নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আতাহার হোসাইন

উড়োজাহাজ

ফেসবুক প্রোফাইল-https://www.facebook.com/ataharh

উড়োজাহাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সৌদি প্রিন্স এবং আমাদের ধর্মব্যবসায়ীগণ

৩১ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:০৫



আমাদের দেশে কিছু ধর্মব্যবসায়ী মোল্লা রয়েছেন- যারা মনে করেন সৌদি আরবে বুঝি খুব ভাল ইসলাম আছে কিংবা সৌদি আরবের লোকেরা খুব ভাল মুসলমান। এদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা জীবনের কোন সময় হয় তো আরব দেশগুলোতে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। আরবীদের বাহারী পাঞ্জাবী পায়জামা, লম্বা দাঁড়ি, মাথার পাগড়ি আর আলিশান মসজিদ দেখে ভেবেছেন তারা বুঝি খুব উত্তম মোমেন কিংবা মোসলেম। সেই আরবদের সাথে কখনো-সখনো রাস্তায় দেখা হলে তারা লম্বা সালাম দিত। যদিও সেই আরবের উত্তম! মোসলেমরা আমাদের মত গরিব মিসকিনদের মোসলেম গণ্য করে সালামের উত্তর দেয় কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।





আরো একটা ব্যাপার তাদেরকে ভালো মোসলেম ভাবতে বিশেষভাবে প্রলুদ্ধ করত। তা হোল সৌদি পুলিশ (মোতওয়া) প্রায়ই তাদেরকে তাড়া করে মসজিদে নিয়ে বাধ্য করত নামায পড়ার জন্য। যদিও এই আইনটি সৌদিতে বসবাসরত আজম অর্থাৎ অনারবদের জন্যই প্রযোজ্য।





দেশে থাকতে এদের অনেকেই হয়তো বহু অনৈতিক কাজে জড়িত থাকলেও দারিদ্র্য দূরীকরণের আশায় আরবের বিভিন্ন দেশে তারা চাকরি করতে গিয়েছেন। দেশে এসে উত্তম মোসলেম প্রমাণ করার তাগিদে তারা লম্বা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরিধান করে, টুপি মাথায় দিয়ে ঘুরে বেড়ান কিংবা মানুষকে ওয়াজ নসিহত করেন। আরবদের ব্যাপারে গুণগান করেন। তাদের সামনে যদি সচেতন কোন মানুষ বলেন যে পৃথিবীতে কোথাও প্রকৃত ইসলাম নেই, ১৫০ কোটির এই জন্যসংখ্যা কার্যত মোসলেম নয় তাহলে এ কথা শুনে সেই আরব ফেরতদের অনেকেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলেন, “আরে মিয়া! আমি জানি না তুমি জান? আমি সৌদি আরব থেকে ঘুরে এসেছি। আমাদের দেশে না হয় ইসলাম নেই, সৌদি আরবেও ইসলাম নেই?”



এই সংখ্যাটা আমাদের দেশে এখনও প্রচুর পরিমাণে আছে। বিশেষ করে দেশের পূর্ব, পূর্ব-দক্ষিণাঞ্চলে এই সংখ্যাটা বেশী। কিন্তু তারা জানে না এই আরবরা, বিশেষ করে শাসকদের অধিকাংশই ইসলামকে এবং আল্লাহ রসুলের হুকুমকে মোটেও তোয়াক্কা করে না! শুধুমাত্র কোরানের কিছু দন্ডবিধি প্রয়োগ হোতে দেখে ভাবে তারা না জানি কত ভাল ইমানদার মোসলমান! প্রকৃতপক্ষে সেখানে ইসলাম তো নেই-ই, বরং তারা আরো বেশী বড় প্রতারকে পরিণত হোয়েছে। কারণ অন্যরা বেশভূষা না ধোরে, ক্বাবার রক্ষণাবেক্ষণ, হজ্বের অনুষ্ঠান আয়োজন, মদীনায় রওজা মোবারক রক্ষণাবেক্ষণ না করেই মোসলেম দাবী করে। কিন্তু তারা এসব আগলে ধোরে রেখে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আর যা কিছু করছে তার অধিকাংশ করছে আল্লাহর নির্দেশের বাহিরে, যা স্পষ্টত আল্লাহ রসুলের নাফরমানী।





