নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনে মনে গল্পকার। যখন আমি কোনো কিছুই করি না, তখনো একটা কাজ সব সময় করতে থাকি। মনে মনে গল্প লিখতে থাকি।

অনন্ত আরফাত

অনন্ত আরফাত › বিস্তারিত পোস্টঃ

মণির স্মার্টফোন

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১:৩৫


মণির মোবাইলটা আমার কাছে অন্য সবার থেকে একটু আলাদাই মনে হয়।

আলাদা বলতে তেমন কোন ব্যাতিক্রমী মোবাইল, তা কিন্তু না। অন্য দশটা স্মার্টফোনের মতোই । ফ্রন্ট ক্যামেরা আছে। ভিডিও কল করা যায়। পারলে অন্যদের থেকে একটু নিচেই রাখা যায় মোবাইলটাকে। তেমন দামি কোন ব্র্যান্ডের না। সবাই যেখানে এইচটিচি, স্যামসাং ব্যাবহার করছে, সেখানে ছয় হাজার আটশো টাকা দামের সিম্ফনি সেট তেমন কোনো গুরুত্ব বহন করে না । হ্যা, দাম বরাবর এটাই শুনলাম। ঠিক ছয় হাজার আটশো টাকা । এই টাকায় ততো ভাল সেট পাওয়ার কথা না। এই মোবাইল নিয়ে এত মাতামাতি করার কোন কারণ অবশ্য নাই। কারণ আবার আছেও । কারণটা মোবাইল নিয়ে নয়। মোবাইল কিনার ধরন নিয়ে। অন্য মেয়েরা যেখানে বাবা-ভাইয়ের টাকায় কিনে কিংবা বিদেশ থেকে আত্মীয়স্বজন পাঠায়, সেখানে মণির ব্যাপারটা ও’রকম না । মণি মোবাইলটা কিনেছে চার মাসের বেতনের কিছু কিছু টাকা জমিয়ে । বেতনের ছয় হাজার টাকা থেকে সে প্রতি মাসে দুই হাজার করে জমাতো । গত কোরবানের ঈদের আগের দিন কিনেছে মোবাইলটা। সেক্ষেত্রে গল্পটা আর স্মার্টফোনের থাকে না। মণির হয়ে যায়। কিংবা মণি বা স্মার্টফোন কোনটারই না। হতে পারে আমাদের গল্প। কিংবা আসলে কারোরই গল্প না।দেখা যাক।

