নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মোদী ভারতের লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে নরেন্দ্র মোদীর দল বিজেপি। এ ফলাফল ছিলো সবার কাছেই অবাক ও অপ্রত্যাশিত ব্যাপার। মোদী ক্ষমতায় আসতে পারেন সেটা অনেকে মনে করলেও এভাবে জোয়ার বইয়ে দিয়ে আসবে তা কেউই আগে ধারণা করতে পারেনি। এমনকি অনেকের ধারণা ছিল ভারতের লোকসভা নিবার্চনের ফলাফল অনেকটা ঝুলন্তও হতে পারে। কিন্তু সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে মোদীর দলটি। মোদীর দল নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে সমালোচকদের বক্তব্য ছিলো যে, মোদী সা¤প্রদায়িতকতার যে বিষবাষ্প ছড়িয়ে যে উন্মাদনার সৃষ্টি করেছেন তা আখেরে ধর্মনিরপেক্ষ ইমেজধারী ভারতের জন্য মোটেও সুখকর হবে না। ভারতের সংখ্যালগু মুসলিমদের জন্য মোদীর উত্থান হবে অতিশয় ভয়ঙ্কর। কেননা, ২০০২ সালে গুজরাটে সৃষ্ট সা¤প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে প্রায় হাজার দুয়েক মুসলিমদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। সে সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর আসনে ছিলেন হালের প্রধানমন্ত্রী হতে যাওয়া এই নরেন্দ্র মোদীই। অভিযোগ আছে যে, সে সময় সেই হত্যাকাণ্ড সংঘটনে মোদীর প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিলো। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার সময় তাই বার বার এই ইস্যুটি উঠে এসেছে যে, ‘মোদীর হাতে এখনো মুসলিম স¤প্রদায় হত্যার রক্তের দাগ লেগে আছে।’ তাই তাদের বক্তব্য ছিলো কিছুতেই যেন গুজরাটের এই ‘কসাই’ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত না হতে পারে। শুধু তাই নয়, মোদী ও মোদীর দলের বিরুদ্ধে উত্থাপিত এ অভিযোগ যে অনেকাংশেই সঠিক তার প্রমাণ উঠে এসেছে নির্বাচনকালীন প্রচারণায় মোদীর দেওয়া বিভিন্ন বক্তব্য বিবৃতিতেও। বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্র“তি দেওয়া হয়েছিলো যে, বিজেপি নির্বাচিত হলে ১৯৯২ সালে ধ্বংসপ্রাপ্ত বাবরি মসজিদের স্থলে রাম মন্দির নির্মিত হবে। একই সাথে মোদীর কট্টর মৌলবাদী চরিত্র ফুটে উঠেছে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচার-প্রচারণায়। বার বার এই নেতার মুখ থেকে উঠে এসেছে, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা ভারতের জন্য একটি সমস্যা। বিজেপি ক্ষমতায় এলে তাদেরকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে-তবে হিন্দুদেরকে নয়। এমনকি মোদীর দল বিজেপির এক নেতা সুব্রাহ্মনিয়াম স্বামী তো দাবি করেই বসেছেন যে, সিলেট থেকে খুলনা পর্যন্ত সমান্তরাল রেখা টেনে ভারতকে দিয়ে দেওয়া হোক। কেননা, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী মুসলিমদের সংস্থাপনের জন্য এমনটাই নাকি দরকার। কিন্তু মোদী বিরোধীদের এই সকল যুক্তিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রায় শত বছরের প্রাচীন দল কংগ্রেসকে ধরাশায়ী করে মোদী এখন প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসতে যাচ্ছেন। বিজেপির মত ধর্মান্ধ ও উগ্র হিন্দুত্ববাদী একটি দল কিভাবে এই জোয়ার বইয়ে দিলো এই প্রশ্ন সকল চিন্তাশীল মহলকেই চিন্তিত করেছে। তবে মোদী ঝড়ের পেছনে কাজ করেছে মূলত আধুনিক ভারতের কর্পোরেট দুনিয়া ও মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা। সব কিছু জানা সত্ত্বেও মোদীর পেছনে কর্পোরেটরা কেন গিয়েছে তার খোঁজ নিলে দেখা যাবে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকা