নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনে মনে গল্পকার। যখন আমি কোনো কিছুই করি না, তখনো একটা কাজ সব সময় করতে থাকি। মনে মনে গল্প লিখতে থাকি।

অনন্ত আরফাত

অনন্ত আরফাত › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহুয়া মলুয়ার দেশে (তৃতীয় পর্ব)

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৭



উলটা দিকে কিছুদুর যাওয়ার পর অটোওয়ালা এক স্কুলের সামনে গাড়ি দাঁড় করায়া বললো, “নামেন। এইটাই রাজবাড়ি।”

আমরা সবাই অটো থেকে নামলাম। গেইট পার হইয়া দেখি দুর্গের মতন একটা স্কুল । পলেস্তরা খসে পড়ছে কোথাও কোথাও। কিছু রুম কাঠের বিট মাইরা একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হইছে। বাকি অংশটাতে এখন স্কুল চলে। আমরা ঘুরে ঘুরে রাজবাড়ি দেখছি। অটোওয়ালা আমাদের ঘুরাতে পেরে খুব উৎফুল্ল।

বললো, “এই জমিদারের মেয়ের নাম ছিলো গৌরী। তার নামে এই এলাকার নাম হইছে গৌরীপুর।”

এর মধ্যে ব্যাগ কাঁধে স্কুলের এক ছেলে আসলো। সে কিছুক্ষণ দূর থেকে আমাদের ফলো করে কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, “স্কুল দেখতে আসছেন?”

আমি বললাম, “হা। এই স্কুলের ইতিহাস জানো?”

বললো, “জ্বী না। ভেতরে চলেন। ভেতরে জাহিদ স্যার আছেন। স্যারের কাছে জানতে পারবেন।”

নাফিজ ভাই বললেন, “আরফাত যা। স্যারের কাছ থেকে রাজবাড়ি সম্পর্কে জাইনা আয়।”

স্টুডেন্টটার সাথে সাথে আমি অফিসের দিকে গেলাম। আমার পেছনে পেছনে অটোওয়ালা। আমার থেকে তার আগ্রহ আরো বেশি মনে হচ্ছে। অফিস রুমে গিয়ে স্যারকে সালাম দিলাম। স্যার তখন ল্যাপটপে ঝুঁকে কাজ করছিলেন। আমার সালাম পেয়ে মাথা তুলে একটু বিস্মিত হলেন।

বললেন, “ওয়ালাইকুমুস সালাম।”

উনি উত্তর দেওয়ার সাথে সাথে অটোওয়ালা বললো, “স্যার, এনারা বিদেশ থাকি আইছে। আমি রাজবাড়ি দেখতে নিয়া আইছি।”

আমি বললাম, “স্যার শুনলাম, এটা এক সময় রাজবাড়ি ছিলো। রাজবাড়ি থেকে কখন স্কুল হলো জানতে আসলাম আপনার কাছে।”

জাহিদ স্যার বললেন, “এটা তো রাজবাড়ি ছিলো না। এটা প্রথম থেকেই স্কুল ছিলো।”

আমি বললাম, “ও।”

স্যার আরো যোগ করলেন, “জমিদার ব্রজ কিশোর চৌধুরী ১৯১২ সালে উনার বাবার নামে এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। উনার বাবার নাম ছিলো রাজেন্দ্র কিশোর চৌধুরী। সংক্ষেপে এই স্কুলের নাম আর কে স্কুল। সাতচল্লিশে দেশ ভাগের সময় উনারা ওই পারে চলে যান। ১৯৯২ সালে এই স্কুল সরকারি হয়। আর সামনে যে পুকুরটা দেখছেন, ওটা ব্রজ কিশোরের মায়ের নামে। উনার নাম ছিলো অনন্তবালা। এই পুকুরের নাম অনন্ত সাগর দিঘী।”



আমি বললাম, “ধন্যবাদ স্যার।”

স্যার বললেন, “বসেন। চা আনাই।”

আমি বললাম, “না স্যার। আমাদের আবার দুর্গাপুর যেতে হবে।”
“এখন আবার দুর্গাপুর যাবেন?”

“জ্বী স্যার।”

“দুর্গাপুর তো এখান থেকে বেশ দূরে আছে। রাস্তাও অসম্ভব খারাপ। যাবেন কিভাবে?”