মণি, মানে সাবেরা ইসলাম মণির সাথে আমার ফোনে পরিচয়। ঈদের ছুটিতে বাড়ি গেছিলাম। বাড়ি গিয়েই অসুস্থ। ঈদের নামজ পড়তে পারলাম না। সারাদিন শুয়ে থাকি। বিকেলে বাড়ি থেকে পুকুর পাড় পর্যন্ত হাঁটাহাঁটি করি একটু আধটু। দুর্বল শরীর। রাত্রির সাথে খুব ঝগড়া হচ্ছে তখন। সারাক্ষণ মা বা কেউ পাশে থাকে। ফোনে কথা বলতে পারি না। রাত্রি ভাবছে তাকে এভয়েড করছি। বেচারি কাউমাউ করে। আমি চুপ করে থাকি। ঝগড়া করতে ভাল লাগে না। এ রকম এক বিকেলে রাত্রির সাথে কথা বলতে বলতে পুকুরপাড়ে হাঁটছি। হঠাৎ ঝগড়া শুরু হলো। আমি চুপ করে আছি দেখে এক পর্যায়ে রাত্রি ফোন কেটে দিল। আমি কয়েকবার ট্রাই করলাম। ধরল না। আর ফোন না দিয়ে নারিকেল গাছের নিচে বসে আছি। এই সময় অচেনা নাম্বার থেকে একটা ফোন আসলো। রিসিভ করলাম।
ও’পাশ থেকে নারীকণ্ঠ বলল , “আপনার বউ কেমন আছে ?”
আমি কান খাড়া করলাম। ভয়েস ধরার চেষ্টা করলাম। আমার এক খালাত ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড আছে। মাকনুন আপু। অন্য সবাই ডাকে ভাবি। আমি আপু ডাকি। উনিও আমাকে ছোট ভাইয়ের মতন দেখে। এই খাটাশ মাঝে মাঝে আমার সাথে ফোন করে ফাজলামি করে। হঠাৎ অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন করে বলে, “মেয়েদের গলা শুনলে আপনার ভয়েস এত মিষ্টি হয়ে যায় কেন?”
“কি বলছ আপু ?”
“ কে আপনার আপু? মেয়ের ভয়েস শুনলেই আপু বলে পটাতে ইচ্ছে করে। না?”
পুরাই বিভ্রান্তিকর অবস্থা। একটু পরে হা হা করে হেসে উঠেন। ঈদে এখনো কথা হয়নি। আপু না তো? না। আপু না। ভয়েস চেনা যাচ্ছে না।
গম্ভীর গলায় বললাম , “কে?”
উত্তর না দিয়ে বলল , “আপনি এখন কোথায় আছেন?”
মেজাজ আর ঠিক রাখতে পারলাম না।
বললাম, “জাহান্নামে আছি। কোন সমস্যা? কে আপনি?”
থতমত খেয়ে গেলো নারী কণ্ঠ।
“সরি ভাইয়া। আপনি মনে হয় রেগে আছেন। আমি, আ---------মি সরি।”
“কে আপনি ?”
“আমাকে চিনবেন না। আমি মণি।”
“আমাকে চিনেন?”
“জী না। জী না ভাইয়া।”
“তো ফোন করেছেন কেন?”
“এমনে । এমনে করেছিলাম। কেটে দিচ্ছি। রাগ করিয়েন না ভাইয়া।“
“আপনি কি কাউকে ফোন করেছেন?”
“না ভাইয়া। মন খুব খারাপ লাগছিল তো । তাই এমনে একটা নাম্বার তুলে ডায়াল করলাম। আপনি রিসিভ করলেন। আপনার যে রাগ!”
“ সরি। আসলে…“
“ সমস্যা নেই ভাইয়া। অপরিচিত নাম্বার থেকে আমাকে ফোন দিলে আমিও এই কাজটাই করতাম। “
“ হা হা হা হা হা হা।“
“ আপনার সাথে এতক্ষণ কথা বলে মনেই হয়নি যে আপনি হা হা করে হাসতে পারেন। “
“ আমি হাসতে পারি কিংবা পারি না তাতে আপনার কি ? “
“ ও। তা ঠিক ভাইয়া ।“

ওইদিন অনেকক্ষণ মণির সাথে কথা হলো। হাবিজাবি কথা। কি করে। কোথায় থাকে। এইসব। আলফালা গলিতে তাদের একটা ছোট টিনসেড ঘর আছে। মা, মণি আর একটা ছোট একটা পালক বোন থাকে। বড় বোনটার বিয়ে হয়ে গেছে নোয়াখালির এক লোকের সাথে। জামাই কোন এক গার্মেন্টসের ফ্লোর ইনচার্জ। খবিশ টাইপের লোক। মণির মা জমির খাজনা আদায়ের জন্য জামাইয়ের হাতে দলিল দিছিলেন। হারামজাদা দলিল নিয়ে গিয়ে মণির বড় বোন আর মণির নামে রেজিস্ট্রি করে ফেলেছে। পালক বোনটা বাদ। মণির বোনও জামাইয়ের পক্ষ নিছে।
জামাইয়ের কথা, “পালক মেয়ে। পেলে বড় করছ। বিয়ে দিলে কাজ শেষ । জায়গা জমির ভাগ দিতে হবে কেন ?”
মা আর মণি মানছে না। পালক হোক, এই ঘরে বড় হচ্ছে। তারও তো কিছু পাওয়ার অধিকার আছে। এই ব্যপার নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি হচ্ছে। মণির মা ওইদিনও বাসায় ছিলেন না। দলিলের ব্যপারে বড় মেয়ের বাসায় গেছিলেন। মণি ওদের ছোট বোনটার কথা বলছিল বারবার।
“জানেন, আমাদের বোনটা এখনো অনেক ছোট। ক্লাস টু তে পড়ে মাত্র। এইসব কিছু বুঝে না। আমরা যদি ওকে ভাগ না দিই ওর জীবনটার কি হবে? “
“ হুম।“
“ ভাইয়া মারা গেছে বছর খানেক আগে। এখন নিজের কোন ভাই নাই। ভেবেছিলাম দুলাভাইটা ভাইয়ের মতো হবে। হারামজাদা এক নম্বরের খবিশ।“
“ হুম ।”

