নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনে মনে গল্পকার। যখন আমি কোনো কিছুই করি না, তখনো একটা কাজ সব সময় করতে থাকি। মনে মনে গল্প লিখতে থাকি।

অনন্ত আরফাত

অনন্ত আরফাত › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাধু ভাইঃ উফ কিংবা উফ!

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৯:২০


সাধু ভাইয়ের সাথে পরিচয়ের এক্স্যাক্ট দিনক্ষণ খুব একটা মনে নাই।

কখন কখন যেন ফ্রেন্ড হইয়া গেলাম ফেইসবুকে। মাঝে মাঝে কথাবার্তা হতো। হাই-হ্যালো টাইপ। আর লেখালেখি নিয়া। উনার গল্প লেখার ঢং নিয়া আমরা কথা বলতাম। বলতাম, “আপনি ভালো লিখেন।”
শুনে সাধু ভাই হাসতো। হাসতে হাসতে বলতো, “লেখকই হইতে চাইছিলাম জীবনে। অথচ হইয়া গেলাম ডিরেক্টর। নাটক বানাই।”
“আপনি নাটক বানাইলেও আপনি তো আসলে লেখকই হইছেন।”
আবার হাসতেন, আর বলতেন, “হ। ওইটাই আমার কাজ আসলে।”
এই রকম টুকটাক কথাবার্তা চলতো। বেশি কাছাকাছি আসলাম গত বইমেলা থিকা। এর প্রধান কারন হিমু ভাই। হিমু ভাইয়ের সাথে সাধু ভাইয়ের আগে থেকেই দহরম মহরম ছিলো। গত বইমেলায় সেই সুবাধে আমরা তিনজন মাঝে মাঝে মেলা থেকে বাইর হইয়া টিএসসিতে আইসা বসতাম। বেশ কিছুক্ষণ আড্ডাবাজি চলতো। চা-বিড়ি চলতো। তারপর হিমু ভাই চলে যাইত হলে, সাধু ভাই খিলগাঁও আর আমি ঢাকার বাইরে, মিরপুর। এই রকম বেশকিছু আড্ডাবাজির পর সাধু ভাইয়ের সাথে আরো বেশি ক্লোজ হইয়া যাই।

মেলার পরও সাধু ভাইয়ের সাথে কথাবার্তা কন্টিনিউ হইতে থাকে। আমরা শুধু গল্প নিয়াই কথাবার্তা বলি। কারণ গল্প ছাড়া আমি তো আর কোনো কিছুই নিয়া আলাপ করতে পারি না। আলাপে আলাপে একদিন জানাইলেন, “আপনিও তো লিখেন ভালো। আপনার গল্পগুলা নিয়া নাটক বানানো যায়।”
আমি বললাম, “আমার গল্প নিয়া কে আবার নাটক বানাবে?”
“আমিই বানামু। আপনি স্ক্রিপ্টিং করেন। কোনো একদিন কাজ শুরু কইরা দিমু।”
“আমি তো ভাই স্ক্রিপ্টিং এর আগামাথা কিছুই জানি না।”
“আরে ধুর। জানেন না তো কি হইছে। শিখা লন। লাগলে আমি হেল্প করুম। আমরা কি জন্মের আগে থিকা স্ক্রিপ্টিং কইরা আসছি নাকি?”
আমি হা হা কইরা হাইসা উঠি। এইসব নিয়া আমাদের আর কথা হয়ে উঠে না। উনি প্রায় সময় ব্যস্ত থাকেন। এখানে ওখানে শুটিং চলে। মাঝে মাঝে চ্যাটে কথা হয়। ভালো-মন্দ কেমন আছেন এইসব।

