নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাঙালির জাতীয় জাগরণে ব্যর্থতার কারণ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এবং বহির্দেশের, বিশেষ করিয়া পাশ্চাত্য সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের অবধারিত ফল হিসাবে বাঙালি তরুণ সমাজ সাংঘাতিকভাবে মস্তিস্কের গ্রে-মেটার শূন্যতায় ভুগিতেছে। দেশের তরুণ সমাজের এই হাল হইবে তাহা বহুকাল আগে থাকিয়াই ধারণা করা হইয়াছিল। আজ ইহার ফল হাতেনাতে ভোগ করিতে হইতেছে। চেতানাহীন, শৌর্যবীর্যহীন এই জাতিকে বর্তমানে কিছু অন্তঃসারশূন্য কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আবার জাগাইয়া তোলার চেষ্টা হইতেছে। কিন্তু শুধু ভাবাবেগ দিয়া তাহা সম্পন্ন করা সুদূরপরাহত ব্যাপার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় ইহাই যে, এই চেতনার প্রশ্নে তরুণগণ ৭১ এর চেতনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হইয়া পড়িয়াছেন। কষ্টেসৃষ্টে যাহারা আরেকটু বেশিদূর যাইতে পারিতেছেন তাহাদের দৌড় ১৯৪৭ পর্যন্ত। তাহাদের চিন্তা-চেতনা ও জ্ঞানের পরিধি খেয়াল করিলে মনে হয় বাঙালি জাতি তাহার আদি ইতিহাস-ঐতিহ্যকে উপেক্ষা করিয়া হঠাৎ করিয়া ১৯৭১ সালে আসিয়া পৃথিবীতে ধপাস করিয়া পড়িয়াছে। তাহাদের আর কোন অতীত নাই- ইতিহাস নাই। তাহাদের এই উত্থানের পেছনে আর কাহারো কোন ভূমিকা নাই, কাহারো কোন অবদান নাই। তাহারা মাটি ভেদ করিয়া হঠাৎ করিয়া উত্থিত হইয়াছে। মস্তিস্কে এতটুকু পুঁজি ধারণ করিয়া শুধুমাত্র ভাবাবেগের বশে এখন ইহারা বহু কিছু কল্পনা করিতে শুরু করিয়াছেন। ইহার যথাযোগ্য তুলনা চলে বোধ হয় একমাত্র গঞ্জিকাসেবীদের সহিত। কিন্তু বিশ্বের অপরাপর দেশের সহিত যখন প্রতিযোগিতার মাঠে নামিতেছে তখনই তাহারা প্রচণ্ড আঘাত খাইয়া হতাশ হইতেছে। কিন্তু ধরিতে পারিতেছে না তাহাদের মূল সমস্যাটা কোথায়।
প্রশ্ন হইলো, তাহাদের জাগরণ প্রচেষ্টা বার বার ব্যর্থ হইতেছে কেন?আমাদের জানা কথা, যে সন্তান তাহার জন্মের পেছনে, তাহার বড় হয়ে ওঠার পেছনে পিতা-মাতা, দাদা-দাদী ও অন্যান্য নিকটাত্মীয়দের অবদানকে অস্বীকার করে সমাজ তাহাকে ‘বেজন্মা’ বলিয়া আখ্যায়িত করে। সমাজের কাছে ঐসব বেজন্মাদের কোন মূল্য নাই। তাহারা ঘৃণিত জীব হিসাবে পরিচয় লাভ করিয়া থাকে। ইহাদের অনেকেই তাহাদের নিজস্ব ধর্ম, সমাজ, সংস্কার ও রীতিনীতিকে অস্বীকার করিয়া হঠাৎ কিছুটা চমক দেখাইতে পারিলেও অল্পদিনের ব্যবধানে তাহারা কালের গর্ভে হারাইয়া যায়। যৌবন শেষে তাহারা দুঃখের কথা বলিবার মানুষটিও খুঁজিয়া পায় না। এদেশীয় তরুণদিগকে এইভাবে আত্মবিস্মৃত এবং অন্তঃসারশূন্য করার প্রক্রিয়াটি শুরু হইয়াছিল সুদূর ব্রিটিশ আমলেই।