মণির বাবা মারা গেছিলো ছোটবেলায়। গাড়ি এক্সিডেন্ট করে। মা ক্লিনিকে কাজ নিছিলেন তখন। বড় ভাইটা কিছু করতো না। সারাদিন টোঁ টোঁ করে বেড়াতো। পাড়ার বড় ভাইদের সাথে হাঁটাহাঁটি করতো। পলিটিক্সেও জড়িয়ে পড়েছিল কিছুটা। মিছিল মিটিং করে বেড়াতো। বাসায় আসত রাতে-বিরাতে। বাসার কারো কথা তেমন একটা শুনতো না। হঠাৎ একদিন এসে বললো, বিদেশ চলে যাবে। মণির মা আকাশ থেকে পড়লেন।
“তুই তো নবাবের বাইচ্চা । রাতে বাসায় এসে বললি , বিদেশ চলে যাব। সকালে ফ্লাইট।”
“তুমি টেনশন নিচ্ছো কেন ? “
“ টেনশন না করে কি করব? এত টাকা কোথায় পাব? কয় টাকা বেতন পাই আমি ? “
“ তুমি টেনশন করো না । তোমাকে টাকা দিতে হবে না ?”
“আমাকে দিতে হবে না তো কাকে দিতে হবে। তোর বাপ কবর থেকে উঠে এসে দিবে ? “
“বাবাকেও কবর থেকে উঠে আসতে হবে না। টাকা আমি জোগাড় করে ফেলেছি। বড় ভাইয়েরা দিচ্ছে। বিদেশে গিয়ে কামাই করে মাসে মাসে শোধ করে দিবো।“
“বিদেশ যাবি তুই। ওরা কেন টাকা দিবে ?”
“আমি পার্টির লোক না ?”
“পার্টি করলে বিদেশ পাঠায় নাকি ?”
“সবাইকে পাঠায় না। আমাকে পাঠাচ্ছে।”
“তোকে কেন পাঠাচ্ছে ?”
“এইসব তুমি বুঝবে না মা। বিদেশ যাবো কিনা বল।”
“সুযোগ পাইছোস । যাবি না? এইটা ত আল্লার রহমত । ভাগ্য যদি এবার ফিরে আরকি।”



