নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অমি_০৭০৪

undefined

অমি_০৭০৪ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অভিনয়-২

০৪ ঠা জুন, ২০১৩ রাত ৮:৩৭

দরজায় কে যেন কড়া নাড়ে।



‘‘আমি দেখছি’’ বলে গ্রীক পুরুষের মত অবর্ণনীয় সুন্দর আবরা্র তানভীর হেঁটে যায় দরজার দিকে। মীরা সেদিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে। স্মৃতি হারানো ছেলেটা যখন তাকে নিয়ে নতুন জীবন শুরু করতে চেয়েছিলো সে অনেক চেষ্টা করেও কিসের টানে যেনো না করতে পারে নি।



ওয়েটার কে বিদায় করে দু’মগ চকলেট কফি নিয়ে আসে আবরার। আচ্ছা সে কী তার আগের জীবনে এরকম কোন ফাইভ স্টার হোটেলের কোন ম্যা্নেজার ছিলো? না আবরা্র তানভীর ই ছিলো?



বড় একটা মগে দু' মগের কফি একত্র করে আবরার। এই মগটা সে সব সময় সাথে নিয়ে ঘুরে। কেন ঘুরে তা সে জানে না। প্রাচীন ধাঁচের রাজকীয় একটা মগ।



‘‘আজ কিন্তু প্রথম সিপ টা তুমি দিবে। ওকে মাই গার্ল?”



‘‘ওক্কে’’-হেসে বলে মীরা।



কফির মগটা ওদের মাঝে রেখে নির্গত গরম ধোঁয়া্র দিকে তাকিয়ে থাকে তানভীর। বিষণ্ন ভঙ্গিতে বলে,‘‘প্রাচীন এত সুন্দর এই মগটা আমি কোথায় পেয়েছি তা যদি আমি জানতে পারতাম মীরা।”

‘‘তুমি জানো তানভী। শুধু মনে করতে পারছো না। এই মগটা তো্মার দাদীর কাছ থেকে পাওয়া। খুব ছোটবেলায় তো্মার মা মারা যাওয়ার পর দাদীই তো্মার দেখাশুনা করতেন শুনেছি। তুমি তো্মার প্রথম জীবনে এই মগ হাতছাড়া করতে না,দ্বিতীয় জীবনেও করছো না।”



“দাদী! আমাদের রুমের সাইড-টেবিলে রাখা ছবির মানুষটা না?? সবাই বলে আমি নাকি নিজের অজান্তে এখনও তাকে নিজের থেকে বেশী ভালো্বাসি।”



একটু থেমে আবরা্র বলে,‘‘আমার কী জীবন বলে আসলেই কিছু আছে মীরা?তুমি ছাড়া আমার কোন ইতিহাস নেই। নিজের শুরু কোথায় তাই জানি না।আস্তিক বলে জানি এর শেষ আছে।”



দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবরা্র। ঘরে সুনসান নীরবতা। বাহিরে রাতের কো্লাহল।



কফিতে শেষ চুমুক দিতে দিতে আবরার মীরাকে বলে,‘‘যাই হোক, বিয়ের আগে তো তুমি ছাড়া আমার কোন কিছু কাউকে বলি নি।তাহলে এই স্কেচটা কোথায় পেলে?”



‘‘গত বছর নতুন ইউনিভার্সিটিতে জয়েন করার সময় তোমার স্কুল সার্টিফিকেটের দরকার হয়ে পড়লো। তো্মার ফাইল ঘাটতে গিয়ে এই স্কেচ বেরিয়ে আসলো। আর নওশীনের কথা তো বিয়ের আগে থেকেই ঐশীর কাছে শুনে আসছি। পরিচয়ও ছিলো। স্কুল লাইফ থেকে তো্মাদের ভালো লাগা।কলেজে রিলেশন। অ্যাক্সিডেন্টের পর তুমি তো্মার এই জীবনে নওশীনকে আর চিনতে পারলে না।বেচারী অনেক চেষ্টা করেছিলো।নিয়তির সাথে না পেরে পরে নিজেই সরে গিয়েছে।”





চশমাটা খুলে বারান্দার গ্রীলে দু’হাত আঁকড়ে ধরে দাঁড়ায় আবরার তানভীর। অসম্ভব রূপবান এবং প্রতিভাবান ভালো মানুষ এই যুবকটি ৭ বছর আগে সড়ক দু্র্ঘটনায় তার দৃষ্টি্র অনেকটাই খারাপ করে ফেলেছে।এতে অবশ্য লাভ হয়েছে, যখন আজকাল অনেককেই হঠাৎ করে চিনতে পারছে না, তখন আস্তে করে চশমাটা খুলে ফেললেই হল, মুখ কাঁচুমাচু করে বলে,‘‘স্যরি, চশমাটা কাছে ধারে না থাকায় আপনাকে ঠিক চিনে উঠতে পারছি না।’’







শহরটা ঝাপসা হয়ে আসে আবরা্রের খোলা চোখে। আচ্ছা ঝাপসা দৃষ্টি্র ছবি আঁকলে কেমন হয়? তার ঝাপসা দৃষ্টিতে ঘুমন্ত মীরাকে সে যেমন দেখে!



