নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে লাখো কণ্ঠে গাওয়া হলো বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। লাখো কণ্ঠে বলা হলেও মূলত তা লাখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। একসাথে আড়াই লক্ষাধিক মানুষ গেয়েছে বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের সঙ্গীত, জাতীয় সঙ্গীত। যদিও সরকারের টার্গেট ছিল তিন লাখ লোকের কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ানো; কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ সংখ্যা ২ লাখ ৫৪ হাজার ৬৮১ জনের মাত্রা স্পর্শ করে। প্যারেড গ্রাউন্ডের বাইরেও দেশের নানা স্থানে উক্ত অনুষ্ঠানের সাথে সংহতি প্রকাশ করে একই সাথে জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছেন বহু মানুষ। এমনকি দেশের বাইরে থাকা প্রবাসীরাও এতে অংশ নিয়েছেন। উপরোল্লেখিত লক্ষ্য ছাড়াও সরকারের আরও একটি লক্ষ্য ছিল সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাইয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়া। এর আগে ২০১৩ সালের ৬ মে ভারতের সাহারা গ্র“পের আয়োজনে একসাথে ১ লাখ ২১ হাজার ৬৫৩ জন জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে গিনেজ বুকে স্থান করে নেয় ভারত। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ তার চেয়ে আরো অন্তত এক লাখেরও বেশি মানুষের কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে ভারতের করা ঐ রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ এবং সশস্ত্র বাহিনীর সার্বিক সহযোগিতায় করা এই রেকর্ড এখন আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
একথা অনস্বীকার্য যে, জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত করার জন্য এ উদ্যোগটি প্রশংসার দাবি রাখে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষ যখন রাজনৈতিক নানা ঝুট ঝামেলায় পতিত হয়ে রাজনীতির প্রতি বীতশ্রদ্ধতা প্রকাশ করছে, নানা ইস্যুতে দেশ বহু মতে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে; ঠিক সেই সময় জাতিকে ঐক্যের দিকে নিয়ে আসতে এই প্রয়াসটি কিছুটা হলেও সহায়তা করবে। মনে করিয়ে দেবে বাংলাদেশের মানুষ একাত্তরে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার মত অসাধ্য সাধন করেছিলো সেই ঐক্যের কথা। দেশবাসীকে মনে করিয়ে দেবে আবারও যদি তারা সেই চেতনায় উজ্জীবিত হতে পারে তাহলে তাদের সামনে কোন বাধা টিকতে পারবে না।
কিন্তু অনুষ্ঠানটি সফল হওয়ার আগে পরে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন মানুষকে নাড়া দিয়ে গেছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন সরকারের উৎসাহী ভূমিকা এবং উদ্যোগেই এই অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে দল হিসেবে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলটির ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। দলটির গতবার নির্বাচিত হওয়ার পর চার দশক আগে সংগঠিত মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা দেশের স্বাধীতার বিরোধিতা করে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষ ধারণ করে এ দেশেরই মানুষের উপর মানবতা বিরোধী অপরাধে নিজেদেরকে নিয়োজিত করে হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ইত্যাদি কাজে জড়িত ছিলো তাদের অনেককেই বিচারের সম্মুখীন করে। বলাবাহুল্য, স্বাধীনতার দীর্ঘ চার দশক পর অপরাধীদেরকে শাস্তির আওতায় আনা একটি দুরূহ কাজ। দেশে-বিদেশে এর বিরোধিতাও কম হয়নি। বিশেষ করে দেখা গেছে অভিযুক্তদের অধিকাংশই এদেশীয় একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের সদস্য। তবুও সরকার সাহসের সাথে কাজটি শুরু করে।
