নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আতাহার হোসাইন

উড়োজাহাজ

ফেসবুক প্রোফাইল-https://www.facebook.com/ataharh

উড়োজাহাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন হিমাংশু এবং আমাদের চাকুরিপ্রবণতা

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:০৯

বিশ্বজুড়ে চলা মন্দার বাজারে ৯৩ লাখ রুপির (১,১৫,০০০ মার্কিন ডলার) চাকরি পেয়ে তাক লাগিয়ে দিলেন দিল্লি টেকনোলজিকেল ইউনিভার্সিটির চতুর্থ বর্ষের ছাত্র হিমাংশু জিন্দাল। স¤প্রতি কলেজের ক্যাম্পাসিংয়ে মার্কিন সংস্থা গুগলে চাকরির নিয়োগপত্র পেয়েছেন তিনি। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ছাত্র আদতে পাঞ্জাবের বাসিন্দা। এবছরের আগস্টেই মার্কিন বহুজাতিক সংস্থাটি তাদের প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য দিল্লির ক্যাম্পাসিংয়ে এসেছিল। সেখানেই লিখিত পরীক্ষা নেয় সংস্থাটি। পরীক্ষায় সাফ্যল্যের সঙ্গে পাশ করেন হিমাংশু। এরপর চার দফায় ইন্টারভিউ।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। সেখানেই সংস্থার পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়, হিমাংশুকেই তারা যোগ্য প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছে। আগামী বছরের অক্টোবরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গুগলের দপ্তরে কাজে যোগ দিতে হবে তাকে।

নিজের এ সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হিমাংশু জানিয়েছেন, পুরো ব্যাপারটা এখনো স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে। পাশাপাশি এ সাফল্য উৎসর্গ করেছেন বাবা-মাকে। আলাদাভাবে প্রস্তুতি নয়, একনিষ্ঠতা ও কঠোর পরিশ্রমই এ সাফল্যের চাবিকাঠি বলে জানিয়েছে হিমাংশু। ছেলের এ সাফল্যে খুশি পাঞ্জাবের মানসা গ্রামের বাসিন্দা হিমাংশুর বাবা-মাও।

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য পিবি শর্মা জানিয়েছেন, এ সাফল্য নতুন নয়। প্রতি বছরই এখান থেকে অনেক ছাত্র আন্তর্জাতিক সংস্থায় চাকরি পায়। এর আগেও ৫৮ লাখ রুপি বেতনের চাকরি পেয়েছিলেন এক ছাত্র।



এই হচ্ছে মূল খবর। কিন্তু এর পরের ঘটনা হবে এরকম- হিমাংশু ঠিকঠাক মতই যুক্তরাষ্ট্রে গেল। ভাল বেতনে চাকরি শুরুও করল। প্রথম প্রথম বাবা মায়ের কথা মনে করে কান্না করবে। আড়ালে গিয়ে রুমালে চোখের পানি মুছবে। ক্ষণে ক্ষণে তার মন চাইবে ছুটে যেতে দেশের মাটিতে। কিন্তু মাস পেরোলেই এতগুলো অর্থের আকর্ষণে মনকে কঠিন করে বাধার চেষ্টা করবে। ওদিকে এশিয়ান বলে তার গায়ের চামড়া কালো বা বাদামী। তাই শিকার হবে টুকটাক রেসিজমের। মুসলমান হলে তো কথাই নেই। সে দেশের মানুষ গায়ে থুথ ছিটাতো। কিংবা এয়ারপোর্টেই বসিয়ে রাখা হতো ১০ ঘণ্টা। ভাগ্যিস মুসলমানের বাচ্চা নয়। যা হোক এক সময় সে তার প্রতিভা দিয়ে জয় করে নেবে প্রভুদের মন। কিন্তু সর্বদাই গায়ের রং বাদামী কিংবা কালো বলে সব মনে একটা হীনমন্যতা কাজ করবে। প্রভুরাই শ্রেষ্ঠ এই ধারণার বশবর্তী হয়ে মনটাকে ক্ষুদ্র করে রাখবে সব সময়। ধীরে ধীরে তার কাছে কিছু মানুষ তার কাছে ভীড়বে না তা নয়।





