নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনে মনে গল্পকার। যখন আমি কোনো কিছুই করি না, তখনো একটা কাজ সব সময় করতে থাকি। মনে মনে গল্প লিখতে থাকি।

অনন্ত আরফাত

অনন্ত আরফাত › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহুয়া মলুয়ার দেশে (প্রথম পর্ব)

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৯



শনিবার সকাল সাতটায় আমরা চারজন উঠে পড়লাম বিজয় এক্সপ্রেসে।

আমি, নাফিজ ভাই, শাহিন আর কাতুকুতু জোবায়ের। এর আগে কয়টা সেলফিবাজি হয়ে গেলো। পানি-টানি কেনা হলো। নাফিজ ভাই কতক্ষণ ফেরিওয়ালাগুলার সাথে মজা-টজাও করলেন। সাতটা বিশে ট্রেন ছেড়ে দিলো ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে। ট্রেনে কোন এসি নাই। আমরা নিছি শোভন চেয়ার। আমার চেয়ারটার আবার হয়েছে মরার দশা। সিট ভাঙা যায় না। যতক্ষণ হেলান দিয়ে থাকি ততক্ষণ সিট ভেঙে থাকে। আমি পিঠ তুললেই সিট লাফ দিয়ে সোজা হয়ে যায়।

বগির সুপারভাইজারকে ডেকে বললাম, “ভাই, আপনাদের ট্রেনের এই অবস্থা কেন?”
বেচারা হাসতে হাসতে বললেন, “বিজয় ট্রেইনে এই রকম অনেক সমস্যা আছে ভাই। এইডা হইল সেমি লোকাল ট্রেইন। আপনার ভাগ্য তাও ভালো। ভাঙছে না। অনেকের সিট পিছন দিকে শুইয়া পড়ে। হা হা হা হা হা হা হা…”
এর মধ্যে শাহীন এসে বললো, “ভাই আপনাদের ওয়াশরুমে পানি নাই কেন?”
সুপারভাইজার বললো, “পানি না থাকারই কথা। সকাল বেলা এসে পৌছাইছি। সাতটা বিশে আবার রওয়ানা দিছি। এইটুক সময়ের মধ্যে ওয়াশরুমে পানি ভরা যায় না। তারপরও দেখেন। কোন টয়লেটে পানি আছে কিনা। কোথাও থাকতেও পারে।”

শাহিন বেচারা কোন টয়লেটে পানি আছে সেটা বাইর করার জন্য চলে গেলো। নাফিজ ভাই কানে হেডফোন দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন কাঁত হয়ে। আমি ব্যাগ থেকে একটা বই বাইর করে পড়তে শুরু করলাম।

ব্রাজিলিয়ান লেখক পাওলো কোয়েলহোর বই ‘দ্য জাহির’। অনুবাদ করেছেন প্রিন্স আশরাফ। কিছুদিন থেকে পাওলো কোয়েলহো ভালো লাগছে খুব। লোকটার কথাবার্তাগুলা কেমন যেনো ঘোরগ্রস্থ। গল্প বলার ভঙ্গিটাও সুন্দর। আর প্রিন্স আশরাফ অনুবাদক হিসাবে মোটামুটি চলে। আজকাল অবশ্য যেই হারে অনুবাদক বাড়ছে, অনুবাদ পড়াটাই ছেড়ে দিতে হবে বলে মনে হয়। দুইপাতা না-পড়া ছেলেমেয়েও আজকাল অনুবাদক। একজনকে দেখলাম গোগল দিয়ে অনুবাদ করে শব্দগুলো সাজায়া দিতে। আরেকটা ছোটভাই একদিন এসে বললো, “ভাই আপনার কাছে কি ‘ডিসেপশান পয়েন্ট’ হার্ডকপি আছে?”

