নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আতাহার হোসাইন

উড়োজাহাজ

ফেসবুক প্রোফাইল-https://www.facebook.com/ataharh

উড়োজাহাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঈদ আসে, খুশি আসে না...

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:২৬

একটি জেলখানার কথা ভাবুন। সেখানে যারা বন্দী জীবনযাপন করেন তাদের ভিতরে দিনমান কেবল একটাই চিন্তা কাজ করে যে- কবে আমি মুক্তি পাবো। সময়ের আবর্তনে কারাগারেও ঈদের দিন আসে। ঈদ মানে খুশি। কিন্তু সেই বন্দীদের হৃদয়ে সেই খুশির হাওয়া কতটা দোলা দেয় তা সহজেই বোধগম্য। জেল কর্তৃপক্ষ তাদেরকে সেদিন যতই মিষ্টিমুখ করান না কেন, যতই ভালো খেতে দেন না কেন, বন্দীদের হৃদয়ে সেদিন কেবলই ধ্বনিত হয় মুক্তি পেয়ে প্রিয়জনের সঙ্গে মিলিত হওয়ার নীরব আকুতি।
আমি কারাবন্দী অপরাধী বা অভিযুক্তদের প্রতি কোমল হৃদয়ানুভূতি থেকে কথাগুলি বলছি না, আমার উদ্দেশ্য অন্য। বর্তমানে সমগ্র মোসলেম দাবিদার জনগোষ্ঠী যারা সংখ্যায় বিশাল, প্রায় ১৫০ কোটি, তারা পশ্চিমা সভ্যতার দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে আছে। তারা ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় পশ্চিমা পরাশক্তিগুলির আদেশ মানতে বাধ্য। পশ্চিমা বস্তুবাদী ‘সভ্যতা’ অর্থাৎ দাজ্জাল তাদেরকে নির্মূল করে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ উদ্দেশ্যে তারা একযুগের বেশি সময় ধরে একটার পর একটা অবরোধ, নিষেধাজ্ঞা, আগ্রাসান চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মিথ্যা নাটক সাজিয়ে মোসলেম জাতিকে একটি সন্ত্রাসী, জঙ্গি জনগোষ্ঠী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে। এখন শান্তি প্রতিষ্ঠার নাম করে এই জাতিকে নির্মূল করে ফেলতে কোন বাধাই নেই। কয়েক শতাব্দী আগে এই জাতিটি পশ্চিমা শক্তিগুলির পদানত হয়েছে। সেই থেকে এ জাতি কারাবন্দী। তবু আত্মমর্যাদাহীন, নির্লজ্জের মত ঈদ করে যাচ্ছে, যেন কিছুই হয় নি। তারা জেলখানাতেই মহাসুখে আছে। এ যেন আল্লাহর সবচেয়ে কঠিনতম লানত, ভয়ঙ্করতম গজব।

কমুনিস্ট অজগর রাষ্ট্র রুশ, জার্মানের পতনের পর পশ্চিমা গণতন্ত্রবাদী পরাশক্তিগুলির সামনে প্রতিদ্বন্দ্বী কেবল ইসলাম। এখন এই প্রতিদ্বন্দ্বীকে যে কোন প্রকারে ধ্বংস করতে হবে। প্রয়োজনে সাধুকে চোর বানাতে হবে। এভাবেই আক্রমণ করা হয়েছে আফগানিস্তান, ইরাক। এভাবেই ঘটানো হয়েছে আরব বসন্ত, পরিণতিতে হয়েছে মিশরের গণহত্যা, লিবিয়ার বিদ্রোহী-ন্যাটো যুদ্ধ, গাদ্দাফি হত্যা, সিরিয়ায় শিয়া-সুন্নী বা সরকার বিদ্রোহী যুদ্ধের নামে লাখ লাখ মানুষের গণহত্যা, কেমিক্ল অস্ত্র ব্যবহার ইত্যাদি, এরপর আবার শুরু হয়েছে ইরাক সীমান্তকে আই.এস. এর দখলমুক্ত করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী যুুদ্ধ। এ সমস্ত যুদ্ধে ডামাডোলে যে হতাশাজনক সত্যটি চাপা পড়ে যাচ্ছে তা হলো, এই তথাকথিত মোসলেম নামক মেরুদণ্ডহীন, ঘৃণিত জনগোষ্ঠী এই লাঞ্ছনাজনক পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ নির্বিকার। বলা হয় নির্লজ্জ মানুষ পশুর সমান।

