নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অমি_০৭০৪

undefined

অমি_০৭০৪ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এই ফাগুনে

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১১

(১)

-কাল দেখা করবে? এক বছর তো পার করে দিলে বার্তায় বার্তায় ।

-নাহ, অকারণ অপরাধী হতে চাই না । যদি দেখা হবার পর তোমার ভালো না লাগে?

-বারে, সেই জন্য তুমি অপরাধী হবে কেনো? আর তোমাকে আমার পছন্দ হবে, আমি জানি ।

-সিওর? তার চেয়ে দূর থেকে এই অদেখা বন্ধুত্বটুকুই থাক না ।

-কাল দেখা দিও, আমি একলা অপেক্ষা করে থাকবো তোমার জন্য ।



মেইল অফ করে দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে প্রজ্ঞা। অচেনা একটা মানুষ, অজানা একটা কন্ঠস্বর, তাকে গত একটা বছর কেমন ঘোরের মধ্যে ডুবিয়ে রেখেছে। এই ঘোর অনলাইন জগতেই সীমাবদ্ধ, তাও শুধুমাত্র মেইল চালাচালিতেই।



ফোন বেজে চলেছে। নীড় গাধাটার ফোন। প্রজ্ঞার বেস্ট ফ্রেন্ড, মানে ছেলেদের মধ্যে আর কি। আর ইউনিভার্সিটির সবচেয়ে পপুলার ছেলেটা। শুধু প্রজ্ঞার সামনে আসলেই কেমন যেন ক্যাবলাকান্ত হয়ে যায়। এই গাধাটার পেছনে কিভাবে এত মেয়ে ঘুরে? যে আরেক জনের উপর এতোটা নির্ভরশীল!

- কাল আমার সাথে বের হবি?

- না রে, এইবার আমাকে একটু একা ঘুরতে দে ।

কথা বাড়ায় না নীড় । কি বলতে কি বলে ফেলবে আর প্রজ্ঞা আবার খোরাসানী রুপ ধারণ করবে । এমনিতে এই মেয়ে খানিকটা আনমনা, একটু বোধহয় অহংবোধও আছে । শুধুমাত্র নীড়ের সামনে আসলেই সে এমন ভাব দেখায় যেন নীড়ের ভেতরের সব বদ-তামাশা অদৃশ্য চশমা দিয়ে দেখতে পাচ্ছে এবং এই বদমাইশি দূর করা তার জন্মগত দায়িত্ব । নীড়ের কেন যেন সেই অত্যাচারটুকু মাথা পেতে নিতে ইচ্ছে করে!



(২)

ঘটনার শুরু গত ফাল্গুনে । প্রজ্ঞা আর তিশা একসাথে বের হয়েছে। প্রজ্ঞার পরনে কলাপাতা রঙ এর শাড়ী । সারাদিন মল চত্বর, ছবির হাট, বইমেলা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, পলাশীর মোড় আর ধানমন্ডি হয়ে যখন রাতের বেলা ঘুম ঘুম চোখে মেইল চেক করতে বসলো, প্রজ্ঞা পুরাই থ । ‘নীল’ নামে কে যেন তার একগাদা ছবি ফোল্ডার করে পাঠিয়ে দিয়েছে। ছবিগুলো সব আজকের তোলা । কি তিশার সাথে হেসে উঠছে, কি বইমেলায় নতুন কোন বই খুলে দেখছে, ফুচকার ঝালে কেঁদে দিবে এরকম সারাদিনের গোটা চল্লিশখানেক ছবি। লুকিয়ে ছবি তুলার জন্য আবার দুঃখ প্রকাশ করেছে। খুব অপমানবোধ না করলে একটা রিপ্লাই চেয়েছে। এইসব ব্যাপারে প্রজ্ঞা খুব একটা গা করে না, কিন্তু লুকিয়ে ছবি তুললেও ছেলেটার ছবি তোলা আর ম্যাসেজ লেখার ধরনে রুচিবোধের প্রশংসা না করে পারলো না। একটু কড়া একটু নরম করে সেও একটা রিপ্লাই দিয়েই দিলো । সেই থেকেই শুরু, আজকাল যার বসবাস প্রজ্ঞার পুরো কল্পনা জুড়ে ।



(৩)



-পাস্তা রান্না করছি প্রজ্ঞা, চিকেন কম ! কি করি বলো তো ?

-শ্রিম্প আছে? দিয়ে দাও । দেখো স্বাদ বেড়ে যাবে ।

-হাহ হাহ । পরিচিতা, আবার কখনো দেখা হলে আমি আমার স্যুপের সমস্ত চিংড়ি তোমাকে দিয়ে দিবো । প্রমিজ । তাতেই আমার স্যুপের স্বাদ বেড়ে যাবে ।

-তোমার এই হাসির শব্দটা যদি কখনো শুনতে পারতাম । আচ্ছা তোমার হাসির শব্দ কেমন নীল?

