নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক বাণিজ্যের বিরাট অংকের মুনাফা অর্জিত হয় পোশাক শিল্পের মাধ্যমে। কিন্তু নানাবিধ কারণে ইদানিং হুমকির মুখে পড়েছে এই শিল্পটি। এর মধ্যে শ্রমিকদের প্রতি অবহেলা, অন্যায্য শ্রমমূল্য, কারখানার বৈরি পরিবেশ, দুর্ঘটনা ইত্যাদি কারণে একে তো বৈদেশিক ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে অপরদিকে শ্রমিক অসন্তোষও এখন তুঙ্গে। এমতাবস্থায় আশঙ্কা দাঁড়িয়েছে এ সকল বৈরী পরিবেশ সামলে এই শিল্প ভবিষ্যতে টিকে থাকে কি না। কারণ এই সব প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়ে বিশ্ববাজারের প্রতিযোগিতার মুখে এই শিল্প এখন বিরাট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। তবে এসব কিছুর পেছনে আন্তর্জাতিক একটি চক্রের সুগভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে বলেও ধারণা করছে এই শিল্পের সাথে জড়িত কর্তাব্যক্তিরা।
এছাড়াও ঈদের সামনে ফের বেতন ভাতার দাবিতে রাস্তায় শ্রমিকদের নেমে আসা মোটেই সহজ হিসেবে দেখছেন না কেউ। রাজনৈতিক অঙ্গনে আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে অনেকটা ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্ন’ পরিস্থিতির মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ রফতানি খাত সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে।
অন্যদিকে আন্দোলনরত শ্রমিকরা বলছেন, ৩ বছর পর মালিক পক্ষ,থেকে শ্রমিকদের ৬শ’ টাকা বেতন বাড়ানোর যে প্রস্তাব উত্থাপন করেছে তা শ্রমিকদের সাথে এক ধরনের রসিকতাস্বরূপ। এই রসিকতার বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ।
এদিকে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নিয়ে টালবাহানাকারী গার্মেন্ট মালিকদের যুক্তিকে খোঁড়া যুক্তি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি, মালিকরা নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থে শ্রমিকদের বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভাবছেন না। ন্যূনতম মজুরির দাবিতে গত চারদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে পোশাক শ্রমিকরা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করছেন। কিন্তু মালিকরা কিছুতেই শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির দাবি মানতে রাজি নন। ১৭০ দশমিক ৭৪ শতাংশ বাড়ানোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মালিকপক্ষের ন্যূনতম মজুরি ২০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাবকে মেনে নেননি শ্রমিকরা। তাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে পরিবেশ। মালিকপক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই মুহূর্তে চার হাজার টাকার ওপরে ন্যূনতম মুজরি হলে বেশিরভাগ কারখানাই বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন তারা।
এ বিষয়ে মজুরি বোর্ডে মালিকপক্ষের সদস্য ও বিজিএমইএ’র পরিচালক আরশাদ জামান দিপু বলেন, শ্রমিকরা ৮ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির যে দাবি করছেন, তা বেশিরভাগ কারখানাই দিতে পারবে না। কারখানাগুলোর উৎপাদন খরচ এরই মধ্যে ১২ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। এতেই হিমশিম খাচ্ছেন মালিকরা। তাছাড়া গার্মেন্টসের কাজ সিজনাল। যখন কাজ থাকে না তখন কাজ না করিয়েই বেতন দেওয়া হয়। চার হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি হলেই অনেকে কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন। আরশাদ জামান দিপুর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শ্রমিক ও শিল্প ঐক্য পরিষদের সাধারণ স¤পাদক তৌহিদুর রহমান বলেন, কারখানা মালিকরা দেশের সর্বোচ্চ সুবিধা ভোগ করেন। সবচেয়ে কম কর দেন। কিন্তু শ্রমিকদের বেতন দেন সবচেয়ে কম। চার হাজার টাকার বেশি মজুরি দিলে কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে- এ ধরনের কথার কোনো ভিত্তি নেই। মালিকদের সদিচ্ছা থাকলে ন্যূনতম মজুরি শ্রমিকদের প্রত্যাশিত মাত্রায়ই দেওয়া সম্ভব। তাছাড়া বায়ারদের কাজ সাব-কন্ট্রাক্টের মাধ্যমেই বেশিরভাগ কারখানা করে থাকে। সেক্ষেত্রে একটি কারখানা অনেক বায়ারের কাজ করে। সিজনে কাজ বন্ধ রাখতে হয় না।