের গোছানোর জন্য সকল আয়োজন সম্পন্ন করেন। আপাতত আওয়ামীলীগের পরাজয়ে এবং জনমতে পিছিয়ে পড়লেও সাধারণ মানুষের খুশি হওয়ার কিছু নেই। কারণ সিস্টেমের চক্রে গতবার ধরা খাওয়া বিএনপি এসে দেশকে স্বর্গ বানিয়ে ফেলতে পারবে না। কারণ তারাও একটি সিস্টেমে বন্দি। আপাতত তারা এই করবে, ওই করবে বলে বলে যতই প্রতিশ্র“তির বন্যা বইয়ে দিক না কেন- পরিশেষে দেখা যাবে যে লাউ সেই কদু। কারণ, বিএনপি এবং আওয়ামীলীগে তেমন কোন আদর্শগত পার্থক্য নেই। ক্ষমতায় আরোহনের জন্য আওয়ামীলীগ যেমন বামপন্থিদেরকে বগলদাবা করেছে, বিএনপিও তেমনি ধর্মাশ্রয়ী, ধর্মজীবিদের কব্জা করেছে। পরিবর্তনের মধ্যে পরিবর্তন আসবে এই যে এখন খাচ্ছে আওয়ামীলীগ আর তখন খাবে বিএনপি। জনগণের প্রকৃত মুক্তি কেউ করে দেবে না। কারণ সিস্টেমের গ্যাড়াকলে ঘুরে ফিরে একবার এরা আসবে আবার ওরা আসবে। রাজনীতিবিদরা একটা কমন কথা বলে থাকেন যে ‘জনগণকে বোকা ভাববেন না।’ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই মুলা দিয়েই জনগণকে বোকা বানানো হয়। জনতার হাতে কোনই ক্ষমতা নেই। তারা বার বার সুচতুর, ধুরন্ধর রাজনীতিবিদদের হাতে প্রতারিত হয়। না হলে দাবী দাওয়া আদায়ের জন্য কেন জনতাকে রাস্তায় নামতে হয়, কেন গাড়ি-বাড়ীতে আগুন দিতে হয়? কেন জনতার পয়সায় লালিত ঠ্যাঙ্গারে বাহিনীর লাঠি ঘা খেয়ে জেলে যেতে হয়? জনতার ম্যা-েট নিয়ে যদি সাংসদগণ সংসদে যান তবে প্রশ্ন আসে কেন তারা গণবিরোধী কর্মকা- করেন, গণবিরোধী আইন প্রনয়ণ করেন? এই কি নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতিনিধিত্ব? সাধারণত, ব্যথা যখন সর্বাঙ্গে তখন ওষুধ দেওয়ার জায়গা থাকে না। প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। এক কথা সবাই স্বীকার করেন। ন্যায় বিচার পাওয়ার সর্বশেষ ক্ষেত্র আদালত প্রসঙ্গে খোদ আইনমন্ত্রীই যখন বলেন, “ আদালতের ইট-সুরকি পর্যন্ত ঘুষ খায়” তখন আর কি বাকী থাকে? অপরাধী যদি ক্ষমতাসীন দলের হয় তাহলে ছাড়া পেতে সময় লাগে না। এটি প্রত্যেক দলের একটি স্বীকৃত কালচার, অর্থাৎ স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা সবাই জানে ক্ষমতায় থাকলে আগের বারের সব মামলা খারিজ হয়ে যাবে, আর বিরোধীদলে থাকলে মামলা খেতে খেতে, কোর্টের প্রাঙ্গনে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে পায়ের জুতা ক্ষয় হয়ে যাবে। (এহসানুল হক মিলন এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ)। ৯০ পরবর্তীতে শাসন ব্যবস্থায় এই অসুস্থ ধারা সংযুক্ত হওয়ার পর থেকে কোন সরকারই একবার মেয়াদ শেষ করে আবার ক্ষমতায় আসতে পারে নি (৯৬ এর ১৫ ফেব্র“য়ারীর প্রহসনের নির্বাচন বাদে)। এর কারণ হচ্ছে কোন সরকারই জনগণকে তুষ্ট করতে সক্ষম হয় না। কারণ, সকল প্রকার বৈরীতার মোকাবেলা করে, বিরোধীদলের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে ক্লীন ইমেজ বজায় রাখা সম্ভব হয় না। তাই সব সরকারই ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতিতে গা ভাসিয়ে দেয়। শিক্ষা ব্যবস্থায় পরকালীন জবাবদিহিতার উপর শিক্ষা না থাকায়, আত্মিক উন্নতির কোন ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষমতার চেয়ারে বসে তারা বেপরোয়া হয়ে যায়। ধরা পড়লে দলীয় প্রভাব ফেলে ‘দেশপ্রেমিক’ উপাধি ধারণ করে, ‘ষড়যন্ত্রের শিকার’ আখ্যা দিয়ে পার পেয়ে যায়। নখদন্তহীন দুর্নীতি দমন কমিশনের নখর তাদের গায়ে আচড় বসাতে অক্ষম। সরকারী মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান থাকে নিশ্চুপ। অনুগত স্তাবকরা সরকারের পক্ষে প্রচার মাধ্যম, টেলিভিশন, রাজপথে মিছিল করে, উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দেয়। আর বিপক্ষের এরা আন্দোলন করে, হরতাল করে, গাড়িতে আগুন দেয়, আইনশৃঙ্খলা-বাহিনীর সাথে খ-যুদ্ধে অংশ নেয়। এইভাবে জনগণও দুটিভাগে বিভক্ত হয়ে কামড়াকামড়িতে লিপ্ত হয়। চায়ের দোকানে, বাসের সিটে, আড্ডায় বাহাসে লিপ্ত হয়। মতানৈক্য, দলাদলি আর কোন্দলে নষ্ট হয় জাতীয় ঐক্য। এই অনৈক্য হানাহানি বর্তমানে শহরের সীমানা ছাড়িয়ে গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে। সামান্য ছুতা-নাতায় গ্রামকে গ্রাম জুড়ে দাঙ্গায় কারণে ছড়িয়ে পড়ছে এক ভয়াবহ দৃশ্য। এটা এই অসুস্থ রাজনীতিরই ফল। দীর্ঘদিন যাবত চলে আসা এই সিস্টেমে আবদ্ধ বিভ্রান্ত জনতা শান্তির আশায় বার বার ক্ষমতায় দল পরিবর্তন করে। কিন্তু আখেরে কোন লাভ হয় না। এর বাইরে অবশ্য জনতার কিছু করারও নেই। কিন্তু আর কতকাল? আর কতকাল অব্যাহত থাকবে এই ধারা- দিনে দিনে বিশাল একটা শ্রেণির মানুষের মনে এই প্রশ্নও জোরালো হচ্ছে। সুতরাং দিন পরিবর্তনে এই মানসিকতার সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই সংস্কৃতি থেকে সকলকে বেরিয়ে আসতে, অন্তত,বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে হবে। -সূত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.