পশু কোরবানি দেওয়া হয়ে থাকে প্রতি ঈদুল আযহায়। আল্লাহর সমস্ত সৃষ্টিই মানুষের সেবার জন্য সৃজিত। সূর্য মানুষকে তাপ ও আলো দেয়, নদী-সমুদ্র পানি দেয়, গাছপালা ফলমুল আর অক্সিজেন দেয়, সাপ-ব্যাঙ ইত্যাদি ইকোসিস্টেম রক্ষা করে, কোন কোন প্রাণী মানুষের খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। আবার কিছু সৃষ্টি মানুষকে স্রষ্টা সম্পর্কে ভাবিয়ে তোলে, জ্ঞানচক্ষুর উন্মীলন ঘটায়, কেউ বা ঘটায় চিত্তবিনোদন। সেটা যাই করুক না কেন, যদি কোন সৃষ্টি মানুষের সেবায় কাজে আসে তবেই তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য স্বার্থক। যেমন একটি কলম দিয়ে যদি লেখা হয়, একটি মোবাইল ফোন দিয়ে যদি কথা বলা হয়, একটি বই যদি জ্ঞান সম্প্রচারে কাজে আসে, একটি সুর যদি মানবহৃদয়ে প্রশান্তি যোগায় তবেই সেগুলির সৃষ্টি বা জন্ম স্বার্থক।
একইভাবে একটি গরুর স্বার্থকতা তখনই যখন মানুষ তাকে দিয়ে নিজের প্রয়োজন পূরণ করবে। তার দুগ্ধ পান করবে, তাকে দিয়ে হাল চাষ করাবে বা তাকে খেয়ে নিজের শরীরকে পুষ্ট করবে। এজন্যই আল্লাহ গরুকে সৃষ্টি করেছেন। একটি আম বা কাঠালের স্বার্থকতা যখন সেটা মানুষের আহার হিসাবে ব্যবহৃত হবে। সুতরাং গরু-ছাগল-উট-মহিষ যে সমস্ত পশু আল্লাহর বিধানমতে কোরবানিযোগ্য সেগুলিকে কোরবানি করে হোক আর এমনিতে জবাই করে হোক, সেগুলি যদি মানুষের দ্বারা ভুক্ত হয় তবেই তাদের জন্মগ্রহণের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়। এখন প্রশ্ন হল, মানুষকে কেন সৃষ্টি করা হয়েছে? কিসে আসবে মানবজনমের স্বার্থকতা, কিসে হবে তার পরমার্থলাভ, মোক্ষ ও নির্বাণ? কবিরা গেয়েছেন -

কত ভাগ্যের ফলে না জানি
পেয়েছ এই মানব-তরণী।
দেব-দেবতাগণ করে আরাধন
জন্ম নিতে এই মানবে ।।
এমন মানবজনম আর কি হবে?

সুতরাং এত সাধের মানবজনম কিসে সার্থক হবে সেটা না জেনে, কেবল কোরবানি করে জীবন কাটিয়ে দিলে গরুর জীবন সার্থক হবে কিন্তু আপনার মানবজনম ব্যর্থ। মানুষের জীবনের উদ্দেশ্যে কেবল উদরপুর্তি, সংসারবৃদ্ধি ও দেহত্যাগ করা নয়। সে যদি জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নিজের জীবন নিয়েই বিব্রত থাকে তবে সেটা তো হীন পশুর জীবন। মানুষকে তো পশু হিসাবে সৃষ্টি করা হয় নি, সে আল্লাহর রূহ ধারণকারী, আল্লাহর নিজ হাতে সৃষ্ট আশরাফুল মাখলুকাত। আল্লাহ তাঁর জীবনের উদ্দেশ্য স্থির করে দিয়েছেন যে, মানুষ তার সমগ্র জীবনকালকে যদি আত্মস্বার্থ কোরবানি দিয়ে মানুষের কল্যাণে উৎসর্গ করতে পারে তবেই তার মানবজন্মের সার্থকতা। কোরবানির শিক্ষা এটাই- পশু যেমন মানুষের জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে জীবন স্বার্থক করল, তেমনি মানুষও মানবজাতির শান্তি প্রতিষ্ঠায় অর্থাৎ পরার্থে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে নিজের জীবনকে যেন সার্থক করতে পারে। মানুষ যদি এই প্রত্যয় করে যে, সে বাঁচবে মানবতার কল্যাণে, মরবে মানবতার কল্যাণে, জ্ঞান লাভ করবে মানুষকে দেওয়া জন্য, জগতের উন্নতির জন্য দুটো পয়সা রোজগারের জন্য নয় তবেই এই পৃথিবীতে তার আসার উদ্দেশ্য সার্থক হল। অন্যথায় - কে বলে মানুষ তারে পশু সেই জন।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৩:৫৩

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: আমরা মানে প্রবাসীরা এই বৃহত্তর জেলখানার বন্দী।। কোন সন্দেহ আছে??

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.