কিন্তু সরকার শুরুতেই বহুমুখী বাধার সম্মুখীন হয়। এমনকি সরকার রাজনৈতিক দলটিকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে তাদেরকে নির্মূল করার জন্যই যুদ্ধাপরাধের নামে অন্যায়ভাবে বিচারের সম্মুখীন করতে চাইছে বলে অভিযোগ তোলা হয়। বিচারের ধারাবাহিতকায় আদালত বেশ কয়েকজনকে দোষী সাব্যস্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির আদেশ দেন। এই ফাঁসির আদেশে বিক্ষুদ্ধ দলটি বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচী দিয়ে দেশকে অচল করে দেয়। এ সময় হরতাল-অবরোধের মাধ্যমে জনজীবন বিপর্যস্ত করে তোলা হয়। পাশাপাশি এ সকল কর্মসূচিতে বাঁধা দিলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে তাদের সংঘাত বাধে। উভয়পক্ষের মধ্যে এ সংঘাতে বহু নিরপরাধী মানুষও হতাহতের স্বীকার হয়। এসব ঘটনায় গত বছর একই দিনে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার এই যে, সরকারের বিরুদ্ধে খোদ স্বাধীনতা দিবসের দিনে লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার অনুষ্ঠানে অনুদান হিসেবে তাদেরই (যুদ্ধাপরাধী) নিয়ন্ত্রিত একটি ব্যাংক (ইসলামী ব্যাংক) থেকে তিন কোটি টাকা গ্রহণের অভিযোগ উঠে।
স্বাভাবিকভাবে প্রচলিত রাষ্ট্রীয় আইনে বৈধ একটি ব্যাংকের কাছ থেকে রাষ্ট্রের অর্থগ্রহণে কোন সমস্যা থাকার কথা নয়। কিন্তু এর বিরুদ্ধে প্রথম প্রশ্নটি উত্থাপিত হয় খোদ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগেরই সমর্থকদের পক্ষ থেকেই। তাদের তরফ থেকে বলা হয় স্বাধীনতা দিবসের মত একটি জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান করতে যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত কোন দলের কাছ থেকে অর্থগ্রহণ কেন করা হবে- যখন তারা স্বাধীনতা বিরোধী দল হিসেবে অভিযুক্ত এবং এখন পর্যন্ত তারা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের অতীত কৃতর্মের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেনি? আরো বিপত্তি বাঁধে যখন সরকারে থাকা দুই জন মন্ত্রী এ ব্যাপারে দু’ধরনের কথা বলেন। একজন বললেন ‘অনুদানের টাকা নেওয়া হয়নি’ এবং আরেকজন বললেন ‘তাদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হবে’। পরবর্তীতে অবশ্য সরকারে তরফ থেকে তাদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও শেষ পর্যন্ত জন্ম নেওয়া এ বিতর্কের পুরোপুরি অবসান হয়নি।
এদিকে জানা গেছে, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এমন একটি কাজে দেশের অন্যতম বিরোধী দল বিএনপি অনুষ্ঠানটিকে রাজনৈতিক অনুষ্ঠান আখ্যা দিয়ে সমর্থন ও অংশগ্রহণ- কোনটাই করেনি। এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান দলটির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘অবাক বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন অংশ ছিলো না, তেমনি তাদের (মুক্তিযোদ্ধা) স্বার্থ সংরক্ষণ করা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়েরও কোনো সম্পৃক্ততা ছিলো না। এটা রাজনৈতিক অনুষ্ঠান (ইত্তেফাক ২৭ মার্চ-২০১৪)।’
তবে অন্যান্য বিতর্কের পাশাপাশি অনুষ্ঠানের লক্ষ্য ফলপ্রসূ হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে অনুষ্ঠানে আগতদের কিছু বিতর্কিত ভূমিকায়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন ছবিতে দেখা গেছে অনেকেই তাদের হাতে থাকা জাতীয় পতাকা মাটিতে বিছিয়ে বসে আছেন এবং মাটিতে ফেলা জাতীয় পতাকার উপর দিয়ে হেঁটে গেছেন। