নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আতাহার হোসাইন

উড়োজাহাজ

ফেসবুক প্রোফাইল-https://www.facebook.com/ataharh

উড়োজাহাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রসঙ্গ সিরিয়া: আধুনিক শেখ ফরিদ এবং বগল তলার ইট

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:১৭

ভারতবর্ষের পাঞ্জাব রাজ্যের একটি গ্রাম কতোয়াল। এই গ্রামেই ১১৭৩ সালে রমজান মাসের এক ভরা পূর্ণিমা রাতে জন্মেছিলেন মহামনীষী শেখ ফরিদ। মঙ্গলীয়রা যখন কাবুল দখল করল তখন তার পিতামহ, রাজা ফারুক শাহ কাবুলি আফগানিস্তান ত্যাগ করে পাঞ্জাবে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। জন্মের পর তার নাম রাখা হয়েছিল ফরিদ-উদ্দিন-মাসুদ। শেখ ফরিদের জন্মের সময়টাতে পাঞ্জাবের অবস্থা খুব ভাল ছিল না। অর্থনৈতিক মন্দা আর বিদেশিদের আক্রমণে পাঞ্জাব ছিল সর্বদাই জর্জরিত। এমনি অবস্থায় কি নিদারুণ অহিংস মন নিয়ে জীবন-যাপন করেছিলেন শেখ ফরিদ। তিনি ছিলেন একাধারে সূফি, সাধক, কবি ও ধর্মগুরু। এই সুফি সাধকের খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা নিয়ে কারো মনে কোন সন্দেহ নেই। বাংলায় তাকে নিয়ে একটি প্রবাদ বাক্যের সূচনা ঘটেছে। প্রবাদটি মানুষের দ্বৈত চরিত্রের প্রকাশার্থে ব্যবহৃত হয়। যারা এমনিতে ভাল মানুষ সেজে থাকেন কিন্তু ভেতরে ভেতরে অপরের ক্ষতির জন্য মুখিয়ে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে এই প্রবাদ বাক্যটি ব্যবহৃত হয়। সুপরিচিত প্রবাদটি হচ্ছে “মুখে শেখ ফরিদ, বগলে ইট।”

মারামারি, কাটাকাটি ও বৈষম্যপূর্ণ বর্তমান সভ্যতার বুকে যখন কোন কথিত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়, মানুষের উপর অন্যায় ও জুলুম চলে তখন ত্রাতার ভূমিকায় রণসম্ভার নিয়ে হাজির হয় বর্তমান পৃথিবীর একচ্ছত্র অধিপতি এবং একক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। শক্তিশালী একটি রাষ্ট্র হিসেবে, সভ্যতার দাবিদার হিসেবে এটা নাকি তাদের দায় এবং কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। তাছাড়া গণতন্ত্র ও মানবাধিকার কিংবা মানব মুক্তির জন্য তারা নিবেদিত প্রাণ! দুষ্ট রাষ্ট্র, দুষ্ট শক্তিকে দমন করতে তারা দুনিয়ার বুকে নিজেদেরকে ঐশী প্রতিনিধি দাবি করে থাকে। এই অজুহাতে তারা দুনিয়ার যে কোন প্রান্তে, যে কোন দেশে সমরাস্ত্রের ভাণ্ডার নিয়ে হাজির হয়। অতপরঃ দুষ্ট শক্তিকে পুরোপুরি দমন না করা পর্যন্ত তারা নিস্তার হয় না। ভালো কথা, খুবই ভালো কথা। কিন্তু তাদের অন্তর্নিহিত কারণ এবং কার্যক্রম দেখে শুধু উপরোক্ত বাংলা প্রবাদ বাক্যটিই বার বার মনে পড়ে।