মুসলিম বাদশাহী আমল তথা মুঘল সাম্রাজ্যের পতনকালের কতিপয় ভোগ-বিলাসী কুলাঙ্গারদের ব্যর্থতার সুযোগে পরসম্পদলোভী সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশরা সামরিক শক্তি বলে আমাদের এদেশটি দখল করিয়া নেয়। ইহার শুরু ১৭৫৭ সালে বাংলার শেষ নবাব, নবাব সিরাজ উদ দৌলার পতন দিয়া। পরে ধীরে ধীরে তাহারা আরো সামরিক শক্তি আরো বৃদ্ধি করিয়া বাকি ভারতবর্ষকেও বগলদাবা করিয়া নেয়। তদুপরি নির্লজ্জ এবং অকর্মন্য বাদশাহরা ব্রিটিশদের হাতে রাজ্যের করভার ছাড়িয়া দিয়া বার্ষিক ভাতার উপর নির্ভর করিয়া গোলামির জিন্দেগি পার করিতে লাগিলেন। অপরদিকে সাধারণ মানুষ ইহা কিছুতেই মানিয়া নিতে পারিলেন না। প্রায়ঃশই তাহারা ব্রিটিশদের শাসনকে কন্টকাকীর্ণ করিয়া তুলিবার প্রয়াস চালাইয়া যাইতে লাগিল। এসব আন্দোলনসমূহের মধ্যে ফকির বিদ্রোহ, হাজী শরিয়ত উল্লাহর ফরায়েজী আন্দোলন, তিতুমীরের প্রতিরোধ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। কিন্তু জাতির মধ্যে প্রচণ্ড কাপুরুষতা ও অনৈক্য তাহাদেরকে বেশি দূর যাইতে দেয় নাই। এইসব আন্দোলনের পাশাপাশি সর্বশেষ ১০০ বছরের মধ্যে অর্থাৎ ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশদেরকে এই দেশের মাটি হইতে চিরতরে তাড়াইবার জন্য সিপাহি বিদ্রোহের সূচনা ঘটে। নামে ইহা সিপাহি বিদ্রোহ হইলেও এই বিদ্রোহে শুধুমাত্র সিপাহীদের হাতই ছিল না। সমাজের সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ ও সমর্থন এই বিদ্রোহের পক্ষে কাজ করিয়াছে। কিন্তু তাহাতেও শেষ রক্ষা হয় নাই। কারণ আর কিছুই নয়, ঘরে ইঁদুরের বেড়া কাটা। এদেশীয় অনেক প্রতাপশালী জমিদারগণ ঝুঁকি নিতে ভয় পাইয়া, তাহাদের জমিদারিত্ব চলিয়া যাইবে এই আশঙ্কায় এবং ব্রিটিশদের দেখানো নানাবিধ লোভে পড়িয়া সংগ্রামে অংশ নেয় নাই। বরং তাহাদের অনেকেই বিদ্রোহের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করিয়াছিল। ফলাফল প্রচুর ক্ষয়-ক্ষতি ও হাজারো প্রাণের কোরবানি সত্ত্বেও জাতির স্কন্ধে ব্যর্থতার গ্লানি।
ব্রিটিশগণ অত বোকা জাতি ছিলেন না। তাহারা এদেশের মাটিতে পা দিয়াই বুঝিয়াছিলেন এই দেশ দখল করিয়া রাখা অতটা সহজ হইবে না। শাসকগণ অকর্মণ্য ও স্থবির হইয়া গেলেও ভারতের মাটিতে ইসলামের চেতনা সাধারণ মানুষের মাঝে নিভু নিভু করিয়া জ্বলিতেছিল। অপরদিকে হিন্দু জমিদার ও উচ্চ বংশী প্রভাবশালীগণ তাহাদের জন্য অতটা হুমকিজনক ছিলো না। তাহাদের মধ্যে স্বাধীনচেতা কিছু বীর ছাড়া অনেকেই ইতোমধ্যে শাসকদের কাছে আত্ম-সমর্পন করিয়া বসিয়াছিলেন। সুতরাং ব্রিটিশগণ অনুধাবন করিতে পারিলেন যে, ভারতের মাটিতে ব্রিটিশ শাসন নির্বিঘœ করিতে হইলে মুসলমানদের স্বাধীনতার চেতনাকে চিরতরে নির্মূল করিতে হইবে। তাই তাহারা ষড়যন্ত্রমূলক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করিয়া