এর ফাঁকে আমি আর হিমু ভাই সিদ্ধান্ত নিই উনার এইবারের বইটা আমরা করমু। হিমু ভাই প্রস্তাবটা উনার কাছে দেন। উনি এদিক ওদিক না কইরা সোজা রাজি হইয়া যান বই দেওয়ার ব্যপারে। আমি রাকিব ভাইকে জানাই যে, সাধু ভাই বই দেওয়ার ব্যপারে রাজি হইছেন। শুইনা রাকিব ভাইও খুশি হন। বললেন, “সাধু ভাই বই দিলে তো খুবই ভালো। একটা ভালো গল্পের বই আমাদের প্রকাশনী থেকে বাইর হইল!”
আমি সাধু ভাইয়ের সাথে বই নিয়া আলাপ-আলোচনা চালাইতে থাকি। আমি, হিমু ভাই আর সাধু ভাই মিলা মিটিং সেট করি বিস্তারিত আলাপ আলোচনা করার জন্য। মিটিং এর দিন প্রচন্ড বৃষ্টিতে ঢাকা শহর ভাইসা গেল। আমরা কেউ বাসা থেইকা বাইর হতে পারলাম না। সাধু ভাইকে ফোন দিলাম, “ভাই, বৃষ্টিতে সব তো ভাইসা গেল? এখন কি করবেন? বাইর হবেন?”
“আরে না ভাউ। এই বৃষ্টিতে বাইর হওন যাইব না। আমরা মিটিং আরেকদিন করুমনে।”
আমি বললাম, “আইচ্ছা।”

এরপর সাধু ভাই আবার ব্যস্ত হইয়া যান। আমরা মিটিং করার সময় করতে পারি না। আরেকবার শুক্রবারে উনি ফ্রি হন। আমরা আবার মিটিং সেট করি। মিটিং সেট করি দৃকে। দৃক গ্যালারিতে ওইদিন একটা উম্মাদের ট্রিবিউট আছে। বিশ্ববিখ্যাত ফান ম্যগাজিন ‘ম্যাড’ বন্ধ হইয়া গেল এই বছর। ম্যাড থেকেই অনুপ্রাণিত হইয়া উম্মাদের পথচলা। সেই ম্যাড বন্ধ হইয়া গেল। উম্মাদ তাদের জন্য তিনদিনের ট্রিবিউটের আয়োজন করলো। আমরা সেট করলাম উম্মাদের প্রদর্শনীতেও ঘুরব আর এক ফাঁকে মিটিংটা করে ফেলব। কথামত আমরা সবাই দুপুরের পরে উম্মাদের প্রদর্শনীতে পৌছায়া যাই। সাধু ভাইরে ফোন দিই। ফোন ধরে না। সন্ধ্যা হওয়ার পরও ফোন ধরেন না। ভাবলাম কোন সমস্যা তমস্যা হইছে কিনা। রাতে সাধু ভাই ফোন দিলেন। বললেন, “শরীরটা হঠাৎ খুব খারাপ করছিলো। ঘুমায়া গেছিলাম।”
বললাম, “সমস্যা নাই। আগে সুস্থ হোন। পরে কথা বলমুনে।”
বলল। “আইচ্ছা।”

এরপর কয়দিন পরে আবার ফোন দিই সাধু ভাইরে। জানালেন, “শরীরটা খুব একটা ভালো না। এদিকে আবার খুব ব্যস্ততাও যাচ্ছে। ভাই-ভ্রাদারের নাটক নিয়া প্রচারণা চালাইতে হচ্ছে। একজনের প্রচারণা চালাইলে সবার প্রচারণা চালাইতে হয়। তারাও আমার নাটকের প্রচারণা চালায়।”
বললাম, “সমস্যা নাই। আগে ফ্রি হোন। তারপর একদিন বসমুনে।”
সাধু ভাই বললেন, “ভাই, আবার কখন বসতে পারুম বুঝতে পারছি না। এত ফরমাল আলাপ টালাপের দরকার নাই। চলেন, আমরা কাজ শুরু কইরা দিই।”
আমি বললাম, “আমার তো কোনো সমস্যা নাই, ভাই। আপনি পাণ্ডুলিপি দিলেই আমি কাজ শুরু কইরা দিমু।”
বললেন, “একটা ব্যপার। আপনারা তো চ্যারিটি প্রকাশনী চালান। টাকা-পয়সা সব অস্বচ্ছল মানুষদের জন্য খরচ করেন।”
আমি বললাম। “হা।”
“আপনাদের সাথে নিজেকে যুক্ত করতে পারলে খুবই ভালো লাগবে। তবে আমাকে পরিশ্রম একটু বেশি করতে হবে। এই আরকি! লেখালেখি দিয়া তো আমি কিছু টাকা-পয়সা আয় করি। আগে ব্রাত্য রাইসুর ওখানে লিখতাম। উনি কিছু টাকা পয়সা দিতেন। ‘ননাই’ বইটা বৈভব থেকে বাইর হইল। আপনারা যেহেতু চ্যারিটি করেন, আমিও তো তাইলে আর টাকা-পয়সা নিতে পারুম না। তাইলে আপনাদের একটা দিতে হইব ফ্রিতে। আরেকটা বই নিয়া কোনো এক প্রকাশনীর লগে কথা বলতে হইব। যেইখান থেইকা রয়েলিটি পামু।”

