নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আতাহার হোসাইন

উড়োজাহাজ

ফেসবুক প্রোফাইল-https://www.facebook.com/ataharh

উড়োজাহাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সংবাদ বিশ্লেষণ: মাহাথিরের বাংলাদেশ সফর ও তার কথা

১৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:২৬

গত ১৫ই মার্চ বাংলাদেশ ঘুরে গেলেন আধুনিক মালেয়শিয়ার রূপকার ও সে দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির বিন মোহাম্মদ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউআইটিএসের সমাবর্তন উপলক্ষে প্রায় ২৩ ঘণ্টার সংক্ষিপ্ত সফর শেষ করে পরদিন তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে যান। এ সময়ে তিনি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান জনপ্রিয় সংবাদপত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সংবাদপত্রটির সাথে একটি সাক্ষাতকার প্রদান করেন। সাক্ষাতকারে তুলে ধরা অভিমত নিয়ে পত্রিকাটি গতকাল প্রধান শিরোনাম করে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। মাহাথির বলেছেন ‘বাংলাদেশের মানুষ এক হলে সব সম্ভব’, এর উপরেই আমাদের আজকের সংবাদ বিশ্লেষণ।



সংবাদটিতে বলা হয়েছে, এক সময়ের অনুন্নত মালয়েশিয়াকে উন্নত বিশ্বের তালিকায় এনেছেন একটানা ২২ বছরের জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। এশিয়ার এই নন্দিত নেতা বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিদের তালিকায়ও স্থান পেয়েছেন। ১৯৮১ সালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর মাহাথিরের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল পর পর পাঁচবার সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের গণতান্ত্রিক এ প্রধানমন্ত্রী ২০০৩ সালের ৩০ অক্টোবর স্বেচ্ছায় প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন। ততদিনে মালয়েশিয়ার চেহারাও বদলে যায়। মালয়েশিয়ার এই বদলে যাওয়ার পেছনে মাহাথির মনে করেন কোন ম্যাজিক ফর্মুলা নয়, বরং মালয়েশিয়ার জনগণের ঐকান্তিক প্রচেষ্টারই ফল এটা।’ তিনি নিয়মিত বাংলাদেশকে পর্যবেক্ষণেও রেখেছেন। প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের অগ্রগতির অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশর রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্বন্ধেও অনবহিত নন। রাজনৈতিক দিকটি নিয়েই আমাদের আজকের মূল আলোচনা।



আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ হচ্ছে এই যে, এখানে মূলত ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যই রাজনৈতিক দলগুলোর জন্ম। একটি দল কতটা সফল ও কতটা ব্যর্থ তা নির্ভর করে তারা কতটা সময় ক্ষমতা ভোগ করেছে তার উপর। সুতরাং তাদের ঐকান্তিক চাওয়াই থাকে কিভাবে ও কোন পথে ক্ষমতায় যাওয়া যায়। এ কারণে রাজপথে মিছিল-মিটিং, জ্বালাও-পোড়াওয়ের মাধ্যমে আন্দোলন করে ক্ষমতাসীন সরকারকে টেনে হিঁচড়ে নামানোই তাদের প্রধান কাজ। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন সরকারের অভিপ্রায় থাকে যে করেই হোক ক্ষমতার নির্দিষ্ট মেয়াদ পার করা। তা করতে গিয়ে বিরোধী দলগুলোকে চাপে রাখা, জেল-জুলুম আরোপ করা, রাজপথে নামতে না দেওয়া ইত্যাদিতে সময় ও মনোযোগের একটি বিরাট অংশ ব্যয় করে ফেলে। এ জন্য আমাদের সরকারগুলো কাক্সিক্ষত উন্নয়ন কাজ করতে ব্যর্থ হয়। আজকের মালয়েশিয়াকে আমরা উন্নয়নের মডেল হিসেবে কল্পনা করি। অথচ মাহাথিরপূর্ব মালয়েশিয়া আর বাংলাদেশ একই কাতারে অবস্থান করতো। হঠাৎ করে মালেয়শিয়া এগিয়ে যায় নি। বরং আমরাই পিছিয়ে গিয়েছি। ধারাবাহিকভাবে পাঁচ পাঁচবার একটি দল ক্ষমতায় থেকে যখন অন্য কোন দিকে মনোযোগ খরচ না করে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করতে পেরেছে বলেই আজকে মালয়েশিয়ার এত উন্নতি। অন্যদিকে সেই একই সময়ে আমাদের দেশের রাজনীতিতে কি পরিমাণ উত্থান-পতন ঘটেছে তার বিশদ বিবরণ তুলে ধরা সম্ভব নয়। মালয়েশিয়ার ২২ বছর ও আমাদের ২২ বছরকে যদি একটি রেখা দিয়ে প্রকাশ করা হয় তাহলে দেখা যাবে মালয়েশিয়ার রেখাটি একটি সরল রেখা এবং আমাদের সময়ের রেখাটি হবে আঁকা-বাঁকা, এলোমেলো, কখনো কখনো অন্ধকারের গলি-ঘুপচিতে হারিয়ে যাওয়া। এ সময়টিতে কি দেখিনি আমরা? ৮১ তে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড, স্বৈর-শাসক খ্যাত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের উত্থান ও ৯ বছরের স্বৈর-শাসনকাল, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষে রাজপথে নিরবিচ্ছিন্ন সংগ্রাম, অতঃপর স্বৈর শাসন যুগের পতন। পরে সংসদীয় গণতন্ত্রের পুনপ্রবর্তন করে কেউ বিরোধী দলে অবস্থান করে আর কেউ সরকারি দলে অবস্থান করে নিজেদের মধ্যে ঘাত-প্রতিঘাত ও ধারাবাহিক উত্থান-পতন- এই হচ্ছে আমাদের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি।

