নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনে মনে গল্পকার। যখন আমি কোনো কিছুই করি না, তখনো একটা কাজ সব সময় করতে থাকি। মনে মনে গল্প লিখতে থাকি।

অনন্ত আরফাত

অনন্ত আরফাত › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবেসে যদি সুখ নাহি...

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:১৬



নিউ মার্কেট থেকে টিউশন শেষ করে এক নাম্বার বাসে করে বাসায় ফিরছিলাম।

বাস আন্দরকিল্লা পার হচ্ছিলো। এই সময় পিছন থেকে একজন হঠাৎ তার ছোট ভাইকে ফোন দিয়া বলে উঠলো, "রবিউল, তর ভাবিরে ফোন গরি ফোনন্য রিসিভ গইরতো হ। হ দে রিসিভ ন গইরলে আঁই বিষ হাইউম।"

যুবকের কথা শুনে আশেপাশে সবাই মুচকি মুচকি হাসা শুরু করলো। আমি পিছন ফিরে তাকায়া যুবকটার মুখ দেখে আর হাসতে পারলাম না। তার চেহারা পড়ে মনে হলো, এই লোক আত্মহত্যা করলেও করতে পারে। কি গভীর বেদনা চোখে-মুখে! কি ক্লান্তি!

একটু পরে বেচারা ছোটভাইকে আবার ফোন দিলো। "এহনো রিসিভ ন গরে? তুই ফোন দিয়াত থাক। আঁই কিন্তু বিষ হাই ফেলাইউম।" আবার সবাই মুচকি মুচকি হাসি।

আমার খুব খারাপ লাগতে লাগলো যুবকের জন্য। এই বেদনার খবর আমি জানি। ভালোবাসার মানুষের অবহেলা কি যে কঠিন সেটা আমি অনুভব করছি গত কয়দিনে। আমার খুব কাছের একজন মানুষকে দেখে। এই মানুষটা ভালোবেসে কেমন যেন হইয়া গেলো!

কি সব পাগলামী! যেটা হবার নয় সেটা নিয়েই মাতলামি। কিছু বুঝালে সেটা মাথার উপর দিয়া যায়। এই আপাত নিরীহ মানুষটাকে যদি বলা হয়- ভালোবাসার জন্য তোমাকে ঘর ছাড়তে হবে আমি নিশ্চিত তিনি ঘর ছাড়বেন। যদি বলা হয়- খুন করো। আমার মনে হয় তিনি একবারও না ভেবে খুন করবেন।

তাকে কত বুঝালাম, এই পাগলামির ফল, শূন্য। উনি বলেন, "আমি শূন্যই চাই। শূন্য নিয়াই আমি থাকতে পারবো।" কি বাচ্চামী! অথচ আমার দেখা খুব ঠান্ডা এবং যুক্তিবাদী একজন মানুষ।

আসল কথা হলো, যত ঠান্ডা আর যুক্তিবাদীই হোক না কেন, মানুষ পারে না। প্রকৃতি যত ধৈর্যই মানুষকে দিক না কেন, প্রিয়জনের অবহেলা সহ্য করবার ক্ষমতা মানুষকে দেওয়া হয়নি। মানুষ সব সহ্য করতে পারে, কিন্তু ভালোবাসার মানুষের অবহেলা-অপমান মানুষ সহ্য করতে পারে না।

আমার পরিচিত মানুষটাও পারছে না। আমার পেছনের সিটে বসা যুবকটাও হয়তো পারছিলো না। ছোটভাইয়ের কাছে ফোন করে কি বারবার কী আকুতি!
"যে হন প্রকারে তর ভাবিল্লাই যোগাযোগ গর। নইলে আঁই রাতিয়াই বিষ হাইউম।"

আমি যখন বাস থেকে চকবাজার নামছিলাম তখনো ছেলেটা ছোটভাইকে ফোন দিচ্ছিলো। আহারে বেচারা! বউটা কি ফোন করবে? আমি জানি না। হয়তো সেও আর থাকতে পারবে না। ফোনটা রিসিভ করে ফাজিল ফাজিল গলায় বলবে, "কেমন দেখালাম, হুম! আমার সাথে আর বাড়াবাড়ি করবা?" কিংবা হয়তো রিসিভ করবেই না।