রুমে ফিরে এসে রং তুলি আর ইজেল হাতে তুলে নেয় বিখ্যাত চিত্রশিল্পী আবরা্র তানভীর। রং ছড়ি্যে আলো আর আঁধারের গভীরে ডুবে যেতে থাকে সে। আপন মন ই এখন তার জগৎ। সামনে ঘুমন্ত মীরার মুখ। তার চারপাশে অনেক মানুষ। কাউকেই সে চিনে না। আজকাল আর চিনতে চায়ও না। এমনিতেই আজকাল অনেক কিছু মনে থাকছে না। মাঝে মাঝে মীরা কেও না। সামনে কী হবে মেয়েটার কে জানে? মেয়েটা এই তিন বছরে যা দিয়েছে তা তো শুধু আর ছবি দিয়ে বলা যায় না।



ছবিটা বেশ ভালো হচ্ছে। ছবির ঘুমন্ত মেয়েটার কপালে একটা টিপ দিবে?মীরা কি কখনো টিপ পড়ে? মনে করে উঠতে কষ্ট হয় ওর। মনে মনে নিজের প্রতি অবজ্ঞা্র হাসি দেয় সে।



খাটে ঘুমের ভান করে পড়ে আছে মীরা। ও জানে এখন একটু কোথাও উঠে আবরা্রের চোখের আড়াল হলেই ও মনে করে উঠতে পারবে না কার ছবি এঁকেছে।



৭ বছর আগে পারিবারিক পিকনিক থেকে ফেরার পথে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় শিল্পপতি খন্দকার জামান রশীদ তার স্ত্রী সহ মারা যান। অলৌকিক ভাবে বেঁচে যায় তাদের একমাত্র সন্তা্ন আবরা্র তানভীর। অলৌ্কিক ভাবে বাঁচলেও তার স্মৃতিকোষ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। চাচা-চাচীকে মা-বাবা আর চাচাতো বোন ঐশী কে নিজের বোন জেনে বেঁচে আছে সে। তার প্রথম জীবনের সব পারিবারাক ছবি পর্যন্ত পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে দ্বিতীয় জীবনের স্বার্থে। চারপাশের সবার সাথে অভিনয় করে যাচ্ছে তানভীর। তার কিছুই বিশ্বাস হতে চায় না।৭ বছর আগে সে নিজেকে আবিষ্কার করেছিলো হাসপাতালের বেডে। নিজের কাছেই তখন সে অচেনা।



দ্বিতীয় জীবনেও সে সব ধরে রাখতে পারছে না। ডিমেনশিয়া থেকে সে ধীরে ধীরে অ্যালঝাইমার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে আবরার বুঝে উঠতে পারে না জীবন নামক নাটকের কতগুলো পার্ট থাকে।



ভোর হচ্ছে। বারান্দা থেকে হোটেলের বৃদ্ধ মালীকে দেখে আবরা্র ভাবে, পৃথিবীর সব মানুষ জানে সে কি জন্য জীবিকার পিছনে ছোটে, তার গন্তব্য কোথা্য়। সে শুধু মানুষ দেখে যায়, হয়তো কয়েকদিন পর তার স্মৃতি আর কোন মানুষ জমা রাখতে পারবে না। হয়তো তার প্রিয় মীরা কে ও না।



এই পৃথিবী্তে সে বড় নিঃসঙ্গ। ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাওয়া স্মৃতি নিয়ে তাকে বেঁচে থাকতে হবে আমৃত্যু। পৃথিবীর সব শহরে সে বারবার হারিয়ে যেতে পারে,কিন্তু তার শুরুতে আর ফিরে আসতে পারে না।







অভিনয়-১







মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুন, ২০১৩ রাত ১০:৫০

মায়াবতী নীলকন্ঠি বলেছেন: এই কি শেষ?ভালো লেগেছে

২| ০৪ ঠা জুন, ২০১৩ রাত ১০:৫৯

অমি_০৭০৪ বলেছেন: হুম। ছোট গল্প। ধন্যবাদ।

৩| ০৪ ঠা জুন, ২০১৩ রাত ১১:১৩

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: বর্ণনা সুন্দর, প্রাণবন্ত। কিন্তু কাহিনি পেলাম না। আরও আসবে নাকি?

৪| ০৪ ঠা জুন, ২০১৩ রাত ১১:৫২

অমি_০৭০৪ বলেছেন: আপাতত এইটুকুই। প্রথম তো। তাই হয়তো যা বুঝাতে চেয়েছি তা পুরোপুরি উঠে আসে নি।

৫| ০৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ১১:৪১

উজবুক ইশতি বলেছেন: খুব সুন্দর হইছে.. কাহিনি একটু জটিল আগামীতে আপনার কাছ থেকে আর অনেক সুন্দ্র পোস্ট পাব আশা করি শুভকামনা রইল
বস

৬| ০৭ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:২২

অমি_০৭০৪ বলেছেন: ধন্যবাদ বস।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.