নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা ও সামাজিক পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা আর নতুন করে বলার দরকার নেই। কোন শ্রেণি-পেশার মানুষই আজ নিরাপদ নেই। প্রত্যেকের মনে আতঙ্ক। অপরাধী কিংবা নিরাপরাধী কেউই এ অবস্থার বাইরে নয়। প্রচলিত একটি কথা আছে, যে দেশে মানুষের নিরাপত্তা নেই, বিচার নেই সেখানে চোর-ডাকাতও নিরাপদ নয়। কারণ চুরিতে ধরা পড়লেও তাকে পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে বেধড়ক পিটুনি দিয়ে ‘গণপিটুনিতে চোরের মৃত্যু’ বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। কেননা চোর-ডাকাতকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেও শেষ পর্যন্ত আইনের নানা ফাঁক-ফোঁকর গলিয়ে সে বেরিয়ে এসে আবারও একই কাজে জড়িয়ে যায়। এ জন্য আইন হাতে তুলে নিয়ে তাৎক্ষণিক হাতের সুখ মিটিয়ে থাকে সাধারণ মানুষ। আর অন্যদিকে অপরাধীদের দৌরাত্মের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে তো আতঙ্ক থাকেই।
স্বাভাবিকভাবেই অন্যদের মত সাংবাদিক সমাজও এর বাইরে নয়। বরং সাংবাদিক সমাজ অপরাধীদের কাছে অন্যদের চেয়ে একটু বেশিই আগ্রহের বস্তু হিসেবে গণ্য হয়ে থাকেন। এর একটি কারণ হচ্ছে সাংবাদিকগণ অপরাধীদের অপরাধগুলোকে খবরের কাগজে তুলে ধরেন। এ কারণে তারা নির্বিঘেœ অপকর্ম সারতে পারেন না। তাই পথের কাটা সরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রায়শঃই তাদেরকে হুমকি দেওয়া হয়, এমনকি খুনও করা হয়। এই ক’দিন আগেও (২১ শে মে) চুয়াডাঙ্গায় একজন সাংবাদিকের ১০ টুকরা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনাতো উপস্থিত আছেই। এছাড়া বাংলাদেশে দুর্বৃত্তদের হাতে পূর্বে বহু সাংবাদিকের প্রাণহাণীর ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে আলোচিত একটি হত্যাকাণ্ড ছিলো খুলনায় সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু হত্যাকাণ্ড। একুশে পদকপ্রাপ্ত ও খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাংবাদিক বালুকে প্রকাশ্য দিবালোকে বোমা মেরে হত্যা করা হয়। মাত্র পাঁচ মাস ১২ দিনের মাথায় খুলনা শহরে আরো একজন পরিচিত সাংবাদিক খুনের শিকার হন। প্রসঙ্গত, এর আগে ২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি খুলনা প্রেসক্লাবের অদূরে দৈনিক সংবাদ ও নিউ এজের সিনিয়র রিপোর্টার এবং বিবিসি বাংলার প্রতিনিধি মানিক সাহা বোমা হামলায় খুন হন। যার বিচার এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে এমন কোন খবর নেই।
এভাবে প্রায়শঃই সাংবাদিক খুন হচ্ছেন বাংলাদেশে। শুধু বাংলাদেশে কেন, সারা পৃথিবীতেই সাংবাদিগণ সন্ত্রাসীদের শিকারে পরিণত হচ্ছেন। প্রথম আলোর একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায় ২০১৩ সালে সারা বিশ্বে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রায় ১০৮ জন সংবাদকর্মী নিহত হয়েছেন। এর বাইরেও বহু সাংবাদিক পেশাগত কারণে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। আর শারীরিকভাবে আহত ও হুমকি-ধামকি সংখ্যার কোন নির্দিষ্ট কোন পরিসংখ্যান নেই।
প্রশ্ন হচ্ছে সাংবাদিকগণ সন্ত্রাসীদের টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন কেন? সাংবাদিকদের কাজ হচ্ছে কোন ঘটনা ঘটলে তার খবর সংবাদ মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া। আশা করি সকলেই একমত হবেন যে- কোন অপরাধীর গোপনীয় কর্মকাণ্ড তদন্ত করার দায়িত্ব সাংবাদিকের নয়। এর জন্য সরকার তরফ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী নানা ধরনের সংস্থা রয়েছে। এমনকি অপরাধের ধরণ অনুযায়ী বিশেষ বিশেষ সংস্থাও আছে। সরকারের এতসব সংস্থা থাকা সত্ত্বেও একজন সাংবাদিককে কেন অনুসন্ধান চালিয়ে খবর যোগাড় করতে হয়? আদৌ কি তার প্রয়োজন আছে? না, এমনটা করার কারণ হচ্ছে সাংবাদিকদের অতি উৎসাহী ভূমিকা ও পেশাগত ভাবমূর্তি সৃষ্টি করা। তবে এর মানে এটা বোঝাতে চাচ্ছি না যে, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রেই তাদের এই অতি উৎসাহী ভূমিকাই দায়ী। কিন্তু আমরা প্রায়শঃই দেখতে পাই অপরাধীদের নাড়ী-নক্ষত্রের খোঁজে সাংবাদিকগণ গোপন অনুসন্ধান পরিচালনা করেন। ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার অনেক সাংবাদিককে দেখতে পাই তারা সাথে একজন ক্যামেরাম্যানকে নিয়ে অপরাধীদের আস্তানায় ঢুকে পড়ছেন। অরণ্য ঘেরা গহীণ জঙ্গলে চলে যাচ্ছেন ।