আল্লাহর হুকুম বাদ দিয়ে তারা শাসন ক্ষমতায় রাজতন্ত্রের সূচনা করেছে। তারা আরবের ‘কিং’ কিংবা সুলতান। কিংদের মতই তাদের চলাফেরা, আরাম আয়েশ, ভোগ-বিলাস। সেই উত্তম মোসলমান দাবিদার, ক্বাবার রক্ষকরাই সাম্প্রতিক মিশরের ‘গণতান্ত্রিক উপায়ে’ নির্বাচিত সরকারকে এক বছরের মাথায় ঐ দেশের সেনাবাহিনীকে ঘুষ দিয়ে অভুত্থানে প্ররোচনা দিয়ে উচ্ছেদ করেছে।



সৌদি আরবের রাজনৈতিক সংগঠক ও সৌদি সরকারের নানা কেলেঙ্কারির তথ্য ফাঁসকারী ‘মুজতাহিদ’ টুইটার বার্তায় অন্তত: এই দাবিটিই করেছেন। তিনি বলেছেন, “মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে মিশরের সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসিকে একশ’ কোটি মার্কিন ডলার প্রদান করেছেন সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ।” তিনি আরো বলেন, “বিনিয়োগের এটা কেবল প্রাথমিক পর্যায়। নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলে যথেষ্ট অর্থ প্রদান করবেন বলে সিসিকে সৌদি বাদশাহ অঙ্গীকার প্রদান করেছেন।”



টুইটার বার্তায় মুজতাহিদ জানান, “মুরসির ক্ষমতাচ্যুতির পর গণঅভ্যুত্থান সামাল দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সৌদি সরকার এখন বেশ উদ্বিগ্ন। এই সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ হলে পরবর্তী সময়ে মিশরের যে কোন সরকারই সৌদি-আরববিরোধী নীতি গ্রহণ করবে। এ কারণে, বিক্ষোভকারীদের দমাতে যে কোন ধরনের কঠিন পদক্ষেপকে সমর্থন যোগাচ্ছেন বাদশাহ আবদুল্লাহ। এমনকি হাজারো মানুষকে হত্যা করার প্রয়োজন হলেও সেনাবাহিনীকে সমর্থন দিয়ে যাবেন তিনি”।





মুজতাহিদ দাবি করেন, ‘আবদুল্লাহ শুধু সেনা অভ্যুত্থানকেই সমর্থন যোগাচ্ছেন না, এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন না হয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সিসিকে উৎসাহও যোগাচ্ছেন তিনি। দফায় দফায় সহিংসতায় কয়েকশ’ মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনায় মিশরের সেনা অভ্যুত্থানের জনপ্রিয়তা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারে-সিসির এমন উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনে আরও যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদানের প্রলোভন দেখাচ্ছেন বাদশাহ আবদুল্লাহ।





এছাড়া, চলমান অস্থিরতায় সৌদির ‘মিত্র’ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ‘ম্যানেজ’ করতে সব রকমের রাজনৈতিক ও আর্থিক সহায়তা দিতে সিসিকে আশ্বাস দিচ্ছেন সৌদি আরবের সরকার প্রধান বাদশাহ আবদুল্লাহ!” আরব অঞ্চলের বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত মুজতাহিদের এ বক্তব্যের ব্যাপারে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি সৌদি সরকার বা মিশরের সেনা কর্তৃপক্ষ।



কিন্তু সেই সৌদি আব্দুল্লাহদের (আল্লাহর দাস) উচিত ছিলো অন্তত মিশরের ভ্রাতৃঘাতি লড়াইয়ের সমাধানের জন্য ভুমিকা রাখা। কারণ সহিংসতায় অংশ নেওয়া দুটি দলই নিজেদের দাবী করছে তারা মোসলেম। কিন্তু কিং হয়তো আশঙ্কা কোরেছেন আবার না মিশর থেকে বিপ্লব অনুপ্রবেশ করে তার সালতানাতকে গুড়িয়ে দেয়! তাই ‘কিং’ মধ্যস্থা না করে উল্টো ঘুষ দিয়ে মিশরের সেনাবাহিনীকে হত্যাকান্ডে প্ররোচিত কোরেছে। এটা কোন্ ইসলামের কাজ? কিন্তু তাই বলে এখওয়ানুল মোসলেমিনও যে খুব ভালো মোসলেম, তা নয়।



তারা বর্তমানে নিজেদের উত্তম গণতন্ত্রী মনে করা শুরু করেছ। গত শনিবার সামরিক বাহিনীর গুলিতে ভোর রাতে প্রায় দুইশ জন নিহত হওয়ার পর এখওয়ানের মুখপাত্র গিয়াদ এল হাদ্দাদ বলেছেন, “আমরা সামরিক অভ্যুত্থানকরীদের হটিয়ে দেশে ‘গণতন্ত্র’ ফিরিয়ে আনবো, নয় মরে যাবো।” যা একটি ইসলামি দলের মুখে কখনো মানায় না।