শত হলেও প্রতিভাবান একটি ছেলে। ধীরে ধীরে বন্ধুত্বও হবে। তাদের দেশের স্বাভাবিক নিয়ম অনুসারে তারা যা করে আমাদের হিমাংশুও তাই করা শুরু করবে। ধীরে ধীরে নিজেকে মানিয়ে নেবে তাদের কালচারের সাথে। এমননিতে ধর্মের বিধিনিষেধকে উড়িয়ে দিয়ে হুইস্কি মদ ধরলেও আত্মায় কিছুটা ধর্মের গন্ধ থাকায় অন্তত বিয়েটা করবে ভারতেরই কোন মেয়েকে। দিনে দিনে দেশপ্রেমিক ছেলেটা সেখানেই স্থায়ী হয়ে যাবে।



প্রচুর অর্থ আর বিলাসী জীবন পরিচালনা করতে গিয়ে দিনে দিনে আত্মায় দেখা দেবে একধরনের শূন্যতা। দিনের পর আরো চাই আরো চাই করতে করতে অর্থই হয়ে যাবে তার প্রভু, ধ্যান-জ্ঞান। ভারতে থাকতে সে যেমন ভগবানের পূজা করত, সেখানে ভগবানের মুর্তি এবং ভগবানের ঘর অর্থাৎ মন্দির না থাকায় পূজা করাটাও দিন দিন ভুলে যাবে। কিন্তু মানুষকে তো কাউকে না কাউকে পূজা করতেই হয়। তাই সে পূজা করবে অর্থ বিত্তের। অর্থ কামাবে ভোগ করবে, এটাই হবে তার জগত। বিয়ে করা বউটি দিন দিন তাকে চাহিদার পর চাহিদা দেখিয়ে তার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে খরচ করবে। আর টাকা পয়সার কমতি না থাকায় সে মোটেও কার্পন্য করবে না। এভাবে চলতে থাকবে তাদের দিন, প্রবাস জীবন।



কখনো কখনো মনে হবে দেশের কথা, মায়ের কথা। কিন্তু এত বড় চাকুরি সে কোনভাবেই ছাড়ার কথা ভুলেও মনে আনতে পারবে না। তাই ফিরে আসা হবে না দেশের বুকে মাটির টানে। এভাবেই অর্থ বিত্তের জোয়ারে একটা দোপেয়ে পশুতে পরিণত হবে আমাদের হিমাংশু। যার কাজ আয় রোজগার করা, ভোগ করা এবং বংশবৃদ্ধি করা। যদিও মার্কিন মুল্লুকে বংশবৃদ্ধিও নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বংশবৃদ্ধি এবং সন্তানদের লালন পালন করতে গিয়ে ঝামেলা পোহাতে হয় বলে তারা একের অধিক সন্তান নেয় না। সেই বাচ্চা একদিন বড় হবে। স্বাভাকিভাবেই তার মুখের ভাষা হবে ইংরেজী। সে গাইবে পাশ্চাত্য রক এন্ড রোল, হিপহপ ইত্যাদি সঙ্গীত। মাতৃভাষা এবং পিতৃভাষা হিন্দি হলেও সে তার খুব কমই বুঝতে পারবে এবং বলতে পারবে। কয়েক বছরে ব্যবধানে তারা ধীরে ধীরে নিজের দেশের কথা, মাতৃভূমির কথা একেবারেই ভুলে যাবে। দেশ হারাবে একজন হিমাংশু, দেশ হারাবে একটি প্রতিভা, দেশ হারাবে তার সম্পদ।



