নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শিরোনামটি আমার বানানো নয়। শিরোনামটি নেওয়া হয়েছে গত ৩১ মার্চ সোমবার দৈনিক সমকালে প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে- যার শিরোনাম ছিল, “ধমক বাহিনী আতঙ্ক”। আর উক্তিটি আমাদের গণতান্ত্রিক জীবনব্যবস্থার অন্যতম অংশীদার ও নিয়ন্ত্রক সাধারণ একজন ভোটারের। উপজেলা নির্বাচনে লক্ষ্মীপুরে ভোটের হালচাল কি জানতে চাইলে সমকালের ঐ প্রতিবেদকের কাছে এভাবেই দীর্ঘশ্বাসের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন একজন রিক্সাচালক, নাম সাইদুল। তিনি ঐ এলাকার বাসিন্দা নন। জীবিকার তাগিদে শহরে রিক্সা চালান। শহরে আছেন একযুগেরও বেশি সময় ধরে। আর সেই সুবাদে সে এলাকার ভোটারও হয়েছেন। ক্ষোভের সাথে তিনি আরো যোগ করেন, ‘ধমকের পর ধমক খাইলে বুঝতেন। দোয়াত-কলমে ভোট দিলে কেন্দ্রে যাইবা, নাইলে দূরে থাকবা। ভাই, সেন্টারের ভাও বুইঝা তারপর অন্য চিন্তা। ভোট দিবার লাই জান হারাইতে রাজি না।’
পাঠক, গত ১৬ মার্চ রবিবার ভোট প্রসঙ্গে আমার লেখা ‘ভোট বাঁচে তো জান বাঁচে না- এমন ভোটের দরকার কী’ শিরোনামে লেখা একটি নিবন্ধ পত্রিকায় এসেছিল। ‘ভোট বাঁচে তো জান বাঁচে না’ লেখাটি উপজেলা নির্বাচনের ৪র্থ ধাপ নিয়ে দৈনিক আমাদের সময়ের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল। আমি শুধু তার সাথে যোগ করে বলেছিলাম- ‘এমন ভোটের দরকার কী’ অংশটুকু। সমকালের সংবাদটি ছাপা হয় উপজেলা নির্বাচনের পঞ্চম ও শেষ ধাপের দিন, অর্থাৎ ৩১ মার্চ সোমবার। এমন ভোটের দরকার নেই বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে ভোটারের মুখ থেকেই ‘ভোট দিবার লাই জান হারাইতে রাজি না’ বাক্যের মাধ্যমে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায়, গণতান্ত্রিক সিস্টেমে শাসনকার্য পরিচালনায় প্রত্যেক নাগরিকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হয়। প্রাচীন গণতন্ত্রে শাসন কাজে প্রত্যেক নাগরিককেই অংশ নেওয়া অপরিহার্য ছিল। কিন্তু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পরিধির ব্যাপ্তি ঘটায় এখন তা আর সম্ভব হয় না। তাই নাগরিকগণ ভোটের মাধ্যমে তাদের মনোনীত প্রতিনিধি নির্বাচন করে তাদেরকে শাসনকার্য পরিচালনার অধিকার দান করেন। অধিকাংশ নাগরিক যাকে সমর্থন দান করেন তিনিই শাসনকার্য পরিচালনা ও আইন রচনার অধিকার প্রাপ্ত হন। এই পদ্ধতি ব্যতীত অন্য কোনভাবে কেউ শাসনকার্য পরিচালনার অধিকারী হতে পারেন না। অতএব বোঝা যাচ্ছে, শাসক নির্বাচনে প্রত্যেক নাগরিকের মতামতের গুরুত্ব রয়েছে এবং স্বাভাবিকভাবেই সে মতামতের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু সাধারণ জনগণের সেই নেতা নির্বাচন পদ্ধতি অর্থাৎ ভোটাধিকার কতটুকু সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করতে পারছেন? সেই সাথে এই পদ্ধতিতে এমনভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের শাসন কাজের বৈধতাও গণতন্ত্রের মানদণ্ডে প্রশ্নাতীত নয়।
বর্তমানে যেভাবে একজন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হচ্ছে তাকে হয়তো অনেকেই নির্বাচন না বলে ভোট ডাকাতি বলতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন। আমার কথার সমর্থন পাবেন নির্বাচনের পরের দিন ছাপানো দেশের প্রায় সবক’টি খবরের কাগজেই। গত ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত হলো উপজেলা নির্বাচনের পঞ্চম ও শেষ ধাপ। এর পরের দিন অর্থাৎ ১ এপ্রিল রোজ মঙ্গলবার দেশের প্রথম সারির সংবাদপত্রগুলোর শিরোনামগুলি তুলে ধরছি:
১. ‘শান্তিপূর্ণ ভোট ডাকাতি- কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, সংঘর্ষ, বোমা, আগুন’ ও ‘ভোট ডাকাতি ও সহিংসতা- মূল দায় ইসির, নেপথ্যে সরকার’- দৈনিক কালের কণ্ঠ।
২. কেন্দ্র দখল ও ভোট বর্জন থামছে না- লক্ষ্মীপুরে নিহত ১, ছাগলনাইয়ায় নিজেই সিল মারলেন প্রিজাইডিং অফিসার, ৭৩ উপজেলায় ৬০ চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভোট বর্জন, সংঘর্ষ ও পুলিশের গুলিতে আহত দেড় শতাধিক’ - দৈনিক ইত্তেফাক।
৩. ‘ব্যাপক সহিংসতা ও জবরদখল- নিহত ২, বর্জন ৭১ প্রার্থীর, ১ জেলা ও উপজেলায় আজ হরতাল’ - দৈনিক যুগান্তর
