নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর জানা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এ যুদ্ধে বিশ্বের প্রায় ত্রিশটি দেশ সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিল। আর এবারে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আইএসের বিরুদ্ধে অংশ নিচ্ছে প্রায় ৫৪টি দেশ। এ সংখ্যা আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে টুইনটাওয়ার হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ নাম দিয়ে বিশ্বের অধিকাংশ দেশকে একত্রিত করে শুরু হয়েছিল আল-কায়েদাবিরোধী এক যুদ্ধ। এই যুদ্ধের ফলে তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তান বিধ্বস্ত হয়েছে। পাশাপাশি পাকিস্তান, ইয়েমেনসহ বিশ্বের বহু দেশে এই যুদ্ধের বি¯তৃতি ঘটেছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ‘এরাব ¯িপ্রং’ বা আরব বসন্তের হাত ধরে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ এলোমেলো হয়ে গেছে। এর আগে গণবিদ্ধংসী অস্ত্রের মজুদ আছে এই মিথ্যে অজুহাতে ইরাকে হামলা করে প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত করা হয়েছে। কিন্তু সেখানকার যুদ্ধ আজও শেষ হয়নি। কবে শেষ হবে তার কোন ইঙ্গিতও নেই। ব্যাপক অর্থ ও অস্ত্রের ক্ষয়-ক্ষতি এবং সৈন্যদের প্রাণহানী স্বীকার করে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের বাহিনী সেখান থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়। কিন্তু কয়েকদিন না যেতেই সেখানে বসানো ইরাকি সেনাদেরকে হটিয়ে বিশাল এলাকা দখল করে নিয়েছে আইএস নামের সদ্যপ্রসূত দলটি।
আইএস হচ্ছে সে শক্তি যারা বেশ কিছু দিন যাবৎ ব্যাপকভাবে বিরোধী মতের বিরুদ্ধে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়ে আসছে ইরাক ও সিরিয়ার একটি বিশাল এলাকা জুড়ে। মজার ব্যাপার হচ্ছে সিরিয়ায় যুদ্ধরত এই আইএস আল-কায়দার ন্যায় কিছুদিন আগেও যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সৌদি আরবসহ ইউরোপীয়দের সহযোগিতা পেয়ে আসছিলো। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে উচ্ছেদের লক্ষ্যে আইএসকে অর্থ, অস্ত্র ও সমর্থন দিয়ে বড় করে তুলেছিল তারাই। এই যুদ্ধের বিপক্ষে মত দিয়েছে সিরিয়ার মিত্র বিশ্বের আরেক পরাশক্তিধর দেশ রাশিয়া। এই তালিকায় রয়েছে ইরানও। কিন্তু এই যুদ্ধের ব্যাপারে ন্যাতিবাচক হুঁশিয়ারীকে অবজ্ঞা করে ঠিকই সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে হামলা চালানো হয়েছে সিরিয়ার অভ্যন্তরে। আর পারমাণু প্রকল্প নিয়ে ইরানের সাথে পশ্চিমাদের ইঁদুর-বিড়াল খেলাতো চলছে বহু দিন ধরেই।
গণভোটের মাধ্যমে ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন করে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সাথে অঙ্গীভূত করা নিয়ে পাশ্চাত্যের দেশগুলোর সাথে অবিরাম দ্বন্দ্ব চালিয়ে যেতে হচ্ছে রাশিয়াকে। ক্রিমিয়ার সফল অঙ্গীভূত হওয়ার পর এবার ইউক্রেনের দোনেৎস্ক প্রদেশেও সশস্ত্র বিপ্লব শুরু হয়েছে একই লক্ষ্য নিয়ে। ইউক্রেন এবং ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোর দাবি এ ক্ষেত্রে স্বাধীনতাকামীদের সহযোগিতা করছে রাশিয়া। এই নিয়ে রাশিয়ার সাথে চলছে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়। দফায় দফায় একে অপরের উপর অবরোধ আরোপ চালিয়ে যাচ্ছে। ঠাণ্ডা যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এটাই রাশিয়ার সাথে পশ্চিমাদের সবচেয়ে বড় দ্বন্দ্ব বলে বিশ্লেষকগণ মনে করছেন।
মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল কর্তৃক অবরুদ্ধ আরেক দেশ ফিলিস্তিনে এই কিছুদিন আগেও ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধা হামাসের রকেট হামলার জবাবে ইসরাইল ক্ষেপনাস্ত্র ছুঁড়ে মাসাধিক কালব্যাপী প্রায় হাজার দুয়েক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ। বর্তমানে এই যুদ্ধে অস্ত্র বিরতি চললেও বিচ্ছিন্নভাবে এখনও একে অপরকে আক্রমণ করছে। সেখানে যুদ্ধ শুরু হতে কোন আগাম ঘোষণার দরকার নেই। অতীতে বহুবার সেখানে এমনটা হয়েছে। অপরদিকে ক্ষুধার দেশ আফ্রিকাও আজ অশান্ত।