আমি বললাম, “সাধু ভাই, আপনার একটা ভুল ভাঙায়া দিই। আমরা প্রকাশনী দিয়া চ্যারিটি করি ঠিক আছে। কিন্তু, আমরা কোনো লেখককে রয়েলিটি না দিয়া থাকি না। বরং প্রতিটা লেখক যেন ঠিক মতন রয়েলিটি পায়, ঠিক মতন সম্মান ও সম্মাননা পায়, এইজন্য আমাদের পথচলা।”
“কি কন! আমারে আগে কইবেন না? আমি আরো আরেকটা বইয়ের জন্য প্রকাশনী খুঁজছি। যারা ঠিকঠাক রয়েলিটি দিবে। তাইলে বই আর কাউরে দিবো না। যাই লিখি, আপনারেই দিমু। আপনি করবেন।”
বললাম, “ এইটা হলে তো খুবই ভালো হয় ভাই।”
তারপর সাধু ভাই বললেন, “ আমি অল্প কয়দিনের মধ্যেই পাণ্ডুলিপি গোছায়া দিচ্ছি। তারপর কাজ শুরু করেন।”
“আচ্ছা। ভাই একটা কাজ করলে কেমন হয়?”
“কি কাজ?”
“আপনি বইয়ের নামটা দিয়া দেন। আমি কাভারটা বানায়া ফেলি।”
“এইটা ভালো বলছেন। আমি কালকের মধ্যেই নাম দিয়া দিমু। আপনি কাজ শুরু কইরা দেন।”
“আইচ্ছা।”

পরের দিন সাধু ভাই আবার ফোন দিলেন। বললেন, “নাম ঠিক করতে পারছি না। ‘নারী বাদ’, নারী আবাদি’, ‘এ কি করলেন নায়িকা’ এই রকম কিছু একটা ভাবছি।”
আমি বললাম, “আইচ্ছা।”
“এক কাজ করেন। আমাকে আর কয়টা দিন সময় দেন। আমি নাম ঠিক কইরা দিই।”
আমি বললাম, “সমস্যা নাই। আস্তে ধীরে দেন।”
কয়দিন পরে আবার কথা বললাম। সাধু ভাই কয়টা গল্পের নাম দিলেন। ‘লিপিস্টিক’, ‘মরিচ’, ‘নর্তকী’, ‘সোনামুখী’, ‘উলঙ্গ’, ‘অর্গাজম’, ‘পাছাটা চল্লিশ’, ‘আরশ’, ‘ফেরশতা’ ইত্যাদি।
বললেন, “এইখান থেকে যে কোনো একটা গল্পের নামে বই হবে।”
আমি বললাম, “গতবারেরটা ছিলো ‘ননাই’। এইবারেরটা ‘নর্তকী’ রাখবেন নাকি?”
সাধু ভাই বললেন, “বুঝতে পারছি না।”
আমি বললাম, “আরেকটা কাজ করা যায়।”
“কি কাজ?”
“বইয়ের নাম রাখতে পারেন, ‘নর্তকী, লিপিস্টিক ও অন্যান্য গল্প’।”
সাধু ভাই বললেন, “ও, এবং, এইসব সর্বনাম আমার পছন্দ না।”
আমি বললাম, “আইচ্ছা। আপনি নাম ঠিক করেন। আর যেই নামটা ঠিক করবেন, ওই গল্প নিয়া আমাকে ছোট একটা ড্রাফট দিবেন। আমি যাতে ডিজাইনারকে বুঝায়া দিতে পারি।”
“আইচ্ছা। ঠিক আছে।”