৪. ‘দখল উৎসবে ভোট বর্জন -ব্যাপক সংঘর্ষ নিহত ২, ১০ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত’ - দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন
৫. ‘শেষ ধাপেও কেন্দ্র দখল, জাল ভোট’,- দৈনিক সমকাল
৬. ‘দখল বর্জনে শেষ হলো নির্বাচন- ১৪ উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থীদের বর্জন আজ (গতকাল) ৭ উপজেলায় হরতাল’ - দৈনিক মানবকণ্ঠ
৭. ‘শেষটাও ভালো হলো না- কেন্দ্র দখল করে সিল মারার ধুম, গুলিতে যুবলীগ নেতা নিহত’ এবং লক্ষ্মীপুর উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আরো একটি শিরোনাম ‘নির্বাচনী জুলুমের ষোলোকলা’ - দৈনিক প্রথম আলো।
পাঠক, নির্বাচন কেমন করে ও কিভাবে হচ্ছে আশা করি বিস্তারিতভাবে বলার অপেক্ষা রাখে না। নির্বাচনী ফলাফলকে যতভাবে সম্ভব প্রভাবিত করা, শুধু ঘোষণা ব্যতীত কে বিজয়ী হবে তা আগে থেকেই নির্ধারিত হয়ে থাকা, ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা প্রদান, আবার কেন্দ্রে আসা ভোটারদেরকে পছন্দসই প্রার্থীর পক্ষে ব্যালটে প্রকাশ্যে সিল দিতে বাধ্য করা, প্রশাসনকে যথেচ্ছ ব্যবহার, পেশী-শক্তির প্রয়োগ, ব্যালট বই নিয়ে টানা সিল মারা, পুরো কেন্দ্র দখল করে রাতেই ব্যালট বাক্স ভোট দিয়ে ভরে রাখা, প্রিজাইডিং অফিসার কর্তৃক ভোট দেওয়া ইত্যাদি হচ্ছে আমাদের গণতন্ত্রের প্রকৃত চিত্র। প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে এভাবেই আমাদের জনপ্রতিনিধিগণ নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতাগ্রহণ করছেন। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ কিংবা তার আগেও জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য যে সুষ্ঠু পরিবেশ দরকার তা কখনোই হয় নি। প্রতিটি নির্বাচন নিয়েই সৃষ্টি হয়েছে বিতর্ক। কোন না কোনভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করে, বলপ্রয়োগ করে জনগণকে তাদের প্রকৃত নেতা নির্বাচনের অধিকার থেকে বিরত রাখা হয়েছে। তাই কখনো আমরা প্রকৃত নেতা পাই নি। অন্যদিকে প্রথমত, প্রকৃত নেতা ক্ষমতা চান না কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেন না। যারাই আজকাল প্রার্থী হন তারা ক্ষমতার জন্য লালায়িত থাকেন। অসচ্চরিত্র ও ভোট ডাকাতরাই অপকৌশল করে নির্বাচিত হয়ে যান। প্রকৃত নেতারা থাকেন আড়ালেই। এভাবে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ক্ষমতায় গিয়ে তারা জনগণের কি উপকারটা করবে তা আগে থেকেই অনুমান করা যায়। মাঝ দিক দিয়ে এই ডাকাতি অনুষ্ঠানের জন্য সেই জনগণেরই কাছ থেকে উচ্চহারে ট্যাক্স, টোল, ভ্যাট ইত্যাদি আদায় করে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়। এই ভোট ডাকাতিতে মানুষ কি পায়? পায় শুধু উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-আতঙ্ক, মৃত্যু আর কিছু নির্বাচিত (!) ডাকাত, যারা প্রতিটি নির্বাচনের সময় মানুষের সামনে মুর্তিমান আতঙ্ক হয়ে আবির্ভূত হোন। তাই মানুষকে বলতে শুনি, ‘হালার ভোট, খালি অশান্তি!’ কারণ, ভোট দিতে যাওয়া আর হাতে কাফনের কাফন নেওয়া একই কথা। দুটোই মৃত্যুতুল্য।
০২ রা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:৫২
উড়োজাহাজ বলেছেন: তালিয়া হবে, তালিয়া। ব্যাপক তালিয়া।
২| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:৪০
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: নির্বাচনী ফলাফলকে যতভাবে সম্ভব প্রভাবিত করা, শুধু ঘোষণা ব্যতীত কে বিজয়ী হবে তা আগে থেকেই নির্ধারিত হয়ে থাকা-এইতো আমাদের তথাকথিত সুষ্ঠ গনতান্ত্রিক ব্যাবস্থা।
০৩ রা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১:১৫
উড়োজাহাজ বলেছেন: এটাকে নির্বাচন বলে না। এটাকে ডাকাতি বলে।
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:৩৯
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: স্বৈরাচার, ভোট ডাকাত, লুটেরা সরকার, অক্ষম পা চাটা ইসি আর বারবণিতা বা রক্ষিতা মিডিয়া...
চলছে আমজনতার মৌলিক গণভোটাধিকার হরন, ধর্ষণ, মরন, র্ষবিধান লংঘন!!!!!
যার শুরু আচে তার শেষ আছে
আমজনতা শেষ দিনের অপেক্ষায়