-পাস্তাটা রান্না করে ফেলি । আমাকে শুনতে কেন ইচ্ছে হয় তোমার প্রজ্ঞা ?

-তুমি তো ঠিকই শুনেছ আমাকে নীল । বঞ্চনা আমার বেলায়? এক বছর ধরে তো তোমাকে পড়েই যাচ্ছি ।

ওপাশ নীরব । একবার যদি এই মানুষটাকে দেখতে বা শুনতে পেতো প্রজ্ঞা, শত হাসির ভীড়েও তার হাসি আলাদা করতে পারতো ।



-কাল আসছো তো? তোমায় নিয়ে ঘরে ফিরবো বলে ঘর থেকে বের হয়ে যদি তোমায় ছাড়া ঘরে ফিরতে হয়, তাহলে সূর্য অস্ত বলে তো কিছু নেই নীল! আমি যে তোমাকে খুঁজে যাবো !



এইবার মেইল অফ করে প্রবল বাষ্পোচ্ছাস আটকানোর চেষ্টা করে সে । নিজেকে প্রায় লুকিয়ে রাখা একজন মানুষ কিভাবে আধা পরিচিত একজন কে দেখার জন্য এত আকুল হয়ে আছে, তাই বুঝে পায় না প্রজ্ঞা। অপরিচিত কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ এত কাছের মনে হওয়া মানুষটা কি কখনোই বুঝবে না সে যা বুঝাতে পারছে না? এই অভূতপূর্ব আলোড়নের নাম কি?



(৪)

ক্রিং ক্রিং ! নীড়ের ফোন । সাইলেন্ট দিতে গিয়েও কি মনে করে রিসিভ করে ফেলে প্রজ্ঞা ।



-দোস্ত, এই ছুটিতে সাগর দেখতে যাবি ? সাগরে সব দুঃখ মিশিয়ে দিয়ে আসিস তোর দুখী মেয়ে ।

-না

-মন খারাপ নাকি তোর ? গলা এরকম শোনাচ্ছে যে !

-কিছু কথা বলার আছে রে।



হু হু করে কেঁদে ফেলে প্রজ্ঞা । ভাবনায় পড়ে যায় নীড় ।



-দোস্ত, আমি কি তোর বাসার নিচে আসবো ?

-পরে



ফোনের সুইচ অফ, মেইল অফ। কফির মগে চকলেট মিশিয়ে দিয়ে খুব সন্তর্পণে নিঃশ্বাস বের করে দেয় প্রজ্ঞা। কফির ধোঁয়ায় নীলকে আঁকে সে।



হুম, নীড়কেই সে বলবে সব। নীড় কে দেখার পর ই তো তার মনে হয়েছিলো তার, এই বন্ধুটার সাথে সবকিছু বলে ফেলা যায়। এর কাছে আবদার করে কিছু চাইতে লজ্জা লাগে না তার। নীড়ের কাছে প্রজ্ঞা নীল কে খুঁজবে। নীল কেই এবার সারপ্রাইজ দিবে সে।



(৫)



নীড় ভাবছে কাল প্রজ্ঞাকে কথাটা বলেই ফেলবে। এভাবে বেস্ট ফ্রেন্ডের অভিনয় আর কতকাল? এমনিতেই প্রজ্ঞার আনমনা ভাবটা আজকাল যেনো আরও বেড়ে গেছে। সাথে পাগলীটা কার সাথে যেনো কল্পনায় ওড়ে। চোখে হারাই হারাই ভাব।



এটা হবে নীড়ের একুশতম এবং সর্বশেষ অব্যর্থ প্রচেষ্টা। একুশ বছর বয়সে মনের কথা জানানোর মত ভয়ানক সাহসটা কে জয় করা উচিত। তাতে প্রজ্ঞা নামক মধুর বিভীষিকাটা তাকে কাঁচা রান্না করে খেয়ে ফেলতে পারে। কিন্তু এবার সেটা ভাবলে চলবে না। এর আগে সে প্রজ্ঞাকে একবার জিজ্ঞাসা করেছিলো নীড়কে তার কেমন লাগে।



-তুই ট্রাভেল করার জন্য একজন ভালো সঙ্গী। আমাদের ট্যুর গুলার সময় তুই ই তো আমার ব্যাগ গুলো টানিস।



কীসের কী উত্তর? এই মেয়েকে জীবন ভ্রমণে নির্বাচন করলে সবার আগে পাবনা ট্যুর দিতে হবে !



