![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
টিং-টিঙ্গে ভাঙা শরীর । দেখে মনে হচ্ছে জন্ডিস রোগী । কোন কথাবার্তা ছাড়াই, বাহারি এক বডি-স্প্রে গায়ে মারার সাথে সাথেই আকাশ হতে পাখা যুক্ত রমণীদের আগমন । মুহূর্তের মধ্যেই সেই ছেলে সবার থেকে আকর্ষণীয় ! এই রকম একটা কিম্ভূত টেলিভিশন কমার্শিয়ালের জন্যে, এক বিদেশী প্রসাধনী কম্পানির বিক্রি প্রায় ১৫% শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল । আবার এক চায়নিজ টেলিভিশন কমার্শিয়ালে একবার দেখেছিলাম, ২ ফোঁটা ওষুধ টাক মাথায়ে লাগাবার কয়েক দিনের মধ্যে মাথাভর্তি চুল ! এখনো বোধহয় অনেকে মানুষ আছেন, যারা সামান্য কয়টা চুলের আশায়ে, ঐ কম্পানির ওষুধ নিয়মিত ব্যাবহার করে চল যাচ্ছেন । এগুলা তো সব বিদেশ, আমাদের বাংলাদেশও কিন্তু পিছিয়ে নেই । '৯০ এর শেষ দিকে ফিলিপ্স বাল্বের একটা বিজ্ঞাপন টিভিতে নিয়মিত দেখানো হতো । এখনো বোধহয় অনেকের মনে আছে । মাছের রাজা ইলিশ এবং বাতির রাজা ফিলিপ্স । আমার আব্বুর কাছে শুনেছিলাম, ঐ সময় ফিলিপ্স বাল্বের এতো চাহিদা হয়েছিল, যে ফ্যাক্টরি বাল্ব সরবারহ করে পারছিল না । একটু খোঁজ নিয়ে জানলাম, ঐ বিজ্ঞাপনটা নাকি জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত হয়েছিল । খুবই ভাল বিষয় । তবে বর্তমানে আমার চোখে একটা বিজ্ঞাপন অনেক বেশি বাঁধে । বিজ্ঞাপনটা একটা রঙ ফর্সা করার ক্রিমের । ভাবটা এমন যেন, গায়ের রঙ ধবধবে চুনের মতো সাদা না হলে চলবে না । নাইট ক্রিম, ডে ক্রিম অনেক রকম ক্রিম তাদের কোম্পানির । ভাবটা এমন যেন, ঐ কোম্পানির ক্রিম না মাখলে জীবন শেষ । কেজি খানেক ক্রিম তো মাখাই লাগবে, নইলে জীবন সার্থক হবে না । বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠান যেন, সবার মাইন্ডে নতুন করে বডি কালার স্ট্যান্ডার্ড সেট করে দিচ্ছে । অমুক রঙ মানে রাণী । তমুক রঙ মানে গোলাম । আরে ভাই শরীরের রঙ তো সৃষ্টিকর্তার দান । তা নিয়েও ব্যাবসা ?
কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি, এই সব বিজ্ঞাপন আমাদের জীবনকে কিভাবে নিয়ন্ত্রন করছে ? অনেক রকম চটকদার বিজ্ঞাপন দেখিয়ে, আমাদের ব্রেনওয়াশ করে পণ্য ক্রয় করতে বাধ্য করছে । যেমন, জিনিষটা আমার দরকার ছিল অথবা অমুক জিনিষটা থাকলে আমার ভাল হতো ।
সবাই মনে করে, বর্তমান যুগের মানুষরা অনেক বেশি স্মার্ট । তাদের সহজে ঠকানো সম্ভব না । এটা যে কতো বড় সমস্যা, তা সহজে আমরা অনুধাবন করতে পারি না এবং করতেও চাই না । শুধুমাত্র ঠকবার পরেই এটা বুঝতে পারি । আসলে আমাদের জীবনধারা অথবা লাইফ-স্টাইল এমন হয়েছে, যে আমরা কেউ ঠকতে রাজি নই । আমরা সবাই জিততে চাই, এবং জেতার জন্য ২৪ ঘণ্টাই দৌড়ের উপর থাকি । সমাজ আমাদের ভাবতে বাধ্য করছে যে, আমরা জিতে যাচ্ছি । এই রকম উদ্ভট চিন্তা-ভাবনার জন্যই মানুষ সবচেয়ে বেশি ধরা খাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরো বেশি ধরা খাবে । ওভার-স্মার্টনেস ভাই, আমাদের সোসাইটি এবং মিডিয়াই আমাদের ওভার-স্মার্ট হতে বাধ্য করছে । আসলে তো স্মার্ট না, সবাই মূর্খতে রূপান্তরিত হচ্ছি ।
©somewhere in net ltd.