![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ধর্ষণ বা ইভটিজিং যাই বলেন না কেন, এটা যখন ঘটে তখন দুই দলের আবির্ভাব ঘটে। এক দল বেপর্দাকে দায়ী করে, আরেকদল বলে উঠে মেয়েরা কেন পর্দা করবে? তারা কি মানুষ না? তাদেরকে কি অধিকার নেই পুরুষের মত স্বাধীনভাবে চলার? নারীর স্বাধীনতা চাই, নারী অধিকার বলে চিল্লাতে থাকে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে আসলেই কি পর্দা দিয়ে মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব? আমার সেটা মনে হয়না। আমার যতটুকু মনে হয় ইভটিজিং বন্ধের জন্য শুধু পর্দা যথেষ্ট নয়। যদি হত তাহলে আল্লাহ কুরআনে নারী পুরুষ উভয়ের দৃষ্টি সংযত করতে বলতেন না। তবে এটা সত্য যে বেপর্দাও ইভটিজিং এর জন্য দায়ী। তবে এটা সম্পূর্ণভাবে দায়ী না। যদি এমনটা হত তাহলে পাঁচ বছরের বালিকাটি কখনোই ধর্ষিত হতনা। যেমনঃ সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তার মানে এই না যে শুধুমাত্র ধূমপান করলেই স্বাস্থ্য খারাপ হবে আর না করলে হবেনা। আরো অনেক কারণে আপনার স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে। ঠিক তদ্রূপ ধূমপান যেমন স্বাস্থ্য খারাপের একটি কারণ তেমনি বেপর্দাও ইভটিজিং বা ধর্ষিত হওয়ার একটি কারণ। সম্পূর্ণভাবে বেপর্দাকে দায়ী করা নিতান্তই বোকামি।
তারপরও যদি মানতে না চান তাহলে আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই সেই সব ঘটনাগুলোকে যেখানে বাবা এবং মেয়ের সাথে অন্যদিকে মা ছেলের সাথে, ভাই বোনের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছে। ইসলাম কি বাবা আর মেয়ে, মা আর ছেলে, ভাই আর বোনের মাঝে পরপূরুষের মত পর্দার বিদান করেছে? নাকি তারা বাবা, ছেলে বা ভাইয়ের সামনে বেহায়াভাবে নিজেকে প্রদর্শন করেছে? মোটেই না। এমন সম্পর্কের মাঝে যদি এসব ঘটে তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে শুধুমাত্র পর্দা ইভটিজিং বা ধর্ষণের হাত থেকে বাচাতে পারেনা। তার মানে এই নয় যে আপনি পর্দা করবেন না। পর্দা আপনি অবশ্যই করবেন কিন্তু এর মাধ্যমে চূড়ান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন না।
ইভটিজিং বা ধর্ষণ বন্ধের জন্য আল্লাহর কথায় সবচেয়ে সুন্দর ও যৌক্তিক। আল্লাহ বলেছেন: মুমিন পুরুষদের বল তারা যেন দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাহাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে। (সূরা: নূর, আয়াত: ৩০)
এর পরের আয়াতে আল্লাহ বলেছেন: মুমিন নারীদের বল তারা যেন দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাহাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে। তাহারা যেন যাহা সাধারণত প্রকাশ থাকে তাহা ব্যাতীত তাহাদের আভরণ প্রদর্শন না করে, তাহাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপর দ্বারা আবৃত করে, তাহারা যেন তাহাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, আপন নারীগণ, তাহাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনা-রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ স্বমন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যাতীত কাহারো নিকট তাদের আভরণ প্রকাশ না করে, তাহারা যেন তাহাদের গোপন আভরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে। হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাহাতে তোমরা সফলকাম হয়তে পার। (সূরা: নূর, আয়াত: ৩১)
যারা ইভটিজিং বা ধর্ষণের জন্য বেপর্দাকে দায়ী করেন তারা একটু ভাল করে লক্ষ্য করুন এখানে কি শুধু নারীর পর্দার কথা বলা হয়েছে?
নারীর পর্দার কথার পূর্বে পুরুষের পর্দার কথা বলা হয়েছে। তাহলে বেপর্দার জন্য শুধুমাত্র নারী কেন দোষী হবেন? পুরুষ কেন দোষী হবেন না?
নারীকে রক্ষা করার দায়িত্ব পুরুষের, তার দূর্বলতাকে পুজি করে দোষী করা পুরুষত্বের কাজ না।
আইন-শৃঙ্খলা ব্যাবস্থা যদি নড়বড়ে হয় তাহলে সেখানে সামাজিক অশৃঙখলা দেখা দিবে এটাই স্বাভাবিক। ৭১'র মুক্তিযুদ্ধে কোন নারী সেচ্ছায় নিজেকে বিলিয়ে দেননি। তাদেরকে ঘর থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাবা, ভাই, স্বামী কিংবা পুত্রের সামনে থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর সেটা হয়েছিল আইন-শৃঙ্খলার বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কারণে। এখানে আপনি বেপর্দাকে দায়ী করতে পারবেন না। আইনের সুষ্ঠ প্রয়োগই এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের অন্যতম উপায়।
পরিবার শাশ্বত বিদ্যালয়। মা বাবা একজন সন্তানের প্রথম শিক্ষক শিক্ষিকা। প্রত্যেকটি সন্তানকে নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়া মা বাবার দায়িত্ব। সন্তানের অপরাধ যদি মা বাবা প্রশ্রয় না দেই তাহলে ইভটিজিং বা ধর্ষণ ও অন্যান্য অপরাধের মাত্রা বহুলাংশে কমে যাবে।
একটি জাতিকে গড়ার প্রয়োজন সুশিক্ষা। আর সুশিক্ষিত জাতিই সুন্দর সমাজ গঠনে সহায়ক। অপরাধ দমনের জন্য অপরাধীকে ধরাই যথেষ্ট নয়, অপরাধের কারণগুলোও খুজে বের করা দরকার। নতুবা একই কারণে আরো অপরাধী তৈরী হবে। সেটা অবশ্যই কারো কাম্য নহে।
সবসময় বেপর্দার পেছনে লাগবেন না। পর্দাশীল নারীও ধর্ষণের শিকার হতে পারে। প্রত্যেকটা অপরাধের পেছনে একটা কারণ থাকে। কারণটা খুজে বের করুন। সেটা যদি করতে পারেন তাহলে দেখবেন পর্দা ব্যাতীত অন্য কারণেও মেয়েরা ধর্ষিত হচ্ছে।
©somewhere in net ltd.