নীড়ের বাবা একজন সাইয়াক্রিস্ট। সাইকোলোজি নিয়ে সে মাঝেই মাঝেই পড়াশুনা করে। তার ধারণা প্রজ্ঞা নামক মেয়েটার খানিকটা মানসিক চিকিৎসা দরকার আছে। আবার তার সাইকোলোজিতে এটাও আসে না এই আধ পাগল মেয়েটার অদ্ভুত ইচ্ছে গুলোর আবদার পূরণের ভারবাহী গাধা সে কেনো সেজেছে। গত শীতের শেষ রাতে মিডটার্ম পরীক্ষার আগে যখন তার কফি খেতে ইচ্ছে করলো, সে হঠাৎ করে আবিষ্কার করে কফিটা প্রজ্ঞার সাথে বসে খেতে পারলে তার সমস্ত টেনশন উধাও হয়ে যেত। প্রজ্ঞার জন্য নীড় কফি বানাতেও রাজি।



(৬)



ছবির হাটে মাথা নিচু করে বসে আছে ক্লান্ত প্রজ্ঞা। পরনে কলাপাতা রঙ এর শাড়ী। বেছে বেছে আবার এই শাড়ীটাই পরেছে সে যাতে নীলের চিনতে ভুল না হয়। কিন্তু নীল নামে সেই অগোছালো ছেলেটার পাত্তা কই? আলো-ঝরা বিকেল শেষ হয়ে আসছে, ফাগুনের এ ক্ষণে নীল নামে কেউ তাকে রাঙিয়ে দিতে আসছে না। আজ আনমনা প্রজ্ঞা ভেতরে ভেতরে কত সতর্ক ছিলো কেউ তাকে ফলো করছে কিনা। নাহ চারপাশে সব অচেনা মানুষ। সবাই দেখছে শহরের রাস্তায় একটা মেয়ে রাধাচূড়া ফুল হাতে একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছে।



হঠাৎ মাথায় গাঁট্টি খেয়ে পেছন ফিরে তাকায় প্রজ্ঞা। নীড় উজবুকটা! পরনে সিল্কের নীল পাজ্ঞাবী।



- একটা প্রোপোজ করবো ভাবছি, হেল্প করবি?



কান্না লুকায় প্রজ্ঞা। নীড়ের স্বরটা আজ অন্যরকম। অনেক কনফিডেন্ট, যার উপর নিশ্চিন্ত-নির্ভর করা যায়।



- করে ফেল । কবে পছন্দ করলি বলিস নাই তো কিছু ।

-যাকে করবো সে যদি নিজের জগতে এভাবে লুকিয়ে থাকে তাহলে কী করি? আর এইরকম দুঃখী দুঃখী মুখ করে রাখলে লুকিয়ে ছবি তুলি কি করে? তার চেয়ে বরং অ্যাঙরি বার্ড হয়ে থাক না ।

-তুই??!!

-তোমায় নিয়ে ঘরে ফিরবো বলে ঘর থেকে বের হয়ে যদি তোমায় ছাড়া ঘরে ফিরতে হয়, তাহলে এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা কি আছে বলো ?



দৌড়ে পালাতে যায় প্রজ্ঞা। আরো জোরে দৌড়ে তাকে ধরে ফেলে নীড়।



-আমি কি এতোটাই খারাপ? না হয় আমাকে নীল বলেই ভাবো না।

-সব খুলে বললেই হতো। এত অপেক্ষা আর মিথ্যা অভিনয়ের কি দরকার ছিলো?

-নীড়কে যে প্রজ্ঞাটা একদম পছন্দ করে না। নীল কে ভেবে মরে।



আরে নীড় তো অনেকটা কল্পনার নীলের মতই। শুধু হাইটটা আরেকটু বেশি আর চুলগুলো অতটা কোঁকড়া নয়। আশ্চর্য! নীলের ভাবনায় এতোটা ডুবেছিলো প্রজ্ঞা যে নীড় টা কে ভালো করে দেখার কথা মনেই হয় নি।



খিলখিল করে হেসে ফেলে প্রজ্ঞা।



‘‘নীড় যে একটা উজবুক। এই গাধা, প্রোপোজ করার সময় যে অন্তত একটা ফুল আনা উচিত জানিস না তুই?’’



মাথা চুলকায় নীড়। তারপর অল্প হেসে হাত ধরে দু’জন এগিয়ে যায় আগুনরাঙা কৃষ্ণচূড়া গাছটার দিকে।



“নেক্সট টাইম কিন্তু আমি সারপ্রাইজ দিবো, ঠিকাসে?’’ ফিসফিসিয়ে বাতাসে স্বর ভাসিয়ে বলে প্রজ্ঞা।





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.