জাতিকে নিবীর্য করিয়া দেওয়ার চেষ্টা করিল। এই প্রক্রিয়ায় পুরো জনসমষ্টিকে তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হইলো। একটি অংশকে নিজেদের প্রশাসনিক কাজে লাগাইবার জন্য সাধারণ কেরানীমানের শিক্ষায় শিক্ষিত করা হইলো। আর মুসলমানদের জন্য মাদ্রাসা তৈরি করিয়া তাহা সম্পূর্ণ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখিয়া, নিজেরা প্রিন্সিপাল থাকিয়া তাহাদেরকে নিজেদের পছন্দমত একটা ইসলাম শিক্ষা দিলো। আর বাকী থাকলো অশিক্ষিত সাধারণ মানুষের বিশাল জনগোষ্ঠী। অশিক্ষিত জনসাধারণতো অশিক্ষিতই, তাহারা অতীতে যেমন ছিল বর্তমানেও তেমনিই রহিয়াছে। যুগে যুগে পৃথিবীতে তাহারা শোষিত হইয়া, বঞ্চিত হইয়া জন্মের ঋণ শোধ করিয়া যাইতেছে। সুতরাং তাহাদের ব্যাপারে বিশেষ কিছু বলিবার নাই। যাহারা শিক্ষিত (!) হইয়াছেন তাহাদের মধ্য হইতে একপক্ষ কোর’আন-কেতাব লইয়া দুচোখ ব›ধ করিয়া দুনিয়া পার করিয়া যাইতেছেন। ইহারা জঘন্য দুনিয়ায় চোখ খুলিতে নারাজ! আর যতটা উচ্চ-বাচ্য করিয়াছেন তাহা ব্রিটিশদের শেখানো বিতর্কিত বিষয় লইয়া নিজেদের মধ্যে কূট তর্ক-বিতর্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রহিল। অগ্রগামী পৃথিবীর সহিত তাহাদের কোন সম্পর্ক আগেও ছিলনা এবং এখনো তেমন একটা নাই। ব্রিটিশ প্রভুরা তাহাদের প্রভুত্ব নিশ্চিত করিবার জন্য যেমনটা চাহিয়াছেন ঠিক তেমনটাই তাহাদের দিয়া হইয়াছে। কবির ভাষায় তাহাদের উপমা, ‘বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে আমরা তখন বসে, বিবি তালাকের ফতোয়া খুঁজেছি কোরান-হাদিস চষে।’
অপরদিকে যাহারা আধুনিক(!) শিক্ষায় শিক্ষিত হইয়াছিলেন তাহারাও যে খুব দূর যাইতে পারিয়াছেন তাহা নহে। তাহাদেরকে এমনই মানের শিক্ষা দেওয়া হইয়াছিল যাহার মাধ্যমে তাহাদেরকে দিয়াই বিশাল ভূ-ভারতের বুকে নিশ্চিন্তে ঔপনিবেশিক শাসন চালাইয়া রাখা যায়। তাহাদেরকে ইতিহাস শিক্ষা দেওয়া হইলো পাশ্চাত্য রাজা-রানী আর বীরদের ইতিহাস। তাহাদের শিক্ষায় সাহিত্য স্থান পাইলো এদেশীয়দের নয়, পাশ্চাত্যের শেক্সপিয়ার, হোমার, ইলিয়টদের। বিজ্ঞান শিক্ষা দেওয়া হইলো ততটুকু ঠিক যতটুকু দিলে ব্রিটিশ শাসন বিপর্যস্ত না হইয়া পড়ে, সাধারণ বিজ্ঞান। দীর্ঘ দিন এইভাবে চলার পর গত শতাব্দীর প্রারম্ভে আসিয়া ইউরোপীয়গণ আধিপত্য বিস্তারে কে কার চাইতে বেশি আগাইয়া যাইবে তাহা লইয়া দুই দুইটি বিশ্বযুদ্ধ বাধাইয়া বসিল। স্বাভাবিকভাবেই ইহাতে তাহারা দুর্বল হইয়া পড়িল। ফলস্বরূপ তাহারা আর বিশ্ব-বি¯তৃত বিশাল ঔপনিবেশিক শাসন ধরিয়া রাখাকে সমীচীন মনে করিল না। তাহা ছাড়াও এমনিতেই দীর্ঘদিন শাসন-শোষণ আর লুটপাটের কারণে এদেশীয়রা নিঃস্ব হইয়া বিদ্রোহ আরম্ভ করিয়া দিয়াছিল। প্রভুরা চাহিলে অবশ্য আরো কিছুকাল অস্ত্রের জোরে আমাদেরকে শাসন করিয়া যাইতে পারিত। কিন্তু তাহারা বুদ্ধিমান প্রাণি বিধায় সু-সম্পর্ক বজায় রাখিয়া তাহাদেরই হাতে শিক্ষিত ও তাহাদের একান্ত অনুগত শ্রেণিটির কাছে ক্ষমতা ত্যাগ করিয়া আপসে এই দেশ ছাড়িয়া চলিয়া গেল।