আমাদের হিমাংশু হয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ। এভাবেই উন্নত দেশগুলো আমাদের দেশের মেধাগুলো কিনে নেয়। আমাদের হাতে থাকে মেধাহীন ছুরি, ক্ষুর আর পটকা ফুটানোর মত গুণ্ডা বদমায়েশগুলো। এর চাইতে যারা একধাপ এগোতে পারে তারা হবে এদেশীয় সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের চাকুরীজীবী। আর ঘুষ টুস দিয়ে কোনমতে একখানা সরকারী চাকুরি বাগাতে পারলে বৈধ অবৈধ বিভিন্ন উপায়ে নিজের পকেট ভরবে। এদের চিন্তা হবে আত্মোন্নতি। জাতির দিকে না তাকিয়ে তারা সর্বদা তাকাবে নিজের উদরপূর্তির দিকে। বাকীরা ছুরি চালাচালি করে একদিন বড় নেতা হবে, এমপি হবে মন্ত্রী হবে। দেশটাকে পৈতৃক সম্পত্তি ভেবে লুটে খাবে। আরও যারা বিরাট একটা অংশ বাকী থাকবে তারা হবে আমজনতা। কয়েক বছর ব্যাবধানে রাষ্ট্রের জন্য একটি ভোট দিয়েই যারা নিজেদের কর্তব্য পূর্ণ করবে। জাতি গঠনে তাদের কোন ভূমিকা থাকবে না।



নেতাদের প্রকাশ্য চুরিরও প্রতিবাদ করতে পারবে না। তারা এমন একটি খাচায় প্রবেশ করবে যার ভেতরে প্রবেশ করা যায় আলগোছে কিন্তু বেরিয়ে আসতে গেলে কারো গায়েরই চামড়া থাকেনা। এর প্রকৃত কারণ হচ্চে আমাদের চাকুরি করার মত গোলামী মানসিকতা এবং নিজেদের প্রকৃত পরিচয় না জানা। প্রকাশ্য গোলামী যুগের অবসান ঘটেছে অনেক আগেই, কিন্তু মন থেকে গোলামী আমাদের এখনো যায় নি। বিদেশী চাকুরী এখনো আমাদের কাছে স্বর্গতুল্য। তাই বলতে হয় মেরুদণ্ড সোজা করা জাতি হওয়া এখনো বহুদূর।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:৩২

খেয়া ঘাট বলেছেন: মুসলমান হলে তো কথাই নেই। সে দেশের মানুষ গায়ে থুথ ছিটাতো। - এ কথাটা কীভাবে লিখলেন? বা কথাটার সত্যতা কতটুকু?

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:৪৪

উড়োজাহাজ বলেছেন: লেখক বলেছেন: একটু চোখ কান খোলা রাখলেই দেখতে পাবেন। প্রতিটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটার পর ইউরোপীয় দেশগুলোতে মুসলমানদের কি দশা হয় তা খেয়াল করুন। ১.১১ পরবর্তী ডাটাগুলো খেয়াল করে দেখুন।

অথচ এরা নিজেরাই সন্তাসী কর্মকাণ্ড ঘটানোর জন্য প্ররোচিত করে।
Click This Link

২| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৭:২৫

ঢাকাবাসী বলেছেন: লেখার অনেকটাই আপনার নিজস্ব মতামত, সবটার সাথে সবাই একমত নাও হতে পারে। তবু ভাল লিখেছেন।

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:১৭

উড়োজাহাজ বলেছেন: তাতো অবশ্যই। এটি আমার কল্পনা থেকে লেখা। প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই যে তা হবে তা তো নয়।

৩| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৩২

সাইবার অভিযত্রী বলেছেন: @খেয়াঘাট , আমি ১ বছরের বেশী আমেরিকায় থেকে দেখেছি ওরা কতটা রেসিস্ট । বুঝার ইচ্ছা থাকলে দাড়ি টুপি নিয়ে ১ বছর ঐ দেশে থেকে দেখেন ।

আর সব রেসিজম ফাইলবদ্ধ করে রাকা যায় না, বাড়ীর শাশুরী - বউ সব দন্দ্ব সব অনাচার লিখতে পারবেন না বিঝার বিষয় ।

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:২২

উড়োজাহাজ বলেছেন: আমি কখনো সেদেশে যাইনি। কিন্তু সংবাদ মাধ্যমের সাথে জড়িত থাকায় বুঝতে পারি সেদেশের অবস্থা। ইন্টারনেট ঘাটলেই এই সত্যটা বুঝতে পারা যায়। আর যারা ইউরোপ-আমেরিকানদের সম্বন্ধে ভাল বলবে তাদের অবস্থা সম্ভতবত: চূড়ান্ত হীনমন্যতার পর্যায়ে পড়েছে।