“শ্যামগঞ্জ থেকে বাসে যাবো চিন্তা করছি স্যার।”

“বাসের রাস্তা তো খুবই খারাপ। আপনারা ট্রেনে যান। ট্রেনে প্রথমে যাবেন জারিয়া। তারপর জারিয়া থেকে মাহিন্দ্রা অথবা মোটর সাইকেলে যাবেন দুর্গাপুর। বাসে যাওয়ার চেয়ে এই পথই সুবিধা হবে।”

আমি বললাম, “আচ্ছা স্যার।”

জাহিদ স্যার তারপর অটোওয়ালাকে বললেন, “উনাদের রাজবাড়িটা দেখাই রেলস্টেশনে নিয়া যাও। রাজবাড়ি চিনো? এখান থেকে যেতে হাতের বামে মহিলা ডিগ্রী কলেজ আছে। ওটাই রাজবাড়ি।”

অটোওয়ালা বললো, “হ। চিনি স্যার।”

তারপর আমরা আরো কিছুক্ষণ আর কে স্কুলটা ঘুরে দেখলাম। ছবি তোললাম কয়টা। অনন্ত সাগর দিঘীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আরো কয়টা ছবি তোললাম। তারপর অটোওয়ালাকে বললাম, “ডিগ্রী কলেজ চলেন।”

অটোওয়ালা বললেন,”হ, চলেন যাই।”

তারপর অটো এসে দাঁড়ালো গৌরীপুর নিউ মহিলা ডিগ্রী কলেজের সামনে। অটো থেকে নেমে দেখলাম কলেজের হোস্টেল। সামনে মাঠ। তারপর কলেজ। রাজবাড়ির কিছুই চোখে পড়ছে না। নাফিজ বললেন, “চল চল। দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
আমরা আবার অটোতে উঠে গেলাম। অটোওয়ালা টান দিয়ে রেলস্টেশনে নিয়ে এলো। নাফিজ ভাই বললেন, “দাঁড়া। মাইনষের সাথে ফাইজলামী করবো। চিটাইঙ্গা ভাষায় কথা বলবো?”

উনি অটো থেকে নেমে গিয়ে একজনকে জিজ্ঞেস করলেন, “ক্যান আছন বাজি?” বেচারা ফ্যাল ফ্যাল করে নাফিজ ভাইয়ের দিকে তাকায়া থাকলো!

নাফিজ ভাই আবার বললেন, “ওয়া জারিয়া ক্যান গরি যাইয়ুম?” বেচার চোখ আরো বড় বড় হইয়া গেলো।

নাফিজ ভাই আবার বললেন, “আঁর হতা কি ন বুঝর বাজি?”

বেচারা এবার একটু চেইত্যা গেলো। “বুঝতাম না ক্যা? আপনি তো সিলডি ভাষায়া কথা কয়তাছুইন। আমি কি আর সিলডি ভাষা ফারি?”

আমরা সবাই হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলাম। সেও হেসে উঠলো। পরে নাফিজ ভাই বললেন, “কিছু মনে করো না। মজা করছিলাম।”

তারপর আমরা স্টেশনে গেলাম। গৌরীপুর থেকে জারিয়া পর্যন্ত একটা লোকাল ট্রেন আছে ৫.৪৫ এ। টিকিট কাটতে গেলে টিকিট দিলো না। ট্রেন আসলে টিকিট নিতে হবে। এই স্টেশনটা সুন্দর। মাঝখানে দোকানের সারি। দোকানের সারির দুইপাশে দুইটা করে লাইন। আমরা দোকানপাটগুলা পার হইয়া অপর পাশের লাইনের উপর গিয়ে বসে থাকলাম। একটা দোকানের পাশে একটা লম্বা বেঞ্চ পাওয়া গেলো। নাফিজ ভাই বেঞ্চটা নিয়ে শুয়ে পড়লেন। শুয়ার পর পরই উনার বিখ্যাত নাক ডাকা শুরু করে দিলেন।

একজন আসি বললো, “ভাই উনি পইড়া যাইবো তো।”

আমি বললাম, “পড়বে না। আমরা সবাই হলাম পথযুবক। পথে পথে থেকেই আমাদের অভ্যাস।”