এদেশীয় নব্য শাসকগণ শাসন ক্ষমতা হাতে পাইয়া ব্রিটিশদের দেওয়া শিক্ষার বাইরে বেশি দূর ভাবিতে পারিল না। পূর্বে প্রভুগণ জনগণকে গোলাম করিয়া রাখিবার জন্য যে ধরনের শাসন পদ্ধতি কায়েম রাখিয়াছিল, তাহারাও তাহাই জনগণের উপর চাপাইয়া দিল। পাশাপাশি প্রভুদের উপদেশ অনুযায়ী শাসক নির্বাচনে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি আমদানি হইলো। ফলে প্রভুদের শাসন আর এদেশীয় নব্য শাসকদের মধ্যে পার্থক্য এইটুকু হইলো যে, আগে রাজদণ্ড ঘুরাইত পাশ্চাত্যের সাদা চামড়ার অধিকারী বৃটিশগণ, এখন ঘোরান এদেশীয় কালো কিংবা বাদামী চামড়ার অধিকারীগণ। জনগণের উপর আগের মতই কর ধার্য্য রাখিয়া, বঞ্চিত করিয়া ব্রিটিশদের ন্যায় সজ্জিত হইয়া তাহাদের নবযাত্রা শুরু হইল। অর্থাৎ জাতি স্বাধীনতা লাভ করিয়াও আবার নিজেদের শাসকদের কাছেই পরাধীন হইয়া গেল।তাহাদের অধীনে শিক্ষিতগণ যথারীতি আগের মত সেই ঔপনিবেশিক আমলের শিক্ষাব্যবস্থায়ই শিক্ষিত হইতে লাগিলেন। পূর্ব প্রভুদের প্রতি তাহাদের আবেগ-ভালবাসা আর নিজেদের অতীত সম্পর্কে অজ্ঞতা ও হীনমন্যতা থেকেই প্রমাণিত হইয়া যায় সেই শিক্ষা কতটুকু সফল। অন্যদিকে অংক, বিজ্ঞান ভূগোলের মত বৈষয়িক শিক্ষা কেমন তাহা বিশ্ব সভ্যতায় তাহাদের অবদান (!) দেখিয়াই প্রমাণিত হইয়া যায়।
এখন প্রশ্ন হইলো, বাঙালি জাতি তবে বর্তমানে কি নিয়া আছে? ব্রিটিশদের হাত থেকে নিস্তার পাইয়া ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ করিয়া ভারত এবং পাকিস্তান নামে দুইটি দেশ পাইল। ইহার পর বাঙালি জাতি ২৩ বছর পাকিস্তানের হাতে শোষিত হইয়া মুক্তির সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভ করিল। ইহার পরে তাহারা আরো ৪৩ টি বছর অতিক্রম করিতে চলিতেছে। ক্ষমতা নিয়ে কাড়াকাড়ি, মারামারি এখন তাহাদের নিত্য নৈমত্তিক কাজ। এই সুযোগে রাষ্ট্র ক্ষমতার প্রতিটি স্তরে চোর-ডাকাত প্রবেশ করিয়া রাষ্ট্রকে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করিয়াছে। ইতোমধ্যে এইরূপ করিয়া ধারাবাহিকভাবে কয়েকবার বিশ্বের বুকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হইয়াছে। তরুণদের মধ্যে যাহারা ক্ষমতায় আসিয়াছেন এসকল কর্মকাণ্ডে তাহারাও সমানতালে আগাইয়া আছেন।