আমি বললাম, “ডিসেপশান পয়েন্ট আমি ব্যাটা পড়িই নাই।”
“কি বলেন ভাই? আপনি এখনো ডিসেপশান পয়েন্ট পড়েন নাই?”
“না ব্যাটা।”
ডিসেপশান পয়েন্ট আমার এখনো পড়া হয় নাই দেখে ছোটভাই দেখি অসম্ভব হতাশ। ভাবখানা এই রকম যেন, আমি ডিসেপশান পয়েন্ট না পড়ে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করে ফেলেছি।

আমার অপরাধ খন্ডানোর জন্য ছোটভাইকে আবার জিজ্ঞেস করলাম, “তা তোর হার্ডকপি কেন দরকার? তোরা তো আজকাল সফট কপিই পড়িছ।”

ছোটভাই বললো, “সফট কপি একটা আছে ভাই। হার্ডকপি দরকার অনুবাদের জন্য।”
“কি করবি?”
“এই বইটা অনুবাদ করবো ভাই। আমাদের গ্রুপের এক বড় ভাই আছে। উনি আর আমি করবো অনুবাদ।”

এই জিনিসটা শুরু হইছে আরেক যন্ত্রণার। পঞ্চাশ জন মিলে গল্প, বিশ জন মিলে একটা কবিতা। একজন লিখে কবিতার একটা লাইন, তারপর আরেকজন লিখে আরেকটা লাইন। এইভাবে। জঘন্যের মত এইসব কর্মকান্ড। এই হারামজাদাদের নাই নিজের পড়াশুনা, নাই নিজের লেখালেখি। আরো নাম দেয় ‘যৌথ সাহিত্য’। দুইজন মিলে অনুবাদ তাও মোটামুটি খাওয়া যায়। কিন্তু এরা বুঝে না, এক একজনের বোধ এক এক রকম। এক একজনের চিন্তার জায়গাটা এক এক রকম।

ছোট ভাইকে বললাম, “এতো তাড়াতাড়ি অনুবাদে হাত দিচ্ছস। মুল ইংরেজি পড়ছস আর?”
“না। পড়ি নাই ভাইয়া। এটাই প্রথম ইংরেজি বই পড়লাম। আর সমস্যা কি? ডিকশনারী তো আছেই।”
আমি বললাম, “হুম। রাখে আল্লাহ মারে কে?”

আমার কথা শুনে ছোটভাই হেসে ফেললো। সে আমাকে বুদ্ধি দেওয়ার মতো করে বললো, “এখন তো ভাই মৌলিকের কোন দাম নাই। মৌলিক লিখবেন, বইও বাইর হবে না। কিন্তু অনুবাদ করলে টাকা পাওয়া যায়।”
আমি আবার বললাম, “হুম।”

চারপাশের এইসব অনুবাদকদের আমার খুব ভয় লাগে। আবার এইসব মাত্র একটা ইংরেজি বই পড়া অনুবাদকদের ভীড়ে কিছু অসাধারণ অনুবাদকও আছেন। যারা অনুবাদ কর্মটা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যান। একজনের নাম বলা যায়। ‘জি এইহ হাবীব’। এই অনুবাদকের ‘সুফি’স ওয়ার্ল্ড বইটা পড়লে বুঝা যায় অনুবাদ কেমন হওয়া দরকার। উনার যে কোন অনুবাদ নিশ্চিন্তে পড়া যায়। আরো কয়জন আছে এই রকম। প্রিন্স আশরাফের অনুবাদও মোটামুটি খাওয়া যায়।

গল্পের শুরুটা সুন্দর। প্রথম অধ্যায়ের নাম ‘আই এম এ ফ্রি ম্যান’। এই মুক্ত মানুষটা একজন লেখক। লেখক জানাচ্ছেন কিভাবে তিনি ফ্রি হলেন। প্রথমেই জানালেন একজন তরুণীর কথা। তরুণীর নাম এসথার। এসথার একজন সাংবাদিক। লেখক আরো নির্দিষ্ট করে জানাচ্ছেন তরুণী যুদ্ধের সংবাদদাতা। এই এসথারই আমাদের লেখকের স্ত্রী হন। এসথার লেখককে ছাইড়া কোথাও চলে গেছে। কিংবা কারো সাথে চলে গেছে। লেখক নিজেও জানেন না আসলে কি হইছে। অবশ্য মিখাইল নামের এক যুবকের কথা এসথার জানাইছিলো আগে। হতে পারে এই যুবকের সাথেই এসথার পগার পার হইছে। এই জন্য লেখককে পুলিশও ধরে নিয়ে যায়। তাকে হেনস্থা হইতে হয়। পুলিশেরা যখন বুঝতে পারলো, এসথারের অন্তর্ধানের বিষয়ে লেখক সাহেব কোন কিছু জানেন না, তখন তাকে ছাইড়া দেওয়া হলো।