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এরূপ কর্মকাণ্ড স্পষ্টত জাতীয় পতাকা অবমাননার শামিল এবং দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রশ্ন হচ্ছে, যারা স্বাধীনতা দিবসের চেতনা এবং দেশমাতৃকার প্রেমে উদ্ধুব্ধ হয়ে লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে নিজেদেরকে একত্রিত করেছিলেন, তাদের দ্বারা জাতীয় পতাকার প্রতি এরূপ অবমাননাকর কাজ নিশ্চয় প্রশ্নের সৃষ্টি করে তারা সত্যিকার অর্থেই কি দেশপ্রেমিক এবং তাদের মধ্যে কি দেশপ্রেমের ন্যূনতম চেতনা রয়েছে, বা তাদের মধ্যে এমন কিছু থাকলে কি সম্ভব হতো এমন ন্যাক্কারজনক কাজ করার? যারা সব ধরনের বিতর্ক পাড়ি দিয়ে সেখানে হাজির হয়েছেন তাদের অবস্থা যদি তাই হয় তবে যারা যায়নি তাদের দেশপ্রেম কতটুকু তাই এখন বড় প্রশ্ন। এটা হতে পারে কিছু কিছু মিডিয়ার পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকা। অনুষ্ঠানে যাওয়া সবাই এমনটা করেনি। তাই আমরা আশা করবো কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে লাখো কণ্ঠে গাওয়া এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশপ্রেম বাড়বে, এমনকি আগামী দিনের পথচলায়, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে দেশপ্রেমের স্বাক্ষর ফুটে উঠবে। যদি এমনটাই হয় তবে আমাদের এ পরিশ্রম, এত আয়োজন, দরিদ্র দেশের বিপুল অর্থব্যয় সার্থকতা পাবে। পরিশেষে কামনা এই যে, এ সকল আনুষ্ঠানিকতার উর্ধে উঠুক আমাদের সত্যিকার দেশপ্রেম।
২৭ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:০০
উড়োজাহাজ বলেছেন: কিচ্ছু বলার নেই।
২| ২৭ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:১৫
জাহাজ মিস্ত্রী বলেছেন: কাজের জন্য রেকর্ড না রেকর্ডের জন্য কাজ ?
২৭ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:০০
উড়োজাহাজ বলেছেন: কিচ্ছু বলার নেই।
৩| ২৭ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:৩৩
ঢাকাবাসী বলেছেন: বেশী জেনে লাভ নাই রাজকর দেয়া চাই!
২৭ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:০১
উড়োজাহাজ বলেছেন: আর কত দিব। আর কত দিলে তাদের ক্ষুধা মিটবে?
৪| ২৮ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১:৩০
মতিউর রহমান মিঠু বলেছেন: সব ঠিক আছে, কোনো সমস্যা নাই। তবে "জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ" এটা বুঝিনি....
২৮ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১:৫০
উড়োজাহাজ বলেছেন: সরকারের দিক থেকে একটু চিন্তা করে দেখুন। শুধু তো নিজের দিক থেকে চিন্তা করলে হবে না। সরকারের নিজের কোন আলাদা ইনকাম নেই। সুতরাং সরকারকে সাধারণ মানুষের টাকার উপরই নির্ভর করতে হয়। আর সাধারণ মানুষের ৯০কোটি টাকা ব্যয় করা অবশ্যই জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অন্তত সরকারের দিক থেকে।
৫| ২৮ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ২:০৯
মতিউর রহমান মিঠু বলেছেন: এটা দারুন বলছেন।
২৮ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:৫৭
উড়োজাহাজ বলেছেন: হুম।
৬| ২৮ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৭
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: কথিত আছে যে প্রতিটা স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া ছিলো যে,(অবশ্যই অলিখিত)তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে এই রেকর্ড এবং টাকার খেলায় যোগ দিতে হবে।রেকর্ড হয়ই রেকর্ড ভাঙ্গার জন্য।
আমি ভাবছি এই ৯০ কোটি(মতান্তরে ৫০ কোটি) টাকা ব্যায় করে কয়টি গ্রামকে স্বনির্ভর করা যেত??
জাতীয় সংগীত গাইলে বা পতাকা বহন করলেই যে সে দেশপ্রেমিক আর না করলে না-এই তত্বটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। আমার মতে এগুলি মনের স্বত্স্ফুরতার ব্যাপার । ভালবাসার মত। ধন্যবাদ।
২৯ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:০৮
উড়োজাহাজ বলেছেন: আমার আগামী লেখাটায় এ বিষয়গুলোর অর্থহীনতা নিয়ে যতসামান্য লিখবো। লেখাটা প্রায় শেষ। ফাইনালাইজিং চলছে। আগামী কাল পোস্ট দেব।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫২
মদন বলেছেন: পতাকা মাড়াইলেও আমাগো চেতনা নষ্ট নয় না। কুকুরের গায়ে পতাকা জড়াইলেও আামাগো পতাকার অসম্মান করা হয় না। জামাতি ব্যাংক থেকে টাকা নিলে তো আমাগো চেতনা আরো উজ্জীবিত হয়।
জয়বাংলা।