![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
-'মোর কিছু নাগবের নয়।'
-'ক্যা, নাগবের নয় ক্যা?'
মায়ের প্রশ্নে হাসার চেষ্টা করে হুমায়ুন। কিন্তু সে হাসি থেকে বিষাদ পুরোপুরি মুছে ফেলতে পারে না। পরক্ষণেই সে বুদ্ধিজীবীর মতো উত্তর দেয়।
-' ঈদত দুনিয়ার কয়জন মানুষ নয়া জামা গায় দিবার পায়? যেহেতু বেশির ভাগ মানুষ নয়া জামা পায় না, তাই মুই বেশির পক্ষে। এইজন্যে মুই জামা নিবার নয়।'
এই উত্তরে মাকে খুশি মনে হয় না। তিনি বলেন,-'টেকা নিয়ে যাব সন্দাত । জামা কিনি নিয়া আস পু ।'
এরপর আর বেশি কথা বলা সমীচীন হবে না বলে হুমায়ুন তাৎক্ষনিক বিতর্কে ইস্তফা দেয়।
হুমায়ুন চার ভাই বোনের মধ্যে সবার বড়। সে পড়ে নিউ টেনে।ভাল ছাত্র। ক্লাশ এইটে বৃত্তি পেয়েছিল।কয়েকদিন আগে সে বৃত্তির টাকা পেয়েছে। টাকা এনে সে তার মায়ের হাতে গুঁজে দেয়। অভাবের সংসার। সে একটি টাকাও খরচ করেনি। হুমায়ুনের বাবা দুদিন থেকে সেই টাকার জন্য ছোক ছোক করছে। কিন্তু হুমায়ুনের মার মন গলেনি। তার বক্তব্য, হুমায়ুনের টাকা, সে যা ইচ্ছা খরচ করবে। হুমায়ুন মাকে এই কথা বলার সাহস পাচ্ছে না যে,- মা টাকাগুলা আব্বাকে দিয়ে দেন।
বিকেলে হুমায়ুনের বাবা তিন মেয়ের জন্য ঈদের জামাকাপড় নিয়ে আসেন। এই নিয়ে হৈ হুল্লোড়। হুমায়ুন মুগ্ধ চোখে তার ছো্ট বোনদের উচ্ছলতা দেখে। মনে মনে ভাবে, যখন সে বড় চাকরি করবে তখন সে তার বোনদের নিয়ে যাবে শপিং করতে। গিয়ে বলবে,-তোদের ইচ্ছেমত কেনাকাটা কর। টাকার কোনো সমস্যা নাই।
রাতে হুমায়ুনের বাবা খালি হাতে বাসায় ফেরেন। মা জিজ্ঞাসা করেন,-'খরচপাতি কই ? কাইল ঈদ।'
হুমায়ুনের বাবা পরাজিত গলায় বলেন,' টাকা নাই। যে কয় টাকা আছিল মামু মানিল না। জোঁকের মতো ধরছিলো ট্যাকার জইন্যে।'
এই মামু হলেন সুদখোর মহাজন জুম্মন। সে শাইলকের যোগ্য বংশধর।
এবার ধীরে ধীরে হুমায়ুন মাকে বলে, 'মা, টাকাগুলা আব্বাক দেন। কাইল ঈদ। কখন খরচ কইরবে কন তো!'
মা নিরবে ট্রাঙ্ক খুলে টাকা বের করে দেন।
এশার নামায শেষ করে মুনাজাত করছেন মা। তাঁর মিহি কান্না পাশের ঘর থেকে শুনতে পায় হুমায়ুন। বাবা কোরান পড়ছেন,'ফাবি আইয়ে আলা রাব্বিকুমা তুকাজ্জিবান।'
অন্ধকার ঘরে অশ্রুসিক্ত হুমায়ুন ভোরের প্রতীক্ষা করে।
©somewhere in net ltd.