কালে মোদী সে প্রদেশে বড় বড় বিনিয়োগকারীদের স্থান করে দিয়েছেন, যা নানা যুক্তিতে দিতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ সরকার এবং এমনকি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীও। ফলে সে প্রদেশে বড় বড় বিনিয়োগ ঘটায় আশাতীত সাফল্য অর্জিত হয়েছে। সেই বিনিয়োগকারী গোষ্ঠিটি নিজেদের স্বার্থরক্ষায় সকল প্রকার ন্যায়-নীতি ভুলে নির্বাচনে মোদীর সমর্থন করেছে। এদিকে শুধু ভারতই নয়, সারা পৃথিবীতেই আজকের মিডিয়া করপোরেটদের হাতে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। মিডিয়ার অবিরত প্রচারণায় সাধারণ মানুষ প্রভাবিত হয়। সত্যকে মিথ্যা বলে জানে, মিথ্যাকে জানে সত্য হিসেবে। মিডিয়ার এই ক্ষমতাকে ব্যাপকভাবে কাজে লাগিয়েছে মোদী সমর্থক গোষ্ঠীটি। ভুমি
মিডিয়া প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফলের আগেই মোদীকে নির্বাচিত করে ফেলেছে। তারা মোদীর নানা সাফল্যের চিত্র ফুটিয়ে তুলে তাকে বানিয়েছে ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ‘মহাদেবতা’রূপে। সুতরাং ক্রমাগত ভোগবাদী সমাজের দিকে ধাবমান ভারতীয় জনগোষ্ঠী সেই দেবতাকেই খুশি করার মাধ্যমে নিজেরাও খুশি হতে বিজেপির ভোটের বাক্সকে ভরে দিয়েছে। আবার মিডিয়ার ভূমিকাটাও এমনি জোরালো ছিলো যে, ‘তুমি মোদীকে ভোট দেবে না ঠিক আছে, কিন্তু তোমার ভোটটা অন্য কোথাও গেল মানে জলে গেলো।’ এভাবেই আজকের অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে গুজরাটের ‘কসাই’, মমতার ভাষায় যার হাতে এখনো মুসলমান হত্যার রক্তের দাগ লেগে আছে সেই হিন্দুত্ববাদী আদর্শের ধারক নরেন্দ্র মোদী।
এদিকে মোদীর ক্ষমতায় আসা নিয়ে নড়ে চড়ে বসেছে দুনিয়ার অনেক রাষ্ট্রই। বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশি দেশ বাংলাদেশ, চিরশত্র“ দেশ পাকিস্তান এবং পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের নীতিতে কেমন কি পরিবর্তন আসবে তা নিয়ে নতুন করে ভাবতেই হচ্ছে। কেননা গুজরাটের দাঙ্গার ঘটনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মোদীকে দায়ী মনে করতো এবং তার ঘৃণ্য সা¤প্রদায়িক চরিত্রের জন্য সে দেশে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ ছিলো। কিন্তু এখন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের আচরণ কি হবে তা অবশ্যই পরিষ্কার করতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে মোদীকে অভিনন্দন জানাতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক হোসেন ওবামাকে। সেই অনুসারে গত শুক্রবার বিকেলেই অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন ওবামা এবং সেই অভিনন্দনপত্রে মোদীকে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এদিকে ভারতে ক্ষমতার পালা পরিবর্তনে বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দকেও নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাথে কংগ্রেস সরকারের সব সময়ই একটি উঞ্চ সম্পর্ক বজায় ছিলো। কংগ্রেসের অনেক উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সাথে আছে ব্যক্তিগত সম্পর্কও। বিশেষ করে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে তৎকালীন কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধু নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য অকুণ্ঠচিত্তে সহযোগিতা করেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতির নাড়ী-নক্ষত্র সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল প্রণব মুখার্জীও কংগ্রেস থেকে ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। কিন্তু ভারতের মোদী নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার আওয়ামী লীগের সাথে সম্পর্ক কোন পর্যায়ে নিয়ে যায় সে ব্যাপারে এখনো আগাম কোন ধারণা করা যাচ্ছে না। তবে বিজেপি নেতাদের বক্তব্য থেকে ধারণা করা হচ্ছে, বিজেপি হয়তো রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে সব বক্তব্য দিয়েছে সেসবকেই রাষ্ট্রীয় কূটনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে না। তবে শেষ পর্যন্ত কি হয় তা বলা মুশকিল।
তবে ইতোমধ্যেই ভারতের ক্ষমতার পালা বদল নিয়ে বাংলাদেশে রাজনৈতিক বাক-বিতণ্ডা শুরু হয়ে গেছে। গত শনিবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় বক্তৃতাকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ভারতে বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসছেন বলে যারা খুশি হয়েছেন তাদের আহাম্মকের দল বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, তাদের ন্যুনতম গভীর জ্ঞান নেই। মিয়ানমার, ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ, তাদের ক্ষমতার পরিবর্তনে বাংলাদেশের কিছুই হবে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়, এই নীতিতেই আমরা বিশ্বাসী।
এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাদের কথাবার্তায় এটা পরিষ্কার যে, ভারতের নির্বাচনের ফলে তারা খুব নার্ভাস হয়ে পড়েছেন।’ আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, ‘বিএনপি তো কিছু বলছে না। আপনারা এত নার্ভাস হয়ে গেছেন কেন? নার্ভাস হয়ে কেন এত কথা বলছেন? আপনারা কি ভয় পেয়েছেন?’
এদিকে ভারতের ক্ষমতার পালা বদলে সবচেয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতে পড়েছে সম্ভবত মার্কিনযুক্ত রাষ্ট্র। কেননা, পূর্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অবাঞ্ছিত মোদীকে এখন বাধ্য হয়ে আমন্ত্রণ জানাতে হচ্ছে। তাছাড়া ভারতে ক্ষমতার পরিবর্তনে সে দেশের সংখ্যালগু নির্যাতিত মুসলিমদের কি অবস্থা দাঁড়ায় তাও দেখার বিষয়। কেননা, মোদীর এই বিজয় ভারতের মুসলিমদের জন্য মরার উপর খাড়ার ঘাঁ হিসেবেও আবির্ভূত হতে পারে। এমনকি প্রবল হিন্দুত্ববাদে বিশ্বাসী বিজেপি পাকিস্তানের দিকেও রুঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং বিজেপি তথা হিন্দুত্ববাদের উত্থান এ অঞ্চলের রাজনীতিতে কেমন পরিবর্তন আনবে তাই দেখার বিষয়।
১৯ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:০৩
উড়োজাহাজ বলেছেন: দেখা যাক, নরেন্দ্র মোদীর ভারতে শেষ পর্যন্ত কী হয়। তবে এই পরিবর্তনটা কোন বড় ধরনের পরিবর্তন টেনে আনতে পারে বলেই মনে করছি।
২| ১৯ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:১৩
মীর রেজা হোসাইন শহীদ বলেছেন: আমাদের মত ছোট দেশের সমস্যা হলো এই মোদীরা যদি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে দেয় তাহলে কি হবে। কারণ সাম্প্রদায়িকতা তো মোদীদের রক্ত-মাংসের সাথে মিশে গেছে। দেখা যাক কোন দিকের হাওয়া কোন দিকে যায়।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:১৬
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: মোদী গুজরাটের কসাই হিসাবে প্রমানীত হলেও অবস্থা আমাদের দেশের আওয়ামী-বিএনপির বাহিরে যেতে পারে নি।। বিকল্প কোন দল নেই বলে।। আর বাবরী মসজিদ ইস্যু ভুলে গেলেও চলে না ধর্মান্ধভারতের তথাকথিত সে্যকুলাজিমনের আরেক রূপ।।