এরপর সাধু ভাই আবার কয়দিন হাওয়া হইয়া গেলেন। একদিন ফোন দিয়া বললেন, “বইয়ের নাম ঠিক করছি ‘উফ!’।”
আমি বললাম, “ উফের সাথে কি আশ্চর্যবোধক চিহ্নও থাকবে?”
বললেন, “হ।”
আমি বললাম, “যাক, ঠিক করতে পারলেন অবশেষে।”
সাধু ভাই হাসলেন। বললেন, “হ। ঠিক করলাম। বহুত প্যারা গেছে।”
আবার জিজ্ঞেস করলেন, “আপনারা কাভার কারে দিয়া করান?”
আমি বললাম, “আমরা তো কাব্য ভাইরে দিয়া কাজ করাই। আপনার কি কোনো পছন্দের ডিজাইনার আছে নাকি?”
বললেন, “হা আছে তো। সাজিয়া সন্ধ্যা নামে একজন আছে। খুব ভালো আর্টিস্ট। তবে সে কাভার করে না। আপনি বইলা দেখতে পারেন। দেখেন করে কিনা!”
আমি বললাম, “ আইচ্ছা। ফোন নাম্বার দেন। আর আপনি একটু বইলা দেন।”
সাধু ভাই নাম্বার দিলেন।

কিছুক্ষণ পর সাজিয়াকে ফোন দিলাম আমি। সাধু ভাইয়ের থ্রুতে পরিচয় দিয়া কথা শুরু করলাম। সাজিয়া বললেন, “সাধু ভাইয়ের সাথে কথা হইছে। আমি তো কাভার টাভার করি না। তবে সাধু ভাইয়ের বইয়ের কাভার অবশ্যই করবো। তবে একটা সমস্যা। আমি কয়দিন ঢাকার বাইরে যাবো। ফিরবো পনের তারিখ। পনের তারিখের আগে কাজ ধরতে পারব না।”
আমি বললাম, “সমস্যা নাই। আপনি ঘুরে আসুন তারপর না হয় কাভারটা করেন।”
সাজিয়া বললেন, “ঠিক আছে। আপনি আমাকে গল্পের ধরণ-ধারণ নিয়া একটা মেইল পাঠায়া রাখেন। আমি ফিরে এসে দ্রুত কাজ করে দেবো।”
আমি মেইল পাঠায়া দিলাম।