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক ও শিল্প ঐক্য পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, রপ্তানিকৃত একটি পণ্য থেকে আয়কৃত অর্থের পাঁচ থেকে সাত শতাংশ শ্রমিকদের পেছনে ব্যয় করেন মালিকরা। অন্যান্য খরচ বাদ দিলেও প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশই মালিকদের মুনাফা থাকে। তবে বিজিএমই’র দ্বিতীয় সহ সভাপতি এসএম মান্নান কচি বলেন, আমরা ১৩ থেকে ১৫ শতাংশ ব্যয় করি শ্রমিকদের জন্য। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, পোশাক শিল্প থেকে প্রতি বছর ৩২ হাজার কোটি টাকা রফতানি করা হয়। এর মধ্যে যদি ১৬০ হাজার কোটি টাকাও মুনাফা হয় তার মধ্যে ৮০০ কোটি টাকা শ্রমিকদের দেওয়া হলে মালিকদের এমন কিছুই হবে না। তাতেও মালিকদের ৭৫ শতাংশ মুনাফা থাকবে। সুতরাং মালিকদের ন্যূনতম মজুরি দেওয়াটা খুব বেশি কষ্ট হওয়ার কথা নয়।
এদিকে মালিক শ্রমিকের এই ব্যবধানের চেয়ে বেশি আতঙ্কজনক খবর হচ্ছে বাংলাদেশের এই শিল্পখাতটিতে অনিয়ম ও অরাজকতাপূর্ণ পরিবেশের জন্য ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বিদেশী ক্রেতাদের নিকট। বিবিসির একটি প্রতিবেদনে প্রচার করা হয় যে, অনুসন্ধানে দেখা গেছে- বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শ্রমিকরা বিপজ্জনক পরিবেশে ১৯ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করছেন। এই সব কারখানায় পশ্চিমা দেশগুলোর বিভিন্ন নামকরা পোশাক তৈরি করা হয়। কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের যে দীর্ঘ সময় কাজ করানো হচ্ছে, এটি গোপন করার জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষ কাজের সময়ে দুইটি পৃথক হিসেব রাখেন। পশ্চিমা ক্রেতাদেরকে নকল হিসেব দেখানো হচ্ছে। বিবিসির প্রতিবেদক রিচার্ড বিলটন দাবি করেন, বাংলাদেশি পোশাক শ্রমিকদের কারখানার মধ্যে আটকে রেখে সাড়ে ১৯ ঘণ্টা কাজ করানো হয়। আর তার বিনিময়ে তারা মাত্র আড়াইশ’ টাকার মতো আয় করেন। তিনি বলেন, প্রধান ফটকে তালা লাগানোয় কারখানায় আগুন লাগলে শ্রমিকরা ভিতরে আটকা পড়ে সবাই মারা যাবে।
এসব ঘটনা বিদেশের কাছে প্রমাণিত হলে স্বাভাাবিকভাবেই পোশাক শিল্প হুমকির মুখে পড়বে। তবে সার্বিক পরিস্থিতিতে এ ব্যবসায় বাংলাদেশের সাথে যেসব দেশের প্রতিযোগিতা রয়েছে তাদের হাত আছে কি না তা নিয়েও কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করছেন। আবার গার্মেন্ট শ্রমিকদের উস্কে দিয়ে সরকারে বিরুদ্ধে বিরোধীদল সুযোগ নিতে চাইছে- এমনটাও বলছেন সরকারদলীয় নেতাকর্মী ও উচ্চ পর্যায়ের নীতি নির্ধারকগণ। তবে ঘটনা যার দ্বারাই হোক, এ ঘটনা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য মারাত্মক হুমকি ডেকে আনছে।
২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫৮
উড়োজাহাজ বলেছেন: হুম!! তবে শ্রমের ন্যায্য মূল্যটাও ভাবতে হবে। দুইদিকেই গলদ আছে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:০৯
রসায়ন বলেছেন: এই সব ভারতের কাজ । ১৯৪৭-১৯৭১ পর্যন্ত পাকিস্থান ছিল আমাদের বড় শত্রু আর বর্তমানে ভারত !
এই আন্দোলন করা করাচ্ছে তাদেরকে ক্রসফায়ারে দেয়া হোক । সিপিডিকে ব্যান করা হোক !
চুশীলরা দেশের শত্রু !