নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সীমান্তে গরু চোর, চোরাকারবারি আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে নির্বিচারে, নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে, আবার হৈ চৈ হলে বিচারের আয়োজন করেও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এর কোন শাস্তি না হওয়াটা প্রমাণ করে যে বাংলাদেশিরা বোধ হয় পাখি। বিএসএফ সেনাদের হাতের নিশানা ঠিক রাখতে আমাদেরকে করা হচ্ছে টার্গেট। দীর্ঘদিন পর আলোচিত ফেলানী হত্যাকা-ের বিচারের রায়ে অভিযুক্ত বিএসএফ কনস্টেবল অমিয় ঘোষকে নির্দোষ বলে রায় দেয়াটা অন্তত তাই প্রমাণ করে। কিন্তু মনে রাখতে হবে আমরা পাখি নই। যাদের হাতে আজ রাইফেল আছে, তারা যেভাবে নিঃশ্বাস নেয়, তারা যেভাবে ক্ষুৎপিপাসায় ক্লান্তিবোধ করে, হাসি ও দুঃখে যেমন তাদের ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতি প্রকাশ করে- আমাদের ক্ষেত্রেও অনুরূপই হয়। আমরাও একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের অধিবাসী, মানুষ। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে বাংলা-ভারত সীমান্তের এই হত্যাকা- পৃথিবীর আর যে কোন দেশের সীমান্ত হত্যাকা-ের চেয়ে বেশি। এমনকি সর্বদা যুদ্ধরত ইসরাইল ফিলিস্তিন সীমান্তেও এত বেশি হত্যাকা- সংগঠিত হয় কিনা সন্দেহ আছে। অভিযোগ করা হয় যে সীমান্তে চোরাচালান, গরু চোর ও চোরাকারবারীদের হাত থেকে আত্মরক্ষার্থেই নাকি বিএসএফ গুলি করে থাকে। কিন্তু আলোচিত ফেলানীর নির্মম হত্যাকা-ের ব্যাপারেও এই অভিযোগ করে তারা পার পাবে কি? দীর্ঘদিন দিল্লিতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করা এক নিরীহ কিশোরী, যার বিয়ে ঠিক হওয়াতে কাটাতারের সীমানা পার হতে গিয়ে বাবার সাথে ফিরছিল স্বদেশের বুকে। পঞ্চদশী এই নিরীহ, নিরস্ত্র কিশোরী তাদের জন্য কতটুকু হুমকি ছিল? তার হতে কি কোন প্রকার আগ্নেয়াস্ত্র ছিল, কিংবা বিএসএফ চ্যালেঞ্জ করলে কি সে তাদের দিকে অস্ত্র তাক করেছিল? এই বলে কোনমতেই পার পেতে পারে না তারা। কিন্তু নিরীহ এই কিশোরী তাদের হাত থেকে রেহাই পেয়েছে কি?
সীমান্তে সংগঠিত এসব হত্যাকা-ের বেশিরভাগের বিচার কখনোই হয় না। কিন্তু আলোচিত ফেলানী হত্যাকা- নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর চাপের মুখে কথিত বিচারের আয়োজন করে অভিযুক্তকে নির্দোষ প্রমাণিত করা কোন বিচারের পর্যায়ে পড়ে? কেউ যদি শাস্তিই না-ই পেল, দ-িতই না-ই হোল- তাহলে প্রশ্ন জাগে ফেলানী কি নিহত হয় নি, নিহত হওয়ার পর পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত কি সে কাটাতারে ঝুলে থাকে নি? সংবাদ মাধ্যমে হৈ চৈ হওয়ার পর কাটা তার থেকে ছাড়িয়ে তাকে যেভাবে নিয়ে যাওয়া হয় তা দেখে সত্যিই ফেলানীকে মানুষ মনে হয় নি। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী প্রতিটি মানুষই বিএসএফ এর ব্যাপারে সর্বদা আতঙ্কে থাকেন। কারণ তাদের আচরণ থেকে মনে হয় সীমান্তের বাংলাদেশীরা মানুষ নয়, পাখি। পাখি শিকারে শিকারীর হাত যেমন সর্বদা নিশপিশ করে বাংলাদেশিদের গুলি করার জন্য তাদের অবস্থাও যেন তাই। সামান্য ছুতো দেখিয়ে তারা গুলি করে, সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশীদের ধরে নিয়ে যায়, পরে লাশ ফেরত দেয়। অথচ বাংলাদেশের সীমান্ত কর্তৃপক্ষ এর সমুচিত জবাব দিতে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করলে মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েই তাদের নির্বৃত্ত করা হচ্ছে। কিন্তু একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের জনগণের উপর এমন আচরণ করা নীতির কোন পর্যায়ে পড়ে? আসলে এ ব্যাপারে আমাদের নিজেদেরও দায় রয়েছে। নির্বিচারে হত্যাকা- ঘটানোর পর বিচার চেয়ে বিচার না পাওয়াটা আমাদেরকে যেমন হতাশাগ্রস্থ করবে তেমনি হত্যাকারীদের করবে উৎসাহী। তাই এই ব্যাপারে আন্তর্জাতিকভাবে একটি সুরাহায় আসা এখন সময়ে দাবি। বৈদেশিক বাহিনীর হাত থেকে নিজ দেশের নিরস্ত্র ও নিরীহ নাগরিকদের রক্ষার্থে এ দেশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের উচিত যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করা। কারণ আমরা পাখি নই, আমরাও মানুষ। আমরা গুলি খেয়ে কাটাতারে ঝুলে থাকতে চাই না। আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের মানুষ, সীমান্ত গলে আমাদেরকে ধরে নেওয়া চলবে না, হত্যা করা চলবে না। এটা আমরা মেনে নেবো না। আমরা সার্বভৌম এবং স্বাধীন- এটি প্রমাণ করার দায়িত্ব আমাদের কর্তৃপক্ষের হাতেই ন্যাস্ত।
©somewhere in net ltd.