কারণ ইসলাম এবং গণতন্ত্র দুইটি ভিন্ন সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী জীবন ব্যবস্থা। গণতন্ত্রে সার্বভৌমত্বের মালিক সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ এবং ইসলামের সার্বভৌমত্ব একমাত্র মহান স্রষ্টা আল্লাহর হাতে। আল্লাহ বলেন, সৃষ্টি যার, হুকুম চোলবে তার- (সুরা, আরাফ-৫৪)। অন্যদিকে গণতন্ত্রের সার্বভৌমত্বকে উড়িয়ে দিয়ে আল্লাহ তাঁর রসুলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আর যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মেনে নেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করে দেবে। তারা শুধু অলীক কল্পনার অনুসরণ করে এবং সম্পূর্ণ অনুমান ভিত্তিক কথাবার্তা বলে থাকে (আন-আম-১১৬)।”





আল্লাহর এই সুষ্পষ্ট হুকুমকে লঙ্ঘণ করে তারা পান্ডাত্য সভ্যতার প্রভাবে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করার শপথ করছেন। যার দরুণ তারা না পাচ্ছে আল্লাহর সাহায্য এবং না পাচ্ছে পশ্চিমাদের মন যোগাতে।





এই ঘটনায় সবচাইতে হাস্যকর অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাদের যারা আমাদের দেশে ইসলামের নামে গণতান্ত্রিক রাজনীতি করেন। এদের মধ্যে প্রধান একটি দল আছে যারা একদিকে সৌদি রাজতন্ত্রের সমর্থক, সৌদি থেকে আগত পেট্রোডলারের বিনিময়ে এরা ইতোমধ্যে ফুলে ফেঁপে যথেষ্ট নাদুস নুদুস হোয়েছেন। আবার অন্যদিকে এখওয়ানকে ইসলামী বিপ্লবের আদর্শ মনে করে কর্মীদের উজ্জীবিত করার জন্য ইখওয়ানের নির্যাতিত নেতাদের জীবনি, তাদের লিখিত বই সিলেবাসে অন্তর্ভূক্ত করে ইসলামী বিপ্লবের জন্য উৎসাহিত করেন।





কিন্তু আজকে মার্কিন দালাল সৌদিদের দ্বারাই যখন তাদের প্রেরণার উৎস ইখওয়ান কচুকাটা হচ্ছে- তখন তাদের মুখ থেকে ‘টু’ শব্দটিও বের হচ্ছে না। তাদের আচরণ দেখে মনে হয় তারা বলতে চাইছেন - এটাও একপ্রকার হেকমত!



সৌদিরা, বিশেষ করে শাসন ক্ষমতায় আসীন রাজপরিবার যে ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করছে না- তা শুধু আমার কথা নয়, তার প্রমাণ সৌদি আরবের রাজ পরিবারের প্রিন্স খালিদ বিন ফারহান আলে- সৌদ এর সাম্প্রতিক ঘোষিত সিদ্ধান্তটি। খবরে প্রকাশ তিনি রাজ পরিবার ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি রাজ পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেছেন, “দেশে আল্লাহর আইন বা শাসন নেই।”



গত শনিবার খালিদ বিন ফারহান বলেন, “গর্বের সঙ্গে আমি সৌদি আরবের রাজ পরিবার ছাড়ার ঘোষণা করছি। এই সরকার আল্লাহর শাসনের পাশে দাঁড়ায়নি এমনকি সরকারের আইন, নীতি, সিদ্ধান্ত ও কাজকর্মে এর নেতাদের ব্যক্তিগত ইচ্ছারই প্রতিফলন রয়েছে।”





তিনি সৌদি রাজ পরিবার ও নেতাদের সমালোচনা করে বলেন, “আইনের শাসন ও ধর্মের প্রতি সৌদি সরকারের সম্মানের যে কথা বলা হয় তা নিতান্তই মিথ্যা এবং দূরভিসন্ধিমূলক, যাতে তারা দেখাতে পারেন যে, তারা ইসলামি শাসনব্যবস্থার প্রতি অনুগত রয়েছেন।” প্রিন্স ফারহান আরো বলেছেন, সৌদি সরকার জনগণের দাবি মেনে কোনো ধরনের সংস্কারমূলক কর্মকান্ড হাতে নেয় নি বরং তাদের বিরুদ্ধে দমন-নিপীড়নের পথ বেছে নিয়েছেন।” রাজ পরিবারের প্রিন্সই যদি একথা বলেন, তাহলে আমাদের দেশীয় কাঠ মোল্লাদের অবস্থান কোথায়?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.