তরুণদের মধ্যে কয়েকটি শ্রেণির জন্ম হইয়াছে। একটি অংশ আছেন যাহারা বউ-বাচ্চা নিয়া নিশ্চিন্তে সংসার করিয়া যাইতে পারাকেই জীবনের ধ্যান-জ্ঞান ও সাধনা বিবেচনা করিয়া বসিয়াছেন। ইহারা তাহার বাইরে চিন্তাও করিতে পারিতেছেন না। অন্য একটা অংশ দেশ নিয়া সামান্য ভাবেন। কিন্তু নিজের স্বার্থের প্রশ্নে তাহাদের চিন্তার পরিধি থামিয়া যায়। কোনমতে রাষ্ট্রক্ষমতার সামান্য অংশ দখল করিতে পারিলে কিছুদিনের মধ্যে দেশপ্রেম ভুলিয়া নিজেকে দুর্নীতির বরপুত্র হিসেবে পরিচিত করিয়া তোলেন। আর স্কুল-কলেজগামী তরুণ/তরুণীদের অবস্থা আরো খারাপ। একটি গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড যোগানো এবং তাহাকে সময় দেওয়াই তাহাদের জীবনের একমাত্র কর্তব্য বলিয়া জ্ঞান হইতেছে। হাস্যকার ব্যাপার এই যে, ইহারা প্রেম করিতে ব্যর্থ হইলে আত্মহত্যাও করিয়া বসেন। ইহারা বেশিরভাগই হিন্দি রোমান্টিক সিনেমা ও গান ইত্যাদি নিয়া পড়িয়া থাকেন। রূপালি পর্দার শাহরুখ খান, সালমান খান ইহাদের পার্থিব জীবনের আদর্শ। তাহাদের মত চুল কাটানো, তাহাদের মত পোশাক পরিধান করা, তাহাদের স্টাইলে হাঁটার পেছনে তাহাদের জীবনের অধিকাংশ কর্মঘণ্টা ব্যয় হইয়া যায়। আর এসকল ভাগের তরুণদের মধ্যে একটা বিশাল অংশই আজ মাদকাসক্তিকে ভুগিতেছে। গাঁজা, ফেনসিডিল না খাইলে নিজেদেরকে পুরুষ জ্ঞান করিতে ইহাদের পৌরুষে বাধে। খিস্তি- খেউর তাহাদের মাতৃভাষার মত। সুতরাং আত্মকেন্দ্রিক, অতীত বিস্মৃত এই জাতির কাছে এর বেশি কীইবা আশা করা যায়!
তারুণ্যের জাগরণের কথা বলা হয়, কিন্তু জাগরণ কিভাবে আসিবে? কিছুদিন আগে জাতির তরুণদের মধ্যে জাগরণ হইয়া গেল, দেশসুদ্ধ সারা পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি হইলো। কই, তাহারা কি উপরোক্ত বিষয়গুলো হইতে নিজেদেরকে মুক্ত রাখিতে পারিয়াছেন? বোঝা গেল ইহা ছিল সাময়িক বিকারমাত্র। দুই দিন পরেই সকল চেতনা মাঠে মারা গেল। চেতনার হাত ধরিয়া বহু ধান্দাবাজের জন্ম হইলো। বহু ধান্ধাবাজ সেখান হইতে ধান্দা ও রাজনৈতিক ফায়দা উঠাইয়া নিয়া গেল। জাগরণ হারাইয়া গেল বিতর্কের আড়ালে। জাগরণ এখন ঘৃণার নাম।
এমনটাই হইবার কথা এবং বার বার এমনটাই হইবে। কারণ একটাই, বাঙালির চিন্তার গভীরতার অভাব। নিজেদের অতীতকে অস্বীকার করা বা অতীত বিস্মৃত জাতি কখনোই প্রকৃত জাগরণ ঘটাইতে পারে না। আজকের তরুণদের প্রত্যেকেই জাগরণের মূলমন্ত্র হিসাবে পাশ্চাত্য সৃষ্ট বিভিন্ন তন্ত্রমন্ত্র ও রীতি-নীতির আশ্রয় খুঁজিয়া থাকেন। স্বাভাবিকভাবেই তাহারা সেখানে পুরোপুরি ব্যর্থ হোন।
প্রকৃত জাগরণ ঘটাইতে হইলে আগে প্রয়োজন নিজেদের অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়া। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে, প্রতিটি সন্তানের রক্তের কণিকায় কণিকায় তাহার পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের স্বভাব-চরিত্র, মেজাজ-মর্জি বিদ্যমান থাকে। বাঙালি জাতি শতাব্দীর পর শতাব্দী যাবত এই দেশের প্রকৃতি ও আবহাওয়া, সমাজ ও রাজনীতির সহিত নানা ঘাত-প্রতিঘাত পার করিয়া আজকের এই অবস্থানে পৌঁছিয়াছে। হঠাৎ করিয়া ‘৪৭ আসে নাই কিংবা হঠাৎ করিয়া ‘৭১ ও আসে নাই। ইহার জন্য যুগে যুগে বহু মানুষকে রক্ত দিতে হইয়াছে, বহু মানুষকে ঘর-সংসার, স্ত্রী-পুত্র ত্যাগ করিতে হইয়াছে। তাহাদের অবদানকে অস্বীকার করিয়া তুমি কখনো বড় হইতে পারনা। সত্য কথা হইতেছে, আমরা ‘৪৭ কে যেমন প্রতিষ্ঠিত করিতে পারি নাই তেমনি আজ ‘৭১কেও সফল করিতে পারি নাই। সফল জাগরণ ঘটাইতে হইলে তোমাকে তাহা হইতে শিক্ষা লাভ করিতে হইবে। এই দেশের মানুষের মেজাজ-মর্জি বুঝিতে হইবে। আরো আগে কেন জাতি আজকের অবস্থানে পৌঁছায়নি তাহার পেছনে কি কি ব্যর্থতা কাজ করিয়াছিল তাহা মনোযোগ দিয়া চিন্তা করিতে হইবে। ইহার জন্য নিজেদের ইতিহাস ভালভাবে জানিতে হইবে। স্বার্থক জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটা সস্তা আবেগের ব্যাপার নহে। একসাথে ভীড় করিয়া জাতীয় সঙ্গীত গাইয়া বিশ্ব রেকর্ড করা, শহীদদের প্রতি সম্মান জানাইতে মোমবাতি জ্বালানো, আকাশে বেলুন উড়ানো, সাদা পায়রা উড়ানো, মৌন মিছিল করা জাতীয় লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা করিয়াও প্রকৃত জাগরণ সম্ভব নয়। সস্তা আবেগ হঠাৎ জাগ্রত হইয়া থাকে বটে, তবে বাস্তবতার মুখোমুখি হইলে তাহা আবার সহজে নির্বাপিতও হইয়া যায়। সুতরাং শরীর থেকে বিদেশি সংস্কৃতি ও মতবাদ ঝাড়িয়া ফেলিয়া আগে নিজের অতীতের দিকে ধাবিত হও। নিজ ধর্ম, নিজ সংস্কৃতি, আদি পুরুষদের বিশ্বাসকে আকড়াইয়া ধরো। তাহাকে মূল্য দাও। সেসবের বিবর্তন না হইলে আজ তুমি এইখানে পৌঁছিতে পারিতে না। তাহাদের ব্যর্থতা অভিজ্ঞতা মানিয়া সামনে আগাও। বিদেশিদের সৃষ্ট কর্মসূচি, যাহার সাথে এদেশীয়দের সাথে সম্পর্কিত নহে তাহা বর্জন করিয়া নিজেদের পথে আগাও। এখানেই মিলিতে পারে তোমার মুক্তি। জন্ম নিতে পারে বাঙালির প্রকৃত গণজাগরণ।
৩০ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:৪০
উড়োজাহাজ বলেছেন: বাঙালির মস্তিকের গ্রে-মেটার কমিয়া গিয়াছে। ঠিক বুঝিয়া উঠিতেছে না।
২| ২৯ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:২৪
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: তাহাদের চিন্তা-চেতনা ও জ্ঞানের পরিধি খেয়াল করিলে মনে হয় বাঙালি জাতি তাহার আদি ইতিহাস-ঐতিহ্যকে উপেক্ষা করিয়া হঠাৎ করিয়া ১৯৭১ সালে আসিয়া পৃথিবীতে ধপাস করিয়া পড়িয়াছে। তাহাদের আর কোন অতীত নাই- ইতিহাস নাই। তাহাদের এই উত্থানের পেছনে আর কাহারো কোন ভূমিকা নাই, কাহারো কোন অবদান নাই। তাহারা মাটি ভেদ করিয়া হঠাৎ করিয়া উত্থিত হইয়াছে।
দারুন। নির্মম সত্য।
কিন্তু দু:খ হইল এই কষাঘাতে না জাগিয়া বরং তাহাদের ক্রোধান্বিত বা আতেল প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি!