থানা থেকে বের হইয়া লেখক সাহেব ভাবতে বসলেন, এসথার কেন চইলা যেতে পারে। কিংবা কোথায় চইলা যেতে পারে। কিংবা কার সাথে চইলা যেতে পারে। এইভাবে আমরা ঢুকে পড়ি পাওলো কোয়েলহোর গল্প ‘দ্য জাহির’ এ। ও, আরেকটা কথা। জাহির হইল আরবী শব্দ। জাহির অর্থ ‘খোঁজ’। আমি পাওলো কোয়েলহোর সাথে এসথারের খোঁজে নাইমা পড়লাম।


১৩ নভেম্বর, ’১৭। কার্তিকের রাত।
রহমান নগর, চট্টগ্রাম।

( চলবে… )


মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:০৫

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম ! ভালো লাগলো। চলতে থাকুক।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:১৩

অনন্ত আরফাত বলেছেন: ভালোবাসা জানবেন ভাই।

২| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:১৯

মা.হাসান বলেছেন: অনুবাদ নিয়ে যা চলছে তা থেকে বোঝা যায় দেশে লেখকের বিস্ফোরন হয়েছে।
জি এইচ হাবীব বা প্রিন্স আশরাফ ভালো অনুবাদ করেন। আগে মূল বই পাওয়া সমস্যা ছিলো, এখন মূল বই সহজেই পাওয়া যায়; পড়তে একটু সময় লাগলেও অনুবাদের চেয়ে স্বাদ বেশি লাগে।

জোবায়ের ভাইয়ের নামের প্রথামংশের শানে নুজুল কোন এক পর্বে দিয়েন।

ট্রেনে ভ্রমন করতে গেল মান-সম্মান যা আছে বিসর্জন দিয়ে করতে হয়। যে রুটে মোটামুটি বাস সার্ভিস আছে সে রুটে ট্রেন অ্যাভয়েড করি।
পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকবেো।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১২

অনন্ত আরফাত বলেছেন: খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ছেন দেখে খুবই ভালো লাগছে ভাই। ধারাবাহিকভাবে দেওয়ার চেষ্টা করবো ভাই। ভালোবাসা জানবেন।

৩| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: কোথাও ভ্রমনে গেলে আমার বই পড়তে ইচ্ছা করে না।

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৪০

অনন্ত আরফাত বলেছেন: আমি আয়োজন করে বই টই নিই। কিন্তু পড়া হয় না। ঘুরতে ঘুরতেই দিন যায়।

৪| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৭

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: চমৎকার। আপনি দারুন লিখেন। আমার ভাই ভাগ্য খুবই খারাপ। কোন বগিতে বা বাসে যদি কোন খারাপ চেয়ার থাকে তাহলে সেই খারাপ চেয়ার আমার কপালেই পড়বে।

০৩ রা জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৬

অনন্ত আরফাত বলেছেন: আমি ট্রেন পছন্দ করি না ভাই। আর যদি ট্রেনে কোনো কারণে যাইতেও হয় এসি ফার্ষ্টক্লাসে যাওয়ার চেষ্টা করি। ওইবারই ভাঙা সিট পাইছিলাম। আরো একবার ট্রেনে দূর্ভোগের শিকার হইছিলাম। সেইটা ১৫ সালে। ওই অভিজ্ঞতা ভয়াবহ। ওইটা আরেকদিন লিখবো। তখন পেট্রোল বোমার সময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.