তারা নিজেদের দাবি করে তারা গণতন্ত্রের রক্ষক, অন্যের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী। আসলে তাদের এই দাবি সম্পূর্ণ ভূয়া। তাদের এই সুশীল চরিত্রের আড়ালে কথিত দাবীদার শেখ ফরিদের মতই বগলের নিচে থাকে ইট। সাম্প্রতিক মিশরের কথাই ধরুন। অন্যান্য পথে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত তাদেরই দেখানো এবং শেখানো গণতন্ত্রকে অনুসরণ করে মিশরের ইসলামপন্থি (যদিও ইসলামী নয়, পুরোপুরি গণতান্ত্রিক) দল ইখওয়ানুল মোসলেমীন নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়ে ক্ষমতায় যায়। কিন্তু মাত্র এক বছরের মাথায় সামরিক বাহিনী তাদেরকে উচ্ছেদ করে প্রেসিডেন্ট মুরসিকে গৃহবন্দি করে। কথিত গণতন্ত্রকামী ইসলামী দল (!) ইখওয়ানের কর্মীরা বিক্ষোভ করে রাস্তায় অবস্থান নেয়। তাদের উচ্ছেদ করতে সামরিক বাহিনী এক অভিযান পরিচালনা করে প্রায় ২২০০ লোককে হত্যা করে আর আহত করে ১০ হাজারেরও উপরে। তবে দায়িত্বশীল সংবাদ মাধ্যমের মতে তা এক হাজারের মত। দরবেশ আমেরিকা কিন্তু তখন তাদের স্বগোত্রীয় ইখওয়ানকে রক্ষায় এগিয়ে আসে নি, তাদের ব্যাপারে তাদের দায়িত্ববোধও জাগ্রত হয় নি। এমন কি উভয় পক্ষকে শান্ত হওয়ার মত মুরুব্বি সূচক সামান্য উপদেশবাণী উচ্চারণ করেই তারা থেমে যায়। তলে তলে সামরিকবাহিনী এই হত্যাযজ্ঞে তারা সৌদি সরকারের মত উৎসাহই দিয়ে গেছে অথবা মৌন সমর্থন জানিয়ে গেছে। এখানে মানবাধিকার লংঘন হয়েছে বলে তারা মনে করেনি। কিন্তু এর কিছু দিন পরেই গৃহযুদ্ধে জর্জরিত সিরিয়াতে পাণ্ডিত্য সমর্থিত বিদ্রোহী বাহিনীর উপর রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের অভিযোগ উঠে। এ জন্য অভিযুক্ত করা হয় সিরিয়ার একনায়ক বাশার আল আসাদের সরকারকে। অভিযোগ আছে যে এ ন্যাক্কারজনক অপকর্মে ১৩০০ জন এবং দায়িত্বশীল সূত্রে মাত্র সাড়ে ৩ শত জন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে। এবারে কিন্তু তাদের দায়িত্ববোধ তুঙ্গে উঠে গেছে।

কোথায় ২২০০ জন আর কোথায় ১৩০০ জন! যদিও দেখা গেছে এখন পর্যন্ত প্রমাণিত হয় নি ঠিক কে এই কাজ করেছে, তবুও ঘটনার সাথে এর জন্য দায়ী করা হয়েছে সিরিয়ার সরকারকে। কথিত আছে ক্রমাগত নির্মূল হওয়ার পথে বিদ্রোহী বাহিনী কৌশলে বাশার সরকারকে চাপে ফেলার জন্য নিজেরাই এই কাজ করেছে। সেই সাথে আরো কথিত আছে বিদ্রোহী বাহিনীর হাতে এই রাসায়নিক অস্ত্র তুলে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র সৌদি আরবের গোয়েন্দা প্রধান প্রিন্স বন্দর বিন সুলতান সিরিয়ার চিরশত্র“ ইসরাইলের মাধ্যমে। এখন পর্যন্ত জাতিসঙ্ঘের পক্ষ থেকে তদন্তপূর্বক কোন ফলাফল দেওয়া হয় নি। তা সত্ত্বেও ঠিকই ইরাকের মত ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রের মজুদের মিথ্যা অজুহাতের ন্যায় সিরিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করে বগল তলায় ইটের পরিবর্তে পারমানবিক ওয়ারহেডসহ নৌবহর নিয়ে সিরিয় উপসাগরে হাজির হয়েছে দুষ্ট রাষ্ট্র সিরিয়াকে দমন করার জন্য। আর এ ঘটনা সর্বতোভাবে উৎসাহ ও টাকা পয়সা দিয়ে সহযোগিতা করছেন ‘হাজী সাহেব’ সৌদি আরব।

