নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাসমান মেঘ হতে বৃষ্টি হয়ে অবতরণ

আমি শুধুই মানুষ, কোন বিশেষণ নাই।

মোঃ আতিকুর রহমান (আকাশ)

আমি শুধুই মানুষ, কোন বিশেষণ নাই।

মোঃ আতিকুর রহমান (আকাশ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রাণী থেকে মানুষ করার অনুঘটকদের গল্প

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:৫৫

স্বাভাবিক সময়ের আগেই আজ ঘুম ভেঙ্গে গেলেও উঠতে ইচ্ছে করছিলনা। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম মাত্র সকাল সাড়ে ছয়টা। বাইরের তাপমাত্রা -১/-২ ডিগ্রী সে. হলেও রুমে এসির গরম আর লেপের গরমে বেশ আরাম লাগছিলো । নিচতলায় বা তিনতলায় ইন্দোনেশিয়ান আর আফ্রিকান কিছু ছেলেমেয়ের কথা শুনতে পাচ্ছিলাম। বুঝলাম ওদের ক্লাস আছে আর ওরা সে প্রস্তুতিতেই ব্যস্ত। যতই ঠান্ডা থাকুক আর তুষার পড়ুক আটটার ক্লাস আটটায়ই হয় এদেশে। আমাদের দেশে কি হয়? মনে হলো হরতাল, অবরোধ, ক্লাস বর্জন,ধর্মঘট ইত্যাদির কথা। আমরা কেন করি এসব? আমরাতো গরীব, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাতো নড়বড়ে; তাহলে নিজেদের ক্ষতি করে এসব করে লাভ কি? সুমন চট্টোপাধ্যায়ের ‘সেই ‌‌‌‌উত্তর জানা নেই’ গানটাকে মনে পড়লো। ভাবলাম উঠে পড়ি, আবার মনে হলো না থাক একটু আলসেমী করি, ফ্রেঞ্চ ল্যাংগুয়েজ ক্লাসতো সেই বিকাল সাড়ে তিনটায়, আর আজকে রান্নাও করবনা। যা ভাবা সেই কাজ, এক ভাবনা থেকে আরেক ভাবনায় পরিভ্রমণ। এক সময় ভাবনা আবর্তিত হতে লাগল আমার ছেলেবেলার শিক্ষকদের নিয়ে।

নিঃসন্তান শামসু স্যার দেখতে ভূড়ি মোটা ছিলেন ঠিকই কিন্তু তার মনটা গ্রামের আরো দশজন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের থেকে অন্য রকম ছিল। সব সময় পরিপাটি, ইস্ত্রি করা কালো প্যান্ট, সাদা চেকশার্ট, গায়ে হালকা সুগন্ধি আর মুখে প্রফুল্ল হাসির সাথে সুযোগ পেলেই তার শহুরে শিক্ষিতা, রুচিশীলা স্ত্রীর গল্প। তাঁর হাতেই আমার প্রাণী থেকে মানুষ হওয়ার পালা শুরু। আমার বাড়ির সামনে দিয়েই তিনি সকালে স্কুলে যেতেন আর যাবার সময় বাড়ির সামনে এসেই আমাকে ডাকতেন। আমার এক হাতে বই আর অন্য হাত স্যারের নরম হাতের ভিতরে। আর স্যারের আরেক হাতে কালো কাপড়ের স্টীলের রড যুক্ত হাতলের সেই শরীফ ছাতা। স্কুল অবধি পথে কারো সাথে দেখা হলে স্যার মিষ্টি হেসে কুশল বিনিময় করতেন আর বাকি সময় আমি তার কাছে শিখতাম ম্যাংগো অর্থ আম, বুক মানে বই। স্যার স্বপ্ন দেখতেন আমি বড় হয়ে কলেজের ইংরেজীর শিক্ষক হব।এর পর যখন আমি হাইস্কুলে আর স্যার থেকে বেশ দূরে তখন একদিন শুনলাম স্যার মারা গেছেন আর স্যার মারা যাবার আগেই তাকে নিঃসঙ্গ রেখে স্যারের সেই শিক্ষিতা, রুচিশীলা স্ত্রী শহরে চলে গিয়েছিলেন। জানিনা স্যারের মৃত্যুর সময় তার পাশে না থাকতে পারা আর কলেজের ইংরেজীর শিক্ষক না হয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার অপরাধ স্যার কখনো ক্ষমা করবেন কিনা।

ক্লাস এইটে পড়ার সময় পরিচয় মান্নান স্যারের সাথে। আমাদের বিজ্ঞান পড়াতেন। যেমন রাগী তেমনি ভালো শিক্ষক ছিলেন। টিফিনের সময়ে সবাইকে মূরগীর বাচ্চা বলে ডেকে নামাজ পড়তে যাওয়ার সে নির্দেশ আজো কানে বাজে। যদিও আমি আর আমার বন্ধু তারেক প্রায়ই টিফিনের সময়টাতে সাইকেল নিয়ে নদীর তীরে ঘুরে বেড়াতাম কিন্তু তারেকের কাছে নামাজের একটা তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা ছিল। আর বন্ধু বিপলু এদিক দিয়ে খুব সিরিয়াস থাকতো বলে ওর ব্যাখ্যার প্রয়োজন হতোনা। যাহোক মান্নান স্যার বিভিন্ন কারণে ও ‍বিভিন্ন সময়ে সবাইকে কান মলে, পিটিয়ে শাস্তি দিলেও আমাকে আব্বু বলে ডাকতেন আর খুবই স্নেহ করতেন। ক্লাস এইটে ফার্স্ট এইড বক্স তৈরি কিংবা নাইন-টেনে জীববিজ্ঞানে কোষের গঠন, নিউক্লিয়াস, মাইটোকন্ড্রিয়ার গঠন আজো আমার মানুষ হওয়ার অনুপ্রেরণা হয়ে আছে। এর অনেকদিন পর একদিন শুনলাম মান্নান স্যার আর নেই।

জীবনে অনেক শিক্ষকের সান্নিধ্য পাওয়া আমি সব সময়ই তাদের নিরন্তর ভালোবাসা পেয়েছি। সে দিক দিয়ে নিজেকে সেীভাগ্যবান না ভাবার কোন সুযোগ নাই। তবে ভয় জাগে এটা ভেবে যে, তারা আমাকে যা দিয়েছেন তার কতটা মূল্য আমি রাখতে পেরেছি? একজন শিক্ষক হিসেবে ছাত্রের মাঝে সেই বীজ বপন করার কাজ যা তাদেরকে মানুষ হওয়ার পথে এগিয়ে নিবে তা সত্যিই যেমন সহজ নয়, আবার হয়তো অসম্ভবও নয়। তবে এটুকু বলতে পারি, যদি সামান্য বিন্দু কণা সম কোন ভাল দিক আমার থাকে তবে তা আমার এই অখ্যাত কিন্তু মহান শিক্ষকদের বদৌলতে। আর যা কিছু ব্যর্থতা তা আমার মহান শিক্ষকদের কথা বুঝতে না পারা বা তাদেরকে মূল্যায়ন করতে না পারার দন্ড। যেখানেই থাকি আমার শিক্ষকদের প্রতি এ শ্রদ্ধাবোধ আজীবন বহতা নদীর মতোই বহমান থাকবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.