নাইজেরিয়ায় বোকোহারাম ইসলামের পবিত্র যুদ্ধ ‘জেহাদ’ এর নামে নৃশংস হত্যাকাণ্ড পরিচালিত করছে। তারা সে দেশের সেনাবাহিনীর সাথেও যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলোও বোকোহারামের উত্থানের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান পরিস্কার করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। অপরদিকে সেন্ট্রাল আফ্রিকায় উগ্র খ্রিস্টানদের হাতে নৃশংস সা¤প্রদায়িক হামলার শিকার হয়ে ব্যাপকহারে নিহত হচ্ছে সেখানকার মুসলিম স¤প্রদায়।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত নিয়েও উত্তেজনা চলছে। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো ঘোষণা দিয়েছেন, যে কোন মূল্যে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরকে পাকিস্তানের সাথে যুক্ত করা হবে। তার এই ঘোষণার পর দুটো দেশের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে ভারতের উত্তেজনা চলছে চীনের সাথেও। চীন স¤প্রতি ভারতের সীমান্তে ব্যাপক সৈন্যের সমাবেশ ঘটিয়েছে। পাশাপাশি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে গিয়ে সেনাবাহিনীকে আঞ্চলিক যুদ্ধের প্রস্তুতির আদেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে চীনের অভ্যন্তরে উইঘর স¤প্রদায় সরকারি বাহিনীর নির্যাতনের মুখে পড়ে বিচ্ছিন্নভাবে সশস্ত্র প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছে। আর উত্তর কোরিয়া কয়েকদিন পর পরই পারমাণবিক বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া ও তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্রকে হামলা করার হুমকি প্রদান করেই যাচ্ছে।
এই হচ্ছে গোটা পৃথিবীর মোটামোটি একটা চিত্র। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে সারা পৃথিবীর অবস্থাই অগ্নিগর্ভে পরিণত হয়ে আছে। এই অবস্থা কি সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের পক্ষে কোনভাবে মানানসই? কিন্তু এই অবস্থা কেন? কারণ, মানুষ তার আদি পরিচয় ভুলে গেছে। মানুষ শত্র“তা করার সময় মনে রাখছে না যে, সে যাকে আঘাত করছে সে তারই ভাই, তারই আত্মীয়। প্রবল বস্তুবাদে নিমজ্জিত হয়ে পড়ায় সে দুনিয়াবী প্রতিষ্ঠা, আধিপত্য বিস্তার, জাত্যাভিমান ইত্যাদি কারণে অন্যকে শত্র“ জ্ঞান করছে। এছাড়া ধর্মীয় ব্যবধানও এই শত্র“তার একটি অন্যতম কারণ। অথচ স্রষ্টা প্রেরিত প্রতিটি ধর্মের মূল মর্মবাণী এক ও অভিন্ন। প্রতিটি ধর্মই শিক্ষা দেয় মানুষকে ভালবাসতে। প্রতিটি ধর্মই বলে মানুষ একই স্রষ্টার কাছ থেকে এসেছে একই দম্পত্তি আদম হাওয়ার গর্ভ থেকে। সেই হিসেবে একে অপরের ভাই ও বোন। সুতরাং মানুষ যদি সেই দিকে তার দৃষ্টিকে নিক্ষেপ করে তাহলে সহজেই তার এই অনুচিৎ ও অহেতুক যুদ্ধের অসারতা সম্বন্ধে জানতে পারবে। দেখতে পাবে সে কি বোকামীটাই না করছে। সুতরাং আগামী তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ, যার সূচনা ইতোমধ্যেই দেখা যাচ্ছে তার কোপানল থেকে বাঁচতে, আগামী প্রজন্মকে ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড় করানোর আগে তাকে তার আদি পরিচয়টি একটিবার হলেও খতিয়ে দেখতে হবে। হয়তো এর মাধ্যমেই কলঙ্কিত যুদ্ধের হাত থেকে বেঁচে যেতে পারে মানবজাতি।
২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৪৪
উড়োজাহাজ বলেছেন: তালেবান বেচে থাকলেও সেই আফগানিস্তান আর বেচে নেই।
তবে পরিস্থিিত যে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে স্পর্শকাতর তাতো অস্বীকার করা যায় না।
আচ্ছা, আপনিতো মধ্যপ্রাচ্যে থাকেন। আপনি সেখানকার অবস্থা কিছু লিখুন না!
২| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৪৯
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: তবে পরিস্থিিত যে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে স্পর্শকাতর তাতো অস্বীকার করা যায় না-যা বলার আপনিই তো বলে দিলেন।
চেষ্টা করবো রেখে-ঢেকে, আগামীতে।।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ২:১৭
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: এই যুদ্ধের ফলে তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তান বিধ্বস্ত হয়েছে। কিন্তু তালেবান আজো দিব্যি বেচে-বর্তে আছে। বরং বিস্তৃতি ঘটেছে।
IS এর যুদ্ব মূলত ভিন্নমতাবলম্বীদের সাথে। আজ পর্যন্ত দেখলাম না আসাদের বিরুদ্ধে কিছু করতে। অব্শ্য দু'একটা ব্যাতিক্রম বাদে।
আফ্রিকায় ক্ষমতার দ্বন্ধকে দেখানো হচ্ছে ভিন্নভাবে।
অন্যদিকে পাকিস্তান ভরত নিয়ে কিছু বলার নেই। সবাই জানেন দেশদুোটোতে রাজনৈতিক স্বার্থেই সীমান্তদ্বন্ধকে ব্যাবহার করা হয়। আর চীনের ঘটনাতো সমসাময়িক।
লক্ষনীয় মানবতার মানবতা এখানে বিচার না পেয়ে নীরবে,নিভৃতে কাঁদছে।।