এ পর্যন্ত সিরিয়ায় প্রায় লাখ খানেক মানুষ নিহত হয়ে গেছে শেখ ফরিদদের সমর্থনে বাধা গৃহযুদ্ধের ফলে। আর ১৫ লাখ মানুষ হারিয়েছে তাদের বাসগৃহ। পালিয়ে গিয়ে এখন পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে তারা। আধুনিক শেখ ফরিদদের এবারে দৃষ্টি পড়েছে তাদের দিকে। তাদের দায়িত্ববোধ জাগ্রত হয়েছে। এমনি করে অতীতে শেখ ফরিদরা কথিত গণতন্ত্র এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আবির্ভূত হয়েছিল ইরাক, আফগানিস্তান, ও ভিয়েতনামের মাটিতে। এমনি করেই তাদের অপরাপর সারথিরা অতীতে পৃথিবীর বহু দেশ দখল করে সেখানে ঔপনিবেশীক শাসন কায়েম করেছিল। কিন্তু এই শেখ ফরিদদের ছোঁয়ায় এখনো সেসব দেশ আগুন জ্বলছে, অনৈক্য, দলাদলি, বিভেদ ব্যবধানে জড়িত হয়ে নিজেরা নিজেরা ধ্বংস হচ্ছে। তারা আজ চলে গেছে কিন্তু তাদের দেশে বসেই তারা আজ গুটি চালাচ্ছে। আর আমরা দূরে অবস্থান করেও তাদের গুটির তালে তালে নাচানাচি করছি, একজন আরেকজনকে হত্যা করছি, এক মুসলমান ক্ষতি করছি আরেক মুসলমানের। তাই বলি হায় মুসলমান! আধুনিক শেখ ফরিদ আর পাগড়ি মোড়া হাজ্বী সাবদের চিনতে তোমাদের দেরী হচ্ছে কেন?

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৪১

অচেনা আগন্তুক বলেছেন: আমরা দূরে অবস্থান করেও তাদের গুটির তালে তালে নাচানাচি করছি, একজন আরেকজনকে হত্যা করছি, এক মুসলমান ক্ষতি করছি আরেক মুসলমানের। তাই বলি হায় মুসলমান! আধুনিক শেখ ফরিদ আর পাগড়ি মোড়া হাজ্বী সাবদের চিনতে তোমাদের দেরী হচ্ছে কেন????

তারা ফ্রি মেসনের শয়তানি স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছে!!!!

আর আমরা জানতেই পারছি না!!!

প্রতিটা লাইনে সহমত!!!

জাগো, আত্ম জাগৃতির পথে
সত্য সুন্দর ন্যায়ের
চিরন্তনী চেতনায়!!

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:২২

উড়োজাহাজ বলেছেন: ধন্যবাদ। সজাগ থাকুন, সময় আমাদের হাতেও আসবে। সুদে আসলে শোধ করে নিতে হবে।

২| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৪৪

ইয়ার শরীফ বলেছেন: সবাই আমরা বুঝেও যেন না বুঝার ভান করে চলেছি।
এই শেখ ফরিদ সাজা মহান ত্রাতারা সর্বদা ভেজাল লাগিয়ে রাখতে চায়।

কবে এর থেকে মুক্তি মিলবে?

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:২৩

উড়োজাহাজ বলেছেন: তৈরি থাকুন। সময় তার আপন চক্রে ফিরে আসবে।

৩| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৫৭

মেদভেদ বলেছেন: ভাই ১লা রমযানে কোনদেশে কোন ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পূর্নিমা হয়?????

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:২৪

উড়োজাহাজ বলেছেন: !!!

তথ্যটাতে সাঙঘাতিক ভুল আছে দেখছি। ঠিক করে দিচ্ছি। আগে সঠিক তথ্যটা দেখে নেই।

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩৭

উড়োজাহাজ বলেছেন: মূল সোর্সটাতে ভুল ছিল। আপাতত লাইনটা ঠিক করে দিলাম। সঠিক তথ্যটি যোগাড় করে আপডেট করে দিব।

৪| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৩৪

রাখালছেলে বলেছেন: আমরা কি বা করতে পারি শুধু দেখে যাওয়া ছাড়া ।

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:২৭

উড়োজাহাজ বলেছেন: বহু কিছুই করতে পারি, যদি হতাশ হয়ে অজুহাত না খুজি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.