![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষের উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে তাকালে আমরা অবাক হতে বাধ্য হই। মানুষ তার শ্রম আর অধ্যবসায় দিয়ে কত সুন্দর আর আরামদায়ক করে তুলেছে তার জীবনকে। অথচ এই মানুষেরই আদি পুরুষগণ সামান্য আগুন জ্বালাতেও জানতেন না। জীবন কাটাতেন খোলা আকাশ, উন্মুক্ত প্রান্তর কিংবা পাহাড়ের গুহায়। রোদ, বৃষ্টি, শীত, গ্রীষ্ম তাদের জীবনকে অসহায় করে তুলত। কিন্তু সেই মানুষই আজ প্রায় সব সীমাবদ্ধতাকে আয়ত্ত্বে নিয়ে এসেছে। শীতকে নিবারণের জন্য বৈদ্যুতিক হিটার, গরমকে সামাল দেওয়ার জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র আবিষ্কার করেছে। খাদ্যকে অধিককাল তরতাজা রাখার জন্য বানিয়েছে রেফ্রিজারেটর। রান্নার জন্য লাকড়ির প্রয়োজনীতা আজ অনেকটাই কমে গেছে। ধোঁয়া-কালির ঝামেলা থেকে অনেকটাই মুক্তি পেয়ে গেছে মানুষ। গ্যাসের চুলোয় রান্না হচ্ছে বড় বড় ঘনবসতিপূর্ণ নগরীগুলোর উঁচু উঁচু ভবনে। আবার অনেক ক্ষেত্রেই ইলেক্ট্রিক চুলোয় দ্রুত সেরে ফেলা যাচ্ছে রান্না-বান্নার কাজ। অথচ মানুষ যদি লাকড়ির উপর এখনও নির্ভর করতো তবে প্রতিটি ঘনবসতিপূর্ণ শহরের দৃষ্টিনন্দন ভবনগুলো কালো কালিতে ছেয়ে থাকত। দিনের বেলায়ও বিরাজ করতো ধোঁয়ার রাজত্ব। সুস্বাদু খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হলুদ, মরিচ ইত্যাদি নানা মশলাপাতি গুঁড়ো করার জন্য আগের দিনের মত দরকার হচ্ছে না শিল পাটা। ফলের জুস তৈরিতে একটি ব্লেন্ডার মেশিনই যথেষ্ট। কাপড় ধোয়া ও শুকানোর কাজ সেরে ফেলা যাচ্ছে ওয়াশিং মেশিন দিয়েই। যে খাদ্য খেয়ে মানুষকে জীবন ধারণ করতে হয় তাও আজ প্রযুক্তির কল্যাণে সহজে রোপন, পরিচর্যা, পরিপক্ক হয়ে গেলে তা কর্তন এবং খাওয়ার জন্য উপযোগী করে তোলা সম্ভব হচ্ছে।
আগে যেখানে মানুষ দূর-দূরান্তে যাওয়ার জন্য পায়ের হাঁটার উপর নির্ভর করতো সেখানে কয়েক মিনিটের মধ্যে যাওয়া আসা করতে পারছে প্রযুক্তির কল্যাণে। বাস, ট্রাক, লঞ্চ, রেলগাড়ি ইত্যাদি পরিবহন কাছের যাত্রায় ব্যবহৃত হচ্ছে। আবার সাগর মহাসাগর পাড়ি দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে জাহাজ, উড়োজাহাজ ইত্যাদি। মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে পাড়ি দিতে পারছে মহাদেশ থেকে মহাদেশ। পারস্পরিক যোগাযোগের জন্য রানারের প্রয়োজন হারিয়ে গেছে। মুহূর্তেই টেলিফোন ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে পৃথিবীর দুর্গম অঞ্চলগুলোতেও। সেই সাথে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে যেকোন স্থান হতে।
মানুষের দু’হাতের এই শ্রম পৃথিবীকে উপহার দিয়েছে সুন্দর নগর-বন্দর। দিয়েছে বিশাল ও মনোরম অট্টালিকা ও প্রমোদ উদ্যানসমূহ। যোগাযোগের জন্য সুন্দর সুন্দর সেতু আর সে দিনের অলংঘনীয় পাহাড় চিরে তৈরি করেছে মনোরম রাস্তা। এইভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ ও উভভোগ্য করে তুলেছে। এ সকল দানকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর সব মানুষের জীবনকে আরো উপভোগ্য করে তোলা কোনভাবেই অসম্ভ নয়। কিন্তু আমাদের বাস্তবিক অবস্থাটা কি? এত কিছু অর্জনের পরেও আমরা জীবনের অন্য একটি দিক দিয়ে এই সুখ ও সম্ভাবনার জীবনকে বিষিয়ে তুলেছি। নানা ধরনের বিভেদ-ব্যবধান, যেমন ধর্মীয় বিদ্বেষ, জাতীয়তা, ভাষা ও বর্ণের ব্যবধান তুলে সংঘর্ষ চালিয়ে যাচ্ছি। যে বিজ্ঞান আমাদেরকে সুন্দর জীবন দিতে সক্ষম তারই সাহায্য নিয়ে আমরা বিভিন্ন মারণাস্ত্র তৈরি করেছি। এই মারণাস্ত্রের সম্মিলিত ধ্বংসক্ষমতা এতটাই মারাত্মক যে তা পৃথিবীকে বহুবার ধ্বংস করে দিতে সক্ষম।
আমাদের মধ্যে চলছে ব্যক্তিতে ব্যক্তিকে দ্বন্দ্ব, দলে দলে সংঘাত আর মতপার্থক্য। প্রতিটি ধর্মীয় স¤প্রদায়ের মধ্যে বিরাজ করছে শত্র“তা। বহু দেশের সীমানা নিয়ে চলছে যুদ্ধ। পৃথিবীর বর্তমান অবস্থা অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় নাজুক অবস্থায় পতিত হয়েছে। বিজ্ঞানের আশীর্বাদপুষ্ট কিছু কিছু দেশ অবস্থান করছে পরস্পর পরস্পরের মুখোমুখি। এদের সকলের হাতেই আবার রয়েছে পারমাণবিক বোমার মজুদ। যদি কোন কারণে তাদের মধ্যে সংঘাত বেধেই যায় তবে সে সব অস্ত্র তারা ব্যবহার করেই ফেলতে পারে। ইতোমধ্যে অবশ্য তার ব্যবহার করেনি এমন নয়। কিন্তু সে সময় আর আজকের সময় এক নয়। আজ অনেক দেশের হাতেই এসব অস্ত্রের মজুদ রয়েছে। আজকে যদি কেউ একবার এর ব্যবহার করেই বসে তবে অর্ধেক পথ অতিক্রম করার আগে প্রতিপক্ষও তার অস্ত্র ছুঁড়ে দেবে। এর ফলে পুরো মানবজাতি আত্মহত্যায় নিমজ্জিত হবে। অথচ মানবজাতি যদি তার উন্নতির দিকে তাকিয়ে, তার হাজার হাজার বছরের শ্রম আর অধ্যবসায়ের কথা স্মরণ করে এ সকল সংঘাত ও বিভেদ-ব্যবধানকে পরিত্যাগ না করে তবে কোটি মানুষের সব শ্রম, সব আত্মত্যাগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়ে ধূলিস্মাত হয়ে যাবে। আমাদের কি তাদের ঐ কৃতিত্বকে ধ্বংস করার অধিকার রাখি?
©somewhere in net ltd.