"সফল জাগরণ ঘটাইতে হইলে তোমাকে তাহা হইতে শিক্ষা লাভ করিতে হইবে। এই দেশের মানুষের মেজাজ-মর্জি বুঝিতে হইবে। আরো আগে কেন জাতি আজকের অবস্থানে পৌঁছায়নি তাহার পেছনে কি কি ব্যর্থতা কাজ করিয়াছিল তাহা মনোযোগ দিয়া চিন্তা করিতে হইবে। ইহার জন্য নিজেদের ইতিহাস ভালভাবে জানিতে হইবে। স্বার্থক জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটা সস্তা আবেগের ব্যাপার নহে। একসাথে ভীড় করিয়া জাতীয় সঙ্গীত গাইয়া বিশ্ব রেকর্ড করা, শহীদদের প্রতি সম্মান জানাইতে মোমবাতি জ্বালানো, আকাশে বেলুন উড়ানো, সাদা পায়রা উড়ানো, মৌন মিছিল করা জাতীয় লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা করিয়াও প্রকৃত জাগরণ সম্ভব নয়। সস্তা আবেগ হঠাৎ জাগ্রত হইয়া থাকে বটে, তবে বাস্তবতার মুখোমুখি হইলে তাহা আবার সহজে নির্বাপিতও হইয়া যায়। সুতরাং শরীর থেকে বিদেশি সংস্কৃতি ও মতবাদ ঝাড়িয়া ফেলিয়া আগে নিজের অতীতের দিকে ধাবিত হও। নিজ ধর্ম, নিজ সংস্কৃতি, আদি পুরুষদের বিশ্বাসকে আকড়াইয়া ধরো। তাহাকে মূল্য দাও। সেসবের বিবর্তন না হইলে আজ তুমি এইখানে পৌঁছিতে পারিতে না। তাহাদের ব্যর্থতা অভিজ্ঞতা মানিয়া সামনে আগাও। বিদেশিদের সৃষ্ট কর্মসূচি, যাহার সাথে এদেশীয়দের সাথে সম্পর্কিত নহে তাহা বর্জন করিয়া নিজেদের পথে আগাও। এখানেই মিলিতে পারে তোমার মুক্তি। জন্ম নিতে পারে বাঙালির প্রকৃত গণজাগরণ।"
কিন্তু করিবেটা কে? বিড়ালের গলায় ঘন্টাটি বাধীবার কেউ নাই। !!
কাউকে না কাউকে উদ্যোগ নিতেই হইবে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ। শেকড় ধরিয়া টান দিয়াছেন বলিয়া ।
জাগুক বাঙালী আপন সত্যে, ঐতিহ্যে আর জ্ঞানে, প্রেমে বিশ্বকে চমকে দিয়ে.
৩০ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:৪২
উড়োজাহাজ বলেছেন: যাহাদের জাগিবার কথা তাহারা জাগিতেছে ঠিকই। আমরা মুখোশ পরিয়া ভদ্র লোক সাজিয়া বসিয়া আছি। পাছে লোকে কিছু বলে- ভয় শুধু এইটুকুই।
৩০ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:৪৬
উড়োজাহাজ বলেছেন: দীর্ঘ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ রইলো। অনেক কষ্ট করলেন।
৩| ২৯ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:১৩
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: আজ আমরা আমাদের কাছেই পরাধীন। কারন আমাদের চরিত্র আর দলকানা দৃষ্টি ভঙ্গী। এর ঘেরাটোপ থেকে বেড়োতে পারলেই সব এবং সবাই ঠিক হয়ে যাবে। কারন রাজনীতিবিদরা বুঝবেন জনগনকে আর যা তা গেলানো যাবে না। আসবে সেদিন,যেদিন দেয়ালে পিঠ থেকে যাবে।
ধন্যবাদ সুন্দর লেখাটির জন্য।।
৩০ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:৪৩
উড়োজাহাজ বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ। জাগিতে আমাদের হইবেই। শেষবারের মত।
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:০২
রাজীব বলেছেন: গবেষনালব্ধ সুন্দর একটি পোস্ট কিন্তু মন্তব্য নেই কেন?