আপনাদের মত যারা প্রত্যক্ষদশী তারা আপনাদের অভিজ্ঞতাগুলো প্রকাশ করতে পারেন। কারণ আপনাদের কথাগুলোর গ্রহণযোগ্যতা বেশি। আর যারা পাশ্চাত্য গোলামী মানসিকতায় অন্ধ হযে আছে তাদের কিছুতেই বোঝানো সম্ভব নয়। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সাপোর্ট দেওয়ার জন্য।

৪| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:১২

শ্রাবণধারা বলেছেন: নিতান্তই উট্ভট চিন্তাভাবনা। এই হিমাংশুরাই ভারতকে সবেচেয়ে বেশি দেবে। শুধু ফরেন রিজার্ভ নয়, গোগল থেকে অর্জিত দক্ষতার অনেকটাই সে নিজের দেশে এসে কাজে লাগাবে - বুড়ো বয়সে এসে হলেও।

আজকের যে ভারত তার মূলে হল এই রকম অজস্র হিমাংশু। আর ভারত সরকারের দক্ষতাটা হল এখানে যে, এরা হিমাংশুদের খুব ভালভাবে কাজে লাগাতে জানে, বাংলাদেশ কাজে লাগানো কি, পারলে যাতে কেউ বিদেশ থেকে না ফেরে সেই অবস্থা করে রেখেছে দেশের। তারপরও বাংলাদেশের যারা সত্যিকারের সোনার ছেলে মেয়ে তাদের সিংহভাগের মোল্ডিংটা/ ছাঁদটা বিদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানেই তৈরি হয়েছে।

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:২০

উড়োজাহাজ বলেছেন: আমি বলিনি হিমাংশুরা অর্থ দেবে না। অনেক হিমাংশুদের টাকার বিনিময়েই আমাদের দেশগুলোর অর্থনীতির চাকা সচল আছে। সে জন্য আমারও কৃতজ্ঞতাবোধ আছে।
কিন্তু তাদের টাকা এদেশে এসে ভালভাবে কাজে লাগবে না। ঐ যে রাজনীতিক অমানুষগুলো আছে তারা হিমাংশুদের পাঠানো অর্থের শ্রাদ্ধ করে ছাড়ছে। একসময় হিমাংশুরা এমনভাবেই টাকা দেবে যা দিয়ে আসলে তার পরিবার খেয়ে পড়ে বাচতে পারে মাত্র। কারণ বেশি দিলেই লোলোপ দৃষ্টি পড়বে হায়েনাদের।
এই নজীর বহু রয়েছে, বহু হিমাংশু পাশ্চাত্যের স্রোতে হারিয়ে ফেলেছে নিজেদেরকে। বিক্রি হয়ে গেছে তাদের কাছে।

আমি হিমাংশুকে নিতান্তই বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেছি। আমি এও বলতে চাই যে আমাদের প্রতিভাগুলোকে আমরা ধরে রাখতে পারছি না।

অবশ্যই এটা আমার কল্পনা থেকে লেখা। আপনার কল্পনার সাথে নাও মিলতে পারে। মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

৫| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৮

সাইবার অভিযত্রী বলেছেন: কোন কারণ ছাড়া শুধু সন্ডেহের কারণে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া, হাজতে ঠান্ডা ঘরে আটকে রাখা, নামাজ পড়তে না দেওয়া, টয়লেট করতে চাইলে দরজা বন্ধ করতে না দেওয়া- অনেক কিছুই আমার ১ বছরের আমেরিকার জীবনে ঘটেছে ।

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:২৪

উড়োজাহাজ বলেছেন: টয়লেট করতে গেলে দরজা বন্ধ করতে না দেওয়া! এর চাইতে ঘৃণ্য প্রাণী আর কী থাকতে পারে দুনিয়ায়?

আমি উভয়কেই বলছি। কারণ, একজনকে এমন অমানবিক কাজের জন্য আর অন্যজনকে এই জন্য যে তারা কেমন লানতের বস্তু হয়েছে যে তাদেরকে এমন ঘৃণা করা হয়!

কী ঘৃণ্য জীল্লতির জীবন? কবে আমাদের উপর থেকে লানত উঠবে আল্লাহই জানেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.