মণির ভাইয়ের ভিসা এসে গেলো । আজাদ ভিসা । যা ইচ্ছা করতে পারবে । কামলা খাটতে ইচ্ছা করলে কামলা খাটবে । দোকানে চাকরি করতে ইচ্ছা হলে দোকানে চাকরি করবে । তবে দোকানের চেয়ে নাকি কামলা খাটলে রিয়াল বেশি । বড় ভাই বিদেশ চলে যাবে । আত্মীয়স্বজন দাওয়াত দিচ্ছে সবাই । মণিরা পুরো পরিবার দলবেঁধে এদিক ওদিক দাওয়াত খেতে লাগলো। হঠাৎ একদিন সন্ধ্যায় বড় ভাই বাসা থেকে বের হয়ে রাতে আর ফিরলো না । আগে এরকম করত মাঝে মাঝে । কিন্তু কিছুদিন থেকে সবসময় বাসায় থাকে । ভিসা চলে আসার পর আর মিছিল মিটিং এ যান না । মণিরা মনে করল আগের মত কোথাও থেকে গেছে হয়তোবা । পরের দিন মণির ভাইকে পাওয়া গেল বাড়ির সামনের নালায় । জবাই করে দেওয়া হয়েছে । মণিরা পরে জানতে পারল পার্টি কোন্দল । মণির ভাই একজনের থেকে টাকা নিয়ে অন্য একজনকে খুন করেছিল । অন্য গ্রুপ মণির ভাইকে খুন করেছে। এরপর আত্মীয়-স্বজনদের সাথে মণিদের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেলো । পুলিশ আসা যাওয়া করলো অনেকদিন । তারপর পুলিশেরাও আসা যাওয়া বন্ধ করলো। মণিরা পড়লো অকুল সাগরে । এর মাঝে মণির বড় বোনের সাথে একজনের পরিচয় হল । হাসানুল হক । হাসানুল হকের সাথে মণির বড়বোনের বিয়ে হল । তারা এক প্রকার সুখেই আছে বলা যায় । হাসানুল হক মণির বড় বোনকে খুব দেখতে পারে । মণির মতে তার বড় বোন হচ্ছে বিরাট গাধী । হাসানুল হকের সাথে বিয়ে না হয়ে এই গাধির অন্য কোথাও বিয়ে হলে গাধীর খবর ছিল । তবে হাসানুল হকের টাকা পয়সার দিকে লোভ একটু বেশি ।

মণির মা অসুস্থ হয়ে গেলো কিছুদিন পর । হাঁপানির টান বেড়ে গেছে । ইনহেলার নিতে হয় এখন । উপায় না দেখে মণি পাড়ার একটা পার্লারে চাকরি নিলো । আড়াইহাজার টাকা বেতন । মণির মা বাড়ির কিছু অংশ ভাড়া দেন । কিছু অংশ বলতে দুইটা রুম । দুই হাজার করে প্রতি রুম । মণির বেতনের আড়াই হাজার আর বাসা ভাড়ার চার হাজার দিয়ে সংসার চলে । এর মাঝে গ্যাস বিল, কারেন্ট বিল । ছোট বোনটা স্কুলে যায় । বাসায় এসে একজন পড়ায় । তাকে দিতে হয় আটশো টাকা । মণিরা কেউ পড়ালেখা করতে পারেনি । ছোটবেলায় বাবা মারা গেছিল । টানাটানির সংসার । ভাগ্যিস বাড়িটা নিজেদের ছিল । এদিক ওদিক করে চলেছে কোন ভাবে । মণির ইচ্ছা ছোট বোনটা পড়ুক । যতদূর পারে পড়ুক । একসময় পাড়ার পার্লারের চাকরি ছেড়ে দিল মণি । কাজ কিছু শিখেছে । জি.ই.সি. মোড়ের একটা বড় পার্লারে চাকরি পেয়ে গেল এবার । আলভিরাস নাম । পাঁচ-ছয় মাস থেকে মণি আলভিরাসেই আছে । ওখানকার সুবিধা ভাল । সকাল বিকাল দুইবেলা নাস্তা দেয় । লাঞ্চটা শুধু নিজেকে কিনে খেতে হয় । পাঁচটার আগে চলে আসা যায় ।