এ সময় অপরাধীদের হাতে আক্রমণের শিকার হলে আত্মরক্ষা করবে- এমন কোন ব্যবস্থাও তাদের হাতে থাকে না, থাকে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আগে থেকে অবগত রাখাও। আর সবচেয়ে বড় কথা কাজটা সাংবাদিকের নয়, অপরাধীকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার মূল দায়িত্বটা সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরই। সাংবাদিকেরা এটা করে থাকেন নিজের যশ-খ্যাতি কামাইয়ের জন্য এবং এক্সক্লুসিভ নিউজের নামে নিজেদের সংবাদপত্রের কাটতি বা টেলিভিশনের টিআরপি বাড়ানোর জন্য। কিন্তু এতে করে তারা নিজেরাই নিজেদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে পতিত করেন।
অপরাধীদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অনসন্ধান করা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না এই জন্য যে, কেউ তাদেরকে এই কাজে নিয়োগ দেয়নি। এ জন্য তারা কোন বৈধ কর্তৃপক্ষও নয়। সাধারণত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যখন কোন অভিযানে যায় এবং অপরাধীদের মুখোমুখি হয় তখন অপরাধীরা তাদের অপরাধী মনোভাবের কারণে নৈতিক ও মানসিকভাবে দুর্বল থাকে এবং বিপরীত দিকে অভিযান পরিচালনাকারীদের নৈতিক মনোবল থাকে তুঙ্গে। তাছাড়া অপরাধীদেরকে মোকাবেলা করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যথাযথ প্রস্তুতি থাকে, প্রয়োজনে অপরাধীদের ঘায়েল করার জন্য অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতিও থাকে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে তারা একটি নিয়মিত, প্রশিক্ষিত ও সংঘবদ্ধ বাহিনী । অপরদিকে একজন সাংবাদিকের মুখোমুখি হলে অপরাধীরা সে হিসেবে তাকে সমীহ করে না। একজন সাংবাদিক থাকে একা কিংবা বড় জোর দুই তিন জনের সমষ্টি। হাত খালি, সুতরাং আত্মরক্ষা করার সামর্থও তাদের থাকে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেখানে সর্বদা তাদের নির্দিষ্ট ফাঁড়ি, থানা কিংবা ব্যারাকে থাকে সাংবাদিকের ক্ষেত্রে তা নয়। তাকে সাধারণ মানুষের মাঝেই থাকতে হয়, জনসমাগমে ঘুরতে হয়। এমতাবস্থায় কারো সাথে বিরোধের সূচনা হলে তাকে একা পেয়ে পরপারে পাঠিয়ে দেওয়া কঠিন কোন কাজ নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব ঘটনায় কোন সাক্ষীও পাওয়া যায় না। সুতরাং বিচারপ্রাপ্তির আশাও অতিশয় ক্ষীণ।
সুতরাং নিজের পেশাগত ভাবমূর্তির জন্য, নাম কামাইয়ের জন্য এবং এমনকি নিজেদের সংবাদপত্রের কাটতি বাড়ানো কিংবা টেলিভিশনের টিআরপি বাড়ানোর নামে এ সকল অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ড (যা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের জীবনের উপর হুমকি ডেকে আনে। একই সাথে অপরাধ কর্মকাণ্ডের অনুসন্ধান করার এই দায়িত্ব স্বেচ্ছায় নিজেদের ঘাড়ে নেওয়ার এই মানসিকত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যোগ্যতাকেও খাটো করে দেখা হয়। অথচ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাজার হাজার সদস্য, বিশেষায়িত সংস্থা ও প্রশিক্ষিত সদস্যরা আন্তরিকতার সাথে কাজ করলে সাংবাদিকদের তথ্য ছাড়াই অপরাধীদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এর জন্য সাংবাদিকদের তথ্যের উপর তাদের নির্ভর করতে হয় না। বরং সাংবাদিকদের দায়িত্ব তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করা। সুতরাং এ ব্যাপারে আমার অভিমত হচ্ছে অহেতুক প্রতিযোগিতা না করে সাংবাদিকতার নির্ধারিত সীমা মেনে চললেই সাংবাদিকগণ নিজেদের উপর ঝুকির পরিমাণ অনেকাংশে কমিয়ে আনতে পারেন।
২৬ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৫:৩০
উড়োজাহাজ বলেছেন: তারা নিজেদের বিষয়টা খুব ভাল বোঝে।
২| ৩১ শে মে, ২০১৪ সকাল ৯:২২
পংবাড়ী বলেছেন: জাতির ১ম খুন ছিল সিরাজ শিকদারকে বিনা বিচারে হত্যা; যার বিচার হয়নি।
জাতির ২য় খুন ছিল শেখ সাহেব হত্যা; এটার আংশিক বিচার হয়েছিল প্রায় ২০ বছর পর; এখানেই ছিল আজকের ভয়ংকর পরিস্হিতির বীজ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৭
াহো বলেছেন:
আমেরিকায় সাতজন খুন এবং তাদের মিডিয়া কাভারেজ (খুঁজে পাওয়া কঠিন)
ওয়েবসাইটে একটি কোণায় খবর প্রকাশ .
এই সংবাদ প্রথমে একক কলাম এবং দশ ঘন্টা পরে ডাবল কলামে সঙ্গে উপরের কোণায় প্রকাশিত.পরে আবার একক কলামে প্রকাশিত
নিউ ইয়র্ক টাইমস ওয়েবসাইট
25 May 2014 BDTIME
0125hours ,1225hours & 5pm