এর মধ্যে উনত্রিশ তারিখ সাধু ভাই স্ট্রোক করলেন। চট্টগ্রামের পার্কভিউ হাসপাতালে তাকে ভর্তি করানো হইছে। কারো কাছে কোন খবর পাই না। বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর সংগ্রহ করার চেষ্টা করি। কোনো ভাবেই খবর পাই না। ফেইসবুক আর পত্রিকায় যেই খবর আসে, মনোযোগ দিয়া দেখি। সাধু ভাই রিকভার করতেছে ধীরে ধীরে। এর মধ্যে একদিন সন্ধ্যায় অফিসে বসে আছি। এই সময় একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে। ফোন রিসিভ করি। ওপাশ থেকে অপরিচিত গলায় এক ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন, “আরফাত বলছেন?”
আমি বললাম, “জ্বি।”
“আমি হুমায়ুন সাধুর ভাইগ্না বলছি।”
“জ্বি, জ্বি। সাধু ভাই এখন কেমন আছেন?”
“মামা আগের চাইতে ভালো মোটামুটি। তবে কথা বলতে পারছেন না এখনও।”
“ও। হাঁটাচলা করতে পারছেন?”
বললেন, “না। রিকভার করতে আরো সময় লাগবে।”
“হুম।”
“মামা তো কথা বলতে পারছেন না। তবে, মোবাইলটা হাতে নিয়া কন্টাক্ট থেকে আপনার নামটা বাইর কইরা দিছেন। আর ইশারায় বুঝাচ্ছেন কথা বলতে। আর আস্তে আস্তে বুঝাচ্ছেন, বই। সম্ভবত কোনো বই টই নিয়া আপনার সাথে কথাবার্তা আছে। একটু অস্থির হয়ে আছেন। আমরা তো কিছুই বুঝতে পারছি না। তাই আপনাকে ফোন দিলাম।”
আমি একটু হতভম্ব হইয়া গেলাম। যেই মানুষটা স্ট্রোক কইরা জীবন মৃত্যুর সাথে লড়াই করছেন, তিনি ভাবছেন বই নিয়া। আবার আমাকে ফোনও দিতে বলছেন। কাজের প্রতি কি পরিমাণ দায়বদ্ধ একজন লোক! বললাম, “হা। আমরা একটা চ্যারিটি প্রকাশনী চালাই। সাধু ভাইয়ের এইবারের বইটা আমাদের প্রকাশনী থেকে বাইর করছি। সম্ভবত এইসব নিয়ে কোনো কথা বলরতে চাইছেন।”
সাধু ভাইয়ের ভাইগ্না বললেন, “হয়তো।”
আমি বললাম, “উনাকে বুঝায়া বলেন আমার সাথে কথা হইছে। আর বলেন, বই নিয়া কোন টেনশন করার দরকার নাই। উনি আগে সুস্থ হয়ে উঠুক। সুস্থ হয়ে উঠলে অনেক বই বাইর করা যাবে।”
সাধু ভাইয়ের ভাইগ্না বললেন, “আচ্ছা। আর মামার ব্যপারে কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে ফোন দিবেন। আমার নাম্বারটা সেইভ করে রাখেন।”
আমি বললাম, “ঠিক আছে।”
এর পর প্রায় সময় আমি সাধু ভাইয়ের ভাইগ্নার নাম্বারে ফোন দিই। উনি হয়তো ব্যস্ত থাকেন। ফোন ধরতে পারেন না। তবুও, মন মানে না। আবার ফোন দিই।

এরপর একটু সুস্থ হলে সাধু ভাইয়ের সাথে আবার কথা হয়। জিজ্ঞেস করলাম, “এখন কেমন আছেন?”
শুনে কান্না করলেন কিছুক্ষণ। তারপর বললেন, “সুস্থ হয়ে যাচ্ছি ভাই। দোয়া করেন।”
“দোয়া তো সব সময় আছে ভাই।”
“পান্ডুলিপি তো এখনও গোছাইতে পারলাম না।”
“এইসব নিয়া আপনি ভাবা বন্ধ করেন তো। আগে আপনি সুস্থ হয়ে উঠেন।”
বললেন, “হ। সাজিয়া কি কাভারটা শেষ করছে?”
আমি বললাম, “না। উনি ঢাকার বাইরে আছেন। এখনও কাজ ধরতে পারেন নাই।”
“ও। আপনারা কাভারটা রেডি করেন। আমার দেশের বাইরে যেতে হবে অপারেশনের জন্য। এর আগে পাণ্ডুলিপি দিয়ে যাবো।”
“আমি সাজিয়ার সাথে কথা বলে কাভারটা যত দ্রুত সম্ভব করায়া নিবো। আর পাণ্ডুলিপি নিয়া আপনি ভাববেন না। পারলে দিবেন। না পারলে বাইরে থিকা আইসা দিবেন।”
“আইচ্ছা। দেখি।”

এর মধ্যে সাজিয়ার সাথে আবার যোগাযোগ করলাম। সাজিয়া জানাইলেন, মাত্র ঢাকায় ফিরছেন। কাভারে হাত দিবেন। বললাম, “দেখেন, একটু তাড়াতাড়ি করা যায় কিনা।” এর মধ্যে সাধু ভাই আবার স্ট্রোক কইরা বসলেন বিশ তারিখে। অথচ, বাইশ তারিখে উনার চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়ার কথা। উনাকে স্কয়ায় হাসপাতালের আইসিউতে ভর্তি করা হলো। এর ওর কাছ থেকে খবর পাই। অবস্থা অপরিবর্তিত! এই লোকটার জন্য কত মানুষ প্রার্থনা করছেন। সেইসব প্রার্থনায় কিছুতেই কিছু হলো না। উনি কাল মাঝরাইতে আমাদের অনেকজনের অপেক্ষা উপেক্ষা করে চইলা গেলেন। আমি যখন খবরটা শুনলাম, তখন বইসা বইসা কি একটা যেন লিখছিলাম। হঠাৎ উনার খবর শুইনা আমার হাত-পা অবশ হইয়া আসলো। বুকের ভিতর কেমন মোচড় দিয়া উঠলো। শুধু কোনো রকম রুমে গিয়া সৈকতকে বললাম, “বন্ধু, সাধু ভাই আর নাইরে...”

