নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কোন মহৎ হৃদয়ের মানুষের সাথে এক ঘণ্টার সাক্ষাতের জন্য দশ মিনিটের পথ আমি আসা-যাওয়ার পেছনে দুই দুই চার ঘণ্টাও ব্যয় করতে পারি। সেটা আমার কাছে সামান্য কষ্টই মনে হতে পারে। কিন্তু নিত্যদিন শুধু জীবিকার তাগিদে লাখ লাখ মানুষ যখন কমপক্ষে চারটি ঘণ্টা রাস্তায়ই কাটিয়ে দেন, ধূলি-বালি-গরমে ঘেমে-নেয়ে একাকার হন তখন এই লাখ লাখ মানুষ কি করে সুস্থ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে? জনাকীর্ণ বাসে ঠেলে-ঠুলে উঠে বাঁদুর ঝোলা হয়ে যখন হাস-ফাঁস করতে থাকেন আর ঠিক ঐ মুহূর্তে যখন একটি সিট খালি হতে দেখেন তখনতো তিনি তাতে ঝাঁপিয়ে পড়বেনই। মানবিকতা দেখানো, অন্যকে ছাড় দেওয়া, বয়স্কদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ইত্যাদি মানবিক গুণ তখন থাকবে কী করে? লাখ লাখ মানুষ এভাবে রাস্তা-ঘাটে প্রতিদিন অমানবিক হওয়ার মন্ত্রণা গ্রহণ করে যাচ্ছে। তাদেরকে ভালো কথা শোনানো, মানবিকতা প্রদর্শনের আহ্বান জানানো এমন পরিস্থিতিতে একেবারেই বৃথা হয়ে যায় না? হ্যাঁ, এইভাবে এই শহর আমাদেরকে প্রতিনিয়ত হৃদয়হীন, মানবিকতাহীন জড়বাদী করে তুলছে। কঠিন পাথর আর ইট-সুড়কির মতই নিষ্প্রাণ হয়ে যাচ্ছে আমাদের হৃদয়। তাই লাখো মানুষের ভীড়ে আজ আসল মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না। যাওবা দু-একটা থাকে তাতেও দেখি ধূলির আস্তরণ। জং ধরা।
অন্যদিকে মানবিক বৃত্তি লালন করার জন্য তাদের ন্যূনতম যে একান্ত সময়টুকু দরকার, একটু ভাববার ফুসরত দরকার তাই বা তারা পাবে কোথায়? দীর্ঘ পরিশ্রম করে, ঘেমে-নেয়ে কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত হয়ে শুরু হয়ে যায় যন্ত্রের মত কাজ। আবার এক সংগ্রাম করে যখন ফিরে আসে ছোট ছোট কবুতরের ন্যায় খুপড়ি ঘরে তখনও ভালো কথা, সুস্থ চিন্তা করার ফুসরত হয় না। আহার, নিদ্রা, সংসার ইত্যাদি কেড়ে নেয় জীবনের সমস্ত রস-কষ।
এভাবে জীবনের সব রস-কষ শুষে নেওয়া অমানুষ বানানোর এই নগরীকে যদি আমি পারতাম তবে তাকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে মানুষগুলোকে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দিতাম। কী দাম দিতে পারছি অমূল্য এই মানব জনমের! কি নিদারুন অপচয় আর অবমাননাই না করে যাচ্ছি অনন্য এ জীবনের! এ কী পশুর চেয়ে অধম জীবন নয়? সেটাই বা ভাববার সময় কোথায়? ভাববার আগেই ঢুকে যাচ্ছি জীবনের গহীন চক্রে। এখান থেকে বেরোবার আর উপায় মিলছে না। চক্রাকারে জীবন থেকে জীবন কেটে যাচ্ছে। অথচ এই ঘুর্ণন দিন দিন বেড়েই চলছে। বেড়ে চলছে এর পরিধি। টেনে নিয়ে যাচ্ছে ব্ল্যাকহোলের মত আপন শূন্যতার অন্ধাকরে। এভাবে চিড়ে চ্যাপ্টা করে দিচ্ছে কোটি কোটি জীবন।
এই এক নগরীতে কেন এত মানুষ, কেন এত অফিস-আদালত, কল-কারখানা গিজগিজ করছে? কেন গ্রাম থেকে ছুটে আসছে লাখো মানুষ শহরের দিকে? মানুষের জন্য নিঃশ্বাস ফেলা যায় না, পা ফেলা যায় না, বাসে উঠা যায় না। কি পাবলিক টয়লেটে, কি ফুটওভার ব্রিজে, সর্বত্র শুধু মানুষ আর মানুষ। কালো কালো মাথা, হরেক রঙ্গের জামা-কাপড়, চারপাশে ময়লা-আবর্জনা, রিক্সা-ভ্যান, ফেরিওয়ালা, পিপপিপ আওয়াজ- যেন কোন মহাযাত্রায় ছুটে চলেছে তারা! যেন এ পথের শেষ নেই, সীমানা নেই। আমার ভালো লাগে না এই জীবন, ভালো লাগে না এই শহর, ভালো লাগে না যান্ত্রিকতা। এ শহর মানুষকে বধির বানিয়ে দিয়েছে। বানিয়েছে হৃদয়হীন। তবুও কিসের মোহে এখানে এই জনস্রোত? তারা কি জানে. কি পাক-দুর্বিপাক তাদেরকে আহ্বান করে যাচ্ছে? জীবন থাকতেও মেরে ফেলছে কীভাবে? সবুজ কোথায়, অরণ্য কোথায়, কোথায় একটা ঝর্ণা? ওসব কি অতীত কোন জীবনের স্মৃতি, নাকি মাঝে মাঝে ঘুমের ঘোরে দেখা অপার্থিব কোন স্বপ্ন?
০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৪
উড়োজাহাজ বলেছেন: হুম। সেটা জানি। খুব খারাপ লাগে। আমার ঢাকা ছাড়ার পেছনে এই সমস্যা একটা বড় কারণ।
২| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০০
শায়মা বলেছেন: এই জ্যামের ভয়ে তো আমার কোথাও যেতেই ইচ্ছে করেনা!
০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩০
উড়োজাহাজ বলেছেন: কারই বা ইচ্ছা করে? কিন্তু যাওয়াটা যদি একান্তই আবশ্যক হয়ে যায়? যদি সেটা জীবিকার বিষয় থাকে?
৩| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:২৮
তামান্না তাবাসসুম বলেছেন: একদম মনের কথা লিখেছেন
১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৪৩
উড়োজাহাজ বলেছেন: থ্যাংক ইউ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৩৪
সুমন কর বলেছেন: চমৎকার বলেছেন।
খুব কষ্ট হয়, সারাদিনের কাজ শেষে সময় মতো বাড়ি না ফিরে, বাসে বসে থাকা।।।
লেখায় প্লাস।