মণির সাথে মাঝে মাঝেই কথা হয় আজকাল । মাঝে মাঝে নাকি তার খুব খারাপ লাগে । কক্সবাজারের এক ছেলের সাথে প্রেম হয়েছিল তার । ছেলেটার নাম তুহিন । চাচাতো বোনের দেবর । বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে পরিচয় । তারপর প্রেম । ছেলে দোকান করে কক্সবাজারে । মুদির দোকান । দুই পরিবারে জানাজানি হয়েছিল কথাটা । সবাই রাজি ছিল। কিন্তু বিয়েটা হবে হবে করেও হলো না । কারণ তুহিনের পরিবার চেয়েছিল মণি চাকরি ছেড়ে দিক । ওদের ওখানে মেয়েরা তেমন একটা চাকরি বাকরি করে না । মণি চাকরি ছাড়তে চায়নি । তার কথা হল চাকরির টাকা দিয়ে তার মা-বোন চলে । মণি চাকরি ছাড়লে এরা খাবে কি ? তুহিন বলেছিল ও চালাবে । মণি রাজি হয়নি । বিয়েটা ভেঙে গেল । তুহিন অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে । ফোন নাম্বারও চেঞ্জ করে ফেলেছে । কিছুদিন তুহিনের সাথে মণির কোন রকম যোগাযোগ ছিলো না । কিছুদিন আগে একটা নতুন নাম্বার থেকে ফোন করেছিল তুহিন । তুহিনের সাথেও নাকি কথা হয় মাঝেমাঝে । কোন কোনদিন তুহিনের বউ ফোন রিসিভ করে । মণি চুপ করে শুনে কে ধরেছে । বউয়ের গলা শুনলে মণি কেটে দেয় । এছাড়াও হঠাৎ হঠাৎ আননোন নাম্বারে মণি ফোন দিয়ে পরিচিতের মত গলায় কথা বলে । ওইদিন আমাকে যেই রকম করেছিল । আননোন নাম্বারে কথা বলতে বলতে কয়েকজন নাকি মণির প্রেমে পড়ে গেছে । একেবারে হাবুডুবু অবস্থা । মণি ডিসিশন নিয়েছে কারো সাথে আর প্রেম করবে না । সোজা বিয়ে করবে এবার ।

মণির কাজ কারবার আমার অদ্ভুতই লাগে বলা যায় । খুব ভোরে নাকি ঘুম থেকে উঠে । নামাজ পড়ে । বাড়ির রান্নাবান্না করে । তারপর খেয়েদেয়ে পার্লারে চলে যায়। পাঁচটার দিকে ফিরে আসে । সপ্তায় যেকোনো একদিন ওর ছুটি থাকে । ওইদিন বান্ধবীদের সাথে ঘুরতে যায় । মাঝে মাঝে নেভালে গিয়ে ওরা দল বেঁধে ড্রিঙ্ক করে । আমাকে একদিন জিজ্ঞেস করেছিলো ,” আচ্ছা , আপনি ড্রিঙ্ক করেন না? “
আমি বললাম, “না।”
করি না শুনে খুব অবাক হলো।
“ছেলেমানুষ হয়েও ড্রিঙ্ক করেন না ?”
“ছেলেমানুষ হলেই কি ড্রিঙ্ক করতে হবে নাকি ?”
“করে দেইখেন। ভাল লাগবে।”
“হুম।”

মণি মাঝে মাঝে আমাকে তার একটা স্বপ্নের কথা বলে--
“জানেন । পার্লার দিব একটা । সব কাজ শেখা হয়ে গেলেই দিব।”
“ ওটা তো টাকা পয়সার ব্যাপার । টাকা কই পাবেন?”
“ টাকার চিন্তা নাই । ম্যানেজ হয়ে যাবে।“
“ আকাশ থেকে টাকা পড়ে নাকি? “
“ আকাশ থেকে পড়তে হবে কেন ? বাড়িটা বিক্রি করে দিব । “
“ যেটাতে আছেন ? “
“ হা । ওটা তো খুব ছোট জায়গা । আমরা থাকতে পারবো না । তারচেয়ে বিক্রি করে দিলে ভাল একটা এমাউনট পাব । বড়পার ভাগ বড়পাকে দিয়ে বাকিগুলো নিয়ে একটা পার্লার খুলবো আমি । একটা সুন্দর বাসা ভাড়া করে মা আর মিতুকে নিয়ে থাকব । “
“ হুম ।“
“ জানেন । আমার খুব বড় লোক হওয়ার ইচ্ছা। অনেক বড় লোক।”
“ তাই ? “
“ আচ্ছা , আপনার কি মনে হয় আমি একদিন অনেক বড় লোক হতে পারব ? “
“ কি জানি ? হবেন হয়তো ! “
“ ঠাট্টা করছেন ? করেন করেন । দেখেন একদিন আমি ঠিক ই বড় লোক হবো। আমার না খুব দামী দামী মদ খাওয়ার ইচ্ছা ।“
“ হা হা হা হা হা হা হা হা । “
“ সত্যি বলছি কিন্তু ।“
“ আচ্ছা খাইয়েন খাইয়েন ।“
“ হুম । খাবই তো ।“
এই মেয়ের কাজ কারবার অদ্ভুত না বলে আমি কার কাজ কারবার অদ্ভুত বলব?

