নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অবৈধভাবে অর্থ গ্রহণ ছাড়াই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাতে স্বচ্ছলভাবে জীবন-যাপন করতে পারে সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বেতন বাড়ানোর সুপারিশ করবে বলে বেশ কিছুদিন আগে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে পে এন্ড সার্ভিসেস কমিশন। প্রশ্ন হচ্ছে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে আসলেই কি সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি দমন করা সম্ভব হবে? এর উত্তরে খুব সহজেই বলে দেওয়া যায় যে- এই সিদ্ধান্তটি সম্পূর্ণ ভুল, বেতন বাড়িয়ে কোন দিন দুর্নীতি প্রতিরোধ করা যাবে না। যারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এর পেছনে হয়তো তাদের যুক্তি রয়েছে যে- কম বেতনের কারণেই সরকারি কর্মকর্তাগণ দুর্নীতির সাথে জড়িত হন, তাদেরকে যথার্থ বেতন দিলে তারা দুর্নীতির সাথে জড়াবেন না। এই ধারণা মোটেও ঠিক নয়। কেননা যে স্বচ্ছল জীবন-যাপনের কথা বলা হচ্ছে সে স্বচ্ছলতার সংজ্ঞা কি, স্বচ্ছলতার সীমাই বা কতটুকু? দ্বিতীয়ত, মানুষের চাহিদারই বা শেষ, কোথায়, কতটুকু পেলে মানুষ তুষ্ট হয় তা কি আমাদের জানা আছে? সাধারণত আমরা দেখতে পাই গ্রামের যে মানুষ সাধারণ একজন মানুষ খুব অল্পতেই তুষ্ট থাকেন। কিন্তু সেই সাধারণভাবে জীবন-যাপনকারী মানুষটিই শহরে এসে তার পোশাক-আশাক, চলাফেরা, খাদ্যাভাসে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসে। আগে সে গ্রামের রাস্তায় মাইলের পর মাইল পথ পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতো কিন্তু সেই একই ব্যক্তি শহরে এসে অল্প দূরত্বে পথ হাঁটতে চায় না। সম্ভব হলে সে ব্যক্তিগত গাড়ি কিনে নেয়। অল্প দূরত্বের রাস্তায়ও সে গাড়িতে চড়ে যাতায়াত করে। সুতরাং একইভাবে বেতন বৃদ্ধি পেলে সরকারি কর্মকর্তাগণ আরো বেশি খরচ করতে শিখবেন না তার নিশ্চয়তা কী?
অন্যদিকে প্রতিবারই বেতন বাড়ার সাথে সাথে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দেশীয় অর্থনীতিতে কি পরিবর্তন আসে তা আমরা ভুলে যাই কেন? বেতন বাড়ার সাথে সাথে সামর্থ বৃদ্ধি পেয়েছে এই অজুহাতে প্রতিটি নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে বাস ভাড়া, রিক্সা ভাড়া, বাড়ি ভাড়া সবকিছু লাফ দিয়ে বেড়ে যায় না কী? সুতরাং বেতন বাড়লেও তা থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের আখেরে কোন সুবিধা হয় না। বরং এমনও দেখা যায় যে, বেতন যতটুকু বেড়েছে খরচ বেড়েছে তার দ্বিগুণ।
এছাড়া বেতন বাড়ার ফলে শুধু সরকারি কর্মকর্তাদেরই খরচ বাড়ে না। যারা অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকুরি করেন তাদেরও খরচ বেড়ে যায়। তখন তারা পড়েন সবচেয়ে বড় সমস্যায়। কেননা সরকারি বেতনের সাথে তাদের বেতন তো আর বাড়ছে না। এভাবে প্রতিবার বেতন বাড়ার সাথে সাথে সর্বত্রই একটা অস্থিরতাও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