মাহাথির মোহাম্মদের মতে, ‘রাজপথে বিক্ষোভ করে কোন সরকারকে সরিয়ে যারা ক্ষমতায় যাবে তাদের ক্ষেত্রেও একই পরিণতি হবে।’ অথচ আমাদের দেশীয় রাজনীতিকগণ কি প্রতিনিয়ত তাই করে যাচ্ছে না? তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমান সময়ে মুসলিমরা ও তাদের দেশগুলো একটা সংকটময় সময় পার করছে। তারা বিদেশিদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। তারা মৃত্যুবরণ করছে, লাঞ্ছিত হচ্ছে, বঞ্চিত হচ্ছে। কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারছি না। পুরো মুসলিম বিশ্বে ৫০টির মত দেশ যারা নিজেদেরকে মুসলিম দেশ বলে থাকে, তাদের একটিও নিজেদেরকে উন্নত দেশ বলে দাবি করতে পারবে না। তারা নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই অন্যদের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে।’ এসবের পেছনে তিনি মুসলমানদেরকে জ্ঞান-বিজ্ঞান থেকে দূরে সরে যাওয়াকে দায়ী করেছেন। তবে তার বক্তব্যটির সাথে সহমত পোষণ করার পাশাপাশি কিছু কথা যোগ না করলে বিষয়টি অপূর্ণই থেকে যাবে।



মুসলিম জাতি জ্ঞান-বিজ্ঞান পরিত্যাগ করেছে কখন তা আমাদের জানতে হবে। মূলত মুসলিম জাতির স্রষ্টা শেষ রসুল জাতি হিসেবে আমাদেরকে কি উদ্দেশ্য নিয়ে সৃষ্টি করেছেন তা ভুলে গিয়ে ধর্মীয় পণ্ডিতদের অতি বিশ্লেষণ, অতঃপর মতভেদ ও বিভক্তিই আমাদের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে গেছে। স্রোতহীন নদীতে যেমন শ্যাওলা জমে তেমনি মুসলিম জাতি উদ্দেশ্য ভুলে সংগ্রাম ত্যাগ করায় তাদের মধ্যে বিভিন্ন কুসংস্কার, অজ্ঞতা বাসা বেধেছে। অথচ একক জাতিসত্ত্বার চেতনা থাকাকালীন ইসলামী স্বর্ণযুগের সূচনা হয়েছিল। সে সময় মুসলিম উম্মাহ জ্ঞান-বিজ্ঞানে যে খ্যাতি ও উন্নতি করে যান পরবর্তীতে তার উপরে ভিত্তি করেই আধুনিক ইউরোপীয়দের বিজ্ঞান মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ত্যাগ নয়, বরং ১৫০ কোটি মানুষ নিজেদেরকে একই উম্মাহ, একই জাতি ভাবতে পারে না বলেই সারা দুনিয়ায় আজকে তাদের এই দুর্গতি নেমে এসেছে। যদি তারা লক্ষ্যে অটল থাকত তাহলে তারা জ্ঞান-বিজ্ঞান পরিত্যাগ করতে পারত না। পরিহাস এই যে, ফলে এক সময় যে জাতিকে সবাই সর্বদিক দিয়ে শ্রেষ্ঠজ্ঞান করতো, আজকে উল্টো সেই জাতিই অন্যদের কাছে করুণা ও কৃপা নিয়ে বেঁচে থাকে। মূলত মুসলিম জাতি যখন মতভেদ করে নিজেরা ঐক্যহীন হয়ে সামরিক শক্তি হারিয়ে ফেলে তখন ইউরোপীয়রা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামরিক শক্তি অর্জন করে আমাদেরকে গোলাম করে দেয়। অতঃপর গোলামি করতে করতে আমরা আমাদের অতীত ইতিহাস ভুলে গেছি কিংবা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সময় তারা সামরিক শক্তিবলে আমাদের সর্বস্ব লুটেপুটে নিয়ে যায়। যাওয়ার আগে তারা আমাদেরকে গণতন্ত্র নামক একটি গোলামিতন্ত্র চাপিয়ে দিয়ে যায়- যাতে তারা না থাকলেও তাদের এদেশীয় প্রতিনিধিরা চিরকাল তাদেরই স্বার্থ সংরক্ষণ করে চলবে। আজও আমরা চাপিয়ে দেওয়া ঐ তন্ত্রমন্ত্র পালন করে ভৌগোলিকভাবে বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে, আবার সেখানেও নানা দল, নানা মতের বিস্তৃতি ঘটিয়ে পারস্পরিক কলহে নিমজ্জিত আছি। তাই বিদেশিরা আমাদের উপর ছড়ি ঘুরিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে মাত্র ২২টি বছর এসব কলহের উর্ধে থাকতে পারায় মালয়েশিয়া নিজেকে উন্নত দেশের সারিতে নিয়ে গেছে। এক সময়ে আমাদের কাতারে থাকা দেশটি আমাদের সামনে উন্নয়নের মডেল। কিন্তু কয়টা মুসলিম দেশ এরূপ মালয়েশিয়া হতে পেরেছে? মাহাথিরের ভাষায়, ‘তাদের (মুসলিমদের) একটি দেশও নিজেদেরকে উন্নত বলে দাবি করতে পারবে না’।