আজ জুমার নামজের পরে যখন উনার লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্স রহিম মেটাল জামে মসজিদের উঠানে আইসা দাঁড়াইল, তখন আমিও লাইন ধইরা অন্য সবার মতন উনার লাশের পাশে গিয়া দাঁড়াইলাম। উনার সামনে গিয়া মনে মনে জিজ্ঞেস করলাম, “সাধু ভাই, ‘উফ!’ হাতে না নিয়াই চইলা গেলেন?”
সাধু ভাই কোন উত্তর করলেন না। বরাবরের মতন হা কইরা যে একটা হাসি দেন, সেইটাও দিলেন না। শুধু চোখ বন্ধ কইরা কাঁচের ওইপাশে শুইয়া থাকলেন!
আমি আবার ডাকলাম, “সাধু ভাই...”

২৫ অক্টোবর, '১৯। কার্তিকের সন্ধ্যা।
মিরপুর, ঢাকা।


মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৯:২৫

ডার্ক ম্যান বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ এই পোস্টের জন্য । উনার সাথে কাজ করার ইচ্ছে ছিল আর হল না।

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৯:৪৭

অনন্ত আরফাত বলেছেন: হা। সাধু ভাই একটা আক্ষেপের নাম হইয়া থাকলো!

২| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: প্রতিটা মৃত্যু আমাকে কষ্ট দেয়।

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:২১

অনন্ত আরফাত বলেছেন: হা ভাই। সব মৃত্যুই বেদনার।

৩| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১২:৪২

বলেছেন: বেদনাদায়ক!!! উফফ

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১:০৬

অনন্ত আরফাত বলেছেন: হা ভাই। খুব বেদনাদায়ক।

৪| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১২:৫১

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সাধু অল্প বয়সে বিদায় নিলেন। উনি প্রেরণা হয়ে থাক লেন অনেকের। উনি ভালো থাকুক না ফেরার দেশে।

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১:০৭

অনন্ত আরফাত বলেছেন: পরম করুণাময় উনার মঙ্গল করুক।

৫| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১:০৩

কিরমানী লিটন বলেছেন: সাধু ভাই বেঁচে থাকবেন- আমাদের বিশুদ্ধ প্রেরণায়। বিনম্র শ্রদ্ধা, তাঁর বিদেহী আত্নার মাগফেরাত কামনা করছি....

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১:০৭

অনন্ত আরফাত বলেছেন: হা ভাই।

৬| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১:১৬

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: সৃষ্টিশীল একজন গুণী মানুষকে শ্রদ্ধাভরে স্মরন করেছেন। আপনার প্রতিও শ্রদ্ধা জাগছে।

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১:৩৭

অনন্ত আরফাত বলেছেন: ধন্যবাদ জানবেন আপু।

৭| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১:৩৯

সারিয়া তাসনিম বলেছেন: পরপারে ভালো থাকুক, সাধু ভাই !

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৪:১৭

অনন্ত আরফাত বলেছেন: হা আপু। পরম করুণাময় উনার মঙ্গল করুন।

৮| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ২:২৭

নীল আকাশ বলেছেন: ঊনাকে নিয়ে এত কিছু জানতাম না। পড়ার পর অনেক কিছু জানলাম। ধন্যবাদ।

৯| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৪:২৪

নীল আকাশ বলেছেন: ভাই আমি আপু না। ঠিক কি কারনে আপনার আমাকে আপু মনে হলো বলুন তো???

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৬

অনন্ত আরফাত বলেছেন: দুঃখিত ভাই। আগের কমেন্টে একজন আপুকে রিপ্লাই দিছিলাম তো। তাই ভুলে এখানেও আপু হয়ে গেছিলো। ঠিক করলাম। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.