মানুষ চরিত্রগতভাবেই এমন যে সে যদি নিজের আত্মাকে নিয়ন্ত্রণ না করে তবে তার চাহিদা বাড়তেই থাকে। এ চাহিদার কোন শেষ নেই। মানুষের মনমানসিকতা সম্বন্ধে নিশ্চয় তার স্রষ্টা মহান আল্লাহর চেয়ে কেউ ভাল জানার কথা নয়। তিনি মানুষের এই স্বাভাবিক স্বভাব সম্বন্ধে কোর’আনের সুরা তাকাছুরে বলেছেন, ‘মানুষ কবরে যাওয়া পর্যন্ত পার্থিব সম্পদ তাদেরকে মোহগ্রস্ত করে রাখে।’ অর্থাৎ কোন দিন তার চাহিদার শেষ হয় না।
তাছাড়া বর্তমান ইহুদি-খ্রিস্টান যান্ত্রিক সভ্যতা অর্থাৎ দাজ্জাল তার চাকচিক্য প্রচার-প্রচারণার দ্বারা পাথিব জগতকে মোহময়ী করে তুলেছে। অপ্রয়োজনী ভোগ-বিলাসকে তার সামনে অতি প্রয়োজনীয় করে তুলেছে। ফলে মানুষ ক্রমে ক্রমে একটি দেহ সর্বস্ব প্রাণীতে রূপান্তরিত হয়েছে। অন্যদিকে তার আত্মিক শক্তি হারিয়ে গেছে। ন্যায়-অন্যায়, ভাল-মন্দ, হালাল-হারাম ও পরকালীন জবাবদিহিতার ভয় উঠে গেছে। ফলে পাশ্চাত্যের ন্যায় প্রায় সমস্তমানবজাতির জীবন দর্শনই এই হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, উদয়াস্ত পরিশ্রম করে সম্পদ কামাও এবং তা ভোগ করো। এই সভ্যতা তাদেরকে আরো শিক্ষা দিয়েছে যে, জীবন একটাই, সুতরাং যতক্ষণ বেঁচে আছো ততক্ষণ ভোগ করো। এই ভোগের জন্য অর্থ-বিত্ত কিভাবে, কোন পথে আসবে তা নিয়ে চিন্তা নয়। হালাল-হারামও এখানে বিবেচ্য বিষয় নয়।
শুধু আমাদের দেশেই নয়, সারা পৃথিবীতেই ঘুষ, দুর্নীতি ইত্যাদি নানা ধরনের অবৈধ পথে উপার্জন একটি বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিসংখ্যান খুললে দেখা যাবে যে, যেসব দেশ যত উন্নত সেসব দেশে দুর্নীতি, প্রযুক্তির ব্যবহার করে চুরি ডাকাতি তত বেশি। সুতরাং কম বেতন নয়, আত্মিক অবনতিই মানুষকে অপরাধপ্রবণ এবং দুর্নীতিগ্রস্ত করেছে। তাই শুধু বেতন বাড়ানো নয়, আগে দরকার আত্মিক পরিশুদ্ধি। এজন্য শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে শিশুকাল থেকেই প্রতিটি মানুষকে ন্যায়-নীতি, আদর্শ, বৈধ-অবৈধ ও পরকালীন জবাবদিহিতা ইত্যাদি গুণ শিক্ষা দিতে হবে। অঢেল সম্পদ নয়, দরকার আত্মনিয়ন্ত্রণের শিক্ষা।
৩/১৬/২০১৪
১৬ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৪
উড়োজাহাজ বলেছেন: হ্যা, তাই।
২| ১৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:৩৬
রাজীব বলেছেন: বেতন বাড়লে দুর্নীতি কমবে কি না জানিনা। তবে আমরা যারা শুধুমাত্র বেতনের টাকা দিয়ে চলি তারা আরেকটু স্বচ্ছল জীবনযাপন করতে পারবো।
১৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:৫২
উড়োজাহাজ বলেছেন: মোটেও না। আপনাদের চাহিদা আরো বাড়বে। যুক্তির আলোকে তা বলা হয়েছে।
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৩:৩১
হেডস্যার বলেছেন:
এখন বেশি বেতন ও খাবে...ঘুষ ও খাবে