মুসলিম জাতি আজকের অবস্থানে থেকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে হাজারো উন্নতি করে কখনোই পাশ্চাত্যকে ধরতে পারবে না। কারণ তারা নিজেরা একে অপর থেকে ভিন্ন ও বিচ্ছিন্ন। নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা সম্পর্ক নেই। সবাই পাশ্চাত্যের গোলামিতে মগ্ন। সুতরাং আগে দরকার মুসলিম উম্মাহর সকল দূরত্ব ঘুচিয়ে একক জাতিসত্ত্বার উন্মেষ ঘটানো। এরপরে শুধু জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা নয়, যে কোন কিছুতে হাত দিলেই তাতে আল্লাহর রহমত ও বরকত নেমে আসবে। কিন্তু মাহাথিরদের মত প্রশংসিত নেতাগণ এমন করে ভাববেন কি? নাকি বক্তৃতা বিবৃতির মধ্যেই নিজেদের কর্তব্যবোধকে সীমাবদ্ধ রাখবেন? মনে রাখতে হবে, গোলামি মানসিকতা কখনোই নিজেদেরকে নেতৃত্বের আসনে উন্নীত করতে পারবে না। সবক’টি দেশ একেকটা মালয়েশিয়া, সবক’টি দেশের নেতাগণ একেকজন মাহাথিরে পরিণত হলেও জাতি হিসেবে মুসলিমগণ পৃথিবীতে লাঞ্ছিত অপমানিত হয়েই থাকবে। তাই জাতিকে মূল লক্ষ্যে ফিরে গিয়ে কঠোর সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হবে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:১২

বোকামন বলেছেন:
জনাব,
বিশ্লেষণ সময়োপযোগী। ধন্যবাদ !
তবে আমি কঠোর সংগ্রাম না লিখে কঠোর পরিশ্রম বলতে চাচ্ছি। ‘সংগ্রাম’ শব্দটি তার মূল্য হারাচ্ছে দিনকে দিন ...

আস সালামু আলাইকুম।

১৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:৫৯

উড়োজাহাজ বলেছেন: দু:খিত, আমি ইচ্ছে করেই কঠোর সংগ্রাম শব্দটি প্রয়োগ করেছি। কেননা, কঠোর পরিশ্রম শব্দটা বর্তমান পশ্চিমা সভ্যতার কঠোর পরিশ্রম করো, অত:পর ভোগ করো এই টাইপের হয়ে যায়। আমির পারলে কঠোর সংগ্রামের পরিবর্তে আরবি পবিত্র জেহাদ শব্দটা যোগ করতাম। কিন্তু সেটা জংগিরা অপবিত্র করে ফেলেছে বলে সজ্ঞানে এড়িয়ে গেছি। মতামতের জন্য ধন্যবাদ।

২| ১৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:০৫

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন: সময়োপযোগী লেখা।

ধন্যবাদ পরিশ্রমের জন্য।

আমাদের দেশে কবে একজন মাহাথির পাব?

১৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:১৭

উড়োজাহাজ বলেছেন: আমরা মাহাথিরদেরকে হত্যা করি। তাই মাহাথিররা আমাদের দেশে জন্ম নেয় না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.