হয়তো ছেলেটা অতি তুচ্ছ কারণে ইঁদুর মারার বিষ খাইয়া মরে যাবে কিংবা পুরোটাই বউকে পটানোর জন্য। বউ ঠিক হয়ে গেলে সিগারেটে কষে টান দিতে দিতে হা হা হা হা করে হাসবে নিজের মনে। আমরা জানি না। কোনটাই জানি না।

তবে একটা ব্যাপার পরিষ্কার। পৃথিবীতে একজন থাকে, যে চায়, সমস্ত চারপাশ কাঁপায়া সঙ্গী কিংবা সঙ্গীনীকে ভালোবাসে। আরেকজন থাকে যার এইসব গায়েই লাগে না। পৃথিবীর সমস্ত অবহেলা-অপমান নিয়া সে ভালোবাসাময় মানুষটার পৃথিবী ভাঙ্গচোর করে।

ভালোবাসার বিপরীতে ভালোবাসা খুব কম মানুষই দেখায় পৃথিবীতে। ভালোবাসার বিপরীতে ভালোবাসা পায়ও অল্প কয়জন মানুষ।

ভাগ্যবান মানুষ এই পৃথিবীতে কম। খুবই কম...


১৯ নভেম্বর, '১৬। অগ্রানের রাত।
চট্টগ্রাম।


মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: প্রিয় মানুষের অবহেলা সহ্য করা যায় না।

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:১১

অনন্ত আরফাত বলেছেন: হা ভাই। সবার অপমান সহ্য করা যায়। ভালোবাসার মানুষের অপমান সহ্য করার ক্ষমতা মানুষের নাই।

২| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:২৪

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: চমৎকার লেখেন আপনি।

২০ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:২২

অনন্ত আরফাত বলেছেন: ভালোবাসা জানবেন ভাই।

৩| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:২৪

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন:
একজন মানুষ হিসাবে সবাই প্রিয়জনের সাথে থাকার আশা করে সুখে কিংবা দুখে ,তা তিনি পুরুষ বা মহিলা যেই হোক না কেন ।
তবে এখন দ্রুত জীবনের নানা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার জন্য কখনও কখনও এটি সম্ভব হয় না বা হরেক রকম সমস্যা তৈরি করে ।এর ফলেই মানসিক দূরত্ব তৈরি হয় ।মানসিক দূরত্ব অবহেলা তৈরি করে ।

প্রিয়জনের অবহেলা সওয়া শুধু মুশকিল ই না । মাঝে মাঝে তা জীবন সংহারকও ।

২০ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:২৩

অনন্ত আরফাত বলেছেন: হা ভাই।

৪| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:২৭

নীল আকাশ বলেছেন: আপনার সাথে চট্টগ্রাম শহরে যে এতদিন দেখা হয়নি সেটাই তো অবাক ব্যাপার? এটা কিছু হলো?
আমার প্রকাশিত লেখার একটা অংশ এখানে দিয়ে গেলাম। আপনার লেখা পড়ে ভালোই লাগলো।
প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেই একজন বিশেষ কেউ থাকে। ঠিক সেই একজনের জন্যই সারাটা জীবন অপেক্ষা করে নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দেয়া যায়, তাকে ভালোবাসার জন্য মরুভূমির হাজার মাইলও হাসিমুখে হেঁটে পাড়ি দেয়া যায়, সাত সমুদ্র তের নদী জল ডুব সাতার কেঁটে পাড়ি দেয়া যায়, একাকী গহীন সমুদ্রের বুকে দুঃসাহসী নাবিক হয়ে প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা যায়। এমন একজনের জন্য ভালোলাগার অনুভুতি কখনও মরে যায় না, নিঃশেষ হয়ে যায় না, চোখের ভাঁজে ভাঁজে সেটা লেপ্টে থাকে। তাই কেউ সেটা দেখতে পায়না, শুধু চোখ বন্ধ করলেই হৃদয়ে খচখচ করে উঠে।

২০ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:২৪

অনন্ত আরফাত বলেছেন: আপনি ডিটেইলস লিখেন। ভালোবাসা ।

৫| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৮

মা.হাসান বলেছেন: মানুষের জীবন এমনই। অন্যের প্রেম আমার কাছে তুচ্ছ মনে হতে পারে, কিন্তু এর শক্তিতেই জগৎ চলে।

২০ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:২৯

অনন্ত আরফাত বলেছেন: মা হাসান ভাই, ভালোবাসা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.