মণির স্মার্টফোনের কথা বলছিলাম আমরা । পাঠক, কোথা থেকে কোথায় নিয়ে গেলাম আপনাদের। এত কথা বললাম আমরা । আসল কথাটাই বলা হলো না । ওর সিম্ফনি সেটটা গতরাতে পার্লার থেকে ফেরার পথে ছিনতাইকারীরা নিয়ে ফেলেছে। তিন বান্ধবী হেঁটে হেঁটে বাসায় আসছিল । মণি ফোনে কথা বলে বলে হাঁটছিল । কেউ একজন ছোঁ মেরে মোবাইলটা নিয়ে পালাইছে । আজকে পাঁচশ টাকা দিয়ে আরেকটা সেট কিনেছে মণি । নকিয়া ১২০৮ ।
আমি বললাম , “ আপনার সখের স্মার্টফোনটা তাহলে গেল ? “
“ আরে দূর । নিয়ে ফেলব আরেকটা । চোর মোবাইল নিছে । ভাগ্য তো আর নিতে পারবে না । “
“ হুম । আবার চার মাস টাকা জমাতে হবে আরকি । “
“ চার মাস লাগবেনা এবার । বেতন বাড়ছে তো এই মাস থেকে । এখন আট হাজার টাকা বেতন । “
মণির গলায় আনন্দের সুর । আমি “হু” বলে ফোনটা রাখলাম ।
পাঠক, মণি নতুন স্মার্টফোন কিনলে আমি ঠিক ঠিক আপনাদের জানিয়ে দেবো। পার্লার দেওয়ার কথাও জানবেন নিশ্চয় । অবশ্য এই খবরটার জন্য আপনাদের একটু অপেক্ষা করতে হতে পারে কিছুদিন । তবে খবর যে পাবেন এটা কনফার্ম ।

মণির পার্লারে আপনাদের আগাম স্বাগতম।

২৩ অক্টোবর, '১৫। কার্তিকের বিকেল।
খুলশি, চট্টগ্রাম।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১:৫০

আনমোনা বলেছেন: মনিকে নিয়ে অনেক বক বক করলেন। আসলে গল্পটা মনির স্বপ্নের। ভালো লাগলো।

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ২:০৯

অনন্ত আরফাত বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয়।

২| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৯:১৭

রাজীব নুর বলেছেন: একটা মোবাইল নিয়ে নানান ঘুরপাক খেতে হলো।
মনির ভাই ভিসা হয়েছে আজাদি ভিসা। আজাদি নামে আসলেই কোনো ভিসা আছে?

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১২:০৭

অনন্ত আরফাত বলেছেন: ভাই, মিডল ইস্টে ফ্রি ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার ভিসাগুলাকে বলা হয় আজাদ ভিসা। এই ভিসা নিয়া যার যেই রকম ইচ্ছা ওই রকম কাজ করতে পারে।

৩| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১২:১৮

ভুয়া মফিজ বলেছেন: ভিন্নধর্মী দারুন একটা গল্প পড়লাম। খুব ভালো হয়েছে। :)

একটা ব্যাপার....যে কিছুদিন আগে একটা খুন করেছে, সে ভিসা হয়ে যাওয়ার পর একদিনও দেশে থাকবে না। সেটাই স্বাভাবিক, নয়কি? যাইহোক, আপনার কাছ থেকে আরো গল্প আশা করছি।

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৩:০৯

অনন্ত আরফাত বলেছেন: প্রিয়, অবশ্যই ভিসা পাওয়ার পর পর চলে যাওয়ার কথা। তবে, তারও তো একটা সময় লাগবে। ওই সময়ের মধ্যেই তাকে খুন করা হয়। ভালোবাসা জানবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.