আমার কথা শুনে শাহিন আর জোবায়ের হেসে উঠলো। উনি ‘পথ যুবক’ ব্যাপারটা ধরতে না পারায় চোখমুখ কোঁচকে চলে গেলেন।

যারা জানেন না তাদের বলে রাখি। বিদ্যানন্দে আমরা পথশিশুদের নিয়া কাজ করি। আর যেহেতু স্বেচ্ছাসেবকরা পথশিশুদের নিয়া কাজ করে তাই আমরা আমাদের নাম দিছি পথযুবক।

আমাদের সবচেয়ে সিনিয়র পথযুবক নাফিজ কঁ….. কঁ…… সুরে নাক ডেকে চলছেন। এর মধ্যে হুইসেল বাজায়া মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস আসলো। আমরা সবাই হুড়াহুড়ি করে উঠে দাঁড়ালাম। এটা যেহেতু জারিয়া যাবে না তাই আবার বসে পড়লাম জারিয়ার লোকালের জন্য।

কিছুক্ষণ পরে একজন এসে বললো, “উঠেন। উঠে রেডি হন। জাইরা আসতেছে।”

জোবায়ের বললো, “কই ভাই? আওয়াজ তো শুনি না।”

লোকটা বললো, “আসতেছে।” এরপর হঠাৎ দেখা গেলো ট্রেন একটা আসতেছে প্লাটফর্মের দিকে।

এর মধ্যে মানুষেরা হুড়াহুড়ি শুরু করে দিলো। এই এলাকার রাস্তাঘাট যেহেতু ভয়ংকর খারাপের দুই ডিগ্রী উপরে সেহেতু এরা ট্রেনের উপর বেশি নির্ভরশীল। মানুষের যা অবস্থা ট্রেনে দাঁড়াবার যায়গা পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। আমাদের তখনো টিকিট কাটা হয়নি।

জোবায়েরকে বললাম, “দৌড়া দিয়া গিয়া টিকিট কাটি আন।”

জোবায়ের টিকিট আনতে চলে গেলো। আমরা তিনজন বগি চেক করতে লাগলাম। কোন বগিতে উঠা যায়।


১৫ অক্টোবর, ১৭। আশ্বিনের দুপুর।
কসমোপলিটন, চট্টগ্রাম।

(চলবে… )



প্রথম পর্বঃ Click This Link
দ্বিতীয় পর্বঃ Click This Link


মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: চলুক।
ছবি আরও কিছু বেশি দিবেন।

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:০৫

অনন্ত আরফাত বলেছেন: ছবি তেমন নাই ভাই।

২| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:১৮

মা.হাসান বলেছেন: ঐ অঞ্চলে রাস্তাঘাটের অবস্থা ভয়াবহ রকমের খারাপ। বর্ষায় চলাচল অসম্ভব, শীতে মারাত্মক ধূলা। কিশোরগঞ্জে মহামান্য প্রেসিডেন্টের বাড়ি হওয়ায় ঐ দিকে কিছুটা (পুরোপুরি না) রাস্তা চলাচলের উপযোগি। আপনার কপাল ভালো ট্রেন সময়মতো এসেছিলো, যখন কম বয়স ছিলো একবার লোকাল ট্রেনে চেপেছিলাম। খুলনা থেকে যশোর আসতে ছয় ঘন্টা লেগেছিলো।

অনন্ত সাগর দিঘির ছবি দিলে আরো ভালো লাগতো।
লেখায় অসংখ্য পার্সোনাল টাচের কারনে পড়ে খুব আনন্দ পাচ্ছি। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:০৪

অনন্ত আরফাত বলেছেন: ওইদিকের রাস্তাঘাট ভয়াবহের উপরে। আর ছবি কম দেওয়ার কারণ ছবি তেমন নাই। আর যে কয়টা আছে দেখি ব্যাক্তিগত ছবি ভাই। তাই দিতে সংকোচও লাগছে। তবে আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী অনন্ত সাগর দিঘীর ছবি একটা দিলাম ভাই।

৩| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৫

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: খুব আনন্দ নিয়ে আপনার লেখা পড়ছি। সামুতে পড়া অন্যতম সেরা ভ্রমন কাহিনী!

০৩ রা জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৭

অনন্ত আরফাত বলেছেন: অনেক অনেক ভালোবাসা জানবেন ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.